ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব-০৬

0
326

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অধরা স্টিগারে চাপ দিতেই পিস্তল থেকে দুম করে একটা ফুল বেরিয়ে আসে। অধরা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়ন নিজের দুই হাত দিয়ে গাল ধরে চোখ জোড়া বড়বড় করে আছে। অধরা বুঝতে পারছে গুলি চলেছে তবে এটা বুঝতে পারছে‌ না ত রং কিছু হচ্ছে না কেনো? সে তো এখনও শ্বাস নিচ্ছে। অধরার বন্ধ চোখ ধিরে ধিরে খুলতে লাগলো। চোখ মেলতেই অধরা দেখতে পেলো গানের সামনে একটা গোলাপ ফুল। ফুলটা দেখে অধরার চোখে মুখে রাগের ছাপ ফুটে ওঠে। অধরা রাগে গজগজ করতে করতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— এসব কি অয়ন? এই গানে গুলি নেই কেনো?

— এইসব কি মানে? গুলি নেই কেনো তা আমি কি করে বলবো?

— আমার সাথে নাটক একদম না। গানে গুলি নেই কেনো? আমি জানতে চাই।

— আরে ভাই যার তার হতে গান থাকতে সেখান থেকে গুলি বের হয়‌ না। আর আমিই গুলি লোড করি নাই। যদি আমার দিকে গুলি চালাও এই ভয়ে গুলির বদলে ফুল সেট করেছি। বুঝেছো?

*অধরা অয়নের এই মিষ্টি হাসিতে ভূললো না। পিস্তলটা অয়নের দিকে ছুড়ে মারলো সে। “প্রচন্ড ঘৃণা লাগছে অয়নকে। এই ছেলে চায় কি? নিজে‌ থেকে আমার জীবনে এসে আমায় অবহেলা করে জীবন্ত মরা করে এসব কি করছে? কি চায় ও? আমাকে ওখান থেকে আনতে গিয়ে এই গেম খেললো তবে কি আমাকে ও ভালোবাসে? হাহাহাহা! সত্যি অধরা তুই একটা গাঁধী। তা না হলে যেই ছেলে আমি থাকার পরেও অন্য একটা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয়। অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা বলে। আমার পাশে শুয়ে যে অন্য নারীর ভাবনায় মগ্ন থাকে। সেই লোকটা নাকি আমায় ভালোবাসবে! এটা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া অন্যকিছু নয়। অয়নের এই ভালো মানুষিকতার আড়ালে নিশ্চই কোনো নোংরা খেলা আছে। যা আমি বুঝতে পারছি না। আমাকে খোঁজ নিতে হবে আর জানতেই হবে অয়ন আসলে চায় কি”? আপনমনে কথা গুলো ভাবতে লাগলো অধরা। অধরার ভাবনার অবসান ঘটে অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করে। অয়ন অধরার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়ে‌ যায়। অয়নের চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলো অধরা‌। এই চোখের মায়ায় যে কেউ ডুবে যেতে চাইবে। এতোটা মায়া অয়নের চোখে! এই চোখ জোড়ার দিকে তাকালে মনে হয় সব ভুলে ভালোবেসে কাছে টেনে নেই। কেউ একবারও বুঝতে পারবে না এই মায়াবী চোখের আড়ালে রয়েছে এক নোংরা চেতনার মুখ। সমাজের সামনে ভালোর মুখোশ পরে থাকা মিস্টায় অয়ন চৌধুরী আসলে কি তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। অয়নের মায়াবী চোখ আর ঠোঁটের কোণে আঁকা মিষ্টি হাসি দেখে কেনো যেনো তার প্রতি ভিশন ঘৃণা হতে লাগলো অধরার। অধরা রাগি একটা লুক নিয়ে মুখ ঝামটা মেরে গাড়ির দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
জোরে জোরে ধাক্কার পরেও দরজা খুলছে না। অধরার দিকে বাঁকা হাঁসি হেঁসে অয়ন বলতে লাগলো

