ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-৮+৯

0
303

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ৮
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা
(কপি করা নিষেধ)
রাজনীতি নিয়ে রায়হানের নিজস্ব কিছু চিন্তাধারা আছে। এই মুহুর্তে সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি না ও। ভেবেছিল নিজের অবস্থানকে আরো শক্ত করে কয়েক বছর পরে এ পথে আগাবে। কিন্তু অনেক চিন্তার পরে ভেবে দেখললো হায়দার চাচার অবর্তমানে অন্য কেউ এই যায়গাটায় আসলে হয়তোবা এলাকার পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন আসবে।

আবার চেয়ারম্যান পদে অন্য কেউ আসলে ইউনিয়নের উন্নয়নের কি হবে সেটা নিয়েও সন্দিহান ও। ভেবে কূল কিনারা না পেয়ে বাবার সাথে আলোচনা করে বিষয়টা নিয়ে। অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে রুস্তম শেখ যে সমাধান দিলেন তা অনেকটাই নির্ভরযোগ্য মনে হয় রায়হানের কাছে। তাঁর মতে রায়হানের উচিত এমপি নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া। আর চেয়ারম্যান পদে রায়হানের চাচাতো ভাই সোহেল শেখকে চিন্তা করতে বলে। বছর দুয়েক ধরে ভাইয়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এলাকার জন্য কাজ করেছে, এবার তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়াই যায়।

ছেলেটা সৎ, যোগ্য, একইসাথে বোল্ড আর অমায়িক। অভিজ্ঞতার যে অভাব সেটা রায়হান হাতে ধরে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারবে। বাবার কথায় রায়হানের মনের অস্থিরতা কেটে যায় অনেকটাই। এইজন্যই তো বাবাকে তার মনে হয় সব সমস্যার মুশকিল আসান। নিজের সিদ্ধান্তের কথা তালুকদার সাহেবকে জানালে তাঁর বুক থেকেও একটা ভার নেমে যায় সহসাই। প্রাণখুলে দোয়া করলেন তিনি তরুণ ছেলেটার জন্য।

এদিকে রায়হানও সোহেলকে ডেকে বুঝিয়ে বললো নমিনেশনের জন্য এপ্লাই করতে। সহসা ভাইয়ের এরকম নির্দেশনায় বিচলিত হয়ে পড়ে সোহেল। বার বার বলতে থাকে ও কিছুতেই রায়হানের যায়গা নিতে পারবে না। উত্তরে রায়হান শান্ত স্বরে বলে, “আমি আছি তো। সব সময় পাশে পাবি আমাকে।“

“আর তোমার কি হবে ভাই?”

“কয়েকদিনের মধ্যেই জানতে পারবি। নমিনেশন নেওয়ার জন্য সময় বাকি নাই একদম। ওইদিকে মনযোগ দে আপাতত। ঠিক আছে?”

মাথা নেড়ে সায় জানায় সোহেল।
আজ সবকিছুর চক্করে পড়ে বুশরার সাথে কথা হয়নি একদমই। মেয়েটা ফোন করেছিল দুইবার। সাড়া না পেয়ে ব্যস্ত আছে ভেবে আর বিরক্ত করেনি। শুধু সোশাল সাইটে ছোট্ট করে টেক্সট করেছে, “খুব ব্যাস্ত?”

এইটুকুতেই হাসি ফুটে ওঠে রায়হানের চেহারায়। মেয়েটা কত বুঝদার। রায়হানের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে ভেবে ফোনে টেক্সট করেনি। অথচ খুব ভালো করেই জানে রাতে বাসায় ফেরার আগে সোশাল সাইটে একদমই ঢু মারে না রায়হান। বিরক্ত না করে অপেক্ষা করাটাই বেছে নিয়েছে। আর দেরি না করে উত্তর দিল ও।

“ছিলাম, এখন ফ্রি।“

ম্যাসেজ সিন হলো না। ঘড়ি দেখে বুঝলো এখন বুশরার ওখানে মধ্যরাত, ঘুমিয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কেন জানি কথা বলতে ইচ্ছা করছে খুব। অগত্যা, ড্রয়ার টেনে বের করে নিয়ে বসলো বুশরার ডায়েরি। র্যা ন্ডম একটা পেইজ খুলে পড়তে শুরু করলো। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

