#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৮|
সারারাত ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামার পর সবে আকাশ পরিষ্কার হয়েছে। আকাশের মেঘলা ভাব কেটে রোদ নেমেছে। গতকাল প্রায় ভোর অব্দি গল্প করে ঘুমিয়েছিল উচ্ছ্বাস-কুসুম। কুসুম ঘুমানোর সময় দুজন এক বিছানায় ঘুমানো নিয়ে ভীষন অস্বস্তি বোধ করছিল। তাই
উচ্ছ্বাস কুসুমের থেকে একটু সরে বিছানার এক পাশে ঘুমিয়েছে। কিন্তু উচ্ছ্বাস নিজের জায়গায় ঠিকঠাক ঘুমালেও, ভোরের দিকে বৃষ্টির কারণে ঠান্ডা লাগায় কুসুম নড়তে নড়তে একদম উচ্ছ্বাসের গায়ের সঙ্গে মিশে গেছিল। উচ্ছ্বাসও ঘুমের ঘোরে উম পাবার জন্যে কুসুমকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। দুজন দুজনের আলিঙ্গনে পুরো একটি রাত কাটিয়ে ফেলল, সেই সম্পর্কে দুজনকেই বেখেয়াল। সকালের দিকে রোদ চোখে মুখে লেপ্টে গেল দুজনের। উচ্ছ্বাস চোখ খিচে বালিশ তুলে মুখে চেপে ঘুমিয়ে গেল। তবে কুসুমের ঘুম ছুটে। চোখ খুলে আশপাশ বোঝার চেষ্টা করে। মনে পরে তখন, আজ কুসুমের বাসর রাত ছিল। কুসুম নিজের বাড়িতে নয়, বরং উচ্ছ্বাস বাড়িতে তার ঘরেই তার সঙ্গে শুয়ে আছে। কুসুম পাশ ফিরে তাকাল। উচ্ছ্বাসের গায়ের সঙ্গে একদম লেপ্টে আছে কুসুম। উচ্ছ্বাসের একটা হাত কুসুমের কোমড় ছুঁয়ে রেখেছে। প্রথমবারের মত উচ্ছ্বাসকে নিজের এতটা কাছে অনুভব করতেই কুসুম কেমন যেন হাসফাঁস করে উঠল। অস্বস্তিতে জমে গেল সর্বাঙ্গ। নিশ্চয়ই রাতে সে নড়তে নড়তে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। ঊষা কুসুমের পাশে ঘুমালে, কুসুম সকালে উঠে ঠিক এই দৃশ্যটাই দেখে। ঊষা বারবার কুসুমকে ঠিক করে দিলেও,সেই কুসুম নড়তে নড়তে ঊষার সঙ্গে লেগে ঘুমায়। উচ্ছ্বাস জেগে যাবার আগেই কুসুম আলগোছে উচ্ছ্বাসের হাত নিজের কোমড় থেকে ছাড়িয়ে নিল। পাতলা শাড়ি ঠিক করে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে চলে গেল। ঝটপট গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে নজর গেল উপুড় হয়ে ঘুমন্ত উচ্ছ্বাসের দিকে। সে নির্বিঘ্নে, আরাম করে ঘুমুচ্ছে। কুসুম মৃদু হাসল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে যাবে পা বাড়িয়েও থেমে গেল। পিছিয়ে উচ্ছ্বাসের পাশে এসে বসল। ঘুমন্ত উচ্ছ্বাসকে দেখতে ভীষন ভালো লাগছে কুসুমের। কুসুম আলগোছে হাত বাড়িয়ে উচ্ছ্বাসের চুল টেনে দিল। আরামে উচ্ছ্বাস গুঙিয়ে উঠলো। কুসুম হাসল। উচ্ছ্বাসের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। গতকাল উচ্ছ্বাসের টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়তে লাগল। এই টাওয়ালের মধ্যে একটা উচ্ছ্বাস উচ্ছ্বাস গন্ধ আছে। কুসুমের প্রিয় গন্ধ! কুসুম নাক ভরে টেনে নেবার চেষ্টা করল এই গন্ধ। কুসুমের চুল ঝাড়ার কারণে, চুলের পানি ছিটকে পরল ঘুমন্ত উচ্ছ্বাসের মুখে শরীরে। ঘুমের মধ্যেই উচ্ছ্বাস বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে তাকাল। আশপাশ লক্ষ্য করতেই নজর গেল আয়নার সামনে ভেজা অঙ্গে দাঁড়ানো কুসুমের দিকে। তাহলে কুসুমের চুলের পানিতেই উচ্ছ্বাসের ঘুম ভাঙলো? উচ্ছ্বাস হেসে উঠে বসল। মাথার বালিশ কোলের উপর রেখে সেটায় হেলান দিল। গালের উপর এক হাত চেপে ধরে বলল,
