বোনু পর্ব-১৮

0
2973

#বোনু
#Part_18
#Writer_NOVA

সারা কনসার্টে হৈচৈ পরে গেল।উষার চার ভাইয়ের পাগল প্রায় অবস্থা। উষাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই খবরটা চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে দেরী হলো কিন্তু উষাকে খুঁজতে দেরী হলো না।সারা কনসার্ট তন্য তন্য করেও উষাকে যখন কোথাও পাওয়া গেল না তখন চার ভাই আশেপাশে খোঁজ লাগাতে শুরু করে দিলো।আদিলে ফোনে ওর আন্ডারের অফিসারদের সাথে কথা বলছে।

আদিলঃ এট এনি কোস্ট আমার বোনুকে আমার সামনে দেখতে চাই। কোথায় আছে? কিভাবে আছে? তা আমি জানি না।আমি আমার বোনুকে জীবিত ও সুস্থ দেখতে চাই। সকল ফোর্স লাগিয়ে দেও।আমি ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার চোখের সামনে আমার বোনুকে চাই। আমি বারবার বলছি। যদি তোমরা তা করতে ব্যর্থ হও তাহলে তোমাদের প্রত্যকের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে। কান খুলে কথাটা শুনে রাখো।
—আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা পুরো ফোর্স লাগিয়ে দিয়েছি।আপনার বোনকে আমরা উদ্ধার করবোই করবো।
আদিলঃ শুধু উদ্ধার করলে হবে না।আমার বোনুকে সুস্থ -সালামত পৌঁছে দিতে হবে।ওর গায়ে যদি একটা আঁচড় পরে তাহলে কি করবো তাতো বলেই দিয়েছি।
—ওকে স্যার। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।আমরা অবশ্য তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবো।
আদিলঃ সক্ষম তো হতেই হবে।নইলে আপনারা বরখাস্ত। কথাটা মাথায় রেখে কাজে লেগে পরুন।

ফোন রেখে আদিল চিন্তায় পরে গেল।তাদের বোনু তো না বলে কোথাও যায় না।নিশ্চয়ই বোনকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।ঈশান রেগে চিৎকার করে পুরো কনসার্ট মাথায় তুলে ফেলেছে। এখন ওর বন্ধু-বান্ধব কে কল করে বোনকে খোঁজার জন্য লাগিয়ে দিয়েছে।

ঈশানঃ আমি কিচ্ছু জানি না।আমার বোনুর যদি কিছু হয় তাহলে তোদের একেকটার কপাল বরাবর শুট করবো।যেখান থেকে পারিস আমার বোনুকে খুঁজে নিয়ে আয়।আমার বোনুর কিছু হলে আমরা চার ভাই বাঁচবো না। আমার বোনুকে পুরো সুস্থ দেখতে চাই। যদি বাই চান্স আমার বোনুকে খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে তোরা মরার জন্য রেডি থাকিস।সোজা কপাল বরাবর শুট করে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিবো।

ফোন রেখে কপালে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।আজ ওর জন্য উষাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ও যদি তখন পর পিছু না নিতো তাহলে উষাকে এখন হারাতো না।
ইশাতঃ শান, বোনুকে খুঁজে পেয়েছিস?
ঈশানঃ না ভাই।কোথাও নেই বোনু?
ইশাতঃ আল্লাহ আমাদের বোনুর সাথে এমন করে কেন?তিন বার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলো।আবার কি হলো আমাদের বোনুর।
ঈশানঃ আমি সিউর কেউ বোনুকে কিডন্যাপ করেছে।
ইশাতঃ আমারও তাই মনে হয়।
এর মধ্যে ওদের সামনে অর্ণব ও জিবরান এসে হাজির হলো।ওরা দুজন খুব চিন্তিত।জিবরানের তো মনে হচ্ছে ভয়ে আতংকে চোখে ঘোলা দেখছে।
অর্ণবঃ আমাদের এখানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।আমাদের কে বোনুকে খুঁজে বের করতে হবে।আমরা এখানে চুপ করে বসে থাকলে কি করে বোনুকে খুঁজে পাবো?
জিবরানঃ বড় ভাইয়া আমরা কি করে উষাকে খুঁজবো।আমরা জানি না কোথায় আছে? কিভাবে আছে?আদোও সুস্থ আছে নাকি অন্য কিছু। আমি কিছু ভাবতে পারছি না।