“কথা মেয়েটা খুব বোকা। এমন মানুষের হাত ছাড়ে কেউ? অবশ্য ভালো হয়েছে, তাহলে আরেকটা রায়হান শেখ পেতাম কোথায়? উফ, আমি কি আত্মকেন্ত্রিক হয়ে গেছি। মানুষটা কত কষ্ট পায় কথাকে মনে করে। আর আমি কিনা! না বুশরা, কথার কথা ভাবলে হবে না। নিজের মানুষটাকে নিজের করে নাও। তাঁর দুঃখগুলো হাওয়াই মিঠাই হয়ে যাক তোমার পরশে। নাহলে কিসের সহধর্মিনী তুমি?”

“পাগল একটা”, আনমনে বললো রায়হান, “পরবাসী কন্যা তুমি কি জানো আমার মনটা আজকাল শুধু বুশরা বুশরা করে?”

পরক্ষনে উত্তর পাবে না জেনেও আরেকটা ম্যাসেজ পাঠালো, “ঘুমিয়ে পড়েছো, বউ?”

ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো এক ধ্যানে, যতক্ষণ না স্ক্রিণ লাইট নিভে যায়। তারপর আবার ডায়েরীতে মনযোগ দিল। তবে ডায়েরির পাতা উলটানোর আগেই টুং করে বেজে উঠলো ফোনটা।

“আজ এত রোমান্টিসিজম?”

“কই? বউকে বউ ডাকা কি নিষেধ?”

“না তো। একশো বার ডাকুন।“

“সিওর।“

“বউ”

“বউ”

“বউ”

“বউ”

অনবরত বউ বউ বউ লেখা টেক্সট পেতে পেতে ঘুম ছুটে যায় বুশরার। কি হলো মানুষটার, এই চিন্তায়।

“শরীর খারাপ চেয়ারম্যান সাহেব?”

“না তো।“

“তাহলে?”

“ঘুমাও নি? অনেক রাত তো ওখানে।“

“ঘুম আসছিলো না। সারাদিন একটুও কথা হয়নি। ভালো লাগছিলো না।“

“তাই?”

“হুম। আজ একটু ভিডিও কল দিই?“

“বুশরা প্লিজ না।“

এই একটা বিষয়ে রায়হানকে রাজি করানো যায়না একদমই। মন খারাপ হলেও জোর করলো না বুশরা। আর ওদিকে রায়হান মনে মনে বললো, “দেখলেই আরো দেখতে ইচ্ছা করবে পাগলী। ওই রিস্ক নেওয়া যাবেনা।“ বুশরা চুপ করে আছে দেখে রায়হান লিখলো, “ঘুমাও এখন। অনেক রাত হয়েছে।“

“ঘুম আসে না।“

“আচ্ছা তাহলে একটা নিউজ দিই। ভাবছিলাম শুনলে ঘুম আসবে না তোমার, কাল সকালে বলবো। তো ঘুম নাই যখন তো এখনই শেয়ার করি।“

“উউম, গুড নিউজ? নাকি ব্যাড?”

“কনফিউজড।“

“আচ্ছা বলো।“

“আমি সম্ভবত এবার সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন পাচ্ছি পার্টি থেকে।“

টেক্সটটা দেখে কয়েকবার চোখ কচলালো বুশরা। এমন মজা করার মানুষ রায়হান না সেটা ভালই জানে ও। উত্তেজনার আতিশয্যে সঙ্গে সঙ্গে ওপাশের মানুষটাকে ফোন করলো বুশরা। টেক্সটে পোষাচ্ছেনা আর যেন। ফোন রিসিভ হতেই প্রায় চিৎকার করে প্রশ্ন করলো,

“সত্যি বলছো?”

“হ্যাঁ।“

“হঠাত? কিভাবে কি হলো?”

