ভিলেন পর্ব-২১+২২

0
855

#গল্পঃ_ভিলেন

লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

পর্বঃ ২১

———————★★———————–

আমি: বাহহ বাহহহ

___হাতে তালি দিতে দিতে দু-কদম পিছনে আসলাম….

শুভ: তুমি ফুল গুলো এভাবে ( হা করে তাকিয়ে)

আমি: তো কি আশা করেছিলেন আপনি আমার জন্য মাঝরাতে হাতে কিছু গোলাপ নিয়ে এভাবে বার্ডে সারপ্রাইজ দিবেন আর আমি কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভুলে গিয়ে হাসি মুখে ফুলগুলো নিবো হ্যাঁ এটাই আশা করেন তো তাই না….?

শুভ: আদিবা আই এম সরি…অনেক বড় ভুল করেছি মানছি আমি প্লিজ ক্ষমা করে দাও প্লিজজজজজ…( মাথা নিচু করে)

আমি: না জেনে অন্যায় করলে তাকে ক্ষমা করা যায় কিন্তুু কেউ প্লান করে অন্যায় করলে তাকে কখন ক্ষমা করা যায় না….।

শুভ: কি করতাম আমি একটা ভাইয়ের মতো বেস্টু তার ভালোবাসার মানুষটাকে যদি ভিক্ষা সরুপ চাই আমি কি করে নিরাশ করতাম তাকে বলো তুমি?

আমি: বাহহ আর যাকে কালেমা পাঠ করে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে এনেছিলেন কই তার কোন কথার তো মূল্য দেন নি…. যখন একটা মেয়ে বার বার আপনার কাছে নিলর্জ্জের মতো ভালোবাসি বলতো কই তখন তো তার জন্য আপনার বিন্দু মাএ মায়া হয়েছিলো না তো…

শুভ: বিশ্বাস করো আমি সত্যি একটু যদি বুঝতাম তুষারকে কখন এমনটা করতাম না,,,,,যখন ভুল করেছি শাস্তি দাও আমায় সব শাস্তি মাথা পেতে নিবো। একবার শুধু ক্ষমা করে দাও প্রমিজ সব ঠিক করে দিবো….

আমি: পারবে আমার সন্তান আমায় ফিরে দিতে” হা হা হা ” পারবেন না কারন সেই ক্ষমাতা আপনার না..

আদিবা: হয়তো এটার ক্ষমতা আমার নেই। তবে প্লিজ একবার ক্ষমা করে দাও ট্রাসস মি তোমায় ভালোবাসায় ভোরিয়ে দিবো কষ্ট কখন ছুয়তে দিবো না…..!

আমি: ব্যসস ব্যসসস এই ভালোবাসা গুলো নিজের প্রমিকাকে দেন দোহায় আমার সামনে এমন নেকামু করবেন না আর প্লিজজ মিঃ শুভ আজকের পর থেকে আমাদের সব সম্পর্ক শেষ না আমি কখন আপনার সামনে যাবো না আপনি…! আপনার এই ঘৃন্য মুখটা নিয়ে আমার সামনে আসবেন প্লিজজ…

___ সামনের দিকে হাঁটা দিতেই শুভ আমার হাতটা টেনে ধরলো…

শুভ: আদিবা আদিবা প্লিজজ প্লিজজ একবার

আমি: হাত ছাড়ুন,,,,

শুভ: ক্ষমা করে দাও প্লিজজজজ (অনুরোধ সুরে )

আমি: হাততত ছাড়ড়ড় ( রেগে)

শুভর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে একটা দৌড়ে বাসায় ডুকে পড়লাম,,,,

শুভ: আদিবববববববা আই এম রিয়েলি সরি….( চিৎকার করে)

___ শুভ কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় বসে পড়লো,,,,,,
আমি দৌড়ে রুমে চলে আসলাম… ফ্লোরে বসে হাউ-মাউ করে কাঁদতে লাগলাম!!…

আমি: আমি ভালোবাসি না ঘৃন্না করি আপনাকে অনেক ঘৃন্না করি ( কাঁদতে কাঁদতে)…..

____সারা রাত রুমের এক কোনে বসে কাঁটিয়ে দিলাম….
পরের দিন সকালে বিছানায় বসে আছি তখনি আহিরা রুমে আসলো,,,,,

আহিরা: আপু ( কেঁধে হাত রেখে )

আমি: হ্য্য্য্যাঁ ওহহহ তুই কিছু বলবি…( নড়েচড়ে বসে)

আহিরা: নিচে আন্টি আংকেল আসছে…

আমি: কে মা-বাবা?

