ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-১৮

0
264

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১৮

সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে রির্সোটের বাগানে চলে গেলো।অধরা আর রক্তিম দুজন হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে তন্নি হাতে মোবাইল নিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। রাত তার সব কান্ড কারখানা দেখছে তন্নি আশেপাশে ফুলে হাত বুলিয়ে দেখছে।রাত তন্নির কাছে গিয়ে বললো,

~চল তোকে নিয়ে সেই বিলের পাশে ঘুরতে যাই।

তন্নি রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

~অধরা আপু যখন যাবে আমিও যাবো।

রাত বললো,

~অধরা তো রক্তিম ভাইয়ার সাথে ঘুরতে ব্যস্ত তাদের কী বিরক্ত করা ঠিক হবে?

তন্নি কিছুক্ষন ভেবে বললো,

~আচ্ছা চলো।

রাত তন্নিকে নিয়ে সেই বিলের পাশে চলে গেলো সেখানে অনেক নৌকা আছে।রাত বললো,

~নৌকায় উঠবি?

তন্নি বললো,

~একা একা ভালো লাগবেনা সবাই একসাথে থাকলে মজা বেশি লাগে।

রাত বললো,

~ভাইয়ারা ব্যস্ত চল আমরা যাই।

বলেই সে তন্নির হাত ধরে নৌকায় উঠে পরলো তন্নি রাতের থেকে হাত ছাড়িয়ে বললো,

~এভাবে কেউ নৌকায় তুলে আমি যদি প/রে যেতাম তখন।

রাত হালকা হেসে বললো,

~আমি থাকতে তুই প/রে যাবি তাতো ইম্পসিবল।

তন্নি মুখ বাকিয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য দেখতে লাগলো রাত তন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো তন্নিকে অনেক সুন্দর লাগছে সে ফোন বের করে তন্নির অগোচরে কয়েকটি ছবি তুলে নিলো।রাত তন্নির পাশে গিয়ে বসে পরলো তারপর বললো,

~ভালো লাগছে তোর?

তন্নি বললো,

~হুম।

রাত বললো,

~তুই কী রাজ নামের ছেলেটাকে পছন্দ করিস?

রাতের প্রশ্ন শুনে তন্নি তার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললো,

~পছন্দ হলে তো বিয়ে করেই নিতাম বাসা থেকে তাড়িয়ে দিতাম না।

রাত বললো,

~আমারও সেই ছেলেটিকে পছন্দ হয়নি।

তন্নি বললো,

~পছন্দ হলে কী আপনি বিয়ে করতেন?

রাত বললো,

~নাউজুবিল্লাহ আমি কেন তাকে বিয়ে করতে যাবো?মেয়ের কী আকাল পরেছে নাকি দুনিয়ায়।

রাতের কথা শুনে তন্নি হেসে উঠলো তন্নি সেই শব্দ করা হাসি দেখে রাতের বুকে আলাদা এক শিহরণ বয়ে গেলো সে তন্নির একহাত ধরে ফেললো।রাতের ছোঁয়া পেয়ে তন্নি হাসি বন্ধ করে তার দিকে তাকালো রাত তন্নির চোখে চোখ রেখে বললো,

~আমি তোকে ভালোবাসি তন্নি।আ’ই লাভ ইউ জানিনা কখন কীভাবে এসব হয়ে গেলো শুধু এতটুকু জানি আ’ই আ্য’ম ই’ন লাভ উ’ই’থ ইউ।

তন্নি স্তব্ধ হয়ে রাতের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে রইলো তার বলার মতো কোনো ভাষা নেই। তখনই নৌকার মাঝি পাড়ে চলে আসতেই সে বললো,

~আপনাগো টাইম শ্যাষ নাইমা যান।

তন্নির ধ্যান ভাঙ্গলো সে রাতের থেকে নিজ হাত সরিয়ে নৌকা থেকে নেমে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।রাত তার পিছু নিলো তন্নির নাম ধরে ডাকলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না।রাত মনে মনে বললো,

~অনেক বড় ভুল হয়েছে অনেক বড়।

রক্তিম অধরার কানে লাল টকটকে গোলাপ ফুল গুজে দিলো অধরা সেই গোলাপে হাত ছুঁইয়ে বললো,

~ফুল যে ছি/ড়/লে/ন এর জ/রি/মা/না কে দেবে?

রক্তিম বললো,

~এখানে যে ফুলের একটা দোকান আছে তা কী চোখে পরে নি ম্যাডাম আপনার?

অধরা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সেই দোকানের দেখা পেলো রক্তিমের একহাত আগলে বললো,

~বেলীফুলের মালা টা কিনে দিবেন?