একে একে সব খুলে বললো রায়হান। চুপচাপ শুনলো বুশরা।

তারপর বললো, “তা এখন থেকে আপনাকে কি বলে ডাকবো? এমপি সাহেব?”

রায়হান হেসে বললো, “গাছে কাঠাল, গোফে তেল।“

এরপর আলতো স্বরে বললো, “চেঞ্জ যখন করবা তখন চুজ সামথিং পার্সোনাল।“

চলবে…

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ৯
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা
(কপি করা নিষেধ)
সাদা পাঞ্জাবী পায়জামাতে দীর্ঘদেহী, সুদর্শন চেহারার মানুষটাকে দেখাচ্ছে অনেকটা দেবদূতের মত। কনুই পর্যন্ত গোটানো পাঞ্জাবীর হাতা। হাতে শোভা পাচ্ছে টাইটানের মাঝারি সাইজের ডায়ালের চারকোল ব্ল্যাক কালারের ঘড়ি। এসি গাড়ির মধ্যেও কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম জানান দিচ্ছে অপ্রতিরোধ্য অস্থিরতা। মানুষটা সাধারণত হালকা রঙের পাঞ্জাবীর সাথে গ্যাবাডিং প্যান্ট পরে। কিন্তু আজ নিজেকে শুভ্রতায় মুড়িয়েছে প্রয়াত হায়দার সাহেবকে স্বরণ করে।

নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিন আজ। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে রায়হানের সদা সংগী শফিক। আজ কিছুতেই রায়হানকে ড্রাইভ করতে দেয়নি সে। ওরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছে আরো পনেরো মিনিট আগে। নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় নিলো রায়হান।

গাড়ি থেকে নামার আগে শফিক বললো, “ভাই, আরেকটু বসো, একটা ছবি তুলি।”

রায়হান বসলো, তবে ছবির জন্য পোজ দিতে না। বরং ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখলো একবার। আজ বুশরার সাথে কথা হয়নি। কাল থেকে মেয়েটার জ্বর। ঘুমাচ্ছে বোধহয়। গতকালের শেষ ম্যাসেজটা সিন হয়নি এখনো। জ্বরের ঘোরে কাল আবোল তাবোল বকছিল মেয়েটা। সজ্ঞানে এত রোমান্টিসিজম দেখানো মেয়েটার ধাতে নেই। অথচ কাল বুশরা ছিল উচ্ছল কিশোরীর মত। আর ঘুমে জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠ ছিল মাদকতাময়। মনে হতেই নিজের অজান্তে মুচকি হাসলো রায়হান।

শফিক জানতো রায়হানকে দিয়ে পোজ দেওয়ানো যাবে না। তাই র‍্যান্ডম কয়েকটা স্ন্যাপ নিচ্ছিলো। সৌভাগ্যবসত মুচকি হাসিটা আটকা পড়ে গেলো মোবাইলের স্ক্রিণে। সুযোগ বুঝে সেই হাসোজ্জল ছবি নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিল ভাবীর ইনবক্সে।

স্টেজে ওঠার আগ পর্যন্ত বেশ নার্ভাস ছিল রায়হান। এমন না যে নির্বাচনী প্রচারণা ব্যাপারটা নতুন ওর কাছে, কিন্তু সামনে উপবিষ্ট জনস্রোত তার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের একনিষ্ঠ অনুসারী। বড় আশা নিয়ে তারা এসেছে আজ। হয়ত হায়দার সাহেবের ছায়া খুঁজছে নবীন এই নেতার মাঝে। এই ব্যপারটাই রায়হানের চেহারায় চিন্তার রেখা এঁকে দিয়েছে সূক্ষ্মভাবে।

