ভালোবাসি তাই পর্ব-১৯

0
1127

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana

“এরকম মিষ্টি পেলে আমি প্রতিদিন ঝাল খেতে রাজি। বাঁকা হেসে বলে অভি।
তানহা রাগে গজগজ করছে। ঠোঁটটা জঘন্য ভাবে কেটে গেছে আর বাজে ভাবে ফুলে গেছে। ভীষণ জ্বালা করছে।
“শিহ্মা হয়েছে না কি আবারও ঝাল খাওয়াবে।
” তোকে আমি বিষ খাওয়ামু
ধাপধাপ পা ফেলে চলে যায় তানহা। অভি ঠোঁট বাঁকায়।

বেলকনিতে বসে রাতের আকাশের তারা দেখছে তানহা। বেলকনিতে থাকা ফুল গাছ থেকে মিষ্টি গন্ধ আসছে। থালার মতো চাঁদটাও আজ একটু বেশিই আলো দিচ্ছে। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার ফলে পরিবেশ টা অন্য রকম লাগছে। পাশে আবির থাকলে মন্দ হতো না। আজকে হঠাৎ তানহার অভির বলা কথা গুলো খুব ভাবাচ্ছে। সত্যিই তো যে ভাবেই হোক আবিরের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ছাঁদের নিচে থাকতে থাকতে হয়ত একসময় মায়াকে মেনে নেবে। ভালো না বাসলেও মায়ার সাথে সংসার করবে। এখন তানহার উচিৎ আবিরের আশেপাশে না থাকা।
নিজেকে নিজে প্রমিজ করে আবিরকে ভুলে যাবে। হয়ত সহস হবে না। তবে ইম্পসিবল ও না। জাস্ট একটু সময় দরকার। সময় সবটা ঠিক করে দেবে।

অভি গিটারের টুংটাং করছে। কালকে প্রথম গানের অডিশন। ভালো করতেই হবে। এতোদিন ইউটিউব চ্যানেলে গান দিয়ে সেলিব্রিটি হয়েছে।
অভিকে এতো মনোযোগ দিয়ে টুংটাং করতে দেখে তানহা ভ্রু কুচকে ফেলে। একে তো শান্তিতে রিয়ারসেল করতে দেওয়া যাবে না।
এবার তানহা উঠে এসে অভির আশেপাশে ঘুরছে আর গাইছে
“বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়
আমরা দুজনারই প্রেমের দুনিয়া
তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়
আমার কি যে হয়ে যায়

অভি বেশ বিরক্ত হচ্ছে। এভাবে কানের কাছে ভ্যাভ্যা করলে প্রাকটিস করা যায় না।
তানহা তো থামার নামই নিচ্ছে না। একটা গানই বারবার গাইছে। অভি দাঁতে দাঁত চেপে গিটারটা রাখে। তানহার হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দেয়।
” ককি করছেন
তুতলিয়ে বলে তানহা।
“তোমার মন না আমাকে কাছে চাইছে। তাই তো আসলাম
বলেই তানহাকে জড়িয়ে তনহার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে চোখ বন্ধ করে অভি।

” ছছছাড়ুন
অভিকে সরানোর চেষ্টা করে বলে তানহা।
“নরাচরা করলে আমি কি করবো তা নিজেও জানি না
ঘুমঘুম কন্ঠে বলে অভি।
তানহার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। এভাবে ঘুমানো যায়? ধুর ওনাকে জ্বালাতে গিয়ে নিজেই জ্বলছি। আর জীবনেও এই গানটা গাইবো না।
মনে মনে বলে তানহা। অভির নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আরও শক্ত করে আকড়ে ধরে তানহাকে। এখানে থেকে আজ আর আমি বেড়তে পারবো না।
চোখ বন্ধ করে তানহা। অস্বস্তি হচ্ছে ভীষণ। এভাবে থাকা যায়। অভির হাত সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

_______

পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আবিরের। নিজের বুকের ওপর ভারি কিছু অনুভব করে। মনের ভুল ভেবে আবার চোখ বন্ধ করে। বুকের ওপর নিশ্বাস পড়তেই চমকে চোখ খুলে আবির। ঘাড় উঠিয়ে বুকের দিকে তাকাতেই সেখানে মায়ার মাথাটা দেখতে পায়। তড়িৎ বেগে উঠে বসে আবির। মায়াও ধরফরিয়ে ওঠে। নিজের গায়ের শার্ট টা ফ্লোরে দেখে বুকের ভেতর মোচড় দেয় আবিরের। নেশার ঘোরে ভুল কিছু করে ফেলে নি তো?

মায়ার দিকে তাকায় আবির। চাদর জড়িয়ে আছে মায়া। চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি।
” এটা হতে পারে না
পাশের দেয়ালে আঘার করে গর্জে বলে আবির। মায়া কেঁপে ওঠে। আবির মায়ার গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েঋিস তুই? এতো খারাপ তুই? আই জাস্ট হেট ইউ। বেড়িয়ে যা আমার রুম থেকে।

মায়া ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মায়াকে ছেড়ে দেয় আবির। নিজের চুল নিজে টানে।

” আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না। আর কখনে নিজের অধিকারও দাবি করবো না। শুধু আপনার পায়ের কাছে পড়ে থাকতে চায় আমি।
হেঁচকি তুলে বলে মায়া। মায়ার কথা আবিরের কান ওবদি পৌছায় না। ফ্লোর থেকে শার্ট তুলে ওয়াশরুমে চলে যায় আবির। সাওয়ার অন করে বসে থাকে। ছেলেরা না কি সহজে কাঁদে না। কিন্তু আবির হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। এতেবড় ভুল কি করে করতে পারলো? নিজেকেই দোষি মনে হচ্ছে।।

মায়া বিছানায় বসে কাঁদে।
“আমি একটা ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি। এর মনে তানহা ছাড়া কেউ নেই আর কখনো থাকবেও না। আমার সাথে এমনটা না হলেও পারতো।

_____

তানহার ঘুম ভেঙে গেছে অনেক আগেই। ঘুম ভেঙেছে বললে ভুল হবে তানহা ঘুমতেই পারে নি সারা রাত। অভি জাপ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিলো। অস্বস্তিতে কেটেছে সারা রাত।
অভি বেঘোরে ঘুমচ্ছ। অভির নিশ্বাস পড়ছে তানহার গালে। তানহা নরেচড়ে উঠছে। তানহার নরাচরাতে অভির ঘুম ভেঙে যায়। ছিটকে দুরে সরে যায় অভি। তানহা প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়। এতো দম যেনো বন্ধ ছিলো। নিজের কাজে নিজেই হালকা অনুতাপ করে অভি।
” আমাকে জ্বালাতে আসার ফল দেখছো?

তানহা উঠে বসে। চুল গুলো হাত খোপা করে বলে
“ভয়ানক

” আর কখনো আমার পেছনে লাগবে?

“আমি তো কখনো আপনার পেছনে লাগি না

” আমাকে জ্বালাও তো

“আপনিও তো আমাকে জ্বালান।

” তুমি আগে জ্বালানো শুরু করো।

“আরো জ্বালামু। ভালো চান তো আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।

” তোমার জ্বালানো গুলো আমার বেশ লাগে। এজীবনে আমার থেকে দুরে যাওয়ার কথা ভুলে যাও।
অভি ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছু একটা ভেবে তানহা মুচকি হাসে।

আজকে অভির অডিশন আছে। সকাল সকাল গোছল করে এতোগুলো শার্ট জ্যাকেট বের কে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে কোনটাতে বেশি ভালো লাগে। সাওয়ার নেওয়ার আগে করলা ভাজি আর রুটি বানিয়েছে অভি। তানহাকে আর রান্না করতে দেবে না।

তানহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অভির ভাব দেখছে। অবশেষে হালকা পিংক কালার শার্ট আর তারওপরে পোরামাটি কালার জ্যাকেট টুজ করে পড়ে নেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল হালকা জেল লাগায়। পারফেক্ট।
হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বেরোনোর সময় তানহা সামনে পড়ে তানহাকে সাইড কাটিয়ে চলে যায় অভি। তানহা জাস্ট হা হয়ে আছে। এতো এটিটিউট পায় কোথায়? যতসব ঢং

তানহা ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে খাবার টেবিলের সামনে যায়। করলা ভাজি দেখে বমি পায়। না খেয়েই বেড়িয়ে পড়ে। একটা অটো বা রিকশা কিঋুই নেই। পায়ে হেটে হেঁটে ভার্সিটিতে পৌছায় তানহা। ভার্সিটিতে কোনো ফ্রেন্ড নেই। একা একা এতিমের মতো লাগে।ক্লাস রুমের এক পান্তে হেবলার মতো বসে আছে। অন্য ছেলে মেয়েরা কি সুন্দর গল্প করছে। তানহার পাশে বসা মেয়েও তানহার সাথে কথা বলছে না।
“হাই আমি তানহা
আগে আগে বলে তানহা।
” হেলো আমি নিশি
তারপর টুকটাক পরিচয় করার পরে মেয়েটার সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়। মেয়েটার থেকে জানতে পারে মেয়েটার একটা ক্রাশ আছে নাম আশিক। আর নিশির আরো একটা ব্রেষ্টফ্রেন্ড আছে তার ক্রাশ না কি আশিকের ফ্রেন্ড। ওরা না কি ওদের ক্রাশকে ভীষণ ভালো বাসে। এসব শুনতে ভালো লাগছে তানহার। এর মধ্যে ক্লাসে স্যার চলে আসে। মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করে তানহা।

