ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-১৪+১৫

0
2421

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 14
writer : Mohona

.

দহন : দহন বহ্নির হাত কখনোই ছেরে দিবেনা… আর নাতো দহন বহ্নি ছারা অন্যকোনো নারীর হাত ধরে পথ চলবে… সম্পর্কটাও মন দিয়ে টিকিয়ে রাখবে। বহ্নি দহনকে ছারতে চাইলেও দহন বহ্নিকে ছারবেনা…
বলেই দহন রুমে চলে গেলো।
দীপন : আজকে নিজের ছেলেকে নিয়ে কেবল গর্ব নয় অহংকারও হচ্ছে। আমার ছেলে রাগী হলেও মনের দিক দিয়ে ভীষন ভালো।
নিশা : দহন বহ্নি সুখী রাখতে পারবে মানছি… কিন্তু দহনকি সুখী হতে পারবে?
দীপন : নিশা… কবুলের জোর অনেক বেশি। সেটা নিশ্চয়ই তোমার থেকে ভালো কেউ জানেনা… অ্যাম আই রাইট অর অ্যাম আই রাইট…
নিশা : হামমম।

শুক্রবারে দীপন দিনার বাবার বাসায় গেলো। বহ্নির কাকা-ফুপ্পি-মামাদের কাছে প্রস্তাবটা দিলো। দীপন দহনের সাথে কাকনের সম্পর্কের কথাও আড়াল করেনি। তারা মোটামোটি রাজি হলো। তবে বহ্নির বড়মামা বলল যে সে ১টা বার বহ্নির সাথে কথা বলতে চায়। ওর মত জানতে চায়। দীপনও স্বায় দিলো। বহ্নির বড়মামাই বহ্নির সাথে কথা বলল। বড়দের মুখের ওপর কথা বলতে বহ্নি শিখেনি। কিন্তু ও এটাও জানেযে দহন কাকনকে ভীষন ভালোবাসতো। ও কেবল এটুকু

বলল : কিছু বলার আগে আমি ১টা বার মিস্টার আহমেদের সাথে কথা বলতে পারি?

সবাই ওকে বলল।

.

পরদিন…
বিকাল ৫টা বাজে…
বহ্নি ঠিক ৫টায় রেস্টুরেন্টে পৌছালো। ও ভালোমতোই জানে যে দহন এখনও আসেনি। কারন দহন মোটেও পাংকচুয়াল নয়। তবে বহ্নি যখন ভেতরে গেলো দেখলো যে দহন বসে আছে। বহ্নি বেশ অবাক হলো। দহন এসে পরেছে। তাও ওর আগে… ও কি তবে ভুল ঘড়ি দেখেছে… এটা ভেবেই বহ্নি আরো ১বার সময় দেখার জন্য হাতঘড়ির দিকে তাকালো। না ঠিকই তো আছে সময়। কেবল ৫টা বেজে ২মিনিট। বহ্নি ভাবলো যে হয় ঘড়িটা স্লো যাচ্ছে। ব্যাটারী ইস্যু আছে। তাই ও মোবাইল বের করে সময় দেখলো। না ও ঠিক সময়েই এসেছে।
দহন : প্লিজ সিট…
বহ্নি বসলো।
দহন : দেখো আমি জানি যে তুমি সময়ের কাজ সময়ে করো। তাই তোমাকে ওয়েট করাতে চাইনি। সময় মতো চলে এসেছি। ৫মিনিট আগেই পৌছে গিয়েছি। গট ইট?
বহ্নি কেবল মাথা নারালো।
দহন : কি খাবে? কি অর্ডার করবো তোমার জন্য?
বহ্নি : আপনার যেটা ইচ্ছা।
দহনের রাগ উঠলো ।
দহন : খেতে তো তোমাকেই হবে তোমার খাবার… তাইনা? সো বলো…
বহ্নি : স্যান্ডউইচ…
দহন : জাস্ট স্যান্ডউইচ? কফি জুস?
বহ্নি : জুস।
দহন অর্ডার করলো।
দহন : বলো কি বলবে?
বহ্নি কি বলবে? দহনের রাগী রাগী মুখ দেখে বহ্নির সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
দহন : বলো…
বহ্নি : পপপানি খাবো…
দহন পানি আনালো। বহ্নি পানি খেয়েই যাচ্ছে খেয়েই যাচ্ছে। সেই সাথে দহনের রাগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ও কিছুতেই বুঝতে পারেনা যে এই মেয়েটা এমন ভীতু কেন?
দহন দাতে দাত চেপে বলল : হয়েছে কি পানি খাওয়া? 😬
বহ্নি রেখে দিয়ে মাথা নেরে হ্যা বলল।
দহন : এখনতো বলো যে কি কথা বলার জন্য ডেকেছো?
বহ্নি : হামম বলছি…
দহন : লিসেন… কাকনের টপিক বাদ দিয়ে। কাকনকে ভুলতে পারবো কিনা , ওকে ক্ষমা করতে পারবো কিনা… মূলত কাকন রিলেটেড কোনো কথা বললে কিন্তু ঠাটিয়ে থাপ্পর মারবো।
বহ্নি : নননা না আমি কাকন আপুর কথা বলতে আসিনি তো…
দহন : তো কি বলতে এসেছো বলো…
বহ্নি : না মানে আপনাকে কি জোর করে বিয়েতে রাজী করা হয়েছে? মানে চাপে পরে রাজী হয়েছেন ? মানে আপনি আর মনি তো আংকেলকে ভয় পান। তাই বলছি আংকেলের ভয়ে কি আমাকে বিয়ে করছেন?
দহনের ভীষন ইচ্ছা করছে বহ্নিকে থাপ্পর মারতে।
দহন : আমার নাম কি বহ্নি রহমান যে জোর করে আমাকে বিয়ে দেয়া হবে? বা কোনো চাপে ফেলে বিয়ে দেয়া হবে? আমার বাপী রাগী হতে পারে তাই বলে এতোটাও খারাপ না। আমি সজ্ঞেনে , নিজের মর্জিতেই তোমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছি। বুঝেছো?
বহ্নি : হামমম। শুনুন…
দহন : বলো…
বহ্নি : আমাকেও কিন্তু আপনাকে বিয়ে করার জন্য জোর করেনি।
দহন : আপনাকে তো জোর করার প্রয়োজনই নেই… আপনাকে মুখে বললেই আপনার কাপাকাপি শুরু হয়।
বহ্নি : 😒…