তবে বক্তব্য শুরুর পর সে উৎকন্ঠা, সেই সংকোচ, নার্ভাসনেস কোথায় উবে গেল কে জানে। মন্ত্রমুগ্ধের মত রায়হানের বক্তব্যে যেনো ডুবে গেল উপস্থিত সবাই। জনস্রোতে অনেকেই ছিল রায়হানকে আলী হায়দার সাহেবের শিষ্য বলে জানত। আবার অনেকেই এসেছিল, প্রিয় নেতার অবর্তমানে কে তার যায়গা নিতে চলেছে, আসলেই সেই মানুষটা কত যোগ্য এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে। কিন্তু সবাই চোখের সামনে দেখলো সেই চিরচেনা দেহসজ্জা, সেই চাহনি, সেই হাত নেড়ে কথা বলা, সেই রকম কণ্ঠের দৃপ্ততা আর এলাকার মানুষজনের জন্য সময়োপযোগী প্রতিশ্রুতি। এ যেনো আলী হায়দার সাহেবেরই যুবক রূপ। বক্তব্য শেষে তুমুল করতালিতে ভেসে গেলো চারপাশ। তৃপ্ত মন নিয়ে স্টেজ ছাড়লো রায়হান।

আজ বুশরার ঘুম ভেঙেছে বেশ দেরিতে। শরীরে এখনো বেশ জ্বর। ভার্সিটিতে যাবে কি যাবে না সিদ্ধান্তহীনতার মাঝে ফোন হাতে নিলো অভ্যাসবশত। নেট অন করে ফ্রেশ হয়ে আসলো চটপট। সময় নেই বেশি। ভার্সিটিতে যেতে হলে নাশতা সারতে হবে শর্টকাটে। তাই এক বাটি দুধ গরম করে তার মধ্যে ছেড়ে দিল একমুঠো কর্নফ্লেক্স। এক চামচ কর্ণফ্লেক্স মুখে দিতেই টুং করে শব্দ হলো পাশে থাকা মোবাইল ফোনে। খেতে খেতেই নোটিফিকেশন থেকে ইনবক্সে চলে গেল কৌতুহলবশত। আর সাথে সাথে বিষম খেয়ে একাকার অবস্থা। এটাই কি তার চেয়ারম্যান সাহেব?

রায়হান যে হাসে না একদম তা না। কিন্তু আসার পর থেকে কোন ভাবেই ভিডিও কলে নিয়ে আসা যায়নি তাকে। পুরোনো ছবিগুলোই চক্ষুশীতলকারীর ভুমিকা পালন করছে বিগত দিনগুলোতে। সেখানে এই স্ক্রিণে বন্দি মুচকি হাসি যেন মেঘ না চাইতেই জল। আর কি পরেছে এই লোকটা? সাদা পাঞ্জাবী, গোটানো হাতা, মুচকি হাসি আর কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘামে কি যে সৌম্যসুন্দর দেখাচ্ছে মানুষটাকে। হৃদয়পোড়া গন্ধ বাহিরে থেকে পাওয়া গেলে বুশরার ছোট্ট স্টুডিও এপার্টমেন্টে আজ নির্ঘাত ফায়ার ব্রিগেডের আনাগোনা ঘটত।

নিজেকে সামলে নিতে কয়েক মুহুর্ত সময় লাগলো বুশরার। শফিকের পাঠানো ছবির বিপরীতে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে সোশাল মিডিয়ার ইনবক্স থেকে বের হয়ে গেলো। আরেকটা নোটিফিকেশন ইমেইলের। রায়হান পাঠিয়েছে। অনেক দিন পর ছোট্ট একটা ই-চিঠি। অসুস্থতা থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তবে অসুস্থতা তো খারাপ না, ভাবে বুশরা। তারপর, আরও দেরি হওয়া থেকে বাঁচতে ব্যাগটা কাধে নিয়ে চোখ বুলায় চিঠিতে।

বুশরা,
সকালে নাস্তা করে অতি অবশ্যই ওষুধ খেয়ে নিও। আর হ্যাঁ, বেশি খারাপ লাগলে আজ বরং বাসাতেই থেকো। আমি কাল খুব ব্যস্ত থাকবো। নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিন কাল। উইশ মি লাক, ডিয়ার। ফ্রি হলে টেক্সট করবো। নিজের যত্ন নিও।

ইতি,
রায়হান।

নিজে ডাক্তার হলেও ওষুধে ভীষণ এলার্জি বুশরার। এই চিঠি না পড়লে আজও ওষুধ খাওয়ার কথা মনে থাকতো না বুশরার। সদর দরজা থেকে ঘুরে এসে ওষুধ খায় বুশরা। এরপর একবার মনে করে কিছু ছেড়ে যাচ্ছে নি না। তারপর বেরিয়ে যায়।

ক্লাসে ঢুকেই দেখা হয়ে যায় আরিশের সাথে। শেষের সারির এক পাশের ডেস্কে বসেছে ছেলেটা। এই ছেলেটা সবার আগে এসেও সব সময় পেছনের সারিতে বসে। যেনো পেছনে বসার এক নিরব প্রতিযোগিতা ঘোষণা জারি হয়েছে। পাশে একটা ফাঁকা সিট রেখে বসলো বুশরা। সেটা দেখে গা পিত্তি জ্বলে গেল আরিশের। কি মনে করে এই মেয়ে নিজেকে? তবে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেল না, কিংবা বলা যায় সুযোগ পেলো না। ক্লাস শেষ হতেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল বুশরা।

জনসভা শেষ করে গাড়ির ব্যাকসিটে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো রাহয়ান। শফিককে বললো, “এসিটা একটু বাড়িয়ে দাওনা ভাই।”

তারপর আবার বললো, “আজ এত গরম। এতক্ষণ কথা বলে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। ঠান্ডা কিছু হবে?”

গাড়িতে পানি ছিল, তবে তা গরম হয়ে গেছে।

“ভাই পানি খাবেন না কোক, ফান্টা কিছু আনবো।”

“পানি। পিওর পানি খাবো, ঠান্ডা পানি, পুরো এক লিটার।”

“আচ্ছা ভাই।”

হন্তদন্ত করে বেরিয়ে গেল শফিক। সমাবেশের সময়টাতে ফোন গাড়িতেই রেখে গেছিল রায়হান। তাই এখন সুযোগ পেয়ে নোটিফিকেশন চেক করতে লাগলো আয়েশি ভংগিমার। প্রচুর মিসড কল, ম্যাসেজ, নোটিফিকেশন ঠেলে চোখে পড়লো সহধর্মিণীর নামটা। আহা মেয়েটার জ্বর না জানি কেমন এখন।

প্রিয়তমেষু,
আমি ভালো আছি। জ্বর নেই এখন। তাই আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করো না। আজ একটাই ক্লাস, খুব ইম্পর্ট্যান্ট। বেশিক্ষণ না। দুইটা পর্যন্ত হবে। আর হ্যাঁ, অল দ্য বেস্ট, মাই সানশাইন।

ইতি,
বুশরা।

ঘড়ি দেখে ক্যলকুলেশন করলো রায়হান। তারপর ডায়াল করলো বিদেশী নম্বরটা। বুশরা তখন করিডোর ধরে হাঁটছিল। ফোন আসায় একটা ফাঁকা যায়গা দেখে বসলো।

“হ্যালো। শরীর ঠিক আছে তো?”

“হ্যাঁ বাবা, একদম ঠিক আছে। কেমন গেল প্রচারণার প্রথম ধাপ?”

“আলহামদুলিল্লাহ! আমার এক্সপেকটেশান থেকে বেশ ভালো।”

“তাহলে সাংসদ হয়েই যাচ্ছো? আহা আমি এই সময়টা থাকতে পারলাম না তোমার কাছে।”

বু্শরার মন খারাপ দেখে রায়হান বললো, “আমিও তো তোমার অসুস্থতায় পাশে থাকতে পারছি না। আমার এখানে সবাই আছে। তোমার কাছে তো কেউ নাই।”

ইমোশনাল এই সময়টাতে দুয়েক হাত দূর থেকে আরিশ বেশ জোরেই বললো, “এই বুশরা। তোমার সাথে কথা আছে আমার।”

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, ছোট্ট এই দুই লাইন কি কিছুটা হলেও আলোড়ন সৃষ্টি করলো ফোনের ওপাশে থাকা হাজার হাজার মাইল দূরের মানুষটার কর্নকুহরে?

চলবে।

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি,