ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-১০+১১

0
2731

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 10
writer : Mohona

.

বলেই দহন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। গাড়ি নিয়ে নদীর তীরে গেলো। গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে খানিকটা সামনে গিয়ে ধপ করে হাটু গেরে বসে পরলো। এরপর চিৎকার করে কাদতে লাগলো। ও তো সত্যিই ভীষন ভালোবেসেছিলো কাকনকে। মনি যখন কাকনকে রিজেক্ট করেছিলো তখনও ও কাকনকে ছেরে দেয়নি… বরং ও বারবার চেষ্টা করেছে যেন মনি কাকনকে পছন্দ করে। তবুও কেন কাকন এমন জঘন্য ১টা কাজ করলো। ও কোনোদিনও কাকনকে ক্ষমা করতে পারবেনা। ঘৃণা ছারা কিছুই করা সম্ভাবনা…
কিন্তু এসব কিছুর ওপরও ১টা সত্য আছে। আর সেটা হলো কাকনের প্রতি দহনের ভালোবাসা। ও সত্যি অনেকে ভালোবেসেছিলো কাকনকে। কাকন ও যে জায়গায় দিয়েছিলো সে জায়গা ও কখনো কাউকে দিতে পারবেনা…
কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা।
কখনো কাউকে বিশ্বাসও করতে পারবেনা ।

দহন : ঘৃণা করি তোমাকে কাকন… ঘৃণা করি তোমার ভালোবাসাকে… ঘৃণা কি আমার ভালোবাসাকে…

.

৬মাসপর…
দেখতে দেখতে ৬মাস কেটে গেলো। দহন নিয়মিত অফিস যাচ্ছে । সময়মতো সব কাজ করছে। পরিবারকেও সময় দিচ্ছে । রাগী-দুষ্টু-মিষ্টি ভাবটা থেকে কেবল রাগী ভাবটা রয়ে গিয়েছে। মিষ্টি আচরন কেবল পরিবারের সাথে।

ওদিকে বহ্নির আজকেই ফাইনাল ইয়ারের ফাইনাল এক্সামের শেষ পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে রিকশায় উঠলো। জ্যামে বসে আছে। ঠিক পাশের গাড়িটাতেই দহন বসে আছে। সাথে মনি। মনি বহ্নিকে দেখতে পেলো। কাচ নামালো।
মনি : আপু…
বহ্নি : আরে মনি… কেমন আছো?
মনি : ভীষন ভালো।
মনি গাড়ি থেকে নেমে এলো।
দহন : মনি গ্রিন লাইট চলে আসবে তো…
মনি : ১মিনিট ভাইয়া…
মনি বহ্নির কাছে গেলো।
বহ্নি : মনি… গ্রিন লাইট আসবে এখনই। যাও গিয়ে বসো।
মনি : হ্যা বসবো। তুমি আসো আমার সাথে। চলো আমাদের সাথে। ৩জন একসাথে লাঞ্চ করবো।
বহ্নি : কিন্তু কেন?
মনি : আরে এতো কিন্তু কেনর চক্করে গ্রিন লাইট চলে আসবে। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে চলে আসো।
বহ্নি : না মনি অন্যদিন…
মনি : না। আজকেই। এখনই। না হলে কিন্তু আমি এখানেই দারিয়ে থাকবো। গ্রিন লাইট হলেও।
বহ্নি ভালোমতোই জানে যে মনি অনেক জিদ্দি। তাই ভাড়া দিয়ে নেমে এলো। মনি বহ্নিকে জোর করে ফ্রন্ট সিটে বসালো। আর নিজে ব্যাক সিটে বসলো। এমনিতেই দহনকে দেখে ভয়ে হাত-পা কাপে তারওপর মনি দহনের পাশে বসিয়ে দিলো।
বহ্নি : আসসালামু আলাইকুম ভভাইয়া।
দহন : ওয়ালাইকুম আসসালাম।

তখন গ্রিন লাইট হলো । আর দহন ড্রাইভ করতে লাগলো। বহ্নির কাছে দহনকে ভিন্ন ভিন্ন লাগছে। আগের থেকেও বেশি রাগি লাগছে । মনির কাছে ও সব শুনেছে। বহ্নি ভয় পেয়ে ১টা ঢোক গিলল। ওরা ১টা রেস্টুরেন্টে গেলো । বহ্নি-মনি অনেক গল্প করলো। গল্প করতে করতে খেলো। কিন্তু দহন একদম চুপ। ৬মাসপর দহনকে দেখলো বহ্নি। ৬টা মাসে অনেক পাল্টে গিয়েছে। মনির আবদারে প্রথমবারতো আর ওদের সাথে বের হয়নি। এর আগেও বহুবার বেরিয়েছে। দহনকে দেখেছে । রাগী হলেও ভীষন দুষ্টু ছিলো। মাঝে মাঝে ওর ভয় পাওয়া নিয়েও অনেক মজা করতো দহন। কিন্তু এখন দহন বেশ গুরুগম্ভির। বেশ মায়া হলো ওর দহনের জন্য।

.

