ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব-১৫+১৬

0
263

#ভালোবাসার_বর্ষণ
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৫

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দুই রমনী দাড়িয়ে আছে। একজন বাহিরে তাকিয়ে প্রকৃতি বিলাসে বিভোর। অপরজন প্রকৃতি বিলাসকারীনি রমনীকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখায় ব্যাস্ত। হঠাৎ প্রকৃতি থেকে চোখ ফিরিয়ে মোহনার দিকে নজর দিল তরু। মোহনা তখনো এক নজরে তরুর দিকে তাকিয়ে আছে। তরু জিজ্ঞেস করলো

– আপনি মোহনা তাই না৷

– জ্বি৷

– আপনি এভাবে কি দেখছেন মোহনা আপু?

– আমাকে আপু বলতে হবে না। হয়ত আমরা সেম এজ হবো৷ আর দেখছিলাম কি শুনবে?

– হুম।

– জানো তোমার চোখ দুটো না একদম আমার আপুর মতো৷ কত মিল দুজনের।

– কি বলছো আপু?

– হুম সত্যি। ওখানে বেড এ শোয়া দেখলে না ওটাই আমার আপু।

– তার নাম কি?

– সে কি তুমি আপুর নাম জানো না অথচ আপুকে দেখতে চলে এসেছো।

– আসলে তুরাগ ভাই আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি তেমন কিছুই জানি না।

– ওহ আই সি৷ তুরাগ ভাইয়া কি হয় তোমার?

– আমার ফুপির ছেলে৷ আচ্ছা তোমার আপুর নামটা তো বললে না।

– আমার আপুর নাম মিথিলা।

– আপু কি অসুস্থ? এভাবে ভর দুপুরে শুয়ে আছে কেন?

তরুর কথার প্রতিউত্তরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মোহনা৷ তারপর বলল

– আপুর জীবন তো এখন বিছানায় শুয়ে শুয়েই কা’টে।

– মানে? বুঝিনি একটু পরিষ্কার করে বলো তো।

– তুমি সত্যিই কিছু জানোনা?

– সত্যিই জানি না আমি। আমাকে কখনো কেউ এসব ব্যাপারে বলে নি।

– আপির দুটো পায়ের একটা পা ও নেই।

কথাগুলো বলতে নিয়ে মোহনার চোখ ভিজে উঠছিল। কথাগুলো দলা পাকিয়ে আসছিল গলার কাছে।

তরু সামনে এগিয়ে গিয়ে মোহনার হাত ধরল। তরুর হাতের উপরেই টুপটাপ দু ফোটা নোনাজল পড়ল।

এই মুহুর্তে তরুর ও ভীষণ খারাপ লাগল। কিছুক্ষণ আগেও কেমন একটা রাগ রাগ হচ্ছিল মেয়েটার উপর। তরু যে তুরাগকে ভালোবাসে এমনটা নয়। তবুও কেন যেন তুরাগকে অন্য কারো পাশে দেখে খারাপ লেগেছিল। তবে সেই হিংসের রেশটুকুও এখন খারাপ লাগায় রুপ নিল। তবে জানার আগ্রহটুকু কোনভাবেই দমিয়ে রাখতে পারল না৷ মোহনার হাত চেপে ধরে সামনের দিকে এগুলো। ছাদের এক কর্নারে একটা দোলনা বসানো। সেখানে গিয়ে বসল দুজন। মোহনা ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। তরু আসার পর ওদের দুজনকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায়নি তাই জানতে চাইল

– আচ্ছা তোমাদের সাথে আর কেউ থাকে না।

– হ্যা আম্মু থাকে। অবশ্য তিনি দিনে থাকেন না। দিনের বেলায় তাকে তার অফিসে যেতে হয়।

– তিনি কি চাকরি করেন?

