ভালোবাসব যে তোকে? পার্ট ১৩

0
3710

#ভালোবাসব_যে_তোকে?
পার্ট ১৩
লেখিকাঃসারা মেহেক

??

অহনা সোফায় বসে আছে। রীতিমতো ঘামছে সে।কারন এমন সিচুয়েশনে এর আগে কখনো পরেনি সে।

অহনা কে দেখতে ফাহাদ, তার আব্বু আর আম্মু এসেছে। ফাহাদ দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম। গায়ের রং অহনার মতোই ফর্সা।চোখের রং হালকা খয়েরি। ফর্সা মুখের উপর এ রংয়ের চোখটাই যেনো বেশি ভালোলাগে।ফাহাদ তো অহনাকে আসার পর থেকে দেখেই যাচ্ছে।
এদিকে ফাহাদের আম্মু অহনাকে কিছু প্রশ্ন করলো। অহনা ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো।সে এখনো পর্যন্ত মাথা উঁচু করেনি।

এদিকে আয়ান আর মৌ দাঁড়ীয়ে দাঁড়ীয়ে অহনা আর ফাহাদকে দেখছে।তারা দুজন ফিসফিসয়ে বলছে,

“ফাহাদ ভাইয়াকে দেখেছো??সেই কখন থেকে আমাদের অহনার দিকে তাকিয়ে আছে।??”

“হুম দেখলাম তো।আমি হলেও তোর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতাম। ”

আয়ানের এ কথা শুনে মৌ হালকা করে একটা কাশি দিলো।

“হুহ কতো তাকিয়ে থাকতে তা জানা আছে। তুমি তো তোমার মনাকে নিয়েই পরে থাকতে।”

“এখানে মনা কোথায় থেকে আসলো!!!আর কখনো মনার নাম নিবে না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“গুড গার্ল।
জানিস আমার ইচ্ছা করছে তোকে আবার বিয়ে করি। একদম ধুমধাম করে।”

“শখ কতো!!!ছোটো বোনের বিয়েটা দাও তারপর।”

এর মধ্য আয়ানের দাদি ডাকলো আয়ানকে।তিনি আয়ানকে রুমে এনে বললেন,

“শোন,ফাহাদ এর পরিবার চাচ্ছে যে এ বিয়েটা হোক। অহনাকে তাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। উনারা চাচ্ছে আজকে অহনাকে আংটি পরিয়ে রাখবে।”

আয়ান কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

“দাদি আমি আব্বুকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করি এ ব্যাপারে।”

“হুম তাই কর। কিন্তু তাড়াতাড়ি। ”

এরপর আয়ান তার আব্বুকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে পরামর্শ নেয়।
আয়ান ফোন রেখে দাদিকে বলে,

“আব্বু বলছে ফাহাদের ফ্যামিলি অনেক ভালো।বিয়েটা হয়ে গেলেই বরং ভালো। কারন চেনা পরিচিত মানুষ এরা।”

“ঠিক আছে তোর আব্বু যা বলে তাই ই করি।”

কথা শেষে আয়ান আর দাদি রুম থেকে বের হয়ে আসে।

দাদিঃ আমাদের কোনে সমস্যা নেই এ বিয়েতে। আপনারা আজকেই অহনাকে আংটি পরিয়ে রাখতে পারেন।

ফাহাদের আম্মুঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার তো ইচ্ছা যতো তাড়াতাড়ি অহনাকে আমাদের বাড়ীর বউ করে নিতে পারি ততই ভালো।

ফাহাদের আব্বুঃআপনাদের ফাহাদকে জিজ্ঞাসা করার কিছু আছে??

আম্মুঃনা না। আমাদের ফাহাদকে অনেক ভালো লেগেছে। এমন ছেলে কি এখন খুঁজে পাওয়া যায় নাকি।

এরপর ফাহাদের আম্মু বসা থেকে উঠে অহনার কাছে গিয়ে বসে। তিনি অহনার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে।

“আপনাদের মেয়ে তো কোটিতে একটা। কে না চাইবে এমন মেয়েকে নিজের বাড়ীর বউ করতে।”

এ বলে উনি নিজের ব্যাগ থেকে একটা আংটি বের করে অহনার হাতে পরিয়ে দিলেন। যেহেতু অহনার আঙ্গুলের মাপ ছাড়া আংটি পরানো হয়েছে তাই একটু টাইট হয়ে গিয়েছে।

