ভুলবশত প্রেম পর্ব-২৫+২৬

0
598

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

২৫

এভাবে আদ্রিশকে দেখে আমার চোখজোড়া কপালে উঠে যাবার উপক্রম হলো। আমি বড় বড় চোখে উনার দিকে নিমিষের জন্য চাইলাম৷ অতঃপর আমার মুখের উপর থেকে উনার বলিষ্ঠ হাতের তালু সরিয়ে নেবার চেষ্টায় উনার বাহুতে বার কয়েক চাপড় দিলাম। সাথে সাথে উনি ফিসফিস করে বলে উঠলেন,
” ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু চিৎকার তো দূরের কথা জোরে কথা বললেই আবারো এভাবে মুখ চেপে ধরবো কিন্তু। ”

এই বলে উনি আমায় ছেড়ে দিলেন। কয়েক কদম দূরে গিয়ে ব্যালকনির গ্রিলে হেলান দিয়ে বুকের উপর আড়াআড়ি হাত রেখে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ পূর্বে সংঘটিত হওয়া এহেন কাণ্ডে আমি যেমন বিস্মিত হলাম ঠিক তেমনিই রাগান্বিতও হলাম। ফলে মিশ্র কণ্ঠে অনুচ্চ স্বরে বললাম,
” আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এভাবে স্পর্শ করার?”

আদ্রিশ আমার প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা করলেন না। বরং তরঙ্গায়িত কণ্ঠে বললেন,
” বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সাহস চলে আসে ম্যা-ডা-ম মিশ-মিশ।”

উনার এমন সম্বোধনে আমি সরু চোখে উনার দিকে নিমিষের জন্য চেয়ে রইলাম। পুনরায় বললাম,
” আচ্ছা আপনার সমস্যা কি বলুন তো?”

আদ্রিশ তৎক্ষনাৎ আমার প্রশ্নের জবাব দিলেন না। বরং উঠে গিয়ে ধীরেসুস্থে ব্যালকনির থাই গ্লাসটা লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর পূর্বের স্থানে ফিরে এসে একইভাবে হেলান দিয়ে বললেন,
” হ্যাঁ, তো কি যেনো প্রশ্ন করেছিলে?”

আমি খানিকটা রেগে দাঁতে দাঁত চেপে ঠোঁটজোড়া কুঞ্চিত করলাম। অতঃপর উনার মতোই আড়াআড়িভাবে বুকে হাতে রেখে বললাম,
” জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনার সমস্যা কি?”

আদ্রিশ ঠোঁট উল্টে অবুঝ হবার ভান করে বললেন,
” সমস্যা হবে কেনো? কি সমস্যা হবে আমার?”

” সেই প্রশ্নই তো করলাম আমি৷ কি সমস্যা আপনার? ”

” উফ, মিশমিশ! কোথায় এতো কষ্ট করে আসলাম বলে আমার সাথে বসে দুদণ্ড কথা বলবে, তা না করে এতো প্রশ্ন করছো! বড়ই বেদরদি মেয়ে তুমি।”

” এ্যাহ, আমার ঠেকা পড়েছে আপনার সাথে কথা বলার? কোন দুঃখে আমি আপনার সাথে কথা বলবো?”

আদ্রিশ এবার দুঃখে কাতর হবার ভান করে বললেন,
” দেখো এই বেদরদি মেয়ের কথাবার্তা! কোথায় বাড়িতে মেহমান এসেছে, দু চারটা মিষ্টি কথা বলবে তা না করে বাঁকা বাঁকা কথা বলছো!”

আদ্রিশের এহেন কথার ধরণে আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,
” মেহমান! সিরিয়াসলি আপনি নিজেকে মেহমান বলছেন! হা হা, আপনি যেভাবে এখানে এলেন তাতে মেহমান নয়, আপনাকে চোরের খেতাব দেওয়া উচিত।”

আদ্রিশ ভীষণ অবাক হবার ভান করে বললেন,
” আমাকে চোর বানিয়ে দিলে তুমি! এতো বেদরদি হলে কি করে!”

উনার মুখে বারংবার “বেদরদি” শব্দটা শুনে ভীষণ বিরক্ত হলাম। ফলস্বরূপ চোখমুখ কুঁচকে বেশ রাগান্বিত কণ্ঠে বললাম,
” এই আপনার সমস্যাটা কি হ্যাঁ? বারবার এই ‘বেদরদি’ বলছেন কেনো আমাকে? নতুন করে শব্দটা শিখলেন বুঝি?”

” হ্যাঁ। তোমার জন্য শিখলাম৷ শব্দটা ভারী করুনাময় টাইপ না?”
এই বলে উনি ভ্রুজোড়া নাচিয়ে উৎসুকতার সহিত আমার দিকে চেয়ে রইলেন। হয়তো উত্তরের অপেক্ষায়। কিন্তু আমি উনার প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছুক নই৷ বরং এ মুহূর্তে উনি কেনো, কিভাবে এখানে এলেন তা জানতে ইচ্ছুক আমি। ফলে আমি উনার প্রশ্নটি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে জিজ্ঞেস করলাম,
” এই রাত বারোটায় আপনি কোন দুঃখে এখানে এসেছেন? কি মতলবে? হ্যাঁ?”

আমার প্রশ্নে আদ্রিশ মুহূর্তেই মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করার মতো আওয়াজ বের করে বললেন,
” এই মিশমিশ? তোমার এতো দুঃখ আসে কোথা থেকে বলো তো। দুঃখের গোডাউন দিয়ে বসে আছো না কি? কথায় কথায় দুঃখের কথা বলো…..”
আমি মুহূর্তেই আদ্রিশের কথার পাল্টা জবাব দিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বললাম,
” হুম বসে আছি গোডাউন দিয়ে। কেনো? দুঃখের গোডাউন থেকে কিছু দুঃখ লাগবে না কি আপনার?”

আমার প্রশ্নে আদ্রিশ ভীষণ আফসোসের সুরে বললেন,
” লাগবে গো লাগবে। কিছু দুঃখ লাগবে আমার আসলে, একটু ট্রাই করে দেখতাম যে কথায় কথায় এতো দুঃখ পেতে কেমন লাগে। দিবে না কি?”

প্রতিটি কথায় আদ্রিশের এরূপ পাল্টা প্রত্যুত্তর শুনে রাগে আমার শরীর জ্বলতে লাগলো। ফলে প্রচণ্ড রাগে হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত চেপে উনাকে বললাম,
” এই ছেলে এই, আরেকটা প্রশ্নের এমন ত্যাড়া জবাব পেলে আমি সত্যি সত্যি এখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো কিন্তু।”

আমার কথা শোনামাত্র মাত্র আদ্রিশ বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় বড় করে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। মুখে হাত দিয়ে ভীষণ বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,
” ইয়া আল্লাহ! কি খুনি মেয়েরে বাবা! দিনেদুপুরে মার্ডারের হুমকি দেয়! ”

আমি পূর্বের মতোই বললাম,
” এখন দিনদুপুর না। গভীর রাত। আর আপনি যেমনটা শুরু করেছেন, তাতে হুমকি না দিয়ে বরং ডিরেক্ট একশনে আসা উচিত ছিলো।”

আদ্রিশ এবার বাঁকা হেসে বললেন,
” বারণ করেছে কে? ফেলে দিতে ইচ্ছে হলে ফেলো। আই হ্যাভ নো প্রবলেম। তবে মনে রেখো, আমি পড়লে তোমায় নিয়েই পড়বো। ”
এই বলে উনি বিড়বিড় করে কিছু বললেন। কিন্তু আমার কান অব্দি তা এলো না। আমি বরং পূর্বের ন্যায় বললাম,
” ক্ষতি কিন্তু আপনারই বেশি হবে। ”

আদ্রিশ মুচকি হেসে বললেন,
” কবুল আছে রাণী সাহেবা।”

উনার এ মুচকি হাসিও এ মুহূর্তে সহ্য হলো না আমার। উনার প্রতিটা প্রত্যুত্তর শুনে ধৈর্য সীমা ধীরে ধীরে অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। সত্যি সত্যি মনটা বলছে, এক ধাক্কায় ব্যালকনি থেকে উনাকে ফেলে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলি৷ এদিকে ক্ষণে ক্ষণে আপুর জেগে উঠার ভয়ে বুকটা ধুকপুক ধুকপুক শব্দ করে বেড়াচ্ছে। এদিকে আদ্রিশ খামখেয়ালি মেজাজে চারপাশে চেয়ে চেয়ে দেখছেন। আমি উনার এ নিশ্চিন্ত ভাবখানা দেখে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠাণ্ডা স্বরে বললাম,
” আর এক মিনিটের মাঝে যদি আপনি এখান থেকে না যান তাহলে আমি এক ডাকে আপুকে ঘুম থেকে তুলে ফেলবো। সো নিজের ভালো চাইলে চুপচাপ কেটে পড়ুন এখান থেকে। ”