— কোনো লাভ হবে না। দরজা লক করা। আমাকে কি পাগল ভেবেছো? আমি খুব ভালোই জানি তুমি আমার সাথে যেতে চাইছো না। এই জন্য দরজাটা ভালো করে লক করে রেখেছি। যাতে করে রাস্তার মাঝে তুমি কোনো রকম পাঁয়তারা না করতে পারো। আহা বলছি তো লাভ হবে না। শক্তি নষ্ট করো না। এই শক্তিটা রাতে নষ্ট করলে ভালো হবে।

* অয়নের কথা শেষ হতেই অধরা দরজার দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে অয়নের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অয়ন অধরার অগ্নি দৃষ্টি দেখে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো আর অধরা অয়নের বিপরীত দিকে মুখ করে গাড়ির বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো। অধরা আপন মনে ভাবছে ” একজন নারী হয়ে কি সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই? হ্যাঁ আমার পরিবারের মধ্যে শুধু মাত্র বাবা আমার। আর কেউ আমার নয়। তাই বলে অয়নের কাছে পরে থেকে অবহেলিত, অপমানিত হবো! অয়ন কি পারতো না নিজের সব টা দিয়ে আমায় ভালোবাসতে? আমি তো নিজের সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করি ওকে ভালো রাখতে। আমার ভালোবাসায় তো বিন্দুমাত্র অবহেলা ছিলো না। তবে কেনো আমি ভালোবাসা পেলাম না? যত যাই বলি না কেনো একটা কথা সত্যি যে একজন পুরুষ কে আমি নিজের প্রতি আসক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছি। একজন নারীর ব্যর্থতা হলো নিজের স্বামীকে নিজের প্রতি আসক্ত না করতে পারাটা।

অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতিতের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ির সামনে গাড়ি চলে এসেছে অধরার খেয়াল নেই। বাড়ির সামনে আসতেই অয়ন গাড়ি ব্রেক করে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— বাড়ি চলে এসেছে। এখন গাড়ি থেকে নামতে পারো। আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।

অধরা অয়নের কথার কোনো বিপরীতে উত্তর দিলো না। গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতরে চলে যায় সে। অয়ন বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি নিয়ে পার্কিং করতে চলে যায়। অধরা বাড়িতে আসতেই কোথাও তার শাশুড়ি মা কে দেখতে পেলো না। অধরা রান্না ঘর থেকে শুরু করে সব দিকটা খুঁজে নিলো। কিন্তু কোথাও উনি নেই। অধরা অয়নের মা এর রুমে যেতেই দেখতে পেলো অয়নের মা বিছানায় শুয়ে আছেন। অধরাকে দেখতে পেয়ে উনি বেশ হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠলো

— অধরা তুমি এসেছো মা!

অধরা রুমের ভিতর চলে এসে ওনার পাশে বসলো। অধরা ওনাকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। ওনাকে দেখে বেশ অসুস্থ লাগছে। অধরা অয়নের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— মা তোমার কি হয়েছে? এভাবে শুয়ে আছো যে? শরীর ঠিক আছে তো তোমার?

— হুম মা। তুই চলে যাবার পরে একটু অসুস্থ হয়ে পরি। তোর বাবা কেমন আছে? তুই কেমন আছিস? তোকে ছাড়া আমার বাড়িটা একদম শুন্য লাগেরে মা।

— হুম মা। বাবা ঠিক আছে। তুমি মেডিসিন নিয়েছো?