তখনি আদিল কনসার্টের পেছন দিকে থেকে চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে লাগলো।
ইশাতঃ মেজো ভাইয়ার গলার স্বর মনে হচ্ছে।
ঈশানঃ ভাইয়া সবাইকে ডাকছে কেন?
অর্ণবঃ চল তো গিয়ে দেখি।
জিবরানঃ জলদী চলুন ভাইয়া।আল্লাহ জানে ভাইয়া আবার কি দেখলো।

সবাই দৌড়ে পেছন দিকে গেলো।আদিলের হাতে উষার এক পাটি জুতা।
ঈশানঃ কি হয়েছে?
অর্ণবঃ তুই এমন চেঁচামিচি করছিস কেন?
জিবরানঃ ভাইয়া উষার কি কোন খোঁজ পাওয়া গেছে?
ইশাতঃ ভাইয়া কথা বলছো না কেন তুমি?
আদিলঃ আমাদের বোনুর জুতো।আর দেখ পেছনের রাস্তায় গাড়ির টায়ারের চিহ্ন।
অর্ণবঃ মানে??
আদিলঃ মানে আমরা যে ভয়টা পাচ্ছিলাম। সেটাই হয়েছে। বোনুকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।
ঈশানঃ ওহ শিট।আমি ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম।
জিবরানঃ আর কোন ক্লু পেয়েছেন ভাইয়া।
আদিলঃ হুম। কিডন্যাপার সম্ভবত ঐ দিকের কাঁচা মাটি পারিয়ে এসেছে। ঐ দেখে কাঁদাসহ জুতার ছাপ।
অর্ণবঃ জলদি চল।আমরা গিয়ে দেখি গাড়িটা কোনদিকে গিয়েছে?আর রাস্তায় যদি কোন ক্লু পেয়ে যাই।

চার ভাই ও জিবরান কাঁচা রাস্তার দিকে ছুটলো।যদি কোন ক্লু পেয়ে যায় হাতে।তাহলে বোনুকে খুঁজে পেতে সহজ হবে।উষা কিডন্যাপ হয়েছে কথাটা যেনো তড়িৎ বেগে সারা কনসার্টে ছেয়ে গেল।পাশাপাশি সারা জায়গায়।

🍁🍁🍁

নিউ ইয়ার্ক……

মাসফি কফির মগে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো।মাথাটা আজ বড্ড বেশি ধরেছে।কত শত চিন্তা ওর মাঝে ঘিরে দাঁড়িয়েছে।ওর বিশ্বাস হয়ে গেছে মির্জারা কারো ক্ষতি করতে পারে না।কারণ এই কয় দিনে মির্জাদের ব্যাক রেকর্ড চেক করে কারো নামে কোন খারাপ কিছু খুঁজে পায়নি। বরং ভালো হেবিটগুলো পেয়েছে। তাই ওর সন্দেহটা আরো জরালো হয়েছে যে সবকিছুর পেছনে নিশ্চয় বড় কোন মাস্টার মাইন্ড আছে।তাকে খুঁজে পেলেই ওর বোনের মৃত্যুর রহস্য খুঁজে পাবে।রুমে জিকু প্রবেশ করলো।

