ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-৪+৫

0
308

#ভালবাসা_বাকি_আছে -৪
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা
(কপি করা নিষেধ)
তানিয়া আর তার বন্ধুদের দৌড়ঝাঁপে এক সপ্তাহে মাথায়, বেশ সুন্দর ছিমছাম একটা এক রুমের ছোট্ট একটা এপার্টমেন্ট পেয়ে গেছে বুশরা। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে তানিয়াপু না থাকলে কি হতো ভেবে পায়না বুশরা। নতুন দেশ, নতুন ইউনিভার্সিটি, নতুন বাসা, নতুন জীবনযাত্রা সবকিছু সামলে নিতে নিতেই কেটে গেলো এক মাস।

অভ্যস্ততা অবশ্য এখনো যে খুব এসেছে তা না। ঘুমের ঘোরে যে স্বপ্ন দেখে তা এখনো খাঁটি বাংলাদেশী। স্বাধীনপুর গ্রাম, সেই ছোট্ট হসপিটাল, শেখ বাড়ি, শেখ বাড়ির মানুষজন, একজন বিশেষ মানুষ আর তাদের দুজনের ছোট্ট নীড়, ধলতা নদীর পাড়ে কাটানো বিকেলের টুকরো স্মৃতি ঘুরেফিরে জীবন্ত হয় রাতের কোন না কোন প্রহরে। আর তারপর চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করে একলা ঘরে।

আজকাল খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে বুশরার। কারনটা অবশ্য সহজেই অনুমেয়। বুশরার ভোর মানে রায়হানের সকাল। দিনের এই সময়টাতে বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকে রায়হান। বের হওয়ার আগে ফোন করে বুশরাকে। ফোনে না পেলে কিছু বলে না যদিও, তবে অভিমানটা টের পাওয়া যায়। আর বুশরা নিজেও অপেক্ষায় থাকে এই ফোনটার।

প্রতিটা নতুন ভোর বুশরার কাছে তাই খুব প্রিয়। ফজরের নামাজ পড়ে প্রিয় মানুষটার সাথে কথা বলতে বলতে বাসার পাশের পার্কে চলে যায়। কোনদিন কথা দীর্ঘ হয়, কোন কোনদিন আবার রায়হানের তাড়া থাকে। সেই দিনগুলোতে অভিমানী হয়ে ওঠে বুশরার মন। আজ তেমনই এক দিন।

টুকটাক কথাবার্তার মাঝেই রায়হান বলল, “একটা খুব জরুরী ফোন এসেছে, আমি একমিনিট পরে কলব্যাক করি তোমায়?”

বুশরা তখনো বাসার সামনের লনটাই পার হতে পারেনি। এই এক মিনিট যে দশ মিনিটে গড়াবে তা বুশরা খুব ভালই জানে। কারন অতীব জরুরী না হলে এসময়টাতে অন্য কারো ফোন ধরে না মানুষটা। আর সেরকম জরুরী কথা কখনোই এক মিনিটে শেষ হয়না।

মুখে “আচ্ছা” বললেও মনে মনে বুশরা বলল “দুনিয়ার সব জরুরী ফোন এই সকাল বেলাই আসা লাগে। ধুরররর…”

অভিমানী মন নিয়ে পার্কের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল। বিভিন্ন বয়সের মানুষজন আসে সেখানে। কেউ হাঁটাহাঁটি করে, কেউ জগিং করে, কেউবা আবার চুপচাপ বসে বসে প্রকৃতি দেখে।

আনমনে বসে ফিরতি ফোনের অপেক্ষা করে বুশরা। এক মিনিট গিয়ে দশ মিনিটে গড়াবে এটা বুশরার জানা, তাই দশ মিনিট ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করলো ও। কিন্তু পাক্কা ত্রিশ মিনিট পরেও যখন ফোন আসলোনা তখন অভিমান গিয়ে গড়ালো অসন্তোষে। নিজেই ফোন করবে নাকি করবেনা সেই দোলাচলে ডায়াল করেই ফেললো নম্বরটা। কিন্তু ওদিক থেকে কোন সাড়া নেই। ছোট্ট একটা টেক্সট করলো, “এভাবে অপেক্ষা করানোর কি মানে মিঃ শেখ?”