– হুম৷ আসলে আপুর ওরকম পরিস্থিতি বাবা মেনে নিতে পারেন নি। তিনি ছিলেন হার্ট এর পেশেন্ট। হার্ট ব্লক হয়ে মা’রা গিয়েছিলেন তিনি। এরপর বাবা যে অফিসে চাকরি করত সেই অফিসেই আম্মুকে একটা কাজের ব্যাবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এই ভাবেই আমাদের সংসার চলতেছে।

– আচ্ছা তুমি আমাকে বলো না সবটা।

মোহনা মনে মনে ভাবল মিথি আপু তো ঘুমুচ্ছে। সে যতক্ষণ নিজ থেকে না জাগবে ততক্ষণ তুরাগ ভাই ও ডাকবে না৷ সেটা অনেক সময় এর ব্যাপার। ততক্ষণে নাহয় পুরনো স্মৃতিচারণ করাই যায়।

———————————————

মিথিলা খুবই হাস্যজ্বল এবং চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ছিল। আর গান ছিল ওর সবথেকে বেশি পছন্দের।পছন্দের বেশ কয়েকজন সিঙ্গার এর তালিকায় তুরাগ সাইয়্যিদ ও ছিল। তুরাগ ভাইয়া তখন ফেমাস একজন সিঙ্গার। আপু যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল তখন ওদের কলেজে একটা প্রোগ্রাম হয়েছিল। কিসের প্রোগ্রাম আমি ঠিক জানি না৷ তবে বেশ বড় করে ঝমকালো আয়োজন করা হয়েছিল। গান পরিবেশন এর জন্য ইনভাইট করা হয়েছিল তুরাগ সাইয়্যিদ ভাইয়াকেও। আপু খুব এক্সাইটেড ছিল পছন্দের সিঙ্গারকে সামনে থেকে দেখতে পাবে সেই ভেবে। সেদিন খুব সুন্দর ভাবে সেজেছিল ও। সাদামাটা চলাফেরা করা মেয়েটা হুট করে সাজায় সেদিন বেশ সুন্দর লেগেছিল। আম্মু সেদিন আপুর চোখের নিচ থেকে একটু কাজল নিয়ে ঘাড়ে লাগিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল কারো নজর না লাগুক৷ কিন্তু কাজ তো হয় নি। নজর তো লেগেছিল। তুরাগ সাইয়্যিদ ভাইয়ার। তিনি স্টেজে বসেই লক্ষ্য করেছিলেন আপুকে। তবে সেদিন কিছুই বলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরে তিনি ঠিকই আপুকে খুজে বের করেছিলেন। একটা গিফট বক্স পাঠিয়ে দিয়েছিল আমাদের ঠিকানায়। উপরে প্রেরকের ঠিকানা দেয়া ছিল না তাই প্রথমে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি যে বক্সে কি আছে। ভেতরে ছিল নীল রঙের একটি শাড়ী, এক মুঠ কাচের চুড়ি, এক পাতা টিপ, বেলী ফুলের গাজড়া। আর ছিল নীল রঙের একখানা চিরকুট। চিরকুটে ঠিক কি লেখা ছিল সেটা আমার আজও অজানা। আপুকে দেখতাম সেটা খুব যত্নে রেখে দিত। আমি তখন অনেকটাই ছোট তবুও এতটুকু বুঝতাম গিফটগুলো যে দিয়েছে সে নিশ্চয়ই ভীষণ রোমান্টিক।

এরপর কে’টে গেছে বেশ কিছু দিন। এরকমই এক বসন্ত বিকেলে আপুকে দ্বিতীয় বারের মতো সাজতে দেখেছিলাম আমি৷ সেই অপরিচিত ব্যাক্তির দেয়া সমস্ত জিনিস গুলো দিয়ে সেদিন সযত্নে সেজেছিল। আম্মুর থেকে পারমিশন নিয়েই বেরিয়েছিল বাসা থেকে। সেদিন বাসা থেকে হাসি মুখেই বেড়িয়েছিল। যখন ফিরল তখন চোখ মুখে খুশি যেন উপচে পড়ছে। বাসায় ফিরে আবেগে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরেছিল সেদিন। সেদিন রাতের খাবার শেষ করে দু বোন বসেছিলাম গল্পের আড্ডায়। আমি ছোট হলেও আপু সব কিছু শেয়ার করত আমার সাথে। সেদিন আপু তুরাগ ভাইয়ার কথা জানিয়েছিল আমাকে৷ কিন্তু আমার মন বলছিল তখন উল্টো কথা। ওকে আমি সেদিন বুঝিয়েছিলাম আপু এই ভুলটা তুমি করো না। এদের মতো সেলিব্রিটিদের বিশ্বাস নেই। আজ তোমাকে ভালো লাগছে তাই তোমার কাছে আসছে। দুদিন পরে নতুন কাউকে ভালো লাগবে সেদিন তেমাকে ছুড়ে ফেলে দিবে দেখো। সেদিন আপু আমাকে বেশ জোড়েই একটা ধমক দিয়েছিল আর বলেছিল

– তুই ছোট মানুষ। তোর এসব বোঝার বয়স হয়নি।

আপু নাকি তুরাগ ভাইয়ের চোখে ভালোবাসা দেখেছিল সেদিন।

আসলে সেদিন আমিই ভুুল ছিলাম। আপুই ছিল সঠিক। তুরাগ ভাই সত্যি সত্যিই আপুকে তার সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবেসেছে। তবে আপুর ভাগ্যে এত ভালোবাসা সয়নি।

কথা বলতে বলতে মোহনার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় থেমে যায় মোহনা। তরু আবার জিজ্ঞেস করে

– তারপরে কি হয়েছিল? আমার তো মনে হচ্ছে তুরাগ ভাইয়া এখনো তোমার আপুকে ভালোবাসে। তাহলে?

– তুরাগ ভাইয়ার ভালোবাসা ঠিকই ছিল। ওদের ভেতরে সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল কিন্তু কাল হয়ে দাড়য়েছে আমাদের দারিদ্র্যতা।

– মানে?

– ওদের সম্পর্কের তখন প্রায় ছ মাস হতে চলেছিল তখন একদিন তুরাগ ভাইয়া আপুকে বলে যে আপুকে ভাইয়ার ফ্যামিলির সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যাবে। প্রথমে আপু রাজি ছিল না পরে ভাইয়ার জোরাজুরিতে রাজি হয়েছিল। সেদিন যখন তুরাগ ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সেদিন সবাইই হাসি মুখে মেনে নিয়েছিল। তুরাগ ভাইয়ার ছোট বোন আছে না তুরফা আপু কোন ইউনিভার্সিটিতে যেন পড়ে ওই আপুও সেদিন ছুটিতে বাসায় এসেছিল। মিথিলা আপুর সাথে তুরফা আপুর ও একটা ভালো সম্পর্ক হয়। ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে বেশ পছন্দ হয়েছিল মিথিলা আপুকে। সেদিন ভালোভাবেই তুরাগ ভাইয়া আপুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিল। এদিকে তুরফা আপুর সাথে মিথি আপুর ফ্রেন্ডশিপ এর গভীরত্ব দিন দিন আরো বেড়ে যাচ্ছিল। এরপরে আরো কয়েক মাস কে’টে গিয়েছে। আপুর আর তুরাগ ভাইয়ার ফোনেই কথা হতো কিন্তু কখনো দেখা করত না। এরপর সেমিষ্টার ব্রেকে তুরফা আপু বাসায় আসে। সে আপুর সাথে দেখা করতে চায়। তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট করে। এরপরে দুইজন মিলে প্লান করে যে তুরাগ ভাইয়াকে না জানিয়েই আপু যাবে। এরপর ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু কে জানত আপু নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যাবে সেদিন।

তুরফা আপু যখন মিথিপুকে নিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে তখন সামনেই দেখা হয় নুরনাহার আন্টির সাথে। মিথিপু নুরনাহার আন্টিকে সালাম দেয় কিন্তু তিনি সালামের জবাব না দিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। আপু প্রথমে বুঝতে পারে না তার এমন আচরণের কারণ। তুরফা আপু সবটা স্বাভাবিক করতে মিথিপুর হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা করতে করতে প্রায় বিকেল ঘনিয়ে আসছিল। তবুও তুরাগ ভাইয়ের আসার নাম ছিল না৷ এদিকে আপু চাচ্ছিল বাসায় চলে আসতে কিন্তু তুরফা আপু আসতে দিবে না হাত ধরে বসেছিল। তখন সেখানে নুরনাহার আন্টি আসে। তিনি তখনো মুখ গোমড়া করে ছিলেন। তারপর তিনি যা বলেন তা শোনার জন্য আপু মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ( তুরফা আপুকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল তোরা দুই ভাই বোন কি শুরু করেছিস। নিজেদের লেভেল কি ভুলে গিয়েছিস। একটা থার্ড ক্লাস মেয়েকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কি আছে। কি ভেবেছিস কোন ফ্যামিলি থেকে বিলং করে সে খবর আমি জানিনা। সব জানি৷ ভেবেছিলাম নিজের ছেলের জন্য দেখে শুনে ভালো ফ্যামিলি থেকে মেয়ে নিয়ে আসব। কিন্তু না ছেলে পছন্দ করে নিয়ে আসল যার কোন ফ্যামিলি স্টাটাসই নেই। বাবা সামন্য বেতন ভুক্ত কর্মচারী। নিজের রুপ দেখিয়ে ঠিকই আমার ছেলেকে ফাঁ’সিয়েছে।)