জিকুঃ বস,আপনাকে মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত।
মাসফিঃ আমার মাথা কাজ করছে না জিকু।আমি বুঝতে পারছি না এর পেছনে কে আছে?
জিকুঃ বস,হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।আপনাকে ম্যামের মৃত্যুর রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে।
মাসফিঃ জিকু আজ নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে। আমি না জেনে কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।আল্লাহ তোমার চিন্তা ধারায় আমায় বদলে দিলো।গত দুই বার যখন উষাকে মারতে চেয়েছি তখন যদি উষা মারা যেতো।তাহলে কখনি আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।
জিকুঃ বস,আপনি কি উষাকে দুই বার মারতে চেয়েছিলেন?
মাসফিঃ হুম।কেন?
জিকুঃ কোথায় কোথায় যদি একটু খুলে বলতেন?
মাসফিঃ ট্রাক এক্সিডেন্ট করে।এবং নিলয় ও রোহানকে পাঠিয়ে।
জিকুঃ তাহলে বস উষাকে হসপিটালে অক্সিজেন মাস্ক খুলে মারতে কে গিয়েছিলো?বস,ঐ এটাও কি আপনি লোক দিয়ে করেছিলেন?(চিন্তিত ভঙ্গিতে)
মাসফিঃ না তো। আমি উষাকে হসপিটালে মারার জন্য কোন লোক পাঠাই নি।
জিকুঃ বস,আমি খবর নিয়ে জানতে পেরেছি। উষা এক্সিডেন্টের দিন আই সি ইউ এর মধ্যে থাকা অবস্থায় কেউ ওর মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলেছিলো।এত কড়া পাহারা,তার মধ্যে পাশের রুমে ওর চার ভাই নামাজ পরছিলো।তারপরও সে কাজটা করতে সক্ষম হয়েছে। ভেবে দেখছেন বস কতটা ডেঞ্জারাস ব্যাপার।
মাসফিঃ এবার আমি পুরো পুরি সিউর হলাম কেউ আমার ও মির্জাদের সাথে লেগেছে। এখন আমাদের দুজনের শত্রু কি আসলে একজন নাকি ভিন্ন। তাই বের করতে হবে জিকু।

হঠাৎ মাসফির মোবাইলে আরানের কল এলো।
আরানঃ আসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
মাসফিঃ অলাইকুম আস সালাম। কি খবর?
আরানঃ ভাইয়া তুমি কি উষাকে তুলে আনার জন্য অন্য কোন গ্যাং লাগিয়েছো?
মাসফিঃ আমি তো তোকেই বলেছিলাম।পুরো প্ল্যান তো তোকে বুঝিয়ে দিয়েছি।
আরানঃ তোমার প্ল্যান ছিলো আমরা উষাকে তুলে আনার সব বন্দবস্ত করবো।কিন্তু ওকে তুলে আনবো না।তাই ভাইয়া আমি কিংবা আমাদের লোক কেউ কনসার্টের ধারের কাছেও ঘেষে নি।
মাসফিঃ এগুলো পুরো টাই তো আমাদের প্ল্যান ছিলো।এখন কি হয়েছে সেটা বল?আমি অন্য কোন লোক লাগাই নি উষাকে তুলে আনতে।
আরানঃ ভাইয়া তাহলে উষাকে কিডন্যাপ করলো কে?
মাসফিঃ হোয়াট!!!!!কি বলছিস তুই? (অবাক হয়ে)
আরানঃ আমি সত্যি বলছি। একটু আগে খবর পেলাম উষা কিডন্যাপ হয়ে গেছে।
মাসফিঃ আমার সন্দেহ সঠিক হয়েছে। কেউ আমাদের নিয়ে দাবার গুটি চালছে।খুব সুন্দর করে আমাদের নিয়ে খেলছে সে।শোন আরান।তুই খোঁজ লাগাতে শুরু করে দে উষাকে কিডন্যাপ কে করলো?
আমার মনে হচ্ছে উষার কিডন্যাপার দের খুঁজে পেলে আমাদের বোনুর মৃত্যুর রহস্য খুঁজে পাবো।আমি জানতে পারবো আসলে কি আমার বোন আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
আরানঃ আচ্ছা ভাইয়া আমি খোঁজ নিচ্ছি।
মাসফিঃ শোন, সাবধানে থাকিস।নিজের খেয়াল রাখিস।আর ২৪ ঘন্টা দেশের সব আপডেট আমাকে দিবি।আমিও দেখছি কি করা যায়।