‘ চুলটা কবে ভালো করে ঝাড়তে শিখবে, কুসুম? তোমার চুলের পানির ছিটে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে। ‘
কুসুম পেছনে ফেরে। নম্র কণ্ঠে জিহ্বা কেটে বলে, ‘ সরি, আর করব না। ঘুমিয়ে পড়ুন আবার। ‘
উচ্ছ্বাস মৃদু হাসে। মাথা তুলে দেয়ালে টানানো ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে। পরপরই বলে, ‘ শিট! নয়টা বেজে গেছে। আর তুমি বলছ আরো ঘুমাব। বিকেলে রিসেপশন। এত কাজ…ওহ, শিট! ‘
বলতে বলতে উচ্ছ্বাস দ্রুত কম্বল ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে পরে। ঝড়ের গতিতে ড্রয়ার থেকে টিশার্ট ট্রাউজার নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। অল্পক্ষণের মধ্যেই গোসল সেরে বেরিয়ে আসে। কুসুম তখন হাতে পায়ে লোশন লাগাচ্ছে। উচ্ছ্বাস কুসুমের পেছনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে, তৈরি হয়ে নেয়। কুসুম গয়না পড়ছিল। গয়নাগুলো ভারী দেখে উচ্ছ্বাস বলল, ‘ এত ভারী গহনা পড়ার দরকার কি? সিম্পল কিছু পড়ো। সামলাতে পারবে না এসব। ‘
কুসুম হাত থামিয়ে আয়নায় উচ্ছ্বাসের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে বলে,
‘ কেউ কিছু বললে? ‘
‘ কে বলবে? আম্মা? তোমার কি মনে হয়, আম্মা তোমাকে এসব ব্যাপারে কিছু বলবে? ‘
কুসুম মাথা দুলিয়ে মানা করে বলে, ‘ খালামনি না। আপনার ফুপু বা দাদি। ওরা? ‘
উচ্ছ্বাস কুসুমের হাত থেকে গয়নার বাক্স সরিয়ে আলগোছে ড্রয়ারে লক করে রেখে দেয়। লক করার সময় বলে,
‘ দাদি বা ফুপু বলবে না কিছু। আর বললেও আম্মা বা আমি ম্যানেজ করে নেব। এখন দ্রুত রেডি হও। দুজন একসঙ্গে বের হব। ‘
____________________
নতুন বর বধূ ঘর থেকে বেরিয়ে এলে, সবাই মিলে সকালের নাস্তা সেরে ফেলে। উচ্ছ্বাস নাস্তা করে বেরিয়ে পরে রিসেপশনের প্রস্তুতি নিতে। কুসুম উচ্ছ্বাসের বোনদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। শিউলি কুসুমের পাশে বসে বিয়েতে অস মেহমানদের সঙ্গে কুসুমের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। কুসুম খুব নম্র ভাবে কথা বললো তাদের সঙ্গে। বিয়েতে আসা সবার একটাই কথা,
‘ উচ্ছ্বাসের বয়সের তুলনায় বৌ বড্ড কমবয়সী। ছেলে তাদের বাল্যবিবাহ করেছে নাকি? ‘
কুসুম এই কথার জবাবে চুপ থাকলেই, শিউলি তাদের বুঝিয়ে বলল বিষয়টা। কুসুমের কাবিন অল্পবয়সে হলেও, বিয়ে সংসার এখন প্রাপ্তবয়সে হচ্ছে। কুসুমের বয়স এখন উনিশ। সংসার, বিয়ে এসবের জন্যে সে যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক। মেহমানরা কেউ এই কথা শুনে সন্তুষ্টিতে মাথা দুলালেও, কেউ কেউ আড়ালে কথা বাড়ালো। আড়চোখে কুসুমকে শোপিজের ন্যায় পরখ করল। কুসুম এদের এসব বিভ্রান্তকর আলোচনায় অতিষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া আর কিইবা করার আছে তার।
