ভালোবাসি তাই পর্ব-২৬+২৭

0
1229

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২৬
#Tanisha Sultana

“হেলো কে বলছেন?
ওপাশ থেকে উওর আসে না।
” শুনতে পাচ্ছেন না? এসবের মানে কি? এসব কেনো দিয়েছে? চাইছেন টা কি?
তেঁতে উঠে বলে তানহা।
“তোমাকে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে ওপাশের মানুষ।
” ইয়ারকি হচ্ছে? মশকরা করছেন?? চেনা নেই জানা নেই বলছেন
“আমি তোমাকে চিনি। এবার তুমি আমাকে চিনে নেবে। মুচকি হেসে বলে লোকটা।
তানহা রাগে হাসফাস করছে।
” আমি বিবাহিত জানেন?
দাঁতে দাঁত চিপে বলে।
“হুম জানি। আবার এটাও জানি তোমাদের খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স হতে চলেছে। শান্ত গলায় বলে লোকটা।
” ফাজলামোর একটা লিমিট থাকে।
“ভালোবাসি সেটা প্রকাশ করাটা কি ফাজলামো?
ইনোসেন্ট সুরে বলে লোকটা।
” একটা বিবাহিত মেয়েকে ভলোবাসি বলাটা ফাজলামো ছাড়া অন্য কিছু না। নেক্সট টাইম ফোন দিবেন না। আর বেলকনি থেকেই গিফট গুলো নিয়ে যাবেন। বুঝলেন?
ফট করে ফোনটা কেটে দেয় তানহা। রাগে মাথাটা ফেটে যাচ্ছে। কতবড় সাহস গিফট দেয় আবার কল করে। মাথা চেপে ধরে বসে তানহা।

রাতে আর ডিনার করা হয় না তানহার। পেটে খিদে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না।
অভি মা ভাইয়ের সাথে খেয়ে নেয়। রুমে এসে দেখে তানহা পেটে হাত দিয়ে বসে আছে। অভি একপলক তাকিয়ে লাইট অফ করে একপাশে শুয়ে পড়ে তানহার দিকে পেছন ফিরে। তানহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভির দিকে।
কিছু তো একটা ফিল করে অভির জন্য। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারে না।
“আমার পাশে কেউ বসে থাকলে আমার ঘুম হয় না। সো হয় ঘুমাও নয় রুম থেকে বেরিয়ে যাও
মাথাটা একটু উঁচু করে বিরক্তি নিয়ে বলে অভি। তানহা অভির পাশে শুয়ে পড়ে।
আজ আর অভি তানহাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় না। তানহার কাঁধের ঠিক ওপরে মাথাও রাখে না। তানহার দিকে ঘুরেও তাকায় না। খুব বিরক্ত লাগছে তানহার।

একটু পরেই অভির ফোন বেজে ওঠে। অভি ঘুমঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করে।
” হুমম আমি কালকেই চলে আসছি। আম্মু কে মেনেজ করে নিবো। তুই ওদের হ্যাঁ বলে দে। এখানে আমারও ভালো লাগছে না। আর হ্যাঁ আমার পাসপোর্ট ফিসা পাঠিয়ে দিস সকালেই
বলেই ফোন কেটে দেয়। তানহার বুকের ভেতর ঢক করে ওঠে। অভি কি কোথাও যাচ্ছে?

“বলছিলাম আপনি কোথাও যাবেন? কিছুটা হাসফাস করে বলো তানহা।
অভি চিৎ হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বলে
” হুমম সিঙ্গাপুর যাবো।
“কেনো?
” আমার ইচ্ছে।
তানহার খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে যাবেন না। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
“আপনি চলে গেলে পায়েলের কি হবে?
” সে চিন্তা তোমার করতে হবে না। এইটুকু নিশ্চিত অন্য কারো হাত ধরবে না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে অভি। অভির কথাটা বুকে তীরের মতো বিঁধে।
আরও অনেক কথা মনের মধ্যে জমাট বেঁধেছে কিন্তু অভির ব্যাকা ব্যাকা কথা শুনে আর বলে না।
“লাস্ট বারের মতো একটা জিনিস চাইবো দেবে? আকুলতা ভরা কন্ঠে বলে অভি।
” হুমম বলুন না। সাথে সাথে বলে তানহা।
“তোমায় জড়িয়ে ধরি? কাল তো চলেই যাবো। দুইবছর থাকবো সেখানে। আবার নাও ফিরতে পারি। ক্যারিয়ার গড়তে হবে তো।
তানহা উওরে কিছু বলে না।
” তুমি না বললেও আমি তোমায় জড়িয়ে ধরবো
অভি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তানহাকে। যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে। তানহার ঘাড়ে মুখ ডুবায়।
“একবার বলো থেকে যাও আমি থেকে যাবো।
মনে মনে বলে অভি।

