ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব-১৭+১৮

0
257

#ভালোবাসার_বর্ষণ
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৭

বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। চারদিকে শুনশান অবস্থা। আশপাশে আর একটা গাড়ি ও দেখা যাচ্ছে না। না কোন মানুষ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝল এখন ঘোর সন্ধ্যা। এই মুহুর্তে এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে যেখানে কোন হসপিটাল ও পাওয়া সম্ভব নয়। এদিকে তরুর মাথার রক্ত দেখে বেশ ভয়ে যায় তুরাগ। চোখের সামনে বারবার সেদিন মিথিলার রক্তাক্ত মুখশ্রীর কথা মনে পড়ে। হঠাৎ খেয়াল হয় ফাস্ট এইড বক্স গাড়িতেই রয়েছে। দ্রুত হাতে সেটা তুলে নেয় তুরাগ। ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। তরুর তো মাথা ঝিম ঝিম করছে এখনো। পানির বোতল এগিয়ে দেয় তুরাগ। পানি পান করে শান্ত হতে বলে। কাপাকাপা হাতে পানির বোতল হাতে তুলে নেয়। এসিটা এতক্ষণ অফ করা ছিল। কাচ সামান্য নামানো ছিল। তরু বৃষ্টি দেখবে বলছিল। এজন্যই খোলা রেখেছিল। তা দিয়ে পানির ঝাপটা এসে অবশ্য তরুর এক সাইড ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। কাচ তুলে দিল তুরাগ। এসি টা অন করে দিল। তরুকে রিলাক্স করতে বলে নিজে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল। এই ঝুম বৃষ্টিতে কোথায় যাচ্ছে লোকটা। একদম ভিজে যাবে তো। তরু ভাবল একবার জানতে চাইবে যে কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কথা বলতে মন চাইল না তাই চুপ করেই রইল।

তুরাগ বাহিরে চলে গেছে বেশ অনেকক্ষণ হতে চলল। ধরনীতে দিনের আলো নিভে অন্ধকার নেমে এসেছে। এই মুহুর্তে ভয় ভয় লাগতে শুরু করে তরুর। এরকম অচেনা একটা জায়গায়। যতই তুরাগ ভাই পাশে থাকুক। তবুও ভয় হচ্ছে। তুরাগ ভাই নিজেও একটা ভয়ের কারণ। তহমিনা তরুকে শিখিয়েছে পুরুষ মানুষ থেকে দূরে থাকার জন্য। হোক সে বন্ধু বা কাজিন। আমাদের সমাজ এখন এগুলো খুব স্বাভাবিক ভাবে নিলেও পুরুষ মানুষ এর মন পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। তার উপর আশ পাশে কোন কিছু ই চেনা নেই তরুর৷ তুরাগকেই কতটুকু চিনে ও। ভয়ে ভয়ে আরো কয়েক মিনিট কে’টে গেল। তখনো তুরাগ এর ফেরার নাম নেই। এবার মনে হচ্ছে তরুর বেড়িয়ে দেখা উচিত। কোন বিপদ হলো না তো। মন বারবার উল্টা পাল্টা ভাবছিল। মনের সাথে যুদ্ধ করে না পেরে অবশেষে নিজেও বেরিয়ে পড়ল গাড়ি থেকে। চারদিকে অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এদিকে পানির বড় বড় ফোটা এসে শরীর ছুয়ে দিচ্ছে। আবার গাড়িতে ঢুকে পড়ল তরু। গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে দিল। তার আলোয় দেখা গেল তুরাগকে। গাড়ি থেকে কিছু টা সামনেই রাস্তার উপর সোজা হয়ে শুয়ে আছে সে। তরু ভয় পেল যদি কোন গাড়ি চলে আসে। আবার গাড়ি থেকে নেমে গেল সে। পা বাড়াল তুরাগ যেখানে শুয়ে আছে সেই স্থান এর উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে দেখতে পেল আকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সে। চোখ গুলো ভীষণ লাল হয়ে আছে। মনে হয় কেধেছে৷ তবে চোখের পানি বৃষ্টির পানির সাথে মিলিয়ে গিয়েছে।