আহিরা: হুমম…চল দেখা করবে তোর সাথে

আমি: ওহহ আচ্ছা তুই যা আমি আসছি,,,,

আহিরা: ওকে আপু…

___ আহিরা চলে গেলো একটু পর আমি নিচে আসতেই মা এসে জোরিয়ে ধরলো,,,

মা: হ্যাপি বার্ডে বউমা

আমি: ধন্যবাদ মা ..! ( সালাম করে)

মা: থাক থাক..!দীর্ঘজীবি হও…( কপালে চুমু দিয়ে) নিজের কি অবস্থা করছো একবার আয়নায় দেখছো,,,

বাবা: বউমা তুমি নিজের কি অবস্থা করছো এটা আশা করিনি,,,

আমি: বাবা আমি একদম ঠিক আছে আর মা আপনার মেয়ে একদম ফাইন..!

মা: কোন ঠিক নেই

আমি: মা সব ঠিক আছে ( জোরিয়ে ধরে)

মা: পাগলি মেয়ে কেনো বুঝো না সন্তান খুশি না থাকলে মা বাবা কতটা কষ্ট হয়…

আমি: মা আই এম ফাইন ,,,,( মুচকি হেসে)

মা: তর্কে যেতে চাইনা পারবো না তো তোমার সাথে কিন্তুু নিজের দিকে একবার তাকাও

আমি: ওকে ওকে হা হা হা,,,

মা: আসো বসো এখানে,,,,

আমি: হুমমম,,,,

আম্মু চা এনে সবাইরে দিলো,,,

বাবা: যেটা বলার জন্য আসা সেটা বলি কি বলো..

মা: হুমম বলো

আব্বু: ভাইজান কি বলতে আসছেন…

বাবা: এত কিছুর মাঝে বড় মেয়ে আয়শা বিয়েটা আটকে ছিলো ইদানিং বর পক্ষ থেকে চাপ দিচ্ছিলো তাই আগামী সাপ্তাহে বিবাহের তারিখ ঠিক করা হয়েছে…

আমি: আলহামদুলিল্লাহ..

আব্বু: আলহামদুলিল্লাহ ভালো খবর তো…

বাবা: তাই আপনারা সবাই বিয়েতে আসছেন আর বউমাকে আমি আজ নিয়ে যেতে চাই যদি বউমা যেতে চাই….

আমি: না বাবা ওই বাসায় আর কোনদিন ফিরবো ( বসা থেকে দাড়ালাম)

মা: কিন্তুু বউমা তোমার ননদের বিয়ে আর তুমি যাবে না কেমন হবে,,,,

আমি: মা প্লিজজ জোর করবেন আমি যাবো না,,,,আমি দূর থেকেই দোয়া করি ওরা দুজন সুখি হক

বাবা: বউমা সব আত্নীস্বজনরা আসবে সবাই তোমাকে খুঁজবে কি জবাব দিবো,,,

আমি: কেনো বাবা সবাই তো জানে আপনার ছেলে সাথে ডিবোর্স হয়ে গেছে,,,,

মা: বউমা সেটা তো এখন হয়নি আর সবাই এখন সবটা জানে… জানি না কি থেকে কি হয়ে গেলো সব নষ্ট করে দিলো তুষার ছেলেটা,,,,

আমি: মা আপনার ছেলেও সমান দোষি কিন্তুু,,,

মা: হুমম মানছি কিন্তুু ক্ষমা করে দাও না যখন ও নিজের ভুল বুঝতে পারছে,,,,

আমি: তাকে কখন ক্ষমা করতে পারবো না আর আমি দোয়া করি আয়শা সুখি হক বাট আই এম সরি বিয়েতে যেতে পারবো না..

মা: আদিবা

বাবা: বউমা শোন,,,,

নিচ থেকে সোঁজা রুমে চলে আসলাম,,,,,

বাবা: কি করবো…! এই মেয়েকে কে বুঝাবে

আব্বু: ভাইজান টেনশন কইরেন না আমি দেখছি কি করা যায় হুমম

বাবা: হুমম আপনি পারেন আদিবা কে বুঝাতে

আব্বু: হুমমম আমি দেখছি,,,,,

বাবা: হুমমম,,,,

মা: ভাই জান আমার ঘরের লক্ষি যদি ঘরে না ফেরে কি করে একটা শুভকাজ সম্পূর্ন করবো আমি প্লিজজ একটু দেখেন

