#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪৮
#Tanisha Sultana
তানহা ধরফরিয়ে উঠে বসে। বাবা দরজা ধাক্কাচ্ছে।
“আসছি বাবা
গলা উঁচু করে বলে তানহা। মনের মধ্যে মেঘ জমে যায়। তারমানে অভির ডাকটা ভুল ছিলো। অভি আসে নি।চোখ দুটো ছলছল করে উঠে তানহার। শুনেছিলো বিয়ের পরে ভালোবাসা কমে যায়। তাহলে কি সত্যি ভালোবাসা কমে গেলো? মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে তানহার। বালিশের পাশে রাখা ফোনটা তুলে পাওয়ার বাটনে চাপ দেয়। ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে। হয়ত চার্জ শেষ। চুল গুলো হাত খোপা করে ঘরের লাইট জ্বালায়। তারপর ফোনটা চার্জ দিয়ে ওয়াশরুমে যায়। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে রুম থেকে বের হয়। তানহার মা নুডলস রান্না করেছে। তানহা বের হতেই নুডলসের বাটি এগিয়ে দেয়। তানহার বাবার পাশে বসে নুডলস খেতে থাকে।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। কপাল কুচকে যায় তানহার বাবার। তানহা চমকে ওঠে।
” দেখতো তানহা ক এলো।
চায়ের কাপে চুমুক দিন বলেন তিনি। তানহা নুডলসের বাটি নামিয়ে ওড়নাটা গলা থেকে খুলে ভালো করে গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে দেয়। এক গাল হাসি নিয়ে অভি দাঁড়িয়ে আছে। তানহার কপালে দুটো ভাজ পড়ে যায়।
এখনো স্বপ্ন দেখছে। তানহা মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। অভি সরু চোখে তাকায়। বেপারটা কি? কিছু না বলেই চলে গেলো। অভি দরজা আটকে ভেতরে আসে। তানহা আবার নুডলসের বাটি হাতে নিয়ে টিভির দিকে মনোযোগ দিয়ে খেতে থাকে। তানহার বাবা অভিকে দেখে বলে
“তুমি?
” বউয়ের টানে ছুটে এলাম।
এক গাল হেসে বলে অভি। উনিও মুচকি হাসে। অভি তানহার রুমে চলে। তানহা সেদিকে একবার তাকিয়ে ভেংচি কাটে।
আজ তানহা অভির সাথে থাকবে না ঠিক করে নিয়েছে। কেনো থাকবে? তখন কিভাবে কথা বললো। সকাল আগে খাবার খেয়ে আগে আবির যে রুমে থাকতো সেখানে চলে যায়। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে খাটের মাঝ খানে গোল হয়ে বসে। রুম টা আগের মতোই পরিপাটি। তানহা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের ওপরে। একটা সাদা কাগজ ভাজ করে রাখা। তানহা উৎসাহ নিয়ে কাগজটা হাতে নেয়। খুলে ফেলে
“তানহা
আই এম সরি, আমি ভেবেছিলাম তুমি অভির সাথে সুখে নেই। তাই তোমাকে অভির থেকে মুক্তি দেওয়ার রাস্তা খুঁজছিলাম।রকি নামের একটা ছেলেকে হায়ার করে তোমাকে গিফট পাঠাতাম। যাতে অভি তোমায় সন্দেহ করে ছেড়ে দেয়। তুমি নিজের মতো লাইফ সাজাতে পারো। তুমি আমি বুঝতেই পারি নি তোমার আর অভির ভালোবাসাটা ঠিক কতোটা গভীর। খুব বড় ভুল করেছি আমি। এতোগুলো সরি।
লেখাটা পড়ে তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ও জানতো এরকম কিছুই হচ্ছে। কাগজটা কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে তানহা। এটাই লাস্ট কাগজ যেটা অভির থেকে লুকিয়ে ছিঁড়ে ফেললো।
অভি তানহার বাবা মায়ের সাথে বসে খাবার খাচ্ছে। এদিক সেদিক তাকিয়ে তানহাকেও খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ গেলো কই?
কোনোরকমে খেয়ে অভি তানহাকে খুঁজতে বের হয়।
একা এই রুমে তানহার ভয় করছে। তাই ফট করে বেরিয়ে পরে। আর অভির সামনে পড়ে। তানহা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
” তুমি এখানে?
হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলে অভি।
“আমি যার তার সাথে কথা বলি না।
চুল গুলো ঝাড়ি মেরে পেছনে দিয়ে চলে যায় তানহা।
“ওরে ভাব রে
গলা পর্যন্ত চাদর টেনে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তানহা। অভি এসে কান ধরে বলে
” সরি
তানহা তাকায় না। ঘুমের ভান ধরে থাকে।
“সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি সরি
অভি বলতেই থাকে। তানহা ফিক করে হেসে ফেলে। উঠে বসে।
” আর কখনো এমন করবেন আমার সাথে?
“না
” পাক্কা
“হুমম পাক্কা
” লাভ ইউ
“লাভ ইউ টু
এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে চার মাস। খুব ভালোই কাটছে দুজনের বিবাহিত জীবন। ভার্সিটি পড়াশোনা আর শাশুড়ীর সাথে কাজ করেই দিন কাটে তানহা। কেমন জানি খালি খালি লাগে। একটা জুনিয়র নেইমার থাকলে খুব ভালো হতো। মনে মনে ভাবে তানহা। কিন্তু আমার জুনিয়র নেইমার আসছে না কেনে?
মুখটা কালো হয়ে যায় তানহার। শাশুড়ীর কাছে যায়।
শাশুড়ী মসলা বাটছিলো।
“মা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
শাশুড়ীর পাশে বসে বলে তানহা।
” হুমম বল
“আমার বোধহয় কোনো পবলেম আছে।
“কিরকম
” বেবি হচ্ছে না
“তো
শাশুড়ী কাজ ছেড়ে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে।
” তো
মাথা নিচু করে আমতাআমতা করে বলে তানহা।
“কোনো সমস্যা নেই।
” এতো শিওর দিয়ে কি করে বলছো তুমি?
“বিকেলে রেডি থাকিস চেকআপ করাতে যাবো। তখনও তুই ও শিওর হবি।
তানহা মুখটা কালো করে রুমে চলে আসে। কখন থেকে ফোনটা বেজে যাচ্ছে। তানহা দৌড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। হাতে নিতে নিতে কল কেটে যায়। বারোটা মিসকল অভির। তানহা ফেনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে বসে। আবার ফোন বেজে ওঠে। সাথে সাথে রিসিভ করে।
” এতোখন লাগে ফোন রিসিভ করতে?
“সরি রান্না ঘরে ছিলাম।
” খাইছো দুপুরে?
“হুমমম
” মুড অফ?
“নাহহহ
” রেডি থেকো বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাবো।
“যাবো না।
” কেনো?
“মায়ের সাথে ডাক্তারের কাছে যাবো।
” কেনো কি হয়েছে?
“কিছুই না।
” তাহলে ডাক্তার কেনো? বলো?
“বললাম তো কিছু না। কাজ করবো রাখলাম।
তানহা খট করে ফোনটা কেটে দেয়। অভি চিন্তায় পরে যায়। অফিসের কাজ ফেলে বাড়ির দিকে ছুটে।
চলবে।