“বাহ,আমাদের বাড়ীর বউ এর হাতে আংটিটা অনেক শোভা পাচ্ছে।কিন্তু আংটিটা ছোটো হয়ে গিয়েছে।
সমস্যা নেই আমরা আজকেই তোমার হাতের মাপ নিয়ে আংটি ওর্ডার করে আসবো।”

আংটি পরানো শেষে দাদি মৌ কে বললো সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসতে।মৌ এতোক্ষন অহনাকে দেখছিলো।সে বুঝতে পারছে অহনা এসবে একদম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরেছে।কিছু রিয়েক্ট করবে নাকি কিছু বলবে বুঝতে পারছে না সে। শুধু বুঝতে পারছে যে অহনা অনেক কষ্ট পেয়েছে তাদের এমন হুটহাট ডিসিশনে।

এদিকে অহনার অবস্থা করুন। সে ভাবতেই পারেনি প্রথমবার দেখতে এসেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে। এখন প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার।কিন্তু কান্না করতে পারছে না।

ফাহাদের আম্মু আয়ানের আম্মুর উদ্দেশ্যে বললো,

“ভাবি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমার মনে হয় ফাহাদ আর অহনা আলাদা একটু কথা বলুক।”

আয়ানের আম্মু চিন্তায় পরে গেলেন।উনি ভাবছেন এভাবে কথা বলতে দেয়া কি ঠিক হবে??কিছুক্ষণ পর উনি জবাব দিলেন,

“ঠিক আছে ভাবি।ওরা দুজন কথা বলুক।”

অহনা আম্মুর এ কথা শুনে শুধু হতবাক হয়ে রইলো। সে করুন দৃষ্টিতে তার আম্মুর দিকে তাকালো।সে চাচ্ছিলো যে তার আম্মু এতে না বলুক। কিন্তু এমন কিছুই হলো না।

এর মধ্য মৌ চলে আসলো।তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো অহনা আর ফাহাদকে ছাদ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।

সে অহনা আর ফাহাদকে ছাদে দিয়ে নিচে চলে আসলো। কিন্তু নিচে এসে সে স্থির থাকতে পারলো না।। খুব টেনশন হচ্ছে তার। কি বলেবে অহনা, কি করবে,ফাহাদের সাথে আবার খারাপ ব্যবহার তো করবে না??এমন হাজারো চিন্তা তার মাথায় উঁকি দিচ্ছে।আয়ানের সাথে যে কথা বলে একটু হালকা হবে তারও উপায় নেই। কারন আয়ান,আম্মু,দাদি আর ফাহাদের পরিবার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে।

এদিকে অহনার অবস্থা তো যায় যায়। সোফায় সবার সামনে বসে কি কম অস্বস্তি ফিল করছিলো যে এখন আবার এভাবে একা কথা বলতে পাঠালে তাকে।

ফাহাদ মনে হয় অহনার সিচুয়েশনটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে।সে বললো,

“আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো??রিল্যাক্স হও।”

একথা শুনে অহনার মূহুর্তে ভয় দূর হয়ে রাগ এসে যায়।
সে মনে মনে বলছে,

“বাহ বাহ প্রথম কথাতেই ‘তুমি’!!!তারপর আবার বলে রিল্যাক্স হও!!!আমার জায়গায় থাকলে বুঝতি রিল্যাক্স কিভাবে হতে হয়।অসহ্য।”

অহনার ভাবনার মাঝে ফাহাদ বললো,

“তুমি কি কিছু ভাবছো?”

অহনা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,

“না না। তেমন কিছু না।”

“আচ্ছা তুমি তো আমাকে এখনো দেখোনি তাইনা??দেখবেই বা কি করে। মাথাটা একটু উঁচু করলে তো……”

ফাহাদ এর এ কথা শুনে অহনার কিছুটা রাগ লাগলো।সে বিরক্তি নিয়ে মাথা তুললো তার সামনের মানুষটাকে দেখার জন্য।কিন্তু ফাহাদকে দেখে তার সব রাগ চলে গেলো।কারন ফাহাদকে দেখতে একদম কিউট ইনোসেন্ট একটা বাচ্চার মতো লাগছে।অহনা তো ফাহাদকে দেখে ক্রাশ খেলো।সে ফাহদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

অহনার এভাবে তাকানো দেখে ফাহাদ মুচকি হেসে দিলো।সে বললো,

“তো মিস অহনা,পছন্দ হয়েছে আমাকে??আমার কিন্তু তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে।”

ফাহাদের এ কথায় অহনা কিছুটা লজ্জা পেলো।কিন্তু সে কিছু বললো না।

“তো আমি কি ধরে নিবো আমাকে তোমার ভালো লেগেছে??কারন চুপ থাকাটাই সম্মতির লক্ষন।”

ফাহাদের এ কথা শুনে অহনা মুখ ফিরিয়ে একটা হাসি দিলো।

“আচ্ছা আমাদের এখন যাওয়া উচিত। না কি কিছু জানবে আমার ব্যাপারে??”