উচ্ছ্বাস বাড়িতে এলো, তখন প্রায় মধ্যদুপুর। সবাই খেতে বসেছে। উচ্ছ্বাস বাইরের শার্ট পাল্টে ঘরের টিশার্ট পরে ফ্রেশ হয়ে নিচে এল। কুসুমের পাশে চেয়ার টেনে বসার সময় ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,
‘ ঠিক আছো তুমি? এখানে অসুবিধা হচ্ছে কোনো? ‘
কুসুম মাথা দুলিয়ে মানা করল। উচ্ছ্বাস কুসুমের পাশে বসে প্লেট উল্টো থেকে সোজা করল। একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
‘ কোনো অসুবিধা হলে বলবে, ঠিকাছে? ‘
কুসুম মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিল। আজকের সকালের ঘটনা চেপে গেল উচ্ছ্বাসের সামনে। উচ্ছ্বাস নিজে নাস্তা কুসুমের প্লেটে তুলে দিল। একটু বেশি করে পোলাও প্লেটে তুলে দিতে চাইলে, কুসুম উচ্ছ্বাসের হাত চেপে ধরে। বলল,
‘ এর বেশি খেলে আমি মরে যাব। ‘
উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে কুসুমের দিকে তাকায়। পোলাও আর দেয়না। কিন্তু কুসুমকে বলে, ‘ এরকম চড়ুই পাখির মত খাবার খাওয়া এই ঘরে চলবে না। আমরা সবাই পেটুক। সো, তোমাকেও পেটুক হতে হবে। খালামনির বাড়িতে প্রেশার লো হয়ে পরে থাকা এই বাড়িতে চলবে না। আজকের মত কম খাও। কালকে থেকে খাবারে যেন অনীহা না থাকে। ঠিকাছে? ‘
কুসুম কি বলবে আর। উচ্ছ্বাসের গরম চোখ দেখে কিছু কথা বলার সাহস নিভে এলো। চুপ করে প্লেটের খাবার খেয়ে নিল। তবুও ফাঁকফোকরে উচ্ছ্বাস গরুর কলিজার টুকরো, বোরহানি এসব খাওয়ালো কুসুমকে। এই প্রথমবার কুসুমের মনে হল, তার পেটের ভেতরের নাড়িভুঁড়ি সব খাবারে হয়ত পেঁচিয়ে গেছে। এত এত খাবার খেয়ে সে নড়তে অব্দি পারছে না। আজকে কম খাবে বলে ঠিকই খাইয়ে খাইয়ে তার পেট ফাঁপিয়ে দিয়েছে। নিষ্ঠুর লোক!
বসার ঘরে মেহমানরা সবাই গল্প করছে। কুসুম একপাশের সোফায় বসে। সামনে বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে। মানহা কিছু ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে খেলছে। খেলার ফাঁকে ফাঁকে বারবার চোখ ঘুরিয়ে কুসুমকে দেখছে। কুসুম অনেকক্ষন ধরে ওকে লক্ষ্য করে একসময় হাত বাড়িয়ে ডাক দিল ওকে। মানহা উঠে এলো। কুসুমের সামনে দাঁড়িয়ে আবারও চোখ বড়বড় করে ওকে দেখছে। কী এত দেখছে কুসুম সেটা জানে না। কুসুম হেসে বলল,
‘ কোলে বসবে আমার, বাবু? ‘
মানহা কিছুই বললো না। শুধু চেয়ে রইল। আগের চেয়ে কিছুটা বড় হয়েছে মানহা। বয়স চারবছর। কুসুমকে যেদিন দেখতে গেছিল তখন ওর বয়স ছিল মাত্র একবছর। বড় হওয়ায় মানহার চেহারাতেও পরিবর্তন এসেছে। আরো সুন্দর হয়েছে। হাত বাড়িয়ে মানহার ফুলো গাল টেনে দিল কুসুম। মানহা এখনো চেয়ে আছে। একদমই মানহা বলল,
‘ আমাকে কোলে নিবে? ‘
কুসুম হেসে উঠল। মানহাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিল। মানহার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
‘ কেন নিব না, মেয়ে? এত কিউট একটা মেয়েকে কোলে না নিয়ে পারা যায়? আজকে তোমাকে কোল থেকেই আর নামাব না। ঠিকাছে? ‘