এরপর তুরফা আপুকে বাদ দিয়ে সরাসরি মিথি আপুকেই বলেছিল – এই মেয়ে তোমার কি আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই নাকি। নিজেদের অবস্থান ভুলে গেছো। তোমার ফ্যামিলির কি যোগ্যতা আছে আমাদের ফ্যামিলির সাথে তাল মিলিয়ে চলার। শোন মেয়ে বিয়ে শুধু দুজন ছেলে মেয়ের মাঝেই হয় না এর সাথে জড়িয়ে আছে দুটো পরিবারের সম্পর্ক। দুটো পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এই বিয়ের মাধ্যমে। নিজের এই রুপ যৌবন দেখিয়ে কতদিন আটকে রাখবে আমার ছেলেকে শুনি। যদি আত্মসম্মান এর ছিটে ফোটাও থাকে তাহলে নিজ ইচ্ছায় আমার ছেলের জীবন থেকে সরে যাবে। তুরাগ এর সামনে আমি তোমাকে কিছু বলিনি মানে এই নয় যে তোমাকে আমি মেনে নিয়েছি।

এত তিক্ত কথা শুনিয়ে গটগট পায়ে সেখান থেকে চলে গেলেন নুরনাহার আন্টি। তুরফা আপু তখনো এল ধ্যানে মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। কারণ তিনি নাকি আগে কখনো তার মায়ের এই রুপ দেখেন নি।

আপু ছিল নরম মনের মানুষ। এত কথা হজম করার মতো মন ওর ছিল না। সেদিন ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল ও। কান্না আসছিল প্রচুর। আর এক মুহুর্ত ও দেরী না করে নিজের পার্স টা নিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল। গেটের কাছে দেখা হয়ে গেল তুরাগ ভাইয়ার সাথে। তিনি আপুকে দেখে বেশ অবাক হয়েছিলেন৷ কিন্তু আপু তার চোখের জল লুকাতে তুরাগ ভাইয়ের সাথে কথা না বলে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। তুরাগ ভাইয়াও আপুর পেছন পেছন দৌড় লাগায়। এটা দেখে আপু কোন দিকে না তাকিয়ে রাস্তার মধ্যে দিয়ে ছুটে যায়। কিন্তু ওদিক থেকে দ্রুতগামী ছুটে আসা মাইক্রো লক্ষ্য করেনি। মুহুর্তের মাঝে সমস্ত কিছু চোখের সামনে শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাইক্রোতে ধাক্কা লেগে ছিটকে সামনে পড়ে আপু৷ সেদিন ছিটকে পাশে পড়লে হয়ত আপুর পা দুটো আজ থাকত। কিন্তু পড়েছে সামনে। আর মাইক্রোর দুটো চাকা আপুর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। গগন বিধারি চিতকার দেয় আপু। তুরাগ ভাই পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তার মনে হচ্ছিল তার চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল সব। জায়গায় সেন্স হারিয়েছিল আপু। তুরাগ ভাইয়া ছুটে এসে আপুর মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়েছিল। রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। ভাইয়া সেদিন চিতকার করে কাদছিল।

#চলবে

#ভালোবাসার_বর্ষণ
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৬

ছেলে মানুষের নাকি কাধতে নেই৷ কিন্তু সেদিন পুরো হসপিটাল কেপে উঠছিল তুরাগ ভাইয়ের কান্নায়। তুরফা আপু তুরাগ ভাইকে তার মায়ের করা আচরণের কথা বলতেই মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল। মন চাচ্ছিল মাকে কড়া কোন শাস্তি দিতে৷ কিন্তু সেটা তো কোন ভাবেই সম্ভব নয়৷ তিনি যে গর্ভদারিনী। তার সাথে বেয়াদবি করাটাকেও মন সায় দিচ্ছিল না৷ যেই মাকে আদর্শ মানত সে এমন একটা কাজ করলো। মায়ের উপর কিছু বলতে না পেরে একের পর এক নিজেকে আঘাত করে যাচ্ছিলেন তিনি। সেদিন আমরা যখন হসপিটাল পৌছেছিলাম তখন আপুর কাছে পৌছানোর আগে তাকে সামলাতে হয়েছিল।

