ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-২৮

0
620

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ২৮
#আইরাত_বিনতে_হিমি

বর্ষাকাল বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির অবস্থা খারাপ দেখে মনে হচ্ছে আজ আর থামবে না। সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছাতা মাথায় তিনজন ব‍্যক্তির সম্মুখে দাড়িয়ে আছে আসফি। তার পাশে আছে আদি, আরিয়ান, নিলু। নিলুর দিকে তাকিয়ে আসফি বললো

কি ভাবছেন রুমানা চৌধুরী এর জ্ঞান ফিরলো কখন? আসলে ওর তো জ্ঞান হারায়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা হয়েছে ওতো নিলুই না। দেখবেন ও কে?

এই কথা বলে আসফি মেয়েটিকে ইশারা করলো মেয়েটাও তার মুখের মুখোশ খুলে ফেললো। আসলে মেয়েটা নিলু নয়। আসফি এক মহিলা গার্ড। যা দেখে রুমানা চৌধুরী পায়ের মাটি সরে যায় আর সে অবাক হয়ে বলে

ডেমেট। তুমি কি করে আমার প্ল‍্যান বুঝতে পারলে। আমি খুব নিখুত করে প্ল‍্যান তৈরি করেছিলাম এইবার।

আমি যখন নিলুকে হসপিটালে ছিলাম তখন বাড়ির সব সদস‍্য থাকলেও আপনি কিন্তু ছিলেন না। ঠিক তখনই আমার সন্দেহ হয়। আর আমি রাশেদকে কল করি। ওহ বলে রিমি পালিয়েছে। ঠিক কিছুক্ষণ পর আবার শুনতে পায় রিমি মারা গেছে। ঐসময় আমার বোঝা হয়ে যায় আপনি আমায় ছেড়ে দেবেন না। আমি যেমন আপনার কলিজাকে আপনার কাছ থেকে কেরে নিয়েছি ঠিক তেমনি আপনিও সেটা করবেন। তাই আর কি একটু মাথাটা ঘামাতে হলো। দ‍্যাটস সিপল।

রুমানা চৌধুরী রাগে নিজের হাতের বাধন টেনে আসফির দিকে তেরে আসে আর বলে

তোমায় ছাড়বো না আমি। আই কিল ইউ। খুন করবো আমি তোমায়।

কুল কুল রুমানা চৌধুরী এখনো তো আরও অনেক কিছু বাকি আছে। আমি কিন্তু আপনার আর একটা সত‍্য জানি।

কি সত‍্য

আপনি যে আশরাফ চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী। আর আফজাল শিকদারের প্রথম স্ত্রী। আপনি যে আয়মান আর রিমির মা সেটা আমি আরো অনেক আগে থেকেই জানি। আপনি প্ল‍্যান করে এই বাসায় ঢুকছেন। আপনি আমার আসল বড় আম্মুকে খুন করে এই বাসায় ঢুকছেন। Aim i right.

তুমি এতকিছু জানলে কি করে। এইটা একান্তই আমার আর আশরাফের ব‍্যপার ছিলো যা কেউই জানতো না।

আপনি রুমানা চৌধুরী আমার বড় আম্মুর সব অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটা অস্তিত্ব এখনো মুছতে পারেন নি। যাই হোক আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি জানি আপনি আর বড় আম্মু আপন দুই বোন ছিলেন। তাহলে শত্রু কি করে হলেন।

