ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-২০

0
580

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ২০
#আইরাত_বিনতে_হিমি

সকাল ৮ টাহ। এত বেলা হওয়ার পর চারপাশে অন্ধকার নেমে আছে। আশে পাশে কুয়াশায় ভোরপুর। বেলকনি থেকে যেনো বাগানের কিছুই দেখা যায় না। আজ ঢাকায় অনেক শীত পরেছে। কনকনে শীতে বাগানের রাস্তা দিয়ে চাদর মুরি দিয়ে হাটছে মিষ্টি। আজ তার ভীষণ মন খারাপ। কারণ আজ প্রায় ১ মাস হয়ে আসলো তার ভাবিমণি তার থেকে দূরে। সে আদও বেচে আছে নাকি মরে গেছে কেউ জানে না। বেশিরভাগ মানুষই ধরে নিয়েছে তার ভাবিমণি মরে গিয়েছে। কিন্তু তার কেনো জানি মনে হয় তার ভাবিমণি বেচে আছে। একদিন না একদিন সে ঠিকই চলে আসবে। মিষ্টির ভাবনার মাঝে তাকে পেছন থেকে একজন জড়িয়ে ধরলো। মিষ্টি আতকে উঠলো ভয়ে তার হাত পা কাপতে শুরু করলো। শক্ত মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকেই বললো

কেহহ.হ

পিছন থেকে লোকটি কন্ঠস্বর ভারি করে বলে উঠলো

আমি আশিক জ্বীন। আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে তাই নিয়ে যেতে এসেছে

নিলু আর দাড়িয়ে থাকার শক্তি পেলো না। ভয়ে আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। পিছন থেকে লোকটি মিষ্টির এই অবস্থা দেখে বলল

রুশা আমি এই কি হলো তোমার। তাকাও আমি আদি। রুশা। দেখছো এই মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।

আদি আর দেরি না করে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো। তারপর বাগানের একটা বেঞ্চেতে সুয়ায় দিলো। পাশের এক দোকান থেকে পানি এনে মিষ্টির মুখে ছিটিয়ে মারলো। চারদিকে কুয়াশাচ্ছন থাকায় তাদের কেউ দেখতে পায়নি। একটুপর মিষ্টির জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফেরার পর আদি কে সামনে দেখে জড়িয়ে ধরলো আর বললো

আ..দি আদি তুমি এসেছো। জা জা জানো এইখানে না জ্বী জ্বীন এসেছিলো

আদির হাসি পেলো। মেয়েটা কত ভীতু। তাই ভাবলো আর একটু ভয় দেখালে কেমন হয়। যেই আদি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই বাড়ির ভেতর থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ ভেসে এলো। তারা দুজনই চমকিত দৃষ্টিতে বাড়ির দিকে তাকালো। আদি নিচু স্বরে বাড়ির দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো

রুশা বাসায় এতো হট্টোগোল কেন। সবাই এতো কান্নাকাটি করছে কেনো।

মিষ্টির মনে অজানা ভয় জেগে উঠলো। নতুন কোনো বিপদ হলো কিনা কে জানে সবকিছু এলোমেলো লাগছে মিষ্টির তাই এক দৌড় দিলো বাড়ির দিকে। তার পিছন পিছন আদিও আসলো। বাড়িতে প্রবেশ করে দেখতে পায় দিশা ফ্লোরে বসে হাত পা ছেড়ে কান্না করছে। পাশে থেকে তাকে শান্তনা দিচ্ছে রিয়া। বড় আম্মু, মেজো মা, আম্মু সবাই কান্না করছে। এত বছরের শক্ত প্রতিমা রুমানা চৌধুরী সেও কান্না করছে। ব‍্যাপারটা কিছুতেই হজম করতে পারছে না মিষ্টি। তাই ছুটে চলে যায় সোফায় বসে থাকা নেহার কাছে। তার হাত ধরে বলে

নেহা আপু কি হয়েছে। বাড়ির সবাই এমন উম্মাদের মতো কাদছে কেনো বলো না নেহা আপু

কথাগুলো বলতে যেয়ে মিষ্টির যেনো গলা ফেটে যাচ্ছে
নেহা এতক্ষণে মাথা উচু করলো মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো

চৌধুরী বাড়িতে নজর পরেছে মিষ্টি।

মানে

রিশাদের accident হয়েছে। অবস্থা খুবই খারাপ। জানিনা কি হবে তারমধ‍্যে কোনো ডাক্তার ওর ট্রিটমেন্ট করতে চায়ছে না। আমি কি করবো জানি না। বড় আব্বু বয়সকো মানুষ হয়ে হসপিটালে গেছে ওর ট্রিটমেন্ট করতে। কিন্তু বড় আব্বু রিটায়ার্ড প্রাপ্ত ডাক্তার ওনিকি একা সব সামলাতে পারবে

