#বেস্টু
#পর্ব_১৩
#Ariyana_Nur
“বন্ধু” এই ছোট্ট একটা শব্দের গভীরতা যে কত বড় তা কি কখনো মাপা যাবে???
“বন্ধু” এই ছোট একটা শব্দের মধ্যে রয়েছে আস্তা,ভরসা আর এক রাস বিশ্বাস।আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক যখন ধীরে ধীরে গভীর হয়ে যায় তখন আমরা তার আরেকটা নাম দেই বেস্ট ফ্রেন্ড,বেস্টু।আমাদের বন্ধুতো অনেক থাকে কিন্তু সবাই তো আর আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হয় না।
আমরা অনেক সময় আমাদের মনের কথা ফেমিলির কারো কাছে বলতে পারিনা।হয়তো পরিস্থিতির কারনে অথবা জড়তার জন্য।কিন্তু আমাদের না বলা সেই কথাগুলো আমরা আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড দের কাছে বলি।তাদের কাছে আমরা আমাদের সুখ,দুঃখ,ভালো লাগা,খারাপ লাগা সব কথাই সেয়ার করি।কখনো কখনো মনের বোঝ হালকা করার জন্য অথবা কখনো কখনো কোন সলিউশন পাওয়ার জন্য।
আমাদের সবাইর কম বেশি বন্ধু তো অনেক আছে।কিন্তু কয়জনের বন্ধুত্ব বাধর্ক্য বয়স পযর্ন্ত থাকে??কয় জনের বন্ধু একে অপরের বিপদের সময় তার পাশে থাকে???
বন্ধুত্ব তো এমন হতে হবে যে সুখে,দুখে,বিপদে,আপদে পাশে থাকবে।একজনের চোখের পানি দেখলে আরেক জনের চোখে পানি এসে পরবে।একজনের সুখে আরেক জনের মুখে হাসি ফুটবে।একজন ভেংগে পরলে আরেকজন আস্তা হয়ে তার পাশে থাকবে। বন্ধুত্ব তো এমন হওয়া চাই যে তার সব উইকনেসে তাকে ভরসা দিবে।হাজার বন্ধু থাকার চেয়ে যদি এমন একজন বন্ধু থাকে তাহলে সেই হবে লাকি ব্যাক্তি।
( বন্ধুত্ব নিয়ে অনেক বড় বড় ডায়লগ দিয়ে ফেলেছি।যদি কিছু ভুল বলে থাকি তাহলে ক্ষমা করবেন)
নিচে গিয়ে দেখি সবাই মন খারাপ করে বসে আছে।তাহিয়া আর আহাদ সোফায় এক সাথে বসে আছে।আমি কোন কথা না বলে ওদের মাঝখানে গিয়ে বসলাম।তাহিয়া আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থেকে আমাকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগল।আহাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখের কোনেও পানি।আহাদ ও আমাদের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে এক হাত দিয়ে আমাদের জরিয়ে ধরল। আমরা তিনজনই কান্না করছি।কিছুক্ষন এইভাবে বসে কান্না করার
পর পরিস্থিতি সামলাতে আমি চোখ মুছে কাপা কাপা গলায় বললাম….
—আ.রে.. এমন.. ম.রা.. কান্না করতাছোস কেন থাম এবার।আমি মরি নাই বাইচ্চা আছি।আর এখন যদি এতো কান্না করোস তাহলে বিয়ার সময় কান্না করার জন্য চোখের পানি পাবি না। আর তুই কেমন রে সেই কখন থেকে তোদের বাড়িতে খালি মুখে বসাইয়া রাখছোস।কিছুতো খাওয়া কিপটা ছেরি।
তাহিয়া নাক টেনে বলল…
—একটু আগে ভাবি কারে ঠুইসা ঠুইসা খাওয়াইলো।তোর জামাইরে….
আমি বিরবির করে বললাম….
—আরে ঐগুলো তো একজনের ভাষন শোনার সাথে সাথেই হজম হইয়া গেছে।
—কি….
—কিছুনা।যা তো আমার জন্য চা বানাইয়া নিয়া আয়।বেশি পেচাল পারিস না।এমনেই তোর কান্না দেইখা আমার মাথা ধইরা গেছে।
—আহারে আসছে আমার বুবুজান।নিজে বানাইয়া খা চা।আমি পারুম না।
—ঐ আমি না তোর বাসার মেহমান।কেমন মানুষ তুই মেহমানরে কস চা বানাইয়া খাইতে।
ও ভেংচি কেটে বলল…
—হুহ….আসছে আমার মেহমান।ঐ যে দরজা ঐ দিকে।যা ফট এখান থেকে।
আমি আহাদের মাথায় গাট্টা মেরে বললাম….
—মুখে কি আঠা লাগাইছোস বদমাইশ।দেখতাছোস না আমারে অপমান করতাসে।কিছু কস না কেন???
ও ওর চোখের পানি মুছে বলল…
—তোর মানসম্মান আছে যে তোরে অপমান করব।
আমি রাগি শুরে বললাম…
—কি বললি তুই।আমার জামাই যদি জানতে পারে তোরা আমারে আপমান করছোস তাহলে তোদের শুলে চড়াইব।
তাহিয়া খোচা দিয়ে বলল…
—তোর জামাই কেরে???হুম….
