বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী পর্ব-০৬

0
2158

#বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী?
#Part_6
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

৬ মাস পর…..

কাশফি আর আয়মান সহ পরিবারের সবাই লক্ষ করল রিধী রাফির কাছে যায় না। রাফিকে কেমন এড়িয়ে চলে। এতে সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পরে। এরপর আর ২ দিন দেখার পর রিধীকে তার মা-বাবা তাদের ঘরে ডেকে পাঠালেন। রাফি তখন রাফসানকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে গিয়েছিল।

-আচ্ছা মা তুই কি আজও রাফিকে স্বামীর মর্যাদা দিয়েছিস? (রিধীর মা)
-(…..) (রিধী নিশ্চুপ)
-দেখ রিধী ছেলেটা তোকে পাগলের মত ভাল না বাসলে অন্যের সন্তান সহ তোকে এইভাবে গ্রহণ করত না। প্লিইজ রাফিকে আর কষ্ট দিস না। আর এই নে এইটা পড়ে দেখিস তাহলে সব বুঝতে পারবি ছেলেটা তোকে কতটা চায়!! (একটা ডায়েরি রিধীর হাতে দিয়ে)
-রিধী প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর একটা ছেলে একটা মেয়েকে কোন লেভেলের ভালবাসলে এমন পাগলামো করতে পারে রাফির মত তা আমার অজানা। রাফি অনেক ধৈর্যশীল একটা ছেলে। উপরন্ত ও অনেক ভাল একটা ছেলে। রিধী তোমার বড় ভাইয়া হিসেবে বলছি রাফিকে মেনে নাও। ওর থেকে দূরে সরে থেকো না। (আয়মান)

রিধী তখন ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল নিজের বেডরুমে। ডায়েরির এক পাতা,, দু পাতা করে সবটা পড়ে ফেলল রিধী আর চোখ দিয়ে পানি ঝরাচ্ছে। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দ শুনে রিধী ভেজা চোখেই দরজা খুলতে যায়। ডায়েরিটা আলমারিতে রেখে দেয়। দরজা খুলে দেখে রাফি। রাফি রিধীর ভেজা মুখ দেখে অবাক হয়ে যায়। সাথে সাথে রাফি জিজ্ঞেস করে
-রিধী কেঁদেছো কেন? কি হয়েছে?
-এত স্বার্থপর কেন তুমি?? (রাফির শার্টের কলার ধরে)
-রিধী কি করেছি আমি বল প্লিজ? (রিধীর হাত ধরে)
-তোমার ভালবাসা তুমি ত্যাগ করেছিলে নিজে সুখে থাকবে বলে?? আমি কি তোমার কেউ না?
-মানে?
-নিজে সুখ খোঁজার জন্য তো আমেরিকা চলে গিয়েছিলে। আমাকে কে সুখি করত তুমি না আসলে?? (রাফিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে)
-রিধী তুমি ঠিক আছো? কি হয়েছে তোমার? আর দরজার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে!! সবাই আছে কিন্তু বাসায়।
-I am Sorry Rafi. মাফ করে দাও আমায়। আমি ভুল করেছি। একবার ক্ষমা কর আর কখনো এই ভুল করব না।
-রাফি রিধীকে জড়িয়ে ধরে আর দুজনেই কাঁদতে থাকে।

একটু পর রাফসানের কান্নার আওয়াজ পেয়ে রিধী রাফিকে ছেড়ে দিয়ে রাফসানের কাছে যায়।

-রিধী রাফসানের খুব ক্ষুধা পেয়েছে। থামাতে পারছিনা আমি। (কাশফি)
-দে আপু ওরে আমার কাছে।

এরপর রিধী রাফসানকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে যায়। যাওয়ার পর দেখে রাফি বসে বসে কাঁদছে। রিধী গিয়ে রাফির ঘাড়ে হাত রাখে। রাফসান তখনও কাঁদছে।

-রিধী রাফসান কাঁদছে। ওরে খাওয়াও।
-তুমি কাঁদছিলা কেন?
-রাতে বলি???
-হুম।

এরপর রিধী রাফসানকে খাওয়াচ্ছে আর রাফি রিধীকে এক দৃষ্টিতে দেখছে। রাফসানকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রিধী বিছানা থেকে উঠে গেল। রাফি ও রিধীর পিছু পিছু গেল। রিধী কাশফির সাথে দুপুরের রান্নার ব্যাপারে কথা বলছিল আর রাফি আয়মানের সাথে কথা বলছিল। আয়মান অনেক বেশি খুশি হয় রাফির কথা শুনে। এরপর আয়মান কাশফিকে সব বলে একটা সারপ্রাইজ এর ব্যবস্থা করল রাফি আর রিধীর জন্য আর তা আজ রাতেই। বিকেলে কাশফি আর আয়মান রিধীর বেডরুমে যায়।

-কিরে কি করিস? (রিধী)
-এইত! কি ব্যাপার কোথাও বের হবি নাকি? (কাশফিকে অন্য পোষাকে দেখে)
-হ্যাঁ সবাই মিলে বাইরে ডিনার করব আজকে।
-তা হঠাৎ? আগে তো জানাসনি!
-এখন তৈরি হয়ে নে। আমি রাফসানকে তৈরি করাচ্ছি। তুই আর রাফি তারাতারি রেডি হয়ে নে।
-ভাইয়া কই যাবা কিছু ঠিক করছো? I mean কোন রেস্টুরেন্টে? (রাফি আয়মানকে জিজ্ঞেস করল)
-Yes bro. Alexanda road যাচ্ছি আমরা। আর সব ট্রিট আমার। (আয়মান)
-তুমি কেন? আমি দেই!
-ছোট আছো ছোটই থাকো বুঝছো এখন তারাতারি রেডি হও। বের হতে হবে। (রাফসানকে কোলে নিয়ে আয়মান)
-ভাইয়া আব্বু আম্মু?
-ওনারাও যাবেন।

এরপর কাশফি আর আয়মান রাফসানকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। আর রিধী রাফির দিকে তাঁকিয়ে আছে।

-আমি জানি কেন এইভাবে তাঁকিয়ে আছো!
-কি জানো তুমি?
-কি ড্রেস পরবে এইটাই জানতে চাইছো আমার থেকে।
-কি করে বুঝলে? (মাথা নিচু করে)

রাফি আর কিছু না বলে দরজা বন্ধ করে দিল। রাফির সবচেয়ে পছন্দের রং নীল। নীল রঙের একটি শাড়ি পরিয়ে দিল রিধীকে। এমনকি চুল আঁচড়ানো থেকে শুরু করে কানের দুল পরিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব রাফি করল। এরপর রাফিও নীল রঙের একটা ব্লেজার পরলো। অপরুপ লাগছে দুইজনকে। রিধী রাফির দিকে অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে। ফরমাল ড্রেসাপ এ কত সুন্দর লাগে রাফিকে। হেয়ার স্পাইক করেছে,,রিধীর পছন্দের পারফিউম নিয়েছে। কেমন যেন আনইজি লাগছে রিধীর এই ভেবে যে রাফির সাথে কি রিধীর যায়?? ভাবনার ছেদ ঘটালো রাফির চুমু। রাফি রিধীর কপালে চুমু দিল। আর কানের পাশে কাজল লাগিয়ে দিল।

-এইটা কি হলো? কাজল কেন দিলা তাও কানের পাশে?
-আমার বউয়ের দিকে যাতে কারো নজর না যায় তাই।

রিধী লজ্জা পেয়ে দরজা খুলে কাশফির কাছে চলে গেল। কাশফি রিধীকে দেখে হা হয়ে গেছে। আজ কত দিন পর রিধী এইভাবে সেজেছে। কতটা সুন্দর লাগছে ওকে তা বলে বোঝানো যাবেনা। এরপর কাশফি রিধীর কপালে একটা চুমু দিল। আয়মান রাফিকে দেখে বলল

-কাশফি এরা এত সুন্দর করে সেজেছে কেন? আমি যাব না।???? দেখো পুরোই লাভ বার্ড। ????

এরপর রাফি হেসে দিল আর আয়মানকে বলল
-তোমাকেও কম সুন্দর লাগছেনা ভাইয়া। এমনেই তো এত স্মার্ট তার উপর এই লুক। মেয়েরা পাগল না হলেই হয়। তাহলে কাশফি আপু মাইর মিস করবেনা।
-ওই তুমি চুল এলোমেলো কর। এভাবে যাওয়া যাবে না তোমাকে নিয়ে মেয়েরা ক্রাশ খাবে। (কাশফি)
-কেউ আমাকে মাইরালা।

এরপর দুইটা গাড়ি নিয়ে ওরা বেরিয়ে গেল। রাফি,,রিধী,,কাশফি আর আয়মান এক গাড়িতে আর অন্য গাড়িতে রাফসান আর মা-বাবা। রাতে ডিনার শেষ করে হোটেল থেকে বেরিয়ে কাশফি বলছে সে নিজেদের বাসায় যাবে। কারণ অনেকদিন ধরে বাড়িটা ফাঁকা রয়েছে। আয়মান ও একই কথা বলছে আর তাল দিচ্ছে মা-বাবা। আর কাশফি বলছে রাফসানকে নিয়ে যাবে। রিধী বলল
-আপু ওরে কেন নিয়ে যাবি? আর এত রাতে কেন যেতে হবে? কালকে সকালে যাস এখন বাসায় চল।
-না রিধী আজই যাই তাছাড়া মা-বাবাও যাবে বলছে। আর রাফসানকেও নিয়ে যাই।
-ভাইয়া ও তো থাকতে পারবেনা! তাহলে চল আমরা সবাই যাই। (রাফি)
-নায়ায়ায়ায়ায়া। (সবাই এক সাথে চিৎকার করে বলল)
আরে ছোট ভাই তুমি আর রিধী বাসায় যাও নয়ত বাসাটা ফাঁকা হয়ে থাকবে। (আয়মান বলল রাফিকে)

সবার জোরাজোরিতে রাফি আর রিধী একাই বাসায় চলে এল। রাফসানকে ছেড়ে রাফি আর রিধীর মনটা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাসায় এসে দরজা খুলতেই এক গাদা ফুল এসে দুইজনের মাথায় পরলো। আর সাথে সাথে ফ্লোরে লিখা উঠল #নতুন_জীবনে_স্বাগতম। রাফি রিধী দুইজন দুইজনের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। এসব কি?? রাফি দরজা বন্ধ করে বেডরুমে গিয়ে দেখে রিধী,, রাফি আর রাফসানের ছবি দিয়ে সারা ঘর সাজানো আর ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে খাট আর ঘর সাজানো। রাফি চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে কি হচ্ছে?? একটু পরেই আয়মান ফোন দিল রাফিকে। রাফি ফোন পিক করল

-ভাইয়া এসব তাহলে তোমাদের প্ল্যান ছিল?
-ইয়েস ভাইয়া। এখন সমস্ত রোম্যান্স দিয়ে নতুন জীবনটাকে enjoy কর। আর সারপ্রাইজটা কেমন ছিল?
-ভাইয়া জাস্ট কিচ্ছু বলব না তোমাদের। শুধু বলব তোমরাই সব।
-এখন ফোন রাখো আর এঞ্জয় কর। দুইজন দুইজনকে আলাদাভাবে সময় দাও।
-হুম।

রাফি ফোন রেখে রিধীর পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

চলবে