অনেক্ক্ষণ অপেক্ষার পরে টেক্সটেরও যখন কোন রিপ্লাই আসলো না অভিমানে, রাগে, চিন্তায় চোখ ফেটে অবাধ্য জলরাশিতে ভেসে গেলো দুইগাল। চোখদুটো আজকাল এত বেয়াড়া হয়েছে! কাঁদার মত কিছুই হয়নি কিন্তু, নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হয় বুশরা।

কিছুক্ষন চিন্তা করে থাকতে না পেরে ফোন করলো শিউলি বেগমকে। কুশল বিনিময় শেষে অন্যদিনের মত দীর্ঘ আলাপে না গিয়ে বরং পাড়লো আসল কথা।

“মা তোমার ছেলে কি বাড়িতে?”

সকাল সকাল বুশরার এমন প্রশ্নে চিন্তিত ভঙ্গিতে শিউলি বেগম বললেন, “কেন রে? কোন সমস্যা?”

অযথাই মাকে টেনশনে ফেলে দিচ্ছে ভেবে নিজেকে সামলে বুশরা বলল, “না না মা, কোন সমস্যা না। ফোনে পাচ্ছিনা তো তাই।“

তারপর লজ্জার মাথা খেয়ে বললো, ”একটু কলব্যাক করতে বলো তো।“

শিউলি বেগম জানালেন রায়হান বাড়িতেই ছিল তবে একটু আগে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেছে তাড়াহুড়া করে। নাশতাও করেনি।

কিছুক্ষণ হু হা করে ফোন রেখে দিল বুশরা। অভিমানের বেলুন ফুস করে চুপসে গিয়ে সেখানে ভর করেছে রাজ্যের চিন্তা। কি হলো আবার? সকালের সুন্দর প্রকৃতি আর সুন্দর লাগছে না ওর কাছে। আরো কিছুক্ষণ বসে ফোনটা নাড়াচাড়া করলো বুশরা। তারপর বাসায় ফিরে গেল।

এর মধ্যে রায়হানের আর কোন ফোন আসলো না। বুশরা নিজেও আর ফোন করলো না বাইকে আছে ভেবে। বাসায় গিয়ে চিন্তায় কোন কাজ ঠিকমত করতে পারলো না। নাশতা না করেই বেরিয়ে গেল ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেকটা দেরি। বুশরা গিয়ে বসলো লাইব্রেরিতে। জরুরী কিছু নোট করা দরকার। সময় করে উঠতে পারছে না কয়েকদিন ধরে। এসাইনমেন্ট সাবমিশান ডেডলাইন দুইদিন পরেই। আজ যখন তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে তখন সেই কাজটাই করে ফেলতে চাইলো ও।

অনেকগুলো ঢাউস বই নিয়ে এসে বসলো একপাশের একটা ফাঁকা টেবিলে। খুব চেষ্টা করলো মনযোগ দিতে। মেডিক্যালের খটরমটর টার্মস এই মুহুর্তে কিছুই মাথায় ঢুকছে না বুশরার, মন পড়ে আছে হাজার মাইল দূরে। আর তারই সূত্র ধরে কিছুক্ষণ পরপর ফোন চেক করছে ও।

আচমকা পাশের চেয়ার থেকে নিচু কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠলো, “লাইব্রেরীতে কিন্তু ফোন ব্যাবহার সীমিত করার কথা মিস।“

চমকে ওঠে বুশরা। মানুষটার কথা শুনে না। বরং কথাটা খাঁটি বাংলা ভাষায় হওয়ায়।

অবিশ্বাসের সুরে বুশরা জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি বাঙালি?”

“জি আলবৎ। সন্দেহ আছে?”

“তা আপনি কি করে বুঝলেন যে আমিও বাঙালি?”