তানহা অভির পিঠে হাত রাখে। চোখ বন্ধ করে। কিন্তু ঘুম আসছে না। অভি কেনো চলে যাচ্ছে? এটাই ভাবছে।
” গেলে যাক আমার কি? ওনার এটিটিউট দেখার টাইম নাই। ভেবেছে কি চলে যাওয়ার কথা বলবে আর আমি আটকে দেবো কখনোই না।
মনে মনে বলে তানহা।

খুব সকালে তানহার ঘুম ভেঙে যায়। পেটের ওপর থেকে অভির হাতটা আস্তে করে সরিয়ে উঠে বসে। ফজরের নামাজ পড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বেলকনির রেলিং এর ওপর আবারো একটা গিফটের বক্স দেখতে পায়। আপনাআপনি ভ্রু কুচকে যায় তানহার। কে এই লোকটা? বক্সটা খুলে দেখে কয়েকটা গোলাপ আর হিরের আংটি। সাথে একটা চিরকুট।

“আজ অভি চলে যাচ্ছে। তোমার আর আমার রাস্তা ক্লিয়ার। এই রিংটা পড়িয়ে দেবো তোমায় যেদিন আমাদের প্রথম মিট হবে।

চিরকুটটা পড়ে মাথায় রক্ত চড়ে যায় তানহার। পেছন থেকে অভি এসে তানহার হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে যায়। তানহা ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে।
” বিছানায় তোমার গিফট করা ফোনটা বাজছিলো।
বলেই চিরকুটটা আবার তানহার হাতে দিয়ে চলে যায়।
তানহা রেগে ফোন আর গিফট গুলো ফেলে দিয়ে রুমে চলে আসে।

আজ কলেজে বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান। নিশি বারবার বলে দিয়েছে শাড়ি পড়তে। তাছাড়া সবাই আজ শাড়ি পড়বে। তানহা রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে যায়। দেখে অভি আর আনিকা রান্না করছে।
“আন্টি
তানহা ডাকে। উনি খুনতি হাতে নিয়েই বলে
” হুমম বলো।
“তোমার কোনো শাড়ি হবে।
” শাড়ি কেনো?
“ভার্সিটিতে পড়ে যেতাম।
” হুমম আছে। দিবোনি। আগে এদিকে আয় তোর সাথে কথা আছে।
তানহা এগিয়ে যায়।
“অভি তুই যা এখান থেকে।
অভি করলা ভাজি বাটিতে বেড়ে চলে যায়। তানহা আন্টির পাশে টুল টেনে বসে।
” অভি আজ সিঙ্গাপুর যাবে জানিস।
“হুমম
” ভালোই হয়েছে। বাজে পরিস্থিতিতে তোদের বিয়েটা হলো। দুইজনই স্টুডেন্ট। এবার ভালো হবে। অভিও পড়াশোনায় ভালো মনোযোগ দিতে পারবে আর তুইও। দুই বছর বাদে অভি যখন ফিরবে তখন তোদের ধুমধাম করে বিয়ে দেবো। মেচিউড ও হবি তোরা।
তানহা মন দিয়ে শুনছে কথা গুলো।
“অভির কথা শুনে আমি সময় মুগ্ধ হই। দেখ এমন চিন্তা কিন্তু অন্য ছেলেরা কখনোই করতো না।
” হুমম
তানহা ছোট করে বলে।
“তোরা ভালো থাক এটাই চায় আমি। এবার যা অভিকে সময় দে। রাত বারোটায় তো চলেই যাবে।দুবছর দেখতে পাবি না।