আব্বু: ভাবি এমন করে বলছেন কেনো নিশ্চয় ফিরবে আদিবা কথা দিচ্ছি,,,,

মা: হুমমম অপেক্ষায় থাকবো,,,,,

___ সোঁজা বারান্দা চলে আসলাম,,,,

আমি: চাই না ওই লোকটার মুখোমুখি হতে…. যাবো না আমি ওই বাসায় কখন না!!…

হঠাৎ পিছন থেকে আব্বু বলে উঠলো,,,,

আব্বু: যেতে তোমাকে হবে,,,,,

আমি: আব্বু তুমি অনন্ত প্লিজজ জোর করো না ফিরতে চাই না ওই বাসায়,,,,

আব্বু: কেনো ফিরতে চাও না শুভ জন্য,,,আচ্ছা শুভ না হয় দোষ করেছে কিন্তুু যাদের তুমি বাবা- মা বলো তারা তো কোন ভুল করেনি তাহলে তাদের কেনো শাস্তি দিবে

আমি: আব্বু আমি উনাদের যতেষ্ট সম্মান করে এন্ড ভালোবাসি কিন্তুু ওই বাসায় ফিরছি না ব্যস

আব্বু: কিন্তুু ওই দুজন মানুষ তোমার অপেক্ষা করছে যে…

আব্বুর কথা শুনে মনের ভিতর নাড়া দিলো এড়িয়ে চলে যেতে লাগলাম তখনি আব্বু বলে উঠলো,,,

আব্বু: আমার কসম তুমি আয়শার বিয়েতে ওই বাসায় যাবে ( করা গলায়)

আমি: আব্বু

আব্বু: হ্যাঁ,,, এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছে,,,

আব্বু কথাটা শেষ করতেই চলে গেলো…!

আমি: আব্বু প্লিজজ…! বুঝার চেষ্টা করো আমি ওই লোকটার সামনে যেতে চাই না আব্বু আহহহহ ( চিল্লিয়ে)…….

★★ প্রায় এক সাপ্তাহ পর….!

আব্বু : কি সবাই রেডি তো,,,,

আস্মু: আদিবা তো এখন আসে নি মনে হয় যাবে না,,,

আব্বু: আচ্ছা আগে তো একবার গিয়ে দেখো,,,

আহিরা: আমি যাচ্ছি ওয়েট,,,,

আম্মু: যা যা তাড়াতাড়ি,,,,,

আহিরা উপরে দিকে আসতেই আমি নিচে নেমে আসলাম সবাই আমার দিকে ভুত দেখার মতো তাকালো,,,,

আমি: কি দেখছো,,,,

আহিরা: এটা কি আমার আপু নাকি কোন হলুদ পরী..( হা করে তাকিয়ে)

___ঠাসস করে দিলাম আহিরা গালে চর…

আহিরা: আম্মুু… আপু তুমি আমায় মারলে ( গালে হাত দিয়ে)

আমি: তো কি করবো কোলে নিতাম…!

আহিরা: আম্মু ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

হঠাৎ আম্মু এসে গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিলো,,,

আম্মু: একদম পরী মতো লাগছে ,,,এই রকম সব সময় দেখতে চাই আমার মেয়েটাকে,,,,

আব্বু: হুমম ঠিক সব সময় এমন থাকবি ,,,,

আমি: হুমমম,,,,

__আম্মু আমায় বুকে জোরিয়ে নিলো,,,,,

একটু পর সবাই মিলে রৌনা দিলাম….

_____

মা: ওগো বলছি ওরা কি আসবে নাকি,,,

বাবা: বললো তো আসবে…

মা: আদিবা আসবে তো,,,

বাবা: জানি না বউমা মনে হয় আসবে না,,,

আশা: কি ভাবি আসবে না,,,

মামা: আপা বউমা কি সত্যি আসবে না…..

মা: কি যে হবে… মেয়েটা যে জেদী,,,

নদী: ঠিক বলছো আন্টি আমার তো মনে হয় আসবে না,,,,

আশা: ভাবি না আসলে তো সব প্লান শেষ পাপা প্লিজ একটা কল দাও,,,,

মা: তোর আবার কি প্লান,,,

আশা: ও তুমি বুঝবে না পাপা কলটা করো না,,,,

বাবা: আচ্ছা দিচ্ছি দাড়া…..

আব্বু: তার দরকার নেই… ( হেসে হেসে)

বাবা: ওই তো ওরা আসছে..!আসুন আসুন ভিতরে,,,

মা: ভাবি আসুনন….