মানহা কি বুঝল কে জানে? ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেললো। এত বড় একটা মেয়ে কোলে উঠে এমন হাউমাউ করে কাদতে দেখে কুসুম বোকা বনে গেল। ব্যস্ত ভঙ্গিতে মানহাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। মানহা শান্ত তো হলোই না, উল্টো কুসুমকে খামচে, কামড়ে দিতে লাগল। কুসুম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কোল থেকে নামাবে, তার আগেই দূরে থেকে উচ্ছ্বাস ছুটে এসে মানহাকে কোলে নিয়ে নিল। মানহার গলা বসে গেছে কাদতে কাদতে। মানহা উচ্ছ্বাসের ঘাড়ে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে উঠল। উচ্ছ্বাস মানহার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ কাদে না, কাদে না। বড় হয়েছ না তুমি। বড় মেয়েরা কাদে? ছিঃ, মানহা। এটা ব্যাড হ্যাবিট। কান্না থামাও। ‘
মানহা উচ্ছ্বাসকে ভীষন মানে। ছোটবেলা থেকেই ও উচ্ছ্বাসের জন্যে একপ্রকার উন্মাদ। তাই উচ্ছ্বাস দুইবার বলার পরই মানহা কান্না থামাল। কুসুম ওকে আবার কোলে নিতে চাইলে, মানহা আবার ঠোঁট ভেঙে কাদতে চাইল। চট করে কুসুম হাত সরিয়ে নিল। উচ্ছ্বাসের দিকে অসহায় চোখে চাইলে উচ্ছ্বাস চোখের ইশারা করে বললো,
‘ ছোট মানুষ। তোমাকে চিনতে সময় লাগবে। ‘
কুসুম কথা বাড়ালো না। মানহার কান্না থামলে উচ্ছ্বাস জিজ্ঞেস করল,
‘ কেঁদেছিল কেন, মানহা? নতুন বউ তোমাকে আদর করেছে না? কেউ আদর করলে কাদতে হয়? ‘
মানহা আড়চোখে কুসুমের দিকে চেয়ে বলল,
‘ উনি আমাকে বেচে দেবে ঝালমুড়িওয়ালার কাছে। তাই আমি ভয় পেয়েছি। ভয় পেলে আমার কান্না আসে, জানো না তুমি? ‘
উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে তাকাল কুসুমের দিকে। তারপর হেসে মানহাকে বলল, ‘ নতুন বউ তোমাকে কেন বেচে দেবে, মানহা? ও তোমাকে কত আদর করে। আমি তোমাকে আদর করি না, আমি কি তোমার বেচে দেব, হু? ‘
‘ তুমি দিবে না জানি। কিন্তু নতুন বউ দেবে। আমাকে বলেছে। ‘
‘ কী বলেছে নতুন বউ? ‘
‘ কোল থেকে নামাবে না আমাকে। কোলে তুলে বেচে দেবে ঝালমুড়িওয়ালার কাছে। ‘
কুসুম ভ্রু কুঁচকে চেয়ে হঠাৎ করে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে এলো তার। উচ্ছ্বাস নিজেও হাসলো। কুসুমকে বলল, ‘ ও শুধু ঝালমুড়ি খায় দেখে ফুপু ওকে ঝালমুড়িওয়ালার ভয় দেখিয়েছে। ওর উইক পয়েন্ট এটা। কথা অমান্য করলেই, ঝালমুড়িওয়ালার ভয় দেখালেই শান্ত হয়ে যায়। তাই ও ভেবেছে তুমিও ওকে ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছে দিয়ে দেবে। ‘
কুসুম হাসলো। মানহার কাছে গিয়ে ওকে মানানোর চেষ্টা করল। উচ্ছ্বাসও কিছুটা সাহায্য করল এতে। মানহা একটু পরই কুসুমের সঙ্গে মিশে গেল। উচ্ছ্বাস মানহাকে কুসুমের কোলে দিল। কুসুম কোলে নিয়ে গল্প শুনাতে লাগল মানহাকে। উচ্ছ্বাস কুসুমের পাশে বসে মোবাইলে কিছু করছে। একপর্যায়ে কুসুম জিজ্ঞেস করল,
‘ আপনার বাচ্চা খুব পছন্দের, তাইনা? ‘
উচ্ছ্বাস মোবাইলে অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
‘ বাচ্চাদের কার ভালো লাগে না? তবে আমার একটু বেশিই ভালো লাগে। বাচ্চা ঘরে থাকলে, ঘর ভরা ভরা লাগে। নাহলে তো ভূতের ঘরের মত হয়ে থাকে ঘর। ‘
কুসুম শুনে। ভাবে কতকিছু। পরপরই উচ্ছ্বাসের দিকে চেয়ে রয় নির্নিমেষ। একটা বাচ্চা…. বাচ্চা এলে কি আসলেই ঘর ভরে উঠে খুশিতে?
