#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ২৩
#আইরাত_বিনতে_হিমি
ফজরের আজানের ধ্বনিতে আসফির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে সে ছাদে। তারপর কালকের রাতের ঘটনা মনে পরে। কালকের ঐ ঘটনার পর সে এইখানেই ঘুমিয়ে পরে। আসফি বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসে। ফ্রেশ হয়ে এসে পাঞ্জাবি পরে হাতে জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে নামাজের জন্য চলে যায়। নামাজ শেষ করে যখন বাসায় আসছিলো তখন হালকা হালকা আলো ফুটেছে তাই সে রুমে না গিয়ে বাগানের সাইটে যায়। আর বাগানের সাইটে গিয়ে যা দেখে তাতে তার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে আসে। সামনে দেখতে পায় তার আদরের বোনের কলে তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু সুয়ে আছে যা সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আসফি তাদের দিকে এগিয়ে যায়। তাকে দেখে আদি লাফ দিয়ে বসে পরে আর বলে
– মামা তু তু তু তুই
– কেনো অন্যকাউকে আশা করছিলি বুঝি
– না মানে
– মিষ্টি এইখানে কি করছিস এই ভোর বেলায়
– আসলে ভাইয়া না মানে কি হয়েছে কি
আসলে গলার স্বর গম্ভীর করে বলে
– কী হয়েছে টা কি হুম। আদি তুই এই বাসায় কখন আসলি।
– মামা বিশ্বাস কর আমার আর রুশার সম্পর্ক তেমন কিছু না।
– সাট আপ আদি একদম মানে না মানে এইসব একদম বলবি না। এখন তুই এই বাসা থেকে বাহির হো
– আসফি তুই আমায় ভুল বুঝিস।
– I say get out. সম্পর্কটা বৈধ করে এখানে আশা উচিত ছিলো তোর।
– সরি ব্রো
– Get loss. আমার চোখের সামনে থেকে দূর হো।
– ওকে
তারপর আদি চলে যায়। আর আসফি মিষ্টির হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে থাকে। এইদিকে ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো সবাই। আসফিকে মিষ্টিকে নিয়ে এইভাবে বাসায় ঢুকতে দেখে সবাই বসা থেকে উঠে দাড়ায়। আর রেবা চৌধুরী বলে উঠে
– আসফি মিষ্টি কি করেছে ওকে এইভাবে কোথা থেকে নিয়ে আসলে।
– মামনি এইসব বলার এখন সময় নেই।
এই কথা বলে আসফি মিষ্টিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আর দরজা লাগিয়ে দেয়। মিষ্টি বসে বসে কান্না করছে আর আসফি তার সামনে বসে আছে। আসফি মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে
– কান্না বন্ধ কর মিষ্টি। আমি কিছু কথা বলবো
– ভাইয়া বিশ্বাস কর আমরা খারাপ কিছু করিনি।
– বিশ্বাস করলাম। কিন্তু তুই শান্ত হো।
মিষ্টি চোখের পানি মুছে ভাইয়ার দিকে তাকায় আর বলে
– বল কি বলবি
– আদিকে ভালোবাসিস কিনা
মিষ্টি চুপ মুখে কোনো কথা নেই
– আমি কিছু জিঙ্গাসা করছি মিষ্টি বল।
– হুম ভাইয়া
– আদি তোকে ভালোবাসে?
– হুম ভাইয়া
– কবে থেকে এইসব চলছে?
– ২ বছর
– বাহ ২ বছর ধরে সম্পর্ক কিন্তু আমরা কেউ জানি না।
– সরি ভাইয়া।
– তুই কি ওকে বিয়ে করতে চাইছিস এখন?
– আসলে ভাইয়া
– নির্দিধায় বল।
– জ্জ্বী ভাইয়া।
– আদি চাই?
– হুম কিন্তু তোমার কাছে বলার সাহস পায় না।
– আচ্ছা ঠিকআছে তুই যা।
তারপর মিষ্টি চলে যায় আর আরিয়ানকে কল করে। ঐপাস থেকে আরিয়ান কল ধরলে আসফি বলে উঠে
– সরি দোস কালকের বিহেভের জন্য।
– ইটস ওকে।
– কি করছিস
– এইতো আখি ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছে এখন খাবো।
– আচ্ছা শোন তাহলে কিছু কথা
– বল
তারপর আসফি আদি আর মিষ্টির ব্যপারের সব কথা খুলে বলে তখন আরিয়ান বলে
– কি বলছিস কি তুই।
– হুম আমি বাসায় জানাচ্ছি। তুই আদিকে নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় আয়।
– ওকে আমি আদিকে নিয়ে চলে আসবো
গোডাউনের খাচায় বন্ধি করে রাখা হয়েছে রিমিকে সে চিৎকার করছে আর বলছে
– আসফি চৌধুরী তোমাকে ধ্বংস করে দিবো। আমাকে এইখানে আটকে রাখতে পারবে না। সব ভেঙ্গে ফেলবো।
ঐসময় সেখানে উপস্থিত হয় আসফি আর বলে
– রাশেদ এতো চেচামেচি কিসের?
– স্যার রিমি চিৎকার চেচামি করছে। পাগলের মতো করছে।
– চলো দেখি তার কি সমস্যা
– ওকে স্যার
রিমি আসফিকে দেখে নিজের দুহাত খাচার ভিতর দিয়ে বাহির করে দিয়ে আসফির কলার চেপে ধরে আর বলে
– বাচতে চায়লে আমায় ছাড় বলছি নাহয় এই রিমির হাতে তোকে আজ মরতে হবে।
– তাই বুঝি। তা মার দেখি
আসফির কথা শুনে রিমি আসফির গায়ে এক দোলা থু মারে। আসফির রাগে চোখুদ্বয় লাল বর্ণ ধারন করে। সে রাগে খাচার মধ্যে এক লাথি মারে আর বলে রাশেদ খাচার দরজা খুলো
– জ্বী স্যার
রাশেদ খাচার দরজা খুলে দিলে আসফি একটা ধারালো ছুরি নিয়ে খাচার ভেতরে ঢুকে। আর রিমির চুলের মুঠি ধরে এক থাপ্পর মারে। রিমির হাতে নিজের পা রাখে। রিমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। আসফি নিচে বসে রিমির মুখ চেপে ধরে আর বলে
– এই মুখ দিয়ে তুই আমায় থু দিয়েছিস। দেখ আমি কি করি
এই কথা বলে আসফি রিমির জিহ্বায় এক ছুরিকাঘাত করে। রিমি এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে গরাগরি করতে থাকে। আসফি রিমির জিহ্বা নিজের হাতে নিয়ে বাহিরে চলে আসে আর বলে।
– এত কথা ছিলো না তোর। যাহ মুখের বাণীই কেরে নিলাম তোর। রাশেদ এই জিহ্বা পেকেট করে শিকদার মহলে পাঠানোর ব্যবস্থা করো।
– জ্বি স্যার
চৌধুরী মহল রুমানা চৌধুরী আর আসফি চৌধুরী মুখোমুখি বসে আছে। আসফি চৌধুরী মিষ্টি আর আদির বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে রুমানি চৌধুরীর সামনে। কিন্তু আদি এতিম বলে রুমানা চৌধুরী বারন করে দিয়েছে। তাই এই নিরবতা যা আগাম ঝড়ের ইঙ্গিত। আসফি চৌধুরী নিরবতা ছিন্ন করে বললো
– আপনি কি চান না ওদের বিয়ে হোক
– একবার বলে দিয়েছি আসফি
– আমি আদির গারডিয়েন হয়ে এসেছি বড় আম্মু তুমি কি আমায় ফিরিয়ে দিবে।
– বাড়ির মেয়েকে কে দেখে রাখবে যদি কোনো মুরব্বি সদস্য না থাকে।
– আপনার মেয়েকে আমি দেখে রাখব। দায়িত্ব আমি নিলাম কোনো ক্ষতি হতে দিবো না তার।
রুমানা চৌধুরী বুঝে গিয়েছে আসফি রেগে গিয়েছে তাই আপনি করে বলছে। তাই সে বললো আসফি মাথা ঠান্ডা করো।
– আপনি রাজি কিনা সেটা বলেন
– আমি রাজি না
– ওকে ফাইন রুমানা চৌধুরী আপনার চোখের সামনে দিয়ে আপনার মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে আমার বন্ধুর সাথে বিয়ে দিবো পারলে আটকে দেখান। আসছি
– আসফি শোনো
#চলবে