আদ্রিশ আমার কথা শুনে নিশ্চিন্তভাবে একটা হাসি দিলেন। অতঃপর ভ্রু নাচাতে নাচাতে বাঁকা হেসে বললেন,
” আচ্ছা? তাই বুঝি? ঠিক আছে সাহস থাকলে ডাকো। তবে মনে রেখো,আমার সাথে তুমিও ফাঁসবে। ”

আদ্রিশের কথা শুনে এ মুহূর্তে কপাল চাপড়াতে মন চাইলো আমার। রাগে ক্ষোভে কান্না করার উপক্রম হলো আমার। উনার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে শেষমেশ করুন চাহনিতে উনার দিকে চেয়ে অসহায় গলায় বললাম,
” দয়া করুন আমার উপর। দয়া করুন৷ আর পারছি না আপনার কথার জবাব দিতে৷ এবার এখানে আসার কারণটা বলে চুপচাপ বিদায় হোন। যদি এ বাড়ির লোকেরা কোনোভাবে আপনার উপস্থিতির কথা টের পায় তাহলে আমার মান সম্মান কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না৷ ”

আদ্রিশ আমার কথা শুনে বিস্তৃত হেসে বললেন,
” ওকে ওকে বলছি। একটু আগে রিকুয়েষ্ট করলেই তো হতো!”

আমি উনার কথায় ভীষণ অবাক হয়ে বললাম,
” এর মানে কি আপনি আমাকে রিকুয়েষ্ট করানোর জন্য এতোক্ষণ ঘুরাচ্ছিলেন?”

আদ্রিশ এর জবাব দিলেন না। বরং ঠোঁটের কোনে এমন এক হাসি ঝুলিয়ে রাখলেন যাতে স্পষ্ট বুঝে ফেললাম উনি ইচ্ছে করেই এমনটা করেছেন। এ জানার পরও খুব কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে চুপচাপ উনার জবাবের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম৷ উনি আমায় অপেক্ষারত অবস্থায় দেখে গর্বের সহিত হেসে বললেন,
” এডভেঞ্চার মিশমিশ। এডভেঞ্চার। ”

আদ্রিশের এ জবাবের অর্থোদ্ধার করতে না পারায় আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
” মানে?”

আদ্রিশ এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। অতঃপর হালকা গলা পরিষ্কার করে বললেন,
” এডভেঞ্চার এর একটা ফিল নিতে এসেছি মিশমিশ। তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না ঠিক কি পরিমাণে এঞ্জয় করেছি এই এডভেঞ্চারে ভরপুর মোমেন্টগুলো।”

আদ্রিশের কথা শুনে আমার হাত কপালে তোলার জোগাড়। বিস্ময়ে আমার চোখজোড়া বড় বড় হয়ে এলো। আমি হতবাক হয়ে বললাম,
” এই রাত বারোটায় আপনি এডভেঞ্চারের ফিল নিতে এখানে এসেছেন! সিরিয়াসলি! নিশ্চিত আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ল্যাবের জটিল জটিল রিয়েকশন সলভ করতে করতে আপনি নিশ্চিত পাগল হয়ে গিয়েছেন। ”

আদ্রিশ আমার কথা শুনে মন খুলে হাসলেন। অতঃপর বললেন,
” তা তো অনেক আগেই হয়েছি। ”

” কি?”

আদ্রিশ আমার প্রশ্নে মৃদু হেসে বললেন,
” পাগল হয়েছি। এনি ডাউট?”

উনার কথার সম্মতি স্বরূপ আমি দৃঢ়চিত্তে বললাম,
” উঁহু। একটুও ডাউট নেই যে আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে আপনার মাথার স্ক্রুগুলো টাইট করতে হবে। ”

আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই আদ্রিশ ব্যালকনির রেলিঙে হেলান দিয়ে আমার দিকে মাথা ঝুকিয়ে বললেন,
” করে দাও। ডাক্তার সাহেবার স্পর্শে একটু সুস্থ হয়ে উঠি। আর ভালো লাগে না এমন থাকতে। কেমন যেনো অস্থির অস্থির অনুভব হয় সবসময়। মাঝে মাঝে তো চারপাশ শূন্য মনে হয়৷ স্পষ্ট অনুভব করি কারোর শূন্যতা। মনে হয়…. ”

আদ্রিশের এরূপ কথাবার্তায় কিঞ্চিৎ অস্বস্তি অনুভব করায় উনাকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে উঠলাম,
” আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন?”

আদ্রিশ এবার মাথা তুলে আমার দিকে চাইলেন। লঘু নিঃশ্বাস ছেড়ে সদর্পে বললেন,
” প্রাচীর টপকে এসেছি।”

উনার কথায় পুনরায় মাথায় হাত তোলার জোগাড় হয়ে এলো আমার। আমি আরেকদফা বিস্মিত হয়ে বললাম,
” প্রাচীর টপকে! গেট কি হয়েছিলো? বাসার আশেপাশের সিকিউরিটিরা কোথায় ছিলো? আর দারোয়ান চাচাই বা কোথায় ছিলেন?”

আদ্রিশ পুনরায় সদর্পে বলে উঠলেন,
” আমি কি রোহান না কি যে সিকিউরিটিরা আমায় আটকাবে? রইলো, দারোয়ান চাচা, সে তো ঘোড়া বেচে ঘুমাচ্ছেন৷ আর তুমিই বলো, গেট দিয়ে আসলে কি এই এডভেঞ্চার ফিল পেতাম?”

” উফ, আপনার এডভেঞ্চার! এই অসময়ে কে এডভেঞ্চার করে! আচ্ছা, তারপর কি করে এলেন?”

” প্রাচীর টপকে নিচের খোলা জানালার গ্রিল বেয়ে সানসেটের উপর এসেছি৷ তারপর সেই সানসেট দিয়ে এ রুমের জানালা বেয়ে ব্যালকনিতে এসেছি। কিন্তু আসার সময় এই বজ্জাত ক্রিসমাস ট্রি বেশ কয়েকটা খোঁচা মেরেছে। ”
এই বলে উনি নিজের বাহুতে হাত ঘষতে লাগলেন। আমি এতে বেশ মজা পেয়ে বললাম,
” ঠিক হয়েছে। একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে আপনার। কি মানুষ আপনি হ্যাঁ? শুধু এক এডভেঞ্চারের জন্য এখানে এভাবে উঠে এসেছেন!”

আদ্রিশ হাত দুটো পুনরায় বুকের উপর রেখে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। অতঃপর ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
” তোমায় কে বলেছে শুধুমাত্র এডভেঞ্চারের জন্যই এখানে এসেছি আমি?”
মুহূর্তেই যেনো আদ্রিশের স্বরভঙ্গি পাল্টে গেলো৷ উনার এরূপ স্বরভঙ্গিতে আমি খানিক সংকুচিত হলাম। শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজের ভেতরকার অবস্থা লুকানোর চেষ্টায় বললাম,
” না মানে আপনার কথাবার্তা শুনেই বুঝে গিয়েছি।”

আদ্রিশ মৃদু শব্দে হেসে বললেন,
” তাহলে মানুষ যা বলে তাতেই বিশ্বাস করো তুমি?”

উনার এ প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হলাম আমি৷ ফলে কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতে বললাম,
” আচ্ছা, অনেক হয়েছে আপনার এডভেঞ্চার। এবার ভদ্র ছেলের মতো চলে যান। ”

আদ্রিশ আমার কথা শুনে বাঁকা হাসলেন। পা নাচাতে নাচাতে বললেন,
” ভদ্র হওয়ার ইচ্ছে নেই আপাতত। অভদ্র হয়েই চলতে ইচ্ছুক আমি৷ ”

আদ্রিশের বাঁকা ত্যাড়া কথা, প্রতিটা কথার প্রত্যুত্তর দেওয়া, সেই কখন থেকে একভাবে এখানে থাকা, সব দিয়ে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে একাকার হয়ে গিয়েছে। এ মুহূর্তে না পারছি চিৎকার করে রাগ জাহির করতে, আর না পারছি সইতে৷ পরিস্থিতির শিকারে অসহায় হয়ে আমি এ পর্যায়ে চোখজোড়া বন্ধ করে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,
” শুনুন, অনেক শুনেছি আপনার প্যানর প্যানর। আপনার সাথে এতো কথা বলতে বলতে আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। ঘুম নষ্ট হয়েছে। মেজাজ খারাপ হয়েছে। মোটকথা, আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে।”

আমার একটা কথাও উনি গায়ে মাখলেন না এমন ভঙ্গিতে বললেন,
” আচ্ছা? ক্ষতি কি শুধু তোমারই হয়েছে? আমার যে কতো ক্ষতি হয়েছে সেসবের ক্ষতিপূরণ কে দিবে শুনি?”