#চলবে
#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৯|
দুপুরের খাবার পর্ব শেষ হলে, বসার ঘরে মেহমানদের দারুন হইচই চলতে লাগলো। চায়ের আসর ইতিমধ্যে খুব জমে উঠেছে। এই ফাঁকে উচ্ছ্বাস বসার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে এসেছে। একটা প্রেসক্রিপশনের ছবি এসেছে হোয়াটসঅ্যাপে। বসার ঘরে এত হইচই এর কারণে সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো যাচ্ছে না। শান্তি পরিবেশ পেতে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে। কুসুম বসে গল্প করছিল ভাবির সঙ্গে। উচ্ছ্বাসকে উপরে যেতে দেখে ভাবি কুসুমকে ইশারা করে বললেন,
‘ উচ্ছ্বাস নিজের রুমে গেছে, কুসুম। ‘
কুসুম বুঝতে পারলো না ইশারা। ও বলল, ‘ দেখেছি আমি। ‘
ভাবি বললেন, ‘ তুমিও যাও। দেখো কিছু লাগবে কিনা। ‘
কুসুম উত্তর দিল, ‘ লাগলে তো ডাকবেন। ডাকেন নি এখনো। ‘
ভাবি বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘ গতকাল রাতে কিছু হয়েছে তোমাদের মধ্যে? ‘
কুসুম আচমকা এমন প্রশ্নে অস্বস্তিতে পরে গেল। এদিক ওদিকে চেয়ে আবার ভাবির দিকে তাকালো। মৃদু কন্ঠে বলল, ‘ জানি না আমি। ‘
ভাবি ভ্রু কুচকে তাকালেন। বললেন, ‘ মানে? গতকাল রাতে তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে তুমি জানো না? ‘
কুসুম কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর থেমে থেমে বলে, ‘ গল্প হয়েছে। ‘
ভাবি অবাক হয়ে বললেন, ‘ শুধু গল্প? আর কিছু নয়? ‘
কুসুম মাথা দুলিয়ে বলল, ‘ না। ‘
উচ্ছ্বাসের ভাবি ভাবলেন অনেক কিছু। উচ্ছ্বাসকে বাচ্চা না নেবার কথা বলেছে তার মানে এই নয় যে, দুজন দুজনের থেকে এতটা দুরত্ব বজায় রেখে চলবে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দুরত্ব যত কম হবে, ভালোবাসাটাও বাড়বে। আজকাল সংসার ভাঙন সেটা হাতের ময়লার ন্যায় হয়ে গেছে। যে যেভাবে পারছে, সংসার ভাঙছে, গড়ছে। আজকাল বাচ্চারা সম্পর্কের মূল্য দিতে জানে না।
উচ্ছ্বাসের ভাবি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। হাত বাড়িয়ে কুসুমের মাথায় আঁচল তুলে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে বললেন,
‘ শুনো কুসুম। তুমি আমার ছোট বোনের মত। তাই আমি যা বলছি, তোমার ভালো ভেবেই বলছি। মন দিয়ে শুনবে। উচ্ছ্বাস আর তোমার বয়সের তফাৎ কত জানো? ১০ বছর! এটা একটা স্বাভাবিক পার্থক্য হলেও এই পার্থক্য তখনই স্বাভাবিক থাকে, যখন উচ্ছ্বাস তোমাকে নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট থাকবে। হোক সেটা শারীরিক কিংবা মানসিক। উচ্ছ্বাস পুরুষ মানুষ। তার যেমন মানসিকতা,বিয়ের পর তুমি না এগিয়ে আসলে সে কখনোই তোমাকে জোর করবে না। কিন্তু পুরুষ মানুষ যতই ভালো হোক না কেন, একটা জায়গায় সে দূর্বল। সেটা হচ্ছে তার স্ত্রী। তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছ। একজনের বউ তুমি। তোমার স্বামীর সুবিধা অসুবিধার দিকটা তোমাকেই দেখতে হবে। সে যেন ঘরের বাইরে সুখ খুঁজতে না যায়, সেদিকটা তোমাকেই নজরে রাখতে হবে। আশা করি, এর বেশি খুলে তোমাকে কিছু বলতে হবে না। আমার কথা কি তুমি বুঝতে পেরেছ? ‘
