ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-৩০

0
693

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ৩০
#আইরাত_বিনতে_হিমি

বৃষ্টির কারণে রাস্তায় হাটু সমান পানি হয়ে গিয়েছে। গাড়ি ড্রাইফ করা রিস্কি হয়ে গেছে। তবুও নিজের জীবন পন রেখে গাড়ির স্পীড তুঙ্গে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে আরিয়ান। মনে তার ভীষন যেনো কিছু হয়ে না যায়। গাড়ি চালাচ্ছে আর বারং বার পিছনে দেখছে আসফির কি অবস্থা। হাসপাতালের সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে আরিয়ানের গাড়ি। গাড়ি পার্ক করে আরিয়ান অতি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আসে। তাদের থেকে কয়েকজন হাসপাতাল কর্মী স্টেচার নিয়ে এগিয়ে আসে। তারপর তারা আসফিকে নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে যায়। হাসপাতালে আসফির বাড়ির সবাই উপস্তিত ছিলো। কারণ কিছুক্ষণ আগে নিলুর জ্ঞান ফিরেছে। রেখা চৌধুরী আদি আর আরিয়ানকে দেখে সামনে এগিয়ে যায়। তাদের সামনে এসে তিনি জিঙ্গাসা করেন,

আদি তোমরা এখানে আসফি কই। নিলুর যে জ্ঞান ফিরেছে। আসফির জন‍্য খুব পাগলামি করছিলো তাই ডাক্তার ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখছে। কি হ..

রেখা চৌধুরী কথা শেষ করতে না করতেই আদির পিছনে স্টেচার করে কাউকে নিয়ে আসতে দেখলো। তার সামনে আসতেই নিজের ছেলের এমন বিধ্বস্ত রূপ দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে..

আসফি..। আমার আসফির কি হয়েছে। ওহ চোখ বন্ধ করে আছে কেন। ওর শরীরের এতো রক্ত কেনো। আদি কথা বলছো না কেন।

আদি রেখা চৌধুরীকে বুকে আগলে নিয়ে কান্না মিশ্রিত স্বরে বলে,

আন্টি শান্ত হোন। একটু শান্ত হোন প্লিজ। নিজেকে একটু শক্ত করুন। আসফির কিছু হবে না আমরা কিছু হতে দিবো। একটু অপারেশন করবো দেন ওহ সুস্থ হয়ে উঠবে।

কিন্তু রেখা চৌধুরী শান্ত হতে পারছে না। তার আর্তনাদে সারা হাসপাতালের মানুষ জরো হয়ে গিয়েছে। নেহা কান্না করতে করতে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে আর বলে

আম্মু ভাই আম্মু ভাই সুস্থ হয়ে যাবে তো।

তাদের এমন হাল দেখে পাশে থেকে আরিয়ান বলে উঠে

আদি ভেঙ্গে পরলে চলবে না। ইমার্জেন্সি ওটি করতে হবে। আমি আখি বলে দিয়েছে। তুই আসফিকে ওটিতে নিয়ে আয়।

তারপর আদি আসফিকে নিয়ে ওটিতে চলে যায়। এইদিকে রেখা চৌধুরী আর নেহা কেদেই যাচ্ছে। তাদের শান্তনা দিচ্ছে মিষ্টি, রেবা, রিয়া। কিন্তু শান্তনা দিতে গিয়ে নিজেরাও মাঝে মাঝে ভেঙ্গে পরছে। দূরের এক সিটে বসে আদনান চৌধুরী চোখের পানি মুঝছে তার পাশে বসে আরমান চৌধুরী বড় ভাইকে শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর মধ‍্যেও আশরাফ চৌধুরী নিশ্চুপ। সে চুপচাপ নিরব দর্শকের মতো সব দেখছে। সবার উপস্থিতেও একজনেও অনুপস্থিতি তাকে ভাবিয়ে তুলছে। কোথায় রুমা কি বা করছে। এতকিছু হয়ে গেলো অথচ কাল থেকে সে নিরুদ্দেশ।

