ভালোবাসার_অভিনয় পর্ব-২১

0
3771

#ভালোবাসার_অভিনয়
#Anuridhi_Rahman
#পর্ব ২১

আয়ান এর বাকি সবাই কে ডিনার করতে দেওয়া হলো তখনি পরী পাশের রুমে গিয়ে সিদ্দিক সাহেব আর তার ফ্যামিলি কে ও বাইরে সবার সাথে খেতে বলে বাট তারা যাবে না,,,,

আয়ান এর ফ্যামিলির সবাই জোর করে তাদের সাথে রেদ কে খেতে বসতে সে বলে না সে খাবে না,,,,,এখনে খেতে নাকি তার ইচ্ছে করছে না,,,,
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত ১০:১৮ তে আয়ান আর মীম এর বিয়ে দিন ঠিক করা হলো,,,আজ থেকে ঠিক ১২ দিন পর নভেম্বর এর ২০তারিখ এ,,,, সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানে হলো,,,,

আয়ান আর তার ফ্যামিলি ১০:৩৪ এ সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলো,,,মীম মিলি শিলা রেদ গাড়ি পর্যন্ত আগিয়ে দিয়ে আসতে গেলো,,,,

আন্টি রা রিং সেরেমেনির পর চলে গিছে যাওয়ার সময় পরী তাদের ২জন কে এক বক্স করে মিষ্টি আর কিছু ফল দিয়ে দিয়েছিলো,,,,

সবাই বেরিয়ে যেতেই পরী তারতারি পাশের রুমে গেলো গিয়ে দেখে ৩জন আগের মতোই বসে আছে,,,,,

পরী-আরে আপনারা এখনো এভাবে বসে আছেন,,,এখনি আসুন এবার খেতে বসবেন,,,,তখন মানা করেছেন মেনেছি এখন মানছি না চলুন,,,,

পরী সিদ্দিক সাহেব শাকিল সাহেব আর রুনা বেগম কে নিয়ে বাইরে এলো,,,তত ক্ষন রেদ মীম শিলা মিলি ফিরে এসেছে,,,

বাইরে এসে পরী টেবিলে খাবার সাজাতে লাগলো তখনি সিদ্দিক সাহেব আদুরে গলায় পরীকে ডাকলো,,

-পরী মা এদিকে এসো,,,,

পরী পিছন ফিরে সিদ্দিক সাহেব এ দিকে তাকিয়ে রইলো ওনার এই সাধারন ডাক পরীী কাছে অসাধারন লাগছে কিন্তু কেনো তা পরী জানে না,,,,

মীম মিলিক জিজ্ঞেস করলো ওনরা কারা,মিলি কিছু বলতে যাতে তখন রেদ বলো উঠে -উনি পরীর নানা,,,,

এটা শুন মীম মিলি শিলা চমকে উঠলো,,,,এই কথা শুনে মীম এর চোখে পানি চলে এলো,,,,,মিলি শিলা ও বেশ অবাক,,,

পরী রেদ এর থেকে বেশ দূরে তাই সে রেদএর কথা শুনতে পেলো না,,,,পরী সিদ্দিক সাহেবের সামনে গিয়ে দাড়ালো,,,পেছন থেকে রুনা বেগম পরী সামনে এসে বলল-তুমি আমাদের চিনবে না কিন্তু আমরা তোমাকে চিনি,,,,

পরী ওনার কথা শুনে বলল-ঠিক বুঝলা না,,,

পেছন থেকে শাকিল সাহেব সামনে এসে বলে-আমাদের ক্ষমা করে দিস,,,মায়ের একটা ভুল এর কারনে তোর এত বড় পরিবার থাকতে ও তোকে এতিম এর মত বড় হতে হলো,,,,

এই কথা শুনে পরী চমকে ২পা পেছনে চলে গেলো,,,কী বলছে এরা আমার পরিবার মানে কার কথা বলছে,,,এসব ভাবতে ভাবতে পরীর চোখে পানি চলে এলো,,,