কুসুম এতক্ষণ ভীষন মনোযোগ দিয়ে ভাবির কথা শুনল। পুরুষ মানুষ কেমন হয় সাধারণত, সেটা কুসুমের জানা। সকল পুরুষ মানুষ উচ্ছ্বাসের মত ভালো হয় না, সেটাও কুসুম জানে। ভাবি কি বোঝালেন? কুসুম কি তবে উচ্ছ্বাসের ভালো হওয়াটার ফায়দা নিচ্ছে! অবশ্যই না। কুসুম উচ্ছ্বাসকে বিয়ের এক বছরের মাথায়ই ভালোবেসেছে। চেয়েছে মনেপ্রাণে। বিয়ের পর সেই চাওয়া আরো দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু এখন তাদের সম্পর্ককে পরিণতি দিতে উচ্ছ্বাস নিজে এগিয়ে না এলে, কিভাবে কুসুম মুখ ফুটে বলবে? কুসুম তো একজন মেয়ে। মেয়েদের কি এভাবে নির্লজ্জ হওয়া মানায়? উচ্ছ্বাস যদি কুসুমকে ভালোবাসত, তবে কুসুম নয়। উচ্ছ্বাস ইশারা করে হলেও কুসুমকে বোঝাত যে কুসুমকে সে চায়। শারীরিক, মানুসিক দুইভাবেই। কিন্তু উচ্ছ্বাস কিছুই বলে নি, বোঝায় নি। বরং ভালো মানুষ সেজে বসে আছে। কুসুম এতে কি করবে? মেয়ে মানুষ কতটুকুই বা এগিয়ে যেতে পারে?
ভাবি কুসুমকে নাড়ালেন। কুসুম তাকাল। ভাবি বললেন,’ কফি বানাতে পারো? উচ্ছ্বাসের জন্যে বানিয়ে নিয়ে যাও। মাথা ব্যথা থাকলে সেরে যাবে। যাও।’
কুসুম মৃদু হেসে রান্নাঘরে গেল। ঝটপট কফি বানিয়ে সিড়ি ভেঙে উপরে চলে গেল। উচ্ছ্বাস বিছানায় বসে একটা বড় মোটাসোটা বই ঘাটছে। বারবার হাত উচু করে কপাল চেপে ধরেছে। হয়ত মাথা ধরেছে তার। কুসুম ধীর পায়ে উচ্ছ্বাসের পাশে এসে দাঁড়াল। একটু ঝুঁকে উচ্ছ্বাস কি করছে দেখার চেষ্টা করল। তারপর জিজ্ঞেস করল,
‘ কি করছেন? ‘
উচ্ছ্বাস বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে জবাব দিল, ‘ একটা নতুন কেইস সামনে এসেছে। রোগটার ড্রাগ, মেকানিজম দেখছি। ‘
কুসুম হাতে থাকা কফির কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ আপনার কফি।’
উচ্ছ্বাস মাথা তুলে তাকালো। কফির কাপ হাতে নিয়ে চমৎকার হেসে বলল, ‘ সত্যি, এই সময়ে এককাপ কফির খুব দরকার ছিল। থ্যাংক ইউ, কুসুম। ‘
কুসুম হালকা হাসলো। উচ্ছ্বাস কফির কাপে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। তারপর কুসুমের দিকে চেয়ে বলল,
‘ কুসুম, তুমি কি জানো যে তুমি চমৎকার কফি বানাও? ‘
কুসুম হেসে উঠে বলল, ‘ জানতাম না। এখন জেনে গেছি। ‘
কুসুম আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। ভেজা চুলে এতক্ষণ আঁচল তোলা ছিল বিধায় আঁচলটা নামিয়ে ফ্যান ছেড়ে দেয়। শুকানোর জন্যে চুলের খোঁপা খুলে দেয়। উচ্ছ্বাস কফি খেতে খেতে সেদিকে চেয়ে ভ্রু কুচকে বলে,