– তুরাগ ভাই আপনি এভাবে মাঝখানে শুয়ে আছেন কোন গাড়ি চলে আসে যদি।

– আসবে না মিস তরুলতা। এই সময় এই রাস্তায় কোন গাড়ি আসে না।

– হোক তবুও। আমার মনে হচ্ছে আমাদের ফেরা উচিত। ফুপি চিন্তা করতেছে।

– বসুন না মিস তরুলতা। বৃষ্টিকে উপভোগ করুন৷ এরকম খোলা আকাশের নিচে ভিজতে আসলেই অনেক আনন্দ আছে।

– হ্যা ফাটা মাথা নিয়ে এখন আমি বৃষ্টি বিলাস করি।

তরুর কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে তুরাগ। ওর তো খেয়াল ই ছিল না যে তরু মাথার ব্যান্ডেজ নিয়ে ভিজতেছে। তুরাগ উঠে দাড়ালো সেখান থেকে। হাটা ধরল গাড়ির দিকে। তরুকে তাড়া দিল উঠে আসার জন্য। তরুর বিনাবাক্য ব্যয়ে গাড়িতে উঠে বসল। এবার তুরাগকে বেশ ঠান্ডা মনে হচ্ছে। হয়ত বৃষ্টির সাথে কষ্টগুলোকে ভাগ করে এলেন। গাড়িতে এসে ফাস্ট এইড বক্স তরুর হাতে ধরিয়ে দিল। আর বলল

– মিস তরুলতা নিজের ব্যান্ডেজ নিজে করে নেন। এটা নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার শাস্তি এটা।

তরু ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে সেটার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইল। ও কি করে নিজের মাথায় নিজে ব্যান্ডেজ করবে সেটাই তো বুজছে না। তাই এড়াতে বলল

– তুরাগ ভাই মাথা সামান্য কে’টেছে। ফাটে তো নি। ব্যান্ডেজ করতে হবে না।

তুরাগ এর ধমক শুনে দমে গেলো তরু। তুরাগ নিজেই নিয়ে এবারও ব্যান্ডেজ করে দিল। ফাস্ট এইড বক্স রেখে ড্রাইভিং এ মনযোগ দিল তুরাগ৷

এদিকে তরু মনে মনে ভাবছে এদের দুজনের জন্য কিছু তো একটা করা উচিত। তবে কি করতে পারে ও। আচ্ছা মিথিপুকে যদি ফুপির বাসায় নিয়ে আসা যায় তাহলে বিষয়টা কেমন হয়। তবে তুরাগ কে এই মুহুর্তে এসব নিয়ে কি বলবে তরু সেটাই বুজতে পারতেছে না৷ বেশ কিছু সময় নিরবতার পরে তরু জানতে চাইল

– আচ্ছা তুরাগ ভাই আমি তো আপনার ছোট। তবে আপনি আমাকে সব সময় আপনি করে বলেন কেন।

– আপনাকে সম্মান করি মিস তরুলতা তাই।

– সম্মান…..

– অবশ্যই। আপনি একজন স্ট্রং মনের অধিকারিনী। এতটুকু সম্মান তো দেয়াই যায়। আপনি যে পরিস্থিতে পড়েছিলেন ওরকম একটা পরিস্থিতিতে অনেক মেয়েরাই ভেঙে পড়ে। তবে আপনি শক্ত মনের পরিচয় দিয়েছেন। সেজন্য একটু সম্মান তো পেতেই পারেন।

তরু মনে মনে ভাবল কি আর হলো কি। ওর ইচ্ছে ছিল এই প্রশ্নটা দিয়ে শুরু করে মিথিপুর টপিকটা আনবে। দমে গেলো না তরু। আবার জিজ্ঞেস করলো

– আচ্ছা তুরাগ ভাই আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি?