আশা: ভাবি কই,,,,

আম্মু: আহিরা আর ও ওই গাড়ি থেকো জিনিস গুলো নামাচ্ছে এসে পড়বে,,,,

___আহিরা আর আমি ভিতরে এসলাম। অনেক দিন পর আসলাম চারপাশটা ভালো করে দেখতে লাগলাম….

মা: বউমা

আশা: ইয়া হু ভাবি আসছে ( চিল্লিয়ে)

___ আশা দৌড়ে এসে জোরিয়ে ধরলো….

আশা: ভাবি আই মিস ইউ,,,,

আমি: মিস ইউ টু পিচ্চি….

মা: বউমা

আমি: হ্যাঁ মা…

হঠাৎ উপর থেকে শুভ তাড়াহুরু করে নিচে আসলো….শুভকে দেখে আমার নিমেশে হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো,,,

মা: আজ আমি সত্যি খুব খুশি আমার লক্ষী আবার আমার ঘরে এসেছে

আমি: হুমমম তবে যাস্ট ৩ দিনের জন্য,,,,,বিয়েটা শেষ হলে চলে যাবে একদম…..!

___আমার কথা শুনে সবার মুখটা ছোট হয়ে গেলো,,,

( চলবে)

#গল্পঃ_ভিলেন

লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

পর্বঃ ২২

———————★★———————–

বাবা: বউমা কি বলছো এসব….

আমি: কেনো বাবা ভুল কি বলছিস….!

বাবা: এটা তোমার নিজের বাড়ি চলে যাবে মানে,,,,,

আমি: নিজের বাড়ি সে তো আর মাএ কিছুদিনের জন্য….

বাবা: বউমা শুভ ভুলের জন্য তুমি ওরে শাস্তি দাও কিন্তুু সম্পর্কটা ভেঙ্গেও না,,,,

আমি: বাবা প্লিজজ

মা: আচ্ছা এসব বাদ দাও বউমা এসেছে এটাই অনেক কিন্তুু এসব কথা এখন থাক

আশা: হুমম সেটাই…ভাবি তুমি এসে তো,,,,

আমি: হুমমম….

সবাই মিলে ভিতরে আসলাম… আশা আমার হাত ধরে উপরে নিয়ে যেতে শুভ সামনে পড়লো আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে পাশ কাঁটিয়ে চলে আসলাম…….

আশা: এসো না ভাবি…

আমি: হুমম চলো,,,

___উপরে যেতেই পিছন থেকে হঠাৎ আয়শা ডাক দিলো….

আয়শা: ভাবি….

আমি: আয়শা ( বেশ আবাক হলাম)

আয়শা: আই এম সরি…! সেই দিন পর থেকে তোমার সাথে দেখা হয়নি তেমন করে তাই সরিটা বলা হয়নি। আমি বুঝতে পারি না ব্যাপারটা এমন না জেনে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও

আমি: আয়শা সরি কেনো বলছো,,,,আমি কিছু মনে করিনি তোমার ব্যবহারে

আয়শা: তবুও সরি ভাবি

আমি: ইটিস ওকে পাগলি ( গালে হাত দিয়ে)

আয়শা: হুমম আমায় ক্ষমা করতে পারলে তাহলে ভাইয়া কে কেনো ক্ষমা করছো না তুমি তো ভালোবাসো ভাইয়াকে তাই না…!

আমি: তুমি আর তোমার ভাইয়া এক নও,,,

আয়শা: প্লিজ ভাবি ভাইয়া কে ক্ষমা করে দাও মানুষটা ভালো নেই…

আমি: এসব কথা এখন থাক,,,,এখন তুমি তোমার নিজের কথা ভাবো সন্ধায় গায়ে হলুদ কাল বিয়ের ..

আয়শা: ভাবি প্লিজ ভাইয়া ক্ষমা করে দাও,,,

আমি: আশা এসো,,,,

__ওখান থেকে সোঁজা রুমে চলে আসলাম……

সন্ধার দিকে সবাই মিলে আয়শা গায়ে হলুদে অনুষ্টানে মজা করলো আমি এক কোনে দাড়িয়ে দেখলাম…

একটু পর গায়ে হলুদ অনুষ্টান শেষ করে সবাই মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে… আমি রান্না ঘরে গিয়ে দাড়াতেই