‘ ভেজা চুল খোঁপা করে রেখেছিলে নাকি? ‘
কুসুম বাতাস খেতে খেতে বলল, ‘ হ্যাঁ। সকাল সকাল ভেজা চুল ছেড়ে বাইরে যেতাম নাকি? ‘
উচ্ছ্বাস কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল,’ শুনো কুসুম, কখনোই ভেজা চুল বেঁধে রেখো না। চুল পড়ে যাবে, তাছাড়া মাথায় উকুন ধরতে পারে। তোমার চুল খুব সুন্দর। চুলের যত্ন নাও। বুঝেছ? ‘
উচ্ছ্বাসের কথা শুনে কুসুম মাথা দুলাল। তারপর বলল,
‘ সকাল সকাল ভেজা চুলে বাইরে গেলে সবাই উলটাপালটা ভাববে। আমার লজ্জা লাগবে দেখে বেধে রেখেছিলাম। নাহলে আমি বাঁধি না সচরাচর। ‘
কুসুমের কথা শুনে উচ্ছ্বাসের একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হল, বিয়ের পর বৌ ভেজা চুলে বের হওয়া খুবই স্বাভাবিক কুসুম। সবাই জানে, নতুন বিয়ে হওয়া স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কি ঘটতে পারে। কার এত মাথা ব্যথা থাকবে যে, বউ ভেজা চুলে বেরিয়েছে নাকি শুকনো চুলে? কিন্তু উচ্ছ্বাস জিজ্ঞেস করল না। থাক না, শুধুশুধু কুসুমকে লজ্জা দেবার কি দরকার?
উচ্ছ্বাস বই পড়ে রিপোর্ট লিখে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিল। বিছানা থেকে উঠে বই শেলফে রেখে টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে শার্ট প্যান্ট গায়ে দিতে লাগলো। উচ্ছ্বাসকে রেডি হতে দেখে কুসুম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ কই যাচ্ছেন? ‘
উচ্ছ্বাস শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল, ‘ ওয়ার্ডে একটা প্যাশেন্ট এসেছে, ক্রিটিক্যাল। স্যার বলেছে যেতে। পরে প্র্যাকটিস করতে কাজে লাগবে। ‘
কুসুমের মন খারাপ হয়। এইতো দুপুরে সবে এলো বাড়িতে। এক্ষুনি আবার যেতে হবে? বিয়ের পরদিনই যদি বরকে সারাদিন পাশে না পায়, সারাজীবন কি করে পাশে পাবে? উচ্ছ্বাস কি সারাজীবন এভাবেই ডাক্তারি করতে, শিখতে ব্যস্ত থাকবে? কুসুমকে কি সময় দেবার সুযোগ হবে না তার। কুসুম মুখ লটকাল। বিড়বিড় করে কিছু কথা বলে চুল আর শুকাল না। মাথায় আঁচল তুলে চলে যেতে চাইল। উচ্ছ্বাস বোধহয় বুঝতে পেরেছে কুসুমের মন খারাপের বিষয়টা। তাই কুসুম চলে যাবার জন্যে পা বাড়াতেই উচ্ছ্বাস পেছন থেকে কুসুমের হাত খপ করে ধরে বলল, ‘ অ্যাই, কই যাচ্ছ? ‘
কুসুম তাকাল না। মৃদু স্বরে বলল, ‘ নিচে। ‘
উচ্ছ্বাস কুসুমের হাত টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। কুসুম তখনো মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। লম্বায় উচ্ছ্বাসের বুক বরাবর কুসুম। লম্বায় মেয়েটা কাধের সমানও না, অথচ অভিমান, রাগ, দুঃখ এসব যেন আকাশছোঁয়া। কী হবে এই মেয়েকে নিয়ে?