আমি ওর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই ও হেসে বলল…
—এক কাজ কর তুই তোর জামাইরে বল তোর জন্য চা বানাইতে।দেখি কত দরদ।আমি পারুম না।
আমি ওর পিঠে একটা তাল ফালিয়ে বললাম…
—কি মনে করস হ্যা।আমার জামাইরে যদি কই আমার জন্য সাত সমুদ্র তের নদীর পানি দিয়ে চা বানাইয়া দিতে তাহলে তাও দিব।
নিহাদ ভাইয়া শুর টেনে বলল…
—ও..মা..গো.. ট্টুরু.. লাভ..!!!!
সামনে তাকিয়ে দেখি সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।আমাদের হাসতে দেখে তারা ও হেসে দিলেন।
হাসতে হাসতে সাইডে তাকিয়ে দেখি মি.খচ্চর আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।এখন আমার নিজের মাথা নিজেরি ফাটাইটে মন চাচ্ছে।কেন যে কথা বলার সময় দেখে শুনে কথা বলি না।
কি ভাবছেন🤔????
আমরা কেই কাউকে সরি না বলে কিভাবে আবার আগের মত নরমাল বিহেব করছি???
আসলে আমাদের বন্ধুত্ব টাই এমন।আমরা একে অপকে কখনো সরি বা tnx বলি না।ঐ যে কথায় আছে না…
দোস্তি মে নো সরি নো tnx।আমরাও তেমনটাই করি😁
আমাদের মধ্যে কেউ কোন ভুল করলে সরি বলতে হলে অথবা কাউকে ধন্যবাদ দিতে হলে আমরা একে আপরকে জরিয়ে ধরে আমরা তা প্রকাশ করি।
_________________________
আমরা কথা বলছি আর এটা সেটা নিয়ে খুনসুটি করছি।এমন সময় ঝড়ের গতিতে একজন এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল….
—ভাবি….কেমন আছ তুমি???
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা কে হতে পারে।আমি মুচকি হসে বললাম….
—ভালো।তুমি ভালো আছো??আর ভাবি আমি না তুমি হবে আমার।
ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল…
—সে যেই হোক আমিতো তোমাকে ভাবিই বলব।দরকার পরলে তোমার বরকে ভাই ডেকে তোমাকে ভাবি বানাবো।
আমি মুচকি হেসে বললাম…
—পাগলি….
আহাদ আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—সুমুকে তুই খবর দিয়েছিস না???
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
ও আবার বলল…
—চুপ থাক বান্দর ছেরি।কেন তুই ওরে এই জায়গায় আসতে বলছোস।কেউ ওরে দেখলে কি ভাববে??আর আমার তো ১৪টা বাজাইয়া দিব ভ…
ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সুমু বলল…
—খবরদার তুমি আমার ভাবিকে বকবে না।একটা বারও তো তুমি আমাকে বললেনা তোমরা আজ পার্টি করছো।আবার বড় বড় কথা।আর আমাকে ভাবি দাওয়াত দেয় নি আমাকে আমার বেয়াইন দাওয়াত দিয়েছে।তোমার মত না যে বিনে দাওয়াতে মুখ উঠিয়ে চলে যাব।হুহ….
আহাদ সুমুর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল…
—করো বেশি করে পকর পকর করো।একটু পর যখন সব হাওয়া ফুস হয়ে যাবে তখন বুঝবে ঠেলা।আর ভুলেও তুমি কাউকে কোন উল্টাপাল্টা কিছু বলবেনা।কেউ কিছু জিগ্গেস করলে বলবে শুধু, তুমি আমার কাজিন।
ওর কথা শুনে সুমু গাল ফুলিয়ে বলল…
—বয়েই গেছে তোমাকে আমার জামাই বলতে।হুহ..
আহাদ রাগি শুরে বলল…
—দেখ আমি কিন্তু মজা করছি না।তু….
তাহিয়া ওকে ধমক দিয়ে বলল….
—ঐ কুত্তা চুপ থাকতো।আর ঘেউ ঘেউ করিস না।সুমু তুমি চল তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
আমরা সুমুকে নিয়ে আরেক রুমে দিকে গেলাম।যেখানে বড়রা বসে আছে।যেতে যেতে তাহিয়া বলল…
—আমাদের বাড়িতে আজ আমরা আমরাই আছি।বাবা,মা আমাদের মধ্যে যাতে কাবাবে হাড্ডি না হয় তাই তারা এক আত্মীয় এর বাসায় বেড়াতে গিয়েছে।
__________________________
সুমুকে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।সুমু মেয়েটা আসলেই অনেক মিশুক।আসতে না আসতেই সবার সাথে কত ফ্রি হয়ে কথা বলছে।একটু পর বেলকেনি থেকে মি.খচ্চর ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে আসল।তিনি কথা বলা সেই করতেই তাহিয়া তাকে দেখিয়ে সুমুকে বলল….
—সুমু এই হল আমাদের হোনে ওলে জিজাজি…।আর আমাদের মানহার উ…নি….
সুমু তার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলল।
আর বসে বসে কাচুমাচু করতে লাগলো।
আর তিনিও যে সুমুকে দেখে অবাক হয়েছে তা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
#চলবে