“না না থাক। চলুন নিচে যাই।”

এরপর তারা দুজন ছাদের থেকে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।

ফাহাদ হঠাৎ বলে উঠলো,

“এখনো কি তোমার আগের মতো ভয় লাগছে??”

ফাহাদের এ কথাটা অহনাকে অনেক ভাবালো।কারন আজব হলেও সত্য যে ফাহাদের সাথে কিছুটা কথা বলার পর তার একদম ভয় গায়েব হয়ে গিয়েছে।এ কি করে সম্ভব??এই মানুষটার মধ্য কি আলাদা কিছু আছে??

ফাহাদ আবার বললো,

“কি হলো??আমার জবাবটা পেলাম না তো??”

অহনা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে বললো,
“নাহ। আর আগের মতো ভয় লাগছে না।”

অহনার এ জবাবে ফাহাদ বেশ খুশি হলো।তাদের নিচে নামা দেখে মৌ তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।সে অহনা কে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“সব ঠিকঠাক??”

অহনা চোখের ইশারায় বললো যে সব ঠিক।এটা বুঝতে পেরে মৌ এর বেশ শান্তি পেলো।

অহনা আর ফাহাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো ২ সপ্তাহ পর।ফাহাদ আর তার পরিবার বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

রাতে মৌ অহনার রুমে এসে বসলো কথা বলার জন্য। তার মনে এই জানার জন্য আকুপাকু করছে যে অহনা বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যাওয়া নিয়ে কিছু বললো না কেনো।
অহনা বসে বসে ফোন টিপছে আর মৌ কে পর্যবেক্ষণ করছে। কারন মৌ রুমে আসার পর থেকে চুপ করে আছে। কোনো কথাই বলছে না।

“কি ব্যাপার দোস্ত?? তুই চুপ কেনো?? ”

মৌ যেনো অহনার একটা কথা শুনার জন্যই এতোক্ষন বসে ছিলো। মনে হচ্ছে তার মুখের থেকে এখন ঝড়ের গতিতে কথা বের হবে।

“আমার থেকে কিছুই লুকাবি না বুঝেছিস??আমাকে সব বল,যে ছাদে কি এমন কথা হলো যে ফাহাদ ভাইয়ার সাথে বিয়েতে আর তুই মানাই করলি না। কালকে তো খুব কান্না করছিলি বিয়ে করবি না বলে।”

অহনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাব নিয়ে বললো,

“আমার মন আমার ইচ্ছা।।”

এ কথা শুনে মৌ এর রাগ উঠে গেলো।সে অহনার মাথায় হালকা চাটি মেরে বললো,

“আমাকে বলবি না তুই??কথা কি আমার স্টাইলে বের করবো?নাকি নিজে থেকেই বলবি।”

“আচ্ছা রে বলছি।” তারপর অহনা মৌ কে সব বলে।

“জানিস মৌ আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে ফাহাদ অনেক ভালো।উনার সাথে থেকে আমি একটুও আনকম্ফোর্টেবল ফিল করিনি।ছাদে উনার সাথে কিছু কথা বলার পরই আমার মনের থেকে ভয় চলে যায়।জানি না কেনো।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে উনার থেকে ভালো লাইফ পার্টনার হয়তো পাবো না আমি।”

“আমারও তাই মনে হচ্ছে। তোর ভাইয়ারও ফাহাদ আর তার পরিবার অনেক ভালো লেগেছে।”

এভাবে করে রাত ১২টা পর্যন্ত তারা গল্প করে।এর মধ্য আবার দুজন বিয়ের অনুষ্টান বেশ কিছু প্ল্যানিং ও করে ফেলে।
গল্প শেষে মৌ রুমে এসে দেখে আয়ান ঘুমিয়ে পরেছে। সে চুপি চুপি গিয়ে আয়ানের পাশে শুয়ে পরলো যাতে আয়ান টের না পায়।

সকালে আয়ান তাড়াতাড়ি করে অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরলো। কারন আজকে অফিসে অনেক কাজ।আবার আজকে আয়ানের আব্বুও কাজের থেকে চলে আসবে।

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। হঠাৎ দাদি আয়ানের আব্বুর উদ্দেশ্যে বললো,

“শোন আশরাফ আমার মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।”

“কি চিন্তা আম্মা??”