আপুর সেন্স ছিল না প্রায় দু দিন এর মতো। এর মধ্যে ঘটে গিয়েছিল আরো ভয়ানক দূর্ঘটনা। আমাদের মতো মধ্যেবিত্ত পরিবারের মানুষের কাছে সম্মান অনেক বড় একটা জিনিস। আমার বাবা অনেক কষ্টে সেই সম্মান অর্জন করেছিলেন৷ আপুর এরকম করায় তার সম্মানে ভীষণ আঘাত লেগেছিল। এলাকায় তার যেটুকু সুনাম ছিল তা যেন মুহূর্তেই ধুলিসাত হয়ে গিয়েছিল। নানান জন বাবাকে নানান কথা শোনাচ্ছিল যেগুলো কর্নপাত করা বাবার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। তিনি হার্ট এট্যাক করে বসলেন। এদিকে আম্মু আর আমি দুজনই হসপিটালে আপুর কাছে। বাবার কাছে কেউ ছিল না। না ছিল হসপিটাল নেওয়ার কেউ৷ আমরা যতক্ষনে খবর পেয়েছি ততক্ষণে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছে। বাবা আর আমাদের সাথে দুটো কথা বলার ফুসরত পান নি। তার আগেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন না ফেরার দেশে।

একটা প্রণয়কাহিনী আমাদের পুরো পরিবারকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে।

আপুর যখন সেন্স ফেরে তখন আপুর পাশে তুরফা আপু ছিল। নুরনাহার আন্টির তখন হয়ত কিছুটা অনুশোচনা হয়েছিল এজন্য তিনিও গিয়ে মাঝে মাঝে দেখে আসতেন।

বাবার লা’শ দাফনের পরে আমরা আবারও ছুটে গিয়েছিলাম ঢাকায় আপুর কাছে। এই কয়টা দিন যে কত ঝড় গিয়েছে আমাদের উপর সেটা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন। তবে তুরাগ ভাই তখন ঢাল হয়ে আমাদের মাথার উপরে ছিলেন। আমরা গেলাম। দেখা করলাম আপুর সাথে। আপু আম্মুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিল। আম্মুও বারবার আচলে চোখ মুছছিলেন। আপুর সামনে কাধলে ও তো আরো ভেঙে পড়বে। তুরফা আপুর কাছে জানতে পারলাম আপু সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও তুরাগ ভাইয়াকে সে মোটেও সহ্য করতে পারতেছে না। আমাদের প্রথম বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ কিন্তু পরে যখন তুরাগ ভাইয়া আবার কেবিনে আসে আপু চিতকার চেচামেচি করে তাকে দেখে। তুরাগ ভাইয়ার চোখে সেদিন ফুটে উঠেছিল অসহায়ত্বের ছাপ। এখানে তার কি দোষ। মিথিপু তার সাথে কেন এমন করতেছে সেটা কেউই অনুমান করতে পারছিল না।

এরপর কে’টে গিয়েছে বেশ কিছু দিন। আপুকে বাসায় নিয়ে আসার সময় হয়েছে। এর মধ্যে তুরাগ ভাইয়া আর আপুর সামনে যেত না। এসে দূর থেকে দেখে চলে যেত। আপুও আস্তে আস্তে কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেল। আপু নিজেকে নিজে সর্বধা দোষারোপ করত। তার জন্যই নাকি বাবা আজ বেঁচে নেই। আম্মু অনেক বুঝিয়েছে যে জন্ম মৃ’ত্যুর উপরে কারো হাত নেই। তার সময় ফুরিয়ে গিয়েছিল তাই আল্লাহ তাকে তার কাছে নিয়ে গিয়েছে। তাও আপু বুঝতে চাইত না।

আপুকে বাসায় নিয়ে আসার বেশ কিছু দিন পরে নুরনাহার আন্টি আর তুরফা আপু আমাদের বাসায় এসেছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত আপুর খোজ খবর নিতে এসেছে। কিন্তু পরে শুনি যে তিনি আপুকে সব সময়ের জন্য তার বাসায় নিয়ে যেতে এসেছেন। যদিও আমার আম্মুর মনে মনে ক্ষোভ ছিল নুর নাহার আন্টির জন্য কিন্তু তার এই অনুশোচনা আম্মুর মনকে কিছু টা নরম করেছিল। আম্মু বলেছিল