মাসফি কল কেটে দিলেও আরান এখনো ঘোরের মাঝে আছে। যে ভাই কখনো ভালো-মন্দ কিছু কখনও জিজ্ঞেস করেনি সে আজ ওকে সাবধানে থাকতে বলছে।আরান নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।মাসফি কে আরান কোন অংশে নিজের ভাইয়ের থেকে কম দেখে না।মাসফি পরে গেলো চিন্তায়।
মাসফিঃ জিকু কুইক ফ্লাইটের টিকিট বুক করো।আমরা ইমেডিয়েটলি দেশে যাবো।এবার মনে হচ্ছে আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে পৌঁছে যেতে পারবো।
জিকুঃ বস এখনি যাবেন দেশে?
মাসফিঃ কোন কথা নয় জিকু।তোমাকে যা বলেছি তাই করো।পরে সব কথা খুলে বলবো।
জিকুঃ ওকে বস।

🍁🍁🍁

গোডাউনের অন্ধকারে কিছু দেখছে না রুমান।নিজেকে আজ অনেক বড় অপরাধী লাগছে।কি করে করতে পারলো এসব?কয়েকটা টাকার জন্য সে উষাকে হসপিটালে গিয়ে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে দিয়েছিলো।যদি সত্যি সেদিন ওর কিছু হয়ে যেত?অবশ্য এখানে টাকার চেয়ে রুমানের বড় আমানত সে ব্যাক্তির কাছে ছিলো।রুমান জানে এই পুরো প্লানে কে আছে?পুরো ঝামেলার মাস্টার মাইন্ড ওর বোনকে আটকে রেখে বাধ্য করেছিলো ওকে দিয়ে এই কাজটা করাতে।
কিছু সময় আগে ওকে এখানে ধরে এনেছে কিছু কালো পোশাক পরিহিত লোক।ইচ্ছে মতো মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। কারণ রুমান অপরাধ বোধে এতটা বিষিয়ে গিয়েছিল যে সব কথা আরানকে বলে দিতে চেয়েছিলো।তাই মেইন কালপিট সব জেনে ওকে তুলে এনে ইচ্ছে মতো কেলিয়েছে।তারপর একটা অন্ধকার রুমে আটকে রেখেছে।

অন্ধকারে হাতে কিছু একটা ঠেকলো রুমানের।হাতে নিয়ে বুঝলো ওর মোবাইল। মোবাইল পেয়ে এত কিছুর মধ্যেও রুমান আশার আলো দেখতে পেলো।মোবাইল অন করে নাম্বার খুঁজতে লাগলো।চোখের সামনে ঈশানের নাম্বারটা পেলো।কোন এক দরকারি কাজে রুমান ঈশানের নাম্বারটা সেভ করে রেখেছিলো।সাত পাঁচ না ভেবে কল করলো ঈশানকে।

