#বেয়াইনের_প্রেম
পর্ব_11 (শেষপর্ব)
লেখাঃ নীল মাহমুদ (পিচ্চি পলা)
চাকরি তো,,, এতে রাগার কি আছে?? স্যারের মেয়ে কি আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে নাকি??
ওহহ তাইনা আচ্ছা বেশ থাকো সারাদিন স্যারের মেয়ের সাথে,, যা মন চায় করো আমার কি??
তিশা রেগে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো আমি বসে রইলাম। বুঝলাম হিংসা হচ্ছে ওর সাথে হারানোর ভয় আর এগুলোই প্রকৃত ভালোবাসা। কোনরকম খেয়ে উঠে পড়লাম। তিশার রুমে গিয়ে দেখি বালিশে মুখ গুজে ফুপাচ্ছে মেয়েটা। ওর পাশে বসে ওর কাধে হাত রেখে ডাকছি,,
তিশা,,, তিশা
তিশা হাতটা ঝেড়ে সরিয়ে দিল
সোনা পাখি প্লিজ রাগ করোনা ভুল বুঝোনা আমাকে
চলে যাও এখান থেকে
আমি তো ইচ্ছে করে যাচ্ছি না স্যারের আদেশ কি করব বলো। আর স্যার তো জানে তুমি আমার হবু বউ। তাহলে কেন এমন করছো সোনা পাখি
ওই মেয়ের সাথে সারাদিন থাকবা আমার কি খারাপ লাগবে না
হুমম বুঝছি তো আচ্ছা আমি প্রমিজ করছি এমন কিছু হবে না যার জন্য আমার মিষ্টি বউটার মন খারাপ হয়।
সত্যি তো
হুমম সত্যি সত্যি সত্যি
আমি তোমাকে হারাতে পারবনা নীল। বিছানা থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
একটুও মন খারাপ করবা না। আমি তোমার আছি তোমার ই থাকব
আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তিশা আমাকে। আমার কাধে কিস করছে। আমি পাগলিটার মত করে ওর গালে কিস করলাম।
নীল
হুমম
এই নী
হুমমমমমম
I love u
I love u too
হুমম হুমম
কি
হুমম হুমম হুমম
ওহ আচ্ছা বুঝেছি
কি গো
আরো আদর লাগবে
যাহহ দুষ্ট আমার বুঝি লজ্জা লাগে না
ইশশ কিসের লজ্জা বলতে বরের কাছে
জানিনা আমি
আচ্ছা শুনো আমি এখন রুমে যাই,,, তুমি পড়তে বসো পরে আসব কেমন
হুমম আমি ফোন দিব
আচ্ছা।
রাতের গল্পটা আর না বলি।। সবাই বুঝবে।
যাইহোক তিনদিন পর স্যার দেশের বাইরে চলে গেলেন এখন অফিসের দায়িত্ব নিলো মেঘলা মেডাম। সকালে অফিস যেতেই আমাকে ডেকে পাঠালো।
আসতে পারি মেডাম
হুমম আসো
থ্যাংকস মেডাম
উফফ এতবার মেডাম মেডাম করবা নাতো। আমি তুমি করে বলব তুমিও বলবে
কি বলছেন আপনি আমার Boss আপনাকে তুমি করে বলাটা ঠিক হবে না
সবার সামনে মেডাম ডেকো বাকি সময় তুমি। শুনো আমরা বন্ধু হতে পারি। আমার এত রেসপেক্ট নিতে ভালো লাগে না। তুমি আমার সমবয়সী প্রায়।
কিন্তু
কোন কিন্তু নয়। এখন শুনো আমাদের উত্তরাতে যে সাইটটা কেনা হলো ওটা ভিজিটে যেতে হবে। ভাবছি তুমি আর আমি যাব। ভিজিট শেষ করে লান্চ করব একসাথে তারপর ফিরব।
আচ্ছা মেডাম থুক্কু মেঘলা
হা হা হা ওকে ওকে। আমরা এখনই বের হবো।
ওকে চলো।
অফিসের গাড়ি না নিয়ে মেঘলা ওর পারসোনাল গাড়ি নিয়ে বের হলো। স্যারকে ফোন করে জানালো সাইট দেখতে বের হয়েছে আর সাইট ম্যানেজারকে জানালো আসতেছি আমরা।
একটু পর আমার ফোন এলো। ফোনটা তিশার।
হ্যালো তিশা
কি বেপার তুমি না অফিসে গেলে এখন আবার গাড়ির শব্দ কেন কই তুমি এখন
ওহ,, মেডামের সাথে বের হলাম
মানে
উত্তরা আমাদের একটা সাইট দেখতে যাচ্ছি
