ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-৩৪+৩৫

0
346

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#লেখকঃmahin_al_islam
#পর্বঃ৩৪

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন টা একদম নিকটে চলে আসলো

আজকে হঠাৎ করে উনি ফোন দিয়ে বলতেছে আমার সাথে নাকি ওনার কিছু কথা আছে তাই বিকেলে পার্কে দেখা করার জন্য ডাকলো আমি কিছু না বলে চুপচাপ রাজি হয়ে গেলাম কারণ কয়েকদিন থেকে আমিও তাকে দেখি না তাকে দেখার ইচ্ছা করতেছে

বিকেল বেলা হালকা সাজুগুজু করে বেড়িয়ে পড়লাম উদ্দেশ্য হলো পার্কে যাব

বাসা থেকে বাহির হয়ে উনাকে একটা ফোন দিলাম জেনে নিলাম উনি এখন কোথায় আছে উনার সাথে কথা হওয়ার পর জানতে পারলাম উনি পার্কের কাছাকাছি চলে এসেছে আমাকে খুব তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে হবে তাই আমি একটা রিকশা ডেকে নিলাম এবং সেখান থেকেই রওনা দিলাম পার্কের উদ্দেশ্যে।।।

কিছুক্ষণ পরেই রিক্সাওয়ালা মামা আমাকে পার্কের গেটে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন আমি

আস্তে আস্তে হেঁটে পার্কের ভিতরে প্রবেশ করলাম পার্কের ভেতরে প্রবেশ করে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম

কারণ এখানে সবাই কাপল কেউ সিঙ্গেল নেই

যে যার মতো বসে তাদের খুন ছুটি প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে

আপনাকে খুঁজতে লাগলাম একটু দূরে তাকিয়ে দেখি তুমি একটা গাছের নিচে বসে আছে তা হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে তাই আমি আর দেরী না করে ওনার কাছে চলে গেলাম

আমিঃ কতক্ষণ আগে এখানে এসেছেন???

মাহিনঃ বেশিক্ষণ হয়নি মাত্র আসলাম রাস্তায় আসতে তোমার কোন সমস্যা হয়নি তো???

আমিঃ না আমার কোন সমস্যা হয়নি তাহলে বলেন এত জরুরি তলব কি জন্য???

মাহিনঃ তুমি না আমার মনটা এখনো বোঝোনি তুমি তো জানো কত দিন থেকে তোমাকে দেখতে পাই না তাই মনটা আমার ছটফট ছটফট করতেছে তাই আর থাকতে পারলাম না

আর কালকে থেকে বিয়ের সব কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে তাই তোমার সাথে তেমন একটা কথা বলতে পারব না তাই আজকে তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে চাই তোমাকে সমস্যা আছে??? সমস্যা থাকলে বলতে পারো আমি এখনই বাসায় চলে যাচ্ছি।

আমিঃ এই যে মিস্টার আপনি সবসময় যত বেশি বুঝেন কি জন্য?? আমি কি একবারের জন্য বলেছি যে আমার সমস্যা আছে আপনি চলে যান আমি আপনাকে সময় দিতে পারবো না???

মাহিনঃ না আমার মনে হল তাই জিজ্ঞেস করলাম।।।

আমিঃ আপনার মনে যা হবে তাই আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে???

মাহিনঃ আচ্ছা আমরা কোন ঝগড়া করতেছি কিসের জন্য?? সবাই দেখো কিরকম চুটিয়ে প্রেম করতেছে আর আমরা এখানে ঝগড়া করতেছি!!!