তানহা নিশ্চুপে উঠে রুমে চলে যায়। অভি লাগেজ থেকে দুটো শার্ট বের করছে।
” আপনি যাবেন না? চোখে মুখে খুশির ঝলক তুলে বলে তানহা।
“ফ্লাইট একদিন পিছিয়ে গেছে।
তানহা খুশি হলেও সেটা প্রকাশ করে না।

করলা ভাজি ডাল আর ডিম ভাজি দিয়ে খাবার খেয়ে আনিকার একটা বাসন্তী কলার শাড়ি নিয়ে সেটা পড়তে থাকে। কিন্তু পড়তে পারছে না। একটু পরপর আন্টি আন্টি বলে ডাকছে কিন্তু তার পাত্তা নেই।

” কি হয়েছে? আম্মুকে ডাকছো কেনো?
অভি ঘড়ি পড়তে পড়তে রুমে ঢুকে বলে। তানহা শুধু ব্লাউজ আর পেডিকোড পড়ে ছিলো। অভিকে দেখে চমকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।
“আম্মু বিজি আছে। আমাকে হেল্প করতে বলেছে।
মাথা নিচু করে বলে অভি। তানহা চোখ বন্ধ করে অভির দিকে ঘুড়ে দাঁড়ায়। তানহার দিকে তাকিয়ে অভি ঢোক গিলে। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে
” কন্ট্রোল অভি। কন্ট্রোল

অভি তানহার কাছে গিয়ে শাড়ি পড়াতে থাকে। তানহা চোখ বন্ধ করে আছে। কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। আজ আর ছটফট করছে না।
“এটা গুঁজো
কুঁচি গুলো তানহার দিকে এদিকে দিয়ে বলে অভি। তানহা চোখ বন্ধ করেই আছে।
” ওই হেলো
খানিকটা ধমক দিয়ে বলে অভি। তানহা চোখ খুলে কুঁচি গুলো নিয়ে গুঁজে নেয়।
“শেষ
বলেই অভি চলে যায়। তানহা একটু সাজুগুজু করে ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে পড়ে। অভি আগেই চলে গেছে। তাই তানহা একা একাই যাচ্ছে।

ভার্সিটির পুরো প্রোগ্রামটা ভালোভাবেই শেষ হয়। পুরো সময়ে তানহা এক পলকের জন্য অভিকে দেখেনি।
নিশি তানহাকে জোর করে কোথাও একটা নিয়ে যায়। তানহা হাজার বার জিজ্ঞেস করেও উওর পায় না। নিশি হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
” তোমাকে আর অভি ভাইয়াকে বাঁধতে নিয়ে যাচ্ছি। আজ দেখবো তোমরা কাছাকাছি না এসে কি করে পারো।
বাঁকা হেসে বলে নিশি।

চলবে।

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২৭
#Tanisha Sultana

সেঁতসেঁতে মাটির ঘরে তানহা আর অভিকে বন্ধ করে দিয়েছে নিশি। হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়াতে বেশ খানিকটা ভিজে গেছে তানহা। নিশি বলেছিলো এই ঘড়টাতে একটু দাঁড়াতে বৃষ্টি কমলে চলে যায়। কিন্তু তানহা ঘড় ওবদি আসতেই তানহাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে নিশি দরজা লক করে দেয়। তানহা হাজার ডাকা স্বত্বেও দরজা খোলে না।
অভিকেও আশিক একই ভাবে এই ঘড়ে নিয়ে আসে। অভি কে একটু বসতে বলে আশিক চলে গেছিলো। অভি ছোট একটা চৌকিতে বসে ছিলো। তানহাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
“তুমি এখানে?
হঠাৎ অভির গলা শুনে তানহা ধপফরিয়ে পেছনে তাকায়। অভিকে দেখে বেশ ঘাবড়ে যায়।
” না মানে নিশি
থেমে থেমে এটুকু বলে তানহা।
“ওহহহ গড
মাথায় হাত দিয়ে বলে অভি।
” ওরা প্লেন করে আমাদের এখানে বন্দি করেছে। রাগে গজগজ করে বলে অভি।
“এ্যাঁ
ভেবাচেকা খেয়ে বলে তানহা। অভি মাথায় হাত দিয়ে চৌকিতে বসে পড়ে।
ঘড়টা বেশ বড়। তবে একটা চৌকি ছাড়া কিছুই নেই। মাটির ঘর। বৃষ্টি হওয়াতে ঘরের মাটি ভিজে ভিজে আছে।
তানহার শাড়িটা বেশ খানিকটা ভিজে গেছে। হালকা ঠান্ডাও লাগছে। এই ঘড়ে এক টুকরো সুতো পর্যন্ত নেই।
দরজার পাশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। কি করবে বুঝতে পারছে না।
অভি ফোনকরেই যাচ্ছে আশিককে। কিন্তু আশিক ফোন তুলছে না। শেষমেশ ফোন সুইচঅফ করে দেয়। বেশ বিরক্ত হয় অভি। এইসবের মানে হয়? আজব

ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে। তানহার দিকে এক পলকের জন্যও তাকাচ্ছে না। মাথা নিচু করে ভাবছে এখান থেকে বেড়বে কিভাবে? জানালা খুলে বেরোনোরও কোনো উপায় নেই শক্ত কাঠের জানালা।
” দিনটাই খারাপ। প্রথমে ফ্লাইট মিছ হলো আর এখন এখনে বন্দী থাকো।
অন্য ফ্রেন্ডদের কল করে অভি। কেউ ফোন রিসিভ করে না। বিপদে পড়লে এমনই হয়।
এতোখনে তানহার দিকে নজর পড়ে অভির। শাড়ির আঁচলে হাত পেঁচাচ্ছে নার্ভস হয়ে। শাড়ি ভিজে যাওয়াতে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। জর্জেট শাড়ি তাই পেটটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চুলগুলো ভিজে এলোমেলো হয়ে গেছে।
একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
“এই মেয়েটা আমাকে পাগল করার ধান্দা করেছে।
বিরবির করে বলে অভি।

সন্ধা হচ্ছে। বৃষ্টির প্রবলতা বাড়ছে। ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। ঠান্ডা হাওয়া বইছে। তানহার প্রচন্ড শীত করছে। দরজার সাথে লেপ্টে আছে। অভি এক মনে গেমস খেলছিলো। কিছু একটা ভেবে শার্ট খুলে তানহার দিকে এগিয়ে দেয়।
” এটা পড়ে নাও
“মাথা ঠিক আছে আপনার?
চোখ মুখ শক্ত করে বলে তানহা
” ঠান্ডা লাগছিলো তাই বললাম। এবার তোমার ইচ্ছা।

শার্টটা খাটের ওপর রেখে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অভি।
ভীষণ ঠান্ডা লাগছে তাই তানহা শার্টটা হাতে নেয়। শাড়ির ওপরেই শার্ট পড়তে যায়।
“স্টুপিট, গাঁধ তুমি? তোমার শাড়িটা ভিজা। এবার এটার ওপরে শার্ট পড়লে তোমার শার্টটাও ভিজে যাবে। ইডিয়েট
ধমক দিয়ে বলে অভি।
” সত্যিই তো। এটা তো আগে ভেবে দেখি নি। মনে মনে ভাবে তানহা।
এবার পড়েছে দোটানায়। অভির সামনে কি করে শাড়ি খুলে শার্ট পড়বে। শার্টটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছে।
“লিসেন আমার না তোমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তোমার থেকে হাজার গুন সুন্দরীরা আমার পেছনে লাইন দিয়ে থাকে। তোমার দিকে আমি তাকাবোই না।
ভাব নিয়ে বলে অভি। তানহা এবার চোখ তুলে অভির দিকে তাকায়। শুধু কালো একটা জিন্স পড়া। খালি গায়ে। এই নিয়ে তিন দিন অভিকে খালি গায়ে দেখলে তানহা।
লজ্জা পেয়ে পেছন ঘুড়ে তাকায় তানহা।
অভি আবার ফেন নিয়ে বসে।

তানহা ঘরের একদম শেষপ্রান্তে গিয়ে শাড়ি খুলে অভির সাদা শার্টটা পড়ে নেয়। নতুন পারফিউমের গন্ধ আসছে শার্ট থেকে। এর আগে কখনো এই রকম গন্ধ তানহা পায় নি অভির শার্ট থেকে। কলার উঁচু করে গ্রাণ নিতে থাকে তানহা। চুল গুলো খোপা করে বেলিফুলের মালা দিয়েছিলো। খোঁপাটা খুলে ফেলে তানহা। কেমর ওবদি চুল গুলো বিছিয়ে পড়ে।
অভি ফোনের ক্যামেরা অন করে তানহাকে দেখছে। তানহা ভাবছে গেমস খেলছে। সরাসরি দেখতে গেলে তানহার সাথে ঝগড়া বেঁধে যাবে।
অভির কাছে তানহাকে হিন্দি সিনেমার হিরোইনদের মতো লাগছে। বা তাদের থেকেও বেশি সুন্দরী। শার্ট টাতে বেশ মানিয়েছে।

রুমটাতে একটা লম্বা দড়ী বাঁধা ছিলো। তানহা শাড়িটা ওখানে মেলে দেয়। চৌকির এক পাশে এসে বসে তানহা।
” শার্টের নিচে আজকে গেঞ্জি বা ওপরে জ্যাকেট কেনো পড়েন নি? ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“তোমাকে আমার বডি দেখাতে। ফোন থেকে চোখ তুলে বলে অভি।
” সোজা কথা বলতে পারেন না?
“সেম টু ইউ। তুমি আমার সাথে ঝগড়া করবে বললেই পারো এভাবে গেঞ্জি বা জ্যাকেট তোলার কি দরকার?
” আপনার সাথে ঝগড়া করার মুড নাই আমার।
“সেম
” আপনি ইচ্ছে করে করেছেন এসব। রাগ দেখিয়ে বলে তানহা।
“এতে আমার লাভ? সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে অভি।
” জানি না। একটু বেঁকে বসে বলে তানহা।
“জানো না তো বলতে আসছে কেনো? বিরক্ত হয়ে বলে অভি।
” আপনার লাভ কি সেটা জানি না। বাট এটা জানি এসব আপনার কারসাজি। নিশিকে হাত করে আপনি এসব করেছেন যাতে আমার আর আপনার মধ্যে সবটা ঠিক হয়ে যায়। লিসেন কিচ্ছু ঠিক হবে না। আমি চায় না ঠিক করতে। আপনার মতে চরিএহীন করলার সাথে আমি থাকতে পারবো না।
গটগট করে কথা গুলো বলে তানহা। কথা শেষ করে জোরে শ্বাস নেয়।
“তোমার সাথে আমিও কিচ্ছু ঠিক করতে চায় না। আমার সাথে তোমার যায় না।
” তা যাবে কেনো? আমি তো পুরোনো হয়ে গেছি। পায়েল আপুর সাথে ঠিক যায়। অভিমানের সুরে বলে তানহা।
“তোমার থেকে ভালো আছে। মুখ বাঁকিয়ে বলে অভি।
” আমি কোথায় খারাপ? দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা।
“তোমার সব টুকুই খারাপ। মনটা বিষে ভরা।

তানহা অভিকে ধাক্কা দিয়ে চৌকিতে ফেলে দেয়। গলা চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে
আমি খারাপ তো বিয়ে কেনো করছিলি? পায়েলকে পেয়ে এখন আমি খারাপ এটা বলছিস? লুচ্চা, খাটাশ, মেয়ে দেখলেই নিকনিক করতে ইচ্ছে হয় সেটা তোর পবলেম। তুই খারাপ। আমার লাইফটা শেষ করে দিয়েছিস। ইডিয়েট তুই। কি পেয়েছিস আমাকে। আমার সাথে যা খুশি তাই করবি? চলে যা তুই। আমার তোকে এক ফোঁটাও প্রয়োজন নেই। আই হেট ইউ

তানহার এরুপ দেখে অভি বেশ অবাক হয়। এতোটা রেগে যেতে তানহাকে কখনো দেখেনি। কথা বলার সাথে সাথে তানহার চোখে পানি টলমল করছে। যেটা অভি খেয়াল করে।
গাল ছেড়ে দিয়ে তানহা উঠে যেতে নেয় অভি দুই হাত দিয়ে বুকের ওপর ফেলে দেয়। তানহার ঠোঁটটা অভির থুতনির ঠিক পাশে পড়ে। লাল লিপস্টিক অভির থুতনির পাশে লেগে যায়।

