#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৪
দুইপক্ষ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একসাড়িতে নূর,আলিশা, আলিফা আর মিম।আরেক সাড়িতে আফরান,নিবিড়,আরিফ আর মেরাজ।
আলিফা কোমড়ে হাত রেখে বললো,
–” চলুন আগে আপনারা শুরু করেন।তারপর আমরা।”
–” হাহ্! আমরাই জিতবো এর কোন হেরফের হবে নাহ।”
–” দেখা যাবে দেখা যাবে।”
নূর ভাব নিয়ে বলে,
–” কি ভয় পেয়ে গেলেন না-কি।”
আফরান বাঁকা হাসলো।বললো,
–” আমরা ভয় পাই না ওকে।”
–” আচ্ছা তাহলে শুরু করুন।”
মেয়েরা সরে গেলো।ছেলেরা সবাই স্টেজে উঠলো।
মেরাজ জোড়ে বললো,
‘মিউজিক!’
সাথে সাথে গান বাজতে শুরু করলো।আর ছেলেরা গানের তালে তালে নাচঁতে লাগলো।
আসলে গানটা বাজছে BTS এর Dynamite গান।গানটা শুনতেই সাদু খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো।এইবার আর ওকে কে পায় এক ছুটে চলে গেলো স্টেজে।ওকে স্টেজে উঠতে দেখে সবাই সিটি বাজালো।দুপাশে দু জন আর সাদু মাঝখানে।
Cause I-I-I’m in the stars tonight
So watch me bring the fire and set the night alight
Shoes on, get up in the morn’
Cup of milk, let’s rock and roll
King Kong, kick the drum, rolling on like a Rolling Stone
Sing song when I’m walking home
Jump up to the top, LeBron
Ding dong, call me on my phone
Ice tea and a game of ping pong, huh
This is getting heavy
Can
you hear the bass boom? I’m ready (woo hoo)
Life is sweet as honey
Yeah, this beat cha-ching like money, huh
Disco overload, I’m into that, I’m good to go
I’m diamond, you know I glow up
Hey, so let’s go
[বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন]
ওরা পাঁচজন অনেক সুন্দরভাবে নাঁচ শেষ করলো
সাদু যতোক্ষন নাঁচছিলো মনির ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো।মেয়েটা কতোটা খুশি। ওকে এতোটা খুশি দেখে মনিরের মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেলো।
সাদু খুশির চোটে লাফাচ্ছে,
–“ওয়াও! ওয়াও! আমার ফেভারিট গানে আমি নেচেছি। আর তাও আমার বাগদানে।”
নূর মুখ ফুলিয়ে বললো,
–” সাদ্দুনির বাচ্চা তুই এটা কি করলি?”
মিম রাগি গলায় বলে,
–” একদম ঠিক করলি না।”
সাদু অসহায়ভাবে বললো,
–” আমি কি করবো আমার ফেভারিট হান বাজছিলো আর আমি না নেঁচে পারি।”
আলিফা সাদুর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,
–” বান্দর মাইয়া! মন চাইতেছে তোরে লাইত্থাইয়া উগান্ডায় ট্রান্সফার করতে।”
–” ঠুন্ডা কাইছা দিয়া বাইরামু আমি তোরে।” সাদুও বললো।
–” তো এখন বলো আমরা না-কি নাঁচ পারি না।”আফরান ভাব নিয়ে বলে।
নূর ভেংচি কেটে বলে,
–” এই ছাগল মার্কা ভাব আমার সামনে করবেন না।আর কচুর মতো নেচেছেন।আমরা এর থেকেও স্পেশালভাবে নাঁচবো।”
আরিফ সানগ্লাস পরে বললো,
–” ওগো মোর প্রিয় আলু।তুমি পারবে না আমার সাথে।এর থেকে ভালো আসো আমরা চিপায় গিয়ে রোমান্স করি।”
