#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২৪
#Tanisha Sultana
সকাল সকাল অভি ভার্সিটিতে চলে যায়। তানহা আজ যাবে না ভেবেছিলো কিন্তু এখন যেতে ইচ্ছে করছে। চট করে গোছল সেরে জিন্স আর টপস পড়ে নেয়। হালকা একটু সাজুগুজু করে বেড়িয়ে পরে।
ভার্সিটির গেটের কাছেই নিশিকে দেখতে পায় তানহা। আশিকের সাথে কথা বলছে। তানহাকে দেখে হেসে হাত নারায়। তানহাও একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে নিশির কাছে আসে।
“অভি যে বললো তুমি আজ আসবে না। তানহার হাত ধরে বলে নিশি।
” আমার বেপারে ও কি জানে? মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।
“ঠিক আছে নিশি তানহা যাও ক্লাস করো।
আশিক চলে যায়। নিশি আর তানহা হাত ধরে ক্লাসে যায়। নিশি পুরো রাজ্যের কথা জুড়ে দেয় তানহার সাথে। আশিক এই বলেছে আশিক সেই বলেছে। তানহার কানটা পঁচে যাওয়ার মতো অবস্থা।
দুই বেল হওয়ার পরে আর ক্লাস হবে না। নবীন বরণ অনুষ্ঠান হবে তিন দিন পরে। তারই আলোচনা চলবে। ফাস্ট ইয়ারের কয়েকজন স্টুডেন্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তানহা আর নিশি ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে কিছুটা দুরে একটা ফুসকাস্টলে যায়। সেখান থেকে ফুসকা খেয়ে বাসায় যাবে। অভিও পায়েল ইরার সাথে ওখানেই ফুসকা খাচ্ছিলো। অভি পায়েলের পাশাপাশি বসেছে। তানহা ওদের পেছনে বসেছে।
” আমি তো ভুল ভাবছিলাম। নিকনিক করাটা ওনার জন্মগত স্বভাব। আমি ভেবেছিলাম আমাকে দেখিয়ে পায়েলের সাথে ঘসাঘসি করে। কিন্তু
ধুর এই লুচুটার কথা আমি আর ভাববো না
মুখের সামনে মাছি তাড়ানোর মতো করে তানহা।
নিশি দুই প্লেট ফুসকা ওর্ডার দেয়।
“তানহা ওই দেখো অভি। নিশি অভিকে দেখিয়ে বলে।
” তো?
“তোমার তো
” আমাকে কেউ না। কিছুটা চেচিয়ে বলে তানহা।
“ওহহ
তানহার কন্ঠে শুনে অভি পেছনে তাকায়। তানহাকে দেখে ভ্রু কুচকায়।
” তোরা খা আমি আসছি
বলে তানহার সামনে যায়। তানহা তখন ফুসকা খাওয়ার ব্যস্ত।
“তুমি এখানে? কপালে ভাজ ফেলে বলে অভি। তানহা মুখে একটা ফুসকা পুরে বলে।
” আপনার কোনো সমস্যা?
“জাস্ট ইম্পসিবল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানহার মুখোমুখি চেয়ারে বসে।
নিশি তো খাওয়া নিয়ে বিজি।
” তুমি না অসুস্থ? শান্ত গলায় বলে অভি।
“কে বললো আমি অসুস্থ?
