ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব -১৫
#লিখা – নীলকন্ঠী
.
আদির রুম আর রুম নেই। পুরো রুম এতোই অগোছালো যে রুহি দেখে মনে হলো হাজার বছরের পুরোনো কোন ঘরে ঢুকেছে, যেখানে স্টোর রুম হিসেবে ই ইউজ করা ভালো হবে। কোমড়ে ওরনা বেধে পুরো রুম গুছিয়ে ফেললো। এর মাঝে একটা অসম্ভব সুন্দর নীল জামদানি ও আবিস্কার করেছে। আর এও বুঝতে বাকি নেই যে জামদানি টার অধিকারিণী শুধু মাত্রই সে নিজে।
নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে তার এখানে আগ বাড়িয়ে আসা টা ভুল হয় নি। আসার পথে শাশুড়ি মা হাজার ভাবে হাজার বার বুঝিয়েছে এটা করবি ওটা করবি, আদি এটা পছন্দ করে ওটা করেনা। আরো কত কিছু। চট করেই গোসল করে চুল ছেড়ে বিছানায় বসলো। এমন সময় আদির আম্মু একটা গাঢ় মেরুন জমিনের সোনালি জরির পার দেয়া শাড়ি নিয়ে হাজির হলো।
—–এই নে। আজ এটা পড়বি। আদি শাড়ি পরা খুব পছন্দ করে। আজ থেকে সারাক্ষণ না পড়লেও এক টা টাইম ধরে শাড়ি পড়বি। এই ধর বিকেলে হুট করে শাড়ি পরে আঁচলে আঙ্গুল পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে গিয়ে ছাদে বা বেলকুনিতে আদির জন্য চা নিয়ে যাবি। দারুণ না ব্যপার টা?
–আরে আরে আরে। আম্মু তুমি দেখি সেই লেভেলের রোমান্টিক গো।
—আরে বর কে ধরে রাখতে, তার রাগ ভাঙ্গাতে অনেক কিছু জানতে হয়রে ,অনেক কিছু করতে হয়।
—আম্মু আমার খুব ভয় লাগছে। ভীষণ। আদি আমাকে দেখে কিভাবে যে রিএক্ট করবে।
—করুক। প্রথম প্রথম রাগ দেখাবে, তারপর অভিমান তারপর সেই রাগে তুই পানি ঢালবি। বুঝলি? খেল খতম।
রুহি আসমা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো।
—আমার ছেলে টা খুব শান্ত। কিন্তু কি জানিস শান্ত ঠান্ডা মেজাজের মানুষ রেগে গেলে কি ভয়ানক হয়? তুই ধৈর্য ধর রে মা। কোন ছেলে ই অন্য কারো বাহুডোরে নিজের প্রিয়া কে দেখতে চায় না।
রুহি বেশ লজ্জা পেলো।
—-কিন্তু মা তোমার ছেলে আমাকে কত বাজে ভাবে কত কথা বলল। আমার ও তো রাগ করা উচিত। আমার রাগ অভিমান কি ও বুঝবে না?
—-বুঝবে তো। একজন রাগলে অপর জন কে একটু ধৈর্য ধরতে হয় রে। এখন কথা না বলে রেডি হো। আদি আসার টাইম হয়েছে।
রুহি আর কথা বাড়ালো না। হাসি মুখে উঠে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ঝটপট রেডি হওয়া চাই। কিন্তু সে কি আদৌ আদির মুখোমুখি হতে পারবে? অভিমানের পাহাড় কি ভাংতে পারবে? যে করেই হোক তাকে পারতেই হবে। ভালোবাসা একবার শুরু হলে সেই ধারা বইতে দিতেই হবে।
আদি আসলো ঠিক আসরের ওয়াক্তের পর। এসেই বাসার কাজের ছেলে টিকে জানিয়ে দিলো এখন আর কিছু খাবে না। তাকে যেন মাগরিবের পর এক কাপ চা দেয়া হয়। কড়া করে।
রুমে ঢুকেই আদি টাস্কি খেলো। গেলো প্রায় এক মাস যাবত তার রুমের বেহাল দশা ছিলো। নিশ্চয়ই মায়ের কাজ এটা। টাওয়াল নিয়ে গোসলে ঢুকে গেলো।
আদি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সেই কখন থেকে। ঘুমের মাঝে আদি স্বপ্ন দেখলো মেরুন রংগা শাড়ি পরে রুহি তার’ পাশেই বসে তার চুলে হাত বুলাচ্ছে। আদি ঘুমের ঘোরেই আদুরে গলায় বলতে লাগলো,
—পাখি তুমি এসেছো? আর যেও না, প্লিজ বলেই রুহির কোমড় আকড়ে ধরে কোলে মাথা রাখলো।
রুহি চুপচাপ হাত বুলিয়েই যাচ্ছে। আদির মনে হচ্ছে খুব চেনা একটা স্পর্শ, চেনা একটা গন্ধ খুব কাছ থেকে পাচ্ছে।
খুব করে ধরে আদি বলতে লাগলো
—প্লিজ যেও না। আমার সহ্য হয়না। এই কস্ট এই ব্যথার কোন ওষুধ নেই তুমি ছাড়া।
—না আর যাবো না। কখনো যাবো না বলতেই আদি এক ঝটকায় ঘুম থেকে উঠে বসে পড়লো।
হা হয়ে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেস্টা করছে আসলে কি স্বপ্ন ছিলো নাকি রুহি সত্যি এসেছে।
—আমি সত্যি এসেছি। আপনি ভুল দেখছেন না। সব টাই সত্যি ছিলো। আর এও সত্যি আর আর কোথাও যাবো না। আপনি তাড়িয়ে দিলেও না। হুহ।
আদি রুহিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে উঠে পড়লো। গায়ে টি শার্ট জড়াতে জড়াতে বলে গেলো ” এসে যেন তোমাকে আমার রুমে না দেখি। তোমাকে আমার সহ্য হয়না। একদম ই না । ”
রুহি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।
—না যাবো না ।যাবো ওওও না বলে পা উঠিয়ে বসে রইলো।
যেই দেখলো আদি বের হয়ে যাচ্ছে সে তারাহুরা করে বিছানা থেকে নেমেই গুন গুন করে আদির আগেই হাঁটা ধরলো। আঙ্গুলে আচঁলের খুট প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে হেলে দুলে গাইতে লাগলো,
“পরে না চোখের পলক
কি তোমার রুপের ঝলক? ”
গুন গুন করে করে গাইতে গাইতে আদি কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় হালকা ধাক্কা ও দিলো। চোখ বন্ধ করে সোজা হেটে শাশুড়ি মায়ের রুমে এসে দম ছাড়লো রুহি।
—“ও আল্লাহ এত্তোক্ষন কি সাহস টাই না দেখালাম বলেই ” হো হো করে হেসে উঠলো। কিন্তু রুহি যদি পেছনে ফিরে এক্টা বার তাকাতো তাহলে আদির হা হয়ে যাওয়া মুখ টা দেখে আরো কয়েক দফা হেসে মরতো।
চলবে …..