রাতে…
বহ্নি ‘হাত কাটা রবিন’ গল্পটা পড়ছে। আজকে ও সবকিছুর সাথেই দহনের মিল-অমিল খুজেছে। গল্পটা পড়তে পড়তে রবিনের দূরন্তপনার সাথেও বহ্নি দহনকে মিলাচ্ছে।
বহ্নি : অশান্ত নদী যখন হঠাৎ শান্ত হয় … তখন হয়তো নদীটা মরে যায় না হলে আরো ভয়ংর কিছু ঘটায়। দহন আহমেদ কে এমন মানাচ্ছেনা। দহন তো কাকনকে অনেক ভালোবেসেছিলো। ব্যাপারটা একদমই ঠিক হয়নি…. সত্যিই কি তবে ভালোবাসা শুধু কাদায়… সে কি কেবলই যাতনাময়….

🎤🎶🎵

সখী ভাবনা কাহারে বলে
সখী যাতনা কাহারে বলে…

তোমরা যে বলো দিবসও রজনী
ভালোবাসা ভালোবাসা
সখী ভালোবাসা কারে কয়
সেকি কেবলই যাতনাময়

সেকি কেবলই চোখের জ্বল
সেকি কেবলই দুঃখের শ্বাস
লোকে তবে করে
কী সুখেরই তরে
এমনও দুঃখেরও আশ…
🎤🎶🎵

অর্নব : কিরে কে আবার কোন দুঃখের আশ করলো?
বহ্নি দেখলো যে অর্নব দারিয়ে আছে।
বহ্নি : ওমা তুই কখন এলি?
অর্নব : যখন তুই ছ্যাকা খাওয়া মার্কা গান গাইছিলি। ছ্যাকা সংগীত।
বহ্নি : খবরদার রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে কোনো মজা করবি না। মাইর খাবি কিন্তু …
অর্নব : প্রায় ১বছর পর আমি বেচারা এলাম আর তুই এমন আচরন করছিস?
বহ্নি : ওরে আমার বেচারা। যা সর…

.

পরদিন…
নিশার সাথে মনি স্কুল থেকে ফিরছে । তখন মনি কাকনকে দেখতে পেলো।
মনি : মামনি ওই দেখো কাকড়া কাকড়া …
নিশা : কাকড়া?
মনি : মানে কাকন…
নিশা : মনি…
মনি : 😁।।। আচ্ছা মামনি এই কাকড়া না জেলে ছিলো। তাহলে বাহিরে কেন?
নিশা : ওর বাবা ব্যাক্তিগত জামিনে ওকে বের করে এনেছে।
মনি : ব্যাক্তিগত জামিন!!!???
নিশা : হামম।
মনি : তাহলে তো একে ফাসি দিলেই ভালো হতো। কোনো গতই জামিন পেতোনা। হুহ। এখন তো আমার ভাইয়ার পিছে পরবে। পটানোর বন্দোবস্ত করবে। কালোজাদু করবো।
নিশা : কিছুই হবেনা মা…. তোমার ভাইয়া আর কখনো কাকনের মুখও দেখবেনা।
মনি : সত্যি?
নিশা : হামম হামম সত্যি ।
মনি : যদি অমন না হয় তবে তোমার দোষ।
নিশা : অমন হবেনা। কিন্তু এখানে আমার দোষ কেন আর কিভাবে হবে!!!
মনি : হবেনা আবার… হুহ… তুমিই তো ওই কাকড়া কে মামনি মামনি বলেই অস্থির হয়ে পরতে। হুহ। আর আমাকে বকতে হুহ। এখন ওই মামনি অপছন্দের কেন হয়ে গেলো হ্যা?
নিশা : সরি বাচ্চাটা । ভুল হয়ে গিয়েছে । আর হবেনা। ওই কাকড়ার মুখোমুখো হলে ঠাসঠাস করে আগে ২টা লাগাবো । হ্যাপী?
মনি : হামমম।

.