আমিঃ এই যে মিস্টার শুনছেন চওড়া কিন্তু আমি লাগাইনি আপনি লাগিয়েছেন সুতরাং সব দোষ আপনার এখন চলেন একটু হাঁটাহাঁটি করি লেকের পাড়ে

মাহিনঃ এই যে মহারানী লেকের পাড়ে হাঁটতে গেলে এখান থেকে অনেক দূর যাইতে হবে তার থেকে ভালো এই পার্কের পুকুরপাড়ে হাটি অনেক ভালো লাগবে।।।।

আমিঃ এই যে মিস্টার আমাকে বাদাম কিনে দেন বাদাম খেতে খেতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি।।।

তারপর উনি আমাকে বাদাম এনে দিলেন

বাদাম কিনে এনে আমার হাতে না দিয়ে উনি বাদামের খোসা সারিয়া বাদামগুলো আমার হাতে দিচ্ছে আমি ছোট বাচ্চাদের মতো খাইতেছি

দুজনের মাঝে চলতে থাকলো কোন চটিকথা ঘুম ছুটে কিছু ঝগড়া

তারপর আমরা দুজনে এক জায়গায় বসে পড়লাম পুকুর পাড়ে

দুজনেই বসে পড়লাম বলতে ভুল হবে আমি বসে পড়লাম আর উনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন

আমিঃ আরে আজব তো আপনি এসব এখানে কি শুরু করছেন???

মাহিনঃ কই কখন আমি আবার কি করলাম??

আমিঃ দেখেন একদম ন্যাকামো করবেন না এসব কি হচ্ছে সবাইকে ভাবে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে দেখেন তো।।।

মাহিনঃ তাদের হিংসে হচ্ছে আমাদের ভালোবাসা দেখে তাই তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।।।

আমিঃ এইরকম একটা পাবলিক প্লেসে কেউ এরকম করে আমার প্রচুর পরিমাণ লজ্জা লাগতেছে প্লিজ উঠে বসুন,,

মাহিনঃ দেখো মানুষ দেখতেছে দেখতে দাও আর আমরা যেটা করতেছি করতে দাও।।

আমিঃ দেখেন এটা আমাদের রুম না বা আমাদের বাড়িও না কত মানুষ আমাদের দিকে কি রকম ভাবে তাকিয়ে আছে দেখেন তো আমার কিরকম লজ্জা লাগতেছে প্লিজ উঠুন

মাহিনঃ আর একটা কথা হচ্ছে না চুপচাপ আমার মাথায় বিলি কেটে দাও।।

আমি অবশেষে ওনার কাছে হার মেনে নিলাম কারণ যতই বলি না কেন উনি উঠবে না,,

তাই আমিও মাথা নিচু করে ওনার মাথায় বিল্লি কেটে দিতে লাগলাম

আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম ছিলাম কি আর হয়ে গেলাম কি

যার কাছে টাকার জন্য দেহ টা বিক্রি করতে গেলাম আজকে তাকেই স্বামী হিসেবে পেলাম,,,

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস হয়তো আজকে আমাকে সমাজে সবার কাছে কলঙ্কিনী বা পতিতা হয়ে থাকতে হতো কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজকে সেখানে আমাকে কেউ একজন পাগলের মত ভালবাসে

কিন্তু এমন একটা দিন ছিল যার ভালোবাসাটা আমিই বুঝতে পারিনি যদি ঠিক সময়ে বুঝতে পারতাম তাহলে আজকে হয়তো এর থেকেও ভালো কিছু আমার জীবনে ঘটে যেত,,,

মাহিনঃ এই পাগলি কি ভাবতেছ???

আমিঃ কই কিছু নাতো।।

মাহিনঃ দেখো আমার থেকেও লুকানোর চেষ্টা করবে না তোমার চোখের পানি বলে দিচ্ছে তুমি কিছু না কিছু ভাবতেছ সেটা অনেক কষ্টের।।। আমাকে বলা যাবে না

উনি অনেকটা অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন

আমিঃ এই যে পাগল মসাই আমার কিছু হয়নি এটা সুখের কান্না দুঃখের না বুঝছেন।।।।

মাহিনঃ তাই বলে চোখ থেকে পানি বের করতে হবে???

আমিঃ সব প্রশ্নের উত্তর বাসর রাতে দেব আজকের মত উঠি চলুন কারণ সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখন বাসায় না গেলে আম্মু বকা দিবে।।।

মাহিনঃ আর কিছুক্ষণ থাকি সন্ধ্যা টা উপভোগ করে তারপর যাই???

আমিঃ দেখেন কালকে গায়ে হলুদ আপনি ছেলেমানুষ হয়তো আপনার কোন কথা কেউ বলবে না কিন্তু আমি একটা মেয়ে সমাজে আমার নানা রকম কথা হতে পারে তাই আমাকে যেতে হবে আর আপনি কি চান আপনার বউয়ের কটুক্তি কেউ করুক????

মাহিনঃ আমি তোমার জিব্বা কেটে ফেলব

আমিঃ কতজনের জিব্বা কেটে ফেলবেন এর থেকে ভালো হবে আমরা এখন বাসায় চলে যাই।।।

মাহিনঃ আর কিছুক্ষণ থাকি প্লিজ

আমিঃ এইসব আজাইরা কথা বাদ দেন কারণ অনেক সময় পড়ে আছে এইরকম উপভোগ করার মতো কিন্তু আজকে যদি আমি একটু লেট করে বাসায় যাই তো নানা রকম কথা বলবে সে কথাগুলো আমার আম্মুকে শুনতে হবে আমি চাইনা আমার কারনে আমার আম্মু কারো কাছ থেকে কটু কথা শুনুক

তারপর উনি আর কিছু বললেন না চুপচাপ আমার সাথে হাঁটতে লাগলেন।।।

বেশ ভালই লাগতেছে প্রিয় মানুষটার সাথে এই সন্ধ্যা বেলা হাটার মজাই আলাদা অন্যরকম একটা ফিলিংস জাগে মনের ভিতর

মন চায় সব সময় তার সাথে এই ভাবেই পাশাপাশি হেঁটে চলি যতদিন এ দেহে প্রাণ আছে।।।

তারপর আপনি আমাকে রিকশায় তুলে দিয়ে

ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে রিকশা চলতে লাগল কিন্তু উনি যাচ্ছেন না ওইখানেই দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,

আমিঃ এই যে এই ভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান নয়তো বাসায় টেনশন করবে আপনার জন্য ( কিছুটা দূর থেকে)

কেন জানি আজকে ওনাকে ছেড়ে যাইতে মন চাচ্ছে না ইচ্ছে করতেছে ওনার সাথে চলে যাই কিন্তু সমাজের একটা রীতিনীতি আছে সেটা আমাদেরকে মানতে হয়…

যতক্ষণ ওনাকে দেখা যায় আমি উনার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে আছি আমি লক্ষ্য করলাম উনি ও ততক্ষণ পর্যন্ত আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ততক্ষণ আমাকে দেখা যায় কিন্তু যখন আড়াল হয়ে গেলাম তখন জানি না উনি হয়তো চলে গেছেন সেখানে থেকে

পরের দিন সকাল বেলা,,,,,,

ঘুম ভেঙে গেল বাইরে অনেক চেঁচামেচি কারণে,

আর চেঁচামেচি হবে না বা কেন বিয়ের বাড়ি বলে কথা।।।

চলবে…….

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#লেখকঃmahin_al_islam
#পর্বঃ৩৫

যতক্ষণ ওনাকে দেখা যায় আমি উনার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে আছি আমি লক্ষ্য করলাম উনি ও ততক্ষণ পর্যন্ত আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ততক্ষণ আমাকে দেখা যায় কিন্তু যখন আড়াল হয়ে গেলাম তখন জানি না উনি হয়তো চলে গেছেন সেখানে থেকে

পরের দিন সকাল বেলা,,,,,,

ঘুম ভেঙে গেল বাইরে অনেক চেঁচামেচি কারণে,

আর চেঁচামেচি হবে না বা কেন বিয়ের বাড়ি বলে কথা।।।

বাইরে চেঁচামেচি তে রুমে শুয়ে থাকতে পারলাম না বাধ্য হয়ে উঠে গেলাম বাহিরে বাহিরে গিয়ে তো আমি অবাক,,,!!!

আমিঃ এই অনি শিলা,,(অনেক জোরে চিৎকার করে)

অনিঃ এই আর আমি তোর সাথে কোন প্রকার কথা নাই

আমিঃ দেখ অভিমান করে লাভ নেই কারণ আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অভিমান করে থাকতে পারবিনা চলে আয় বুকে

আমি বলতে দেরি কিন্তু ওরা দুইজন দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি নেই।।

শিলাঃ জানিস তোকে কত মিস করতেছি আমরা কতবার??

আমিঃ থাক আর ঢং দেখাতে হবে না যদি আমাকে এতই মিস করতেই তাহলে দেখার জন্য অন্তত একবার চলে আসতিস এরকম করে সেলফিশের মতো দূরে দূরে থাকিস না

অনিঃ দেখ আমি এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।। এখন তুই বল আমাদের জিজু কেমন মেবি অনেক কিউট এন্ড রোমান্টিক তাইনা??

তারপর ওদের সাথে সবকিছু শেয়ার করলাম।।

অনিঃ ইসসস তোর মত যদি আমার একটা বর থাকতো তাহলে তো মজাই আলাদা হইত।।

আমিঃ টেনশন করিস না হয়ে যাবে আজকে তো মনে হয় উনার অনেক ভাই কাজিন আসবে তাদের মধ্যে একজনকে বেছে নিস কথা বলে দেখব।।

শিলাঃ কথাটা কিন্তু একদম বন্ধ বলিস নি একজনকে বেছে নিতে হবে তাহলে দেখা যাবে যে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আড্ডা দিতে পারব।।।

আমরা তিনজন জমিয়ে আড্ডা দিতেছিলাম এর মাঝে আম্মু আমাদের রুমে চলে আসল

আম্মুঃ এখানে আর বসে না থেকে সবাই বাহিরে আসো হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করব,,, বর পক্ষ থেকে লোক এসেছে।।।

অনিঃ আন্টি আপনি নিচে যান আমরা দীপাকে নিয়ে আসতেছি।।।

তারপর আম্মু চলে গেল আর আমরা কিছুক্ষণ পরে নিচে চলে আসলাম।।

নিচে এসে দেখি ছোট একটা স্টেজ তৈরি করা হয়েছে আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো,,,

তারপর একে একে সবাই আমাকে হলুদ মাখিয়ে মিষ্টি মুখ করিয়ে যাচ্ছে।।।

বেশ মজাই লাগতাছে অনেকেই আমার সম্পূর্ণ মুখেই হলুদ মেখে দিচ্ছে,,,

সবাই কি খুশি সবাই অনেক আনন্দ করতেছে অনেক মজা করতেছে সবার মুখে হাসি খুশি কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করলাম আমার ভাইটাকে এখনো দেখতে পেলাম না আমি।। আমার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল আমি চারদিকে আমার ভাইকে খুজতে লাগলাম কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না।।।

এইদিকে,,,

ছুটকিঃ এই যে ভাইয়া তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পর আম্মু রাগ হইতেছে আজকে না তোর গায়ে হলুদ তুই এখনো ঘুমিয়ে আছিস তোর কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই।।।

মাহিনঃ চুপ থাকত গায়ে হলুদ তো কি হয়েছে আমি বিয়ে করব না যা ভাগ এখান থেকে

ছুটকিঃ মানে তুই কি বলতে চাচ্ছিস তুই না বললে বিয়েটা করবি এখন তুই বলছিস বিয়ে করবি না মানে তুই কি আব্বু আম্মু আমার মান-সম্মান রাখবি না নাকি

মাহিনঃ সেটা তোকে ভাবতে হবে না আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করিস না যা ভাগ এখান থেকে।

ছুটকিঃ দাঁড়া আমি আম্মুকে গিয়ে বলে দিচ্ছি যে তুই বিয়ে করবি না তারপর দেখ মজা কেমন লাগে তোর।।।

মাহিনঃ বলছি না বিয়ে করবো না তারমানে বিয়ে করবো না তুই এত কথাটা পেচাচ্ছিস কেন যা ভাগ এখান থেকে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করবি না।।

ছুটকিঃ তুই একটু ভেবেচিন্তে কথা বল ঘুমের দেশ থেকে চলে আয়।। একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলিস না।।

মাহিনঃ এখন তুমি কি আমাকে জ্ঞান দিবি নাকি এখান থেকে চলে যাবি নাকি তোকে মাইর লাগাবো কোনটা???

ছুটকিঃ তাও তোকে বলতেছি একটু ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিয়ে বুঝছিস একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলিস না এইভাবে।।।

মাহিনঃ যা ভাগ বলতেছি আমার রুম থেকে।।।

ছুটকি আর কিছু না বলে চুপচাপ আম্মুর কাছে চলে গেল

ছুটকিঃ আম্মু এই দিকে একটু আসো তো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।।

আম্মুঃ তোর আবার কি হইল তোর ভাইয়াকে না তোকে ডাকতে পাঠাইলাম কি বলল??

ছুটকিঃ ভাইয়া এখন বলতেছে বিয়েটা নাকি করবে না।।।

আম্মুঃ কিইইইইই ওর কি মাথা ঠিক আছে না কি পাগল টাগল হইলো ওর জন্য ওর আব্বুকে কত করে ম্যানেজ করলাম আর ও এখন বলতেছে বিয়ে করবে না এটা কি পুতুল খেলা নাকি একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা এটা ঠিক না।।।

ছুটকিঃ আম্মু আমিও ভাইয়াকে কত করে বুঝালাম যে একটা মেয়ের জীবনে খেলিস না কিন্তু ভাই আমার কথা শুনতেছে না তুমি একটু গিয়ে দেখ না।।।

এইদিকে,,,

আমার চোখদুটো শুধু আমার ভাইয়াকে খুজতেছি কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছি না একে একে সব মেহমানরা আমার গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে আমার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ এই নেই কারণ আমার মনটা ছটফট করতেছে আমার ভাইয়াকে দেখার জন্য।।

হঠাৎ করে আমার চোখ আটকে গেল একটা চেয়ারে

দেখলাম আমার ভাইটা ওইখানে বসে আছে

আমি তাকে ইশারা করে ডাক দিলাম আমার কাছে

যেই আমার ছোট ভাইটা আমার কাছাকাছি চলে এসেছে আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম কারণ বুঝতে পারলাম হয়তো সারারাত কান্না করেছে চোখ দুটো কেমন ফুলে গেছে লাল হয়ে গেছে চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।।।।

ওর এই অবস্থা দেখে আমার বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না আমার ছোট ভাইকে আমার বুকে টেনে নিয়ে অনেক জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম হয়তো আমার জন্য সে কান্না করতেছে

আমার সাথে সাথে আমার ভাইটা ও কান্না করতে লাগল আর বলতে লাগল

মিলনঃ আপু রে এখন থেকে আমি কার সাথে বাইরে হাটতে বেরোবো কার সাথে আমি দুষ্টুমি করবো কার সাথে রাগ করে অভিমান করে থাকবো,,,, বলতে পারিস আপু???

আমি কিছুই বলতেছি না ওর কথা শুনতেছি আরো অনেক জোরে জোরে কান্না করতেছি কেন জানি আমার চোখের পানি বাদ মানতেছে না আমার বুকটা কেন জানি ধুকপুক করতেছে।।। আচ্ছা মেয়েদের জীবন কেন এমন হয়???

মিলনঃ আপু রে তোকে না দেখলে তোর সাথে একটু কথা না বললে আমার কলিজাটা ফেটে যায় রে আপু আমি সেখানে কি করে থাকবো তোকে ছেড়ে??? বলতে পারিস আপু???

ভাইয়া কথাগুলো বলতেছে আর অনেক জোরে জোরে কান্না করতেছে আমাকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমিও ভাইয়াকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছি আর ভাবতেছি হয়তো তার সাথে আর আমি দুষ্টুমি করতে পারবোনা

চাইলেও আর আমি আমার ভাইটাকে সময় দিতে পারব না কারণ আমি এখন থেকেও অন্যের খাঁচায় বন্দী হয়ে যাচ্ছি

আমার ভাইটা চাইলেও আমার সাথে খুনসুটি ঝগড়াঝাটি করতে পারবে না চাইলেও আমার সাথে হাঁটতে বের হতে পারবে না চাইলেও আমার সাথে কোথাও ঘুরতে যেতে পারবে না

আল্লাহ তুমি মেয়েদেরকে কেন এরকম একটা পরীক্ষার মাঝে ফালায় দাও,,,,

তার দীর্ঘ 20 বছরের মায়া ত্যাগ করে অন্য খানে পাড়ি জমাতে হয় আর সেখানের অপরিচিত মানুষ গুলো কে আপন করে নিতে হয় আর একদম আপন মানুষ নিজের বাবা মাকে ভুলে যেতে হয় কেন?????

মেয়েদের এত বড় শাস্তি দেওয়া হয় কেন কেন কেন???

কান্না করেই যাচ্ছি আমরা দুজন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই অবাক দৃষ্টিতে হয়তো তারা ভাবতেছে এইরকম ভাই বোনের জুটি কয়জনের হয়

আম্মুঃ এই পাগল পাগলি এভাবে কান্না করতিছিস কেন এটাই মেয়েদের জীবন এটা আমাদের কে মেনে নিতে হয় এটাই সমাজের নিয়ম এটাকে খন্ডন করা কারো পক্ষে সম্ভব না আদিকাল থেকে এই রীতিনীতি চলে আসছে এটা আমাদেরকে মেনে নিতেই হবে যেমন আমি একদিন আমার বাবা মাকে ত্যাগ করে অপরিচিত কে আপন করে নিয়েছি ঠিক তেমন তোকেও আমাদেরকে ভুলে গিয়ে তোর শ্বশুর-শাশুড়িকে আপন করে নিতে হবে এটাই বাস্তবতা আর এটাই মেয়েদের জীবন।।।

আম্মু কথাগুলো বলতে বলতে ভাইয়াকে আমার বুক থেকে টেনে আলাদা করে নিল এবং আম্মু ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল

আমার বুকটা হাহাকার করতে লাগল হায়রে জীবন।।।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সব মেহমানদের চোখে পানি বুঝতে পারলাম তারা হয়তো অনুভূতি টা বুঝতে পেরেছে।।।

হঠাৎ করে মিউজিক বাজতে লাগলো

আমি সহ সবাই চমকে উঠলাম।।।

এইদিকে, ,,,

আম্মুঃ এই মাহিন তোর কি হয়েছে রে এসব কি কথা কথা বলতেছিস তুই তুই কি একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলতে পারিস এটা কি ঠিক এটাই কি আমি তোকে শিক্ষা দিয়েছি আমরা তাদের কে কথা দিয়ে ফেলেছি।।

মাহিনঃ কথা দিয়েছি তো কি হয়েছে আমি বলছি তো বিয়েটা করবো না তো করবো না আর একটা কথা হবে না এখানে জাস্ট স্টপ।

আম্মুঃ তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না কারণ আমার ছেলে এতটাও বেয়াদবি আমার সাথে করে না আর আমি যখন তাকে ঝাড়ি মেরে কথা বলি সে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পায়না তুই সেখানে আমার সাথে উল্টা ঝাড়ি মারতেছিস তার মানে তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না।।।।

ছুটকিঃ কি বুঝেছো আম্মু তাহলে এই ছেলেটাকে????

মাহিনঃ আরে আম্মু কি বলতেছো আমি তো মাহিন

আম্মুঃ না তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না।।

চলবে……