ভালোবাসতে চাই পর্ব-১৩

0
586

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ১৩
#ফারজানা_আক্তার

রিক্তা লজ্জায় কুটিকুটি,, তবুও কোনোমতে বলে আচ্ছা বলুন,, চোখমুখ খিঁচে আছে রিক্তা, অন্ধকার থাকায় শিশির দেখছেনা সেটা।

~শুনো আমরা কানাডা যেতে পারবোনা আর এর পেঁছনে অনেক বড় কারণ আছে। বলবো তোমায় সব কিন্তু এই মুহুর্তে না। তুমি যেখানেই বলো নিয়ে যাবো কিন্তু কানাডায় নাহ। আগামী কাল যেতে চাই, এবার তুমি বলো কোথায় যাবে?

রিক্তা…

রিক্তার বাহু ধরে হালকা ঝাঁকিয়ে ডাক দেয় শিশির। রিক্তা ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে। শিশিরের বলা কথাগুলো ব্যার্থ, মনটা খারাপ হয়ে যায় শিশিরের।

রিক্তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে নিজেও একসময় ঘুমিয়ে পরে।



সকালে শিশির আগে উঠে যায়,, রিক্তা এখনো ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে। শিশির নড়তে পারছেনা, বুকের উপরে যেন ভারী কিছু পরে আছে মনে হয়। ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখে রিক্তা ঘুমিয়ে আছে ছোট বাচ্চাদের মতো হয়ে তার বুকে। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসে শিশির। আর মনে মনে বলে যা হবে দেখা যাবে, আজ রাতেই কানাডা যাবো।।

শিশির রিক্তাকে সরিয়ে উঠতে চাইলে জেগে যায় রিক্তা। হুড়মুড় করে উঠে বসে সে। শিশির উঠে একবার তাকায় রিক্তার দিকে, কিছু না বলে চলে যায় ওয়াশরুমে।।

রিক্তা লজ্জায় কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম রিক্তা শিশিরের বুকে ঘুমিয়েছে শিশিরের বুকের লোম স্পর্শ করেছে। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে রিক্তার।



নাস্তার টেবিলে বসে চুপচাপ নাস্তা করছে সবাই,, কেনো জানি রিক্তা রুটি হাতে নিয়ে বসে আছে মুখে দিচ্ছেনা। চোখ এড়ালো না শিশিরের।

~আব্বু আম্মু একটা কথা বলবো,
রুটি মুখে দিতে দিতে বলে শিশির।
নুরুল ইসলাম রুটি মুখে পুরে দিয়ে বলে বল কি বলবি।
~আজ রাতেই কানাডা যাবো রিক্তা আর আমি।।
এটা শুনে রিক্তার চোখ কপালে উঠে যায়, অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে তার।
শিশিরের আব্বু আম্মু তো অবাক, তিন বছরে যেটা তারা বাবা মা হয়ে করতে পারেনি রিক্তা সেটা করতে পারছে, খুশিতে চোখে পানি চলে আসছে আফিয়া বেগমের।



প্লেনে বসে আছে দুজন,, রিক্তা এই প্রথম প্লেনে উঠেছে তাই খুব নার্ভাস সে, শিশিরের হাত খাঁমছে ধরেছে, শিশির কিছু বলছেনা শুধু মুচকি হাসতেছে।

রিক্তা শিশিরের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে, শিশিরও তার চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।



রিক্তা এই রিক্তা উঠো, চলে আসছি আমরা।
রিক্তার গালে আলতোভাবে হাত রেখে ডাকে শিশির।
রিক্তা লাফিয়ে উঠে হাসিমুখে বলে আমরা কি সত্যিই কানাডা এখন?
~হুম,, চলো
~আচ্ছা
রিক্তা ভালো করে কাপড় ঠিক করে নেয়। শিশিরের হাত ধরে হাঁটতে থাকে, শিশির মাঝেমধ্যে আঁড়চোখে দেখছে রিক্তার মুখের চমক। বেশ ভালো লাগছে শিশিরের, তবে অতীতটাও ঘায়েল করতেছে বারবার।



তারা একটা হোটেলে গিয়ে উঠলো,, রিক্তা শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছে চারপাশ টা। চারিদিকের সৌন্দর্য মুগ্ধ করতেছে রিক্তাকে। হোটেলে প্রবেশ করতেই অনেকগুলো লোক এসে বিভিন্ন ফুলের পাপড়ি ছুঁড়তে লাগে তাদের দিকে, হোটেলের ম্যানেজার এসে ইয়া বড় এক ফুলের তোরা ধরিয়ে দিয়েছে রিক্তার হাতে, রিক্তা অবাক হচ্ছে শিশির মুচকি হাসছে।
অবশেষে এক সার্ভেন্ট থেকে চাবি নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো শিশির রিক্তা।
রিক্তা বেশ অবাক হচ্ছে এতো এতো আয়োজন দেখে। চোখ বড় বড় করে বারবার তাকাচ্ছে শিশিরের দিকে, শিশির সেটা দেখেও না দেখার মতো হয়ে আছে।

