#বোনু
#Part_21
#Writer_NOVA
সবার চোখ সামনের দিকে স্থির হয়ে আছে।সামনে থাকা ব্যাক্তিটাকে দেখে তো সবাই অবাক।কেউ তাকে এখানে একসেপ্ট করে নি।দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে মাসফি। পরনে সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট।মাসফি শিকদারকে দেখে কারোর চোখের পলক পরছে না।এত তারাতাড়ি ওর সাথে দেখা হবে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না।
মাসফিঃ সবাই আমাকে দেখে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আমি কি ভিনগ্রহের এলিয়েন নাকি?
আদিলঃ তোমার এই আসার সময় হলো?
মাসফিঃ সরি গাইস।একটু লেইট হয়ে গেলো।
তারিনঃএই ছেমরাডা কে রে উষানি বেবি? (নিচু স্বরে)
উষাঃ মেজু ভাইয়ুর ফ্রেন্ড অদিতি আপুর বড় ভাই।
তারিনঃ এই ছেলেই তো তোকে মারতে চেয়েছিলো।
উষাঃ হুম, তবে তার আগে সবকিছুর পেছনে যে সে ব্যক্তিটা করেছে।বেচারার কোন দোষ নেই। সে ভেবেছিলো আমার ভাইয়ুরা তার বোনের আত্মহত্যার পেছনে আছে।তাই আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো।
ঈশানঃ ওয়েলকাম মোঃ মাসফি শিকদার।
আদিলঃ তোমার জন্য আমি অদিতির খুনীকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি।নয়তো কবে উপরে শিফট করে দিতাম।সৃজান তোমার বোনকে মেরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে। পুরো ঘটনার দোষ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
মাসফিঃ আমি জানি।চিন্তা করো না।আমি তার প্রতিশোধ অবশ্যই নিবো।ওকে তিলে তিলে শেষ করবো।
মাসফির চোখ, মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।কপালের রগ স্পষ্ট ফোলা ফোলা দেখা যাচ্ছে। হাত মুঠ করে সৃজানের মুখ বরাবর একটা ঘুষি মারলো। বেচারা সৃজান এর মধ্যেই বেশ কয়েক ডোজ মার খেয়ে মেঝেতে পরে ছিলো।সবে মাত্র অনেক কষ্ট করে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু মাসফির ঘুষি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো।আবার শুরু হয়ে গেলো ফাইটিং।
উষা খুব মনোযোগ সহকারে ওর কোলে বসিয়ে পাপ্পিকে আদর করেছে। এদিকে যে ওর চোখের সামনে টর্নেডো হচ্ছে তার কোন দীন-দুনিয়ার খবর নেই। তারিনের কাছে এখন ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লাগছে।তাই সে দুই হাত গালে দিয়ে এক্সাইটিং হয়ে ফাইটিং দেখছে।মাসফি সৃজানকে মারতে মারতে অবস্থা কাহিল করে ফেলছে।
মাসফিঃ বল কেন করলি এমন?কি ক্ষতি করেছিলো আমার বোন?আমার কলিজার টুকরো বোনটাকে তুই মেরে দিলি।তুই জানিস আমার বোনকে আমি কতটা ভালবাসি।ওর মৃত্যুতে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।আমার আর কেউ ভাইয়া বলে ডাকে না।রাতে কল করে বলে না, তোর সাথে কোন কথা নেই। তুই আমার সারাদিনও খোঁজ-খবর নেস না।কেউ বলে না ভাইয়া তোকে ব্রীজের নিচ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে।কি দোষ ছিলো আমার বোনের?তোর কালো ধান্দার কথা জেনে যাওয়ায় আমার বোনটাকে মেরে দিলি।আমি তোকে কিছুতেই ছারবো না।কার কথায় মেরেছিস অদিতিকে?বল কার কথায়?(কাঁদতে কাঁদতে)