দহন অর্ধেক খাবার খেয়ে রেখে দিলো।
বহ্নি : শুনুন খাবার ফেলা ভালোনা। ফিনিশ করুন না…
দহন : তুমি আমার বউ হওনি হবে… বউ হওয়ার পর বলো… শোনার চেষ্টা করবো…
বহ্নি : …
কিছু ১টা ভেবে দহন খাবারটা খেয়ে নিলো।

দহন : দেখো প্লিজ বিয়েরপর অন্তত আমাকে আপনি করে ডেকোনা…
বহ্নি মাথা নেরে হ্যা বলল।
দহন : মুখ নেই? মুখে বলো।
বহ্নি : হামম।
দহন : গুড চলো তোমাকে বাসায় পৌছেদি।
বহ্নি : হামমম।
দহন : তোমার কপাল ভালো যে আজকে না করোনি….

.

দহন-বহ্নির বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। কিন্তু সমস্যা বাধলো ১টা বিষয় নিয়ে। সেটা হলো এই যে বহ্নি চায় ধুমধাম ছারা বিয়ে করতে।। কারন ও চায়না বাবা-ভাইয়ার রেখে যাওয়া টাকার বেশ কিছু অংশ ওর পিছে খরচ হোক। ওগুলো রিদি-ভোরের ভবিষ্যৎ । যদিও কারনটা ও কাউকে বলেনি। আর অন্যদিকে দহন চায় মহা ধুমধাম করে বিয়ে করতে। আর ওর কাছে কারন হলো এইযে ও কাকনকে দেখাতে চায় যে ও কাকনকে ভুলে গিয়েছে। কাকনের কোনো জায়গা নেই ওর জীবনে । দহনও কারনটা কাউকে বলেনি।
তবে বহ্নির বড়কাকা আর দীপন ঠিক করলো যে ধুমধাম করেই বিয়ে হবে । আর বড়কাকার বাসা থেকেই ওকে তুলে দেয়া হবে। কিন্তু দিনা বলল যে না ওদের বাসা মানে বহ্নির বাবার বাসাতেই উৎসব হবে। সবাই সেটা মেনেও নিলো ।

.

