ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব-০৯

0
753

গল্পের নামঃ- #ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:09

সকাল বেলা হূর ডাইনিং টেবিলে আসলেই হূরের দিদুন বলে

” হূর আজকে তোর ভার্সিটি যেতে হবে না বাসায়ই থাক। হূরের বাবা বলে

” কেন?? কিছু লাগবে মা তোমার? হূরের মা আলইনা কে খায়িয়ে দিচ্ছিল, হঠাৎ করে হূরকে বাসায় থেকে যাওয়ার কারণ কি সেটাই ভাবছে সে?? হূরের কাকি মার মনেও একই প্রশ্ন ।

হূরের কাকাই বলে

” যা বলার সরাসরি বলে ফেলো। হূরের দিদুন বলে

” হূরকে দেখতে আসবে। কথাটা শুনামাত্র সবাই অবাক। অপর দিকে নিজের খাওয়ায় ব্যস্ত এরিশ, আর মৃধা। হূরের চোখ পানিতে টলমল করছে। এরিশ বলে

” আচ্ছা দিদুন, ছেলে কে?? দিদুন বলে

” তোর রিনা আন্টির ছেলে, হূরকে অনেক পছন্দ করেছে। হূর কিছু না বলেই খাবারের টেবিল ছেড়ে চলে যায়। তা দেখে হূরের দিদুন বলে

” তেজ দেখছ মেয়ের। তোর ভাগ্য ভালো আমার নানতি তোকে পছন্দ করেছে। হূর কিছু না বলেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। এরিশ বলে

“তোমার নাতি যে কতটা ভালো তা আমরা সবাই জানি। আর আমি বলেছিনা, ঐ সিফাতের কথা যেন এই বাসায় আর না হয়। হূরের বয়সই বা কত?? সবে ১৯ বছরে পরল ২ দিন আগে।

হূরের দিদুন বলে

” মেয়েদের কুড়ি মানে বুড়ি। আলাইনা বলে।

” দিদুন তুমি এমন কেন?আর কুড়ি মানে তো বিশ? তাহলে তোমাকে বুড়ি বললে রাগো কেন? এইসব বাদ দিয়ে এটা হূর আপ্পি কি তোমার পান চুড়ি করে খেয়েছে নাকি রাতের বেলা যে তুমি চুপিচুপি করে ফ্রিজ থেকে আমার আইসক্রিম গুলো খাও সেটা বলে দিয়েছে সবাইকে? তুমি আপ্পিকে বিয়ে দিতে চাও কেন? আম্মু তো আমাকে বলে কথা না শুনলে বিয়ে দিয়ে দিবে, হূর আপ্পি তো সবার কথাই শুনে। আলাইনার কথা শুনে আলাইনার আম্মু বলে

” আলাইনা, আম্মু রুমে যাও।

এরিশ তার দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বলে

” আমি এত-শত জানিনা। ঐ সিফাত যদি এই বাসায়
এসেছে তাহলে আমি আর এই বাসায় আসবো না।

বলেই উপরের দিকে পা বাড়ায়। হূরের মা হূরের দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বলে

” মা যেদিন আপনার ছেলে আমার মেয়েকে এই বাসায় নিয়ে এসেছিল সেদিন আপনি আমাকে বলেছিলেন হূরের জন্য যেন আপনার ছেলের সংসার অবহেলা না করি। আর আগে আমাকে সেই বাসায় যেতেও দিতেন না। হূরও আমার মেয়ে আপনার কথা রক্ষার জন্য হূরকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। যদি হূরের জন্য আপনার এতই সমস্যা হয় তাহলে বলে দিতেই পারেন আমি আমার মেয়েকে বলে দিব চলে যেতে। আর এটা ওর নিজের লাইফের ব্যপার সেটা হূরই ভালো জানবে।

আর সাথে সাথে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়, সাথে হূরের কাকিমাও যায়।

হূরের দিদুন বলে

” তা কোথায় যাবে শুনি এই মেয়ে? কে বিয়ে করবে? হূরের বাবা বলে

” হূর আমার মেয়ে, আর আমার মেয়ে আমার বাড়িতেই থাকবে। আর ছেলের অভাব নেই দুনিয়াতে । হূরের কাকাই বলে

” মা তুমি এমন কেন? হূরকে কেন মানতে পারো না?? হূরের দিদুন বলে

” কারো ভালো করতে নাই। তোদের সবাইকে কালা জাদু করেছে ঐ মেয়ে। হূরের বাবা বলে

” মা নিজের চিন্তা ভাবনা পাল্টাও। আর খাবার ছেড়ে উঠে চলে যায়। সাথে হূরের কাকাইও। মৃধা তো বিন্দাস খাচ্ছে।

_____________

হূরের রুমে দরজায় এই নিয়ে তিনবার নক করেছে এরিশ। এরিশের কন্ঠ শুনে হূর দরজা খুলে দেয় এরিশ বলে

” ভার্সিটি যাবি না? চল। হূর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চোখের পানি মুছে বলে

” আপনিই দিদুনকে বলেছেন না বিয়ের কথা?? আমি কি এমন ক্ষতি করেছি আপনার?? কেন এমনটা করেন? এরিশ বিরক্ত হয়ে বলে

” কানের নিচে দিব। চার লাইন না বুঝলে ভালো লাগে না? আমি দিদুনকে কিছু বলিনি। হূর কথাটা শুনে অবাক হয়ে বলে

” তাহলে দিদুন এই কথা কেন বলবে?? এরিশ বলে

” আমি কি জানি? আমি কি অন্তর্যামী? বেশি বকবক করবি তোকে বাসায় ফেলে চলে যাবো। তারপর ঐ সিফাত এসে তোকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।