রহিমা: বউমনি তুমি এখানে

আমি: তোমায় একটু সাহায্য করে দেই,,,,

রহিমা: না না বাবা তোমার শরীর খারাপ তুমি রেস্ট নাও আমি পারবো সবটা করতে।

আমি: আরে বোকা মেয়ে কিছু হবে না একটু হেল্প করি,,,

রহিমা: বউমনি খালাম্মা দেখলে ঝারি দিবে আমায় দোহায় তুমি যাও ওখানে আড্ডা দাও,,,

আমি: কেউ ঝারি দিবে না আমি আছি না আর যদি হেল্প না করতে দাও তাহলে আমিই বকবো তোমায়…।

রহিমা: আল্লাহ গো এ কোন জ্বালায় ফেললে ঠিক আছে এসো ভিতরে,,,

আমি: হা হা থ্যাংক ইউ আচ্ছা বলো না কি রান্না করবে

রহিমা: সব রান্না তো বাইরে থেকে আসবে এখান শুধু রুচি, সিঙ্গারা, আর পোস্তবানাতে হবে সবার হুকুম.. ( হেসে হেসে)

আমি: ওহহ আচ্ছা,,,,আচ্ছা আমি পোস্ত টা বানিয়ে দেই কেমন

রহিমা: বাব্বা বর যেটা পছন্দ করে সেটাই আগে বানাতে চাচ্ছো এতো প্রেম,,,,,

আমি: এ্যাঁ ( আবাক হয়ে)

রহিমা: হ্যাঁ গো শুভ ভাইজান তো পোস্ত খুব ভালোবাসে তুমি জানো না ( ক্রুচকে তাকিয়ে)

আমি: উহু ( মাথা নাড়িয়ে)

রহিমা: ওমা সে কি বর কি পছন্দ করে জানো না

আমি: কই দিনের আর বর ছিলো,,,আচ্ছা বাদ দাও আর হ্যাঁ বর বর বলবে না ঠিক আছে,,,,

রহিমা: তো কি চাচা বলবো

আমি: রহিমা ( হা করে তাকিয়ে)

রহিমা: ঠিক আছে বাবা মাফ করো,,,,

আমি: হা হা নাও কাজ করো….

___ রহিমা নিজের কাজে মন দিলো আমিও নিজের কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো…তখনি শুভ রান্না ঘরে আসলো,,,

শুভ: রহিমা এক গ্লাস পানি দে তো,,,

আড় চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে কাজে মন দিলাম….

শুভ: রহিমা আমার পোস্ত কিন্তুু ভালো করে বানাবি

রহিমা: ভাইজান ওটা তো বউমনি বানাচ্ছে…..

শুভ: ওহহ…. একটু ভালো করে বানাতে বলবি যেনো মুখে দেওয়া যায় ( জোরে জোরে)

__শুভ কথা শুনে রাগ উঠলো তবুও কষ্ট করে নিজেকে কন্টল করে কাজে মন দিলাম….

শুভ: রহিমা

রহিমা: আর কিছু চাই

শুভ: দেখিস পোস্ত থেকে অন্য কিছু না হয়ে যায় তুই একটু টেস্ট করে নিস কেমন…..

___এবার শুভ কথা শুনে আরো প্রচন্ড রাগ হলো পিছনে তাকিয়ে পাশে থাকা গ্লাসে পানি টুকু শুভর মুখে দিকে ছুরে মারলাম….

শুভ: ওহহহ নো…! ( চোখ মুছতে মুছতে)

___রহিমা ফিক করে হেসে দিয়ে মুখ চেপেঁ ধরলো….

আমি: আমি রান্না করতে জানি না তাই না….

শুভ: এটা কি করলে পুরো ভিঁজে দিলে,,,,

আমি: ওয়েট….. ( খুন্তিটা হাতে নিতেই)

শুভ: খুব সুন্দর রান্না করো ভুল হয়ে গেছে মাফ চাই….

আমি: বের হন এখান থেকে ( ধমক দিয়ে)

শুভ: যাচ্ছি তো… রহিমা পোস্ত খেয়াল রাখিস

আমি: আবার…

___পা বাড়াতেই শুভ তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো,,,,

আমি: শয়তান কত বড় শয়তান আমি মনে হয় রান্না জানি না…আরে যদি একটা রেস্টুরেন্ট খুলতাম কিছুদিনের মধ্যে প্রথম আলো তে সেরা রাধুনি হিসেবে আদিবার নাম ঝল ঝল করতো আর উনি কোথায় থেকে আসছে লাখপতি…

___গজ গজ করতে করতে আবার রান্নার কাজে মন দিতেই রহিমা বলে উঠলো…..

রহিমা: সবটা ভুলে আবার দুজন এক হয়ে যাও না বউমনি… ভাইজান কিন্তুু সত্যি বদলে গেছে যে মানুষটা কখন রান্না ঘরে প্রবেশ করতো না সে আজ রান্না ঘরে শুধু তোমার জন্য বউমনি ভাইজান অনেক ভালোবাসে তোমায়….

আমি: তুমিও জ্ঞান দিতে আসছো নিজের কাজ করো ( ধমক সুরে)

রহিমা: আচ্ছা আচ্ছা করছি তো….

___রহিমা নিজের কাজ করতে লাগলো আমিও নিজের কাজ করতে লাগলাম…….

একটু পর রান্না শেষ করে সবার জন্য নিয়ে আসলাম,,,

আশা: এসে গেছে গরম গরম সিঙ্গারা, রুচি, পোস্ত,,,

নদী: উয়াও,,,, দেখে মনে হচ্ছে অনেক মজার হবে,,,

শুভ: মজা না ছাই ( বিড় বিড় করে)

___শুভর দিকে রাগি মুডে তাকাতেই ৩২ টা দাঁত বের করে হেসে দিলো…..

বাবা: গরম গরম সিঙ্গারা কে বানালো,,,

আমি: রহিমা বানিয়েছে

রহিমা: আমি একা নয় বউমনিও সাহায্য করেছে

মা: তুই বউমাকে দিয়ে রান্না করাইছিস

আমি: আরে মা আমি জোর করে গেছিলাম ও অনেক না করছে

রহিমা: দেখলে তো বললাম ঝারি দিবে শুনলে না….

আমি: মা প্লিজ ওর দোষ নেই আমি বলছিলাম…

মা: আর যাবে না রান্না ঘরে কেমন

আমি: আচ্ছা যাবো না রহিমাকে বকবেন না কিন্তুু

মা: আচ্ছা বকবো না….

আশা: তোমাদের কথা শেষ হবে প্লিজ ভাবি দাও এগুলো উফফ গরম গরম সিঙ্গারা কত দিন খাওয়া হয়না

আমি: আচ্ছা দিচ্ছি…. ( মুচকি হেসে)

___ সবাইরে রুচি, সিঙ্গারা, পোস্ত দিলাম….

শুভ: আমার কই.?

আমি: আর একটা মাএ আছে এটা রহিমার জন্য

শুভ: আমি…! ( বোকার মতো তাকিয়ে)

___শুভ হতভাগা হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে..মুচকি হেসে আমি ওখান থেকে রান্না ঘরে চলে আসলাম….

আমি: রহিমা চটপট এগুলো খেয়ে নাও,,,

রহিমা: তুমি খাবে না বউমনি

আমি: খেয়েছি তুমি খাও,,

রহিমা: আচ্ছা….

রহিমা খাবার গুলো দিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দরজায় দাড়িয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে আছি….

আমি: বেশ হয়েছে নিন্দা করার ফল… দেখ কেমন লাগে…

বাট শুভকে দেখে মায়াও হতে লাগলো সবাই নিজ নিজ জায়গা বসে খাচ্ছে আর ও বেচারি বোকার মতো হয়ে বসে আছে….

হঠাৎ রহিমা এসে বলতে লাগলো,,,

রহিমা: ভাইজান কে খুব ভালোবাসো তাই না….

আমি: কিহহ…

রহিমা: হুমম,,,,ভাইজান খাইনি বলে নিজেও খাওনি আমি জানি….

আমি: আরে খাইছি….

রহিমা: এটা নাও…

আমি: কেনো খাবে না… খাও

রহিমা: আমি খাবো না তুমি এটা ভাইজানের সাথে ভাগ করে খাও,,,

আমি: আরে পাগল নাকি তুমি খাও…

রহিমা: বউমনি আমার এইটুকু কথা রাখো….

আমি: রহিমা প্লিজজ

রহিমা: আমি বানিয়ে খেযে নিবো এটা তুমি রাখো,,,,

আমি: আচ্ছা দাও বাট বানিয়ে খেয়ে নাও

রহিমা: ঠিক আছে বউমনি…..

প্লেট টা হাতে নিয়ে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি শুভ নাই…. সোঁজা রুমে চলে আসলাম… দরজা ফাঁক করে দেখি সোফায় বসে ল্যাপটবে কাজ করছে গুটি গুটি পায়ে গিয়ে শুভর সামনে প্লেট টা ধরলাম…

আমি: খেয়ে নিন…

শুভ: এগুলো

আমি: ধরেন খেয়ে নিন….

