ভালোবাসি তাই পর্ব-১৪

0
1310

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana

তানহার মাথা থেকে ছোঁ মেরে গোলাপ ফুল নিয়ে নেয় অভি। তানহা কটমট চোখে তাকায় কিন্তু কিছু বলতে পারে না।

ফুল চুরি করছো?

“আমি চোর না।
” সেটা জানি।
“এখানে কেনো এসেছেন

“আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসো
বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে বলে অভি। তানহার কথার তুয়াক্কা করে না।

” মামা বাড়ির অবদার
ভেংচি কেটে বলে তানহা।

“বানাবে না? সরু চোখে তাকিয়ে বলে অভি।
” প্রশ্নই ওঠে না। সোজাসাপ্টা বলে দেয় তানহা।

“ওকে ফাইন
আমি তোমাকে ট্যাগ করি।
ফোন হাতে নিয়ে বলে অভি।

“আনছি
মুখ ফুলিয়ে বলে তানহা

“আমার সোনা বউ

তানহা ভ্রু কুচকে তাকায়
” বউ

“সরি আইমিন বোন

তানহা একটু তাকিয়ে চলে যায় চা বানাতে। অভি তানহার যাওয়ার দিকে তাকায়।
” না চাইলেও তুমি আমার।

পাক্কা এিশ মিনিট পরে তানহা অভির সামনে এনে চা রাখে। অভি ফোন দেখছিলো। ফোন রেখে সোজা হয়ে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
“আপনি এই সময় এখানে?
তানহা খাটের সাইডে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে।

” কিছু কথা বলতে এসেছিলাম। আর্জেন্ট। চায়ে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে বলে।

“বলে ফেলুন

” বসো

“ঠিক আছি

” বসতে বলছি। চোখ মুখ শক্ত করে বলে অভি। তানহা এক সাইডে বসে।
“আমার কথা শেষ হওয়ার আগে কথা বলবা না।

” আমি দুই মিনিটের বেশি চুপ করে থাকতে পারি না। বিরবির করে বলে তানহা।

“কিছু বললা। কান খাড়া করে বলে অভি।

” আপনি কি বলবেন?

অভি চায়ের কাপ রেখে তানহার দিকে একটু এগিয়ে বসে। তানহা ভ্রু কুচকায়।
“বলছিলাম

” শুনছিলাম
অভি তানহার দিকে চোখ গরম করে তাকায়। তানহা চুপসে যায়। মুখে হাত দেয়
“আমি কিছু বলছি না।

” আবিরের বিয়ে হয়ে গেছে। এটা মেনে নিতে হবে।

“আমি তো এটা মেনে নিয়েছি। চলেও এসেছি এখানে। তাহলে এসব কেনো বলছেন? ওহহহ বুঝতে পেরেছি তুহিন রহমান আপনাকে এসব বলতে বলেছে।

সাট আপ
জোরে ধমক দিয়ে বলে অভি৷ তানহা ছিটকে ওঠে। বুকে হাত দেয়।
” আম্মু বলেছে তোমার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে। কিন্তু তুমি কথা শোনার মেয়েই না। সারাক্ষণ বকবক করবেই। লিসেন আমার সাথে বেশি বকবক করলে মুখে কস্টিপ লাগিয়ে দেবো।

জোরে শ্বাস নেয় অভি। তানহা এতোখন মুখে হাত দিয়ে ছিলো। মুখ থেকে হাতটা হালকা সরিয়ে বলে

“আমি তো সারমর্ম বললাম। কিন্তু আপনি তো রচনা বললেন।

অভি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় তানহার দিকে। তানহা অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে মুখে হাত দিয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে।
অভি চোখ বন্ধ করে কয়েকবার জোরে শ্বাস নিয়ে রাগটা একটু কমানোর চেষ্টা করে।

” শুনো। লাইফ কারো জন্য থেমে থাকে না। মায়ার তো কোনো দোষ নেই। কিন্তু আবির মায়াকে মেনে নিতে পারছে না। সব সময় তোমার কথাই ভাবছে। এখন তুমি যদি কাউকে বিয়ে করে নাও তাহলে

তানহা অভির দিকে তেড়ে এসে বলে

“এবার আপনি জাস্ট সাট আপ। আপনি ভাবলেন কি করে আমি বিয়ে করবো? কখনোই না। আমিও চায় না আবির মায়াকে মেনে নিক। আবির আমার। আমারই থাকবে। আমি সয্য করতে পারবো না অন্য কারো সাথে। একদম আমাকে ভুল ভাল বোঝানোর চেষ্টা করবেন না আমাকে বুঝলেন। ভালোবাসার মান

অভি টান দিয়ে তানহা নিজের কাছে নিয়ে আসে। কোমর জড়িয়ে ধরে তানহার। তানহার গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। চোখ বন্ধ করে ফেলে তানহা। মুখ থেকে কথা হওয়ার হয়ে গেছে। দুই তিন মিনিট পরে গাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে কপালে কপাল ঠেকায়। তানহার বুক টিপটিপ করছে। অভিকে দুরে সরাবে সেই শক্তিটা পাচ্ছে না।

” এরপর থেকে আমার সামনে বেশি কথা বললে এর থেকে মারাক্তক কিছু করে ফেলবো। বলে দিলাম
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে অভি। অভির কথা তানহার কানে ওবদি পৌছায় না। তানহা অন্য জগতে আছে। অভির পিঠে তানহার হাত।

“আবির তোমার না। তুমি আমার। বুঝে নাও। আমাকে বিয়ে করবে তুমি।
ফিসফিস করে বলে অভি। তানহা শুনে না।
” ছাড়ুন
অভিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে তানহা।

“কেনো ছাড়বো? আনলিমিটেড কথা বলার সাময় মনে ছিলো না?

অভির কথা গুলো তানহার মুখে বাড়ি খাচ্ছে। অদ্ভুত লাগছে তানহার। সব কিছু এলোমেলো।
এবার একটু জোরে ধাক্কা দেয়।
” প্লিজ ছাড়ুন

অভি একটু পিছিয়ে যায়। তানহা উঠে তিন চার হাত দুরে গিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে। এরকম লাগছে কেনো?
অভি তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।
তানহা জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে অভির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

“যদি হুটহাট এ্যাটাক না করেন তাহলে একটা কথা বলি? পারমিশন না দিলেও বলবো। আসলে পেটের,মধ্যে কথা গিজগিক করছে। কাটাকাটি

” কি কাটাকাটি? ভ্রু কুচকে বলে

“আপনার ফোনের পানি পানি ডান্স ডিলিট না করলে আমি ছোটমট একটা ঢোল দেবে যে আপনি আমাকে পাপ্পি দিয়েছেন।

” ইডিয়েট
অভি উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
“তোমার সামনে আসলেই আমার

” কি প্রেম প্রেম পায় না কি?
চোখ টিপ দিয়ে বলে তানহা।

“জাস্ট ইম্পসিবল
বলেই অভি বেরিয়ে যেতে নেয়। তানহা উচ্চ সুরে গান ধরে
” বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়

অভি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পাগলী বলে চলে যায়।

তানহা চোখ বন্ধ করে খাটে বসে। অভির স্পর্শটা তানহার মনের চামড় ধরা ঘা টা খুঁচিয়ে দিয়েছে। এতো কাছে কখনো আবিরও আসে নাই। অভির বলা কথা গুলো ভাবে। আবির মায়াকে মেনে নেবে কথাটা তানহার কানে বাঁশির মতো বাঁচছে। এটাই সত্যি। মায়া আবিরের বউ। কিন্তু তানহা মানতে পারছে না।

🌹🌹

সারাদিন রুমে বন্ধ হয়ে থাকাটাই আবিরের রুটিন। কিন্তু এভাবে চলবে না। তানহাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। কোথায় আছে তানহা? তানহার কাছে যাবে কি না ভাবছে? শেষমেশ মনের সাথে হাজার যুদ্ধ করে আবির সিদ্ধান্ত নেয় তানহার সাথে দেখা করবে না কিন্তু দুর থেকে তানহাকে দেখবে। ওয়াশরুমে গিয়ে গোছল সেরে নেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে নিজেকে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। দাঁড়ি আর চুল গুলো বেশ বড় হয়েছে। চেহারায় কেমন কালো হয়ে গেলে। নিজের এই রুপ দেখে তাচ্ছিল্য হাসে আবির।
“দেবদাস বানিয়ে দিলা তানহা।

কাবাড থেকে তানহার দেওয়া নীল শার্ট আর কালো জিন্স পড়ে রেডি হয়। জুতোর ফিতা বাঁধছে তখন মায়া আসে
” কোথাও যাচ্ছেন?

আবির মায়ার কথার উওর দেয়,না।

“বলুন না

পার্সটা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে
” ধরে নিন মরতে যাচ্ছি
বলেই বেড়িয়ে যায় আবির। মায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

🌹🌹🌹
রিক তানহাকে ছোট ছোট আটটা ছেলেমেয়ে জোগাড় করে দিয়েছে। রিক তানহাকে ছাঁদে যাবে কি না জিজ্ঞেস করে। তানহা হ্যাঁ বলে দেয়। রিক আর তানহা ছাঁদে যায়। এটা সেটা অনেক কথা বলছে রিক। তানহা শুধু হু হু করছে। ছাঁদে গিয়ে দেখে অভি ছাঁদের টুল টেনে বসে আছে। হাতে গিটার। খুব মন দিয়ে সুর তুলছে। তানহা ভাবে এখন পেছন থেকে গিয়ে অভিকে ভয় দেখাবেই দেখাবে। রিককে চুপ করতে বলে পা টিপেটিপে অভির পাশে যায়। এবার ভাউ বলে অভিকে ধাক্কা দেবে তার আগেই

চলবে