” আপনার ক্ষতির জন্য আমি দায়ী নই। আপনিই দায়ী। আর আমার যে ক্ষতি হয়েছে সেটার ক্ষতিপূরন আমি চাইছি না। আমি শুধু চাই আপনি দয়া করে এখান থেকে চলে যান৷ হুট করে বিদ্যুৎ চলে আসলে বিপদে পড়ে যাবো আমি।”

” এ এলাকায় বিদ্যুৎ আসতে সময় নেয় অনেক। আর রইলো জেনারেটর এর কথা। সে বেটাকে তো আমি সকালেই নষ্ট করে দিয়েছি।”

পুনরায় আমি উনার কথায় বিস্মিত হলাম৷ আজ বোধহয় উনি আমায় চমকে দিতে দিতে আমার কেল্লা ফতে করে দিবেন। জেনারেটর নষ্ট করার কথা শুনে একদিকে যেমন রাগও হলো এবং তেমনি এ রাগকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারলাম না আমি। ফলস্বরূপ সে রাগ উনার সামনে জাহির করে বললাম,
” এই ছেলে এই, সমস্যাটা কি হ্যাঁ? আর কতো কীর্তিকলাপের কথা শুনবো আমি? প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু আমার….”

আদ্রিশ আমার কথায় চট করে উঠে দাঁড়ালেন। ঠোঁট উল্টে চমকপ্রদ হেসে বললেন,
” সম্বোধনটা পছন্দ হয়েছে। কি মিষ্টি শোনা যায়! আহা!”
এই বলে উনি স্বগতোক্তি করে বললেন,
” এই ছেলে এই, বাহ! আই লাইক ইট।”

ব্যস এটুকুই বলেই উনি হেঁটে ব্যালকনির কোনায় চলে গেলেন। হয়তো এখন উনি চলে যাবেন৷ অবশেষে স্বস্তি এবং শান্তির দেখা পাবো আমি৷
সত্যি সত্যিই উনি আমার এ ধারণাকে সত্য প্রমাণিত করে রেলিঙের ওপাশে পা রাখলেন। অতঃপর এ রূমের জানালার গ্রিলে পা রাখার পূর্বে আমাকে ডাকলেন। আমি চোখমুখ কুঁচকে ব্যালকনির মাঝখান হতে হেঁটে গিয়ে উনার সামনে দাঁড়ালাম। উনি আমায় অগ্রসর হতে দেখে মুচকি হাসলেন। অতঃপর কথা নেই বার্তা নেই, হুট করে আমার নাক টেনে বললেন,
” থ্যাংক ইউ এংরি বার্ড। আমাকে সময় দেওয়ার জন্য৷ থ্যাংক ইউ ডক্টর আমার রোগের সাময়িক চিকিৎসা করার জন্য। ”
এই বলে উনি আমার নাক ছেড়ে দিয়ে মনোমুগ্ধকর হেসে বললেন,
” আজকের রাতটা কখনো ভুলবো না আমি মিশমিশ। কোনো একদিন হয়তো স্মৃতির পাতা হাতড়ে পাবো, আঁধো আঁধারে মাখা রজনীতে জীবন্ত এক মাধবীলতাকে অতি নিকট থেকে অনুভব করেছি আমি। তার রাগে কুঞ্চিত নাকটা, চশমার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভীষণ বিরক্তিত হওয়া চোখজোড়া বারংবার নতুন করে উপভোগ করেছি আমি৷ সব কষ্ট যেনো সার্থক আমার। সব কষ্ট……. ”