– আপা ওর তো দুটো পা নেই ওকে আপনার বাসায় নিয়ে গিয়ে কি করবেন।

– দেখেন আপা আজ এই দূর্ঘটনা টা তো আমার মেয়ের সাথে ও হতে পারত। তখন কি আমি ওকে ফেলে দিতাম।

নুরনাহার আন্টির এত মিষ্টি মিষ্টি কথায় আম্মু প্রায় পটে গিয়েছিল তবে যখন আপুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে যায় ও সরাসরি না করে দেয় আম্মুকে। তখন নুরনাহার আন্টি নিজে গিয়েছিল আপুকে বোঝাতে। কিন্তু আপু রাজি না হয়ে উল্টো নুরনাহার আন্টিকে জিজ্ঞেস করেছিল

– আপনার ছেলে আপনার সাথে রাগ করে আছে তাই না?

আপুর প্রশ্ন শুনে নুরনাহার আন্টির মুখ চুপসে গিয়েছিল।

– দেখেছেন আন্টি আমি ঠিকই ভেবেছিলাম। নয়ত একটা পঙ্গু মেয়েকে আপনি আপনার বউ করতে চাচ্ছেন বিষয়টা একটু হাস্যকর নয়। এখন ছেলের রাগ ভাঙাতে আমাকে বউ করবেন এরপর ছেলে ঠিক হয়ে গেলে আবার আপনার আসল রুপ বেরিয়ে আসবে।

আন্টি সেদিন চুপ করে গিয়েছিলেন। তার আসল উদ্দেশ্য এটাই ছিল ছেলেকে আবার আগের মতো করে নেয়া। তবে আপু ছিল তার কথায় অনড়। উপরওয়ালা তার ভাগ্যে যা লিখেছেন তাই হবে তবুও ওই বাসার বউ হয়ে যাবে না ও। নুরনাহার আন্টিকে আপু না করে দেয় আর আমাদের বাসায় আসতে৷ এরপর আর কখনো তিনি আসেন নি আমাদের বাসায়।

তুরাগ ভাইয়াকেও বহুবার নিষেধ করেছে আসতে তবুও আসে সে। তুরাগ ভাইয়াকে দেখলে আপু চেচামেচি করে, কথা বলে না। আপু চায় তুরাগ ভাইয়া তাকে ভুলে যাক। কিন্তু সেও নাছোড়বান্দা।

এই যে আম্মুর চাকরিটার ব্যাবস্থাও কিন্তু সে করে দিয়েছে। আপুর চিকিৎসা খরচ তাও দেয়। তবে আপু জানে না। আমরাও অনেক বুঝিয়েছি আপুকে। কিন্তু সে চায়না তুরাগ ভাইয়ের জীবন তার মতো পঙ্গু মেয়েকে বিয়ে করে নষ্ট হয়ে যাক। এক্ষেত্রে তুরাগ ভাইকে দোষ দিতে পারি না আমরা। তিনি তার সাধ্য মতো যথেষ্ট চেষ্টা করেন।

আজ তোমাকে ওদের সাথে বসতে না দিয়ে ছাদে কেন নিয়ে আসলাম জানো?

এই কথাটা জানার জন্য তো তরুর মন শুরু থেকেই ছটফট করছিল। তাই ন্যানোসেকেন্ড ও লস না করে জিজ্ঞেস করলো

– কেনো এনেছো?

– কারণ ওরা রুমকে এখন রনক্ষেত্র বানাবে। ওদের বিষয় ওদেরকেই বুঝে নিতে দিলাম। ওরা দুজন নিজেরা কথা বলে যদি সমাধান হয় তো ভালোই।