“ভাবছি যে অহনার বিয়ের সাথে আয়ান আর মৌ এর বিয়ের অনুষ্টান করলে কেমন হয়??”

দাদির এ কথায় সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।আয়ানের আব্বু কিছুক্ষণ ভেবে বলে যে,

“আম্মা আমারো মনে হয় আয়ান আর মৌ এর বিয়ের অনুষ্টানটা করে ফেলি। কারন ওদের বিয়ে যেমন পরিস্থিতিতে হয়েছিলো, আমাদের অনেক আত্মীয় ওদের বিয়ের ব্যাপারে জানে না। অহনার বিয়েতে যেহেতু সবাই আসবে তাই একেবারে অনুষ্ঠান করে ফেললেই ভালো হবে।”

এ কথা শুনে সবাই অনেক খুশি হয়।আর আয়ান,তার যেনো খুশির সীমানা নেই।তার তে মন বলছিলো ধুমধাম করে আবার মৌ কে বিয়ে করতে। একদম মন থেকে।মনে মনে সে দাদি আর আব্বুকে হাজারবার ধন্যবাদ দিলো।
আর অহনারও সেই খুশি লাগছে।কারন তার অনেক আগের থেকেই একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিলে যে তার আর মৌ এর বিয়ের সব অনুষ্টান একইসাথে হবে।আজ যে এভাবে তার ইচ্ছাটা পূরন হবে সে ভাবতেও পারেনি।
মৌ এরও বেশ ভালো লাগছে।কারন সব মেয়েদের মতো তারও ইচ্ছা ছিলো যে তারও বিয়ের অনুষ্টান হবে,বৌভাত হবে।সে অনেক সুন্দর করে সাজবে।কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এমন ছিলো না। এখন অবশ্য সব ঠিক আছে।

খাওয়াদাওয়া শেষে মৌ তার রুমে না গিয়ে অহনার রুমে যায়।উদ্দেশ্য একটাই দুই বান্ধবী মিলে এই প্ল্যানিং করবে যে হলুদ,বিয়ে,বৌভাতে কেমন কালারের কেমন ডিজাইনের ড্রেস পরবে। তাদের ইচ্ছা যে দুজন একই ধরনের ড্রেসআপ করবে।

এদিকে আয়ান বেচারা রুমে এসে বসে আছে।সে মৌ এর জন্য ওয়েট করছে। কারন অনেক কথা আছে মৌ এর সাথে।সে মনে মনে হানিমুনের প্ল্যানিং পর্যন্ত করে ফেলেছে। এখন শুধু মৌ কে বলার পালা।কিন্তু মৌ এর আসার কোনো নামই নেই। ওয়েট করতে করতে যে কখন সে ঘুমিয়ে পরেছে তা নিজেও বুঝেনি।

সকালের পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে আয়ানের ঘুম ভাঙে। ঘুম ঘুম চোখে সে পাশে হাত দিয়ে দেখে যে মৌ নেই। থাকবেই বা কি করে। কালকে রাতে অহনা আর মৌ গল্প করতে করতে একসাথেই ঘুমিয়ে পরেছে।মৌ কে পাশে না পেয়ে আয়ানের একটু রাগ হলো বটে। সে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।

বিকালে আয়ান অফিস থেকে ফিরে এসে দেখলো মৌ ব্যাগ গুছাচ্ছে। সে এতে বেশ অবাক হয়ে যায়। কারন তার জানা মতে এখন কোথাও যাওয়ার কথা না।তাহলে মৌ ব্যাগ কেনো গুছাচ্ছে??আয়ান নিজের কৌতুহল নিয়ে মৌ কে জিজ্ঞাসা করলো,

“আচ্ছা আমরা কি কোথাও যাচ্ছি??”

“হুম যাচ্ছি তো। কিন্তু আমরা না শুধু আমি যাচ্ছি। ”

এ কথা শুন আয়ানের বুক ধক করে উঠলো। কারন মৌ কে ছাড়া থাকা তার জন্য বেশ কষ্টকর।

“কি আবোলতাবোল বলছিস তুই??কোথায় যাবি একা একা তুই?”