“এখানে এত কথা বললে কিন্তু নির্ঘাত ওয়ার্নিং খেতে হবে ম্যাম। তার চেয়ে বরং ক্যাফেটেরিয়াতে চলুন। খেতে খেতে কথা হবে।“

বুশরার মন বেজায় বিক্ষিপ্ত। লাইব্রেরিতে বসে আসলে কাজের কাজ কিছু হচ্ছেনা। আর পেটের মধ্যে ক্ষিধেরাও জানান দিচ্ছে বেশ। পাশের মানুষটা সদ্যপরিচিত হলেও দেশী। আর ক্যাফেটেরিয়াই তো, যাওয়াই যায়। তাই একটু যা দ্বিধা আছে সেটা ঝেড়ে ফেলে বইগুলো যথাস্থানে রেখে বেরিয়ে আসলো।

ছেলেটার নাম আরিশ। কিছুক্ষণ কথা বলেই বুশরা বুঝলো ছেলেটা খুবই বাচাল ধরনের। আসলে কথা যা বললো তা সব আরিশই বললো। ও শুধু হু হা করলো। আর কিছুক্ষণ পরপর ফোন চেক করা তো আছেই। এক পর্যায়ে আরিশ কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কোন বিশেষ ফোনের অপেক্ষা?”

“হুম।“

এই উত্তরে আরিশ মনেহয় কিছুটা দমে গেল। খাওয়ায় মনযোগ দিলো হঠাতই।

কিছুক্ষণ নিরবতার পরে বুশরা প্রশ্ন করলো, “আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি কিন্তু।“

“কোন প্রশ্নটা? আপনি তো গুনে গুনে কথা বলেন। প্রশ্ন করলেন কখন?”

“লাইব্রেরি থেকে বের হওয়ার আগে।“

খানিক্ষণ চিন্তা করে আরিশ বললো, ”ওওওও বাঙালি কি করে বুঝলাম ওইটা?”

“হুম।“

“আপনার নোটবুক দিন, উত্তর দিচ্ছি।“

বুশরা অবাক হয়ে ব্যাগ থেকে নোটবুক বের করে দিল। কলমটা নোটবুকের মধ্যেই রাখা ছিল। আরিশ কলমটা ধরে নোটবুক মেলে ধরলো। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে পুরো পাতা ভরে বাংলায় লেখা “ভাল্লাগেনা।“

এই মন খারাপের মাঝেও হেসে ফেললো বুশরা। ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। কাঙ্খিত নাম্বারটা স্ক্রিনে দেখে ব্যাস্ত স্বরে বললো,

“এক্সকিউজ মি প্লিজ।“

ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে যেতে যেতে ব্যাকুল কন্ঠে বলে উঠলো, “হ্যালো।“

চলবে…

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ৫
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা
(কপি করা নিষেধ)

সকালে বুশরার সাথে কথা বলার পর থেকে চিন্তিত শিউলি বেগম। ছেলেটা না খেয়ে বেরিয়ে গেছে দেখে একটু রাগ হয়েছিলেন। কিন্তু বুশরার সাথে কথা বলার পরে রাগটা নেই, বরং চিন্তা হচ্ছে খুব। এমন তো করে না ছেলেটা। উনি ফোন করেছিলেন কয়েকবার। সাড়া পানিনি তাতে। রায়হানের পার্টির দুএকটা ছেলেকে ফোন করেছিলেন, বেশিরভাগ সময় রায়হানের সাথেই থাকে ওরা। কিন্তু সেই ছেলেগুলোও ফোন ধরছে না। চিন্তার উত্তোরোত্তর বৃদ্ধিতে প্রেশার হাই হয়ে গেছে বোধহয়। সমানে ঘামছেন তিনি। রুস্তম শেখ বারবার বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে কিছু হয়নি, হয়ত জরুরি কোন মিটিং চলছে তাই ফোন ধরতে পারছে না। তাতে মায়ের মন কতটুকু শান্ত হয়বতা বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্ত্রীকে বারবার ঘর বাহির করতে দেখে একসময় তিনি বললেন, “এমন করো না তো। শরীর খারাপ করবে তোমার।”

শিউলি বেগম ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন, “ছেলেটার কোন খোঁজ নাই আর তুমি আছো আমার শরীরের টেনশন নিয়ে।”

ভেতরে ভেতরে ভীষণ টেনশন হলেও মুখে বললেন, “আচ্ছা আমি কোন টেনশন নিয়ে নাই, তুমিও টেনশন করো না। তোমার ছেলে যথেষ্ট বড় হইছে, কি দায়িত্বশীলভাবে রাজনীতি করতেছে কয় বছর হলো। এখনো যদি একটু ফোনে না পাইলেই টেনশন করো তাহলে হবে? টিভিটা ছাড়ো তো। একটু খবর দেখি।”

“উনার ছেলের খবর নাই, উনি আছেন দেশ বিদেশের খবর নিয়ে। যত্তসব।”

টিভিটা অন করে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময় টিভি থেকে কানে আসলো একটা অনাকাঙ্ক্ষিত খবর। ঘুরে এসে রুস্তম শেখের পাশে বসলেন তিনি।

“এজন্যই তাহলে আমার ছেলেটাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না!!”