বাহহ নীল সাহেব চমৎকার অফিস রেখে এখন ঘুরতেও যাচ্ছেন। আচ্ছা সাবধানে যাবেন। All the best.. Bye
তিশা আমার কথা টা শুনো হ্যালো হ্যালো
তিশা ভুল বুঝে ফোনটা রেখে দিল। কল ব্যাক করলাম কিন্তু ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বাসায় গেলে আজ শিওর টর্নেডো বয়ে যাবে। ভাবীকে ফোন করে সব খুলে বললাম। ভাবী বললো উনি তিশাকে বুঝিয়ে বলবে। একটু আশা পেলাম।
মেঘলা জিজ্ঞেস করলো
কে ফোন করলো
আমার হবু বউ
কি??? হবু বউ মানে
মানে আবার কি?? যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে সে। ওর নাম তিশা
ওহহ আচ্ছা। তো কেমন দেখতে মেয়েটা?? ছবি দেখাবা আমাকে
তিশার সাথে তোলা কিছু ছবি মেঘলা কে দেখালাম। মেঘলা বললো
চয়েজটা সুন্দর তোমার। কিউট আছে মেয়েটা।
থ্যাংকস
তো ও কি রাগ করলো নাকি
হুম তোমার সাথে বের হয়েছি শুনে রেগে গেছে। ফোন বন্ধ করে রেখেছে
হাহাহা ভালো হইছে এবার বুঝবা মজা
হাসছো তুমি?? আমি বুঝতেছি বাসায় গেলে আজ আমার শনি আছে কপালে।
টেনশন করো না। বাসায় গিয়ে আমাকে কল দিও আমি ওর সাথে কথা বলব।
ওহহহ বাচালে
হুম বেপার না।
আমরা সাইট ভিজিট শেষ করে তারপর বিকেলে ফিরে এলাম। মাঝে খাওয়াও সেরে নিলাম।
অফিস থেকে বাসায় আসার সময় অনেক গুলো চকলেট নিলাম। আর কিছু ফুল। বাসায় ঢুকতেই আম্মু বললো
কি রে কই গেছিলি আজ
ওই মেডামের সাথে সাইট দেখতে
আর এই সাইটে গিয়ে দেখ কেমন রেগে আগুন হয়ে আছে জলদি গিয়ে শান্ত কর
এজন্যই তো এতকিছু নিয়ে এলাম
আচ্ছা যা
জলদি গেলাম তিশার রুমে। টেবিলে পড়ছে। পিছনে গিয়ে ওর চোখের সামনে চকলেট এর বক্সটা ধরলাম
চকলেট দেখে তিশা খুশি হলো কিন্তু আমার হাতটা দেখে পরক্ষণেই মুখে কালো মেঘ জমিয়ে চকলেট গুলো সরিয়ে দিলো
তখন তিশার সামনে ফুলগুলো ধরলাম আর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম
I love u তিশা
তিশা আমার দিকে তাকিয়ে বললো
এসব আমার জন্য কেন আনছো যাও ওই মেডামকে দাও গিয়ে
উলে বাবালে বউটা আমার রেগে আছে। শুনোনা মেডাম এর আদেশ কি করে নিষেধ করব বলো। চাকরি থাকবে না তো
লক্ষীটি বিশ্বাস করো তোমার নীল তোমাকে ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকায় না কথাও বলেনা। মেডামকে তোমার কথা বলেছি। উনি কথা বলবে তোমার সাথে।
ফোনটা বের করে কল দিলাম মেডামকে। তারপর তিশাকে ধরিয়ে দিলাম।। প্রায় বিশ মিনিট ধরে তারা কথা বললো। অবশেষে আমার মিষ্টি পাগলিটার রাগ কমলো যখন জানলো মেঘলা আমার ভালো একটা বন্ধু। কিন্তু তিশা আমার ওপর রেগেই থাকলো। মিথ্যা অভিমান,, মানে বেশি ভালোবাসা আদর কুড়ানোর ফন্দি। তিশাকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দিলাম। কিন্তু সে যেন এতে খুশি নয়। আদরটা আরো বেশি চাচ্ছে।
এভাবেই চলছে আমাদের অভিমান আর খুনসুটি নিয়ে। দেখতে দেখতে পরীক্ষা ও শেষের দিকে। ওদিকে অফিসে কাজ গুলো বেশ নিজের মত গুছিয়ে নিছি। তাতে স্যারও খুশি। শেষ পরীক্ষা দিয়ে তিশাকে নিয়ে বাসায় ফিরছি,,, রাস্তায় গাড়ী থামাতে বললো তিশা।
কি হলো
নীল কিছু কথা বলব তোমাকে
হুমম বলো
রাগ করবে নাতো?? ……..