অভি রেগে টেবিলে লাথি মারে।
” সোজা কথা সোজাভাবে বলতে পারো না। রেগে কিছুটা চৎকার করে বলে অভি। তানহা আর নিশি ভয়ে চমকে ওঠে।
পায়েল এগিয়ে আসে।
“আরে অভি কি হয়েছে? অভির কাঁধে হাত রেখে বলে।
” আপু হয়েছে কি? উনি না তোমার সাথে একা সময় কাটাতে চায় কিন্তু আমি আর নিশি এখানে চলে এসেছি বলে রেগে গেছে। বোন হই তো ওনার। ইনোসেন্ট ফেস করে বলে তানহা।
অভি আর নিশি জাস্ট হা হয়ে গেছে। পায়েল তো খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
“তুই আমার সাথে একা সময় কাটাতে চাস বললেই পারতিস। বাচ্চা দুটোকে বকার কি আছে? কিছুটা লজ্জা মাখা মুখ করে বলে পায়েল।
অভি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানহা বলে ওঠে।
” সেটাই তো। গার্লফ্রেন্ডকে একটু কিসি টিসি দিতে ইচ্ছে করছে তো গার্লফ্রেন্ডের কানে কানে গিয়ে বললেই হয়। আমাদের বকার কি আছে? ঠোঁট উল্টে বলে তানহা। পায়েল তো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
“যাহহহ। লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে পায়েল।
তানহা অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বলে।
” পায়েল আপু তোমারা ছাঁদে গিয়ে নরবে সময় কাটাতে পারো। সেখানে কেউ থাকে না।
অভি এবার উঠে দাঁড়ায়।
“আরে ভাই এতো তারা কিসের? গার্লফ্রেন্ড তো আপনারই। একটু এডভাইস দিচ্ছি সেই তর টুকুও সইছে না। কতো প্রেরেম
ফুসকা মুখে দিয়ে বলে।
পায়েল অভির হাতের ভাজে হাত দেয়। অভি ছাড়িয়ে নেয়। তানহার হাত ধরে।
” আমার তোমাকে কিস করতে মন চাইছে। তানহার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলে।
“কিন্তু কিহহ বলতো? তোমার ঠোঁটটা মারাক্তক বাজে দেখতে। এতো বাজে ঠোঁট আমি জীবনেও দেখি নি। পায়েলের ঠোঁট দেখো কতো কিউট। আর তোমরা কালো। সিগারেট টিগারেট খাও না কি?
অভির কথায় তানহা ভীষণ রেগে যায়। রাগের জন্য মুখের ফুসকাটাও চিবতে পারছে না। পায়েলের মনে লাড্ডু ফুটছে। অভি ওর প্রশংসা করছে। নিশি নির্বাক দর্শক।
” হাত ছাড়ুন। কোনোরকমে ফুসকাটা গিলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা।
“হাত তো ছাড়বো না। আমি আর পায়েল প্রেম করবো ছাঁদে আর তুমি আমাদের পাহারা দেবে। আরেক হাত দিয়ে পায়েলের হাত ধরে বলে অভি।
” কখনোই না। আমাকে কি দারোয়ান মনে হয়? রেগে বলে তানহা।
“একদম দারোয়ান মনে হয়।
“নিজের বউকে দারোয়ান বলতে আপনার লজ্জা করে না। মুখ ফসকে বলে ফেলে তানহা। অভি ভ্রু কুচকে তাকায়। পায়েলের হাসি মুখ কালো হয়ে যায়। নিশি বেষম খায়।
“আমি আবার তোমাকে বিয়ে করলাম কবে? ওহহহ এতোখনে বুঝেছি তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও। আমার সাথে একা সময় কাটাতে চাও তাই পায়েলকে ঠেস মেরে বললে। ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে অভি।
তানহা এদিক সেদিক চোখ ঘুরিয়ে বলে।
” মোটেও না। আপনার আশেপাশে থাকলেও আমার খারাপ লাগে।
“প্রেম প্রেম ফিলিংস হয় বুঝি? বাঁকা হেসে বলে অভি। তানহা চোখ বড়বড় করে তাকায়।
” পায়েল তুই কিছু বলছিস না কেনো? তোর বফের সাথে চান্স নিতে চায়। অন্য মেয়েরা হলে তো চুল ছিঁড়ে ফেলতো। পায়েলকে উসকে বলে অভি।
তানহা দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে।
“এই মেয়ে একদম আমার অভির দিকে নজর দেবে না। অভি শুধু আমার। অভির এক হাত জড়িয়ে ধরে বলে পায়েল।
” আপনার বফ না টফ সে হিরো না যে তাকে নিয়ে টানাটানি করবো। আস্ত একটা বদমাইস। বদের হাড্ডি। করলা কোথাকার। তার দিকে নজর দিতে আমার বইয়েই গেছে। দেখা যায় লুচ্চার মতো। দেখলেই আমার থাপ্পড়াইতে মন চায়।
রাগ ঢালতে গড়গড় করে কথা গুলো বলে তানহা। অভি খুব খুশি হয়। কেনোনা তানহা জেলাস।
“এক্সকিউজ মি, আমার বফকে এতোগুলো কথা বলার সাহস পাও কোথা থেকে? তানহার থেকেও পায়েল দ্বীগুন রেগে বলে।
” পায়েল চলো তো এর সাথে তর্ক করে লাভ নেই। পাগল মেবি
“হুম সত্যিই
পায়েল অভির হাত ধরে চলে যায়। তানহা ফুসকার প্লেট ফেলে হনহনিয়ে চলে যায়।
______
সন্ধার পরে অভি বাড়িতে আসে। ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে এসে বাড়ির পরিবেশ কেমন গরম গরম লাগে। অভির রুম থেকে তানহার মায়ের গলার স্বর ভেসে আসছে। অভি তারাতাড়ি রুমে যায়। দেখে অভির মা তানহার মা তানহার বাবা আর অনিক (অভির ভাই) এসেছে। ওরা বসে গল্প করছে। তানহা বাবার কাঁধে মাথা রেখে এটা সেটা বলছে।
” আমি তানহাকে কিছুতেই যেতে দেবো না।
বিরবির করে বলে অভি হুরমুর করে রুমে ঢুকে।
“অভি এতো দেরি হলো যে? কিছুটা রাগী সুরে বলে অভির মা আনিকা।
” পায়েল আপুর সাথে ঘুরতে গেছিলো। তানহা ফট করে বলে ওঠে।
“আম্মু
” চুপ থাকো একদম।
“তোমরা জোর করেছো বলে আমায় বিয়ে করেছিলো। উনি তো পছন্দই করে না আমাকে। আমিও থাকতে চায় না।
” এতো বেশি বুঝো কেনো তুমি? একদম পাকামি করবে না। ইডিয়েট একটা। ধমকে বলে অভি।
“আমার সামনে তুমি আমার মেয়েকে ধমকাচ্ছো? সাহস কতো তোমার? রাগী কন্ঠে বলে তুহিন।
” আমি ওকে কোথাও যেতে দেবো না। ও আমার সাথেই থাকবে। অধিকারের সুরে বলে অভি।
“আমি থাকবো না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে তানহা।
” সকালেই আমি তানহাকে নিয়ে চলে যাবো। তুহিন বলে।
“আম্মু
” আমিও ভাইয়ের সাথে একমত। তানহাকে তোর সাথে আমিও আর থাকতে দেবো না। কাগজে কলমে বিয়ে হয়েছো তো আমি আবার আরেকটা কাগজে সাইন করিয়ে তানহাকে মুক্ত করে দেবো। আনিকা বলে। অভি আসহায় ফেস করে তানহার মেয়ের দিকে তাকায়।
“আমি তানহাকে ছাড়ছি না
” তোমার তানহাকে চায় আবার পায়েলকেও গুড। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে আনিকা।
“আম্মু পায়েল আমার জাস্ট ফ্রেন্ড।
” মিথ্যে কথা। পায়েলের সাথে কি কি করে তা আমি মুখে বলতে পারবো না। সোজা হয়ে বসে বলে তানহা।
আনিকা রাগে গজগজ করছে। অভি বেশ বিরক্ত হচ্ছে তানহার ওপর। সামন্য বিষয় টাকে ইস্যু করে কতো বড় বানাচ্ছে।
“তুমি পায়েলকে নিয়েই থাকো যাও। আনিকা বলে।
” আম্মু কথাটা শোনো। তানহা তোমাদের
“আমি একদম মিথ্যে বলি নি। প্রুফ আছে আমার কাছে। এমনিতেও আমি এইখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছিলাম। পেয়ে গেছি।
” আর একটা কথা বলবা তুমি। তেড়ে এসে বলে অভি। তানহা গুটিয়ে বাবার সাথে চিপে বসে।
“অভি কি হচ্ছে? ধমক দিয়ে বলে আনিকা।
“এতো কথা শুনতে চাচ্ছি না। আমি তানহাকে তোমার সাথে ছাড়বো না ব্যাস।
” আমিও তানহাকে ছাড়বো না ব্যাস।
অভি তানহার হাত চেপে ধরে তানহাকে টেনে তুলে।
” অভি কি করছো?
অভি কারো কথায় পাত্তা না দিয়ে তানহাকে নিয়ে অন্য একটা রুমে গিয়ে দরজা লক করে দেয়।
“এই ছেলের সাথে তুমি আমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছো তুমি?
রেগে বলে তুহিন। হেনা কেঁপে ওঠে।
” এই ছেলের যা ইচ্ছে করুক। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো।
মাথা ঘসতে ঘসতে বলে তুনি। অনিক এতোখন নিরব দর্শকের মতো বসে থাকলে এবার বলে ওঠে।
“আংকেল ওদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। এবার ওদের ঝামেলাটা ওরাই মিটিয়ে নিক।
” আমার মেয়েকে ঠকিয়ে বিয়ে করা হয়েছে। আর তুমি শুনলে না তানহা এখানে থাকতে চায় না। ঠকবাজ কোথাকার।
অনিক চুপ হয়ে যায়।
একদম তালা দিয়ে দেয় ভেতর থেকে। চাবিটা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। তানহা কোমরে হাত দিয়ে দাঁত কটমট করছে। অভি মাথা চেপে ধরে খাটে বসে।
“এটা কি করলেন?
রেগে বলে তানহা।
” এবার যেখানে খুশি যাও
“আমি আপনার সাথে থাকবো না। আপনাকে আমার জাস্ট সয্য হয় না।
চেচিয়ে বলে তানহা।
” ভালো লাগুক না লাগুক তুমি আমার সাথেই থাকবে।
তানহা রাগে গজগজ করে তালা ভাঙতে যায় পাথর নিয়ে।
অভি এবার ভীষণ রেগে যায়। তানহার হাত থেকে পথর ফেলে দিয়ে তানহাকে দরজার সাথে চেপে ধরে। চোয়াল শক্ত করে বলে
“আমাকে বাধ্য করে না তোমার সাথে খারাপ কিছু করতে।
তানহা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করে।
” আমাকে ছাড়ুন।
“সব সীমা অতিক্রম করে গেছো তুমি। এবার শাস্তি ভোগ করো। তানহার নাকের ঠিক ওপরে ঠোঁট রেগে দাঁত কটমট করে বলে অভি।
অভির চোখের দিকে তাকিয়ে তানহার আত্মা কেঁপে ওঠে। ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নেয়।
চলবে।
#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২৫
#Tanisha Sultana
গলা শুকিয়ে আসছে তানহার। বন্ধ একটা রুম। চিৎকার করলেও কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। অভির চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। কপালের রগ ফুটে উঠেছে। দাঁত কটমট করছে। তানহার মুখে নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে তানহা।
“খুব মজা পাও তুমি তাই না? আমাকে বাঁদর নাচ নাচাতে ভালো লাগে তোমার? খুব ভালো লাগে? আমার থেকে চলে গিয়ে খুব ভালো থাকবে?