আরফান : অনার্স তো শেষ করলে অর্নব। এখন মাস্টার্স কি কানাডাতেই করবে নাকি এখানে?
অর্নব : বাবাই আমি ১টা ভালো জব অফার পেয়েছি। তারা আমাকে নিতে চায়। খুব ভালো জবটা। শুরুতেই স্যালারি মাসে ৩লাখ টাকা। মাস্টার্স কমপ্লিট করলে সাড়ে তিন লাখ হবে। ধীরে ধীরে আরও বারবে।
বিষয় : গুড। দেন জয়েন করে ফেলো।
অর্নব : আসলে বাবাই ২১দিনের মধ্যেই জয়েন করতে হবে। আর জয়েন করার ২বছররের আগে মে বি বাংলাদেশে ফিরতে পারবো। ২-৩বছর হয়ে গেলো ১বছর পরপর ছুটি পাবো।
আরফান : ওহহ। মিস করবো কিন্তু তোমাকে। বাট ক্যারিয়ার গরতে হলে একটু কষ্ট করতে হবে।
অর্নব : হামম। বাবাই… তোমরাই আমার সব। তুমি আমার বাবার মতো বাবা-ই … তাই ১টা কথা বলতে পারি বাবাই…
আরফান : বলো।
অর্নব : বাবাই আমি বহ্নিকে ভালোবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই। তোমরা বললে বিয়ের পর ওকে কানাডা নিয়ে যাবো … আবার তোমরা বললে ও এখানেই থাকবে।
আরফান দারিয়ে গেলো। অর্নব ভয় পেয়ে গেলো।
অর্নব : সরি বাবাই … আসলে আমি বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চেয়েছিলাম। আমি তো ১টা এতিম। কোনো এতিম ছেলের কাছে কি কেই মেয়ে দেয়…
আরফান : বিষয়… ওকে কয়েক ঘা থাপ্পর লাগাও তো। ও কোন সাহসে নিজেকে এতিম বলছে? ওর জিভটা পারলে ছিরে ফেলো তো। আমি উঠলাম তোকে মিষ্টি কেনার টাকা দেয়ার জন্য … আর এ কি ভেবে নিলো… লাগা ওকে কতোগুলো।
অর্নব : বাবা তারমানে তুমি রাজী!!!
আরফান অর্নবের কান মলে দিয়ে
বলল : রাজী না হলে সোজা গুলি করে দিতাম না …
অর্নব : বলছিলাম কি বহ্নিকে ১বার জিজ্ঞেস করে নিবে যে ও আমাকে বিয়ে করবে কি করবেনা?
আরফান : সে না হয় করবো। তবে তুমি এখনই বিয়ে করতে চাইছো কেন ?
অর্নব : আসলে বাবাই… ২বছর লম্বা সময়। সেদিন তো ওই দহন নামের ছেলেটা এসে কিভাবে বহ্নিকে নিয়ে গেলো। তাই বললাম যে বিয়েটা করে ফেলতে চাই। ও যদি কানাডা যায় তবে ২জন একসাথে ওখানেই মাস্টার্স কমপ্লিট করবে। আর না হলে ও এখানেই কমপ্লিট করবে।
বিনা : ছেলেমেয়ে গুলো বড় হয়ে গিয়েছে গো…
আরফান : ওকে আমি কালই বহ্নিমার সাথে কথা বলছি।

.

মনি : জানো বহ্নি আপু… ওই কাকড়াটা না কি যেন ১টা জামিন পেয়েছে। ব্যাক্তিগত নামের জামিন…
বহ্নি : ওহ…
মনি : আমার তো ওই কাকড়াটাকে একদমই সহ্য হয়না । ওকে না আমার গুলি করে মারতে মন চায়।
বহ্নি : ছিঃ এমন কথা বলেনা মনি… কেউ পচা তুমি পচা কেন হবে বলোতো… তুমিনা গুড গার্ল।
মনি : মোটেও আমি গুড না। ভাইয়া আর আমি ভীষন বাদর হাহাহা…
হাসতে হাসতে মনির মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
বহ্নি : কি হলো? মন খারাপ হয়ে গেলো কেন?
মনি : জানো আমার ভাইয়াটা না আগের মতো দুষ্টুমি করেনা।আগের মতো হাসেওনা। ভাইয়ার কেবল রাগটাই রয়ে গেলো।
বহ্নি : …
মনি : জানো আপু আমি না মামনি বাপীকে বলতে শুনেছি…. ভাইয়া নাকি ড্রিংকস করে।
বহ্নি : ওহ…
মনি : আপু ড্রিংকস করা না পচা কাজ?
বহ্নি : হামম ভীষন পচা। আচ্ছা তুমি তোমার ভাইয়াকে বলতে পারোনা যেন ড্রিংকস না করে।
মনি : আপু মামনি আমাকে বলেছে যে এখন আমি বড় হচ্ছি তাই কিছুটা বুঝি। আর তাই যেন ভাইয়ার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার না করি…
বহ্নি : ওহ।
মনি : কিন্তু আমি তো করবোই ।
বহ্নি : আপুমনি বড়দের কথা শুনতে হয় ।
মনি : আরে বড়দের চক্করে আমার ভাইয়া আনহ্যাপী থাকবে নাকি ।

.

পরদিন…
রাতে…
আরফান : আসবো মা?
বহ্নি : আরে বাবা আসো।
আরফান ভেতরে ঢুকলো ।
আরফান : মামনি ব্যাস্ত ?
বহ্নি : না তো বাবা। কিছু বলবে?
আরফান : হামমম।
বহ্নি : মা তুমি বড় হয়েছো। অন্য ৫টা মেয়ের মতো তুমি নও। তবুও সকলের মধ্যেই ১টা নিজস্ব আমি থাকে। তুমি কখনোই কোনোকিছু আবদার করোনি। যতোটুকু সম্ভব আমি দিয়েছি। বড় হলে ছেলেমেয়েরা বন্ধু হয় মা-বাবার… তাইতো?
বহ্নি : হামম বাবা…
আরফান : তাহলে আজকে বাবা নয় বন্ধু হয়ে ১টা কথা জিজ্ঞেস করি?
বহ্নি : হামম করো।
আরফান : মামনি তোমার জীবনে কি কেউ আছে? সামওয়ান স্পেশাল…. মানে কাউকে কি তুমি ভালোবাসো?
বহ্নি মাথাটা নিচু করে
বলল : না বাবা।
আরফান : আমি জানতাম আমার মেয়ের কাছে আমি এই উত্তরটাই পাবো
বহ্নি : …
আরফান : মামনি… অর্নব বলেছে ও তোমাকে ভালোবাসে। বিয়ে করতে চায়। তুমি কি বলো? ওকে হ্যা বলে দিবো? নাকি না করে দিবো?
বহ্নি : তুমি যেটা ভালো মনে করো …
আরফান : বাবা ইটস ইউর লাইফ। তোমার তো ১টা মতামত আছে।
বহ্নি : আমি জানি আমার বাবা কখনো আমার খারাপ চাইবেনা। তাই তুমি যেটা ভালো মনে করো সেটাই করো।
আরফান মেয়ের কপালে ১টা চুমু দিলো।
আরফান : আমার লক্ষি মেয়ে। আসি মা।
বলেই আরফান বেরিয়ে গেলো।

.

মনি : মামনি মামনি… আমার কথাটা ১টা বার ভেবে দেখো না।
নিশা : কি ভাববো বলো তো মনি? তুমি এখনো অনেক ছোট? তাই কেবল তোমার ইচ্ছা আর তোমার জাজমেন্টের ওপর ভিত্তি করে দহনকে বহ্নির সাথে বিয়ে দিতে পারিনা… দহন কখনো রাজী হবেনা। কারন দহনের সবটা জুরে কেবল আর কেবল কাকন আছে। ও যতোই বলুক যে ও কাকনকে ঘৃণা করে আমি তো মা তাই আমি জানি যে ও কাকনকে খুব ভালোবাসে। হ্যা ও আর কখনো কাকনকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনবেনা। কিন্তু ও নিজের ভালোবাসাটাকে ভুলতে পারবেনা। এতো তারাতারি তো নাই…
মনি : মামনি তুমি বোঝার চেষ্টা করো। বহ্নি আপু খুব খুব খুব ভালো। আপু যদি ভাবি হয়ে আসে তাহলে আমরা সবাই হ্যাপী থাকবো। আর ভাইয়াও হ্যাপী থাকবে। আমি বহ্নি আপুকেই ভাবি বানাতে চাই ভাবি বানাতে চাই & ভাবি বানাতে চাই…
দীপন : কাকে ভাবি বানাতে চাও?
বাপীকে দেখে মনি ভয়ে চুপ হয়ে গেলো।
দীপন : কি হলো মনি… বলো… কাকে ভাবি বানাতে চাও?
নিশা : আসলে ও…
দীপন হাত দিয়ে ইশারা করে ওকে থামিয়ে দিলো।
দীপন : মনি… বলো কাকে ভাবি বানাতে চাও?
মনি : বহ্নি আপুকে…
দীপন : কে বহ্নি?

.

চলবে…

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 11
writer : Mohona

.

দীপন : কে বহ্নি ?
মনি : বহ্নি রহমান।
দীপন : কে এই বহ্নি রহমান?
মনি সবটা বলল।
দীপন : এই নতুন ১টা মেয়ে আমার মেয়ের সাথে এমন নিবিড়ভাবে জরিয়ে আছে আর আমি জানিনা? কেউ আমাকে কিছু জানানো প্রয়োজন মনে করলোনা…
নিশা : কেউ কি ভয়ের চোটে তোমার সাথে কথা বলতে সাহস পায়? যে মেজাজে থাকো…
দীপন : আজব তো… ভয়ের কি আছে? কখনো কি তোমাদের বকেছি?
নিশা : বকতে হয়না। তোমার মেজাজটাই এমন।
দীপন : তোমার সাথে তো এ নিয়ে পরে কথা বলবো। তবে তার আগে আমার এই বহ্নি রহমান সম্পর্কে আগা গোরা সব জানতে হবে। এই মেয়ে সত্যিই এমন নাকি অন্য কোনো ধান্দা আছে?
নিশা : সবাইকে কি সন্দেহ করাটা খুবই দরকার?
দীপন : অবশ্যই ।
নিশা : তাহলে কাকনকে কেন সন্দেহ করোনি?
দীপন : জাস্ট ওই ১জন কেই করিনি। আর দেখ সে কি করলো? আমার ছেলেটাকে ভেঙে দিলো। আমার ছেলেটা ছিলো কি আর হয়েছে কি…
নিশা : কেন তুমি তো অমন ছেলেকেই চেয়েছিলে… তোমার মতো থুম্বা । মেজাজওয়ালা। আগে তো রাগী ছিলো। এখন ঠিক তোমার মতো মেজাজওয়ালা হয়ে গিয়েছে। হুহ।
দীপন : বাচ্চাদের মতো কথা বলোনা নিশা। আমি চেয়েছিলাম যেন দহন কাজ নিয়ে একটু সিরিয়াস হয়। আর পাংচুয়াল হয়। আমি কখনোই চাইনি যে আমার ছেলে হাসতে ভুলে যাক। কখনো কোন কাজে ওদেরকে বাধা দিতে দেখেছো?
নিশা : হুহ….
দীপন তোমার সাথে পরেও ঝগড়া করতে পারবো। এখন এই বহ্নি রহমানের ঠিকুজি গুষ্ঠী বের করতে হবে। মনে হচ্ছে মেয়েটা ফ্রড।
মনি : মোটেও না… আমার বহ্নি আপু অনেক বেশি ভালো। ফ্রড তো ওই কাকড়া ছিলো।
বলেই মনি রুমে চলে গেলো। দীপন বহ্নির পিছে লোক লাগিয়ে দিলো সব তথ্য জানতে।

.

২দিনপর …
বিনা : কি হলো তোমাকে এমন লাগছে কেন? বিষয়কেও কেমন যেন লাগছে । কি হয়েছে বলো তো?
বিষয় : আম্মু … ১টা ভয়ংকর অপরাধী কে ধরা হয়েছে আজকে। গত ২বছর ধরে তার পিছে পরেছিলাম। আজকে গিয়ে ধরলাম।
বিনা : তো এটাতো ভালো খবর। তবে তোমাদের মুখ ভার কেন?
আরফান : এটা অনেক বড় ১টা গ্যাং লিডার। ভীষন ভয়ংকর। মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল … ভয় পাওয়ার কারন হলো অর্নব আর বহ্নির বিয়ে নিয়ে। যদি অনুষ্ঠানের মধ্যে এসে ওদের গ্যাং মেম্বাররা অ্যাটাক করে বসে…? ওরা তো জানবেই যে সেদিন সবাই ব্যাস্ত থাকবো।
বিনা : পুলিশ পাহারায় রাখার ব্যাবস্থা করবে তবে।
বিষয় : সেটাই তো সমস্যা আম্মু। যেহেতু গ্যাংটা অনেক বড় তাই তারা আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবাই কিনে নিতে পারে। আর ডিপার্টমেন্টে কে অনেস্ট কে নয় সেটা বোঝা মুশকিল…
বিনা : হামমম।
আরফান : এতোবছর চাকরীর জীবনে এই প্রথমবার এমন ভয় করছে। ইনসিকিওর ফিল করছি।
দিনা : বাবা ১টা কথা বলি…
আরফান : হ্যা বলো।
দিনা : বাবা আমরা যদি অর্নব আর বহ্নির বিয়েটা ঘরোয়াভাবে দেই… মানে ফ্যামিলি মেম্বাররা কেবল।
বিষয় : দিনা আমাদের হোল ফ্যামিলিটা কিন্তু ইনাফ বড়। সবাইকে বলাটাও রিস্কি।
দিনা : হ্যা তাও ঠিক।
আরফান : ১টা কাজ করা যায়। জাস্ট আমরা ৬জন আর কাজী সাহেবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে বিয়েটা সম্পন্ন করা যায়। বিয়ের পর যতো তারাতারি সম্ভব অর্নব-বহ্নিকে কানাডা পাঠাতে হবে। বহ্নির কাগজপত্র প্রায় 50% রেডি। ওরা গেলে বিনা … তুমি বউমা আর দিদিভাইকে নিয়ে কোলকাতা চলে যাও কিছুদিনের জন্য। বিষয় তুমিও চলে যেও।
বিষয় : বাবা আমি তোমাকে রেখে কোথাও যাবোনা। ওরা সবাই চলে যাক। আমিও থাকবো।
আরফান : কিন্তু…
বিষয় : কোনো কিন্তুনা।
আরফান : ওকে…

.

দীপন : নিশা … নিশা… এই নিশা…
নিশা : আসছি তো।
নিশা ছুটে এলো।
দীপন : এতোক্ষন লাগে আসতে?
নিশা : আশ্চর্য তো … আমি কি জ্বীন নাকি যে পলকেই ঝলক হয়ে যাবো…
দীপন : জানোনা অফিস থেকে আমি আসবো। ডাকতে হলো কেন?
নিশা : বেশ করেছি। হুহ। ধরো পানি খাও।
দীপন পানি খেলো।
নিশা : চেচাচ্ছিলে কেন?
দীপন গলার টাই খুলতে খুলতে
বলল : বলছি…
নিশা : বলো… 😒…
দীপন : বহ্নি রহমান মেয়েটা আছেনা …
নিশা : হামম। কি হয়েছে ওর?
দীপন : মেয়েটার সম্পর্কে সব তথ্য আজকে হাতে পেলাম।
নিশা : তথ্য হাতে পেলাম মানে?
দীপন : মানে আমি ১জন প্রাইভেট এজেন্ট হায়ার করেছিলাম বহ্নির বিষয়ে জানতে।
নিশা : টু মাচ হয়ে গেলোনা?
দীপন : নট অ্যাট অল। আমার ছেলে-মেয়ের জীবনে আমি আর গাফিলতি করতে চাইনা।
নিশা : তো কি জানিতে পারিলে শুনি… 😒
দীপন : এটাই যে মেয়েটা খুব ভালো। ফ্যামিলিও খুব ভালো। ব্যাকগ্রাউন্ডটাও খুব ভালো।
নিশা : হামমম।
দীপন : মনির কথা আমলে নেয়াই যায়।
নিশা : কি বলছো কি?
দীপন : ঠিকই বলেছি । বহ্নি দহনের থেকে বিপরীত হলেও … ঠিক হবে ওর জন্য।
নিশা : কিন্তু দহন কি রাজী হবে?
দীপন : না হলে রাজী করাতে হবে।
নিশা : এসব বিষয়ে কি জোর করা ঠিক হবে। সারাটা জীবনের ব্যাপার।
দীপন : দেখো আই নো দহন। ও বহ্নি কেন কোনো মেয়েকেই মেনে নিতে ওর কষ্ট হবে। এরমানে কি আজীবন ওকে দেবদাস হয়ে ঘুরতে দেখবো?
নিশা : এটাও ঠিকই বলেছো। কিন্তু আরেকটু সময় দেয়া কি উচিত নয়…
দীপন : তো আমি কি বলেছি যে কালই বিয়ে দিবো। বহ্নির অনার্স করলো নিশ্চয়ই মাস্টার্স করবে তাইনা?
নিশা : হামম।

.

পরদিন…
রাতের খাওয়ার পর …
দহন : কিছু কি বলবে বাপী…
দীপন : হ্যা তাইজন্য তো তোমাদের ৩জনকে এখানে বসালাম।
দহন : বলো কি বলবে?
দীপন : দেখো সোজা কথা সোজা ভাবেই বলতে আমি পছন্দ করি। জরতা আমার ভালো লাগেনা। তাই ডিরেক্টলি বলছি… তুমি কি কাকনকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে? দেখো ৬মাস অনেক লম্বা সময়। তুমি যদি কাকনকে আরেকটা সুযোগ দিতে চাও তবে দিতে পারো। এতে আমি তোমার মামনি অথবা মনি… কেউ কোনো আপত্তি করবেনা… তাই ভেবে দেখতে পারো।
দহন : বাপী … কাকন ইজ আউট। ও তো দূরের কথা… ওর নামটাও আর কখনো আমার জীবনে স্থান পাবেনা ।
দীপন : হামমম বুঝলাম। কিন্তু তোমার ফিউচার প্ল্যানটা কি?
দহন : ফিউচার প্ল্যান ?
দীপন : হামম ফিউচার প্ল্যান। দেখো তুমি আমাদের একমাত্র ছেলে। আমার তো আর কোনো ছেলে নেই তাইনা?
দহন : …
দীপন : আমি আসলে আমরা চাই তুমি মুভ অন করো। বিয়ে করো।
দহন : বাপী আই নিড টাইম…
দীপন : দিবো। আমি বলবো না যে নেক্সট মান্থই তোমার বিয়ে। ১বছর , দরকার হলে ২বছর পর… বাট… বিয়ে করতে হবে…
দহন : বাপী … বিয়ে ১টা অনেক বড় দায়িত্ব। ১টা মেয়ে আমার কাছে আসবে বাট আমি তো তাকে ভালোবাসতে পারবোনা। আমার পক্ষে কাউকে আর ভালোবাসা সম্ভব নয়। বিশ্বাস উঠে গিয়েছে ভালোবাসা থেকে।
দীপন : চেষ্টা করতে তো আর দোষের কিছু নেই তাইনা। আর যাকে তোমার বউ বানাতে চাই তারকাছে থেকে ধোকা খাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই আশা করি।
দহন অবাক চোখে বাপীর দিকে তাকালো।
দীপন : মনি চায়… আর মনির সাথেসাথে আমরাও চাই বহ্নিকে তোমার বউ বানাতে…
দহন : বহ্নি?
মনি : হ্যা হ্যা বহ্নি আপু… ও ভাইয়া ও ভাইয়া আমি না খুব করে চাই যে বহ্নি আপু আমার ভাবি হয়ে আসুক। আগেও চাইতাম। কিন্তু তখন বলতে পারিনি কারন তুমি ক.. বহ্নি আপুকে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি বহ্নি আপুকেই ভাবি হিসেবে চাই । ও ভাইয়া রাজী হওনা …
দীপন : মনি… বলেছিলাম না ফোর্স জিনিসটা সবসময় করবে না। বড়দের মধ্যে কথা বলবেনা…
মনি : সরি বাপী…
বলেই মনি ভয়ে চুপসে গিয়ে চুপচাপ বসে পরলো। ও ভুলেই গিয়েছিলো যে সামনে বাপী বসে আছে।
দীপন : তারাহুরার কিছু নেই…. টেক ইউর টাইম…
বলেই দীপন রুমে চলে গেলো। দহনও চলে যেতে নিলে মনি লাফিয়ে দহনের হাত ধরলো।
মনি : ভাইয়া রাজী হয়ে যাওনা। বহ্নি আপু ভাবি হয়ে এলে ভীষন ভালো হবে। আপুর সাথে ইচ্ছা মতো কথা বলতে পারবো।
নিশা : মনি… ছারো ভাইয়াকে । যেতে দাও।
মনি : মামনি জল্লাদ বাপের কথা বলোনা তো…
নিশা : মনি…
মনি দহনের হাত ছেরে দিলো। দহন রুমে চলে গেলো।

.