#চলবে

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

২৬

গতকাল রাতের ঘটনার পর হতে আমি আদ্রিশের ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই উনি আমাকে পছন্দ করেন। কিন্তু আমি? সত্যি বলতে আমি উনার অনুভূতি সম্পর্কে অবগত হলেও নিজের অনুভূতি সম্পর্কে অবগত হতে পারলাম না। আমি নিজেও উপলব্ধি করতে পারলাম না উনায় নিয়ে আমার মাঝে আদৌ কোনো অনুভূতির উদ্রেক ঘটেছে কি না। অদ্ভুত এ ব্যাপারটার কারণও ঠিক উপলব্ধি করতে পারলাম না। যেনো, আমি নিজের বেলায় সম্পূর্ণ হতবুদ্ধি হয়ে বসে আছি।
তবে উনি যে আমায় পছন্দ করেন তা আমি মেনে নিয়েছি এবং এ ঘটনাটাকে এখানেই শেষ করে দিতে চাইছি। কারণ উনার সাথে আমার ভবিষ্যত কল্পনা করা সত্যি বলতে অসম্ভব। এর অবশ্য কারণও আছে। প্রথমত, উনাদের ক্লাস আর আমাদের ক্লাসের পার্থক্য। উনারা যেখানে হাই সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত, সেখানে আমরা মিডেল ক্লাস সোসাইটির মধ্যে পড়ি। আপুকে এমন পরিবারে বিয়ে দিয়ে আব্বু আম্মু শিক্ষা নিয়ে নিয়েছে। ফলে আমার ব্যাপারে কিছুতেই এ বিয়েতে তারা রাজি হবে না৷ আমি নিজ চোখে দেখেছি, আপুর বিয়ের সময় আব্বু আম্মুর উপর দিয়ে কি পরিমাণ মানসিক অত্যাচার গিয়েছে! যদিও ইমাদ ভাইয়াদের পরিবার অত্যন্ত ভালো। তবুও মেয়েপক্ষ বলে কথা! অন্তত সমাজের সামনে যেনো ছোট হতে না হয় সেজন্যই কত আয়োজন! উপরন্তু, আপুকে শোনানো আনোয়ারা দাদির সেই খোঁটাসম্পন্ন কথাগুলো! আবার হলুদের দিনের সে ঘটনার পর হতে আনোয়ারা দাদি আদ্রিশকে ভালো চিনেন না৷ হয়তো এমন আরো অনেকেই আছে। সব দিক বিবেচনায় আদ্রিশের সাথে আমার ভবিষ্যত জীবন কল্পনা করাও অসম্ভব। অতএব, এখন হতে আদ্রিশের নিকট হতে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে উনাকে উপেক্ষা করার চিন্তাভাবনা করে মনস্থির করলাম।
এ নিয়ে চিন্তা করার কারণে আজ ক্লাসগুলোতেও ঠিকমতো মনোযোগী হতে পারিনি৷ ফলস্বরূপ মেজাজ প্রচণ্ড খিটখিটে হয়ে আছে আমার।

এই খিটখিটে মেজাজ নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসায় যাবার জন্য রিকশা ডাকতেই কোথা হতে যেনো রিতু এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো। আচমকা রিতুকে দেখে রোহান ভাইয়ার কথা মনে পড়লো৷ এদিকে রিতু হাস্যজ্জ্বল চেহারায় আমায় জিজ্ঞেস করলো,
” কেমন আছিস দোস্ত?”

বহুদিন পর রিতুকে দেখে খানিক অবাক হলাম। তবুও স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললাম,
” আলহামদুলিল্লাহ আপু আছি। তুই কেমন আছিস?”

” আমিও ভালো আছি। ভেবেছিলাম নাফিসা আপুর বিয়েতে তোর সাথে দেখা হবে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে যেতে দিলো না। ”

রিতুর কথায় চট করে আমার মনে সন্দেহের বাতি জ্বলে উঠলো। ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
” কেনো? রোহান ভাইয়া তোকে আসতে দিলো না কেনো?”

” কি জানি। ভাইয়া আমায় বললে তো! আমি বিয়েতে যাওয়া নিয়ে ভাইয়ার কাছে পারমিশন চাইতেই ভাইয়া এক বাক্যে না করে দিলো। আর তুই তো জানিসই, আব্বু আর ভাইয়াকে আমি কি পরিমাণ ভয় পাই! ভাইয়া যেখানে একবার নিষেধ করে দিয়েছে সেখানে আমার দ্বিতীয় কথা বলার সাহস নেই। ”

রিতুর কথা শুনে আমি আর কোনোরূপ প্রত্যুত্তর করলাম না। রিতু পুনরায় বললো,
” চল, আমাদের বাসায় চল। অনেকদিন আসিস না।”