আলিফা রাগে কটমট করে তাকালো আরিফের দিকে।তারপর ধুপধাপ পা ফেলে আরিফের কাছে এসে ওর পায়ে ধরাম করে একটা পারা দিয়ে দিলো।
তারপর বলে,
–” এইসব লুইচ্চা মার্কা কথা বললে পরবর্তিতে আমার কাছ থেকেই এটাই পাবেন।লজ্জা শরম নাই।বেহায়া লোক এতোগুলো মানুষের সামনে উনার রোমান্স এর ভুত চাপসে।এইবার করেন বেশি করে রোমান্স।”
আরিফ পা ধরে লাফাচ্ছে আর ‘ উহহ মাগো ‘ বলে ব্যাথাতুর আওয়াজ করছে।এদিকে আলিশা অনেক্ষন ধরে সুযোগ খুজছিলো নিবিড়ের সাথে কথা বলার।এই ফাকে সে দেখলো সবাই ঝগরা বা কথাকাটা করছে।
ওদের ঝগরার মাজেই সুযোগ বুজে আলিশা নিবিড়ের হাত টেনে একটা খালি রুমে নিয়ে আসলো।
নিবিড় এতোক্ষন কিছু বলতে পারিনি।কারন চিল্লাপাল্লা করলে মানুষ খারাপ ভাববে বাড়ি ভরা মানুষ।তাই সেও চুপচাপ আলিশার সাথে রুমে আসলো।রুমে আসতেই নিবিড় হাত ঝটকা মেরে ছুটিয়ে নিলো।আলিশা মলিন চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।ওর চোখে জল টলমল করছে।নিবিড় চোখ ঘুরিয়ে নিলো।এই মানুষটার চোখে জল ও সয্য করতে পারে না।নিবিড় অন্যদিকে ঘুরে থেকেই বলে,
–” কি হয়েছে আমাকে এখানে কেন আনলে?”
আলিশা চুপ করে রইলো।আসলে ও কথা বলতে চাইছে কিন্তু ওর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।প্রচন্ড ব্যাথা করছে কন্ঠস্বরটা।
পাশের টেবিল থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে খেয়ে নিলো আলিশা।আলিশাকে কোন কথা বলতে না দেখে নিবিড় আবারও বলে,
–” কিছু বলার হলে বলো নাহলে আমি চলে যাচ্ছি।”
নিবিড় চলে যেতে নিতেই আলিশা দ্রুত পায়ে গিয়ে নিবিড়ের হাত চেপে ধরে।নিবিড় পিছনে তাকাতেই আলিশা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বলে,
–” আমি আসলে.. আসলে।।”
–” যা বলার জলদি বলো বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে তাছাড়া তোমাকে আর আমাকে এমন একলা রুমে দেখলে মানুষ খারাপ ভাব্বে বুজতেই পারছো।”
নিবিড়ের কথায় এইবার আলিশা ঠোঁট ফুলিয়ে নিশব্দে কেঁদে উঠে।
আলিশাকে এইভাবে হঠাৎ এমন কাঁদতে দেখে ভড়কে যায় নিবিড়।দ্রুত আলিশার সামনে গিয়ে ওর গালে স্পর্শ করতে গিয়েও থেমে যায় নিবিড়।
কিছুটা নরম কন্ঠে বলে,
–” কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন?”
আলিশা কেঁদেই যাচ্ছে।আলিশা সহজে কাঁদে না।যে মেয়েটা বিপদ আসলে অন্যদের সামলায় আজ সে এতোটা কাঁদছে।ব্যাপারটা কেমন যেন লাগলো নিবিড়ের কাছে।আচ্ছা ও কাঁদছে কেন?নিবিড় তো কিছুই করেনি যে ওর কারনে আলিশা কাঁদবে।তবে কেন?
নিবিড় আবারও বললো,
–” প্লিজ বলো কেন কাঁদছো?”
আলিশা অনেক চেষ্টা করেও নিজের কান্না থামার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।এইবার নিবিড় সাত-পাঁচ না ভেবে আলিশাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।কেইবা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে কাঁদতে দেখতে পারে।কেউ পারে না।নিবিড় সযত্নে আলিশার চোখের পানি মুছে দিলো।তারপর ধীরে বললো,
–” হুঁশ কাদে না।আর কাদে না।কেন কাঁদছো?আমাকে বলো?আমাকে না বললে আমি বুজবো কিভাবে?”
আলিশা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে বলে,
–” আপনি আমার সাথে গত এক সপ্তাহ ধরে কথা কেন বলছেন না?আমাকে ইগনোর কেন করছেন?”
নিবিড় অবাক হলো আলিশার কথায়।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
–” সেটা তো পিকুর বাগদানের জন্যে কাজ ছিলো তাই ব্যস্ত ছিলাম।এই জন্যে কাঁদা লাগে।”
আলিশা দু-পাশে মাথা নাড়ালো।তারপর বলে,
–” আমার না আপনি যদি আমাকে ইগনোর করেন তো আমার না অনেক কষ্ট হয়।এইযে বুকের বা-পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়।তখন কান্না পায় ভীষন কান্না পায়।কেন পায় আপনি জানেন?”
নিবিড় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।কি করবে না করবে কিছুই ওর মাথায় আসছে না।এই মাত্র আলিশা কি বললো সেটা ওর বিশ্বাস হচ্ছে না।ওরও তো এমন লাগতো।ও ভালোবাসে তাই এমন লাগে।তবে কি আলিশাও ওকে ভালোবাসে।কথাটা চিন্তা করেই নিবিড়ের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ও আলিশাকে আর একটু শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। তারপর ধীরে বললো,
–” আমারও তো এমন লাগে আলিশা।”
আলিশা নিবিড়কে ছেড়ে দিয়ে বললো,
–” আপনারও এমন লাগে?”
–” হ্যা!”
–” কেন এমন লাগে?”
নিবিড় মুচকি হেসে বললো,
–” ভালোবাসি আমি তোমাকে তাই।”
আলিশা বোকাসোকা চোখে তাকিয়ে রইলো।নিবিড় এই মাত্র কি বললো সেই কথাটা মস্তিষ্কে আওড়ালো।তারপর বড় বড় চোখ করে নিবিড়ের দিকে তাকালো।
নিবিড় হেসে দিলো ওর এমন এক্সপ্রেসন দেখে।
কে বলবে যে মেয়েটা অন্যকে ভালোবাসার মানে এতো সুন্দর করে বুজায় আর এখন নিজের বেলায় কিছুই বুজতে পারছে না।
–” তুমিও আমায় ভালোবাসো।তাই ঠিক আমার মতো অনুভুতি হচ্ছে তোমার মাজে।”
–” সত্যি। ”
–” হ্যা!”
–” ওহ আচ্ছা!”
–” এইবার তাহলে আই লাভ ইউ বলো।”
আলিশা দূরে সরে গিয়ে বলে,
–” ইসস! আমার লজ্জা করে!”
নিবিড় আলিশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–” ওরে আমার লজ্জাবতি রেএ।”
হঠাৎ ধরাম করে দরজা খুলে গেলো।আর অনেকগুলো গলার আওয়াজের চিৎকার,
–” সার্প্রাইজ!”
আলিশা কুনুই দিয়ে নিবিড় কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।নিবিড় এতোটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো যে দিক দিশা না পেয়ে দৌড় দিতে গিয়ে খাটের সাথে বাড়ি খেয়ে ধরাম করে পড়ে গেলো।তাও একেবারে আলিশাকে নিয়ে।নিবিড় দ্রুত ঘুরে গেলো।ফলে নিবিড় নিচে আর আলিশা নিবিড়ের উপরে।নিবিড় আর আলিশা একে অপরের দিকে তাকালো
তারপর দরজার দিকে তাকাতেই।
দেখে সবগুলো বিচ্ছু বাহিনি এসে হাজির।নিবিড় আর আলিশা চোখ বড় সড় করে তাকালো।তারপর আলিশা দ্রুত উঠে দাড়ালো।নিবিড় ও নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাড়ালো।
নূর নাকে মুখে হাত দিয়ে বললো,,
–” ও মা গো টুরু নাউজুবিল্লাহ কাজ কারবার।”
সাদু দুই কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলে,
–” তোদের দুটো থেকে আমি এই আশা কোনদিন করেনি।কিভাবে পারলি তোরা।”
আলিশা আর নিবিড় ভয়ে ভয়ে সবার দিকে তাকাচ্ছে
সবাই ঠোঁট চেপে হাসছে আলিশা আর নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে।
#চলবে____
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।