#ভালোবাসি
#পর্বঃ১৩
#Tanisha sultana (Writer)
তুলি নিজের রুমে বসে আছে। মায়ার প্লান সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে। সায়ান রুমে আসে
“কিরে ওখানে বসে আছিস কেনো?
সায়ানের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। উঠে সায়ানের পাশে দাঁড়ায়
” আপনি চলে এলেন যে আপনার মায়া বেবি তো আবার ভয় পাবে
সায়ান হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে
“মায়া আবার আমার বেবি হলো কবে
” ও মা আপনি জানেন না
“না তো
” ড্রামাকিং
“ড্রামা কুইন শুনেছি কিং তো শুনি নি
” কিংটা আজকেই আবিষ্কার হলো
“তুই করলি
” ইয়াহ। শুনুন না
“বল
” আমার দিকে তাকান
সায়ান ঘড়ি রেখে কোমরে হাত রেখে তুলির দিকে ঘুরে তাকায়
“বল
” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো
“কিভাবে
” মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবেন আমায়
সায়ান মাথায় হাত দিয়ে বলে
“ওহহ আল্লাহ
তুই ই তো আমাকে তোর দিকে তাকাতে বললি
” বলেছি বলে এভাবে তাকাবেন
সায়ান এবার তুলির কোমর জড়িয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে
“কি চাস তুই বল তো
” মায়ার থেকে আপনাকে আলাদা করতে চায়
“কেনো? এই এক মিনিট তুই তো আমাকে আবার ভালো টালো বেসে ফেলিস নি
তুলি নিজেকে ছাড়িয়ে একটু দুরে গিয়ে বলে
” ভালোবাসি না। তবে কিচ্ছু করার নাই বিয়ে হয়ে গেছে তাই জাস্ট লাইক করি
“তাই না কি। যাক গে বাদ দে এবার বল কি বলতে চাইছিলি
” আমি ঢাকা ফিরে যেতে চায়
“রিককে না দেখে থাকতে পারছিস না বুঝি
” হুম তবে আরও একটা কারণ আছে
“কি
” মায়া এই বাদরামী বের করার জন্য
“বুঝলাম না
” বুঝিয়ে বলি নি তো। কাল কেই ঢাকা যাবো
তুলি চলে যায় সবাইকে বলতে। মায়া মনে মনে খুব খুশি হয়।
আজ তুলি নিজের হাতে রান্না করবে। একা একা। রান্না ঘরে কাউকে এলাও করছে না।
সায়ান দুপুর থেকে তুলিকে দেখছে না। তাই তুলির মায়ের কাছে শুনতে যেতে নেয়
“কোথায় যাচ্ছো?
মায়ার ডাকে সায়ান থামে
” তুলিকে খুঁজতে
“বউকে ছাড়া একটুও থাকতে পারো না। এতো ভালোবেসে ফেলেছো বউকে
” মায়া সেরকম কিছু না। জাস্ট ওকে দুপুর থেকে দেখছি না তাই
“কই আমাকে না দেখতে পেলে তো খুঁজো না
” তোমাকে কেনো খুঁজবে? তুমি তো জাস্ট আশ্রিতা
সায়ান মায়া তাকিয়ে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে আছে
“দেখলে সায়ান আমায় ইনসাল্ট করলো
” হুম করলাম তা তো সায়ান শুনলো
“তুমি কিছু বলবে না সায়ান
” তুলি চুপ করো
“আমার বাড়ি আমার ঘড় আর আমি চুপ করবো
” হুম করবে
“প্রশ্নটা আমার স্বামীকে করেছি তোমাকে না
” এই মেয়ে একদম স্বামী স্বামী করবে না। কিসের স্বামী হ্যাঁ
“বিয়ে করা স্বামী
” আহহহ তোমার চুপ করো। তুলি যাও নিজের কাজে যাও।
তুলির চোখ ছলছল করে। চলে যায় তুলি। মায়া সায়ানের হাত ধরে বলে
“তুলি আমাকে দেখতেই পারে না
সায়ান কিছু না বলে চলে যায়।
তুলি ডাল মাংস আর ভাজি রান্না করছে। মনটা ভীষণ খারাপ। একমনে ইউটিউব দেখে রান্না করে যাচ্ছে। রাতে সবাই তুলির করা রান্না খাবে।
রাত নয়টায় তুলির রান্না শেষ হয়। কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে সবাইকে খেতে ডাকে।
সায়ানের বাবা দাদা মা রুহি সায়ান মায়া খাবার টেবিলে বসে আছে। তুলি আর তুলির মা খাবার সার্ভ করবে।
” না খেলে হয় না। আমার না খিদে নেই
ভয়ের শুরে বলে সায়ানের বাবা। তুলি চোখ রাঙিয়ে বলে
“তোমরা ভাবছো আমার রান্না খারাপ হয়েছে তাই তো
” না না আমার দিদিভাই কখোনো খারাে রান্না করতেই পারে না। আমাকে দাও তো
তুলি প্রথমে দাদুকে দেয়। তারপর একে একে সবাইকে দেয়। তুলি অধিক আগ্রহে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই খুব প্রশংসা করে তুলির রান্নার। তুলির খুশি আর দেখে কে?
সবার খাওয়া শেষে তুলি আর তুলির মা খায়। খাওয়া দাওয়া শেষে তুলি নিজের রুমে চলে যায়।
বেলকনিতে বসে চাঁদ দেখছে তুলি। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। বারবার সায়ান বাজে বিহেব গুলো চোখের সামনে ভাসছে। কেউ একজন তুলির কাঁধে হাত রাখে
“সরি তুলি
তুলি কিছু বলে না। সায়ান তুলির পাশে বসে বলে
” সরি বললাম তো
“আমি তো সরি বলতে বলি নি
” আমি ভুল করছি তাই সরি বললাম
তুলি একটু তাচ্ছিল্য হাসে
“আপনার কোনো দোষ নেই দোষ আমার কপালের।
” এভাবে বলছিস কেনো
“তাহলে কিভাবে বলবো বলতে পারেন?
আমার বাবা আমার মাকে ছেড়ে চলে গেছে। অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। আমার সাথেও সেম জিনিস হচ্ছে। কিন্তু আমি আমার অধিকার ছাড়বো না। মায়ের মতো এতো ভালো আমি না।
একদমে কথাগুলো বলে তুলি থামে। একটু দম নিয়ে আবার বলে
” আমাদের যারা অবহেলা করে আমরা তার কাছেই বারবার ছুটে যায়। আর যারা আমাদের ভালোবাসে আমরা তাদের অবহেলা করি।
রিক ভালো ছেলে। আমার ও কে খুব ভালো লাগে। ও আমাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আমার ও কে অবহেলা করতে হচ্ছে কারণ বাবার মতো সেম কাজ আমি করবো না।
মায়াকে ভুলে যান। কারণ আমি বেঁচে থাকতে আপনাকে মায়ার কাছে যেতে দেবো না
তুলি রুমে চলে যায়। সায়ান তুলির বলা কথা গুলো ভাবছে।
সায়ান রুমে এসে দেখে তুলি রুমে নেয়। ওয়াশরুম চেক করে দেখে ওখানেও নেই। গেলো কোথায় মেয়েটা। সায়ান রুম থেকে বের হয়ে তুলিকে খুঁজছে। অবশেষে রান্না ঘরে পায়। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে হাতে দিচ্ছে। সায়ান তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে বলে
“হাতে কি হয়েছে
” সরি আমি মায়া না তুলি
“আমি জানি তুই তুলি
” ওহহহ আমি ভাবলাম মায়া ভেবে বলেছেন
“একটু বেশিই ভাবছিস তুই
” আমার মনে হয় না
তুলি বরফটা রেখে চলে যেতে নেয়
“তুলি
” বলুন
“মায়াকে বিপদে পরে নিয়ে এসেছি
” শুনতে চায় নি
“শোনার অধিকার আছে তোর
” ভালোবাসা পাওয়ারও অধিকার আছে
“একটা থাপ্পড় খাবি। বয়স কতো তোর? ভালোবাসা পাওয়ারও একটা বয়স লাগে। সেই বয়সটা তোর হয় নায়
” আমার তো বিয়ের বয়সও তো হয় নাই তাও তো বিয়ে হয়েছিলো
“উফ তোকে বোঝানো আমার পহ্মে সম্ভব না
” বোঝাতে তো বলি নি। ভালোবাসতে বলেছি
“চল আজ তোকে ভালোবাসা কি বোঝাবো। চল আমার সাথে
সায়ান তুলির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি আরামসে সোফায় বসে পরে
” ওই তোর ভয় করছে না
“কেনো ভয় করবে
” আমাকে দেখে
“না তো। আপনি আমাকে ভালোবাসবেন তার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি তো ভেবে রেখেছি
” কি
“সামনে বছর আমার গোলুমলু একটা কিউট বেবি হবে
” কিহহহহ
“হুম
” ঘুমিয়ে পর
“ভালোবাসবেন না
” নাহহহ
তুলি মুখ গোমড়া করে শুয়ে পরে। তখন ফোন বেজে ওঠে তুলির
“হেলো স্যার
” কেমন আছো?
“ভালো। আপনি
” ভালো।
সায়ান আগুন চোখে তাকিয়ে আছে
“মিছ ইউ তুলি
” মিছ ইউ টু
“ঢাকা আসবে কবে
” কাল
“রিয়েলি
” হুমমম
“কতোদিন পরে তোমার দেখবো। ভাবতেই ভালো লাগছে
” তাই
“হুম
” এখন রাখি কাল দেখা হবে
ফোন রেখে তুলি শুতে যায়। সায়ান দুই বাহু চেপে ধরে
“খুব পীরিত হচ্ছে তাই না
” ছি কি ভাষা। পীরিত না প্রেম
“খুব বার বেরেছিস তুই
” আই নো। তুমি যদি পারো আমি পারবো না কেন? আমি কি কম সুন্দর না কি
তুলির কথা শেষ হতেই সায়ান তুলির ঠোঁট দখল করে নেয়।
চলবে