ভালোবাসি তাই ২ পর্ব-০৫

0
460

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৫
#তানিশা সুলতানা

শাড়ি পড়ানো শেষ হতেই তানহা অভিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর তখনই মোহনা দরজা ঢেলে ভেতরে ঢোকে।
ওদের এভাবে দেখে বেশ রেগে যায়। অভি ঝাড়া মেরে তানহাকে ছাড়িয়ে নেয়। পড়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে মাথা লেগে কেটে যায় খানিকটা। ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় তানহা।

“মোহনা এই মেয়েটা গায়ে পড়া। বিলিভ মি আমি কিছু করি নি।
অভি মোহনার হাত ধরে বলে।
মোহনা অভির হাতের ওপর হাত রেখে মুচকি হেসে বলে
” ইটস ওকে। আমি জানি তুমি কিছু করো নি।

তানহা ততখনে উঠে দাঁড়িয়েছে।
“নেক্সট টাইম যেনো তোমাকে আমার আশেপাশে না দেখি।
বলে মোহনার হাত ধরে চলে যায়। মোহনা একবার পেছনে ঘুরে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
খুব কষ্ট হয় তানহার।
” আমি যদি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসে থাকি। তাহলে আপনি আমারই হবেন। ইনশাআল্লাহ
চোখ দিয়ে দুফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। হাতের উল্টো পিঠে মুছে নেয়।

অদ্ভুত ভাবে জীবনের সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। সে তার আপন গতিতে চলতেই থাকে। কারো জন্যই অপেক্ষা করে না।
তিনটা মাস চলে গেছে। অভি নামক মানুষটার সাথে তানহার দেখা হয় না। কন্ঠটাও শুনে নি।
অপেক্ষার প্রহর গুনছে তানহা। মনটা প্রতিনিয়ত প্রিয় মানুষটার মুখটাকে দেখতে চায়। কিন্তু চাইলেই কি সব পাওয়া যায়?
আজকে শুক্রবার। তানহা ওর ভাই তাজের সাথে কেরাম খেলছে। তানহার মা আর দাদি মিলে রান্না করছে। খুব স্পেশাল কিছু রান্না করা হচ্ছে। হয়ত বাড়িতে কেউ আসবে। সেদিকে তানহা মন দেয় না। একটু মুড ভালো করার জন্যই ভাইকে সময় দিচ্ছে।
ভাইয়ের সাথে থাকলে এমনিতেই মনটা ভালো হয়ে যায় তানহার।

দুপুরের দিকে তানহা খাবারের জন্য ঘুরঘুর করে। কিন্তু রান্না না কি শেষ হয় নি। তানহার মা একটু নুডলস রান্না করে দেয়। তাজ আর তানহা মিলে খায়।

তাই রুমে চলে আসে। একা একা থাকলে অভির সেদিনের ব্যবহার কথা মনে পড়ে যায়।
কানে হেডফোন গুঁজে
“কেনো যে তোর মনের মতো হইতে পারলাম না”
গানটা শুনতে থাকে।
আপনাআপনি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে তানহার।
এই তিন মাসে ফেক আইডি খুলে প্রতিদিন চার পাঁচবার করে অভির আইডি ঘুরেছে তানহা। মোহনার সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছে অভি। সেটা দেখে ফেসবুক নামক এপসটাকেই অনইনস্টল করে দেয় তানহা। অভিকে অন্য কারো সাথে দেখলে সয্য করতে পারে না তানহা।
খুব কষ্ট হয়েছিলো তানহার। জীবনে কখনোই কান্না করে নি। কিন্তু অভিকে ভালোবাসার পর থেকে কারণে একারণে চোখে পানি চলে আসে।
একদিন এই চোখের পানির মূল্য দিতে হবে অভিকে। হবেই

একটু পরে এসে তানহার মা ঘুম থেকে ডেকে তোলে তানহাকে।
“কি হয়েছে মা?
ঘুমঘুম কন্ঠে বলে তানহা।
” তারাতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নে।
বিছানার ওপর শাড়ি রাখতে রাখতে বলে তানহার মা।
“শাড়ি পড়বো কেনো? অবাক হয়ে বলে তানহা।
” তোকে দেখতে আসবে?
“মানে কি? আমার কি রুপ বেরে গেছে?
কপালে ভাজ ফেলে বলে তানহা।
” বেশি কথা বলিস না। ওনারা চলে এসেছে।
মা চলে যায়।
তানহা শাড়ি টার দিকে তাকিয়ে আছে। বোঝা হয়ে গেছে। বিয়ের জন্য পাএপহ্ম দেখতে আসবে তানহাকে।
চোখ দুটো ভরে ওঠে তানহার। অন্য কাউকে বিয়ে করবে না তানহা। অভিকে খুব ভালোবাসে তানহা। এটা কখনোই করবে না ও।
“মা মা
চোখের পানি মুছে চিৎকার করে ডাকে মাকে।
দৌড়ে তানহার রুমে ঢোকে তানহার মা।
” তোকে বললাম না তারা চলে এসেছে?
চিল্লাচ্ছিস কেনো?
চোখ পাকিয়ে বলেন তিনি।
“আমি বিয়ে করবো না।
কাঠকাঠ গলায় বলে দেয় তানহা।
” কেনো?
পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় তানহাকে।
“আমি অভি ভাইয়াকে ভালোবাসি।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তানহা।
ঠাটিয়ে চর মারে তানহার গালে মিসেস তমাল (তানহার মা)
তানহা গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
” আর যেনো এই কথা তোর মুখে না শুনি। তারাতাড়ি রেডি হয়ে চলে আয়।
বলেই চলে যেতে নেয়।
“মা প্লিজ
পেছন ঘুরে তাকায় মিসেস তমাল।
” তোর বাবার খুব পছন্দের ছেলে এসেছে। অভির থেকে অনেক গুণ ভালো।
তাছাড়া ওই অভি বাড়িতে এসে বলে গেছে ওর বিয়ের আগে যেনো তোকে বিয়ে দিয়ে দেই নাহলে কোথাও পাঠিয়ে দেই।
কতো বড় অপমান ভেবে দেখ।
আচলে মুখ লুকিয়ে চলে যায় তিনি।
ধপ করে বসে পড়ে তানহা।
অভি বাড়িতে এসে বাবা মাকে অপমান করে গেছে?
বলে গেছে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে?
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে তানহা।
“খুব বড় শাস্তি পেতে হবে আপনাকে অভি। খুব বড় শাস্তি।

ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পরে নেয় তানহা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে।
“আমি কি দেখতে খুব খারাপ? কেনো অভি আমাকে পছন্দ করে না? কেনো ওর মনের মতো হতে পারলাম না? ওকে যদি নাই পাবো তাহলে ভালোটা ওকেই কেনো বাসলাম?
চোখ দুটো ভিজে ওঠে তানহার।
চোখ মুছে চোখে কাজল দেয় ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেয়।
” কি রে হলো তোর?
মা আর দাদি রুমে ঢুকে বলে।
তিথি তানহার কাকাতো বোন সেও আসে।
“হুমম
মাথা নিচু করে বলে তানহা।
” কাকিমা এতো ছোট বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেবে তানহাকে? ওর তো আঠারো বছরই হলো না?
তিথি বলে।
চোখ রাঙিয়ে তাকায় তিথির দিকে দাদিমা।তিথি চুপ হয়ে যায়।
“তিথি আর আপনি তানহাকে নিয়ে যান।
মিসেস তমাল বলে।
নিয়ে যায় তানহাকে।

সবাইকে সালাম দিয়ে এক পাশে বসে তানহা। একবারের জন্যও কারো দিকে তাকায় নি। মিস্টার তমাল তাদের সাথে কথা বলছে।
একটা সময় ছেলে আর তানহাকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয়।
তানহা উঠে চলে যায়। ছেলেটা তানহার পেছন পেছন যায়।
” এতো ছটফটে চটপটে লাফানো তানহা আজ এতো শান্ত। বেপার কি?
কন্ঠটা শুনে তানহা চমকে তাকায় ছেলেটার দিকে। চোখ দুটো আপনাআপনি বড় হয়ে যায় তানহার।
“আআপনি

চলবে