সৃজানঃ আমার জীবন চলে গেলোও তার নাম বলবো না।তোদের পাওয়ার থাকলে খুঁজে বের কর।
(হাসতে হাসতে)
মাসফিঃ নির্লজ্জ,বেহায়া আবার হাসছিস।যেই মুখ দিয়ে হেসেছিস সেই মুখ আমি রাখবো না।আর কি বললি পাওয়ারের কথা। আমার পাওয়ার তোকে অন্ধকারের জগতে পাঠিয়ে তারপর বুঝাবো।সবকিছুর মূলে যে আছে তাকে তো আমি অবশ্যই খুঁজে বের করবোই করবো।
অর্ণবঃ সৃজান তোমার বোনকে মেরেছে মাসফি।
মাসফিঃ হ্যাঁ, সৃজান মেরেছে। তবে অদিতিকে মারার পেছনে আরো কেউ যুক্ত ছিলো।
ঈশানঃ ছারবে না সৃজানকে।বৈঈমান,বিশ্বাসঘাতক।
ইশাতঃ আমার শরীরে কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই।
সবাই হাঁপিয়ে গিয়ে সোফায় বসে পরলো।গার্ডগুলো রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। সবাই হয়রান ও ক্লান্ত।
সিয়ানের জ্ঞান ফিরে নি। সৃজান এখন আহত অবস্থায় ছটফট করছে। মাসফি মোটা রড দিয়ে গোটা কয়েক বারি মেরলো সৃজানকে। তারপরও সৃজান মূল মাস্টার মাইন্ডের নামের একটা অক্ষরও বলে নি।ওর একটাই কথা ওর জীবন চলে গেলোও তার নাম বলবে না।
মাসফিঃ আপনারা সবাই দয়া করে আমাকে মাফ করে দিবেন।আমি না জেনে কত ভূল করেছি।আপনাদের বোনকে কত কষ্ট দিয়েছি।
অর্ণবঃ না ভাই, তুমি সঠিক কাজ করেছো।
আদিলঃ তোমার জায়গায় আমরা চার ভাইয়ের এক ভাই থাকলে কবে ওদের শাস্তি দিয়ে দিতাম।
ঈশানঃ আপনি জানতেন অদিতি আপু আমাদের কারণে আত্মাহত্যা করছে।আপনি ভাই হিসেবে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছেন।যেটা সম্পূর্ণ ঠিক।
ইশাতঃ আজ যদি জানতাম আপনার কারণে আমাদের বোনুর কিছু হয়েছে তাহলে আমরাও সেম কাজটাই করতাম।
মাসফিঃ আমাকে প্লিজ মাফ করে দিন।
অর্ণবঃ আমাদের তোমার প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তুমি পরিস্থিতির স্বীকার।
মাসফিঃ সত্যি আপনারা খুব ভালো। আপনারা কতো সহজে আমাকে মাফ করে দিলেন।
আদিলঃ ক্ষমা মহৎ গুণ।আর এখানে তোমার কোন দোষ নেই। তাই তোমাকে কিছু বলতেও পারবো না।বললে তোমার প্রতি অন্যায় করা হয়।
অরূপঃ কিন্তু ভাই আপনার কারণে আমাদের বোনু অনেক কষ্ট করেছে।আপনার কাছে আমাদের একটা অনুরোধ প্লিজ পুরো ঘটনা না জেনে শুধুমাত্র অন্যর কথা শুনে কারো ক্ষতি করবেন না।
মাসফিঃ আমি আর কখনও এরকম কাজ করবো না অরূপ।আমি আমার ভূল বুঝতে পেরছি।
🍁🍁🍁
সি সি টিভি ফুটেজে গোডাউনের পুরো ঘটনা দেখে অজানা ব্যাক্তিটার মাথায় আগুন ধরে গেছে।তার এতো দিনের আশা ভরসা আজ মাটিতে মিশে গেলো।তার মাফিয়া ওয়াল্ডের বাদশাহ কখনও হতে পারবে না।এমনটা ভাবতেই মাথায় রক্ত টগবগ করে ফুটছে।মির্জারা ওর দুই ধাপ উপরে থেকে সব প্ল্যান ভেস্তে দিলো।এতো দিনের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
—-মির্জারা তোরা আবার আমার সাথে চালাকি করলি।কাউকে ছারবো না আমি।অরূপ তোর বৈঈমানীর ফল তোকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে।অনেক বড় ভূল করেছিস তোরা।কাউকে ছারবো না আমি। এক এক করে প্রত্যককে মেরে ফেলবো।আমার এতোদিনের বাদশাহ হওয়ার স্বপ্ন এক নিমিষে ভেঙে যাবে তা কিছুতেই হতে দিবো না আমি।মাসফি শিকদার তুইও ওদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজের মৃত্যু ডেকে আনলি।আমি বেঁচে থাকতে তোদের কাউকে ভালো থাকতে দিবো না।
কথাগুলো নিজের সাথে বলতে বলতে পুরো রুমের জিনিসপত্র ভাংচুর করতে লাগলো অজানা ব্যাক্তিটা।সবকিছু লন্ড ভন্ড হয়ে পরে আছে।এতকিছুর পরও তার রাগ কমেনি।রুমের থেকে ভাংচুরের শব্দ পেয়ে দৌড়ে রুমে আসলো তার প্রিয় সেক্রেটারি নাহিদ।অনেক পুরনো ও বিশস্ত কর্মী নাহিদ।মালিকের ভক্ত।
নাহিদঃ ভাই, কি হয়েছে আপনার?
—আমার সব আশা ভরসা আজ শেষ হয়ে গেল।কিন্তু আমি হেরে যাবো না।আমি ওদের সর্বনাশ করেই ছারবো।আমার সাথে খেলার মজা ওদের অবশ্যই পেতে হবে।
নাহিদঃ ভাই, আপনি ভেঙে পরেন না।নতুন করে প্ল্যান করেন।আমার বিশ্বাস আপনি আপনার লক্ষ্য অবশ্যই পৌঁছাতে পারবেন।
—-ঠিক বলেছো তুমি।আমি আবার প্ল্যান করবো।এবার টার্গেটের ১মে থাকবে জিবরান।এই জিবরান ওদের অনেক সাহায্য করছে।তাই সবার প্রথমে ওকেই পৃথিবীর থেকে বিদায় করবো।জিবরানের শোকে মির্জাদের নিশ্চই ওর বোন জিনিয়া পাগল হয়ে যাবে।আর জিবরানের মার্ডারের দোষ সম্পূর্ণ অর্ণবের ঘাড়ে দিয়ে দিবো।জিনিয়া তার ভালবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করবে।২য় তে আদিল।ওকে না মারলে আমার মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে।আদিল আমার ব্যাপারে অনেক ইনফরমেশন জোগাড় করে ফেলেছে।তারপরের সিরিয়ালে মাসফি শিকদার। ওর কারণে আজও আমি কোটি কোটি সম্পত্তির মালিক হতে পারি নি।
নাহিদঃ ভাই এখন কি করবেন সেটা বলেন?
—তুই এখন গোডাউনে যাবি।সেদিন আড়াল থেকে মির্জাদের বোনকে গুলি করে শেষ করে দিবি।
নাহিদঃ ওকে ভাই আমি যাচ্ছি।
—-আর শোন।জিবরানকে আমাদের ব্যাপারে খোঁজ লাগাতে বলেছে মির্জারা।ওকে এখন কিছু করিস না।তবে কোন একটা শব্দও যাতে জিবরান আমাদের কালো ধান্দার ব্যাপারে জানতে না পারে।আমার বিশ্বাস আছে সৃজান কিছু বলবে না।
নাহিদঃ আমি আসছি ভাই।
নাহিদ গান পকেটে নিয়ে গোডাউনের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলো।অজানা ব্যাক্তিটার ঠোঁটে এবার এক চিলতে হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে।
🍁🍁🍁
কখন থেকে সবাই বসে আছে।কিন্তু যার জন্য বসে আছে তার খবর নেই। ওরা ভেবেছিলো সব ঝামেলার যে প্রধান সে এসে ওদের সামনে ধরা দিবে।কিন্তু ওরা তো জানে না ওদেরকে সি সি টিভি ফুটেজে দেখে নতুন প্ল্যানের জোগাড় করছে সে ব্যাক্তি।মাসফির লোক এসে সৃজান ও সিয়ানকে নিয়ে গেলো।মির্জাদের গার্ড সৃজানের গার্ডগুলোর ব্যবস্থা করতে নিজেদের ডেরায় নিয়ে গেলো।
অর্ণবঃ আমার মনে হয় না সৃজানদের পার্টনার আসবে।নিশ্চয়ই নতুন কোন গুটি চালছে।
মাসফিঃ এতো সহজে তিনি ধরা দেবে বলে মনে হচ্ছে না। সে থেমে থাকবে না। তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সব করবে।
আদিলঃ এতক্ষণে সে আমাদের খোঁজ পেয়ে গেছে।
ঈশানঃ অরূপ তুই কি তাকে দেখেছিস?
অরূপঃ না ছোট ভাই। সে আমার সামনে আসে নি।আমি মাইক্রোফোনে ডার গলার আওয়াজ পেয়েছি।সে আমার সামনে আসে নি।
ইশাতঃ মাসফি ভাই, আপনার কি মনে হয় সে নিজে এসে ধরা দিবে।
মাসফিঃ মোটেও না।সে গভীর জলের মাছ।তাকে ধরা সহজ হবে না।আর সে দিবে নিজে থেকে এসে ধরা।
আদিলঃ আমরাও এমন কিছু করবো যাতে তাকে নিজ থেকে ধরা দিতে হয়।
মাসফিঃ আমরা পরবর্তী প্ল্যান নিয়ে একান্ত আলাপ করবো।এরকম খোলামেলা জায়গায় নয়।
উষা এখনো কুকুরের বাচ্চাটাকে নিয়ে ব্যস্ত আছে।এবার তারিন একটু রেগে ওর সামনে এসে বসলো।
তারিনঃ উষানি তুই কিন্তু কুকুরের বাচ্চাটাকে নিয়ে একটু বেশি করছিস।আমি যে তোর সাথে আছি সেটা ভূলেই গেছিস।
উষাঃ আহ্ তারু কানের সামনে পকপক করিস না তো।আমাকে আমার পাপ্পির সাথে খেলতে দে।
তারিনঃ একটা কুকুরের বাচ্চার জন্য তুই আমার সাথে এমন করছিস।
উষাঃ তুই আবারও পাপ্পিকে কুকুরের বাচ্চা বলেছিস।
তারিনঃ কুকুরের বাচ্চাকে কুকুরের বাচ্চা বলবো না তো মানুষের বাচ্চা বলবো।যা তোর সাথে আর কথাই বলবো না।
উষাঃ বলতে হবে না তোর।আমার এখন পাপ্পি আছে।তুই ও মনে রাখিস সেজু ভাইয়ুর কানে তোর নামে কুমন্ত্রণা দিবো।
তারিনঃ হু হু পারো তো ঐ একটা বিষয় নিয়ে। তোর সেজু ভাইকে নিয়ে ভয় দেখাচ্ছিস তো।দেখাতে থাক।আমিও পরে এর সুদ শুদ্ধি উসুল উঠাবো।
ওদের দুজনের মধ্যে খুনসুটিগুলো মনোযোগ সহকারে দেখছিলো অরূপ। দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।হঠাৎ অরূপ খেয়াল করলো আড়াল থেকে মুখোশ পরিহিত একজন উষার দিকে গান তাক করছে।অরূপ দৌড়ে উষার সামনে এসে ধাক্কা মেরে ওকে ফেলে দিলো।পরপর দুইটা গুলির শব্দে সবাই টাসকি খেয়ে গেল।সবাই নিজেদের মধ্যে কথায় এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে কেউ বিষয়টা খেয়াল করতে পারেনি।উষা অরূপের ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে চেয়ার থেকে পরে গেল।ও ভেবেছে গুলিটা ওর গায়ে লেগেছে। কিন্তু কিছু সময় পর কোন ব্যাথা অনুভব না করায় মনে মনে খুশি হলো। উষা চোখ খুলে দেখলো সে ঠিক আছে। কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখে অরূপ বুকে হাত চেপে ধরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হাতের ফাঁক দিয়ে গলগল করে রক্ত পরছে। মুখে তার বিশ্ব জয় করা হাসি।সে তার নিজের জীবনের বিনিময়ে বোনকে বাঁচাতে পেরেছে।
আড়াল থেকে নাহিদ আফসোসের সুরে বললো।
নাহিদঃ ধূর, এবারও অরূপের কারণে সব প্ল্যান ভেস্তে গেলো।আমি ভাইকে গিয়ে কি বলবো?আমি এখন পালাই।নয়তো ওরা দেখে ফেললে আমায় জানে মেরে ফেলবে।
নাহিদ গুলি করে পেছনের দিকে দৌড় দিলো। উষা অরূপের মাথাটা হালকা উঠিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
উষাঃ ভাইয়ু কি করলে তুমি এটা?বড় ভাইয়ু,মেজু ভাইয়ু,সেজু ভাইয়ু কোথায় তোমরা?দেখ অরূপ ভাইয়ুর কি হয়েছে?
তারিনঃ অরূপ ভাইয়া।আপনার কিছু হবে না।ইশাত,বড় ভাইয়া কোথায় তোমরা?
চার ভাই দৌড়ে ওদের কাছে ছুটে এলো।মাসফি গুলি করা লোকটার পিছনে ছুটলো।
ঈশানঃ কি হয়েছে অরূপের?
উষাঃ ভাইয়ু আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে এনেছে।দেখো ভাইয়ুর বুকে দুইটা গুলি লেগেছে।
অর্ণবঃ শান,আদি,ইশাত জলদি ওকে হসপিটালে নিয়ে চল।জলদী করে গাড়ি নিয়ে আয়।
ইশাতঃ আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।কিছু হবে না অরূপের।আমরা কিছু হতে দিবো না।
অরূপঃ আমাকে নিয়ে তোমরা ব্যস্ত হয়ো না।আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না।আমি আমার বোনুকে বাঁচাতে পেরেছি।আমার যে কি খুশি লাগছে।আমি আমার দেওয়া কথা রাখতে পেরেছি।
আদিলঃ তোর কিছু হবে না।
মাসফি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো।
মাসফিঃ আমি তাকে ধরতে পারি নি।তার আগেই সে পালিয়েছে। গুলি করে এক সেকেন্ডও দাঁড়ায়নি।
🍁🍁🍁
ইশাত গাড়ি নিয়ে এলো।উষা অরূপকে ধরে কাঁদছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো?সবাই অরূপকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। উষার গাড়িতে উঠে অরূপের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিলো। অরূপের বুক থেকে এখনো রক্ত পরছে।উষা নিজের ওরনাটা খুলে ঈশানের হাতে দিলো।
উষাঃ ভাইয়ুকে এটা দিয়ে বেঁধে দেও।বুকের থেকে এখনো রক্ত ঝরছে।
ঈশানঃ কিন্তু তোর ওড়না–
উষাঃ আমার কথা চিন্তা করো না।ভাইয়ুর বুকে বেঁধে দেও।
অরূপঃ আমাকে নিয়ে তোমরা ব্যস্ত হয়ো না।আমি ঠিক আছি।
অরূপের কথাগুলো জরিয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে। তরপরও বললো।
অরূপঃ ভাইয়ারা তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে গো।আর কখনও তোমাদের আদর,স্নেহ, ভালবাসা পাবো না।আমি মরে গেলে প্লিজ আমাকে ভূলে যেও না।আমায় একটু মনে রেখো।অনেক ভালবাসি তোমাদের। একটুও ইচ্ছে করছে না তোমাদের ছেরে যেতে।এই অনাথ, এতিম ছেলেটাকে অনেক ভালবেসেছো তোমরা।আমি তোমাদের ঋণ কখনও শোধ করতে পারবো না।তবে আমি যে আমার বোনুকে বাঁচাতে পেরেছি তাতে খুশি।
অর্ণবঃ চুপ একদম চুপ। আজেবাজে কথা বলবি না।তোর কিছু হবে না।তোকে আমরা সুস্থ করেই ছারবো।
অরূপঃ আমার সময় শেষ ভাইয়া।
ঈশানঃ আরেকটা কথাও বলবি না।
মাসফিঃ অরূপ নিজের ওপর আস্থা রাখো।তোমার কিছু হবে না।
উষাঃ ভাইয়ু তুমি ঠিক হয়ে যাবে দেখো।তুমি আমাদের ছেরে কোথাও যাবে না।তাহলে কিন্তু তোমার সাথে আমি রাগ করবো।
তারিনঃ নিজের ওপর ভরসা রাখো ভাইয়া।
ইশাত অনেক স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে। চোখ মুখে অন্ধকার দেখছে।আজকে যেনো পথও শেষ হচ্ছে না।সবার চোখে পানি।উষা কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলেছে। অবশেষে হসপিটালে এসে পৌছালো।সবাই ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে গেলো।ঈশান চিৎকার করে ডাক্তার কে ডাকতে লাগলো।ওদের চিৎকার চেঁচামেচি তে ডক্টর, নার্স বেরিয়ে এলো।ডক্টর অরূপকে ভেতরে নিয়ে গেলো।
উষাঃ বড় ভাইয়ু অরূপ ভাইয়ুর কিছু হবে না তো।
অর্ণবঃ আল্লাহকে ডাক বোনু।
ইশাতঃ কি থেকে কি হলো?
আদিলঃ আল্লাহ আমাদের ভাইকে সুস্থ করে দেও।
মাসফিঃ আল্লহকে ডাকো সবাই।
তারিনঃ উষানি বেবি শান্ত হো।এভাবে কান্না করিস না।আল্লাহকে ডাকতে থাক।
সবার হাত পা কাঁপছে। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছে। কিছু সময় পর ডক্টর ভেতর থেকে বের হয়ে এলো।মুখে তার বিষন্নতা।সবাই ব্যস্ত হয়ে তাকে ঘিরে ধরলো।
ইশাতঃ কি হয়েছে ডক্টর?
অর্ণবঃ ডক্টর আমার ভাই ঠিক আছে তো।
ঈশানঃ কি ব্যাপার কথা বলছেন না কেন?চুপ করে থাকবেন না।কিছু একটা বলুন।(রেগে)
আদিল ডক্টরের দুই বাহু ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো আদিলঃকথা বলছেন না কেন? আমাদের ভাই ঠিক আছে তো ।
ডক্টরঃ সরি মি.মির্জা আমরা আমাদের সর্বশ্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি।কিন্তু —
অর্ণবঃ কিন্তু কি বলুন ডক্টর? (ভয় পেয়ে)
ডক্টরঃ হি ইজ নো মোর।আপনাদের ভাই আমাদের মাঝে নেই। সে মারা গেছে।
ঈশানঃ না—–
আদিলঃ আমরা বিশ্বাস করি না।
ডক্টরঃ আপনারা লাশ নিয়ে যেতে পারেন।
উষাঃ মিথ্যা কথা। ভাইয়ু ডক্টর আমাদেরকে মিথ্যা কথা কেন বলছে?আমার অরূপ ভাইয়া ভালো আছে।
ভাইয়ু আমাদের ওপর রাগ করেছে।তাই হয়তো এমন করছে।
অর্ণবকে জরিয়ে ধরে উষা কান্নায় ভেঙে পরলো। সবার চোখ দিয়ে পানি পরছে।কারো বিশ্বাস হচ্ছে না অরূপ তাদের মাঝে নেই। ইশাত,আদিল মুখ ঢেকে কাঁদছে। ঈশান ফ্লোরে বসে পরলো।মাসফি চুপ করে দাড়িয়ে আছে। তারিনের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।সবাই একটা ঘোরের মাঝে আছে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। জেগে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মাত্র আধা ঘন্টার ব্যবধানে কত কিছু হয়ে গেলো।সত্যি নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই।
#চলবে