শুভ: পোস্ত ও আছে ওয়াও থ্যাংকস…

___শুভ আমার হাত থেকে প্লেটা ধরে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকালো….
আমি ওখান থেকে চলে আসতে লাগলাম শুভ ডাক দিলো ভাবলাম খাওয়ার জন্য ডাকছে মুচকি হেসে পিছনে তাকালাম,,

শুভ: একটু পানি…

আমি: আনছি….. ( মুখটা গমড়া করে)

পাশে টেবিল থেকে পানি নিয়ে আসে দেখি শুভ খাওয়া শুরু করছে…

আমি: পানি

শুভ: দু মিনিট প্লিজ খাই( গিলতে গিলতে)

___গ্লাস হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রয়লাম….. কি অসভ্য লোক ছিঃ একবার জিগাঞ্জাও করলো না খেয়েছি কিনা উফফফ যাস্ট সয্য হচ্ছে না খুদদদদদদা……

শুভ: উফ অনেক মজা হয়ছিলো কি বলবো যাস্ট ওয়াও…( গলা টেনে টেনে)

আমি: গিলেন বেশি করে ( দাঁতে দাঁত চেপে)

শুভ: ওহহ সরি পানি নিয়ে কতক্ষন দাড়িয়ে আসো না ,,,

___গ্লাসটা শুভ নিতেই প্লেট টা হাতে নিয়ে হন হন করে বের হয়ে আসলাম শুভ আমার দিকে হা করে মতো তাকিয়ে রয়লো…….

রান্না ঘরে এসে প্লেটা ঠাস করে ফেলে দিলাম….

রহিমা: বউমনি কি করলে…

আমি: তুমি তো বললে যাও ভাইজানকে গিলে আসো…. ( রেগে)

রহিমা: কি হলো বলবে তো,,,

আমি: আমার মাথা হয়েছে….

____প্রচন্ড রাগে পাইচারি করতে লাগলাম দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজে মাথা ডুকিয়ে দিয়ে দাড়িয়ে রয়লাম….

রহিমা আমার কান্ড দেখে পাশ থেকে প্লেট নিয়ে বাতাস করতে লাগলো,,,,

আমি: তুমি যাবে এখান থেকে ( রেগে)

___রহিমা ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো… রাগে ফ্রিজে লাথি মেরে…

আমি: ওমা গো…শুভর বাচ্চা তুই মানুষ হবি না কোন দিন না ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

★★ পরের দিন সকালে….

ঘুম ভেঙ্গে দেখি রুমে পা ফেলানো জায়গা নেই সবাই যার যার উপর হাত পা ছিটিয়ে শুয়ে আছে….

আমি: উফ কি বিচ্ছি রি কান্ড এগুলো মা ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)….. নামবো কেমনে ধ্যাত…

___উপায় না পেয়ে উপর দিয়েই বাইরে কোন ভাবে চলে আসলাম…

আমি: উফফ এটা রুম নাকি অন্য কিছু…..

___মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে হাঁটা দিলাম……

মা: কি ঘুম ভাঙ্গলো,,,

আমি: আর ঘুম,,,,একটা চিড়াখানা ওটা রুম নয়,,,,

মা: একটু কষ্ট করো দেখছো কত আত্নীস্বজন একটু তো এমন হবেই,,,

আম্মু: হুমমম সোনা একটু মানিয়ে নে,,,

আমি: হুমমম….

মামি: কেনো শুভ রুম তো ফাঁকা ছিলো ওখানে থাকতে পারতে

মা: হুসসস ( মামিকে গুতো দিয়ে)

____ আমি আড় চোখে শুধু তাকালাম,,,,মা মুচকি হাসি দিলো…..

একটুপর উপরে ফ্রেস হতে আসতেছি তখনি রহিমা ডাক দিলো,,,

রহিমা: বউমনি বউমনি এটা ধরো,,

আমি: আমি কফি দিয়ে কি করবো,,

রহিমা: বউমনি খুব কাজের চাপ ভাইজানকে প্লিজ দিয়ে আসো…

আমি: আই না না পারবো না উফফ.

___কে শোনে কার কথা রহিমা দৌড়ে চলে গেলো…..

কফিটা হাতে নিয়ে শুভর রুমের দিকে হাঁটা দিলাম…. দরজা কাছে গিয়ে থেমে গেলাম,,,

আমি: বার বার এই লোকটার সামনে যেতে হয় হে আল্লাহ তুমি কি বুঝো না আমি এই বাঁজে লোকটার সামনে যেতে চাই না…. বাই দ্যা ওয়েহ এটা করলে তো মন্দ হয় না….