কয়েকবার রিং হতেই অপর পাশে থেকে ঈশানের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো।
ঈশানঃ আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
রুমানঃ ঈশান আমি রুমান বলছি।
ঈশানঃ কোন রুমান?
রুমানঃ আমি আরানের বন্ধু রুমান।
ঈশানঃ আরে রুমান তুই হঠাৎ কি মনে করে?
রুমানঃ ভাই তুই আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন।আমি তোকে অনেকগুলো ইনফরমেশন দিবো।
ঈশানঃ হ্যাঁ বল।
রুমানঃ তোর বোন যেদিন এক্সিডেন্ট করেছিলো সেদিন অরূপকে কল করে আমিই জানিয়ে ছিলাম।নিজের মোবাইলে কল করার সাহস হয় নি বলে ফেক্সিলোডের দোকান থেকে কল করি অরূপকে।এক্সিডেন্টের ঐ খানে যে কালো গাড়িটা ছিলো সেটা আরানের।তোর বোনকে সেদিন হসপিটালে অক্সিজেনের মাস্ক আমি খুলেছিলাম।তবে ভাই আমি তখন নিরুপায় ছিলাম।আমার বোনকে ওরা আটকে রেখে বাধ্য করেছিলো এই কাজটা করতে।প্লিজ ভাই আমাকে মাফ করে দিস।আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি।আমি যদি তোর বোনের ক্ষতি না করতাম তাহলে ওরা আমার ছোট বোনের ক্ষতি করতো।
ঈশানঃ কি বলছিস তুই?
রুমানঃ হ্যাঁ,ঈশান আমি সত্যি বলছি।আরান ও মাসফি ভাই তোদের ভূল বুঝে তোদের বোনের ক্ষতি করতে চাইছে।তারা তাদের ভূল বুঝতে পেরেছে যে তোরা কেউ মাসফি ভাই -এর বোনের আত্মহত্যার পেছনে দায়ী নয়।
ঈশানঃ ওয়েট রুমান।মাসফি শিকদারের বোন কে?
রুমানঃ আদিল ভাইয়ার ফ্রেন্ড অদিতি আপু।
ঈশানঃ মানে?
রুমানঃ অদিতি আপু আত্মহত্যা করেনি।তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আর তাকে মেরেছে আদিল ভাইয়ার আরেক ফ্রেন্ড সৃজান।
ঈশানঃ তুই এতো কিছু কি করে জানলি?
রুমানঃ আমি সৃজানকে নিজের মুখে বলতে শুনেছি। আর সব কিছুর মূলে আরেকজন রয়েছে। তার নাম হলো–

রুমান কিছু বলার আগে পেছন থেকে অচেনা ব্যাক্তিটা রড দিয়ে রুমানের ঘাড়ে আঘাত করলো।মুখ থুবড়ে পড়ে গেল রুমান।
ঈশানঃ হ্যালো রুমান কি হলো?কিসের শব্দ ছিলো?কথা বলছিস না কেন তুই? কে আছে এই ঘটনার পিছনে? চুপ করে থাকিস না।(ব্যস্ত হয়ে)

মোবাইলটা হাতে নিয়ে জোরে একটা আছাড় মারলো সে ব্যক্তিরা।এতটা জোরে মেরেছে যে মোবাইলটা টুকরো টুকরো হয়ে চারিদিকে ছরিয়ে পরলো। অজ্ঞান রুমানের সামনে গিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে বললো–
—-আমার এতো দিনের কষ্ট আমি কি করে বিফল হতে দেই।অনেক খর-কুটো পুড়িয়ে আমি আজ এখানে এসেছি।আর তের মতো একটা পুঁচকে মানুষের জন্য আমি হেরে যাবো তাতো কখনি হতে দিতে পারি না।

🍁🍁🍁

আবছা আলো যুক্ত রুমে চেয়ারের সাথে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে উষাকে।কিছু সময় পর জ্ঞান ফিরে নিজেকে বাঁধা অবস্থায় পেলো।ও চোখ খুলতেই ওর মাথার ওপরের লাইট জ্বলে উঠলো। পিট পিট করে সামনের দিকে তাকিয়ে উষা দুইটা ছায়া মূর্তি দেখতে পেলো।মানুষ দুটোকে চিনতে বেশি বেগ পেতে হলো না উষার।একজন সৃজান অপরজন সিয়ান।