শিশির রুমের দরজা খুলছে আর রিক্তা চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে।
রুমে ঢুকেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো শিশির, রিক্তা ঘুরে ঘুরে দেখছে পুরো রুমটা।
খুব সুন্দরভাবে সাজানো রুম, রুমের সাথেই একটা সুইমিংপুল, রিক্তা আরো বেশিই অবাক হলো এটা দেখে। কাঁচা ফুল দিয়ে সাজিয়েছে পুরো রুমটা। বেলকনিটা নজর কেড়েছে রিক্তার, পুরো শহর দেখা যাচ্ছে বেলকনি থেকে।

রিক্তা ওয়াশরুমে যাবে, কিন্তু ওয়াশরুমের দরজাসহ সাজিয়েছে বলে সে বুঝতে পারছেনা, শুধু এদিক সেদিক খুঁজছে।
~এই যে শুনুন
কোনো সারা শব্দ নেই শিশিরের, রিক্তা আবারও শিশিরকে ঝাঁকিয়ে ডাকে এই যে শুঁটকি শুনুন।
ধীরে ধীরে চোখ খুলে শিশির।
কী বললে?

ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে শিশির, রিক্তা চুপসে যায়।
শিশির আবারো বলল কিছু বলো না কেন?
রিক্তা মিনমিনিয়ে বলে ওয়াশরুমে যাবো।

এটা শুনতে লাফিয়ে উঠে যায় শিশির
~What??? এটা বলার জন্য আমায় ঘুম থেকে জাগালে? কমনসেন্স বলতে কিছু নেই তোমার?
~আ আসলে আমি ওয়াশরুম কোথায় খুঁজে পাচ্ছিনা।
তারপর শিশির বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা থেকে ফুল সব সরিয়ে দেখিয়ে দেয় রিক্তাকে। রিক্তা ওয়াশরুমে গেলেই বেশ হাসি পায় শিশিরের, শিশির একা একা হাসতে হাসতে কুটিকুটি।

রিক্তা ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে, আমার মতো উনিও তো মাত্র আসছে তবে ওয়াশরুমের দরজা উনি কিভাবে না খুজে পেয়ে গেলেন? তবে কি উনি এখানে আগেও এসেছেন?



~শুনুন না
শিশিরের পাশে গোল হয়ে বসে আদুরে সুরে বলে রিক্তা।
~বলুন না
বন্ধ চোখেই রিক্তার কোলে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে বলে শিশির, কেঁপে ওঠে রিক্তা
~ক কি করছেন?
কিছুটা থেমে থেমে বলে রিক্তা।
~কি করছি?
মাথা তুলে রিক্তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে শিশির।
রিক্তা কাঁচুমাচু করে, শিশির বলে আচ্ছা বলো কি বলবে।
~আসলে খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমার, আপনি তো আসছেন ধরে ঘুমাইতে ব্যাস্ত।
শিশির লাফ দিয়ে উঠে যায়, আমার তো খেয়ালই নেই সরি গো বউ।
এটা বলেই কাকে জানি ফোন লাগিয়েছে শিশির, ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে, একটু পর খাবার আসতেই দ্রুত খেতে বসাই রিক্তাকে সে নিজেও বসে।

রিক্তা কোনো কথা না বলে একমনে খেতেই আছে, শিশির খাচ্ছে নাকি খাচ্ছেনা সেদিকে কোনো খেয়াল নেই রিক্তার, শিশির না খেয়ে কিছুক্ষণ রিক্তার খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার নিজের খাওয়ায় মন দেয়।



খাওয়া শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় রিক্তা। শিশির বেলকনির দিকে পা বাড়ায়। পড়ন্ত বিকেল ঝিরিঝিরি বাতাস রিক্তাকে জড়িয়ে উপভোগ করতে ইচ্ছে করছে মুহুর্ত টা, কিন্তু নাহ এখন নয়, রাতে সারপ্রাইজ আছে পাগলিটার জন্য।।।।

কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে রিক্তার পাশে এসে রিক্তার কোমর জড়িয়ে শুয়ে পরে শিশির, কিন্তু এখন আর ঘুম আসছেনা তার, রিক্তা বেশ আরামে ঘুমুচ্ছে, ঘুমন্ত রিক্তাকে দর্শন করতে বেশ আনন্দ লাগে শিশিরের। শিশিরের নিঃশ্বাস রিক্তার মুখে পরতেই একটু নড়েচড়ে উঠে রিক্তা, শিশির ভাবতে থাকে সারপ্রাইজ পেয়ে রিক্তার রিয়েক্ট কেমন হতে পারে, অবাকের সাথে বেশ খুশিও হবে পাগলিটা, মুচকি হাসে শিশির। অপেক্ষা শুধু রাতের

হলকা হালকা শীত পরতেছে, রিক্তা ঠান্ডাই জরোসরো হয়ে যাচ্ছে, শিশির কাবাড থেকে একটা কম্বল বের করে ঢেকে দেয় রিক্তাকে। নিজেও জড়িয়ে নেই কিছুটা। ঠান্ডা ঠোঁটে ছুঁয়ে দেয় রিক্তার কপাল, ঘুমের মধ্যেই কেঁপে ওঠে রিক্তা।
শিশিরের আর তর সইছেনা, কবে যে রাত হবে____

#চলবে