“হুম।”, গম্ভীরমুখে স্ত্রীর কথায় সায় জানালেন বয়স্ক মানুষটা।

সেই কোন সকালে রায়হান বলেছিল এম মিনিট পরে ফোন করছি। তারপর কেটে গেছে কয়েক ঘন্টা। অভিমান গড়িয়ে অস্থিরতায় রূপ নিয়েছে, তবু মানুষটার খোঁজ নেই। তাইতো কাংখিত ফোনকলটা পাওয়া মাত্র স্থান কাল পাত্র ভুলে ব্যাকুলতা উপচে পড়ে বুশরার কন্ঠে।

“হ্যালো….. ”

“সরি তোমাকে অনেক অপেক্ষা করালাম। কলব্যাক করতে একদম ভুলে গেছিলাম। প্লিজ রাগ করো না।”

যে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে এতক্ষণ বুশরা গেছে তাতে অন্য সময় হলে হয়ত ও সত্যিই রাগ দেখাতো। কিন্তু এত দুঃশ্চিতার পর রায়হানের কন্ঠ শুনে যে শীতলতা অনুভব করলো তাতে রাগের আগুন নিভে গেছে নিমেষেই। তবে রায়হানের কন্ঠে কিছু একটা আছে যাতে বুশরার মনে হলো কোন একটা সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া ও কখনো এমন বেখেয়ালি আচরণ করে না।

“তুমি ঠিক আছো? কোন সমস্যা হয়নি তো?”, অস্থিরভাবে প্রশ্ন করলো বুশরা।

একটু সময় নিয়ে রায়হান বললো, “আমি ঠিক আছি। চিন্তা করো না। তোমার ক্লাস নাই?”

“হুম ক্লাস আছে একটু পর। তোমাকে খুব ক্লান্ত শোনাচ্ছে।”

“হায়দার চাচা সকালে হার্ট এটাক করেছে। আইসিইউ তে এখন। খুব ক্রিটিকাল কন্ডিশন।”

“আলী হায়দার চাচা? মানে এমপি সাহেব?”

“হ্যাঁ, তোমাকে কতবার বলেছিলাম হায়দার চাচা কি নিঃস্বার্থভাবে সারা জীবন এলাকার মানুষের জন্য করে গেলেন। আজকে দেখো, মানুষটা অসহায়ভাবে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছে। কত ভালবাসতেন উনি আমাকে, কত সময় কতভাবে সাহায্য করেছেন, অথচ আজ কিচ্ছু করতে পারছি না উনার জন্য। সকালে খবরটা শোনার পর তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছি, তোমাকে যে অপেক্ষায় রেখেছি মনেই ছিল না।”

এতক্ষণে রায়হানের মানষিক অবস্থার কারণ টের পেলো। আলী হায়দার মানুষটার প্রশংসা বুশরা অনেকের কাছেই শুনেছে। কিন্তু রায়হানের কাছে এই মানুষটা দেবতুল্য। রাজনীতি জগতে আরো কয়েকজন আলী হায়দার থাকলে দেশটার চেহারা বদলে যেত বলে মনে করে রায়হান। আর ব্যাক্তিগতভাবেও বয়োবৃদ্ধ এই মানুষটাকে খুব পছন্দ করে রায়হান।

উনার একটাই ছেলে, পড়ালেখা শেষে বিদেশে সেটেল্ড, কয়েক বছর পরপর দেশে আসে, অল্প কয়েকদিনের জন্য। তা নিয়ে তার আক্ষেপের শেষ নেই। খুব চেয়েছিলেন ছেলে তার মত দেশ সেবায় নিয়োজিত হোক, তবে আর পাঁচটা বাবার মত জোর করতে চাননি। আর দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ এসব তো জোর করে আদায় করার জিনিস না। তাই হয়তোবা তার সাথে আদর্শিকভাবে মিল থাকা রায়হানকে সন্তানতুল্য ভালবাসা, দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছেন বিগত বছরগুলোতে। সেই মানুষটা আজ হঠাত গুরুতর অসুস্থ হওয়াটা রায়হানের জন্য বিশাল বড় ধাক্কা তা বুঝতে অসুবিধা হয়না বুশরার। তাই শব্দভান্ডার হাতড়ে শান্তনার ভাষা খুঁজে পায়না ও।

কিছু মুহুর্ত নিরবতার পরে বুশরা জিজ্ঞাসা করে, “তুমি কি হাসপাতালে?”