সিয়ানঃ ওয়েলকাম মিস.উষা মির্জা।ওহ সরি সরি। তুমি তো এখন অন্য কারো বাগদত্তা। মিসেস উষা জিবরান খান। এম আই রাইট বেবি?
(মেকি হাসি দিয়ে)
উষাঃ আমাকে এখানে তুলে এনেছেন কেন?
সৃজানঃ কি বলো এসব উষা?তোমার মুখে এসব মানায় না। তুমি কি সত্যি জানো না।নাকি জেনেও না জানার ভান করছো?
উষাঃ আপনাদের আমার ভাইয়ুরা কত বিশ্বাস করে?ভরসা করে।আর আপনারা তার এই প্রতিদান দিলেন।এতটা নিচে নেমে গেছেন আপনারা। ছিঃ আমার ঘৃন্না করছে আপনাদের।
সিয়ানঃ আমাদের দেখে নাক সিটকচ্ছো?আরেকজনকে দেখলে কি করবে?যে তোমাদের ভাইয়ের সমান।সেও তো তোমাদের কাছে অনেক বিশ্বাসী।
উষাঃ কার কথা বলছেন আপনারা?(ভয়ে ভয়ে)
সৃজানঃ কোথায় তুমি? আর কত অন্ধকারে থাকবে। এবার তো বের হয়ে আসো।
অন্ধাকার থেকে একটা ছায়া ক্রমশ উষার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।ছায়াটা যত নিকটে আসছে উষার বুকের মাঝে তত বেশি হাতুড়ি পেটা শুরু করেছে।ছায়াটা সামনে আসতেই পুরো অন্ধকারে ঘেরা রুমটা আলো জ্বলে উঠলো। উষা খেয়াল করলো এটা কোন রুম নয়। একটা বিশাল বড় গোডাউন।আশেপাশে অনেক কালো পোশাক পরিহিত বডিগার্ড।
তবে সামনে থাকা ব্যাক্তিটাকে দেখে উষা পুরো হতবাক।শেষ পর্যন্ত এই মানুষটাও তাদের সাথে বৈঈমানী করলো।উষার মুখ থেকে অটোমেটিক বের হয়ে গেলো।

উষাঃ অরূপ ভাইয়ু তুমি?(অবাক হয়ে)
অরূপঃ অবাক হচ্ছিস উষা।অবশ্য অবাক হওয়ারি কথা।হ্যাঁ, আমি।
সৃজানঃ কেমন দিলাম উষা?
উষাঃ অরূপ ভাইয়ু তুমি আমায় নিতে এসেছো তাই না।আমি জানি তুমি কখনো আমাদের সাথে বৈঈমানী করবে না।কারণ আমরা কখনও তোমাকে নিজের ভাই ছাড়া অন্য চোখে দেখি নি।
অরূপঃ রাখ তোর ভাই।এত বছর তোদের সাথে আছি। তোরা শুধু আমাকে নিজের গোলাম ভেবেছিস।আমার ইচ্ছার কোন মূল্য দিস নি।
উষাঃ ভাইয়ু তুমি এই কথাটা বলতে পারলা।আমরা সবসময় তোমার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছি।
অরূপঃ আরে থাম ওতো ন্যাকামো করতে হবে না।তোদের দাস ছিলাম আমি।তাই আমি এবার এতোদিন পরে নিজের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।আমি তোদের সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিবো।আর রাজার হালে জীবন যাপন করবো।আর তোরা সবাই কবরে থাকবি।
উষাঃসত্যি একটা কথা সবাই ভূল বলে না।দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষা।আমরাও বোধ হয় তাই করেছি।কখনো আমরা তোমাকে অন্য চোখে দেখিনি।
অরূপঃ এতো ঢং-য়ের প্যাচাল পারিস না তো।আমার দরকার তোদের টাকা-পয়সা, সম্পত্তি। আর সৃজান, সিয়ানের দরকার তোদের।তাই ওদের সাথে হাত মিলালাম।
উষাঃ ছিঃ ছিঃ তোমায় আমার ভাই বলতেও ঘৃণা করছে।এখন তো আমার নিজের ওপর ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে। এতোদিন এই বৈমান,বিশ্বাসঘাতক টাকে আমি ভাই বলে ডেকেছি।
অরূপ উষার কথা শুনে রাগে কপালের রোগ ফুলে উঠলো। সামনে এসে উষার গলা চেপে ধরে বললো।
অরূপঃ তোকে কে বলেছে আমাকে ভাই বলতে।আমার কোন বোন ছিলো না।আমি তোকে কখনও বোন হিসেবে মানি নি আর মানবো না।