___চারপাশে তাকিয়ে কফির ভিতরে থুথু দিলাম…

আমি: নে এবার থুথু কফি খা… খেলা হবে মাম্মা..

____হাসতে হাসতে রুমে ভিতরে গেলাম নবাব সাহেব লেব মুরিয়ে সুয়ে আছি কফিটা রেখে ডাকতে লাগলাম…..

শুভ: আহহ আম্মু প্লিজ যাও তো

আমি: আরে গাঁধা আমি তোর আম্মু নয় বউ

কথাটা বলেই জিব্বাই কামড় দিলাম…. হঠাৎ শুভ আমার হাতটা ধরে একটা টান দিয়ে তার বুকের উপর ফেললো….

শুভ: বউ…. ( জোরিয়ে ধরে)

আমি: ছাড়ড় আমি বউ নয়… উফফফ ছাড়ড়ড়….

__যত চেষ্টা করি নিজেকে ছাড়ানো তত শক্ত করে জোরিয়ে ধরে…

আমি: ছাড়ড়ড়…. উফফ দম বন্ধ হয়ে গেলো

হঠাৎ শুভ আমায় নিচে ফেলে আমার উপর উঠতেই চিল্লানি দিলাম….

আমি: হাতততি নামমম প্লিজজ… আলু ভর্তা হয়ে যাচ্ছি….

শুভ আমার মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ঠোঁটে কোনে একটা কিস করতেই রাগি মুডে তাকালাম,,,,

আমি: একবার উঠতে দে দেখ তোকে খুন করে ফেলবো…..

শুভ: ক্ষমতা থাকলে উঠে দেখাও…

আমি: প্লিজ ছাড়…লাগছে ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

শুভ আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো,,,,

আমি: এ কোন বিপদে পড়লাম বাবাগো এতো মোটু আজ আমি শেষ…. ( মনে মনে)

অনেক চেষ্টা করেও পারলাম খুব বিরক্ত লাগলো সোঁজা শুভর নাকে ঘুষি মেরে দিলাম শুভ এক লাফে উঠে উড়াধুরা লাফাতে লাগলো,,,,

আমি: ব্যস হয়ছে,,,

শুভ: এতো জোরে কেউ মারে,,,

আমি: কখন থেকে বলছি উঠ উঠলি না কেন তাই তো দিছি মেরে….

শুভ: ফেঁটে গেছে নিশ্চয়….

___শুভ নাকটা ধরে ওয়াসরুমে গেলো পিছন পিছন গিয়ে উকি দিলাম নাকে পানি দিচ্ছে,,,

আমি: হাত কি এতো পাওয়ার ( হাত দেখে)

শুভ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এসে বিছানায় বসলো,,,,আমি গিয়ে নিচ থেকে উকি দিলাম,,,,

আমি: খুব লাগছে ( নরম সুরে)

শুভ: এত শক্তি হাতে… বিশ্বাস হচ্ছে না,,,,,,( নাক ধরে)

আমি: ব্যস হয়েছে যার যেমন কর্ম…( কোমড়ে হাত দিয়ে)

বিছানায় গিয়ে বসলাম,,,,,

আমি: কফি টা ঠান্ডা হচ্ছে..?

শুভ: কফি আনছো,,ঠান্ডা হয়ে গেছে তো,,,,,( কফিতে হাত ডুবিয়ে)

আমি: তো ওমনি খেয়ে নিন,,,,

শুভ: ঠান্ডা কফি খাবো আমি অসম্ভব…

আমি: এএএএ আইছে নবাব…!খেতে হবে নষ্ট তো আর করতে পারবো না,,,

শুভ: গরম তো করাই যায়

আমি: পারববববো না,,,

___বসা থেকে উঠে বাইরের দিকে হাঁটা দিতেই শুভ হাতটা টেনে ধরলো,,,

শুভ: তুমি তাহলে খেয়ে নাও

আমি: কিহহ আমি নো…. আমি কফি খাই না

শুভ: আজ খাও,,,,নাও

আমি: খাবো না ওকে

শুভ: খেতে হবে,,,,,

আমি: খাবো না,,,, নিজের থু নিজে কেমনে খাই ছিঃ…( মনে মনে)

শুভ: খাবে আসো,,,,

আমি: শুভ ভালো হবে না কিন্তুু….

শুভ জোর করে কফিটা খাইয়ে দিতে লাগলো…! কফিটা মুখের ভিতরে জোর করে ঢেলে দিলো….

শুভ:……

( চলবে)