কেবিনে সুয়ে আছে নিলু। হাতে কেনলা পরা। অনেকদিন অসুস্থ থাকায় মুখের সেই সুন্দোর্য এখন আর নেই। মুখ সুখিয়ে পানসে হয়ে গিয়েছে। সেই কালজ রাঙ্গা চোখ এখন গর্তে ডুবে গিয়েছে। গোলাপী ঠোটজোরা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। নিলু ঘুমের ঘোরেই কান্নাকাটির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। কান্নার আওয়াজে এক পর্যায়ে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কেবিনে কাউকে না দেখতে পেয়ে সে ভীষন অবাক হয়। অবাকের থেকে অভিমান হয় বেশি। কোথায় তার ডাক্তারবাবু এতক্ষণ হলো তার জ্ঞান ফিরলো কিন্তু ডাক্তারবাবুর আসার খবর নেই। নিজের ভাবনার মাঝে আবারও বাহির থেকে কান্নার আওয়াজ পেলো। তাই এতো কান্নাকাটি কিসের তা জানার জন‍্য একা একাই বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করলো। কিন্তু উঠতেই মাথা ঘুরে উঠলো সবকিছু ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছিলো তাই আবার সুয়ে পরলো। কিন্তু নিজের মনের ওতকন্ঠা আর ধরে রাখতে পারলো না। তাই আবার ওঠার চেষ্টা করলো এবার সে সফল হলো। কিন্তু দাড়াতে যাবে উমনি হাতের মধ‍্যে কিছু টান অনুভব করে চেয়ে দেখে হাতের কেনলাটা টান খাচ্ছে। নিজের শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কেনলাটা টান দিয়ে খুলে ফেলে। কিন্তু খুলে ফেলতে হাতে দিয়ে রক্ত পরতে শুরু করে। তবুও সেদিকে পাত্ত না দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। শরীর দুর্বল থাকার কারণে সে ভালোভাবে হাটতে পারছিলো না। বার বার হোচট খাচ্ছিলো। তবুও রুমের বাহিরে গিয়ে দেখে রেখা চৌধুরী পাগলের মতো কান্ন করছে যা দেখে তার বুক কেপে উঠে। শাশুড়ি মা এইভাবে কান্না করছে কেনো? মনের মধ‍্যে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে সে শাশুড়ি মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। তাকে দেখে রেখা চৌধুরী বাড়ির সবাই বসা থেকে দাড়িয়ে যায় আর বলে

নিলু মা তুমি এখানে কি করছো?

মা আপনি এইভাবে কাদছেন কেনো কি হয়েছে?

কিছুনা মা।

এইকথা বলে নিলুর হাতের দিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে যায় আর নিলুর হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে

একি মা তোমার হাত দিয়ে যে রক্ত পরছে। নার্স কোথায় তোমরা।

রেখা চৌধুরীর চিৎকার চেচামেচিতে নার্স চলে আসে।
তারপর রেখা চৌধুরী নার্সকে অনেক বোকা ঝোকা করেন। আর নিলুর হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিতে বলে।
কিন্তু নিলু যেতে নারাজ সে বলে

মা বলেন না কি হয়েছে। আর আপনার ছেলে কোথাও। ওনাকে যে দেখতে পাচ্ছি না।

কি বলবে রেখা চৌধুরী এর প্রশ্নের জবাবে। তার বুক যে ভেঙ্গে আসছে। তবুও নিজেকে শক্ত করে দৃঢ়তার সাথে বলে

একটু বাহিরে কাজে গিয়েছে। একটু আগে হাসপাতালে এসেছিলো। কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে ছিলে বলে চলে গিয়েছে।

মা আপনি মিথ‍্যে বলছেন। আপনার চোখ অন‍্যকিছু বলছে। সত‍্যি করে বলেন মা মি চৌধুরীর কি হয়েছে। বলেন না মা।

এমন সময় ওটি থেকে আরিয়ান বাহির হয়ে আসে তাকে দেখে সবাই এগিয়ে আসে আর জিঙ্গাসা করে আসফির কি অবস্থা। তখন সে বলে

ওটি সাকশেসফুল হয়েছে। কিন্তু ২৪ ঘন্টার আগে আমি কিছু বলতে পারবো না।

কথাটা নিলুর কর্ণোগচর হতেই সে দুর্বলতা অনুভব করে। তার মাথার চারপাশ দিয়ে যেনো বলতা ওরে যাওয়ার শব্দ হয়। সে পরে যেতে নিলে মিস্টি ধরে ফেলে।

ভাবিমণি ভাবিমণি ঠিক আছো তুমি।

নিলু তাকিয়ে থাকতে পারছে না। তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও অসফুট স্বরে বলে

মি চৌধুরীর কি হয়েছে।

পিছন থেকে একজন নার্স এসে নিলুকে ধরে কেবিনে নিয়ে যায় এবং ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখে। আরিয়ান নার্সদের আর ডাক্তারের সাথে অনেক রাগারাগি করে আর বলে

নেক্সট টাইম যেনো এমন ভুল না হয়

ভোরবেলা কেবিনে সুয়ে আছে আসফি। একদিনের অসুস্থতায় তার মুখ পান্ডুবর্ণ ধারন করেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আসফির কর্ণপাত হতেই সে চোখ মেলে তাকায়। সে কোথায় আছে প্রথমে সেটা বুঝতে না পারলেও পরে আশেপাশে খেয়াল করে সে বুঝতে পারে। শরীর দুর্বল আর অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে সে নিজের হাত পা নাড়াতে পারছে না। এমন সময় কেবিনে ডুকে আদি,আখি,আরিয়ান। আসফিকে জ্ঞান ফেরা অবস্থায় দেখে তারা হেসে উঠে আর বলে

আসফি তোর জ্ঞান ফিরছে। জানিস তোকে নিয়ে আমরা কত টেনস ছিলাম। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ সুকরিয়া।

আমি ঠিকআছি গাইস। নিলু কোথায় ওহ কেমন আছে।

ভালো ওহ এখন ঘুমোচ্ছে। ওকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছি। তোর কথা শুনে অনেক পাগলামি করছে।

আমি ওর কাছে যাবো আমাকে ওর কাছে নিয়ে চল।

কিন্তু তুই তো অসুআ।

আমাকে ওর কেবিনে সিফট কর।

আচ্ছা ঠিকাছে করছি

#চলবে