রাগে গিজগিজ করে বলে অভি।
তানহা ঢোক গিলে।
” কি ভুল আমার? তোমার সাথে থাকতে চায় বলে এমন করো? করুনা করেছি আমি তোমায়। ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গ দিলে আবিরকে ভুলতে তোমার ইজি হবে। ভালো থাকবে। কিন্তু না তুমি তো তুমিই।
অলওয়েজ এটাই ভাবো যে কি করে আমার পিছনে লাগবে আমাকে হার্ট করবে।
লিসেন তানহা তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে।
তানহার আরও একটু কাছে এসে বলে অভি।
অভির এরকম বিহেবে তানহার ভয় করছে। এতোটা রেগে গেলো কেনো বুঝতে পারছে না।
“কখনো তোমায় জোর করি নি। তোমাকে ছুঁয়েও দেখি পর্যন্ত তাও তোমার মন পাওয়া যাবে না। কি করবো বলো তো? কিসের এতো অহংকার তোমার? পেছনে পড়ে থাকি তাই এমন করো? তোমার মনের মধ্যে কখনো প্রশ্ন জাগে না কেনো ও আমার পেছনে পড়ে আছে? তুমি পড়ালেখা করতে চাও সাকসেস হতে চাও এটাতেও আমি তোমায় সাপোর্ট করি। তবুও
বলো?
তানহা মাথা নিচু করে ফেলে।
“দদেখুনন আআপনি
অভি তানহাকে থামিয়ে বলে।
” এক্সকিউজ? আরে মানুষ তো একটা কুকুরেকে এতোটা অবহেলা করে না। অনেক হয়ে গেছে। অনেক কিছু করেছি আমি। তোমার মা পাগলের মতো ঘুরে আমার পিছু। তার মেয়েকে যাতে আমি ভালোবাসি। সুখে রাখি। কিন্তু সে তো জানে না তার মেয়ের পাখনা গজিয়ে গেছে।
অভি তানহার দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে। তানহা চোখ বন্ধ করে আছে। টেনেটেনে শ্বাস নিচ্ছে।
“এই তানহা তাকাও আমার দিকে।
তানহা তাকায় না।
অভি তানহার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে নেয়। তানহা হয়ত জানতো এমনটাই হবে। তাই কোনোরকম ছটফট করে না। আবেশে অভির পিঠে হাত রাখে। বেশকিছুখন পরে অভি তানহাকে ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। তানহাও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
” তুমি ফিল করতে পারো না? আমার ছোঁয়া তুমি অনুভব করো? করো না। আর কখনো করবেও না।
একটু থেমে আবার বলে
” তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই৷ তোমার মতো হাজারটা মেয়ে আছে। যারা অভি বলতে পাগল। অভির জন্য মেয়ের অভাব নেই। কিন্তু তবুও তোমার পেছনে পড়ে আছি।
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে অভি
তাহলে আমার কাছে কেনো আসিস? রং করতে। যতসব। মনে মনে বলে তানহা।
“আবির তোমায় ভালোবাসে তো?
অভির এরকম প্রশ্নে ফট করে চোখ খুলে অভির দিকে তাকায় তানহা। কেনো জানি জোর দিয়ে বলতে পারছে না হ্যাঁ আবির আমায় সত্যিই খুব ভালোবাসে।
” ভালোবাসা কাকে বলে জানো তুমি? ভালোবাসার অনুভুতিটা কেমন হয় বোঝো?
কিছুটা চেচিয়ে বলে অভি। তানহার চোখ পানি টলমল করছে।
“আবির যদি তোমায় ভালোবাসতো তাহলে তোমার আমার সাথে বিয়েটা ও মানতে পারতো না। যেমনটা তুমি পারো নি। মায়ার বাবা কোম্পানির বস বানিয়ে নিলো আর ও মায়াকে এক্সেপ্ট করে নিলো। শুনলাম কাল হানিমুনে যাচ্ছে। এটাই ভালোবাসা?
