ভালোবাসি তাই ২ পর্ব-০৭

0
437

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৭
#তানিশা সুলতানা

তানহা চোখ খুললো তখন দেখলো চারপাশে পিনপিন নিরবতা। কোথাও কোনো সারাশব্দ নেই। হাসপাতালের সাদা বেডে শুয়ে আছে। আশেপাশে কোনো মানুষ জনের সারা শব্দ নেই। ঘাড় উঁচু করে আশেপাশে তাকায় তানহা। তানহার থেকে বেশ খানিকটা দুরে আরও একটা বেড সেই বেডে অভি শুয়ে আছে৷ হাত পা মাথা আর বুকে শুভ কাপরের ব্যান্ডেজ। এক হাতে স্যালাইন চলছে আর আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। মুখটা মলিন হয়ে গেছে। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। ঠোঁট ফেলে গেছে। সেখানে কালো রক্ত জমে আছে। চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে।
বুকের ভেতর ধক করে ওঠে তানহার। বেড থেকে নামতে যেতেই হাতে টান পরে। বুঝতে পারে ওর হাতেও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
অগত্য অভির দিকে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে তানহা। অভির দিকে তাকানোর সাহস নেই তানহার।
বাড়ির সবাই কোথায় গেছে এটাই ভেবে পাচ্ছে না তানহা। হয়ত সবাই খুব ক্লান্ত তাই চলে গেছে।

“মহি ভাই তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাই। ধরতে পারেন একটা আবদার করতে চাই আপনার কাছে।
আনিকা বেগম চোখের পানি মুছে মহিউদ্দিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
তানহার পরিবারের সবাই চলে এসেছে। পরিবার বলতে বাবা মা। সন্তানের অসুস্থতার খবর পেয়ে কোনো বাবা মাই বাড়িতে বসে থাকতে পারে না।
এখানে দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত আছে।
” এতো ফর্মালিটি করছে কেনো? বলুন না।
মহিউদ্দিন শুকনো হেসে বলে।
“আপনার মেয়েটাকে আমার চাই।
আনিকা বেগমের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায়,ওনার দিকে। মহিউদ্দিন চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে।
” কেনো বলেন তো? আমার মেয়েটাকেই কেনো বেঁছে নিলেন? অনেক আদর যত্নে বড় করেছি আমাদের মেয়েকে। কখনো এতটুকু ফুলের টোকাও লাগতে দেয় নি। কখনো কাঁদতে দেই নি।
পৃথিবীতে অনেক মেয়ে আছে। তাদের দেখুন। আমার মেয়েকে রেহায় দাও।

হাত জোর করে এগিয়ে এসে বলে তানহার মা। চোখে তার আগুন ঝড়ছে। অভির করা অপমান গুলো আর তানহার চোখের পানি চোখের সামনে ভাসছে ওনার।
“ভাবি কি করছো তুমি?
রাফিদের মা রেশমা তমা বেগমকে টেনে একটু দুরে নিয়ে বলে।
” আমাদের অভি খুব ভালো ছেলে। তাছাড়া তানহা তো অভিকে পছন্দ করে।
অভির বাবা আহাম্মদ বলেন।
“আমি আমার মেয়েকে কিছুতেই অভির সাথে বিয়ে দেবো না। নেশাখোর একটা ছেলে। আমার তো মনে হয় ছেলেটা পাগল। নাহলে কেউ নিজে নিজেকে এতো অঘাত করতে পারে না কি?
আবার তেরে এসে সাফ সাফ বলে দেয় তমা বেগম। স্ত্রীর এমন বিহেব খুব রুষ্ঠ মহিউদ্দিন। উনি তো কথা বলছেই তারমধ্যে আবার ওনার কথা বলার কি আছে।
আনিকা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে কান্না করছে। তমা বেগমের কথায় খুব আঘাত পেয়েছেন উনি। আহাম্মদ চৌধুরী খুব রেগে যায়। পাগল বললো ওনার ছেলেকে?
“অনেক বলে ফেলেছেন আপনি।
আমার পাগল ছেলের বউ তো তানহাই হবে বলে দিলাম। আমার স্ত্রী যখন তানহাকে পছন্দ করেছে তখন তানহাকেই আমি অভির সাথে বিয়ে দেবো। বলে দিলাম।
রাগে রুষ্ঠ হয়ে গর্জে উঠে বলেন আহাম্মদ।
তমা বেগম কিছু বলার জন্য মুখ খোলে তখনই মহিউদ্দিন এক ধমক দেয়।
” এখানে আমি কথা বলছি তো। তুমি কেনো এগিয়ে আসছো?
আর একটা কথাও শুনতে চায় না তোমার মুখ থেকে।
চিৎকার করে বলেন মহিউদ্দিন।
মহিউদ্দিন কখনোই তমা বেগমকে ধমক দেয় না। খুব ধয্য শীল মানুষ। খুব ভালোবাসে তমা বেগমকে। তাই তো সারাক্ষণ বক বক করে যাওয়া তমা বেগমকে ধমক দেয় না। বরং ঠান্ডা মাথায় বোঝায়।
চোখের কোনে পানি চলে আসে তমা বেগমের।

মহিউদ্দিন এগিয়ে গিয়ে আহাম্মদ চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“মাফ করবেন। আমার স্ত্রী ভুল করে এতো গুলো কথা বলে ফেলছে। একটু বেশিই কথা বলে ও। ওর হয়ে আমি হ্মমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমার তানহা মামনির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। খুব ভালো ছেলে। ভার্সিটির লেকচারাল। দেখতেও মাশাল্লাহ। দোয়া করবেন আমার পাগলি টার জন্য। ছেলে মানুষ তো।
মহিউদ্দিনের কথা শুনে সবাই আরেক দরফা চমকে ওঠে। তানহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
” আপনি বলতে চাইছেন আমার ছেলে দেখতে খারাপ? ভালো প্রফেশনে চাকরি করে না? অপমান করলেন আমার ছেলেকে?
আহাম্মদ গর্জে উঠে বলে।
মহিউদ্দিন হালকা হাসে।
“কখনোই না। স্কুল টিচার আমি। দশ গ্রাম জানে আমি মানুষকে কখনোই ছোট করি না। বা অপমান করি না।
আপমান করাটা আমার দ্বারা হবে না।
অভি বাবাও খুব ভালো। অনেক ভালো মোহনার মতো মেয়ে পাবে দেখবেন।
আহাম্মদ ভেজা বেড়ালের মতো চুপসে যায়। চোখ নামিয়ে নেয়। ঠান্ডা মাথায়,শান্ত গলায় বলা কথা গুলো তীরের মতো বিঁধছে।
“সকালেই আমরা চলে যাবো।
রুমটা থেকে বেরিয়ে যায় মহিউদ্দিন। পেছন পেছন যায় তমা বেগম।

মাথার চুল খামচে ধরে বসে পড়ে মহিউদ্দিন।
” বড় ভাবি তোমার ভাই এটা ঠিক করলো না। আমাকে অপমান করলো? আহাম্মদ চৌধুরীকে। তানহাকেই অভি বিয়ে করবে। বলে দিলাম আমি।
চিৎকার করে বলেন উনি।
আনিকা বেগম চোখ মুছে নেয়।
চলে যায় ছেলের কেবিনের দিকে।

আনিকা বেগম জরুরি তলবে সবাইকে একটা রুমে ডেকে ছিলো।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে সূর্যের আলো এসে পড়ছে তানহার চোখে মুখে। চোখ মুখ কুঁচকে নেয় তানহা। স্যালাইন শেষ। একটা সাহস করে সুঁচটা খুলে ফেলে। একটু রক্ত বের হয়।
উঠে বসে তানহা। চোখ ঘুরিয়ে ডান পাশে তাকায়। অভি একই ভাবে শুয়ে আছে। তবে এখন অভির চোখটা খোলা। উপরের সাদা দেয়াল টার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকও ফেলছে না।
তানহা চোখ ফিরিয়ে বেড থেকে নেমে পড়ে।

“তানহা
অভি মলিন কন্ঠে ডাকে। তানহা থমকে যায়। পেছন ঘুরে তাকায় না।
” যখন মায়া বাড়িয়ে লাভ হয় না
তখন মায়া কাটাতে শিখতে হয়”
অভির ডাকে সারা দিয়ে নিজেকে দুর্বল করবে না তানহা।। খুব স্টং হতে হবে তানহাকে।
না শোনার ভান কইরা বেড়িয়ে যেতে নেয় কেবিন থেকে।
তখনই হুরমুর করে কেবিনে ঢোকে আহাম্মদ চৌধুরী আনিকা বেগম রেশমা বেগম আর রাফিদ। রাফিদের বাবা বিদেশ থাকে।

“তানহা কথা আছে তোমার সাথে।
আহাম্মদ চৌধুরী তানহার হাত ধরে টেনে এসে সিটে বসিয়ে দেয় তানহাকে।
তানহা ভরকে যায়।
” অভিকে বিয়ে করতে হবে তোমাকে।
থমকে যায় তানহা। অভিও তার ঘুরিয়ে তাকায় তানহার দিকে।
সবাই অধিক আগ্রহে তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে উওর শোনার জন্য।
“আমাকে ফিরিয়ে দেবে না তুমি মামনি। তোমার বাবা মা অবশ্যই রাজি হয়ে যাবে। শুধু তুমি হ্যাঁ বললেই হয়ে যায়।
একটু মিথ্যে বলেন তিনি। যাতে তানহা হ্যাঁ বলে দেয়।
তানহা এক পলক তাকায় অভির দিকে।
” আমি ভালোবাসি অভি ভাইয়াকে। ছোট বেলা থেকেই। যখন থেকেই বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আমার ওনাকে ভালোলাগে। ওনার থেকে অনেক ভালো ভালো ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে। আমি রিজেক্ট করে দিয়েছি কারণ মন তো একটাই।
আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন যদি আমি বলি আমি ওনাকে বিয়ে করবো না। তাহলে সবাই ভাববে আজ অসুস্থ অভিকে দেখে আমার মন পাল্টে গেছে। অভির থেকে অনেক গুন বেটার কাউকে পেয়েছি বলে “না” করে দিচ্ছি।
আমি বিয়ে করবো অভিকে।
দরজার আড়াল থেকে ওদের কথা শুনছিলো মহিউদ্দিন। মেয়ের প্রথম কথা গুলো ভালো লাগলেও শেষের কথাটা শুনে মনটা বিষিয়ে যায়। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
অভির বাড়ির সবাই খুশি হয় তানহার কথায়।
“আমি তখনই বিয়ে করবো। যখন অভি আমার বাবা মায়ের হাতে পায়ে ধরে হ্মমা চাইবে।
অভির করা ইগনোর গুলো না নিতে পেরে আমি আমার পরিবারের সাথে খারাপ বিহেব করেছি। আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমি কষ্ট পেলে আমার বাবা মাও খুব কষ্ট পায়।
আমার বাবা যখন বলবে ” মামনি আমি তোমার বিয়েটা অভির সাথেই দেবো”
তখনই আমি বিয়ে করবো আমি।
একদমে কথা গুলো বলে তানহা।

চলবে