৩দিনপর…
কাকন কোনোভাবে জানতে পারলো যে দহনের বিয়ে। কিন্তু কার সাথে বিয়ে সেটা জানতে পারেনি। আর দহনের বিয়ের কথা শুনেই কাকন রেগে আগুন হয়ে দহনদের বাসায় এলো।
কাকন : দহন… দহন…. এই দহন…
দীপন : এই মেয়ে তুমি এ বাসায় এসেছো কোন সাহসে?
কাকন : আংকেল এসব কি শুনছি? দহনের নাকি বিয়ে…
দীপন : হ্যা দহনের বিয়ে। ১টা ভালো মেয়ের সাথে।
কাকন : না এটা কিছুতেই হতে পারেনা। দহন কেবল আমার। ও কেবল আমাকেই ভালোবাসে। ওর বিয়ে আমার সাথেই হবে।
দীপন : না তোমার মতো দুশ্চরিত্রা মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে হতে পারেনা।
নিশা : যে মেয়ে আমার ছেলের জন্য নিজের স্বামীকে ঠকাতে পারে। এমনকি নিজের অনাগত সন্তানকেও মেরে ফেলতে পারে…. কি ভরসা আছে সে মেয়ে আমার ছেলেকে ঠকাবেনা…
কাকন : আন্টি…
নিশা : একদম চেচাবেনা… চোখ নামিয়ে কথা বলো।

কাকন : দহন… দহন দহন…
তখন দহন এলো। কাকন ওপরে উঠতে নিলে দহন হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দিলো।
দহন : স্টে দেয়ার…
কাকন : দহন তুমি এমনটা করতে পারোনা… তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারোনা। তুমি আমার সাথে এমন করতে পারোনা… বলো তুমি কাউকে বিয়ে করবেনা… তুমি কেবল আর কেবল আমার…
দহন : সিকিউরিটি… সিকিউরিটি…
☆ : হ্যা দহন বাবা…
দহন : এই আবর্জনাটাক বাহিরে ফেলে দাও। এখনই।

লোকটা দারিয়ে রইলো। কারন ও কাকনকে চেনে। সে জানে যে দহন ওকে ভালোবাসে। তাই চুপচাপ দারিয়ে রইলো।
দহন : ডোন্ট ইউ হেয়ার মি… থ্রো হার আউট…

কাকন : ডোন্ট টাচ… আমি নিজেই চলে যাবো… বিয়ে করছো করো দহন। তবে তুমিও জানো আর আমিও জানি যে তোমার সবটা জুরে কেবল আর কেবল আমি আছি। বিয়ে করে তুমি কোনোদিনও সুখী হবেনা। না আমাকে কিছু করতে হবেনা… তুমি নিজে থেকেই অসুখী থাকবে। আই চ্যালেঞ্জ ইউ…
বলেই কাকন চলে গেলো।

.

৫দিনপর…
নিশা : দহন…
দহন : বলো।
নিশা : কালকে কিন্তু তুমি অফিস যাবেনা ।
দহন : কেন?
নিশা : কালকে থেকে বহ্নিকে নিয়ে বিয়ের শপিং করতে বের হতে হবে…
দহন : কালকে থেকে শপিং করতে বের হতে হবে মানে? কতোদিন শপিং ও যাবে…
নিশা : যতোদিন লাগে কম্লপিট হতে।
দহন : সরি মামনি… আমি শপিং এ যেতে পারবোনা। মেয়েলি কাজ …. তোমরা করে নিও।
নিশা : আজবতো … আমি বলেছিনা যাবি…
দহন : মামনি… এসব কাজে আমাকে একদম জরিও না প্লিজ। আই জাস্ট হেইট… আর তাছারাও অফিসে এখন অনেক কাজ । সো পসিবল না।
নিশা : আমি কিছু বুঝিনা। যাবি মানে যাবি। আমি বহ্নিকে বলে দিয়েছি যে তুই ওকে পিক করবে।
দহন : মামনি তুমি আমাকে আস্ক না করে কেন বললে? আমি যেতে পারবোনা… তুমি না করে দিও। অফিসে অনেক কাজ।
তখন দীপন এসে
বলল : অফিস আমি সামলে নিবো… তুমি কালকে বহ্নিকে নিয়ে বের হবে…
দহন : বাপী অনেক কাজ পরে আছে। নতুন ডিলের …
দীপন : বললাম তো সামলে নিবো।
দহন : ওকে…
দীপন : কালকে কেবল বহ্নিকে নিয়েই বের হবে। নেক্সট আবার সবাই মিলে যাবো।
দহন : কতোবার যাবো?
দীপন : যতোবার প্রয়োজন হবে…
দহন : ওকে…
দহন বেশ বুঝতে পারছে যে ওরা মা-বাবা এটা চাইছে যে ও বহ্নির সাথে সময় কাটাক।।

.