রাগ করব কেন বলো,, হটাত গাড়ী থামাতে বললে তো তাই একটু অবাক হলাম।
ইয়ে মানে,,, বলছিলাম যে,,,,,
হুমমম বলছিলে কি
ইয়ে
তিশা বলো প্লিজ টেনশন হচ্ছে কিন্তু আমার
না তেমন কিছু না ওই যে
উফফফ বলো তো
নীল আমি একটা বেবি চাই ।
কথাটা বলেই তিশা দু’হাতে ওর মুখটা ঢেকে নিলো লজ্জায়
কি বললে আবার শুনি
না না না কিছু বলিনি আমি
তিশা আমার দিকে তাকাও তো
না পারবো না লজ্জা করছে খুব
উলে আমার লাজুক বউটা রে। শুনো আমি আজই বলব আম্মু কে তিনদিনের মধ্যে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে। আর তারপর দেখি বউয়ের ইচ্ছে টা পুরন করা যায় কিনা
আচ্ছা এত জলদি বেবি নিলে আমার পড়াশোনা তো শেষ। না না আরো পরে নিব আগে বিয়ে টা হোক।
হুমম আমিও তাই চাই,,, এত জলদি বেবি নিলে তোমাকে আদর করে যে মন ভরবে না তোমার নীলের।
যাহ দুষ্ট।। গাড়ী থেকে নেমে আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসো যাও
আচ্ছা বসো আমি নিয়ে আসছি।
বউয়ের বায়না মেটাতে আইসক্রিম নিয়ে এলাম
এ কি একটা কেন তোমার টা কই
আমার লাগবে না তো একটাই দুজনে খাবো
ইশশ কত শখ দিব না আমি। হা করে তাকিয়ে থেকে আমার খাওয়া দেখো তাতেই শখ মিটবে বুঝলে
ছুচনি মেয়ে একটা খাও তুমি আমি খাব না
খেয়ো না এত জোর করছে কে শুনি
হয়ছে খাও এখন,,
কাগজটা খুলে দিবে কে শুনি
এই নাও এখন খাও
তিশা একটু ঢং করেই খাচ্ছে আর এমন ভাব করছে যেন অমৃত খাচ্ছে সবটাই আমাকে জ্বালানোর জন্য। আজ ও খুব খুশি। পরীক্ষা শেষ। আর বিয়েটাও জলদি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আমি ওর খাওয়া দেখছি,, লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মন চাচ্ছে আইসক্রিম সহ ওর ঠোটগুলো কামড়ে দেই তাহলে বুঝবে কেমন মজা।
তিশা ইচ্ছে করে আইসক্রিম টা ওর ঠোটের চারপাশে লাগিয়ে নিলো যেন খেতে গিয়ে লেগে গেছে।
নীল নীল দেখোনা ঠোঁটে আইসক্রিম মেখে গেছে একটু মুছে দাও তো
আমি আর কি দুষ্ট তার চেয়ে ও বেশি দুষ্ট আমার মিষ্টি তিশা। আইসক্রিম এর সাথে আমার ঠোটের ছোয়া না পেলে যেন অপুর্ণ থেকে যায় সব। আমিও একটু জ্বালাই সমস্যা কি??
এই নাও টিসু দিয়ে মুছো
তিশা রেগে টিসুটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো
কি হলো মুছলে না
জানোনা টিসু দিয়ে এটা মুছতে নেই
তো কি দিয়ে মুছতে হয় শুনি
না থাক তোমার আর বুঝতে হবে না হুহহহ
আরেকটা স্পেশাল টিসু আছে আমার কাছে ওটা দিয়ে খুব যত্ন করে মুছা যায় দেখবা
কই
তিশার মুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর তিশা আস্তে করে চোখগুলো বন্ধ করে নিচ্ছে। তিশার চুলের ভেতর হাত দিয়ে ওর ঠোটে লেগে থাকা আইসক্রিম টা আমি জিভ দিয়ে খেয়ে নিচ্ছি সাথে ওর ঠোটগুলো ও। কিছু সময় পর তিশা বললো
আর একটু লাগবে
বাসায় গিয়ে খাব এখন চলো,, আম্মু ওয়েট করছে
আচ্ছা ঠিক আছে বর মশাই। সারাজীবন এভাবে ভালোবাসতে হবে না হলে কিন্তু মেরে হাত পা ভেঙে বসিয়ে রাখব হুমম
তোমাকে ভালো না বেসে কই যাব বলোতো
জানি তো দুষ্ট বর আমার
কিছু টা রোমাঞ্চ করে চলে এলাম বাড়িতে। সবাই মিলে একসাথে খাবার খেয়ে নিলাম
বিকেলে তিশার আম্মু আব্বু চলে এলো হটাত। আব্বু আম্মু কে নিয়ে কি জরুরি আলোচনা করছে কে জানে। ভাবী এসে বললো
নীল পরশু তোমাদের বিয়ের আয়োজন করেছে। আর অনুষ্ঠান পরে হবে। একমাস পর। কাল সবাই মিলে একসাথে শপিং এ যাবো। তুমি অফিস থেকে ছুটি নিও কাল।
ইয়য়য়য়য়য়য়য়াাাহহহহহহু
ফাজিল একটা বিয়ের কথা শুনেই এমন লাফাচ্ছ কেন
তুমি বুঝবা না ভাবী,,, যা হবার তাতো আগেই হয়ে গেছে
কি হয়েছে
কিছু না যাও তোমার হারামি বোনটাকে বলো আমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করতে রাতে। ভালো না হলে বিয়ে বন্ধ হুমমম
ভাবী গোটা কয়েক চিমটি দিয়ে চলে গেলো। কি যে যন্ত্রনা দুই বোনই শুধু চিমটি দিতে পারে। চলে যাব এ বাড়ি ছেড়ে।
রাতে মেঘলা কল দিলো আমাকে
কি বেপার নীল সাহেব সারাদিন কোন খোজ নিলে না যে তিশার ভয়ে নাকি
আরে না না তিশাকে নিয়ে বাসায় এলাম পরে ওর বাবা মা এলো। আগামী পরশু দিন বিয়ে আমার। ভাবলাম কাল অফিস গিয়ে তোমাকে জানিয়ে ছুটি নিব। শপিং করতে হবে সবাই মিলে।
omg.. Congratulations. তোমাকে কাল অফিস আসতে হবে না। আমিও কাল তোমাদের সাথে শপিং এ আসব বুঝলে
সত্যি আসবে তুমি
হুমম আসব। তিশাকে আমার পছন্দ মত সব কিনে দিব। হাজার হলেও আমার বন্ধুর বউ বলে কথা।
আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে সকালে আমি তোমাকে কল করব।
হুমম তিশা আছে পাশে
না তো ও রান্না করছে আমার জন্য
আচ্ছা তাহলে কাল দেখা হচ্ছে।
আচ্ছা ভালো থেকো।
আচ্ছা বাই
মেঘলার কল কেটে চলে গেলাম কিচেনে। দেখি বউ আমার আম্মুর সাথে রান্নার কাজে বিজি।
খক খক করে কেশে ভিতরে গেলাম
কিছু লাগবে তোর
না আম্মু ওই একটু মাংস খাব বলে এলাম। ভাজা মাংস দাও তো
ওহ গন্ধ পেয়ে গেছিস তাইনা,, মাত্র দু পিস পাবি নাহলে একটাও রাখবি না জানি
তিশা হাসছে আম্মুর কথা শুনে
আম্মু একপিছ ও দিবা না তোমার রাক্ষস ছেলেকে। কত কষ্ট করে রান্না করছি আমি
ইশশশশশশশ থাক খাবো না যাও চলে গেলাম
আম্মু স্বস্তি পেয়ে বললো
যা তো এখান থেকে
আমি মনে কষ্ট আর পেটে কুড়কুড় ক্ষুধার ডাক নিয়ে রুমে এলাম। বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছি। হটাৎ একটু পর মাংসের সেন্ট আসছে। ভাবলাম খেতে পারছিনা বলে নাকটাও আজ আমার সাথে ইয়ার্কি করছে। কিন্তু খেয়াল করলাম সেন্টটা তীব্র আকার নিচ্ছে। চোখ খুলতেই দেখি বালিশের পাশে এক বাটি ভাজা মাংস। দেখেই চোখ দুটো ঝলমল করে উঠলো। আর পাশে তিশা দাড়িয়ে মুচকি হাসছে। ওকে দেখে বললাম
এনেছো কেন খাব না আমি নিয়ে যাও
আচ্ছা তাই বুঝি
হুমম তুমি কষ্ট করে রান্না করছো তুমি খাও
ঠিক আছে নিয়ে যাচ্ছি
তিশা হাত এগিয়ে বাটিটা ধরে দাড়ালো। তারপর একটা মাংস নিজে খাচ্ছে আর বলছে,,
আহহ কি স্বাদ,, উমমমমমম হেব্বি লাগছে,, আহা
মেজাজটা গরম করো না তো খেতে হয় বাইরে গিয়ে খাও
তিশা আমার পাশে বসে আমার মুখে মাংস তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো। কতক্ষণ আর অভিমান দেখিয়ে না খেয়ে থাকব?? গপাগপ শুরু করে দিলাম।
আমি খাচ্ছি আর তিশা আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে মুচকি হেসে
খুব ভালো লাগে খেতে তাইনা
হুমমম খুব প্রিয় তো। এই নাও তুমিও খাও
না গো আমার খেতে হবে না তুমিই খাও রাক্ষস বর মশাই
যা বলার বলো তো খাবার পেলে মাথা ঠিক থাকে না আমার
হাহাহাহা পাগল একটা
ওহ শুনো,, কাল শপিং এ আমাদের সাথে মেঘলা ও থাকবে ও নাকি ওর পছন্দ মত তোমার জন্য শপিং করে দিবে।
ও কেন দিবে হুমম
আমার বন্ধু তো তাই
আচ্ছা সেটা কাল দেখা যাবে
হুমম পরশু রেডি থাইকো
কেন কেন
বাসর করব তো তাই
ইশশশ ওটা তো হয়ে গেছে আর দরকার নেই
এহহহহহ বললেই হলো নাকি
দেখা যাবে সেদিন এখন যাই রান্না টা শেষ করে আসি
আচ্ছা যাও,, শুনো আর ৭/৮ পিস দিয়ে যাও তো
এবার কিন্তু মাইর দিব নীল
আচ্ছা লাগতো না
তিশা চলে গেলো রান্নাঘরে।
রাতের খাবার বেড়ে ডাকলো আমাকে। একপেট ক্ষুধা নিয়ে চলে গেলাম পছন্দের বিরিয়ানি খেতে। আম্মু সবার আগে আমার প্লেটে দিলো। রান্না টা খুব টেস্টি হইছে।
আজ আর তিশার পড়া নেই। টিভির রুমে গিয়ে টিভি দেখছে। আমি রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবছি দুদিন পর তিশা আমার সত্যি সত্যি বউ হবে। ভাবতেই কেমন জানি লাগছে। নতুন একটা দায়িত্ব চেপে গেলো আমার।
পরদিন সকালে সবাই শপিং করতে বের হলাম। মেঘলাকে ফোন করে শপিং মলে আসতে বললাম।
সময়মত চলে এলো গাড়ী নিয়ে। পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। এখন তিশা আর মেঘলা একসাথে হাত ধরে ঘুরছে।
মেঘলা তিশার জন্য অনেক কিছু কিনলো আর আমার জন্য সুন্দর একটা সেরোয়ানি। জমজমাট শপিং শেষ করে বাইরেই লান্চ করলাম। সারাটাদিন খুব সুন্দর করে পার হলো আমাদের।
রাতে বাসায় ফিরে টানটান হয়ে শুয়ে পড়লাম আর পারছিনা। ঘুরতে ঘুরতে পা বেথা হয়ে গেছে।
কোনরকম খেয়ে শুয়ে পড়লাম সবাই।
রাত তখন দুটো বাজে। তিশার ফোনে ঘুম ভাঙলো।
নীল,, ঘুমাচ্ছ
না মাছ ধরছি
একটা মাইর দিব
কি হইছে বলো
শাড়িটা পরতে পারছিনা একটু আসবা রুমে
এতরাতে তোমাকে শাড়ি পরতে কে বললো ও মা গো
এতক্ষণে চলে আসতে পারতে কিন্তু।
হুমম রাখো ফ্রেশ হয়ে আসছি
জলদি আসো দুষ্ট বর
বুঝলাম তিশার মনটা ছটফট করতেছে আমার জন্য। কি আর করা বউয়ের ডাক না শুনে কই যাবো।
তিশার রুমে ঢুকে চোখ আমার ছানাবড়া হয়ে গেলো। এটা কি পরে আছে তিশা??? ………
তিশার এমন অবস্থায় আমার চোখ চড়কগাছে উঠে ঝুলছে।
এসব কি পরেছো তুমি লজ্জা শরম কি নাই
লজ্জা তো তখন পাবো যখন বাইরের কেউ আমাকে দেখবে আর যে দেখছে সে তো আমার হবু বর মশাই। আর আমি খুব ভালো করেই জানি আমার বরটা খুব দুষ্ট, তার সাথে চলতে গেলে তো আমাকে একটু দুষ্ট হতে হবে তাইনা
ওহহ আচ্ছা আচ্ছা আমাকে কপি না করলে কি হয় না
জি না হাদারাম,, এখন আমাকে শাড়িটা পরিয়ে দাও তো লক্ষী বরের মত
দিতে পারি একটা শর্ত আছে
কি শর্ত শুনি মিঃ বেয়াই সাহেব
শুধু শাড়ি নয় বাকি যা কিছু আছে সেগুলো সবই পরিয়ে দিব।
কি বললে তুমি?? আমি মরে যাব তাহলে
আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করে থাকব কেমন
সত্যি তো
আরে বাবা হ্যা
ওকে তাহলে চুপচাপ কাজে লেগে পড়ো। যদি সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিতে পারো তবে লম্বা একটা লিপকিস পাবে বুঝলে
সেটা পরে দেখব এখন কাজ শুরু করি
জি জাহাঁপনা
তারপর আমি চোখদুটো বন্ধ করে তিশাকে আমার মনের ক্যানভাসে বসালাম। আমার মনের আবির দিয়ে ওকে রাঙ্গাবো নিজ হাতে। এক এক করে ওর নগ্ন শরীরটাকে ঢেকে দিচ্ছি নির্দিষ্ট পোশাক দিয়ে। তিশাকে জামা পরানোর সময় যখন ওর শরীরে আমার হাতের ছোয়া লাগছে তখন তিশা কেপে কেপে উঠছে। ওর নিঃশ্বাস কিছু টা ভারী হয়ে গেছে। আমার কথা আর নাই বা বললাম। এখন শাড়ি পরানোর সময় তিশাকে বলে চোখ খুললাম। তিশার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা লাল হয়ে গেছে। তারপর লাল শাড়িটার ভাজ খুলে তিশার কোমরের চারপাশে গুজে দিচ্ছি আর তিশা আমার পিঠে খামছি মেরে ধরছে।
এভাবে খামচি দিলে আমি পরাব কি করে শুনি
তোমার হাতটা বড্ড দুষ্ট গো আমি কি করব
একটা মাইর দিব কিন্তু
দাও দাও দেখি কেমন করে পারো
উফফ পাগলি একটা
আবার শাড়িটা পরাতে মনোনিবেশ করলাম। এবার আচলের ধারটা ওর কাধে রেখে আঙ্গুল ঘুরিয়ে কুচি করছি। তিশা মুচকি মুচকি হাসছে। এরপর কুচিটা ওর নাভির একটু নিচে গুজে দিতেই তিশা আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
তিশা কি হলো
পাগল হয়ে যাচ্ছি তোমার হাতের ছোয়ায়
একটু বাকি আছে শেষ করি
হুমম
তিশার আচলটা ঘোমটা করে মাথায় দিয়ে দিলাম। তিশা লজ্জা মুখে নিচু হয়ে আছে। ওর থুতনি তে হাত রেখে মুখটা উচু করে ধরলাম।
উমমমমম,, একটু বাকি আছে যে
আবার কি
লিপস্টিক টা
ওহহহ,, ওই যে বিছানার উপর আছে হুমমম,,
তিশার ঠোট জোড়াতে হালকা করে লিপস্টিক দিয়ে দিলাম। এখন সুন্দর লাগছে। তিশাকে নিয়ে গেলাম আয়নার সামনে।
তো আমার গুলটুসি বউ দেখোতো তোমার বরটা তোমাকে কেমন শাড়ি পরালো। পছন্দ হলো কি না তোমার
বাহহহহ আমার বরটা যে শাড়ি পরাতে পারে এত সুন্দর করে জানা ছিল না তো
ইচ্ছে ছিল নিজ হাতে বউকে শাড়ি পরাবো। আজ ইচ্ছে টা পুরন হলো
ও মা তাই বুঝি
হুমম
তাহলে তো আমার কথাটাও রাখতে হয় এখন