রিতুর কথায় আমার মাঝে কেমন যেনো ভয় চেপে বসলো। আমি চট করে বলে উঠলাম,
” আরে না না। এখন যাবো না। অন্য কোনোদিন যাবো। ”

” সে কি! একই এলাকায় বাসা থাকার পরও এ কথা বললে মানা যায় না। ”

” আমি এখন বাসায় নাইরে রিতু। গত ৩/৪ দিন যাবত আপুর শ্বশুরবাড়িতে আছি। ভাইয়া একটু বাইরে গিয়েছে তো তাই আমাকে নিয়ে গিয়েছে। ”

” তো? যাই বলিস না কেনো, আজ আমি তোর কোনো এক্সকিউজ মানবো না। আজ আমার সাথে যেতে হবে মানে যেতেই হবে। আজকের দুপুরের খাবার আমাদের বাসায়েই খেতে হবে। আর কিছু শুনতে চাই না আমি। ”
এই বলে রিতু আমার হাত ধরে রাস্তার ওপারে গিয়ে ওদের প্রাইভেট কারে উঠতে বললো। অগত্যা রিতুর জোরাজোরিতে ওর সাথে না পেরে কারে উঠে বসলাম। কার স্টার্ট দিতেই রিতুর মুখের বুলি ফুটতে শুরু করলো।

.

আমাদের শহরের এমপি হওয়ার দরুন রিতুর বাবার বিলাসিতার অভাব ছিলো না। একই এলাকায় কিন্তু দুটো বিপরীত রাস্তায় আমাদের দুজনের বাসা অবস্থিত। স্কুলে থাকা অবস্থায় প্রায়শই রিতু আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসতো। এ নিয়ে অবশ্য তখন আম্মুর কাছে খুব করে বকা শুনতাম। কিন্তু তখন রিতু আমার বেস্টফ্রেন্ড হওয়ায় এ নিয়ে ওকে কিছু বলতে পারিনি।
আজ বহুদিন রিতুদের বাসায় এসে সব নতুন নতুন লাগলো। বাসায় এসেই রিতু আমাকে তার রুমে বসিয়ে নিচে খাবারের আয়োজন করার কথা বলতে চলে গেলো। এদিকে রুমে একা একা বসে থাকায় বিরক্ত অনুভব করায় ওর রুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। দ্বিতীয় তলায় রিতুর রুমের এক রুম পরেই রোহান ভাইয়ার রুম। হাঁটতে হাঁটতে রোহান ভাইয়ার রুমের কাছে আসতেই রুম হতে উচ্চস্বরে উনার কণ্ঠ এবং অপরিচিত এক ছেলের কণ্ঠ শুনতে পেলাম৷ দুজনেই ফোনে লাউড স্পিকারে কথা বলছেন। উনাদের কথার মাঝেই হঠাৎ আদ্রিশের নাম শুনতেই আমি চমকে উঠলাম। ফলে দ্বিতীয় কোনো চিন্তা না করে রোহান ভাইয়ার রুমের বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য আদ্রিশকে নিয়ে উনারা কি কথা বলছেন তা সম্পর্কে জানা।
দরজার এপারে আড়ি পাততেই রোহান ভাইয়ার কণ্ঠে শুনতে পেলাম,
” আমি ডিলের কথা ভুলিনি মিস্টার ইকবাল। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ”

রোহান ভাইয়ার মুখে মিস্টার ইকবালের নাম শুনতেই আমার বুকটা ধক করে উঠলো। রোহান ভাইয়ার মুখে মিস্টার ইকবালের নাম শুনে আমার মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। অনেকটাই নিশ্চিতভাবে ধরে নিলাম, আদ্রিশের মুখে যে মিস্টার ইকবালের নাম শুনেছি, ফোনের ওপাশের লোকটিই সেই মিস্টার ইকবাল। তবে রোহান ভাইয়া, আদ্রিশ ও মিস্টার ইকবালের মাঝে কি যোগসূত্র থাকতে পারে তা আন্দাজ করতে পারলাম না। পুরো বিষয়টা জানতে আমি পুনরায় রোহান ভাইয়ার কথোপকথন শুনতে আগ্রহী হলাম। ফোনের ওপাশে মিস্টার ইকবাল কিছুটা তেজস্বরে বললেন,
” আমার মনে হয় না আপনি সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনটা করলে এক ফর্মুলা নিতে এতোদিন সময় লাগতো না। আপনি হয়তো ডিলটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না। ”