তানহাকে ছেড়ে দিয়ে বলে অভি। তানহা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
” এনিওয়ে আমি তোমার পাস্ট নিয়ে কোনো কথা বলবো না। তোমার পাস্টে আমি ছিলাম তাই সেখানে নাক গোলানোর কোনো অধিকার আমার নেই। এবার তুমি বলো থাকতে চাও না আমার সাথে?
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় তানহার দিকে।
তানহা এদিক সেদিক চোখ ঘোরাচ্ছে। মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। ওড়না আঙুলে বাঁধছে।
“এন্সার মি ইয়েস ওর নো
ঝাঁঝালো গলায় বলে অভি।
তানহা ছিঁটকে ওঠে।
” হ্যাঁ হ্যাঁ মানে
উত্তেজনায় তানহা কি বলছে নিজেও জানে না। অভি ভ্রু কুচকে তাকায় তানহার দিকে।
“আবিরের তোমার মতো ইডিয়েটের কোনো প্রয়োজন নেই।
তানহা এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। অভি ঘুরে দাঁড়ায়। সিমপেথি দেখাতে ইচ্ছে করছে না।
” আপনি সব সময় আমার চামড় ধরা ঘা তে লবন দেন কেনো? আমি তো আবির নামটাকে ভুলতে চায়। কিন্তু আপনি সব সময়
আমার কাউকে প্রয়োজন নেই। একা থাকতে চায় আমি। বুঝলেন?
কাঁদতে কাঁদতে বলে তানহা।
“ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম তোমায়। ইগনোর কাকে বলে দেখবে তুমি। আর অভিরাজ ফেলে দেওয়া জিনিস কখনো কুঁড়িয়ে নেয় না।
অভি বেলকনিতে চলে যায়। তানহা খাটে ধপ করে বসে পড়ে। “অভিরাজ ফেলে দেওয়া জিনিস কখনো কুঁড়ির নেয় না” কথাটা কানে বিষের মতো বাজছে।
অভি তানহা দুজনেই খুব খিদে পেয়েছে। অভি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। তানহা পেটে হাত দিয়ে খাটে গোল হয়ে বসে আছে।
তুহিন অনিক অনেক চাবি দিয়ে রুম খোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি। শেষমেষ রেগে হুরমুর করে রাতেই তানহার মাকে নিয়ে উনি চলে যায়। শাশিয়ে যায় অভিকে দেখে নেবে।
“অভি দরজা খোল? অভির মা দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে।
অভি বেলকনি থেকে রুমে আসে।
” চাবি জানালা দিয়ে ফেলে দিছি। কপালে ভাজ ফেলে বিরক্তি নিয়ে বলে অভি।
“চাবি ফেলে দিছি মানে কি? ফজলামো হচ্ছে? রাগ দেখিয়ে বলেন উনি।
” স্টোর রুমে এক্সট্রা চাবি আছে।
“দিনদিন প্রচন্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছিস তুই। বলে উনি।
অনিক চাবি নিয়ে আয়।
অনিক চাবি আনতে চলে যায়।
তানহা অভির দিকেই তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ বেলকনিতে কিছু পড়ার আওয়াজ আসে। তানহা অভি দুজনই সেদিকে তাকায়। অভি এগিয়ে যায়। গিফটের কাগজে মোড়ানো বড় একটা প্যাকেট। অভি ওটা তুলে রুমে নিয়ে আসে। খাটের এক কোনায় বসে প্যাকেটটা খুলতে থাকে। তানহা উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। খোলা শেষ হওয়ার আগেই অনিক দরজা খুলে হুরমুর করে রুমে ঢুকে। পেছন পেছন আনিকা। অভি বালিশের নিচে রেখে দেয় ওটা।
” সিগারেটের গন্ধ কেনো? চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলে আনিকা।
“সিগারেট খেয়েছি তাই। সাফসাফ বলে দেয় অভি।
” ব্রো তুই এটা কি করছিস? একটা মেয়ের জন্য এতো সিনক্রিয়েট করার কোনো মানে হয়?
