ভালোবাসার নতুন প্রণয়ন পর্ব-০২

0
785

গল্পের নামঃ- #ভালোবাসার_নতুন_প্রণয়ন

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:02

হূরের ভয় লাগছে, হঠাৎ করে ঘাড়ে গরম কিছু উষ্ণতা অনুভব করে, পিছনে ঘুরতে যাবে তখনই কারো বুকের সাথে ধাক্কা লেগে হূরের। ব্যক্তিটা সাথে সাথে হূরকে চেঁপে ধরে উল্টো করে। আর হূরের ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে গম্ভীর কন্ঠে বলে

” নীলআদ্রের সাথে এতো কিসের কথা?? ( নীলা মেম এর ভাই) হূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে

” কে আপনি!?? আমার পিছু কেন পরে আছেন!? ব্যক্তিটা হূরের ঘাড়ে হালকা করে চুমু দেয় কিন্তু উপরে হালকা কিছুর আবরণ, ব্যক্তিটা বলে

” হূরপাখি এটা কিন্তু আমার প্রশ্নের যবাব না। নীল আদ্র কি বলেছিল?? বলেই হূরের হাত আরো জুড়ে চেপে ধরে। ফলে হাতে থাকা কাচের চুড়িতে হূরের হাত কেটে যায়। হূর চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলে

” আহহহহহ আমার লাগছে। আর আমি যার সাথে ইচ্ছে হবে তার সাথে কথা বলবো আপনি কে?? নয়তো আমি চেঁচাতে বাধ্য হবো। ব্যক্তিটা শীতল কণ্ঠে বললো

” হুশশশশশ। একবার ভাবো তো তোমাকে আর আমাকে যদি কেউ এই ভাবে দেখতে পায় তাহলে কি হবে। ইউ নো না সবাই গুন্ঞ্জন রটিয়ে বেড়াবে তুমি আমার সাথে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়েছ। এখন বলো নীলআদ্র তোমাকে কি বলেছে?

হূরের হাত অনেক জ্বলছে। বেচারি বাসায় যাওয়ার আগে লাইব্রেরিতে এসেছিল বই কিনতে কিন্তু এখানে এসেই এমন বিপদ ঘটবে কে জানে? হূর যখন বই খুঁজতে খুঁজতে একদম শেষের দিকে এক কর্ণারে চলে আসে আর তখনই সে অনুভব করে তার পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে। হূর বলে

” শুধু বলেছিল যে কফি খাবে। আমি না করে দিয়েছি, প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন। হূরকে হেঁচকা টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুক সেলফের সাথে চেপে ধরে ব্যক্তিটা। গাড়ো নীল এক জোড়া চোখ মুখে কালো মাস্ক। গেটাপ সম্পূর্ণ কালো। চোখ গুলো আর কালো স্লিকি চুলগুলো দেখা যাচ্ছে। ভয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম যমে গিয়েছে হূরের কপালে। ছেলেটা তা দেখে বলে

” তুমি যে এত ভিতু আগে ভাবিনি। বলেই এক পা পিছিয়ে যায়। হূর ছেলেটার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে যেই না মাস্কে হাত দিবে। তার আগেই ছেলেটা হূরের হাতে ধরে আলতো করে চুমু দেয়। সাথে সাথে হূর হাত সরিয়ে ফেলে কিছু বলতে যাবে। তার আগেই ছেলেটা চোখ মেরে অন্যপাশে চলে যায়। হূরও যায় কিন্তু না সেখান থেকে কোথায় গেলো? হূর সামনের দিকে আগাবে তার আগেই কেউ তাকে পিছন থেকে এসে বলে

” হূর মামুনি বাসায় চলো। স্যার বকবে। হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে ড্রাইভার চাচ্চু দাড়িয়ে। হূর জিব দিয়ে ঠোঁটে ভিজিয়ে বলে

” হুম চলো। হূর সামনের দিকে যাচ্ছে কিন্তু বারবার পিছনের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। হূর একটু আগাতেই ছিটির আওয়াজ আসে। হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে না কেউ নেই। সব হূরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

_______________

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিকেলের দিকে ছাঁদের দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে হূর। একটা ক্লান্ত বিকেল। মন থেকে বেড়িয়ে আসছে লম্বা এক হতাশের নিশ্বাস। সব কিছু কেমন এলোমেলো। তার সাথে সে ভাবছে তার জীবনটা কেমন। মা থাকতেও নেই। একটা বাবার বদলি আরেকটা বাবা পেয়েছে কিন্তু মা!? আবার এই ভার্সিটির কাহিনী। সব মিলিয়ে হূরের বিরক্ত লাগছে। মাথা ধরে এসেছে ।চোখ বুঝে ফেলে হূর মাঝে মাঝে হাওয়ার সাথে তালমিলিয়ে দুলছে মৃদু বাতাসে হূরের চুল।

তখনই ছাঁদে আসে এরিশ কানে হেডফোন হূরকে দেখে কিছু সময়ের জন্য থমকে যায় এরিশ। গোধূলির লগ্ন শুরু হয়েগিয়েছে চারদিকে সোনালী আর লালচে আভা আর সেই আলো এসে পরছে হূরের মুখে। এরিশ হুশ আসে তার বন্ধু আকাশের কথায়। এরিশ বলে

” তোকে আমি পরে কল দিচ্ছে। এরিশের কন্ঠ শুনে হূর চোখ মেলে তাকায় দেখে এরিশ দাড়িয়ে। এরিশকে দেখলেই এখন ভয় লাগে। হূর তাড়াতাড়ি করে উঠে দাড়ায়। এরিশ ভ্রু কুচকে তাকায় হূরের দিকে। হূর ধীর পায়ে এগিয়ে আসে দরজার দিকে। হূর যখন বলতে যাবে,

“ভাইয়া একটু সাইড দিলে ভালো হতো ” তখনই এরিশ বলে

” তুই আবিদ কে দেখে ইচ্ছে করে দৌড় দিয়েছিলি, আর ইচ্ছে করে ওকে ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজে পরে গিয়েছিস ?