রক্তিম অধরার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,

~অবশ্যই দিবো আর তন্নির জন্যও নিয়ে নেও।

অধরা নিজের জন্য আর তন্নির জন্য বেলিফুলের মালা কিনে নিলো।রক্তিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,

~৩.১০ বাজে আমাদের খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত চলো রাত আর তন্নিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে যাই।

অধরা তন্নির রুমে চলে গেলো আর রক্তিম রাতের রুমের দিকে।অধরা তন্নির রুমের সামনে গিয়ে দেখলো দরজা খোলা অধরা দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো তন্নি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।অধরা ধীর পায়ে হেঁটে তন্নির কম্বল সরিয়ে দেখলো তন্নি কাঁপছে অধরা তন্নির কপালে হাত দিয়ে দেখলো তন্নির জ্বর।অধরা তন্নিকে অনেকবার ডাকলো তন্নি শুধু হুম হুম করে গেলো জ্বরের কারণে তন্নির মুখ লাল হয়ে উঠেছে।অধরা দেরি না করে রক্তিমকে কল করলো সাথে সাথে রক্তিম কল রিসিভ করলো আর অধরা বললো,

~রক্তিম,তন্নির অনেক জ্বর ওর কোনো হুশ নেই আপনি ডাক্তার নিয়ে আসুন।

রক্তিম চিন্তিত স্বরে বললো,

~এখনই আসছি।

রক্তিমের সাথে রাতও আছে ভাইকে চিন্তিত দেখে বললো,

~কী হয়েছে ভাইয়া?

রক্তিম চেয়ার ছেড়ে উঠে বললো,

~তন্নির জ্বর এখনই ডাক্তার লাগবে।

রক্তিমের কথা শুনে রাত অস্থির হয়ে উঠলো সে বললো,

~তুমি যাও আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।

রক্তিম হুম বলে অধরার কাছে চলে গেলো।অধরা তন্নির কম্বল সরাতেই দেখতে পেলো পুরো চাদর পানিতে ভেজা তন্নির চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে অধরা বুঝতে পারলো এই জ্বর আসার কারন।তন্নি হয়তো অনেকক্ষণ শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে ভিজেছে তাই এ অবস্থা হয়েছে।অধরা তন্নিকে উঠিয়ে টাওয়াল দিয়ে পুরো চুল পেঁচিয়ে দিলো এরপর তন্নির জামা কাপড় পাল্টে দিলো।তন্নিকে শুইয়ে দিতেই রুমে নক করলো রক্তিম অধরা দরজা খুলতেই রক্তিম রুমে প্রবেশ করে বললো,

~এখন কেমন আছে তন্নি?

অধরা বললো,

~জ্বরে কোনো হুশ নেই ডাক্তার কখন আসছে?

রক্তিম কিছু বলবে তার আগেই রাত রুমে ডাক্তার নিয়ে হাজির। ডাক্তার তন্নিকে চেক করে কিছু ঔষধ লিখে দিলো আর বললেন,

~উনি হয়তো অনেকক্ষন পানির নিচে ছিলেন তাই ওনার এতো জ্বর এসেছে এই মেডিসিন গুলো সময় মতো দিবেন।

বলেই সে উঠে পরলো রক্তিম তাকে নিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলো রাত তন্নির শুকিয়ে যাওয়া মুখের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে তার মনে হচ্ছে সবকিছু তার কারণেই হচ্ছে।অধরা তন্নির মাথায় জ্বল পট্টি দিতে দিতে বললো,

~কেন যে এমন বাচ্চামি স্বভাব করে এই মেয়েটা কবে যে সে বড় হবে?

রাত অধরার দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা স্বরে বললো,

~এসব আমার জন্য হয়েছে অধরা।

অধরা অবাক নয়নে রাতের দিকে তাকালো অধরা কিছু বলতে যাবে তার আগে রক্তিম বলে উঠলো,

~তোর কারণে হয়েছে মানে?

রাত পিছন ফিরে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো অধরা রাতের কাঁধে হাত রেখে বললো,

~কী হয়েছে রাত?বুঝিয়ে বল

রাত মাথা নিচু করেই থাকলো আর আজকের সকল ঘটনা খুলে বললো সব শুনে অধরা আর রক্তিম অবাক হয়ে গেলো অধরা বিছানায় বসে পরলো। রক্তিম বললো,

~তন্নি যদি রাজি থাকে এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

অধরা বললো,

~আমার মনে হয় না তন্নির এতে মত আছে তাহলে ও এসব করতোই না।

রাত একদন্ডও সেখানে দাড়ালো না দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো রক্তিম আর অধরা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো তাদের মনে এখন নানা কথা চলছে

চলবে