ওদিকে দহনের সাথে বের হতে হবে শুনেই বহ্নির হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে ।
দিনা : এতো ভয় পাচ্ছো কেন ?
বহ্নি : ও ভাবি… আমি একা যাবোনা। প্লিজ তুমিও চলোনা।
দিনা : হ্যা আমিও যাবো।
বহ্নি : যাক ভালো হলো ।
দিনা : আমি যাবো কিন্তু কালকে না। অন্যদিন… 😁।
বহ্নি : ভাবি… 😢…
দিনা : এতো ভয় পাচ্ছো কেন বলো তো? আর যেই লোকটার সাথে সারাজীবন থাকবে তাকে এতো ভয় পেলে হয়…
বহ্নি : ভাবি তুমি তো ১দিন দহনের রাগ দেখে রোজই বলো। আমি ৪-৫দিন দেখেছি…
দিনা : হাহাহা। অভ্যাস হয়ে যাবে…

.

পরদিন…
রিদি : মামনি ফপ্পি কোথায় যাচ্ছে?
দিনা : তোমার ফুপ্পার সাথে বাহিরে…
রিদি : ও।
বহ্নি : ভাবি আজকে আমার বিয়েনা । তাই এগুল পরার কোনো মানেই হয়না । এমনিতেই আমার অ্যালার্জি…
দিনা : উফফ ঔষধ খেয়ে নিও।
বহ্নি : ভাবি দহন আগেও আমাকে বহুবার দেখেছে তাই আজকে এমন আচরন করার কোনো মানেই হয়না । এমন তো নয় যে আমাকে প্রথম দেখছে…
দিনা : উফফ … আগের দেখা আর এখন দেখার মধ্যে হাজার পার্থক্য।
বহ্নি : ভাবি এবার কিন্তু অতিরিক্ত হ…
দহন : আসতে পারি ভাবি?
দিনা : আরে আসো আসো।
দহন ভেতরে ঢুকলো।
দহন : ভাবি এগুলো কোথায় রাখবো?
দিনা : এতোসব আনার কি দরকার ছিলো?
দহন : বারে রিদি আছেনা ।
দিনা : রিদি দে়খো তোমার ফুপ্পার জন্য চকোলেটস আর ফ্রুটস এনেছে । দহন বসো ব্রেকফাস্ট করো …
দহন : না ভাবি করে এসেছি… বহ্নি আর ইউ রেডি?
বহ্নি মাথা নেরে হ্যা বলল।
দহন : ওকে দেন চলো। আসি ভাবি…
দিনা : আচ্ছা …
রিদি : বাই বাই…
বহ্নি : বাই মামনি…

.

দহন : কোন মলে যাবে?
বহ্নি : আপনার যেখানে ইচ্ছা …
দহন : আচ্ছা তুমি কি নিজের মতে , নিজের ইচ্ছায় কোনো কাজ করোনা? যে যেটা বলে সেটাই কি করো?
বহ্নি : কে কি বলল? আর আমি কি করলাম?
দহন : কিছুনা…
ওরা পৌছালো।
দহন : আগে কি শাড়ির দিকে যাবা নাকি জুতোর দিকে? একদম যদি বলো আপনি যেটা বলেন বললে কপালে মাইর আছে… বলো কোনদিকে যাবে?
বহ্নি : জুতোর দিকেই যাই চলুন… বাবা বলতো আগে জুতো কেনা ভালো…
দহন : চলো…

চলবে…

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 15
writer : Mohona

.

দহন : চলো…
ওর ঢুকলো।
দহন : নাও পছন্দ করো। যেটা যেটা ভালো লাগে সিলেক্ট করো। পরে একবারে পে করবো। ওকে?
বহ্নি : শুনুন…
দহন : বলো।
বহ্নি : নিশা আন্টি কেমন টাইপের জুতু পরে?
দহন : কেন ?
বহ্নি : আন্টির জন্যও পছন্দ করতাম…
দহন : 😒।
বহ্নি বুঝলোনা যে দহন এভাবে কেন তাকালো।
বহ্নি : আমি কি কিছু ভুল বললাম?
দহন : দেখো বাপী আমাকে স্ট্রিক্টলি বলে দিয়েছে যেন তোমাকে বকাঝকা না করি।
বহ্নি : আশ্চর্য তো । এখানে বকাঝকা করার মতো কি এমন বললাম শুনি ? নিশা আন্টি , দীপন আংকেল , মনি ওদের জন্য কিছু কিনতে চাওয়াতে বকার কোনো কারন তো আমি দেখছিনা…
দহন মনে মনে : হয়তো নেই।কিন্তু আমার তো আজকাল সবকিছুতেই রাগ ওঠে …
বহ্নি : আমি কেবল জানিনা বলেই তো হেল্প চাইলাম। জানলে তো আর চাইতাম না।
দহন : আসলেই বউ নামক প্রানীগুলো ভয়ংকর হয়… আমার মামনির হাই হিলই বেশি প্রিয়। বাপীর ভয়ে বাপীর আড়ালে পরে…

২জনে মিলে শপিং করতে লাগলো।

.