হূর নিজের চোখের পানি মুছে ব্যাগটা নিয়ে চলে আসে। ঐ সিফাতের থেকে ভালো এরিশের সাথে যাওয়া।

______________

এরিশ ড্রাইভার চাচ্চু কে বলে দেয় আজ গাড়ি সে ড্রাইভ করবে। তাই আর সেও কিছু বলে না। হূর চুপচাপ পিছনের সিটে বসতে যাবে তখনই হূরের দিদুন আর মৃধা বাসায় থেকে বেড়িয়ে আসে আর হূরকে উদ্দেশ্য করে হূরের দিদুন বলে

” এই তোকে না আজ ভার্সিটি যেতে বারণ করেছি। এরিশ ভ্রু কুচকে বলে

” আমিও বলেছি সিফাত এই বাসায় আসবে না। হূরের দিদুন হাসি দিয়ে বলে

” আরে না দাদু ভাই এখানে আসবে না। রেস্টুরেন্টে দেখা করবে সাথে মৃধা যাবে। এরিশ কথাটা শুনেই বুঝতে পারে এইসব মৃধার কাজ। এরিশ মৃধার কাছে গিয়ে মৃধার গালে চড় বসিয়ে দেয় আর বলে

” ভালো হয়ে যা। বাসায় থেকে বেরহওয়ার ফন্দি না?? বলেছি না তোর বাসার বাইরে পা রাখা বন্ধ। মৃধা কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ আরেকটা চড় বসিয়ে দেয় আর বলে

” ভিতরে যা, নয়তো আরেকটা দিব। মৃধা কেঁদে চলে যায়। এই প্রথম এরিশ তার গায়ে হাত তুললো। হূর দূর থেকে সব দেখে ভয়ে আছে। এরিশ তার দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বলে

” হূর আমার সাথেই যাবে। পারলে আটকে দেখাও সুইটহার্ট। আসি। আর তোমার নাতিকে মোমবাতি দিয়ে বল তার সাথে বিয়ে করে নিতে ।

বলেই চলে যায় হূরের কাছে। হূরের দিদুন রাগে ফুসতে ফুসতে বাসায় চলে যায় । হূর পিছনের সিটে বসতে যাবে তখনই এরিশ ধমক দিয়ে বলে

” ঐ আমাকে তোর ড্রাইভার মনে হয়? সামনে আয়। হূর কথা বাড়ায় না। হূর মনে মনে বলে

” যেই পরিমানে খেপে আছে। মনে হয় রাতে জিএফ এর সাথে ঝগড়া লেগেছে, নিজে পারেনি ঝগড়ায় তাই এমন করছে হয়তো।

হূর কারে বসতেই খুব জুড়ে কারের ডোরটা লাগায় এরিশ, ভয়ে কেঁপে উঠে হূরের। এরিশ তা দেখে বলে

” এত ভয় পেলে আর কিছু করতে হবে। হূর কিছু না বলে বাইরের দিকে মুখ করে রাখে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে হঠাৎ করেই হূর বলে উঠে

” এই এই, আমরা কোথায় যাচ্ছি?? এরিশ সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলে

” সামনে একটু কাজ আছে। তারপর হূর বলে

” তাহলে আমাকে এখানেই নামিয়ে দেন আমি একা চলে যাবো। এরিশ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে

” তোকে কার থেকে নামিয়ে আলাইনার কথা মতো সাইকেল চাপা না গাড়ি চাপা দিয়ে দিব। চুপচাপ বসে থাক। হূর মিনমিন করে বলে

” দজ্জাল এর মতো করে কথায় কথায়। তোমার কপালেও জুটবে একটা দজ্জাল বউ। এরিশ বলে

” এইসব কথা মনে মনে বলতে হয়। আর আমার একটা হূর আছে দজ্জাল বউ জুটবে না । হূর অবাক হয়ে বলে

” কি বললেন? এরিশ বলে

” কি বললাম!! আবার কি?? বললাম আমারও একটা হূর আছে। ওয়েট ওয়েট আবার নিজেকে ভাবিস না। তোর নাম টাই হূর৷ আর ও আমার কাছে সত্যিই হূর। হূর বলে

” আপনার এই ভূগোল শুনার কোনো ইচ্ছে আমার নাই। বুঝতে পেরেছি আপনার জিএফ আছে। এরিশ বলে

” উহুহ। হূর ভ্রু-কুচকে বলে

” তাহলে?? এরিশ বিরক্ত হয়ে বলে

” তোকে কেন বলতে যাবো?? হূর ভেংচি কেটে বলে

” তাহলে অর্ধেক কথা বেলন কেন?? এরিশ একটা হাসি দিয়ে বলে

” Kya karo wo Lady main ho adat se majbor। সাসপেন্স রাখতে ভালো লাগে।

হূর কিছু না বলে নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। এরিশ বলে

” এই ভালো কথা তের বিএফ মানে নীলআদ্রের কি খবর? সে জানে দিদুন তোর বিয়ে ঠিক করেছিল? রুমে গিয়ে ফোন করে কান্না করতে করতে বলিসনি, নীল বেইবি, জান, আমার বাবু তোমার আম্মু উফফস্ সরি সরি তোমার জিএফ মানে আমার বিয়ে ঠিক হয়েগিয়েছে। আমাকে এসে নিয়ে যাও। নয়তো আমি কচু গাছের সাথে গালায় দড়ি দিয়া আত্মহত্যা করব। আর সুইসাইড নোটে তোমার নাম লিখে যাবো।

হূর রেগে বলে

” চুপ করবেন আপনি!! কতবার বলবো আমার বিএফ নেই। এরিশ বলে

” তাহলে বুঝ তুই কেমন তোর বিএফ নাই।

চলবে


ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে❤️❤️