আমি আর রাবেয়া খুব ভালো বোন ছিলাম। দুজনের মধ‍্যে অনেক মিল ছিলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমাদের কলেজের সামনে আশরাফ আসে। আশরাফকে আমার প্রথম দেখায়ই ভালো লেগে যায়। কিন্তু আশরাফ এর আমাকে ভালো লাগেনি। তার ভালো লাগে রাবেয়াকে। আশরাফ প্রতিদিন আসতো রাবেয়ার সাথে কথা বলতো ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতো। কিন্তু আমার এগুলো ভালো লাগতো না। সেইখান থেকেই আমার রাবুর ওপর হিংসা সৃষ্টি হয়। একদিন রাবু আমার মনের কথা বুঝতে পারে তাই সে আশরাফকে বুঝায়। কিন্তু আশরাফ সেটা মেনে নেয়নি। আশরাফ আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। তবে আমার জন‍্য না রাবুর জন‍্য। সেইদিনই আমি প্রতিঙ্গা করে নিয়েছিলাম ওদের শান্তিতে থাকতে দেবো না। একদিন আমি শুনতে পায় আশরাফ আর শিকদার গ্রুপের ছেলে আফজাল শিকদারের সাথে ঝামেলা হয়েছে। সেইদিন আমি মনে মনে এক বুদ্ধি এটে ফেলি। আমি আফজালকে বিয়ে করি। আফজালকে বিয়ে করার ১ বছর পর রিসাদ হয়। আমি আর আফজাল রাবুর বিবাহ বার্ষিকে ওদের বাসায় যায় প্ল‍্যান করে ওদের কক্সবাজার নিয়ে যায়। তারপর একদিন সন্ধ‍্যায় সুযোগ বুঝে নিজের আপন বোনকে সমুদ্রের নোনাজলে ফেলে দেয়।

আমি জানতাম রিসাদ ভাই আপনার ছেলে। কিন্তু তারপর কি হলো থামলেন কেন?

তারপর আশরাফ অনেক ভেঙ্গে পরে। আমি সেই সুযোগে আশরাফের অনেক কাছে যায়। একজন বন্ধুর মতো ওর পাশে থাকি। একদিন আমি আফজালকে বুঝিয়ে বলি যে আশরাফ আমার শত্রু আমি ওকে শাস্তি দিতে চায়। শুধু তোমার সহযোগিতা দরকার। সে বলে “আমি কি করতে পারি ”

আমি বলি, আমি আশরাফকে বিয়ে করতে চায় তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে সে প্রথমে মানতে চায় না পরে রাজি হয়।
একদিন সকালে আশরাফ আমার বাবার বাড়ি আসে। আমি আশরাফের কাছে যায়। প্রথমে তার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলি এবং পরে জানায় আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। সে আমায় ঠাটিয়ে একটা চর মারে আর বলে বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে। আমি কম যায় কিসে আশরাফের উপর ঝাপিয়ে পরি নিজের কাপর নিজে ছিরে চিল্লাতে থাকি। আশরাফ আমাকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। এক পর্যায়ে বাড়ির সবাই এই ঘরে চলে আসে আর আমাকে আর আশরাফকে এইভাবে দেখে আশরাফকে সবাই অনেক অপমান করে। আফজাল আমার কথা মতোন আমায় ছেড়ে চলে যায়। তখন আমার বাসার মানুষ কোনো উপায়অন্তর না পেয়ে আমার সাথে আশরাফের বিয়ে দিয়ে দেয়। প্রথম দিকে আশরাফ আমায় ভালো ভাবে গ্রহণ না করলেও পরে সব ঠিক হয়ে যায়।

আপনি মানুষ। আরে আপনি তো মানুষ রূপী একটা পশু। পশুও আপনার থেকে ভালো হয় রুমানা চৌধুরী। নিজের বোনকে কি কর পারলেন খুন করতে। একটা নারী হয়ে কি করে দুজনের সাথে সংসার করলেন। আমি ভুল না করলে রিমি আর আয়মান আপনাদের বিয়ের পরের সন্তান। কিন্তু আশরাফ চৌধুরীর সন্তান নয়।

হুম আমি আমাদের বিয়ের পর প্রায় রাতেই আফজালের কাছে যেতাম আর তারই ফল এরা

ঘেন্না হচ্ছে আপনাকে দেখে। থু দিতে ইচ্ছে হচ্ছে আপনার শরীরের। সম্পূর্ণ দেহ জালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। আপনার দেহ কেটে কুকুর কে খাওয়াতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি তা পারবো না। কারণ আপনার শাস্তি দিবে অন‍‍্য কেউ।

ছাতা মাথায় গায়ে শাড়ি পেচিয়ে হাতে চুড়ি পরে এক রমণী সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। তার চুল ছাড়া। চারপাশে অন্ধকার থাকার কারণে তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। রুমান চৌধুরী সামনে এসে দাড়ালো রমণী। হঠাৎ বিদুৎ চমকানোর আলোতে রমণীর মুখ দেখে রুমানা চৌধুরী এক ছিটকে সরে যায় আর বলে

রাবু

#চলবে