নেহার কথা শুনে মিষ্টি কান্নায় ভেঙ্গে পরে। আর বলে ছোট ভাইয়া কোথায়।

সেটা আমি কি করে বলবো। আসফি তো বদ্ধ পাগল হয়ে গেছে। নিলু দুঘটনার পর ওকে স্বাভাবিক হতে পেরেছে। সারাদিন বাড়ির বাহিরে থাকে রাতেও বাসায় ভিরে না। সে তো আবার নতুন করে মাফিয়া হয়েছে কিনা।

আপু প্লিজ এইসব বলো না। ভাইয়াকে কল করো। ভাইয়া নিশ্চয় বড় ভাইয়ার কথা শুনে চলে আসবে।

চলে আসবে তো ঠিকই কিন্তু ট্রিটমেন্ট কি করবে। সে তো আবার তার পেশাকে ছেড়ে দিয়েছে।

অবশ্যই করবে। কেনো করবে না।

তাদের কথার মাঝে উপরিউক্ত কথাটি বলে উঠলো রেখা চৌধুরী। রেখা চৌধুরীর কথায় তারা দুজনেই পেছনে ঘুরে তাকালো।তাদের দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রেখা চৌধুরী বললো

নেহা আসফিকে কল করো। আমি ওর সাথে কথা বলবো। বড় ভাই মারা যাচ্ছে আর ছোট ভাই সেটা জানেই না।

উত্তরে নেহা বললো

ওকে আম্মু

নেহা আসফিকে কল করলো। আসফি নির্জোন এক রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে smoke করছে এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে। স্কিনে দেখা নামটি দেখে সে হেসে উঠে যেনো এতক্ষণ ধরে এই কলের অপেক্ষাতেই ছিলো।হাতের সিগারেট টা টান দিয়ে বাহিরে ফেলে দিলো আর কলটা রিসিক করলো। ওপাস থেকে ভেসে এলো

ভাই কোথায় তুই।

আপি আছি কোথাও একটা। কি বলার জন‍্য কল দিয়েছিস সেটা আগে বল।

সেটাই এখন তো আর আমাদের কথা তোর ভালো লাগে না।

stop this nonsense. আজে বাজে কথা বলা বন্ধ কর কি কারনে কল দিছিস সেটা বল নাহলে আমি রাখছি

Hold কর আম্মু কথা বলবে

ওকে দে

রেখা চৌধুরী ফোনটা কানে নিয়ে বলে

কোথায় তুমি

হাই কপাল। আম্মু জিঙ্গাসাও করলে না আমি কেমন আছি

প্রয়োজনবোধ করি না আসফি। তুমি যেই রাস্তায় আবার গিয়েছো। সেখানে কেউ ভালো থাকতে পারে না

আসফি জোরে শব্দ করে হেসে উঠে। রেখা চৌধুরী বলে

হাসছো যে

এমনই। কেনো কর করেছো সেটা বলো।

তোমার বড় ভাই রিসাদের Accident হয়েছে

What…( অভিনয়ের সুরে)

হুম তাড়াতাড়ি বাসায় আসো ওর অবস্থা ভালো না। ইমার্জেন্সি ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন। কিন্তু কোনো ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করতে চায়ছে না।

কি বলছো কি আমি এখনি আসছি। আর যারা আমার ভাইয়ের treatment করতে চায়ছে না তাদেরকে আমি দেখে নেবো।( সবটাই অভিনয় করে)

ওকে আসো রাখছি

ওকে

আসফি কলটা কেটে বিশ্বজয়ের একটা হাসি দিলো। তারপর গাড়ি নিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে আসলো।
হাসপাতালে আসার পর আসফিকে সবাই সালাম দিলো। আসফি সবার সালাম নিয়ে সোজা রিসাদের কেবিনে চলে গেলো। রিসাদের কেবিনে আসরাফ চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। আসফিকে দেখে আশরাফ চৌধুরী ভরশা পেলো তাকে জড়িয়ে ধরে বললো

আসফি তুমি এসেছো আমি যেনো ভরশা পেলাম। ওর treatment শুরু করো

ওকে বড় আব্বু। তুমি বাহিরে যাও।

তারপর আসফি রিশাদের treatment শুরু করে। তার হাতে একটা ইনজেকশন পুশ করে বলে

রিশাদ ভাই। কিছু ইনজেকশন মানুষের প্রাণ বাচায়। আর কিছু ইনজেকশন মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। আজ থেকে তোমার দেহে মেডিসিনের নামে বিশ দিবো আমি হা হা হা

#চলবে