হূর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এরিশের দিকে একটা মানুষ এমন কিভাবে হতে পারে। হূর বলে

” সেটা এক্সিডেন্টে ছিল, আর আমি কেন ইচ্ছে করে ধাক্কা দিতে যাবো?? এরিশ এবার নড়েচড়ে দাঁড়ায় আর বলে

” অহহ তা না হয় মানলাম। কিন্তু আরেকটা ছেলে হাত ধরলো, ভার্সিটিতে এইসব করে বেড়াও তুমি। দিদুনকে বলবো? বললে কি হবে জানিস??

হূর বলে

” ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। এরিশ বলে

” অঅ্হ হূর, এটা এখন কমন ডায়লগ জাস্ট ফ্রেন্ড। দিদুনের কানে যদি এই খবর যায় তাহলে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবে। ভালোই হবে কি বলিস!? বলবো!?

হূর বলে

” আপনি এমন কেন করেন? আসার পর থেকে আমার সাথে লেগে আছেন। আমি কি এমন ক্ষতি করেছি আপনার?! ভার্সিটির সেই প্রথম দিন থেকে এমনটা করছেন। আপনি জানতেন আমি আপনার বোন তাও সবার সামনে রেগিং করলেন।

এরিশ একটা ধমক দিয়ে বলে

” কিসের ভাই!? কোন জন্মের ভাই লাগি আমি তোর!? তুই আমার রক্তের সম্পর্কের বোন!? তোকে আমি বোন মানি না। এখন নিচে যাবি আর কফি করে নিয়ে আসবি। নয়তো দেখিস দিদুনকে বলে তোকে বিদায় করব।

হূর কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ বলে

” নো মোর ওয়ার্ড, যা এখন। সময় ৫ মিনিট।

হূর বাধ্য মেয়ের মতো নিচে নামতে লাগে। চোখে চিক চিক করছে মুক্তার দানার মতো জল। বোন মানে না মানতে হবে না। একটা মানুষ হিসাবে তো রেসপেক্ট করতেই পারে। মানুষের বাসায় একটা ফুলদানির সাথেও এর থেকে ভালো ব্যবহার করে।

__________

নিচে কিচেনে গেলে দেখতে পাই, আম্মু আর কাকি মা কফি বানাচ্ছে। আমাকে দেখে কাকিমা বলে

” কিরে হূর, কিছু লাগবে.? হূর বলে

” হুমম বড় ভাইয়ার জন্য কফি নিয়ে যেতে বলেছে। হূরের মা বলে

” তোমার লাগবে না যাও নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বসো।এরিশকে কফি সার্ভেন্ট দিয়ে আসবে। কাকিমাও বলে

” হ্যা তুই যা। আমিও কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসি। বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি কিন্তু পরতে ইচ্ছে করছে না। তার একটু পরই কেউ রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। সামনে তাকাতেই ভয়ে আতকে উঠি আজকেও যমরাজ মানে এরিশ এসেছে।

এরিশ এসে হূরকে একগাদা এসাইনমেন্ট ধরিয়ে দিয়ে বলে

” এগুলো সব করে দিবি। তোকে বলেছিলাম না কফি দিয়ে আসতে সার্ভেন্টকে দিয়ে কফি পাঠিয়েছিস কোন সাহসে?! হূর এবার কেঁদে ওঠে আর বলে

“আম্মু বলেছিল। আমি বলিনি, আর আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছি সকালে, আপনি এমন কেন!? আমি কি মানুষ না? মানুষতো কুকুরের সাথেও এতটা খারাপ ব্যবহার করে না। কথাটা শুনে কিছু না বলে সব কিছু নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো এরিশ। আর যেতে যেতে বলে

” এসাইনমেন্ট করবিনা বললেই পাড়তি এতো নাটক করার কি আছে। হাতে ব্যাথা পেয়েছিস তাই কিছু বললাম না নয়তো তোকে দিয়েই করাতাম। কালকে সব করে দিবি। বলেই চলে যায়

আর হূর তাকায় হাতের দিকে ইশশ হাতটা কেমন হয়েগিয়েছে সকালে ছিলে গিয়েছে তখন আবার সেই ব্যক্তিটার জন্য হাতটা কেটে গেলো। আসলে ভাগ্য যখন খারাপ হয় তখন এইসব আর কি। কিন্তু ব্যক্তিটা আসলে কে!!?

মাঝ রাতে হঠাৎ করে হূরের ঘুম ভেঙে যায়, ভালো লাগছিল না তাই সে ছাদের দোলনাটায় চলে আসে। এই জায়গা টায় আসলেই মন ভালো হয়ে যায়।

চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে❣️