বোনু পর্ব-২৮

0
4687

#বোনু
#Part_28
#Writer_NOVA

অরূপ গাড়ি থামালো বাংলোর সামনে।অনেক কষ্ট করে লোকেশন ট্র্যাকিং করে এখানে চলে এসেছে। ভাগ্যিস আদিলের ফোনটা চালু ছিলো।নয়তো সারাদিন খুঁজলেও ওদের পেতো না।বিশাল বড় বাংলো।চারিদিকে নানা ধরনের জংলী গাছপালা।চারিপাশের বিশাল বড় বড় অর্জুন,কড়ই, মেহগনি গাছের ডাল-পালা দিয়ে বাংলোটাকে ঘিরে রেখেছে। এত ঘন করে গাছ লাগানো যে সূর্যের আলোও পরতে পারে না।

অরূপঃ বাপরে এটা কি বাংলো নাকি ভূতূড়ে বাড়ি?এখানে ভূতের মুভি করলেও ভালো টাকা ইনকাম করা যাবে।আদোও কি এখানে সবাই আছে?নাকি ভুলভাল ইনফরমেশন পেয়ে এখানে আসলাম।বাংলোর ভেতরে ঢুকে যদি বের না হতে পারি।তাহলে তো বাবার কালের জীবনটা এখানে রেখে ভূতেদের সাথে যোগ দিতে হবে।তারপর প্রতি আমাবস্যায় সব ভূতেরা মিলে একসাথে লুঙ্গি ডান্স দিবো।আমার কিছু হলে রাহী কোথায় যাবে?,কি ভাবছি?মাথা পুরোই গেছে।ভেতরে গিয়ে তো দেখি।

অরূপ দরজায় হাত রাখতেই হরর মুভির মতো দরজাটা আপনা-আপনি খুলে গেল।বেচারা অরূপ তাতে অনেকটা ভয় পেয়ে গেল।আয়াতুল কুরসি পরে বুকে ফুঁ দিলো। ভেতরে ঢুকতেই আবার ভূতের মুভির মতো অটোমেটিক দরজা বন্ধ হয়ে গেল।অরূপের ভয়টা আরো জোরে ওকে জেঁকে বসলো।দরদর করে ঘামতে লাগলো অরূপ।ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা।হঠাৎ কারো গলার আওয়াজ পেলো সে।

—ওয়েলকাম মি.অরূপ মির্জা।আপনাকে আমরা বরণ করে নিচ্ছি আমাদের এই ভূত বাংলোয়।আপনি তো মারা গেছেন তাহলে আমাদের সদস্যই তো হবেন।মৃত মানুষকে জীবীতদের মাঝে রাখলে তো আমাদেরি জন্য অপমানজনক।তাই নিয়ে এলাম।
অরূপঃ কে কে আপনি?আমার ভাই-বোনদের কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন?
—আপনি দেখছি গরমের মধ্যেও দরদর করে ঘামছেন।তোমার ভাই-বোনরা এখনও সহি সালামত আছে।
অরূপঃ কোথায় তারা?
—এতো তাড়া কিসের?এসেছেন যখন একটু বসেন
গল্প-সল্প করি।তারপর কে যাবে কে থাকবে সেটা দেখা যাবে?
অরূপঃ কে কথা বলছেন?সাহস থাকলে সামনে আসুন। কাপুরুষের মতো আচারণ করেছেন কেন?

হঠাৎ করে লাইট জ্বলে উঠলো। অরূপ দেখলো ওকে ঘেরা দিয়ে প্রায় ৭/৮ টা বডিগার্ড গান তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। আর এতখণ স্পিকারে কেউ কথা বলছিলো।অরূপকে উপরে নিয়ে গেল।অরূপকে দেখে সবাই খুশি হয়ে গেলো।
উষাঃ ভাইয়ু তুমি এসে পরছো।এবার সবাইকে ফিল্মের স্টাইলে হিরোর মতো সবাইকে মেরে আমাদের বাঁচিয়ে নেও দেখি।
অর্ণবঃ ভাই তুই ঠিক আছিস তো?
অরূপঃ আমি ঠিক আছি বড় ভাইয়া। আপনারা কেমন আছেন?
আদিলঃ আমরা মশার কামড় খেয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
মাসফিঃ অরূপ ভাই এবার আমাদের বাঁচা।
আরানঃ ভাই তোমাকে মারলো কে?আরামে আছো তো।ভালো লাগছে না। তাহলে একটু খাতির যত্নের ব্যবস্থা করি।

আরান চেয়ারের উপর আরাম করে পায়ের ওপর পা তুলে বসে হাতে গান ঘুরাচ্ছে।অরূপ, আরানকে দেখে খুব অবাক হয়ে গেলো।
অরূপঃ আরান তুই?
আরানঃ আমাকে দেখে অবাক হওয়ার কোন কারণ দেখছি না।আরো দুজন তো বাকি আছে।
—-আই এম কামিং।
আরানঃ তুমি চলে এসেছো।
মাসফিঃ জিকু তুই?
জিকুঃ হ্যাঁ,বস আমি।আরেকজনের আসার বাকি আছে তো।তারপর গেম শুরু করি।
জিবরানঃ আর কেউ বাকি আছে??
মাসফিঃ তোরা এতো নিচে নেমে গেছিস।ছিঃ আর কত নিচে নামবি।তোদের আমি নিজের ভাইয়ের চোখে দেখতাম আর তোরা।সত্যি নিজের আপন মানুষরা পেছন থেকে ছুড়ি মারে।

জিকু ও আরান মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।বুক ফেটে কান্না আসছে।জিকুর চোখ দিয়ে পানি পরছে। আজ সেও আরান পরিস্থিতির শিকার।চাইলেও পারছে না মাসফিকে জরিয়ে ধরে বলতে ভাই, আমরা দুজন আপনার সাথে বৈমানী করি নি।

🍁🍁🍁

গাড়ি থেকে নেমে বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলো আরাভ শিকদার। মুখে তার বিশ্ব জয় করা হাসি।সাথে আছে নাহিদ।বাংলোর দরজা দিয়ে ঢুকে সে বিশাল খুশি।পুরো গল্পের মেইন ভিলেন হলো আরাভ শিকদার। আজ দুজনের মন অনেক খুশি খুশি। আজ তার স্বপ্ন পূরণ হবে। সে হতে পারবে মাফিয়া ওয়াল্ডের বাদশাহ। সব কিছু শেষ করতে পারবে।

আরাভঃ নাহিদ সবকিছু ঠিক আছে তো।
নাহিদঃ হ্যাঁ,ভাই। সব ঠিক আছে। আপনার ছেলে ও জিকু আমাদের কথা মতো কাজ করছে।
আরাভঃ জলদী চলো।আমার যে আর তর সইছে না। কতখনে ওদের শেষ করবো কখন আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করবো।
নাহিদঃ চলেন ভাই।

অরূপকেও বেঁধে ফেলছে ওরা।আরান ও জিকু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা সায় দিচ্ছে না ওদের ক্ষতি করতে। তখনি ভেতরে ঢুকলো আরাভ শিকদার।
আরাভঃ কি খবর মি.মির্জারা?প্রাণ প্রিয় ভাতিজা মাসফি কেমন আছিস বাবা?
মাসফিঃ চাচ্চু তুমি?
অর্ণবঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই মাসফি।সবকিছুর পিছনে তোমার এই চাচার হাত।
আদিলঃ অদিতিকে সৃজান তোমার চাচার কথায় মেরে ফেলেছে।কারণ অদিতি আরাভ শিকদারের আসল রূপ দেখে ফেলেছে। তাই শেষ করে দিয়েছে অদিতিকে।আর পুরো দোষ আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। তোমাকে কয়েক বার মেরে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তুমি বেঁচে গেছো।
আরাভঃ একদম ঠিক। অদিতিকে আমার কথায় মেরে ফেলেছে। আমি এখন মাসফি তোকেও শেষ করে দিবো।তাহলে তোর নামের পুরো কোটি কোটি টাকার প্রপার্টি আমার নামে হয়ে যাবে।

আরাভ শিকদারের কথা শুনে আরান জোরে দুটো হাতে তালি দিয়ে বললো।

আরানঃ ছিঃ বাবা ছিঃ। তুমি এতো নিচে নেমে গেছো।আর কত নিচে নামবে।তুমি অদিতি আপুকে মেরে ফেলেছো।আমি তোমাকে কতটা শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম আর তুমি।আমার এখন তোমার উপর থু থু ফেলতে ইচ্ছে করছে। তুমি আমার ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছো।টাকার নেশা তোমাকে এতটা অন্ধ করে দিয়েছে। তুমি নিজের স্বার্থের জন্য আর কত মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে?আমার আজ ঘৃন্না করছে তোমাকে বাবা বলে ডাকতে।ছিঃ ছিঃ
আরাভঃ ভদ্র ভাবে কথা বলো আরান।আমি তোমার বাবা হই।যা কিছু করেছি সব তোমার জন্য করেছি।তুমি আমার একমাত্র পুত্র। আমি মারা যাওয়ার পর সবকিছু তোমার হবে।
আরানঃ যাস্ট সেট আপ মি.আরাভ শিকদার। আপনার ঐ পাপী মুখে আমাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিয়েন না।আমার ঘৃণা করে আপনাকে।আর কি বললেন আপনি মারা যাওয়ার পর সব আমার হবে সরি মি.আরাভ শিকদার।আপনার ঐ পাপের টাকার এক পয়সাও আমি নিজের জন্য খরচ করবো না।নিকুচি করি আপনার এতো এতো পাপে গড়া অঢেল সম্পত্তির। একটা টাকাও আমি ছোঁবো না
আরাভঃ আরান মুখ সামলে কথা বলো।
(রেগে + চিৎকার করে)
আরানঃ একদম চুপ। একটা আওয়াজ করবেন না।আপনাকে মারতে আমার একটুও বুক কাঁপবে না।
উষাঃ আরান ভাই আমার এবার আমাদের একটু ছার। এত সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ঝিম ধরে গেছে। আবার বসে বসে তোদের বাপ-বেটার এক্যশন দেখি।
আরানঃ জিকু দাঁড়িয়ে আছিস কেন?সবার দড়ি খুলে দে।আজকে সব শেষ করবো।

আরাভঃ খবরদার আরান এই কাজ মোটেও করো না।তাহলে কিন্তু আমি ভুলে যাবো তুমি আমার ছেলে।
আরানঃ একদম সাউন্ড করবেন না।গলায় পাড়া দিয়ে সাউন্ড কমিয়ে দিবো।আপনাকে আমি বাবা হিসেবে মানি না।আপনি আমার অদিতি বোনুকে মেরে ফেলেছেন।নিজের পাপ ঢাকতে আমার নিষ্পাপ বোনুকে মারতে আপনার একটুও বুক কাপে নি।তাহলে আপনাকে মারতে আমার হাতও কাঁপবে না।

জিকু অনুমতি পেয়ে সবার দাড়ির বাঁধন খুলে দিতে গেল।সবার প্রথমে মাসফির হাতের বাঁধন খুলে দিলো।

মাসফিঃ আরান—ঠাসসসসসসস।

মাসফি আরানের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।মাসফির চোখ লাল হয়ে আছে।
আরানঃ ভাই (গালে হাত দিয়ে)
মাসফিঃ উনি তোর বাবা হয়।সম্মান দিয়ে কথা বল।
আরানঃ ভাই এই মানুষটা আমাদের বোনুকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছে। বোনুকে আমি বাঁচাতে পারি নি।কিন্তু তোমার কোন ক্ষতি আমি হতে দিবো না।তুমি আমার ওয়ান এন্ড ওয়ানলি ব্রাদার।তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না। সরি ভাই। আমি ও জিকু তোমার সাথে মোটেও বৈঈমানী করিনি।আমাকে ও জিকুকে আরাভ শিকদার তার লোক দিয়ে ভয় দেখিয়েছে। যদি তোমাদের এখানে তুলে না আনি তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবে।সেই ভয়ে আমরা করতে বাধ্য হয়েছি।মাফ করে দিও প্লিজ।
মাসফিঃ আমি জানি আমার ভাই কখনও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না।

🍁🍁🍁

মাসফি জরিয়ে ধরলো আরানকে।আরান মাসফির কাঁধে মুখ গুঁজে হু হু করে কেঁদে দিলো।ওর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওর বাবা এত খারাপ।বুক ফেটে চিৎকার আসছে আরানের।কিন্তু সে পারছে না সেভাবে কাঁদতে।জিকু মাসফির সামনে এসে মুখ কুচুমুচু করে বললো।

জিকুঃ বস,আমাকেও মাফ করে দিয়েন।আমাকেও বাধ্য করা হয়েছে।
মাসফিঃ আমি তোকে চিনি জিকু।তুই আমার সাথে ৫ বছর ধরে আছিস।তোকে আমার থেকে ভালো কে চিনবে?আমারও মনে হচ্ছিল কোথাও ঘাপলা আছে।
জিকুঃ এতো বিশ্বাস করেন আমায় বস?(অবাক হয়ে)
মাসফিঃ নিজের থেকেও বেশি। তোরা যে আমার ভাই।আমি জানি আমার ভাইরা কখনও আমার সাথে খারাপ কিছু করতে পারে না।
জিবরানঃ ঐ জিকু আমাদের খুলবে কে?ভাই আমাদের দিকেও একটু নজর দে।
উষাঃ ছোট ভাইয়ু জলদী খোল।আমার হাতে লাল দাগ পড়ে গেছে।
তারিনঃ আমাকে তো কেউ খুলে দেও।
নুহাঃ ঈশান আমিও আছি।
ঈশানঃ তোরা এভাবেই থাক এটা তোদের শাস্তি।
উষাঃ বড় ভাইয়ু কিছু বলো এই শয়তানটাকে।
আরাভ শিকদার গার্ডদের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তার নিজের ছেলেও আজ তার বিরুদ্ধে গিয়ে মাসফির পক্ষ নিচ্ছে।মাসফি তার ছেলের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।
আরাভঃ তোমরা হা করে কি দেখছো?তোমাদের এতগুলো টাকা দিয়ে রেখে কি করলাম?তকিয়ে তাকিয়ে তামশা দেখার জন্য কি এতোগুলো টাকা নষ্ট করেছি আমি।এক এক করে শেষ করে দেও সবাইকে।নাহিদ,ঐ নাহিদ।
নাহিদঃ জ্বি ভাই
আরাভঃ কোথায় থাকো তুমি? সবাই এখানে আরামে দড়ি খুলে চেয়ারে বসে আছে আর বডিগার্ডরা কিছুই করছে না কেন?

অর্ণব, আদিল,জিবরান,ইশাত,ঈশান, অরূপ ছাড়া পেয়ে হাত দুটোকে নারিয়ে একসাথে ব্যায়াম করলো।ততক্ষণে গার্ডরা ওদের জন্য চেয়ার নিয়ে এসেছে। সবাই আরাম করে চেয়ারে বসলো।অারাভ শিকদার তো অবাক।ওর বডিগার্ড ওদের জন্য চেয়ার নিয়ে এলো।অর্ণব চেয়ারে বসে হাই তুলতে তুলতে বললো।
অর্ণবঃ মুখটা বন্ধ করুন চাচা।এগুলো আমাদের লোক।আমরা আপনার পোষা কুকুরগুলোকে কিনে নিয়েছি।
ইশাতঃ আপনি যেদিন আমাদের বাসায় এসেছিলেন সেদিন আমাদের শক হয়ে গেছে। তাই আপনার পোষা কুকুরগুলোকে আগের থেকে কিনে নিয়েছিলাম।
অরূপঃ আপনি যেদিন আমাদের অফিসে এসে আমার নামে এতো এতো সুনাম ছরিয়ে ছিলেন তখন পুরো সিউর হলাম।
আদিলঃ এখন নিশ্চয়ই চাচা আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে আমরা এত সময় এভাবে থাকলাম কেন?যেহেতু আমাদের কেনা গার্ড।আসলে আমরা আপনার প্ল্যানটা বুঝতে চাইছিলাম।
উষাঃ ভাইয়ু আমাদের কেউ একটু বসতে দে।
তারিনঃ আমার কোমড় ব্যাথা করছে।
নুহাঃ বাদুড় ঝোলা হয়ে থাকতে থাকতে আমার অবস্থা হালুয়া টাইট।
জিবরানঃ যাও গিয়ে আরো তিনটা চেয়ার নিয়ে এসো।(একটা গার্ডকে উদ্দেশ্য করে)
ঈশানঃ চাচা সাহেবের আদর যত্ন কে করবে আগে?
অর্ণবঃ মাসফি আগে যাক।
আরানঃ তারপর আপনারা যাবেন।আপনাদের কম ক্ষতি করে নি।শেষ করে দিবেন তাকে।উষাকেও এই লোকটার জন্য অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে।
আরাভঃ আমি এতো সহজে কিছুতেই হারবো না। তোদের সবাইকে আমি শেষ করে দিবো।
নাহিদঃ অবস্থা বেগতিক।আমি এখন পালাই।নিজে বাঁচলে বাপের নাম।জীবনে বেঁচে থাকলে ঝালমুড়ি বেঁচে খাবো। তারপরও কারো গোলামী আর করছি না।

🍁🍁🍁

আরাভ শিকদারকে মাসফি ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো।নাহিদ পেছনের দিকে পালাতে নিলে দেখলো উষা, তারিন, নুহা ভাঙ্গা কাঠ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাহিদের দিকে তাকিয়ে তারিন ভ্রু নাচিয়ে বললো।
তারিনঃ আরে মিয়া যান কোথায়?আপনাকে তো খাতির করার মানুষ আছে।আমরা আচ্ছা করে ধোলাই দিয়ে আপনার খাতির করবো।
নাহিদঃ আমার খাতিরের দরকার নেই। আমাকে যেতে দেন আপনারা।(বড় করে শুকনো ঢোক গিলে)
উষাঃ তারু বেবি তোরা তো কাঠ পেলি আমি তো কিছুই পাচ্ছি না।আমি কি দিয়ে তার খাতির করি।
নুহাঃ তুমি তোমার জুতা ব্যবহার করছো না কেন?
উষাঃ বুদ্ধিটা তো খারাপ না।দাঁড়াও তোমরা। আমার জন্য একটু ওয়েট করো।আমি জুতা খুলে নেই।
তারিনঃ আরাভ শয়তানের গোলামী করার মজা আজ তোমাকে হারে হারে বুঝিয়ে দিবো।
উষাঃ আমার জুতা খোলা শেষ। সবাই শুরু করো।সো গাইস এটাআআআআআআআক হিম।
(জোরে চেঁচিয়ে)

উষার বলতে দেরী হলো কিন্তু নাহিদের শরীরে বারি পরতে দেরী হলো না।বেচারার অবস্থা এখন অনেক খারাপ।একটু হাঁপিয়ে সবাই বসে পরলো।নাহিদ মার খেয়ে চিৎপটাং হয়ে মেঝেতে পরে আছে।

নুহাঃ একটু জিরিয়ে তারপর শুরু করি।
তারিনঃ আচ্ছা
নাহিদঃ এক জন এক জন করে মারলে কি দোষ হতো? এতো জোরে মারে।সবাই মিলে আমাকে আলু ভর্তা করে ফেলছেন।আহ্ আমার পিঠ।
উষাঃ জানো না৷ চান্দু। একতাই বল। আরে তোরা থামলি কেন আবার শুরু কর।উনার ডোজটা কম পরে গেছে। তাই তো আবার কথা বলতে পারলো।
নাহিদঃ নাআআআআআআ।

মাসফি,মির্জারা পাঁচ ভাই,জিবরান মিলে আরাভ শিকদারকে মারতে লাগলো।আরান অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।শত হোক নিজের জন্ম দাতা তো।আজ যদি তার বাবা এমন না করতো তাহলে সে নিজে ওর বাবাকে বাঁচাতো।কিন্তু এখন সে নিজে তার বাবার মৃত্যু কামনা করে।যে পাপের কোন ক্ষমা হয় না।সে পাপ করেছে তার বাবা।
আরানঃ ছারবে না তাকে।জানে মেরে ফেলো।এমন মানুষের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
(কাঁদতে কাঁদতে)
জিবরানঃ একে কি পুলিশের হাতে তুলে দিবো?
অরূপঃপুলিশের হাতে তুলে দিলে জামিন নিয়ে বের হয়ে যাবে।আবার কারো না কারো ক্ষতি করবে।আমাদের পেছনে আবার লাগবে।
আদিলঃ কি করবো তাহলে এটাকে?
অর্ণবঃ জানে মেরে ফেলবো?
ঈশানঃ তাই করো।ওর জন্য আমাদের বোনু অনেক কষ্ট পেয়েছে।
ইশাতঃ আমি ঠিক বুঝছি না কি করবো?
জিকুঃ বস,আপনি কি বলেন?
মাসফিঃ আমি কি বলবো?আমার মন তো দোটানায় পরে গেছে। একবার মনে হয় শেষ করে দেই।আরেকবার মনে হয় মাফ করে দেই।

আরাভ শিকদার রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পরে আছে।আর ওরা সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।হঠাৎ সবাই গুলির শব্দে আৎকে উঠলো।দেখলো আরাভ শিকদার মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। রক্তের ধারা বইছে তার শরীর থেকে । আরানের গান থেকে ধূয়া বের হচ্ছে। কেউ বুঝতে বাকি রইলো না কাজটা কার।

মাসফিঃ কি করলি তুই আরান?
আরানঃ তার প্রাপ্য সাজা তাকে বুঝিয়ে দিলাম।অনেক মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছিলো।তাই আমি নিজে তার গেম ওভার করে দিলাম।ও বেঁচে থাকলে আবার তোমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতো।তাই সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম আমি।অনেক পাপ করেছে সে।তার পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে। এবার উপরে গিয়ে বাকি হিসাব করুক।

কথাগুলো বলে হাঁটু গেড়ে বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো আরান।মাসফির চোখ বেয়েও দুই ফোঁটা পানি গরিয়ে পরলো।যে খেলা শুরু বাবা করেছিলো আজ সে খেলা ছেলে শেষ করলো।আজ ওদের জীবন থেকে সকল ভেজাল অবসান হলো।
জিবরানঃ এবার লাশ কি করবো?
আদিলঃ আমি ডিপার্টমেন্টের কাছে বলে দিচ্ছি বন্দুক যুদ্ধে সন্ত্রাসীদের হাতে মৃত্যু হয়েছে দেশের অন্যতম শিল্প পতি ও সমাজ সেবক আরাভ শিকদারের।বাকিটা আমি সামলে নিবো।
ঈশানঃ আর ঐ নাহিদকে কি করবো?
উষাঃ ছোট ভাইয়ু এটাকে পাবনায় পাঠাও।ওর জায়গা এখন সেখানে। পাগলাগারদে গেলে ওর শিক্ষা হবে।ফাজিল ব্যাটা।তোর চামচামি করার শখ এবার বুঝিয়ে দিবো।
ইশাতঃ আইডিয়াটা মন্দ নয়।
অরূপঃ আমাদের বোনু সবসময় সঠিক কথায় বলে।
জিবরানঃ দেখতে হবে বউটা কার।(ভাব নিয়ে)
উষাঃ হয়ছে ভাব নিয়েন না।বাসায় চলেন আপনাকে দিয়ে আজ থালা-বাসন মাজাবো।আমাকে জরিনা ও কালুর মা বলার কথা আমি ভুলি নাই।
জিবরানঃ এই রে সেরেছে।এবার আমার কি হবে??
নাহিদঃ না ভাই। এবারের মতো মাফ করে দেন।
ইশাতঃ তোর মাফ হচ্ছে না।এবার পাবনায় গিয়ে গোলামী করার জন্য সঙ্গী খুঁজে নিস।

অর্ণব বডিগার্ডদের কে ইশারা করে নাহিদকে ও আরাভ শিকদারের বডি নিয়ে যেতে বললো।তারা নাহিদকে ও আরাভ শিকদারকে নিয়ে গেলো।সবার মনটা আজ ভীষণ খুশি।সব সমস্যার অবসান করে নতুন করে জীবন শুরু করবে তারা।আরানের জন্য অবশ্য সবার খারাপ লাগছে।নতুন অধ্যায় শুরু করতে সবাই একসাথে খুশি মনে বাংলো থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

#চলবে

#