” ভালোবাসো না এটা জানতাম। কিন্তু ঘৃণা করো এটা জানতাম না। জীবনের সব থেকে বড় ভুলটা ছিলো তোমাকে বিয়ে করা। আমি সিঙ্গাপুর যাওয়ার অফরটা পেয়েছিলাম তোমাকে বিয়ে করার ঠিক দুদিন আগেই। কেনো যাই নি জানো? তোমার সাথে বিয়ে বিয়ে খেলা খেলবো বলে। এখন নিজেকে জোকার মনে হয়। আর আমাকে জোকারটা তুমি বানিয়েছো তানহা ইসলাম। এর ফলটা খুব ভয়ঙ্কর হবে। অভি চৌধুরী শুধু কেয়ার করতেই জানে না শোধও তুলতে জানে।
দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলে বলে তানহাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে রাগটা দমানোর চেষ্টা করে অভি। ভেবেছিলো আজ হয়ত সত্যিই সবটা ঠিক হবে। কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব না। নদীর পাড়ে কখনেই ঘড় বাঁধা যায় না।

তানহা হতভম্ব হয়ে বসে আছে। বোঝালো কি আর অভি বুঝলো কি?

“তানহা সরি। খুব সরি। তোমার সাথে এসব করাটা ঠিক হয় নি। এর কখনেই তোমার ওপর কোনো জোর খাটাবো না। আমাদের তো আর কালেমা পড়ে তিন কবুল বলে বিয়ে হয় নি। জাস্ট কাগজে কলমে বিয়ে হয়েছে। এটাকে ঠিক বিয়ে বলা যায় না। বিয়ে হয় মন থেকে। তবুও আমি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো। চিন্তা করো না।
বলে অভি উঠে জানালার কাছে যায়।

আমাকে একটু সময় দিলেই পারতেন। কিন্তু না তা দেবেন না কারণ আপনি এমনই। খুব খারাপ। অভিমান বোঝেন না। আর আপনার ওপর অভিমান করতে আমার বইয়েই গেছে। যা খুশি করেন। আমার কি?

মনে মনে বলে তানহা।

সাতাইশ বার ফোন করার পরে আশিক ফোন রিসিভ করে।
” ফাজলামো পেয়েছিস? পাঁচ মিনিটের মধ্যে দরজা খুলে দে।
চোয়াল শক্ত করে বলে অভি।
“আরে ব্রো রিলাক্স। আগে বল তোদের ফুলসজ্জা হলো?
অভি দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” হ্যাঁ হয়ে গেছে। এবার কয়েকদিন পরেই চাচ্চু ডাক শুনতে পাবি।
“আলহামদুলিল্লাহ
আধ ঘন্টার মধ্যে যদি বৃষ্টি থেমে যায় তবে দরজা খুলে দেবো আর যদি না কমে তবে আই এম সরি টু সে তোদের রাতটা ওখানেই থাকতে হবে।

বলেই গট করে আশিক ফোন কেটে দেয়। রাগে অভির মাথা ফেটে যাচ্ছে। মশকরা করা হচ্ছে। পেয়েছেটা কি এরা। যা খুশি করবে?

তানহা হাঁটু ভাজ করে বসে আছে। চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পড়ছে।

” হেই স্টুপিট এখানে কেউ তোমাকে মারে নি। কান্না করতে হলে এখান থেকে সরে কান্না করো। আমার নেকামো পছন্দ না।

তানহা এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে।হেঁচকি তুলে কাঁদছে। কাঁদলে তানহার ঠোঁট উল্টে যায়। বেশ লাগছে অভির বেপারটা।
তানহা কান্না করছে আর কিছু বলছে যেটা অভির কান ওবদি পৌছায় না। কি বলছে হয়ত তানহাও বুঝতে পারছে না।
“কান্না করে সিমপ্যাথি পেতে চাইছো?

তানহা এবার আশেপাশে কিছু খুঁজে। হাতের কাছে কিছু না পেয়ে নিচ থেকে জুতো তুলে অভিকে ছুঁড়ে মারে।

চলবে