ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-০২

0
2403

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 2
writer : Mohona

.

মনি : আই লাভ ইউ ভাইয়া…
দহন : লাভ ইউ টু আমার নয়ন মনি… ভালো লেগেছে?
মনি : ভীষন ভীষন ভীষন …
দহন : বলো তো কে চুজ করেছে?
মনি : কে? জানি জানি তুমিই করেছো।
দহন : হয়নি… তোমার কাকন আপু চুজ করেছে তোমার জন্য…
বরাবরের মতোই কাকনের নামটা শুনেই মনির মুখে আধার নেমে এলো। দহন বুঝতে পারলো। দহন ভালো মতোই জানে যে মনি কাকনকে একদমই সহ্য করতে পারেনা। তাই সবসময় চেষ্টা করে মনির মনে কাকনের জন্য জায়গা তৈরি করতে। কাকনও যথেষ্ট চেষ্টা করে।

দহন : আচ্ছা নয়ন মনি খেলা করো ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে আসছি…
মনি : ওকে ভাইয়া…

দহন ফ্রেশ হতে চলে গেলো….

.

রিদি : 😭😭😭।
বিনা : কাদেনা কাদেনা… ও দীদা… কাদেনা… দীদা না ভালো… ফুপ্পি বকেছে না মামনি বলো তো…
রিদি : তেউ বকননি… 😭…
বিনা : কাদছো কেন তবে? দীদাকে বলো তো…
রিদি : দলহাউজ… ওইতাল মতো কিউট দলহাউজটা পেলাম না… 😭😭😭…
বিনা : কোনটার মতো ডলহাউজ পাওনি? দিনা , বহ্নি… কি বলছে আমার দীদুন পাখি হামম…?
দিনা : রিদি… তাহলে তুমি তখন দিয়ে দিতে বললে কেন হ্যা ?
রিদি : আমাল ফপ্পিকে বকছিলো তাই…😭😭😭
বিনা : কেউ কিছু বলবে আমাকে?
দিনা : আমি বলছি মা…
দিনা সব বলল।

বিনা : কি অসভ্য ছেলেরে বাবা… আর বহ্নি … রিদি তো ছোটমানুষ তাই দিতে বলেছে, কিন্তু তুইতো বড়… তুই কি ভেবে দিয়ে দিলি… ?
বহ্নি চুপ করে রইলো।
বিনা : তুই কি রে বহ্নি? তুই কি সত্যি তোর বাবার মেয়ে ? দিয়ে দেয়ার কি দরকার ছিলো? তুই তো আগে কিনেছিলি তবে দেয়ার কি দরকার ছিলো বলতো…
দিনা : বহ্নি তো বরাবরই এমন… কেন যে এতো ভয় পেয়ে চলে …
বহ্নি : ভয় কখন পেলাম? আমি তো লোকটাকে অনেক কথা শুনিয়েছি…
বিনা : তুই যে কিভাবে কথা শুনিয়েছিস তা ভালোমতোই জানি…

তখন ডোরবেল বেজে উঠলো।
বিনা : বউমা … গিয়ে দেখোতো কে… মনে তো হয় বিষয় আর বিষয়ের বাবা এসেছে।
দিনা : দেখছি মা…

দিনা গিয়ে দরজা খুলল। দেখলো আরফান রহমান দারিয়ে আছে ।
আরফান : কি ব্যাপার কান্নার শব্দ … দাদুভাই কাদছে কেন?
আরফান তরিঘরি করে ভেতরে ঢুকলো। ঢুকে রিদিকে ঠান্ডা করলো। এরপর প্রতিদিনের মতো নিজের টুপিটা বহ্নির মাথায় পরালো।

বিনা : বলিকি তোমার পুলিশি টুপিটা কি তোমার ভীতু মেয়েটার মাথায় পরানো উচিত হামম?
আরফান : আমার মেয়েটাকে মোটেও ভীতু বলবেনা…

বিষয় : বাবা যে মেয়ে ১টা টিকটিকি দেখলে ভয় পায় সে মেয়ে নাকি ভীতু না… ভীতুর ডিম…

বহ্নি : তুই ভীতুর ডিম…
বিষয় : ওই ভীতুর ডিম হলে কি আমি পুলিশের চাকরি পাই?
বহ্নি : সেটাতো বাবার জোরে পেয়েছিস। বাবা পুলিশ কমিশনার বলে পেয়েছিস …
বিষয় : 😒। হ্যা ওই আমার সাথেই ঝগড়া করতে পারবি…
আরফান : আচ্ছা হয়েছে ২জনই চুপ… বিষয় ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।
বিষয় : তুমি না এই ভীতুর ডিম টাকেই বেশি আদর করো বাবা….

