ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৭

0
577

#ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি
#পর্বঃ০৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই সে দেখতে পেলো হঠাৎ করে বেশ দ্রুত তার সামনে একটা গাড়ি চলে আসে। অধরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িটা তার সামনে চলে আসে। এতোটা সামনে‌ চলে আসে যে অধরা নিজেকে কোনো ভাবেই আর শেষ রক্ষা করতে পারেনি। গাড়িটা প্রচন্ড গতিতে এসে সজোরে একটা ধাক্কা দিলো অধরাকে। অধরা গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে কিছু টা দূরে গিয়ে মুখ থুবড়ে পরে। আশে পাশে থাকা লোক জন দৌড়ে ছুটে চলে আসে অধরার পরে থাকা নিস্তেজ দেহের দিকে। প্রচন্ড পরিমানে ব্লাড বেরিয়ে যাচ্ছে অধরার শরীর থেকে। সবাই সেই দৃশ্য দেখলেও সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসলো না।

— অয়ন অধরা মা কোথায়? ওকি কোথাও গিয়েছে?

অয়নের বাবা প্রশ্ন সূচক কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটা। অয়ন মাথাটা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে তার। অয়নের নিরবতা তার বাবাকে ভাবিয়ে তুলেছে। অয়নের মা অয়নকে নিশ্চুপ দেখে মৃদু কন্ঠে বললেন

— অয়ন, অধরার সাথে কি তোর কোনো বিষয়ে মান অভিমান হয়েছে? অধরা কি ওদের বাসায় চলে গেছে? আচ্ছা যা ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আয়।

অয়নের মা কথাটা শেষ করতেই অয়নের ছোট বোন সবাইকে অবাক করে দিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে ভারী কন্ঠে বলে উঠলো

— ভাইয়া অধরা ভাবির কোনো খবর আদু তোর কাছে আছে? আরে বাবা তোমরাও না কাকে কি প্রশ্ন করতে হয় তা ভূলে গেছো। অয়ন ভাইয়ার কাছে না এখন অধরা ভাবীর কোনো খোঁজ আছে। আর না আগে কখনও ছিলো। অয়ন ভাইয়ার কাছে অন্য সকলের খোঁজ পাওয়া যায়। অয়ন ভাইয়া অন্য দের কথা মনে রাখতে পারে। অয়ন ভাইয়া সবার খোঁজ রাখে। কিন্তু দিন শেষে তার স্ত্রীর খোঁজ রাখার সামান্য টুকু প্রয়োজন তার নেই। তার স্ত্রী কেমন আছে? কোথায় আছে? কি করছে? না এসব খবর রাখার মতো সময় বা ইচ্ছে অয়ন ভাইয়ার নেই। অধরা ভাবী বেঁচে থাকলেও অয়ন ভাইয়ার কিছু আসে যায় না আর মরে গেলেও অয়ন ভাইয়ার দেখার বিষয় না।

অহনার কথা শুনে অয়ন নিরবতা ভেঙ্গে বেশ হুংকার দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলে উঠলো

— থাম অহনা। প্লিজ আমাকে আর আঘাত করিস না। প্লিজ!

— কেনোরে ভাইয়া? এখন খুব খারাপ লাগছে কেনো? বেশ তো ডিভোর্স দিয়ে হেঁসে খেলে অন্যের সাথে নিজের জীবন সাজিয়ে নিবি তুই। তোর চোখের কোনে জল কেনো? ভালোই তো হয়েছে অধরা ভাবী মুক্তি দিয়ে গেছে তোকে। রোজ রোজ কষ্ট পেয়ে পেয়ে বাধ্য হয়েছে তোকে ছাড়তে। দিনের পর দিন অন্য কারো সাথে তোকে দেখে নিরবে সহ্য করেছে অধরা ভাবী। কিন্তু আর কত? সবটা সবার থেকে লুকালেও আমার থেকে কখনও কিছু লুকাতে পারবি না ভাইয়া।

অহনার কথার বিপরীতে অয়ন চুপ করে আছে। অয়নের বাবা অহনার কথা গুলো শুনে অবাক হয়ে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না উনি। নিজের আদর্শের দিকে আঙুল উঠেছে আজ। অয়ন কখনও এমনটা করতে পারে তা হয়তো তার ধারনার বাহিরে ছিলো। অয়নের বাবা অয়নের দিকে এগিয়ে এসে অয়নকে

— ঠাসসসসসসস, ঠাসসসসসসস এই জন্য তোকে আমরা এতোটা ভালোবেসে এসেছি? এই দিন দেখার জন্য তোকে এতো কষ্ট করে মানুষ করেছি? অধরার মতো একটা মেয়ের সাথে প্রতারণা করতে তোর এতোটুকু কষ্ট হলো না? কি করে পারলি এমনটা করতে? এতোটা ভালোবাসার পরেও সেই মেয়েটার মনে আঘাত দিতে বিবেকে বাধলো না তোর? বাহ রে….! অয়ন। বাহ….! অসাধারণ করেছিস সব কিছু। ভালো হয়েছে। অধরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ভালো হয়েছে। এখানে থাকলে মেয়েটা তিলে তিলে মরে যেতো। এই বার যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়ে থাক তুই।

কথাটা বলতেই অয়নের সামনে থেকে হনহন করে চলে যায় তার বাবা। অয়নের চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়ন নিজের বুকের কষ্ট টা কারো কাছে প্রকাশ করতে পারছে না। সবাই চলে যেতেই অয়ন নিজের রুমের দিকে চলে আসে। নিজের রুমে এসৈ অয়ন ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন সোফার উপর বসে পরে। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো অয়ন। “অধরা কি ওর বাসায় চলে গেছে? হুম নিজের বাসা ছাড়া আর কোথায় যাবে? রাগের মাথায় ডিভোর্স পেপারের সাইন করে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু একবার রাগ কমে গেলে ঠিক আবার চলে আসবে আমার কাছে। আচ্ছা একটা কল দিয়ে দেখি বরং”।

* অয়ন অধরার ফোনে অনেক গুলো কল করলো। প্রত্যেকবার ফোনটা বন্ধ আসতে। অয়ন ভাবছে অধরা হয়তো রাগে অভিমানে ফোনটা অফ করে রেখেছে। অয়ন অধরর বোন ইরার ফোনে কল দিতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে অয়নের ফোনে ইরার কল চলে আসে। অয়ন ইরার কল পেয়ে একটু অবাক হয়ে যায়। কারন এই সময় ইরার কল আসার কোনো কারন নেই। অয়ন ভাবতে লাগলো”তবে কি অধরা কল করেছে ইরাকে দিয়ে? না, না, এমনটা হতে পারে না‌। অধরা ইরাকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করেছে। অধরা ইরাকে আমার সাথে জড়িয়ে ডিভোর্স পেপারের সাইন করেছে। অধরা ইরার সাথে এতোটা নর্মালি কথা বলবে না। তা হলে কি হতে পারে”? অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে ইরার নাম্বারে কল ডায়েল করতেই রিং হতেই না হতেই কলটা রিসিভ হয়ে যায়। কল পিক হতেই অয়ন ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— হ্যালো, ইরা!

— হ্যাঁ, বলো।

— কল করেছিলে কি জন্য?

— হুম। আম্মু, আমি অধরা আপুর ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কল পিক হচ্ছে না। বার বার সুইচ অফ আসছে। অধরা আপু কোথায়? ওকে একটু দাও না প্লিজ!

কথাটা শুনতেই অয়নের হাস্যজ্বল চেহারাটা মলিন করে যায়। “তার মানে অধরা ওদের বাড়ি যায়নি। তা হলে কোথায় গেলো”? অয়নকে নিশ্চুপ দেখে ইরা আবারও বলতে শুরু করলো

— হ্যালো অয়ন! শুনছো তুমি? অধরাকে একটু দাও কথা আছে।

অয়ন ইরাকে উদ্দেশ্য করে একদম মৃদু কন্ঠে বলল

— অধরা এখানে নেই।

— তবে কোথায় আছে? কখন আসবে?

— জানি না।‌ আর হয়তো কোনো দিন আমার কাছে ফিরবে না।

— মানে? কি সব বলছো তুমি? এখনি আমার সাথে দেখা করবে তুমি। আমি আসছি তোমার বাড়িতে।

* কথাটা শেষ করার আগেই অয়ন কলটা কেটে দিলো। ফোনটা নিজের পাশে রেখে এক হাত কপালের উপর রেখে অয়ন ভাবতে লাগলো “অধরা কার কাছে যেত পারে? এ শহরে এমন কে আছে যার কাছে অধরার খোঁজ আছে? না, না এখানে বসে থাকলে হবে না। আমায় গিয়ে দেখতে হবে অধরা কোথায় আছে”। অয়ন নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় অধরাকে খোঁজার জন্য। এই দিকে “অয়নের বাড়িতে অধরা নেই” এই কথাটা ইরা তার মা বাবাকে জানায়। তারাও অধরাকে খুঁজতে বেরিয়ে যায়।

* ধিরে ধিরে চোখের পাতা খুলতে লাগলাম। সম্পূর্ণ পৃথিবীর আলো যেনো চোখে এসে লাগছে। একটু একটু করে চোখের পাতা খুলতেই দেখতে পেলাম চোখের সামনে ফ্যানটা ঘুড়ছে। আচমকা এমন দৃশ্য দেখে একটু আঁতকে উঠলাম আমি। হঠাৎ অনুভব করলাম আমি শুয়ে আছি। ভয়ের কিছু নেই। উঠতে চেষ্টা করতেই বা‌পায়ে শক্তি পেলাম না। মনে পরে গেলো সেই এক্সিডেন্টের কথা। আমি বেঁচে আছি কিনা তা পরীক্ষা করতে নিজেকে চিমটি কেটে দেখলাম। উফফফফ! না বেঁচে আছি।

* অধরা বিছানায় শুয়ে আছে। একটু আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে। এখন একটু সুস্থ সে তবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। অধরার জ্ঞান ফিরেছে এইটা নার্স দৌড়ে গিয়ে খবর দিলো…………………….

#চলবে…………………..