দুপুরে…
ওরা লাঞ্চ করতে রেস্টুরেন্টে গেলো।
দহন নিজে থেকেই খাবার অর্ডার করলো। অনেক খাবার অর্ডার করলো।
দহন : এমন রিঅ্যাকশন দেয়ার দরকার নেই। তোমাকে একা খেতে বলিনি এতো খাবার।
বহ্নি মনে মনে : এই লোকটা ঠান্ডাভাবে , ভালোমেজাজে কোনো কথাই বলতে পারেনা।
দহন : শোনো আমার কখন কোন কারনে রাগ ওটে আমি নিজেও জানিনা।
বহ্নি : …
দহন : শোনো তোমাকেও একটু রাগী হতে হবে… এমন ঠান্ডা টান্ডা মানুষ হয়ে আমার সাথে থাকতে কষ্ট হবে। কারন আমি যেকোনো সময়ে রেগে গিয়ে ঝারিটারি মারবো। আর তোমার যে স্বভাব … একটু ধমক মারবো … আর তুমি কোনায় বসে কাদবে আর বাপী আমাকে বকবে…
বহ্নি : ভীতু হতে পারি কিন্তু কথা়য় কথায় কান্না করার স্বভাব আমার নেই…
দহন : তাইবুঝি?
বহ্নি : হামমম।
দহন : গ্রেট… তাহলে ১টা জিনিস ভালো হবে যে তুমি অন্তত ন্যাকা কান্নার জন্য বকা খাবেনা ।
বহ্নি : 😒।
দহন : যদি ভীতুগিরিটা কমাও তবে হয়তো বকা খাওয়ার পরিমানটা খানিকটা কমতে পারে ।
বহ্নি : 😒।
দহন : আচ্ছা টুনির মতো না খেয়ে ভালোমতো খাও…

.

রাতে…
দহন গাড়ির ওপর বসে আছে আকাশপানে মুখ করে।
দহন : ভাবতেই অবাক লাগে… যে আমি দহন আহমেদ বাধ্য হয়ে কোনো কাজ করছি… ভেতরে এক আর বাহিরে আরেক হয়ে থাকাটা বড্ড কষ্টের । বহ্নি মেয়েটা ভালো… আর ওর সাথেই থাকতে হবে আমার বাকীটা জীবন… বড় অদ্ভুদ এই পৃথিবী … মেয়েটাকে বিয়ে করবো.. বউ বানাবো.. স্ত্রীর সকল মর্যাদাও দিবো… আমৃত্যু পাশেও থাকবো। কিন্তু ভালোবাসতে পারবোনা… কাউকেই যে আর আমি ভালোবাসতে পারবোনা। যতোই বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে ততোই কেমন ১টা অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে … ভয় হচ্ছে। চাইনা বহ্নিকে কষ্ট দিতে। কারন এসব কিছুতে তো ওর কোনো দোষ নেই। বরং ও আমার সাথে কথা বলতেও এসেছিলো… কিন্তু আমার পক্ষে যে কাউকে ভালোবাসা সম্ভবনা। ভালোবাসা তো একবারই হয়। মনতো মানুষের ১টাই। আর সেই মনটা যে ১টা ভুল মানুষকে দিয়েছিলাম। সে আমার মনটাকে ভেঙে ফেলেছে। বহ্নি… তারসাথে যে আমার কেবল নামের অর্থই মিলে। দ্যাটস ইট। আমি তবুও আমার নয়নমনির জন্য ওর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিবো… কিন্তু ও কিভাবে নিজেকে আমার সাথে মানিয়ে চলবে … জীবনটা এমন কমপ্লিকেটেড না হলেও পারতো। কাকনকে ভালো না বাসলেই পারতাম … নাহ অতীত ঘাটবোনা। বহ্নিকে বলা উচিত যে ওকে সব অধিকার দিলেও ভালোবাসতে পারবোনা…. কিন্তু মেয়েটা দেখেই বো়ঝা যায় যে বেশ আবেগী… কষ্ট পাবে… পরেও বললেও কষ্ট পাবে…

.