উচ্ছ্বাস কুসুমের গালে হাত রাখলো। নরম কণ্ঠে বলল, ‘ রাগ করেছ নাকি? আমি আসব আর যাব। এই ধরো, এক ঘন্টা! তারপরই চলে আসবো। হুঁ? মন খারাপ করো না। ‘
কুসুম মাথা নেড়ে বলল, ‘ সাবধানে যাবেন আর দ্রুত আসবেন। ‘
উচ্ছ্বাস হেসে বলল, ‘ ঠিকাছে। এবার যাই? ‘
কুসুম সম্মতি দিল। উচ্ছ্বাস কুসুমকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়াতেই কুসুম ব্যথাতুর চিৎকার দিয়ে উঠলো। উচ্ছ্বাস চমকে উঠে পেছনে ফিরলো। কুসুম কানে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখে জল টলমল করছে। উচ্ছ্বাস নিজের শার্টের হাতার দিকে তাকায়। শার্টের হাতের বোতাম ছিঁড়ে মাটিতে পরে আছে। কুসুমের কানের দুল খুলে সেটাও বোতামের সঙ্গে নিচে পরে। উচ্ছ্বাস আঁতকে উঠল। কুসুমের দিকে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে কানে হাত রেখে বলল,
‘ সরি, সরি। অ্যাই, ব্যথা পেয়েছ? হায় আল্লাহ! লাল হয়ে গেছে কানের লতি। দেখি, দেখতে দাও আমাকে। ‘
কুসুম হাত সরালো কান থেকে। চোখের থেকে পানি বেরিয়ে গেছে তার। কান গরম হয়ে ভনভন করছে। জ্বালাতন করছে কানের লতি। উচ্ছ্বাস কানের মধ্যে ফু দিল। পানিপূর্ণ টাওয়াল দিয়ে কান ভেজাল। জ্বালাতন কমে এলে, কুসুম কিছুটা শান্ত হয়েছে। উচ্ছ্বাস ভীষন খারাপ লাগা নিয়ে বলল, ‘ সরি কুসুম। তাড়ার মধ্যে ছিলাম। খেয়াল করি নি। এখনও কি ব্যথা করছে? ‘
কুসুম উত্তর দিল, ‘ না, কমেছে আগের থেকে। ‘
উচ্ছ্বাস শান্ত হয়েছে এ কথা শুনে। কুসুমের কানের দুল মাটি থেকে তুলে বলল, ‘ দুলটা আমি যেহেতু খুলে ফেলেছি, তাই আমিই আবার পরিয়ে দিয়ে শোধবোধ করে দেই? ‘
কুসুম মৃদু হেসে লাজুক কণ্ঠে বলল, ‘ হু। ‘
উচ্ছ্বাস হেসে এগিয়ে এলো। খুব যত্ন নিয়ে কুসুমের কানে দুল পরিয়ে দিতে লাগলো। উচ্ছ্বাসের মুখ ভীষন কাছাকাছি কুসুমের। কুসুম আজকে খুব কাছ থেকে উচ্ছ্বাসকে খেয়াল করছে। উচ্ছ্বাস পুরু ঠোঁট, খাড়া নাক, আর কানের পেছনে থাকা একটা ছোট্ট তিল। তিলটা দেখেই কুসুম কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গেল। কুসুমের চোখে কী সুন্দর ঝলমল করছে তিলটা। কুসুমের ইচ্ছে হয়, ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে ওই তিলে। পরপরই লজ্জায় নিজেকে আটকায়।
‘ ও আল্লাহ গো। আমি কিছু দেখি নাই গো। আমারে মাফ কইরো গো। তওবা তওবা। ‘
আচমকা ফুলির চিৎকারের শব্দ শুনে কুসুম কেপে উঠে। উচ্ছ্বাসও ঘাড় উচু করে সামনে তাকায়। ফুলির মুখে হাত চেপে তওবা করতে করতে দরজার সামনে থেকে সরেছে। কুসুম হতভম্ব হয়ে যায়। কী দেখেছে ও, যার জন্যে এমন অদ্ভুত স্বরে চিৎকার করল? উচ্ছ্বাস কিছু একটা ভেবে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল,
‘ কুসুম, আজকে তুমি শেষ। ফুলি তোমার লজ্জাকে গুলি করে মেরে দেবে সবার সামনে। ‘
কুসুম বোকা বোকা কণ্ঠে উচ্ছ্বাসকে জিজ্ঞেস করল, ‘ কিন্তু কেন? আমরা তো কিছুই করছিলাম না। ‘
উচ্ছ্বাস হেসে বলল, ‘ আমরা কিছু করিনি এটা আমরা জানি। কিন্তু ফুলি ভেবেছে,আমরা শুধু কিছু নয়, অনেক কিছু করেছি। আহারে! কই লুকাবে তুমি আজকে? ‘
কুসুম বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, ‘ অনেক কিছু বলতে? ‘
উচ্ছ্বাস কিছুটা ঝুঁকে এলো কুসুমের দিকে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘ লাইক লিপ-কিস! ‘
#চলবে