পরদিন…
আরফান অফিসে বসে কাজ করছে তখন দীপন এলো ।
আরফান : আরে মিস্টার আহমেদ? প্লিজড টু মিট ইউ।
দীপন : মি টু…
আরফান : প্লিজ সিট।
দীপন বসলো।
আরফান : কোনো সমস্যা মিস্টার আহমেদ?
দীপন : না আবার হ্যা ও…
আরফান : মানে?
দীপন : সমস্যাটা হলো আপনার মেয়ে।
আরফান : আমার মেয়ে সমস্যা ? যতোদূর আমি জানি , আমার মেয়ে তো কখনো কারও সমস্যার কারন হতে পারেনা।
দীপন : কিন্তু এবার তো হয়েছে।
আরফান : অসম্ভব। আমি বিশ্বাস করিনা।
দীপন : আগে শুনে তো নিন যে সমস্যাটা কি…
আরফান : সমস্যা যাই হোক সেটার কারন কখনোই আমার মেয়েনা।
দীপন : না গো মিস্টার সমস্যাটা আপনার মেয়েই। আর সেটা হলো এই যে আপনার অনেক ভালো এবং লক্ষি। তাই আমি বহ্নি মাকে আমার ছেলের বউ বানাতে চাই।
আরফান : আমার মেয়েকে ছেলের বউ বানাতে চান?
দীপন : হামম।
আরফান : বিষয়টা আমার কাছে যথেষ্ট বেমানান। আপনার ছেলে আর আমার মেয়ের বিয়ের কথা ভাবাই বেমানান। কোথায় আপনারা আর কোথায় আমরা।
দীপন : দেখুন আপনার মতো ১জন মানুষের কাছে আমি এই কথা আশা করিনি। টাকাপয়সা দিয়ে দীপন আহমেদ কাউকে জাজ করেনা।
আরফান : মানলাম এটা । কিন্তু আপনার ছেলে আর আমার মেয়ে কিন্তু একে অপরের বিপরীত।
দীপন : দেখুন অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে পুরো মিল পাওয়া যায়না। তাই …
আরফান : দেখুন প্রথম কথা হলো এই যে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
দীপন : তাই?
আরফান : জী। আর যদি আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক নাও হতো তবুও আমি আমার মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দিতামনা।
দীপন : কেন আমার ছেলে কি খারাপ? ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন… আমার ছেলে অনেক।
আরফান : দেখুন ভালো খারাপের কথানা। আপনি হয়তো জানেননা যে আপনার ছেলে ১টা মেয়েকে ভালোবাসে। আর ১জনকে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করলে সেই সম্পর্ক কখনো শান্তির হয়না…
দীপন : দেখুন আমার ছেলে কাউকে ভালোবাসেনা। ভালোবাসতো…
আরফান : মানে?
দীপন সবটা বলল।
আরফান : ওহ… সো স্যাড।
দীপন : হামম। আর এসব কথা ভেবে আমি বহ্নিকে ছেলের বউ বানাতে চেয়েছিলাম। কারন বহ্নির মতো ১টা মেয়েই আমার বাড়ির বউ হওয়ার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এখন তো আর সেটা সম্ভবনা।
আরফান : আম সরি… আপনার হেল্প করতে পারলামনা।
দীপন : হেই ডোন্ট বি…. আপনার মেয়েকে আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক স্নেহ দিবেন আর শুভ কামনা জানাবেন।
আরফান : অবশ্যই ।
দীপন চলে গেলো।

.

৫দিনপর…
সন্ধ্যা ৭টা …
আজকে শুক্রবার। আর আজকে এখনই অর্নব আর বহ্নির বিয়ে । কাজী সাহেব আসছে। বিষয় নিজে তাকে আনতে গিয়েছে। বিয়ের ৩দিনপরই অর্নব বহ্নিকে নিয়ে কানাডা চলে যাবে । বহ্নিকে মেরুন রঙের ১টা শাড়ি পরানো হয়েছে। আর হালকা সাজানো হয়েছে। যেহেতু নিজেরাই ৬-৭জন তাই আর পার্লারে যাওয়া হয়নি।

দিনা : অর্নব ভাইজান… আর কতো আমার ননদটার দিকে তাকিয়ে থাকবেন হামম? আর ১ঘন্টার মধ্যেই তো লিগালি আপনার হবে।
অর্নব : ভাবি… লেগ পুলটা করা ঠিক হচ্ছেনা। আমার কিন্তু লজ্জা করছে । আমি কিন্তু কান্না করবো। 😁
দিনা : ওরে আমার লজ্জাবতীরে। যখন বাবাকে সরাসরি বিয়ের কথা বলেছিলে তখন লজ্জা লাগেনি হামম?
অর্নব : 😁।
বহ্নির মনটা খারাপ ৩টা কারনে। ১ম কারনটা স্বাভাবিক… মা-বাবাকে ছেরে চলে যেতে হবে। ২য় কারন বাবা-ভাইয়ার জন্যও ভীষন চিন্তা। আর ৩য় কারন হলো এই যে ও চেয়েছিলো মনিকে ইনভাইট করতে চেয়েছিলো। কিন্তু সম্ভব হয়নি।

বিষয় কাজী সাহেবকে নিয়ে চলে এলো।

.

চলবে…