আজকে দহন-বহ্নির বিয়ে…
দহনের ইচ্ছা করছে পালিয়ে যেতে। বিয়ে হবে হবে করতে করতে আজকে বিয়ের দিন এসে গিয়েছে। ওর দম মনেহয় আটকে আটকে আসছে। কাউকে বলতেও পারছেনা… আর সইতেও পারছেনা। বিয়েটা যে অনেক বড় ১টা বিষয়। থেকে থেকে বারবার কাকনের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ও মনে করতে চাইছেনা। তবুও ব্যার্থ হচ্ছে। হ্যা ও ঘৃণা করে কাকনকে… কিন্তু কাকনের প্রতি ওর ভালোবাসাও যে মিথ্যা ছিলোনা… না ও কিছুই ভাবতে পারছেনা। দরজা বন্ধ করে ২হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে আছে।

দহন : আমার কি অপরাধ ছিলো? কিসের জন্য শাস্তি পেলাম আমি… কাকনকে ভালোবাসার জন্য এতো বড় শাস্তি না কি ভালোবাসার জন্য শাস্তি…

নিশা : দীপন এই দীপন…
দীপন : আহ নিশা… ডাকছো কেন? ব্যাস্ত আছি তো। আরেকটু পর যে চলন বের হবে…
নিশা : আসোনা একটু…
দীপন গেলো।
দীপন : বলো।
নিশা : দহন রুমের দরজা আটকে বসে আছে। খুলছেনা…
দীপন : ও বের হবে নিশা… ও বের হবে। আমি জানি…
নিশা : আমার অনেক ভয় হচ্ছে… একটু চলোনা আমার সাথে…
দীপন : নিশা শান্ত হও…
নিশা : না তুমি চলো আমার সাথে।
দীপন : খামোখা প্যানিক হচ্ছো তুমি। দেখো এতোবড় ১টা স্টেপ নিতে যাচ্ছে । অনেক ভাবনা-চিন্তার বিষয় আছে।
নিশা : যদি ভেবে চিন্তে বলে যে বহ্নিকে বিয়ে করতে পারবেনা…
দীপন : অমন কিছু হবেনা।
নিশা : না তুমি চলো আমার সাথে।
দীপন নিশার সাথে গেলো। আসলে নিশাকে যতোই শান্ত্বনা দিক না কেন ভয় ওরও হচ্ছে । ওরা দহনের রুমের ওখানে গেলো। আর ঠিক তখনই দহন দরজাটা খুলল। মা-বাবাকে দেখে মুখে হাসি টেনে
বলল : আমি এ বিয়ে করতে পারবোনা।
কথাটা শুনে দুজনেরই হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা।
দহন : এমন কোনো উত্তরের আশা করেছিলে তো?
নিশা-দীপন : …
দহন : দহন আহমেদ … দীপন আহমেদের ছেলে। পিঠ দেখিয়ে পালিয়ে যেতে শিখিনি…
বলেই দহন মা-বাবাকে সালাম করলো। দীপন ছেলেকে জরিয়ে ধরলো।
দীপন : আই প্রাউড অফ ইউ …
দহন : ইউ…
মনি : আর কতোক্ষন পর বের হবো আমরা?
দহন : এই তো এখনই আমার নয়ন মনি…
মনি : কি মজা কি মজা… আজকে থেকে বহ্নি আপু পুরোপুরিভাবে আমার ভাবি হবে…

বিয়ে টিয়ে সম্পন্ন হলো। বহ্নিকে নিয়ে বাসায় এলো । নিশা স্বাদরে ছেলে আর ছেলের বউকে বরন করে নিলো।

.

রাত ১টা…
অনেক ভেবে চিন্তে দহন রুমে ঢুকলো। দেখলো বহ্নি বসে আছে। বহ্নি দহনকে সালাম করলো।
দহন : বসো… লেটস টক…
বহ্নি : হামমম ।
দহন : ১মিনিট আগে তোমার গিফ্টটা তোমাকে দিয়ে নি। এটা নাকি নিয়ম…
দহন বহ্নির হাতে ১টা গিফ্ট বক্স দিলো।
দহন : খুলে দেখো।
বহ্নি খুলল। দেখলো তাতে ১টা ছোট্ট টেডি বিয়ার আছে। তার গলার মধ্যে হার্ট শেপ এর ১টা বড় লকেট আছে। তাতে লেখা ‘ফ্রেন্ডস ফরেভার’ …
বহ্নির ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো।
দহন : কেমন হয়েছে?
বহ্নি : ভীষন কিউট। থ্যাংক ইউ।
দহন : মোস্ট ওয়েলকাম। বহ্নি…
বহ্নি : হামম।
দহন : দেখো তুমি আমার অতীত সম্পর্কে জানো। তাইনা?
বহ্নি : হামমম।
দহন : তোমার কাছে লুকানোর কিছু নেই। আমি কাকনকে অসম্ভবভাবে ভালোবেসতাম… অনেক বেশিই ভালোবাসতাম। তবে সেই ভালোবাসা আজকে ঘৃণা… সর্বোচ্চ ঘৃণার রূপ নিয়েছে। আর সেই ঘৃণা আমার মনে হয়তো অন্যকারো জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি হতে দিবেনা…
বহ্নি : …
দহন : দেখো আমি তোমাকে স্ত্রীর পূর্ন মর্যাদাই দিবো। আমাদের সম্পর্কটা অন্যসব জোরার মতোই হবে … মানসিক , শারীরিক সব ভাবেই তোমাকে অধিকার দিবো। কিন্তু হয়তো ভালোবাসতে পারবোনা। জানি শুনতে অনেক আজব লাগছে। বাট দ্যাটস ট্রু। আমি এমন ১টা জায়গায় দারিয়ে আছি সে জায়গায় দারিয়ে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়…
বহ্নি : বন্ধুত্ব তো করতে পারবেন?
দহন : …
বহ্নি : জানেন অর্নব না আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। সেদিনের সেই ভয়ংকর রাতে আমি সবাইকে হারিয়েছি… মা-বাবা-ভাইয়াকে হারানোর কষ্ট তো আছেই… কিন্তু সবথেকে বেশি ফিল করি অর্নবকে… কারন ১মাত্র অর্নবই ছিলো যারসাথে মনের কথা বলতে পারতাম। কোনো সংকোচ ছারা… তাই মা-বাবা-ভাইয়াকে হারিয়ে যে কারো সাথে নিজের দুঃখ ভাগ করবো এমন কাউকে পাইনি… ভাবিও তেমন অবস্থায় ছিলোনা … ইভেন এখনও নেই… আপনি হবেন আমার বন্ধু?
দহন : হতে পারি ইন ওয়ান কন্ডিশন।
বহ্নি : কি?
দহন : আপনি ডাকা বন্ধ করতে হবে… ওকে?
বহ্নি মুচকি হেসে মাথা নেরে হ্যা বলল।
দহন : গুড… এখন বলো দহন তুমি খুব শান্ত ছেলে…
বহ্নি এবারও হেসে দিলো।
দহন : বলো… 😒…
বহ্নি : দহন তুমি খুব রাগী ছেলে…
দহন : বউদের ঘাড় আসলেই ত্যারা হয় ।
বহ্নি : বারে… আমি তো সত্যি কথাই বললাম।
দহন : হামম। আচ্ছা আরেকটা কথা…
বহ্নি : হামম বলু… বলো।
দহন : দেখো কাকনের প্রেমে পরার আরো ১টা কারন ছিলো। আর সেটা হলো এই যে আমরা প্রায় একই স্বভাবের। রাগী টাইপ। তাই ওর রাগ আর জেদ সম্পর্কে আমি জানি… তাই ও নানাভাবে নানাকথা বলে আমাদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই কিছু কথা আমি আগেই ক্লিয়ার করে দিতে চাই । কারন এই কথা গুলোই অন্যকারো কাছ থেকে শুনলে স্বাভাবিকভাবেই তুমি কষ্ট পাবে…
বহ্নি : …
দহন : দেখো আমি আর কাকন প্রায়ই ইন্টিমেট হয়েছি। বাট বাট আমি কখনো আমার লিমিট ক্রস করিনি। কারন আমি জানি যে আমি ভুল কিছু করলে বাপী আমাকে কি করবে তা বাপীই ভালো জানে। তাই এমন কিছু করিনি যেটা ভুলেও আমার বাপীর সম্মাহানী ঘটায়… বুঝেছো?
বহ্নি মাথা নেরে হ্যা বলল।
দহন : সো যদি কখনো কাকন বা অন্যকেউ এর ভিন্ন কোনো কথা বলবে তাহলে বুঝে নিবে মিথ্যা বলছে। বুঝেছো?
বহ্নি : হামমম।
দহন বহ্নির দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে
বলল : ফ্রেন্ডস?
বহ্নিও হাত মিলিয়ে
বলল : ফ্রেন্ডস…

পরদিন রিসিপশন পার্টি হলো। ওদেরকে বহ্নির বাবার বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। এরপরদিন আবার দহনদের বাসায় ফিরে এলো।

.