.

কাকন : আমি বুঝতেই পারিনা মনি আমাকে সহ্যই কেন করতে পারেনা মাম্মি…
কাকনের মা রিমা : ও বেবি… তোমাকে না কতো করে বলেছি না হলে বাদ দিয়ে দাও। ব্রেক আপ করো দহনের সাথে।
কাকন : নো মাম্মি … আমার দহনকে খুব ভালো লাগে…
রিমা : এমন ভাবে বলছো যেন ওর থেকে সুন্দর ছেলে নেই…
কাকন : ওর মতো নেই মাম্মি… ওর হাটা চলা কথা বলা সবটাই অনেক ভালো লাগে।
রিমা : তাহলে সমস্যা কি? বিয়ের পর মনিকে মাইনাস করলেই হয়।
কাকন : নো মাম্মি… মনি দহনের নয়নমনি। অনেক আদর করে। তাই এটা পসিবল না…
রিমা : তাহলে ক…

তখন কাকনের ফোন বেজে উঠলো ।
কাকন : মাম্মি দহন কল করেছে… কথা বলে আসছে।

রিমা : গো বেবি…

কাকন : হ্যালো মাই জান …
দহন : হ্যালো…
কাকন : মনির ডলহাউজটা পছন্দ হয়েছে?
দহন : হামমম ভীষন।
কাকন : এই ওকে আমার কথা বলোনিতো… যে আমি পছন্দ করে দিয়েছি? বললে ওর মুড অফ হয়ে যাবে…
দহন : তোমার পছন্দের জেনেও দিব্যি ওটা দিয়ে খেলছে।।।

অনেকক্ষন কথা বলার পর…

কাকন : গুড নাইট জান…
দহন : হেই মাই জান… আমার গুড নাইট কিস কোথায়?
কাকন : তুমি তো তোমার বাসায় … গুড নাইট কিস কিভাবে দিবো মিস্টার… 😏…
দহন : তাই না?
কাকন : হামম।
দহন : ওকে দেন বাই…
দহন রেখে দিলো।
কাকন : যা রেখেই দিলো… আমিও না ১টা কিসি দিলে কি হতো…?

.

একটুপর…
কাকন ডিনার করে রুমে গেলো। দেখে দহন ওর বেডের ওপর পায়ের ওপর পা তুলে শুয়ে আছে।
কাকন : দহন তুমি? এতোরাতে আমার বেডরুমে কেন?
দহন : তোমার বেডরুমে আমি ছারা কে থাকবে হামম।
কাকন : আরে সেটা না…
দহন উঠে এসে কাকনের সামনে দারিয়ে ওর কোমড় জরিয়ে ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
দহন : তাহলে কি? ফোনে কিসটা দিয়ে দিলে কি হতো? আমার আর আসতে হতো না…
কাকন : ছারো… মাম্মি-পাপা চলে আসুক…
দহন : সো হুয়াট? দেখবে হবু জামাই তাদের মেয়ের সাথে রোম্যান্স করছে।
কাকন: দহন তুমি পাগল।
দহন : অনলি ফর ইউ…
কাকন : ছারো না প্লিজ পা…
দহন কাকনের ঠোট জোরা দখল করে নিলো। কাকনও দহনের পিঠটা খামছে ধরলো। একটুপরই ছেরে দিলো।

দহন : তুমি আমার বুঝেছো? তাই ভালোবাসা না দিলে নিয়ে নিবো। গট ইট?
বলেই কাকনের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।

.

২দিনপর…
বহ্নি : ম্যাম আমি…
ম্যাম (চন্দনা) : হ্যা তুমি।
বহ্নি : সরি ম্যাম আমি পারবোনা।
চন্দনা : তুমি পারবে… আর সেজন্যই তোমাকে ফোন করে আনলাম।
বহ্নি : ম্যাম আমি সত্যিই পারবোনা।
চন্দনা : বুঝেছি এখন তো আমি তোমার নামের ম্যাম। পিয়ানো তো শেখা শেষ। এক্সপার্ট হয়ে গিয়েছো। এখন আর আমি কিসের ম্যাম …
বহ্নি : ছিঃ ছিঃ ম্যাম তা নয়।
চন্দনা : নেহাত তুমি আমার বেস্ট স্টুডেন্ট। বাজাও বেস্ট তাই তোমাকে বলেছিলাম। আর মাত্র ১৫টা ক্লাসেরই তো ব্যাপার। আমার ঢাকার বাহিরে যেতে হবে। তোমাকে তো জাস্ট ১টা ব্যাচের দায়িত্বই দিচ্ছি। এই ব্যাচের বাচ্চার খুব ভালো বাজায়। তোমার সমস্যা হবেনা।
বহ্নি : কিন্তু ম্যাম আমার ভয় করে…
চন্দনা : হাহাহা… দেখো তো… পাগল মেয়েটা বলে কি… সব গুবো ১০-১১-১২ বছরে বাচ্চা ভয় করবে কেন হামম?।
বহ্নি : যদি ঠিক মতো শেখাতে না পারি? কোথায় আপনি আর কোথায় আমি… কখনোই আপনার মতো পারবোনা।
চন্দনা : হামম আমার মতো পারবেনা। আমার থেকে বেশি ভালো করে । কি নিবে তো ক্লাস?
বহ্নি : ওকে ম্যাম।
চন্দনা : তাহলে পরশু ৫টায় চলে এসো…
বহ্নি : জী ম্যাম।

বহ্নি বেরিয়ে এলো।
বহ্নি : রিকশা… যাবেন…?
রিকশাওয়ালা : কোথায়?
বহ্নি : জিগাতলা…

বহ্নি রিকশায় উঠে বসলো। আর ভাবতে লাগলো…

বহ্নি : আমি কিভাবো শেখাবো? বাচ্চারা কেমন না কেমন হবে? যদি আমার কাছে না শিখতে চায়… তাহলে কিভাবে শিখাবো? ম্যামকে তো নাও করতে পারলাম না….
তখন ১টা বাইক প্রচন্ড স্পিডে এসে রিকশাটার সামনে দারালো। রিকশাওয়ালা আর বহ্নি ২জনই ভয় পেয়ে গেলো ॥ তখনই বহ্নির বেষ্টফ্রেন্ড অর্নব হেলমেট টা খুলে মাথাটা ঝাকিয়ে বহ্নিকে হাই বলে হাহা করে হাসতে লাগলো।
বহ্নি : অর্নব তুই…
অর্নব : হামম দোস্ত আমি… হাহাহা।
বহ্নি : হাসছিস কেন ? জানিস কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম…
অর্নব : সে আর নতুন কি? তুই কোন সেকেন্ডে ভয় না পাস বলতো।
বহ্নি : 😒।
অর্নব : এখন নেমে আয়।
বহ্নি : কেন?
অর্নব : আয়না বাবা…

বলেই অর্নব বহ্নিকে টেনে নামালো। এরপর রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে বহ্নিকে বাইকে বসিয়ে চম্পট দিলো।

বহ্নি : তুই কানাডা থেকে কবে ফিরলি?
অর্নব : ৩ঘন্টা আগে দেশে ল্যান্ড করেছি… আর এখন তোর কাছে?
বহ্নি : এসেই বাইক…?
অর্নব :পছন্দ হলো কিনে নিলাম মাই ডিয়ার দোস্ত…
বলেই অর্নব স্পিড প্রচুর বারিয়ে দিলো। আর বহ্নি ভয়ে কাপতে কাপতে
বলল : এই স্পিড কমা স্পিড কমা….

কে শোনে কার কথা? অর্নব নিজের মতোই চালিয়ে যাচ্ছে।

অর্নব হলো আরফানের বন্ধুর ছেলে।সন্ত্রাসদের হামলায় অর্নবের মা-বাবা ২জনই মারা যায়। ভাগ্যক্রমে অর্নব বেচে যায়। সেই থেকে আরফানই অর্নবকে বড় করেছে। নিজের বাসায় রেখেছে। বহ্নি আর অর্নব একই সমান। ২জন বেষ্টফ্রেন্ড … ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিট হওয়ার ৬মাসপর ও স্কলারশীপ পেয়ে কানাডা চলে যায়।।।

.

২দিনপর…
মনি : জানো ভাইয়া আমি না আজকে এতো এতো এতো হ্যাপী…
দহন : কেন আজকে এমনকি ?
মনি : কারন আজকে তোমার সাথে আমি পিয়ানো ক্লাসে যাচ্ছি…
দহন : কেন আমার সাথে কি আমার মনিটার সাথে কোথাও যাইনা? কোথাও নিয়ে যাইনা হামমম?
মনি : যাওতো… কিন্তু পিয়ানো ক্লাসে তো আর প্রথমবার যাচ্ছো…
দহন : পাকুন্নিটা…
মনি : জানো ভাইয়া… আমাদের যে মিস আছেনা… চন্দনা মিস…
দহন : হামম।
মনি : চন্দনা মিস কিছুদিনের জন্য না কোলকাতা যাচ্ছে কি যেন ১টা কাজে…
দহন : তাহলে তোমাদের ক্লাস কে নিবে তবে?
মনি : নতুন ১টা মিস। কি যেন নাম? হ্যা বহ্নি মিস…
দহন : বহ্নি মিস… ?
মনি : তুমি নামটা এভাবে কেন বললে?
দহন : নামটা খুব সুন্দর …
মনি : হামমম। আচ্ছা ভাইয়া … বহ্নি অর্থ কি ?
দহন : আগুন…
মনি : আগুন ?
দহন : হামমম আগুন।
মনি : ভাইয়া তোমার নামের অর্থও না আগুন ?
দহন : হামমম…

ওরা পৌছালো। দহন মনিকে ক্লাসে বসিয়ে নিচে নেমে এলো । দেখে ১টা মেয়ে ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে দারিয়ে আছে । মিষ্টি রঙের ১টা থ্রীপিছ পরা । মেয়েটা বহ্নি… বহ্নি ওরনাটা চোখের দিক থেকে সরিয়ে নিচের দিকে দেখছে । আবার কেপে উঠে চোখ ঢেকে ফেলছে । দহনের কাছে বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে। যদিও বহ্নির মুখ দেখতে পাচ্ছেনা কিন্তু বেশ মজার লাগছে। ও দেয়ালে হেলান দিয়ে দেখতে লাগলো।

দহন: আচ্ছা ওই আহাম্মক মেয়েটা কি এমন দেখছে … আর ভয়ে ভয়ে কেপে উঠছে? দেখতে হয়তো…
দহন একটু এগিয়ে গেলো। দেখলো যে দরজার ঠিক মাঝের দিকে ১টা ছোট্ট ১টা বিড়াল ছানা।
দহন : মেয়েটা এই বিড়াল ছানা দেখে ভয় পাচ্ছে? লাইক সিরিয়াসলি ?

বহ্নি নিজের কাজেই ব্যাল্ত…
দহন : এক্সকিউজ মি…. ক্যান ইউ প্লিজ টেল মি … হুয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুয়িং…?

বহ্নি চোখ ২টা বের করলো । দেখলো দহন দারিয়ে আছে। চোখ ছোটছোট করে ফেলল।
দহন : বলছি আপনি কি এই বিড়াল ছানাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন?
বহ্নি জোরে জোরে মাথা ঝাকালো।
দহন : সরিয়ে দিবো?
বহ্নি আবারও মাথা ঝাকাল । দহন মুচকি হেসে বিড়াল ছানাটাকে আদর করে কোলে নিলো…
দহন : এই বিড়াল ছানাটাকে দেখে কেউ ভয় পায়?

দহনের খোচা মারা কথায়ও বহ্নি কিছু মনে করলো না । কারন এখন দহনকে ওর অ্যাঞ্জেল মনে হচ্ছে।

দহন : বাই দ্যা ওয়ে এখন কি মেঘের আড়াল থেকে একটু বের হবেন?? প্লিজ…

বহ্নি মুখ থেকে ওরনাটা সরালো।
দহন : হেউ আপনি সেই ঝগড়াটে সুইট মেয়েটা না… গুড টু সি ইউ…
বহ্নি : থ্যাংক ইউ…
বলেই বহ্নি ভেতরে চলে গেলো।

দহন : অদ্ভুদ মেয়ে… এই বিড়াল ছানাটা কাকনের জন্য নিয়ে যাই। ওর ভীষন ভালো লাগবে।

.

চন্দনা : হ্যালো ক্লাস..
সবাই : হ্যালো।
চন্দনা : তোমাদের নিউ টিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। শী ইজ লাইক ইউর সিস্টার। তোমাদের বহ্নি আপু… প্লাস মিস…. এটা তোমাদের মিস আপু… সে হ্যালো…
সবাই : হ্যালো মিস আপু… ওয়েলকাম টু আওয়ার ক্লাস…
বহ্নি : থ্যাংক ইউ…
চন্দনা : এটা তোমার ক্লাস বহ্নি… ওরা খুব ভালো। তবে একটুখানি দুষ্টু… আর বাচ্চারা… মিসকে ডিস্টার্ব করবেনা। ওকে???
সবাই : ওকে…
চন্দনা : বা বাই। লাভ ইউ অল…

চন্দনা চলে গেলো।

.

চলবে…