– ওহ আচ্ছা।

– আচ্ছা অনেক সময় তো হলো৷ চলো নিচে যাই। আপু হয়ত এতক্ষণে ঘুম থেকে জেগে গিয়েছে।

– হুম।

সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে তরু চিন্তা করে – এত কিছু হয়ে গেল অথচ দেখো ও কিছুই জানে না। ও কি এতটাই ছোট যে ওর আম্মু সব সময় সব কিছু থেকে ওকে দূরে দূরে রাখত। তহমিনা অবশ্য সব সময় চেয়েছে তরু যেন লেখা পড়া ছাড়া অন্য কোন দিকে মন না দেয়। কিন্তু এটা বুজতে চাইত না সবার প্রতিভা এক রকম হয় না৷ এই যেমন ছোট বেলা থেকেই তরুর ঝোক ছিল আকাআাকির প্রতি। ইচ্ছে ছিল আার্ট স্কুলে ভর্তি হবে। কিন্তু তহমিনা তাকে ভর্তি করে দিল জেনারেল লাইনে৷ আবার নাইনে ওঠার পরে জোর করে সাইন্স ধরিয়ে দিল। সারাদিন পড়ার টেবিলে আটকে রাখার চেষ্টা করল। কিন্তু ফল তো সেই শুন্য। এখন তো কোন দিকই হলো না৷ আসলে সন্তানদের যেসব বিষয়ে প্রতিভা রয়েছে সেগুলো যদি আরো একটু ভালোভাবে পরিচর্যা করা যায় তাহলে তার থেকে ভালো একটা ফলাফল পাওয়া সম্ভব৷ এটা না করে জোর করে মাথায় কিছু চাপিয়ে দিলে সেটার ফলাফল খুব একটা ভালো হয় না৷

চেচামেচির শব্দ শুনে ধ্যান ভাঙে তরুর। খেয়াল হয় এতক্ষণে ওরা মিথিলা আপুর রুমের সামনে চলে এসেছে। আর ভেতর থেকে মিথিলা আপুই তুরাগ ভাইয়ের সাথে চেচাচ্ছে। বারবার বলতেছে না করার পরেও এ বাসায় আসো কেন। আমাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না। তুরাগ ভাইয়া চুপচাপ এখনো মাথার কাছে বসে আছে। তরু অবাক হয়ে তুরাগ এর দিকে তাকিয়ে থাকে। আজ যেন অন্য এক তুরাগ ভাইকে দেখছে ও। সেদিন ভীরের মধ্যে যখন সযত্নে তরুর হাত ধরে লোকসমাগম থেকে বের করে আনছিল তখন থেকেই তরু মনে মনে অন্য কিছু ভাবছিল। ওর মনে হচ্ছিল তুরাগ হয়ত অন্য নজরে দেখে। এখন নিজের উপরই নিজে ধিক্কার জানায়। মনে মনে আওড়ায় ছি ছি তরু। এত তাড়াতাড়ি এত কিছু ভেবে ফেলা তোর ঠিক হয় নি৷ তুরাগ ভাইকে দেখ কি সুন্দর তার ভালোবাসার মানুষের পাগলামি সহ্য করে যাচ্ছে। কেউ মন থেকে ভালো না বাসলে এটা করতে পারে। তুরাগ ভাই হয়ত মামাতো বোন ভেবেই কেয়ার করেছে। আর তুই কি না। ছি।

তরুকে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিথিলা আলতো হাতে চোখ মুছে নেয়। এরপর তরুকে ভেতরে যাওয়ার জন্য ডাক দেয়। মিথিলার ডাক শুনে তরু পা বাড়ায় ভেতরের দিকে। তুরাগ বেড এর যে পাশে বসা তার অপজিট সাইডে গিয়ে দাড়ায় তরু। মিথিলা ওকে বসতে বলে। মিথিলার কথা অনুসরণ করে তরুও মিথিলার বেডের কর্নার ঘেসে বসে। তরুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় মিথিলা। তরুর বেশ পছন্দ হয় মিথিলাকে৷ কি সুন্দর হাসি৷ মিথিলা আপু দেখতেও খুব মিষ্টি।

– তুমি তরু তাই না?

মিথিলার মুখে তরু নাম শুনে একটু অবাক চোখে তাকায় তরু। মিথিলা আপুু ওর নাম কি করে জানল। এরপর তুরাগ এর দিকে তাকায়। ভাবে হয়ত তুরাগ ভাই বলেছে।

মিথিলা বিষয়টা লক্ষ্য করে বলে

– তার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। সে তোমার কথা বলে নি। আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই চিনি।

– কি বলছো আপু। কীভাবে চিনো।

– তুরফা আমাকে দেখিয়েছিল। আর কি বলেছিল জানো ওর যদি আরেকটা ভাই থাকত তাহলে নাকি তোমাকে আমার জা বানিয়ে দিত।

এই কথাটা বলে একটু জোড়েই হেসে দেয় মিথিলা। তরু লজ্জা পায় কিছু টা। তবে মিথিলার চোখের কোনে দেখা যায় জ্বল। সেসব কথা কথাই রয়ে গেল এটা ভেবে কষ্ট হয় মিথিলার। মিথিলার চোখের জল নজর এড়ায় না তরুর৷ মিথিলাকে আবার হাসাতে তরু বলে আচ্ছা মন খারাপ করো না৷ আমি যাকে বিয়ে করব না তাকে শর্ত দিয়ে নিব যে আমাকে বউ বানানোর আগে তার তুরাগ ভাইয়াকে ভাই বানাতে হবে৷ আপন ভাই না হলেও আমরা আপন জা এর মতো থাকবনে কেমন৷