“হ্যাঁ, উনাকে নিয়ে ছোটাছুটি করার মত কেউ তো নাই।”

“উনার ছেলে কি রওনা দিয়েছে?”

“ঘন্টাখানেক আগে প্লেনে উঠেছে। কাল সকালে ল্যান্ড করবে বোধহয়।”

একটু থেমে রায়হান বললো, “আমার খুব খারাপ লাগছে বুশরা। মানুষটা মারা যাওয়ার আগে বোধহয় ছেলের মুখটা দেখতে পাবে না আর।”

“এত নেগেটিভ ভাবছো কেন? উনি হয়ত সুস্থও হয়ে যেতে পারেন তাই না? দুয়া করো।”

“ইনশাআল্লাহ। তুমি ক্লাসে যাও। পরে কথা হবে। রাখছি কেমন?”

“আল্লাহ হাফেজ।”

ফোনে কথা বলতে বলতে এলোমেলোভাবে হাটছিল বুশরা। ফোন রাখার পরে খেয়াল করলো ক্লাস যে বিল্ডিংয়ে হবে তার থেকে অনেকটা উল্টো পথে চলে গেছে ও। অগত্যা হাটা শুরু করলো আবার। রায়হানের সাথে কথা বলে মন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ওর। এসময় মানুষটার পাশে থাকতে পারলে খুব ভালো হতো। আবার চিন্তা করে পরিবারের কারো কিছু হলে আলী হায়দার সাহেবের ছেলের মতই অবস্থা হবে ওর। কুচিন্তায় মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয় বুশরার। নিজেকে বুঝায়, আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। দুয়া করলো সকলের সুস্থতার।

বুশরা ক্লাসের সামনে এসে বুঝলো টিচার চলে এসেছে ইতোমধ্যে। চুপচাপ পেছনের সারির একটা ফাঁকা ডেস্কে গিয়ে বসলো ও। খুব ইম্পর্ট্যান্ট আজকের ক্লাসটা, তাই খুব চেষ্টা করলো মনোযোগ দেওয়ার। তাতে কতটুকু সফল হলো সেটা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ।

ক্লাশ শেষে উঠে যাবে এমন সময় পাশের সিটের স্টুডেন্ট বলে উঠলো, “হোয়াট এ কোয়েন্সিডেন্স! আমরা তার মানে ক্লাসমেট?”

স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে আরিশকে আবার দেখে বিরক্ত হলো বুশরা। তবে সেটা প্রকাশ না করে মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো, “স্ট্রেঞ্জ! ফলো করছেন নাকি?”

ভ্রু নাচিয়ে আরিশ বললো, “কে যে কাকে ফলো করছে বলা মুশকিল। আমি কিন্তু ক্লাসে লেইট করিনি। স্যার আসার আগেই মনযোগী স্টুন্টের মত ক্লাসে এসে বসেছি।”

ইংগিতটা ধরতে পেরে লজ্জিত হলো বুশরা। ইতস্তত করে বললো, “এক্সট্রেমলি সরি।”

আরিশ ছেলেটা সিরিয়াস টাইপের না। তাই এত অল্পেতে সরি হজম করা ওর ধাতে নেই।

“আহা সরি কেন মিস?”

“ক্যাফেটেরিয়ায় ওভাবে হুট করে ফেলে আসার জন্য, আর এখন আবার অযথা আপনাকে একিউজ করার জন্য।”

একটু থেমে ছেলেটার চোখে চোখ রেখে বুশরা বললো, “ও হ্যাঁ, আমি মিস না। মিসেস। মিসেস বুশরা শেখ। নাইস টু মিট ইউ, আরিশ।”

চলবে…

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি