বেষ্ট ফ্রেন্ড নাকি স্বামী পর্ব-৩

0
2331

#বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী?
#Part_3
#written_by_Nilima_Zabin_Tanmona

রাফি হঠাৎ ই রিধীমার বুকে শুয়ে কাঁদতে লাগলো। রিধীমা রেগে যায়। রাফিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কিন্তু রাফি সরছে না। অনেক শক্ত করে ধরে আছে রিধীকে। রাফি রিধীর মুখের দিকে তাকায়। দেখে রিধী অসম্ভব রেগে আছে। তখন রাফি সরে গিয়ে নিজের বালিশে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে পরে চোখের পানি মুছে। রিধীমা উঠে যায়। আর রাফিকে বলে যায় ওর পিছু পিছু যাতে না আসে। রিধীমা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে চেয়ার টেনে বসে পরলো। আর রাফি বেডরুমের জানালা দিয়ে রিধিকে দেখছে অপলহীন ভাবে। রিধীমার আজ লিখন এর কথা খুব মনে পড়ছে। বারান্দার গ্রিল ধরে রিধীমা নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।

প্রায় ১৩ বছর আগে…

রিধী তখন ক্লাস ২ তে পড়ে। (আর এখন বর্তমানে রিধীমার বয়স ২১ বছর আর রাফির ২৫) আর রাফি পড়ত ক্লাস ৬ এ। একদম পাশাপাশি বাসায় থাকত দুইজন। রিধীমার মা আর রাফির মা অনেক ভাল বন্ধু ছিল। রাফি রিধীমার সাথে এসে খেলা করত মাঝে মাঝে। রিধীও দুষ্টুমি ভরা মনোভাব নিয়ে বড় হতে লাগলো। রিধী যখন ক্লাস ৬ এ পড়ে তখন রাফি ক্লাস ১০. রাফি কোনোদিন রিধীমাকে কোনো বাইরের ছেলের সাথে মিশতে দেয়নি। কেন যেন ভাল লাগত না রাফির। রাফিও কোনো মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে কথা বলা তো দূর সামনেই যেত না। রাফি অনেক স্মার্ট ছিল। রিধীমাও কোনো অংশে কম নয়। ওদের বন্ধুত্তের জোড়ী টা খুব মজবুত ছিল। রিধীমা ছোট থেকেই রাফিকে তুই বলত। রাফিও তাই করত। কিন্তু কখনই রিধীমা বলে ডাকেনি। রিধী বলে ডেকেছে। একসাথে ঘুরতে যাওয়া,,শপিং করা সবই করত। কিন্তু বাসায় যাওয়া আসাটা কম হয়। দেখতে দেখতে ৪ টা বছর কেটে গেল। রিধী এসএসসি দিবে। আর বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিল। রাফি অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিল। এসএসসি এক্সাম শেষ হওয়ার পর রিধীমার মা বাবা সিদ্ধান্ত নেয় রিধীমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। কারণ রাফি আর রিধী এখন দুইজনেই অনেক বড় হয়েছে। সমাজের লোক খারাপ বলবে এভাবে ওরা মেলামেশা করলে। প্রতিদিনই রাফি আর রিধীর ফোনালাপ হত। রিধীর বিয়ে ঠিক করা হয় এলাকার নামকরা ব্যবসায়ী পুত্র লিখন এর সাথে। যার ব্যাকগ্রাউন্ড মোটেও ভাল ছিল না। কিন্তু মিথ্যা কথায় ভুলিয়ে লিখনের বাবা রিধীকে তার বউমা বানাবেন বলেছেন। বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করা হয়। একদিন সকালে রাফি রিধীকে ফোন দেয়।

-মনে হচ্ছে আজকে তুই অনেক খুশি? (রাফি রিধীকে জিজ্ঞেস করল)
-হ্যাঁ। কারণ আজ কি হয়েছে জানিস?
-কি???
-আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে গতকাল।
-What?? তুই ঠিক আছিস রিধী? মজা কেন করছিস আমার সাথে!! (প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে)
-আরে মজা কেন করব আমি তোর সাথে? লিখনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছে। এমনিতেও লিখনকে আমি ভালবাসতাম।
-রিধী তুই কি বলছিস এসব? ও একটা খারাপ ছেলে। অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে ও। আর তুই কি না ওর প্রেমে পরেছিস আবার বিয়েও করছিস?
-রাফি চুপ ওর নামে একটা বাজে কথা বলবিনা তুই আমাকে। ও ফোন দিচ্ছে কথা বলব। রাখ তুই ফোন।

রাফি ফোন কাটার পর পাগলের মত হয়ে গেল। কি করবে ও বুঝতে পারছেনা। রাফি কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই ঢাকা থেকে চলে এলো। এসেই রিধীকে ফোন দিয়ে বলে ছাদে আসতে। রিধী ছাদে এসে দেখে রাফি কাঁদছে মাথায় হাত দিয়ে। রিধী রাফির হাত ধরে জিজ্ঞেস করে

-রাফি কি হয়েছে তোর?? (দুঃচিন্তা নিয়ে)
-তুই কাকে ভালবাসিস? (দাঁড়িয়ে গিয়ে রিধীমার দুই কাঁধে হাত দিয়ে)
-মানে??

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রাফি রিধীমাকে পেছনে দাঁড়িয়ে বলল
-রিধী অনেক রাত হয়েছে ঘরে আসো।
-তুই এখনো ঘুমাসনি??(পেছনে ঘুরে)
-না। তুমি না ঘুমালে আমি কিভাবে ঘুমাব?
-রাফি তুই তোর মত চল আর আমি আমার মত। আমার উপর অধিকার বোধ ফলাতে আসবিনা। মাইন্ড ইট।
-রিধী গত ২ টা বছর আমি তিলে তিলে অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর কত কষ্ট তুমি আমায় দিবা বল? মা_বাবাকে হারিয়েছি,, তোমার থেকে দীর্ঘ ২ টা বছর আলাদা ছিলাম। তুমি কেন বোঝ না আমায় রিধী? কেন? একটাবার কি আমায় সুযোগ দেওয়া যায়না আমার ভালবাসা প্রমাণ করার?
-এইটাকে ভালবাসা বলে না বন্ধুত্তের দয়া বলে, দয়া।

ঠিক তখনি রাফি স্ব জোরে রিধীর গালে থাপ্পর মেরে দেয়।

-তোকে না বলছি তুই আমার সামনে বলবি না যে আমি তোকে দয়া দেখিয়েছি? দয়ার বুঝিস কি তুই? (রিধীকে গ্রিলের সাথে চেপে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে)

-রাফি ছাড় আমায়। কেন মারলি তুই আমায়? কে তোকে আমায় মারার পার্মিশন দিছে?
-এই রাফি নিজেই নিয়ে নিয়েছে সেই পার্মিশন।

আর কোনো কথা না বলে রাফি রিধীকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। রিধীর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর বলছে
-এই কথাটা বইলো না যে আমি আমার ভালোবাসাকে দয়া দেখাচ্ছি। এইটা শুনলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা।

রাফি রিধীর গালে অনেকগুলো চুমু দেয়। রিধীর চুল ঠিক করে রিধিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। রিধীর ঘাড়ের পাশের তিলটাতে আরেকটা চুমু দেয় রাফি। এই তিল নিয়ে যে অনেক স্মৃতি রয়েছে ওদের।

চলবে