তরুর কথা শুনে জোর করে মুখে হাসির রেখা টানে মিথিলা। ও তো তুরাগকে কখনোই বিয়ে করবে না। তুরাগ এর যে এখনো অনেক পথ চলা বাকি৷ ওর জীবন তুরাগ এর জীবনের সাথে জড়িয়ে তুরাগ এর জীবন নষ্ট ও কোন ভাবেই করতে চায় না।

মিথিলা মোহনাকে ডেকে বলে তরুকে নাস্তা দেয়ার জন্য। মোহনা কাল বিলম্ব না করে চলে যায় সেখান থেকে৷ মোহনা কাজে খুব চটপটে একটা মেয়ে। অল্প কিছু সময়ের ভেতরেই আবার চায়ের ট্রে আর বিস্কুট, চানাচুর এসব নিয়ে আসে সেখানে। মোহনা নিজেই তরুর হাতে চায়ের কাপ তুলে দেয়। তুরাগ কে দিতে গেলে সে জানায় খাবে না। মিথিলাকে জিজ্ঞেস করে আপু তোমাকে দেই?
মিথিলাও নাকোচ করে দেয়। তরু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এদের কান্ড দেখে।

মোহনা আস্তে তুরাগ এর কানের কাছে গিয়ে কিছু বলে৷ কি বলছে সেটা ঠিক অনুমান করতে পারে না তরু। তবে মোহনার কথা শুনেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায় তুরাগ। অসহায় চোখে একবার তাকায় মিথিলার দিকে। এরপর তরুকে তাড়া দেয় ওঠার জন্য। বলে

– চা তাড়াতাড়ি শেষ করো। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় পৌঁছাতে হবে তো।

তুরাগ এর দিকে একবার তাকিয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয় মিথিলা। মুখ চেপে চাপা কান্না কাধছে মিথিলা। তুরাগ অপজিট সাইডে থাকলেও এপাশে থাকা তরুর সেটা বুজতে বেগ পেতে হয় না। চায়ের কাপ রেখে উঠে দাড়ায় তরু। মিথিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নিচু কন্ঠে বলে – আজ আসি আপু। তবে আবার আসব। সেদিন কিন্তু অনেক সময় নিয়ে আসব। তোমার সাথে গল্প করতে।

কিছু সময় আগেও তুরাগকে মিথিলার মাথায় হাত বুলাতে দেখে কষ্ট হচ্ছিল তরুর। আর এখন নিজেই আদরের সহিত হাত বুলাচ্ছে। কি অদ্ভুত তাই না।

তুরাগ আর পেছন ঘুরে না তাকিয়ে বেড়িয়ে যায়। পেছন পেছন বের হয় তরুও। গাড়িতে উঠে বাহিরের দিকে নজর দেয় তরু। তুরাগ মনযোগ দেয় ড্রাইভিং এ। কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। তার মধ্যে এলোপাতাড়ি ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে তুরাগ। এই মুহুর্তে সেসব কোন দিকেই নজর নেই তরুর। সে বাহিরে তাকিয়ে বৃষ্টি বিলাসে ব্যাস্ত। হুট করে ব্রেক কষে তুরাগ। এত স্পিডে চলন্ত গাড়িটা হুট করে ব্রেক কষায় তাল সামলাতে পারে না তরু। মাথা গিয়ে বাড়ি সামনে। মুহুর্তেই রক্তপাত শুরু হয় সেখান থেক। তুরাগ তাকিয়ে দেখে মেয়েটা সিটবেল্ট না বেধেই বসে ছিল গাড়িতে। তুরাগ নিজের হাত দিয়েই ঘুষি মা’রে স্টিয়ারিং এ৷ মুখ থেকে ধ্বনিত হয় – ওহ৷ সিট। নিজেকে এখন বড্ড বোকা মনে হচ্ছে। তারই খেয়াল করা উচিত ছিল মেয়েটা যে সিটবেল্ট বাধে নি। গোঙানির শব্দ কানে আসতেই হুশ ফেরে তুরাগ এর।

#চলবে