কি কথা
ওই যে বললাম,, লম্বা একটা লিপকিস
আচ্ছা তাই তো বলি বউয়ের মুখটা কেমন দুষ্ট হাসিতে ভরে আছে
তিশা আমার টিশার্ট টা টেনে ধরে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আমার ঠোটগুলো ও লাল ঠোটে চেপে ধরে কিস করতে শুরু করলো। ওর নিঃশ্বাস টা আমায় দুর্বল করে দিচ্ছে। হটাত করে আমার গলায় খুব জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। আমি চিল্লাতে শুরু করতেই আরেকটা বসালো আমার ঠোটে। এ কোন বিপদে পড়লাম আজ কে জানে। তারপর ইচ্ছে হলো দুজনে হারিয়ে যাই দুজনের মাঝে। কিন্তু খেয়াল করলাম বাইরে আযান শুরু হলো। কখন যে সময় পার হয়ে গেছে টের পাইনি। জলদি উঠে তিশাকে বললাম শুয়ে পড়তে। আমিও রুমে চলে এলাম।
বিয়ের দিন…..
সকাল থেকে কিছু আত্মীয় স্বজন আসতে শুরু করলো। তিশার আব্বু আম্মু গতকালই এসেছে। সবকিছুর আয়োজন আমার বাড়িতেই হবে সেভাবেই কথা হয়েছে। দুপুর হয়ে গেলো কিন্ত সকাল থেকে একবার ও তিশাকে দেখলাম না মনটা কেমন কেমন করছে। একটু দেখব বলে তিশার রুমের সামনে এলাম। জানালা দরজা সব আটকানো,, দেখব কি করে এখন। দরজায় টোকা দিচ্ছি সাড়াশব্দ নেই। হটাত ভাবী বললো
কে দরজায় টোকা দেয়
আমি আর কে
কি চাই তোমার
দরজাটা খুলো কাজ আছে
এখন খোলা যাবে না, একবারে রাতে
তিশাকে একটু দেখব তো
বললাম তো হবে না এখন। বাসর ঘরে রেখে আসব তখন মন ভরে দেখো।
করব না বিয়ে তোমার বোনকে গেলাম আমি।
আচ্ছা যাও যাও
তিশার মিষ্টি হাসিটা কানে ভেসে এলো,, তাতেই মনটা শান্তি পেলো একটু।
আম্মু আর ভাইয়া আমার রুমে এসে আমাকে পাঞ্জাবি দিয়ে বললো পরতে।
ভাইয়া আবার আমার সাথে শুরু করলো। এতবড় হলাম দুজন তবুও খুনসুটি গেলো না
সবই কপাল বুঝলি,, আমার বিয়েতে অনুষ্ঠান করলো আব্বু আর তোর বিয়েতে কিছু ই করলো না। এতেই কিন্তু প্রমান হলো ছোটবেলায় ও কত বার বলছি তুই ছিলি কুড়িয়ে পাওয়া এবার বিশ্বাস হলো তো
বিয়ের দিন ও এমন করবি আমার সাথে ? ( ভাইয়াকে তুই করে বলি ছোট বেলা থেকে)
সত্যি টা বললাম আরকি
শোন তোর বিয়ে তে যতটাকা খরচ করছে তার বেশি টাকা খরচ করবে আব্বু আমার বিয়েতে। আর সেটা সামনে মাসে বুঝলি
ওটাতো তোকে স্বান্তনা বানী শুনাইছে
হইছে আমি কুড়িয়ে পাওয়া তো খুশি তুই এবার।
স্বীকার করতে পারলেই হলো
ভালো হইছে যা,, আমি এমনি খুশি তিশাকে আমার বউ বানিয়ে আনছে
ওরা দুবোন মিলে প্ল্যান করছে আমাদের শায়েস্তা করার জন্য। রেডি থাকিস
আরে যা যা তোর বউয়ের মত না আমার তিশা দেখিস
হুমম এখন চল সবাই অপেক্ষা করে আছে
সন্ধ্যার পর সবকিছু ঠিকঠাক। বিয়েটাও পড়ানো হয়ে গেলো। সবাইকে সালাম করলাম। সবাই আমাদের দোয়া করলো মন ভরে। সারাদিন বিয়ের টেনশনে কিছু খেতে পারিনি। বেশ ক্ষুধা লেগেছে। আম্মু কে বললাম কিছু খাবার দিতে। মুখের ওপর সোজা বলে দিলো বউকে বলতে। কেমন ডা লাগে?? নতুন বউকে কি করে বলি এখন?? সব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেই খাবার নিয়ে বসে পড়লাম। এ ঘটনা দেখে সবাই হাসতে শুরু করলো। যাগ গে তাতে আমার কি??
সময়টা কেন জানি ইয়ার্কি শুরু করলো। বাসর ঘরে যাবার জন্য মনটা কেমন আকুপাকু করছে। বউটা একা একা আছে মনে হয়।
সবার দোয়া আর ভাই ভাবীর শয়তানি হাসিটা দেখে অবশেষে গেলাম বাসর ঘরে। আহা বউটা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকবে এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু একি?? কোথায় ঘোমটা?? বউ আমার শাড়ি খুলে প্লাজু আর টিশার্ট পরে বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে মোবাইলে গেমস খেলছে। আজিব আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি অন্য কোন গ্রহে এলাম কিছু ই মাথায় ঢুকছে না। কনফিউশান টা ভিতরে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে তিশার দিকে তাকিয়ে আছি।
ওহ এসেছো তাহলে
হুমম কিন্তু
কিসের কিন্তু আবার
তোমার শাড়ি কই আর এসব কি পরছো বাসর রাতে
কেন শাড়ি পরেই বাসর করতে হবে এমন কোন কথা আছে নাকি,, গরম লাগে,, শরীরে চুলকায় ওই শাড়ি পরলে তাই ওসব খুলে এটা পরেছি। কোন সমস্যা তোমার বর মশাই
এমনটা কোথাও শুনিনিতো আগে তাই আরকি। তবু ভালো তোমার যেটা মন চাইলো।
হুমম ওই শাড়িটা বাদে বাসর রাতের বাকি সবই একই আছে।
আচ্ছা বুঝলাম,,, এই কথা ভুলেও আর কাউকে কখনো কাওকে বলবা না। শুনে সবাই হাসবে কিন্তু
হুমম বলবো না তো বর মশাই
এখন তো আর লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে দেখতে আসতে হবে না কি বলো
লআমার মনে হয় ওটাই ভালো ছিল। অন্য রকম একটা ভালোবাসা কাজ করতো তবুও এখন আমি তোমার একমাত্র বউ তাই আমি এখন থেকে যেভাবে বলব ওভাবেই হবে।
তা কি করতে হবে শুনি
তেমন কিছু না শুধু কোন মেয়ের দিকে নজর দিবা না তোমার বুকে শুধু আমাকে রাখবে আর প্রচুর ভালোবাসা দিবে।
ওহ ওকে সেটা তো দিব আর আদরটা
মন চাইলে দিও না চাইলে নাই আমার এত আদর নেয়ার শখ নেই বুঝলে
ওরে আল্লাহ কার মুখে কি শুনি
হিহিহি যাও এখন কাছে আসবা না আমি ঘুমাবো। বিয়ের টেনশনে ঘুম হতো না আগে আজ মন ভরে ঘুমাবো
একটা চটকানা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিব তোকে হারামি,, বরটা কষ্ট পাচ্ছে আর বউ নাক ডেকে ঘুমাবে তাইনা
পারলাম না এত সেবা করতে সরো
তিশা কে আপন করে পেতে বা তিশার মাঝে হারানোর প্রণয়লীলায় মেতে উঠতে গিয়ে লাইটটা বন্ধ করতেই ভুলে গেছি। এতদিন অনেক রোমাঞ্চ করেছি কিন্তু আজ যা হবে সেটা তিশা আর আমার মাঝেই থাক। সেটা তোমাদের বলব না। তোমরা নীল আর তিশাকে নিজেদের মত করে রোমাঞ্চ টা সাজিয়ে ভেবে নিও।
আজ বেয়াই বেয়াইনের সম্পর্কটা বর বউ এ রুপান্তরিত হলো। বড় ভাই হয়ে গেলো ভায়রা। কি আজিব। তবুও সবাই ওদের জন্য দোয়া করো।
সমাপ্ত
সম্পুর্ন গল্পটা কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই জানাবেন।
ভালো থাকো সবাই।
আল্লাহ হাফেজ ❤