— হ্যাঁ, তোর বাবা মেডিসিন এনে দিয়েছে কিন্তু খাওয়া হয়নি।

— তুমিও না মা। নিজের যত্ন নাও না একদমই।

অধরা তার শাশুড়ি মা কে ঔষধ খাইয়ে দিলো নিজ হাতে। অতঃপর কিছু কথা বলে নিজের রুমে ফিরে আসে অধরা। ফ্রেশ হতে হবে। অধরা নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো অয়ন সোফায় বসে বসে ড্রিংক করছে। অধরা অয়নের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। আসলে অয়নের এই ড্রিংক করা বিষয়টা অধরার ভালো লাগে না একদমই। কিন্তু অয়ন তাও করে। অধরা ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখতে পেলো অয়ন রুমে নেই। অধরা কিছু না ভেবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল শুকিয়ে নিচ্ছে। আচমকা অধরাকে অবাক করে দিয়ে অয়ন পিছন থেকে এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরে। অধরা একটু অপ্রস্তুত থাকায় অয়নের স্পর্শে ভয় পেয়ে যায়। অধরা কেঁপে উঠে অয়নের থেকে একটু আলগা হতে চেষ্টা করতেই অয়ন আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অধরা কিছুই বুঝতে পারছে না। অয়ন অধরার কাঁধে নিজের গাল ঘষতে থাকে। অধরার কাছে এই সব কিছু অসহ্য লাগছে। কিন্তু অয়ন নিজের থেকে অধরাকে আলাদা হতে দিচ্ছে না। অধরা অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে অহেতুক চেষ্টা করতেই অয়ন অধরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলছে

— অযথা ভয় পেয়ো না। আমি তোমার স্বামী। ভয় নেই।

কথাটা শেষ করে অয়ন অধরাকে চুমু খেতে লাগল। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে অয়নকে উদ্দেশ্য করে ভারী কন্ঠে বলছে

— অয়ন প্লিজ! আমার এসব ভালো লাগছে না। ছেড়ে দাও আমায়।

— ছাড়ার জন্য ধরি নাই তোমায়। তুমি আমার বিয়ে করা বউ। আমার অধিকার আছে তোমার উপর জোর খাটানোর।

— তাই না। আমার ভিশন ঘৃণ্য লাগছে অয়ন। প্লিজ! আমাকে ছাড়ো।

অয়নের হাত জোড়া শক্ত করে ধরে এক ধাক্কায় নিজেকে কোনো মতে ছাড়িয়ে নিলো অধরা। অধরা অয়নের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের চোখ জোড়া ফের রক্ত বর্ণ ধারণ করলো। অয়ন রাগি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে আসছে। অধরা কিছুটা হাঁপাচ্ছে। অয়ন অধরার কাছে আসতেই ভিশন কর্কশ শব্দে অধরার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো সে

— এসব কি? আমার ইচ্ছের কোনো মূল্য কেনো তোমার কাছে নেই? সব সময় আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে কি প্রমান করতে চাও আমায় ঘৃণা করো? নাকি ভাববো অন্য কাউকে দিয়ে নিজের ইচ্ছে……….

অধরা অয়নকে সম্পূর্ণ কথা বলার সুযোগ দিলো না। সর্ব শক্তি দিয়ে অয়নের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো সে। থাপ্পড়টা বেশ জোরে হওয়াতে থাপ্পড়ের শব্দে পুরো রুমটা কেঁপে উঠলো। অধরার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো অধরা

— তোর মতো নিচু মানসিকতার মানুষ আমি নই। যার তার সাথে বেড শেয়ার করা তোকে মানায়। কারন তুই একটা সস্তা দ্রব। তোকে কাছে পাওয়া কোনো বড় বিষয় না হতে পারে কিন্তু আমি দামী। যার তার সাথে আমাকে পাওয়া যায় না। তোর মতো একটা নিচু চরিত্রের ছেলেকে ভালোবাসায় জড়িয়ে নেয়া যায় না। কারো সম্পর্কে বাজে কথা বলার আগে হাজার বার নিজেকে প্রশ্ন করবি সবাই তোর মতো ব্লাডি সাইকো মাইন্ডেট না।

অধরার কথা শেষ হতেই অয়ন একটা রাক্ষুসে হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অধরাকে দেখে মনে হচ্ছে রাগে ফেটে যাবে সে। অয়নের চোখ থেকে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে যাবে। অয়ন অধরার দিকে ভালো করে তাকিয়ে নিলো। ঘৃণ্য এক হাসি দিয়ে অধরাকে………………….

#চলবে..…………………….