উষা চোখ মুখ লাল হয়ে যেতে লাগলো।সৃজান,সিয়ান এসে অরূপের হাত সরালো।উষা কাশতে লাগলো।ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পরছে।শরীরের ব্যাথা থেকে বর্তমানে মনের ব্যাথায় বেশি কষ্ট দিচ্ছে। যে অরূপ কখনো উষার গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেয়নি।সে আজ নিজে ওর গলা চেপে ধরছে।সত্যি আপন মানুষগুলোই দূর্বলতার সুযোগ নেয়।
সৃজানঃ অরূপ শান্ত হও। কি করছো? ওর ভাইরা আসার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ওকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
অরূপঃ ওর কত বড় সাহস আমায় এত বড় কথা বলে। ছাড়ো আমায় আমি ওকে মেরেই ফেলবো।
সিয়ানঃ শান্ত হও তুমি।আমাদের মেইন মাস্টার মাইন্ড কিন্তু এসব জানলে খুব রাগ হবে।সে কিন্তু আমাদের পারমিশন দেয় নি।
অরূপঃ তাকে তো আমি দেখিনি।কে সে?
(অবাক হয়ে)
সৃজানঃ সময় হলে দেখতে পাবে।সে আমাদের কালো ধান্দার বিজনেস পার্টনার।

সৃজান ও সিয়ানের মনে এতোখন অরূপ কে নিয়ে সন্দেহ থাকলেও এখন পুরো পুরি কেটে গেছে।ওরা ভেবেছিলো অরূপকে মির্জারা পাঠিয়েছে। কিন্তু অরূপের কান্ড দেখে ওরা অরূপকে বিশ্বাস করে নেয়।
সৃজানঃ অরূপ তুমি হঠাৎ মির্জাদের বিপক্ষে এলে কেন?
অরূপঃ আমার লোভ হলো মির্জাদের সম্পত্তির উপর। আমার যে কোন মূল্যে ওদের সম্পত্তি চাই।
সিয়ানঃ কিন্তু তুমি তো ওদের অনেক বিশ্বাস্ত।
অরূপঃ সেই বিশ্বাসের ফায়দাই আমি উঠাবো।সৃজান ভাই আপনি অদিতি কে কেন মেরেছেন?
সৃজানঃ তুমি সেটাও জেনে গেছো।তাহলে তো বলে দিতেই হয়।আমার যেটা না হয় সেটা আমি অন্য কারো হতে দেই না।অদিতি কে আমি অনেক ভালবাসতাম।কিন্তু অদিতি ভালবাসতো আদিলকে।অবশ্য আদিল অদিতিকে শুধু ফ্রেন্ডের চোখেই দেখতো।কিন্তু অদিতি আমার কালো ধান্দার ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে গিয়েছিলো।যার কারণে না চাইতেও আমাকে অদিতি কে মেরে ফেলতে হয়েছে।মেরে ফেলার পর ওকে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে আদিলকে সহ পুরো মির্জা ফ্যামেলিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছি।আর আমি কানাডা চলে গিয়েছি।
অরূপঃ এতো বুদ্ধি পান কোথায় বস?আমাদের কেও কিছু দেন।
সিয়ানঃ ভাইয়া উষাকে আমার চাই।
অরূপঃ এখন নয়।ওর ভাইদের সামনে ওর সর্বনাশ করলে ওর ভাইরা এর মজা বুঝবে।
সৃজানঃ আইডিয়া টা খারাপ নয়।
উষা এতক্ষণ চুপ করে ওদের কথা শুনছিলো।পেছন থেকে চেঁচিয়ে বললো।
উষাঃ অনেক বড় ভূল করলি তোরা।নিজেদের মৃত্যু ডেকে এনেছিস।আমার ভাইয়ুরা তোদের ছারবে না।

উষার কথা শুনে সৃজান,সিয়ান,অরূপ ও তিনটা বডিগার্ড ওর সামনে এলো।সিয়ান ও অরূপ ঝুঁকে ওর দিকে তাকালো।অরূপ ওর সামনে বসলো।দুই জন বডিগার্ড সিয়ানের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। উষার বাম পাশে আরেকজন বডিগার্ড বসে পরলো।এতোগুলো মানুষ কে উষার সামনে দেখে উষা ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। আর আল্লাহ কে স্মরণ করছে।

#চলবে