“আমার বাসায় যাবো। কিন্তু একা না। ভাইয়া নিতে আসবে।”

“কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে তোর বাসায় যেতে হবে কেনো??আর কিছুদিন পরেই তো আমাদের বিয়ে। এরপর না হয় একসাথেই যাবো নে।”

“বিয়ে বলেই তো যাচ্ছি।”

“মানে??”

মৌ জবাব দিতে যাবে কিন্তু তার আগেই অহনা এসে দরজায় নক করে।

“মৌ তাড়াতাড়ি আয়। মাহতাব ভাইয়া চলে এসেছে তোকে নিতে।”

“তুই যা।আমি আসছি।”
আয়ানের সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে হুটহাট করে সব হয়ে যাচ্ছে কেনো??সে বুঝার টাইমটুকু পাচ্ছে না।

মৌ আয়ানকে বলে,

“আরে তুমি চুপচাপ এভাবে দাঁড়ীয়েই থাকবে নাকি আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবে।”

“কি হচ্ছে এসব মৌ??আমাকে একটু বল তো। কিছুই বুঝছি না।”

“তুমি ব্যাগটা নিয়ে আসো তো নিচে। সেখানেই সব জানতে পারবে।”

আয়ান আর কোনো উপায় না পেয়ে মৌ এর সাথে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামে।নিচে নেমে দেখে মাহতাব আর তার আব্বু কি যেনো কথা বলছে।

মৌ কে নামতে দেখে মাহতাব এগিয়ে আসলো। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরলো।

“কতোদিন পর দেখলাম আমার বোনটাকে।…দেখেই মনটা জুড়িয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি বাসায় চল। আব্বু আম্মু ওয়েট করছে তোর জন্য।”

এসব দেখে আয়ান আর চুপ থাকতে পারলো না। সে বললো,

“এখানে হচ্ছেটা কি??আমাকে কি কেউ দয়া করে বলবে??”

আয়ানের এ কথা শুনে অহনা বলে,

“কি আর হবে। বউ নিজের বাবার বাড়ী যাচ্ছে।সেখান থেকেই তুই ওকে বিয়ে করে এ বাড়ীতে নিয়ে আসবি। একদম সব রীতি মেনে।মূল কথা তোদের শুধু যে বিয়ের অনুষ্টান হবে তা না। তোদের আবার নতুন করে বিয়ে হবে।এতে আরো বেশি মজা হবে।”

অহনার এসব কথা শুনে আয়ানের তো রাগ মাথায় উঠে গেলো।সে বিড়বিড় করে বলছে,

“মজা না সাজা আমার জন্য।”

“কিছু কি বললি ভাইয়া??”

“হুম।এসব উল্টাপাল্টা আইডিয়া টা কার ছিলে??”

“কার আর হবে। আমাদের প্রিয় দাদির।”

এ কথা শুনে আয়ান অসহায় দৃষ্টিতে দাদির দিকে তাকালো।আর দাদি তো আয়ানকে দেখে মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। শুধু দাদি না।বাকি সবাই আয়ানের এ অবস্থায় হেসে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর মাহতাব বললো,

“মৌ চল তাড়াতাড়ি। আম্মু আমাকে অলরেডি দুবার ফোন দিয়েছে, এ জানার জন্য যে আমরা কি বের হয়েছি নাকি।”

মৌ আয়ানের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বললো,

“চলো ভাইয়া।”
এরপর মাহতাব মৌ এর ব্যাগ নিয়ে হাঁটা ধরলো।পিছে পিছে মৌ আসছে।তারও বেশ খারাপ লাগছে আয়ানকে ছেড়ে যেতে। কিন্তু সবার জোরজবরদস্তিতে তাকে যেতেই হলো।সবাই দরজার কাছে এসে মৌ কে বিদায় দিচ্ছে।
আয়ানের তো মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজাকে তার থেকে আলাদা করে দিচ্ছে।আয়ানের অবস্থা দেখে অহনা দাদির উদ্দেশ্যে জোরে জোরে বললো,

“দাদি গো দাদি, তুমি কিভাবে পারলে দুইটা কিউট সুইট লাভ বার্ডসকে আলাদা করতে??
এদের দুজনকে দেখে তো আমার একটা গানই মনে আসছে,
“Pardesi pardesi jana nehi jana nehi
mujhe chorke, mujhe chorke”

গানটা বলে অহনা সহ বাকি সবাই হেসে উঠে। শুধু আয়ান বাদে। সে রাগি দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকায়।

চলবে……