মীম গিয়ে পরীর পাশে গিয়ে তাকে ধরে বলল-পরী তুই শান্ত হ,,,,

রুনা বেগম কে দেখে মীম চিনে ফেলল কিন্তু এখন সে এই কথাটা বলতে চায় না,,,,,

পরী কাপাকাপা গলায় বলল-কী বলতে চান আপনারা,,,,

তখন রুনা বেগম বললেন-তুমি আমাদের তৃনা মানে আমার ননদ এর মেয়ে,,,,আমি তোমার মামি আর উনি তোমার মামা আর উনি তোমার নানা হন,,,

পরী ছলছল চোখে ডান দিকে তাকিয়ে দেখলো রেদ তাদের দিকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে,,,,,পরী মীম এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা রেদ এর কাছে আর বলল-এরা কারা আর এসব কেনো বলছে,,,,,

রেদ কিছু না বলে পকেট থেকে একটা ছবি বের করে পরীর হাতে দিলো,,,ছবিটা দেখে পরী রেদ এর পায়ের সামনে হাটু ভেঙে বসে পরলো,,,চোখ যেনো জোয়ার এসেছে,,,,না চাইতে ও চোখ দিয়ে পানি পরছে,,,,

ছবিটা ছিলো,,,তৃনা উরফ পরীর মা এর ফ্যামেলি ফোটো,,,,যেখানে হুবাহু পরীর মতো দেখতে একটা মেয়ে ফ্যামেলি সবার মাঝে বসে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে রয়েছে,,,,,

রেদ পরীকে সোজা কের দার করালো তারপর সিদ্দিক সাহেব এর সামনে নিয়ে গেলো,,,,উনি একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে ছিলেন,,,,

রেদ পরীকে বলল-যাও নিজের নানার কাছে,,,

পরী একবার রেদ এর দিকে তাকিয়ে একবার করে সবার দিকে তাকালো,,,,সবাই একি কথা বলল,,,,,পরী তার নানার সামনে হাটু ভেঙে বসলো,,,তারপর বলল-এতো দেরি কেনো করলেন,,,,

সিদ্দিক সাহেব চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো পরীর চোখে পানি সাথে সাথে তার তৃনার কথা মনে পরে গেলো তার সেদিন এই ভাবেই তার সামনে বসে কেঁদেছিলো,,,,(কেন কেঁদেছিলো তা পরে জানবেন)

সিদ্দিক সাহেব ও কেঁদে দিলেন পরীকে সোজা করে দার করে বুকের মাঝে জরিয়ে নিয়ে বললেন-মাফ করে দে মা আসতে দেরি হয়ে গেলো,,,,আমি যদি তোর কথা জানতাম তাহলে তোকে এতো সময় অপেক্ষা করতে হতো না,,,,,

পরী ও কাদলো আর আল্লাহ এর শুকরিয়া করলো-আল্লাহ তোমার লক্ষ কোটি শুকরিয়া আমাকে আপনজন ফিরেয়ে দেওয়ার জন্য,,,,,

সবাই বেশ খুশি সবার চোখে পানি চলে এসেছে নানা নাতনির ভালোবাসা দেখে,,,,,আড়ালে রেদ ও নিজের চোখ মুছে নিলো,,,,

তারপর পরী চোখ মুছে বলল-না অনেক হয়েছে সেই সন্ধ্যায় আসছেন আপনার কেও কিছু খান নি,,,, আর আজ বাস্ততার কারনে আপনাদের সময় ও দিতে পারিনি,,,এর পর যা কথা হবে আপনাদের খাওয়ার পর,,,,

সবাই এই কথা শুনে হাসি মুখে খেতে বসলো,,,পরীর মামি পরী আর মীম কে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো,,,,পরীকে একা খাইয়ে দিচ্ছিল তখন মীম বলে,,,,,

-এখন সবাই আমাকে ভুলে যাবে আমিও আাছি,,,,

একথা শুনে সবাই হাসলো,,,তাই পরীর মামি দুজনকেই খাইয়ে দিলো,,,,খাওয়া দাওয়া শেষ এ মিলি আর শিলা বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো তাদের নিতে তাদের দুই ভাই নিচে দাড়িয়ে রইছে,,,তাই চলে গেলো,,,,,

তখন রেদ বলল-তাহলে রাত তো অনেক হলো আজ আমি আসি,,,

তখন সিদ্দিক সাহেব বললেন রেদ তুমি না আমার মেয়ের তৃনার ঘটনা টা শুনবে চলো আজই তাইলে বলি,,,,,,

তখন রেদ আর মানা করলে না,,,,,সবাই সোফায় বসে পরলো,,,,মীম পরী আর পরীর মামি এক সাথে বসলো,,,,

আর সিদ্দিক সাহেব আর রেদ বাকি ২সোফায় বসলো আর শাকিল সাহেব এর রাত জাগা বারন তাই তাকে পরী যে রুমে বসতে দিয়েছিলো সে রুমে ঘুমাতে দিলো,,,,,

সিদ্দিক সাহেব শুরু করলেন-২৪বছর আগে আমাদের সবাই একটা শুখি পরিবার ছিলাম,,,,তৃনা ছিলো আমাদের বাড়ির প্রান আমার একমাএ মেয়ে আর আমার দুই ছেলের ছোটো বোন,,,,,

খুব আদর যত্ন করে মানুষ করেছিলা,,,,তৃনা সব দিক দিয়ে পারর্দশি ছিলো,,,,লেখা পারা ঘরের কাজ বাইরের কাজ সব ঠিক মত করতে পারতো,,,সব ঠিক ঠাক চলছিলো,,,,কিন্তু হঠাৎ করে আমর মেয়েটা পরির্বতন হয়ে গেলো,,,,,

সব সময় হয় ফোন নাইলে বাইরে থাকতো,,,,কেও তাকে এই নিয়ে কিছু বলতো না,,,,,একদিন বাড়ি ফিরে দেখও আমার স্ত্রী আমার কলিজার টুকরা কে কাটা বেত দিয়ে মারছে,,,,,তার দুই ভাবি তাকে আটকে রাখতে পারছে না,,,

আমি গিয়ে তৃনার মা কে থামাই তৃনা তখন বাচ্চা মেয়েদের মতো কাদছিলো,,,,আমি তৃনার মা কে এই জন্য বেস বকলাম,,,,তখন সে যা বলল তার জনন্য আমি মোটেও পস্তুত ছিলাম না,,,,

এইটুকু বলে সিদ্দিক সাহেব থেমে গেলেন,,,,তার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো,,,পরী উঠে তার নানার পাশে গিয়ে তার পায়ের সামনে বসে বলল- তারপর

তখব রুনা বেগম বললেন-তখন আমরা সবাই জানতে পারি মা এতোক্ষন কেনো তৃনাকে মারছিলো তার কারন তৃনা প্রেগন্যান্ট ছিলো উনি বাবাকে বলল সকালপ ওর শরিল বেশ খারাপ লাগছিলো,,তাই ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলো,,,,,

তখন তিনি জানতে পারেন এসব,,,,,বাবা তখন একটা চেয়ারে বসে পরেন,,,সেদিন তৃনা অনেক কেঁদেছিলো,,,,বাবার পা ধরে বসেছিলো,,,

মা বলেন বাচ্চা ফেলে দিতে হবে এখানে এসব করা জাবে না নাইলে সব জানাজানি হয়ে যাবে তাই সে তিন দিন পর ঢাকা নিয় যাবেন পরীকে,,,,

কিন্তু তৃনা কাওকে কিছু না বেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলো(তারপর সব সবাই জানেন),,,

এসব শুনে পরী কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে উঠে,,,দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো,,,তখন মীম বলল চিন্তা করবেন একটু পরে চলে আসবে,,,,আর অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমানো দরকার,,,,,,,

তারপর সবাই চেলে গেলো রুম এ রুম দুটা তাই ছেলেরা এক ঘরে আর মেয়ের এক ঘরে,,,বেশি রাত হওয়ায় রেদ কে আর বাড়ি যেতে দেয়নি,,,,,,,,

সবাই রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছে,,,,পরী ছাদের দরজার তালা ভেংঙে,,,,ছাদে বসে আছে,,,ছাদের চারপাশের ফ্লাট এর অনেকেই ফুলগাছ মরিচ গাছ লাগিয়েছে,,,,,

পরি বসে বসে আকাশ দেখছে তখনি কেও তার পাশে এসে দারালো সে এটা বুঝতে পেরে পাশে তাকিয়ে দেখলো,,,,,,,

-আপনি এখানে কেনো এসেছেন,,,,,

বাকিটা পরে জানবেন,,,,,,