“অনিক বোন হয় ও তোমার। একটা মেয়ে কেমন কথা? রাগি গলায় বলে আনিকা।
” সরি আম্মু। মাথা নিচু করে বলে অনিক।
“তোমারা প্লিজ এখান থেকে যাও। ভাল্লাগছে না আমার।
বিরক্তি নিয়ে বলে শুয়ে পড়ে অভি। তানহা এখনও হাঁটু মুরে বসে আছে।
” খাবি না? দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে আনিকা।
“তোমারা খেয়ে নাও আমি পড়ে খাবো। চোখ বন্ধ করে বলে অভি।
” তানহা খেতে আয়।
বলেই আনিকা আর অনিক বেড়িয়ে যায়। তানহা ওইভাবেই বসে থাকে। পেটে খিদে থাকলেও খেতে ইচ্ছে করছে না।
ওরা যেতেই অভি ফট করে উঠে সেই প্যাকেটটা হাতে নেয়। গিফটের পেপার ফেলে দেওয়ার পরে সেখানে লেখা দেখে “আমার তানহা”
অভি এক নজর তানহার দিকে তাকিয়ে। পুরোটা খুলে ফেলে। লাল শাড়ি, চুড়ি, ফুলের গাজরা, আর মোবাইল ফোন সাথে একটা চিরকুট। এসব দেখে তানহা নিজেও হা হয়ে গেছে।
অভি চিরকুটটা খুলে পড়ে
“আমার তানহা,
তুমি জানো তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহুর্ত কাটে না। মনটা সব সময় তোমার কাছে যেতে চায়। তোমার হাতে হাত রেখে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে চায়। নতুন একটা পৃথিবীতে যেতে চাই। যেখানে চেনাজানা কেউ থাকবে না। আমি জানি তুমি খুব তাড়াতাড়ি অভির থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। তারপর আমরা বিয়ে করবো। এতোগুলো জুনিয়র নেইমার হবে আমাদের। হেপি ফ্যামেলি হবো আমরা। ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে। আর জানি জানি তুমিও আমার প্রতি একটু হলেও দুর্বল।
তোমার
ফিউচার বর
চিরকুটটা পড়ে অভি তানহার পাশেই রাখে। তানহা উঁকি ঝুঁকি মেরে পড়ে নিয়েছে। অভি শান্ত হয়ে আবার শুয়ে পড়ে।
” বিশ্বাস করুন আমি চিনি না একে। আমার তো এমন কেউ নেই। কে হতে পারে জানি না আমি। ঢোক গিলে বলে তানহা।
“ডিভোর্স পেয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। নো টেনশন।
” আমি সত্যিই চিনি না। বিলিভ মি
“তো আমি কি করবো? কপালে ভাজ ফেলে বলে অভি।
তানহা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। সত্যিই তো সাফাই দেওয়ার কি আছে? কে ও?
একবার মনে হচ্ছে। আবার মন বলছে
” অভি বিশ্বাস করলো তো আমার কথা? সত্যিই তো এমন কেউ নেই। রেগে গেলো না তো অভি।
নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হচ্ছে তানহা।
“আমি বুঝতে পারছি না এই লোকটা আমাকে ফোন কেনো দিলো? ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলে তানহা।
” আমি বুঝতে পারছি না তুমি কেনো আমাকে এক্সকিউজ দিচ্ছো।
কি বললাম? অভি ফেলে দেওয়া জিনিস কখনো কুঁড়িয়ে নেয় না। তো ধরে নাও তোমায় ফেলে দিয়েছি। যা খুশি করো আই ডোন্ট কেয়ার।
অভি বেড়িয়ে যায়। তানহার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এমন করার কি আছে? তখনই ফোনটা বেজে ওঠে। তানহা দ্বিধায় পড়ে যায় রিসিভ করবে কি করবে না।
“কে এই লোকটা? কি চায়?
এসব জানতে হলে ফোনটা রিসিভ করতে হবে।
চলবে।