মনি : জানো ভাবি আমি এতো এতো এতো এততততততো হ্যাপী … কারন তুমি আমার ভাবি। আই লাভ ইউ…
বহ্নি : লাভ ইউ টু কিউটি…

নিশা : ননদ-ভাবির আড্ডার মধ্যে কি আমি প্রবেশ করতে পারি?
বহ্নি : আসুন না মা…
নিশা : 😒।
মনি : ভাবির দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন মামনি?
নিশা : আমার ইচ্ছা।
বহ্নি অবাক হলো নিশার কথায়। নিশাকে ওর খুব ভালো মানুষ মনে হয়। তবে কি শাশুড়ি হয়ে সব ভালোটা চলে গেলো।
নিশা : বহ্নি…
বহ্নি : জী মা…
নিশা : আমার বাচ্চারা আমাকে কি বলে ডাকে?
বহ্নি : মামনি …
নিশা : তুমি আমার কি হও…
বহ্নি বেশ দ্বিধায় পরে গেলো। যে কি বলবে? ওর বলতে ইচ্ছা হচ্ছে যে মেয়ে … কিন্তু বললে যদি রাগ করে…

নিশা : এটা বলতে এতোক্ষন লাগে? হামমম? তুমি আমার মেয়ে নও…
বহ্নি মাথা নেরে হ্যা বলল।
নিশা : দেখো যদি তুমি নিজেকে আমার বউমা মনে করো তবে কিন্তু আমারও শাশুড়ি হতে হবে। আর যদি মেয়ে মনে করো তবে কিন্তু মা আর শাশুড়ি ২টাই হবো। তোমার মা কেমন শাশুড়ি ছিলো তা তো আমি জানিনা । বাট আমার কিন্তু অনেকদিনের ইচ্ছা যে আমি বিন্দাস শাশুড়ি হবো। এখন সিদ্ধান্ত তোমার বউমা হবে না মেয়ে হবে…
বহ্নি কিছু না বলে নিশাকে জরিয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরতে লাগলো। কতোগুলো মাসপর ওর মনে হলো যে ও মায়ের বুকে মাথা রাখলো।
নিশা : এই বোকা মেয়ে কাদছিস কেন? দেখ আমি কিন্তু তোর মার মতো বোরিং মা না… বুঝেছিস?
বহ্নি : হামমম।
নিশা : এখন চোখের পানি মুছে বস তো দেখি… কথা বলি। এখন আমি কথা বলার সঙ্গী পেলাম । না হলে তো এই ভাইয়ের আদুরী তো স্কুল না হয় স্পোর্টস নিয়ে ব্যাস্ত।
মনি : মামনি ভাবির সাথে আমি কথা বলবো।
নিশা : বলিস…. এখন যা ৩জনের জন্য কফি করে নিয়ে আয়…
মনি : আমি!!!
নিশা : হ্যা তুমি। ভাবিকে নিজের হাতে কফি বানিয়ে খাওয়াবে না হামম? গো গো গো…
মনি ছুটে গেলো।

.

নিশা : বহ্নি…
বহ্নি : হ্যা মামনি…
নিশা : আজকে নিয়ে বিয়ে ৩দিন হলো। এখন বলে ফেলতো ৩দিনে আমার ছেলের কতোগুলো ঝাড়ি-ধমক-বকা-চোখ রাঙানি খেয়েছিস?
বহ্নি হেসে দিলো।
নিশা : বলনা…
বহ্নি : আসলে মামনি ১টাও খাইনি…
নিশা : ইশ বললেই হলো। আমার ছেলে আমি জানিনা? নিঃশ্বাস নেয় কম রাগ করে বেশি…. তাই আমার ছেলের কথা আমার কাছে গোপন করার দরকার নেই । বলে ফেল।
বহ্নি : না মামনি সত্যিই দহন কিছু বলেনি…
নিশা : এটা কিভাবে সম্ভব… আমার ছেলে রাগ করেনি….?? আই থিংক সময় সুযোগই পায়নি…

মনি : কে কি পায়নি?
নিশা : ভেবেছিলাম তুই কিচেনে চিনি খুজে পাসনি…

চলবে…