ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৩

0
640

#ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অধরা অয়নকে অবাক করে দিয়ে সজোরে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দেয় অয়নকে। অয়ন অপ্রস্তুত থাকায় ধাক্কার টাল সামলাতে পারলো না। অধরার থেকে একটু দূরে গিয়ে পড়লো সে। অধরা শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে বিছানা থেকে উঠে পরে। “অধরাকে বেশ অবাক করেছে অয়নের ব্যবহার। এতো দিন পরে অধরার প্রতি তার এই রকম অদ্ভুত আচরন মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন জন্ম দেয়। অধরা মনে মনে ভাবছে তবে কি ইরা অয়নের ইচ্ছে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে? তবে কি অয়ন অন্য কারোর মাঝে নিজের সম্পূর্ণ তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছে না? তাই কি অয়ন তার কাছে এসেছে? নিজের শারীরিক চাওয়া পূরণ করতে! হবে হয়তো কারন এতো দিনে তো একটিবার অয়ন তাকে ভালোবাসার আবেশে স্পর্শ করেনি? এতো দিন তো অবহেলায় করেছে সিক্ত। এতো দিন পরে আমার প্রতি দূর্বলতা, দয়া দেখানোটা সত্যি সন্দেহজনক”। অধরা অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বেশ কৌতুহল পূর্ণ কন্ঠে বলে উঠলো

— অধরা আর ইউ ওকে? তুমি ঠিক আছো তো?

— হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। সরি অয়ন আসলে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম সরি।

— না না ঠিক আছে ইট’স ওকে।

— হুম।

অধরা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ফ্রেশ‌ হয়ে নাস্তা রেডি করতে হবে। অধরা উঠে দাড়াতেই অয়ন অধরার শাড়ির আঁচল ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের বুকের উপর নিয়ে আসে। অধরা অপ্রস্তুত থাকায় অয়নের বুকের উপর গিয়ে পরে যায় সে। অয়ন বেশ আবেশে অধরাকে জড়িয়ে আছে। অধরা একদম থ হয়ে যায়। এক মিনিটের জন্য অয়নের বুকে এসে পরম শান্তি অনুভব করে সে। অধরা মনে মনে চিৎকার করে বলছে ” হ্যাঁ, এটাই তো চাই আমি। এই জায়গাটা আমার। কিছুতেই আমি এই জায়গাটা অন্য কারোর হতে দিবো না”। পরম শান্তির নিঃশ্বাস নিতে লাগলো অধরা অয়নের বুকে মাথা রেখে। প্রিয়জন হ্যাঁ, প্রিয়জনের বুকে মাথা রাখার শান্তি প্রকাশ করার মতো নয়। প্রিয়জনের বুকে মাথা রাখার পর মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ একটা জায়গায় শুয়ে আছি। অধরা নিশ্চুপ হয়ে অয়নের বুকে মাথা রেখে ভালোবাসা উপভোগ করছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য অধরা ভূলে গেছে সে নিজের বোনের সন্তানের বাবার বুকে শুয়ে আছে। অধরা ভূলে গেছে যে সে যেই বুকটায় পরম শান্তিতে শুয়ে আছে সেই বুকটা আর মানুষটা আসলে তার নয়। এই মানুষটি কখনও তার নিজের ছিলো না। বারংবার এই মানুষটি তাকে খুব বাজে ভাবে ঠকিয়েছে। হুম, ভালোবাসা অন্ধ। অন্ধ হয় ভালোবাসার অনুভূতি। অধরা তার প্রকৃত উদাহরণ। অধরা অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। পরক্ষণে আচমকাই অধরার কানে ভেসে আসে অয়নের ফোনের রিংটোনের শব্দ। কলটা আসতেই অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে অধরাকে আলতো করে সরিয়ে দেয়।

— অধরা একটু উঠো প্লিজ। আমার জরুরী কল এসেছে।

অধরা একটু বিষন্ন দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে ভারি কন্ঠে বলল

— আমার থেকেও জরুরী!

অয়ন অধরার কথার কোনো জবাব দিলো না। কিছু না বলছ অয়ন ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। অধরা বিছানার উপর বসে আছে নিরবে। মনের মধ্যে সেই পুরনো অভিযোগ গুলো আরো তীব্র ভাবে তাকে কষ্ট দিচ্ছে। অধরার আর বুঝতে বাকি নেই যে কলটা ইরা করেছে। ” এখন আমার থেকেও ইরা বেশি জরুরী তোমার কাছে। ঠিক আছে অয়ন তাই মেনে নিলাম‌। কিন্তু যদি তাই হয় তবে আমায় কেনো ভালোবাসার সুরে স্পর্শ করো? তুমি কি জানো না অধরাটা বড্ড বেশি অনুভব করে তোমার স্পর্শ। না এভাবে বোকার মতো বসে বসে কাঁন্না করলে হবে না। যে মানুষটা আমার ভাগ্যে থেকেও‌ নেই। তার জন্য চোখের জল ফেলেও লাভ নেই”। চোখ মুছে রুম থেকে বেরিয়ে যায় অধরা।

* অধরা খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে। অয়ন ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বাসা থেকে। অধরা অয়নকে চলে যেতে দেখে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই কোথায় যাচ্ছো তুমি? কিছু মুখে দিয়ে যাও।

— না, ইচ্ছে করছে না পরে খেয়ে নিবো।

— হুম। বলে দিলেই তো পারো আমার সাথে খেতেও বিরক্ত লাগে। যদিও অন্য কারো সাথে খেতে এতোটুকুও বিরক্ত লাগে না তোমার।

— মানে? তুমি কার কথা বলছো?

অয়ন অধরার মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। অধরার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে তাকিয়ে আছে অয়ন। ঈশা অয়নের চোখ বরাবর অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। প্রচন্ড কষ্ট বুকে নিয়ে অধরা বলে উঠলো

— মানে বুঝতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে অয়ন? সত্যি কি জানো না আমি কি বলছি? কার কথা বলছি? এতোটা বদলে যাওয়া তো এমনি এমনি না। এর পিছনের সত্যি টা আমার বোঝার মতো বয়সটা হয়েছে অয়ন।

— মানে? কি‌ বলতে চাও? স্পষ্ঠ করে বলো।

— আরো স্পষ্ট ভাবে শুনতে চাও? আমি তোমার ফোনের মধ্যে সেই অজানা আর অচেনা তুমিটাকে উদ্দেশ্য করে বলছি। যার জন্য আমাদের মাঝে এতোটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

কথাটা শেষ করতেই অয়ন অধরার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়ের শব্দে পুরো রুমটা কেঁপে উঠলো। অধরা মাথাটা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারো মুখেই কথা নেই। অধরা একটু থেমে অয়নে উদ্দেশ্য করে শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল

— বাহ অসাধারণ। এটাই আমার পাওয়ার ছিলো অয়ন। যে অয়ন আজ উবদি ভূল করেও আমার গা এ হাত তুলেনি। যে অয়ন এতোটা বছর আমার কষ্টে নিজে কষ্ট পেয়েছে। আজ সেই অয়নের এতো বড় উপহার। ওয়াও আমি অবাক হচ্ছি দেখে। সত্যিই কি তুমি আমার অয়ন? মানতে কষ্ট হচ্ছে আমার।

* অয়ন ব্যাগটা কাঁধে চেপে হনহন করে বেরিয়ে যায় নিজের বাড়ি থেকে। অয়ন চলে যেতে অধরা দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার। জীবনে এই প্রথম অয়ন তাকে থাপ্পড় মারলো! কথাটা ভাবতেই অধরার বুকটা কেঁপে উঠে। অধরা নিজের রুমে বসে চিৎকার করে কাঁদছে আর আপন মনে বলছে “কি ভূল করেছি আমি? একটা মানুষকে নিজের জীবনের থেকেও‌ বেশি ভালোবেসেছি। এটাই আমার অপরাধ? তাই কষ্ট পেতে হচ্ছে আমায়? হুম এতো কিছু জানার পরে অন্য কেউ হলে হয়তো চলে যেতো। সব অধিকার ছেড়ে দিতো। নিজের জীবন নিজে আবার গুছিয়ে নিতো। যেমনটা আমি থাকা সত্ত্বেও অয়ন অন্য কারো সাথে গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমি তা পারছি না। ঐ অয়নটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে ফেলেছি আমি। আর কত কষ্ট পেতে হবে আমায়? অয়ন আর কত কষ্ট আমায় দিবে? আমি পারবো না কোনো অধিকার ছাড়তে‌‌। পারবো না”। কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অধরা। ভালোবাসা এমনি হয়। কোনো মূল্যেই প্রিয়জনের অধিকার ছাড়া যায় না।

* বিকেল বেলা অধরা খুব দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। উদ্দেশ্য অয়নের ফোনে বলা এড্রেস। আজ অধরা জানতে চায় কি ইরা কি বলতে চায় অয়নকে। অধরা জানতে চায় সত্যি ঘটনা কি? অধরা গাড়ি করে চলে যায় রোজ ভ্যালি নামক একটি রিসোর্টে। রিসোর্টের কেউ যেনো তাকে চিনে ফেলতে না পারে সেই জন্য অধরা মুখ ভালো করে ঢেকে যায়। রোজ ভ্যালির সামনে এসে অধরা অপেক্ষা করছে অয়ন আসার‌‌। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনও অয়নের আসার নাম নেই। অধরা অনেকটা সময় অপেক্ষা করতেই হঠাৎ করে অধরা দেখতে পেলো কালো রং এর ব্লেজারটা পরে অয়ন রোজ ভ্যালির ভিতর প্রবেশ করে। অধরা আড় চোখে অয়নের উপর নজর রাখছে। অয়ন ডাউন ফ্লোর থেকে দোতলায় চলে যায়। অয়নকে দেখে বেশ বিচলিত লাগছে। অধরা ধিরে ধিরে অয়নের পিছন পিছন চলে রায় দোতলায়। অয়ন একটা রুমের মধ্যে ঢুকতেই অধরা সেই রুমের সামনে গিয়ে দরজাটা বাহির থেকে উঁকি মেরে দেখতে লাগলো ভিতরে কে কে আছে। অধরা উঁকি দিতেই একদম থ হয়ে যায়। তবে কি এসব সত্যিই দেখছে সে? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না অধরা। অধরা দেখতে পেলো অয়নের বিপরীতে……………….

#চলবে………………..