” এমনটা মোটেও না মিস্টার ইকবাল। আমি আমার দ্বিতীয় লোক লাগিয়ে দিয়েছি আদ্রিশের ল্যাবে। এটা ঠিক যে, আমার কিছু ভুলের জন্য প্রথম ইনফর্মার প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার আমি সেরকম ভুল করিনি। এবার মেপে মেপে পা ফেলছি আমি। ”

” সে তো দেখছিই, কত মেপে মেপে পা ফেলছেন আপনি৷ ”

” এ কাজটা করার জন্য আমাকে একটু সময় তো দিতে হবে মিস্টার ইকবাল। ড্রাগটার ফর্মুলা আদ্রিশ কোথায় কিভাবে রেখেছে তা ওর মাধ্যমেই বের করাতে হবে। এজন্য আমরা একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আমি চাইছি যে, সাপও মারবো কিন্তু লাঠিও ভাঙবে না। ”

” যাই করেন মিস্টার রোহান। আমি দ্রুত রেজাল্ট চাই। আমি আর দু মাসের মধ্যেই সুইজারল্যান্ড ব্যাক করবো। এর মাঝেই সব কাজ হওয়া চাই আমার।”

” জি বুঝেছি আপনার কথা। ফর্মুলাটা যেমন আপনার জন্য ইম্পর্ট্যান্ট তেমনি আমার জন্যও ইম্পর্ট্যান্ট। যাস্ট আমার লোকের সাহায্য রিসার্চ পেপারটা কোনোমতে বের করাতে হবে। কিন্তু আপনি হয়তো এতোদিনে বুঝেই গিয়েছেন যে আদ্রিশ গভীর জলের মাছ। এতো সহজে সে আমাদের কাছে ধরা দিবে না। ”

” জি তা তো বুঝেই গিয়েছি। আচ্ছা, আপনি কি নিশ্চিত, মিস্টার আদ্রিশ আমাদের দুজনার মধ্যকার ডিল সম্পর্কে কিছু জানে না?”

” জি আমি একদম নিশ্চিত মিস্টার ইকবাল। আপনিও নিশ্চিন্তে থাকুন। তবে কাজের মাঝে হয়তো আপনার কিছু হেল্প লাগতে পারে। ”

” জি জি। এ নিয়ে আপনি টেনশন করবেন না। আপনি শুধু কাজটা শেষ করুন। তাহলে আজ রাখছি।”

” আচ্ছা। তাহলে পরে কথা হবে। ”
এই বলেই রোহান ভাইয়া কল কেটে উনার রুমের অপর মানুষটাকে বললেন,
” তুই আরো খোঁজ খবর কর এ নিয়ে। কাজটা খুব দ্রুতই সারতে হবে আমাদের। ”

রোহান ভাইয়ার কথায় আগন্তুক সায় দিয়ে বললো,
” হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। আপাতত এ নিয়ে টেনশন বাদ দে। চল একটু বাইরে ঘুরে আসি। ”

আগন্তুকের কথা শোনামাত্র আমি ত্রস্ত পায়ে রোহান ভাইয়ার রুমের সামনে থেকে চলে এলাম। দ্রুত রিতুর রুমে গিয়ে বসতেই অনুভব করলাম, আমার হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন গতি। রোহান ভাইয়া ও মিস্টার ইকবালের কথোপকথন শোনার পর এটা বুঝতে বাকি রইলো না যে, আদ্রিশ ও রোহান ভাইয়ার মাঝে প্রফেশনাল শত্রুতা কি নিয়ে তৈরী হয়েছে। তবে আমি এটা জানতে পারলাম না, আদ্রিশ কোন ফর্মুলা তৈরী করেছেন যার জন্য মিস্টার ইকবাল ও রোহান ভাইয়া উনার পিছে পড়ে আছেন। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, উনি কোনো ছোটখাটো ড্রাগ ফর্মুলা তৈরী করেননি। এমনটা হলে মিস্টার ইকবাল দেশের বাইরে থেকে এসে এ নিয়ে লাফালাফি করতেন না। নিশ্চয়ই বড় কিছুর সম্পৃক্ততা আছে সেই ফর্মুলার সাথে । যার পিছনে উনারা পড়ে আছেন।

®সারা মেহেক

#চলবে