– আর একটাই কিন্তু। এর চেয়ে একটা বেশি কথা বললেও কিন্তু আর উত্তর দিব না।

– আচ্ছা মিথি আপুকে যদি সাইয়্যিদ ভিলায় নিয়ে আসা হয় তবে কি আপনার সব কষ্ট দূর হবে।

তরুর কথায় আবারও ব্রেক কষল তুরাগ। চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তরুর দিকে। মনে মনে বলল আরে আমি এত বছরেই সোজা করতে পারি নাই মিথুরে আর তোম্রা তো নিউ প্লেয়ার।

– আচ্ছা তরুলতা আপনার মাথায় হঠাৎ এই কথা?

– আপনাদের ব্যাপারে সবটাই শুনলাম৷ আমার মনে হয় মিথিলা আপুকে নিয়ে আসলেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

– সে আসবে না। আসার হলে অনেক আগেই আসত।

– আচ্ছা শেষ চেষ্টা করতে তো কোনো সমস্যা নেই।

– হুুম দেখা যাক৷ যদি পারো তাইলে তো ভালোই।

– হুম।




বাসায় আসতে আসতে রাত প্রায় দশটা বেঝে যায়। দুজনের ভেজা কাপড় শরীরেই শুকিয়ে গেছে। দরজার কলিং বেল দিল তরু। এতক্ষণ বেশ চিন্তায় ছিলেন নুর নাহার। কলিং বেল এর শব্দ পেতেই দৌড়ে গেলেন দরজা খুলতে। দরজা খুলেতে খুলতে প্রস্তুতি নিলেন কিছু বলার জন্য। কিন্তু তরুর মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে যা বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন তা গলার কাছে এনেই গিলে নিলেন। কি হয়েছে জানার জন্য ব্যাস্ত হয়ে গেলেন। তরু এতবার বলল যে কিছু হয় নি তবুও তিনি না শুনে ছাড়বেন না৷

– আরে ফুপি ভেতরে তো ঢুকতে দাও।

দরজা থেকে সরে দাড়ালেন নুর নাহার। তবে তিনি আবার তরুর পেছন পেছন হাটা ধরলেন। এদিকে তুরাগ নিজের রুমে চলে গেল। এখন ফ্রেশ হওয়া অত্যান্ত জরুরি।

এদিকে তরুর শুরু হয়ে গেছে হাচি। হাচি দিতে দিতে নাক মুখ লাল বর্ন ধারণ করেছে। নুর নাহার এবার ঘাবড়ে যান। তরুর অসুস্থ হওয়ার থেকেও বড় কথা নুরুল ইসলাম তাকে কথা শোনাতে ছাড়বেন না৷ তরুকে ধরে ওর রুমে নিয়ে আসে। এদিকে তরুর শরীর একটু একটু করে খারাপ হতে থাকে।

রাত্রবেলা গা কাপিয়ে জ্বর আসে তরুর। নুর নাহার এর আজ আর ঘুম আসে না। তিনি বসে থাকেন ভাতিজির মাথার কাছে। একটু চোখ লেগে আসছিল। এমন সময় তরুর ফুপি ফুপি বলা শুনে ঘুম ছুটে পালালো৷ জ্বরের ঘোরেই হাত দিয়ে ফুপির হাতটা ধরল।

– কি হলো মামনি কিছু বলবে?

– ফুপি একটা কথা রাখবে?

– হ্যা বলো। অবশ্যই রাখব।

– চলো না আমরা সবাই মিলে গিয়ে মিথিলা আপুকে নিয়ে আসি। তুমি তাকে স্যরি বলবা৷ পারবা না।

জ্বরের ঘোরে নাকি মানুষ আবোল তাবোল বকে। তবে তরু এসব কি বলছে।

#চলবে

#ভালোবাসার_বর্ষণ
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৮

সন্তান অসুস্থ হলে মা যেমন পাশে বসে সারা রাত সেবা করে তেমনি সারাটা রাত জেগে পাশে বসে সেবা করে গেছেন নুর নাহার। মাথায় জলপট্টি দিয়েছেন। স্যুপ করে এনে খায়িয়েছেন।

সকালের মিষ্টি রোধ জানালার ফাক গলিয়ে তরুর চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল তরুর। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই পাশে নুরনাহারকে দেখতে পেলেন। জলপট্টি দিয়ে খাটের পাশেই মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলেন নুরনাহার। সেখানেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। অবাক হয় তরু। কত সরল দেখাচ্ছে মুখখানা। এই মুহুর্তে তরুর যেন সব অবিশ্বাস্য লাগছে। কাল মোহনার বলা নুরনাহার এর সাথে এই নুরনাহার এর যেন কোন মিল নেই। ছোট থেকে ফুপুদের আসা যাওয়া একটু কম ছিল বাড়িতে। তবে যখন আসত খুব আদর করত তরুকে। অথচ কাল মোহনার ভাষায় তাকে অহংকারী বলা হলো। সব গোলমেলে লাগে তরুর। আবার মনে হয় হয়ত সেই এক্সিডেন্ট এর পরেই কিছুটা নরম হয়েছেন। কি জানি৷

– কি ব্যাপার এভাবে এক ধ্যানে তাকিয়ে কি দেখছো মামনি?

নুর নাহার এর কন্ঠ কানে যেতেই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায় তরু। এতক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল। নুরনাহার নেমে দাড়ায় বেড ছেড়ে। এদিক ঘুরে এগিয়ে আসে তরুর সামনে। হাত রাখে তরুর কপালে। জ্বর আছে কিনা অনুমান করার চেষ্টা করে। জ্বর কমে গেছে অনেকটা। হাপ ছেড়ে বাচলেন নুরনাহার। জবাবদিহি বিষয়টা তার মোটেই ভালো লাগে না।

– তোমার জ্বর তো কমে গেছে। কিছু খাবে? নুডলস করে দেই?

– আরে ব্যাস্ত হইও না ফুপি। আর আমার ভার্সিটির এডমিশন ডেট কিন্তু সামনেই।

– আচ্ছা আমি দেখবো। এখন কিছু তো খাবে। সারারাত জ্বর ছিল। এখন ক্লান্ত লাগছে নিশ্চয়ই। তুমি ফ্রেশ হও।

তরু বেড থেকে নামতে না নামতেই কলিং বেল বাজার শব্দ পাওয়া যায়।

– এই সকালে কে আসল ফুপি?

– কি জানি। তুমি ফ্রেশ হও আমি দেখছি।

তরুকে সেখানে রেখেই বেরিয়ে যান তিনি। তবে তরুর কৌতুহল হয় জানার। তাই ফ্রেশ না হয়ে উপর থেকে উকি দেয় দেখার জন্য কে এসেছে?

সেই মুহুর্তে সেখান থেকে তুরাগ যাচ্ছিল নিচের দিকে। তরুকে এভাবে উকি ঝুঁকি দিতে দেখে জিজ্ঞেস করে – কি মিস তরুলতা এভাবে উকি ঝুঁকি দিয়ে কি দেখছেন? আমাদের বাসায় চু’রি করার ধান্দা আছে নাকি?

সকাল সকালই মেজাজ খারাপ করে দিল। আস্ত একটা খবিশ। তবে এই মুহুর্তে তার সাথে তর্ক করার মোটেও ইচ্ছে নেই তরুর। তাই বলল নিচে কে এসেছে দেখতে এসেছি।

– ওহ চলুন আমিও দেখি।

এরপর দুজনেই নিচের দিকে তাকায় দেখার জন্য। নিচে একটা মেয়ে এসেছে। মুখে মাস্ক পড়া। তরু চিনতে পারে না। তখনই মাথায় একটা গাট্টা মে’রে তুরাগ বলে – আপনার সাথে বাদরামি করার জন্য আরেক বাদর চলে এসেছে।

– কিহহ।

– বাদর নাম্বার ২।

– তুরফা…

– হুম।

তরু আর কিছু না ভেবে ছুট লাগায় নিচের দিকে। পেছন থেকে চুলের বিনুনি টেনে ধরে তুরাগ।

চুলে অনেক ব্যাথা লাগে তরুর। এবার মেজাজটা বেশিই খারাপ হয়।

– কি সমস্যা কি আপনার।

– আরে এমন হনুমান এর মতো নিচে যাচ্ছেন কেন? মুখ তেলতেলে হয়ে গেছে, চোখে ময়লা। ওয়াক। যান ফ্রেশ হয়ে তারপর নিচে যাবেন।

মুখ থমথমে হয় তরুর। ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করে নি চোখের দিকে। আর ঘুমুলে মুখটা একটু তেলতেলে হয়ে যায়। এজন্য এভাবে ওয়াক করার কি আছে। কথায় বলে না যার জন্য করি চু’রি সেই বলে চোর। এই লোকের গার্লফ্রেন্ডকে আনার প্লান করতাছে ও আর এই লোক ওকে অপমান করার কোন উপায় যেন ছাড়তে চায় না।

সামনে এগিয়ে চুলের বিনুনি টেনে ছাড়িয়ে নিল তরু। এরপর পেছন ঘুরে নিজের রুমে ঢুকে তুরাগ এর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে নিল।

আহাম্মক হয়ে দাড়িয়ে রইল তুরাগ। ও তো এভাবে বলেছিল তরুকে ক্ষেপানোর জন্য। তবে তরুর এভাবে চুপচাপ চলে যাওয়াটা ঠিক লাগল না তুরাগ এর। তবে কি মেয়েটা কষ্ট পেল। যাই হোক পরে দেখা যাবে নে।

নিচের দিকে পা বাড়ায় তুরাগ। আজ তাড়াতাড়িই বেরুবে। এদিকে নির্বাচন চলে এসেছে। পার্টি অফিসে যেতেই হবে আজকে। নয়ত কালাম ভাই ভীষণ ক্ষেপে যাবেন। আগে এখান থেকে তুরফার সাথে দেখা করেই বেড়িয়ে যাবে তুরাগ।


কেমন আছো ভাইয়া?

সিড়ি বেয়ে তুরাগকে নামতে দেখেই কথাটা জিজ্ঞেস করলে তুরফা৷ ও তো উপরেই যাচ্ছিল তুরাগ এর সাথে দেখা করতে। মাঝপথে ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়ায় আবার উল্টো ঘুরে ভাইয়ের সাথেই নিচে নেমে এলো তুরফা। তুরাগ তুরফার কথার জবাব দিয়েই জানতে চাইল

– তা এই সকাল সকাল কোত্থেকে টপকালি তুই?

– আমার এক্সাম শেষ। কালকেই শেষ হয়েছে। পাচটায় এক্সাম শেষ হয়েছে। বাসায় লাগেজ গোছানো ছিল। বাসায় গিয়ে ফাইল পত্র গুছিয়ে রেখে তখনই রওনা দিয়েছি। নাইট কোচে ঢাকায়। আর এখন তোদের বাড়িতে টপকাইছি।

– এ বাসাটা মনে হয় তোর না?

– অবশ্যই না। ভার্সিটি এডমিশন এর পরই তো এটা পর হয়ে গেছে। ভার্সিটি শেষ করে শ্বশুর বাড়ি যাব। তোদের বাসায় আর থাকব না হুহ।

– হুহ বুজেছি। দাড়া বাসায় এসে আম্মুকে বলতেছি। তোর যে নতুন বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে সেটা জানাতে হবে না।

– ভাইয়াআআআআ

– আমার পার্টি অফিসে যেতে হবে। আসছি আমি। বাসায় আরেকটা বাদর আছে। চুল টেনে দিয়েছি বলে চটেছে বোধ হয়। দেখ গিয়ে।

– কে ভাইয়া।

– বাদড়ে বাদড়ে মাসতুতো ভাই তাই না। যা তোর মাসতুতো ভাইকে খোজ।

তুরাগ আর কথা না বলে বেড়িয়ে গেল।

তুরাগ বেড়িয়ে যেতেই ফিক করে হেসে দিল তুরফা। তার ভাইয়ের যত কাজের চাপ থাক, যত সমস্যা থাক তার সামনে কখনো তা প্রকাশ করে না। তার সাথে সর্বধা খুনসুটি করেন। ভালোই লাগে ভাইয়ের এই ভালোবাসা।

কে এসেছে সেটা দেখা জরুরি। সোফা থেকে উঠে দাড়ায় তুরফা। পা টিপে টিপে কিচেন এর সামনে যায়।

– ভেতরে আয়। এখনো কি বাচ্চা নাকি এমন পা টিপে হাটছিস কেন।

– ওফফ আম্মু তোমাকে দেখতে কে বলেছে। আচ্ছা কে এসেছে আমাদের বাসায়?

– তরু এসেছে।

– কিহহ। তুমি আগে বলবে না। ছোট পুতুল আমাদের বাসায় আসছে।

– ঢং বাদ দে। তরু এখন অনেক বড়। ভার্সিটি এডমিশন নিবে ও।

– যাই হোক। আমি দেখে আসি।

উপরে এসে খুজে বের করল তরুর রুম। কিন্তু ভেতর থেকে বন্ধ দেখে অবাক লাগল তুরফার। দরজা বন্ধ করে আছে কেন। আজব। আস্তে আস্তে দরজায় ধাক্কা দেয় তুরফা। অল্প সময় ব্যাবধানে দরজা খুলে দেয় তরু। সামনে তরুকে দেখে হালকা করে জড়িয়ে ধরে তুরফা। এতক্ষণের মন খারাপ যেন মুহুর্তেই ভালো হয়ে গেলো তরুর।

– অনেক দিন পর দেখলাম পিচ্চি। কেমন আছিস বল?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?

– আলহামদুলিল্লাহ।

– এত দিন পর দেখবা না। যাও আমাদের বাসায়।

– হুম তা ঠিক। অনেক দিন যাওয়া হয় না৷ বুঝিস ই তো স্টাডি নিয়ে ব্যাস্ত।

– হুম বুঝি বুঝি। তোমরা বড়লোক মানুষ। গরিব ুর বাড়ি কেন যাবা৷

– এই পা’গলি কি বলছিস তুই এসব।

– ঠিকই তো বলছি। তোমাদের এই টাকা পয়সাই তো আজ একটা মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে তুরফা আপু।

তরুর মুখে এসব শুনে চোখ বড়বড় হয়ে যায় তুরফার। তরু এসব কীভাবে জানল। তরুকে জিজ্ঞেস করে

– তুই কি মিথির কথা বলছিস।

– হুম।

– তার কথা কীভাবে জানিস?

– আমি তুরাগ ভাইয়ার সাথে মিথিলা আপুর বাসায় গিয়েছিলাম।

তুরফা বুঝে না কি হচ্ছে এখানে। ওর যে মিথিলার সাথে যোগাযোগ হয় না এমন নয়। ফোনে কথা হয়। সেই আগের ন্যায় বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে। তবে তুরাগকে সব ধরনের কথা এড়িয়ে যায় মিথিলা। তুরাগ ভাইয়া এখনো মিথিলার বাসায় যায় এটা মিথিলা তুরফাকে কখনো বলেনি তাই মনঃক্ষুণ্ন হয় তুরফা।

আচ্ছা তরু আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। এ ব্যাপারে পরে কথা বলব। পুরো রাত জেগে ছিলাম ঘুম আসছে অনেক। বেড়িয়ে যায় তুরফা।

সেখানেই দাড়িয়ে থাকে তরু। সবাই এভাবে এড়িয়ে যায় কেন। কাল রাতে জ্বর ছিল ঠিকই। তবে হুশে ছিল তরু৷ আর জ্বরের ঘোরে কথা বলার অভ্যাস নেই তরুর৷ ইচ্ছে করেই ফুপিকে বলেছিল মিথিলা আপুকে এ বাসায় আনার জন্য। তবে তিনি এড়িয়ে গেছেন। এখন আবাট তুরফাও ঘুমের কথা বলে চলে গেল। তাহলে কেউ কি চায় না মিথিলা ফিরে আসুক। এটার কারণ কি আপু হাটতে পারে না এটা। তারা কি বোঝা এড়িয়ে যওয়ার প্রচেষ্টা করতেছে। তারা যদি এমনটা ভেবেও থাকে তবে তা হতে দিবে না তরু।

#চলবে