দুই বেল পড়েই ভার্সিটি ছুটি দিয়ে দেয়। নিশি আর তানহা ভার্সিটির বড় মাঠের মধ্য দিয়ে পুকুর পাড়ের দিকে যাচ্ছে। ওই জায়গাটা নিরিবিলি। ওখানে মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড নিরবে প্রেম করার মতো একটা জায়গা।

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করে তানহা।
” আশিকের সাথে দেখা করতে যাবো তাই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। ফাস্ট মিট একা একা কি করে যায় বলো।
নিশির কথা প্রচন্ড রাগ হয় তানহার। এ কার সাথে ফ্রেন্ড শিপ করলো।
দুরে অভিকে দেখতে পায় তানহা। দুটো মেয়ের সাথে কথা বলছে। মেয়েগুলো মাঝে মাঝে অভির গায়ে হাত দিচ্ছে। তানহা ভেংচি কাটে।
নিশি তানহাকে অভির ওই খানেই নিয়ে যায়। এতেখনে তানহা বুঝতে পারে নিশির আশিক হলো অভির ফ্রেন্ড আশিক।

“নিশি রাইট
আশিক বলে। নিশি মাথা নিচু করে সম্মতি জানায়।
” তানহা তুমি?
“ওর সাথে এসেছি।
” তুমি ওদের সাথে কথা বলো আমি নিশির সাথে একটু কথা বলে আসি।
আশিক নিশিকে নিয়ে চলে যায়।
তানহা অভির থেকে একটু দুরে একটা মেহগনি গাছের জড়ের ওপর বসে অভির দিকে মুখ করে।

“অভি তোর অডিশন কেমন হলো রে? অভির হাতের ওপর হাত রেখে বলে পায়েল।
” ভালোই। তানহার দিকে তাকিয়ে বলে অভি।
“তাহলে আমাদের তোর বাসায় কবে নিবি (ইভা)
” যেদিন বিয়ে করবো। তানহাকে চোখ টিপে বলে অভি। তানহা চোখ ফিরিয়ে নেয়। এই লোকটা যা তা।
“পায়েল লজ্জা মাথা হাসি দেয়।
” খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নে না। (পায়েল)
“হট একটা মেয়ে পেলেই করবো। তানহার দিকে চুমুইশারা করে বলে অভি। ইচ্ছে মতো থাপ্পড়াইতে ইচ্ছে করছে তানহার অভিকে।
” তুই না যা তা
হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে পায়েল।
“চল একটা সেলফি তুলি

ইভা সেলফি কেমেরা অন করে পায়েল অভির মুখের কাছে মুখটা নিয়ে কিসের মতো করে সেলফি তুলে।

” কি বেহায়া মানুষ। ছি ছি
মনে মনে বলে তানহা।
“চল তোদের আজ ট্রিট দেবো
ইভা পায়েল তো খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
” তোরা খাওয়া শুরু কর। আমি গিয়ে বিল দেবো

ওরা চলে যায়। অভি এসে তানহার গা ঘেসে বসে।
“মাক্স পড়ো নি কেনো?
” মানুষরে আমার কিউট ফেসটা দেখানোর জন্য। একটু সরে বসে বলে তানহা।
“তা দেখাও কিন্তু ঠোঁট যে কেউ কামড়ে দিয়েছে সেটাও দেখাতে হবে।
ফট করে তানহা ঠোঁটে হাত দেয়।
” আমি তো লিপস্টিক লাগিয়েছিলাম।
“তো
” কিছু না। মাক্স নেই আমার কাছে
অভি পকেট থেকে মাক্স বের করে দেয়। তানহা পড়ে নেয়।
“বাসায় চলে যেয়ে আমার লেট হবে
বলেই অভি চলে যায়।
” বাসায় থাকলে সারাক্ষণ শুধু চিপকায় আর এখন আমারে চেনেই না। ছেলে মানুষের কতো রুপ।
মনে মনে বলে তানহা।

একটু পরেই নিশি চলে আসে।
“আমি আশিকের সাথে এক জায়গায় ঘুরতে যাবো তুমিও যাবে আমার সাথে।
তানহার হাত ধরে টেনে বলে।
” আরে আমি যাবো না

“কোনো কথা না
টানতে থাকে। তানহা বারবার বলছে যাবো না। কে শোনে কার কথা। একটা রিকশায় উঠে পড়ে তানহা আর নিশি। অভি দুরে থেকে দেখে একটু হাসে।

বিরক্তি নিয়ে রিকশায় বসে আছে তানহা। একেতে সারা রাত ঘুম হয় নি তারওপর কিছুই খাওয়া হয় নি।

চলবে।