#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :১৫
ফুফিদের সিদ্ধান্ত থেকে ফুফিরা একবিন্দুও নড়লো না।আমাকে কেয়া আপুর সাথে উপরে পাঠিয়ে দিলো তৈরী হওয়ার জন্য।বাসায় কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।আমি সব কিছু বুঝেও কোনো রিয়েক্ট করলাম না।রোবটের মতো রইলাম।কেয়া আপু অনেক কথা বলতেছে আর রেডী করাচ্ছে।আমাকে সম্পূর্ণ রেডী করে আপু বললেন,,,”মাশাল্লাহ্,,, কী অপরূপ দেখতে লাগতেছে।মনে হচ্ছে যেনো কোনো পরী..!!”
কথাটা শুনতেই আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।
—- “কাজল কালো আখি,,হাত ভর্তি লাল চুড়ি,,মাথায় টিকলি,কানে দুল, গলায় চিকন হার,,ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক,, মুখে হালকা মেক আপ,,পরনে সিম্পল লাল টুক টুকে বেনারসি সাথে মাথায় লাল ওড়না।কী একটা লাগতেছে না,জাস্ট অসাধারন।এই রুপ দেখলে যে কোনো ছেলেই ফিদা হয়ে যাবে।আমার ভাই তো আরো আগে হবে,দেখে নিস।
আমি আপুর কথা শুনেও না শুনার ভান করলাম।একটুপর নিচ থেকে ফুফি ডাক দিলেন। কেয়া আপু বিছানা থেকে ওড়না টা নিয়ে আমাকে একপাশ থেকে ধরে নিচে নিয়ে যেতে লাগলেন।আমার জায়গা অন্য কোনো মেয়ে থাকলে সে নিশ্চয় এখন লজ্জা পেতো।কিন্তুু আমার ভেতর এমন কোনো অনুভূতি হচ্ছে না।আপু আমাকে নিয়ে চতুথ সিড়িতে আসতেই ফুফি,ফুফা,বড় আপু,দুলাভাই সবাই কেমন হা করে তাকিয়ে ছিলো।আপু আমাকে নিয়ে সোফাতে বসালেন।আমি চুপচাপ বসে রইলাম, ফুফি এসে আমাকে বললেন,,”মাশাল্লাহ,আমার মেয়েকে তো দেখতে রাজকুমারী লাগছে।”আমি আগের ন্যায় বসে রইলাম।বিয়ে তে বড় আপু আর রেদোয়ান ভাইয়া ছাড়া সবার মত আছে সেটা সবার কথাবার্তায় বুঝলাম।ফুফি কেয়া আপুকে রেদোয়ান ভাইয়াকে ডেকে আনতে পাঠালেন।কেয়া আপু খুশিতে গদগদ হয়ে ডাকতে গেলেন,,বিয়েতে যে সবচেয়ে বেশি কেয়া আপু খুশি তা উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর কেয়া আপু ফুফিকে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে আসতে লাগলেন।হঠাৎ এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে ফুফি কেয়া আপুকে বললেন,,”কী হয়েছে?এভাবে চিল্লাইতেছিস ক্যান?আর তোর ভাই কই?”
কেয়া আপু হাপাতে হাপাতে বললেন,,”মা,ভাই নেই।ভাই পালিয়ে গেছে।”
কেয়ার আপুর কথা শুনতেই উপস্থিত সবার মুখের রং বদলে গেলো।শুধুমাত্র আমার ছাড়া,,কারন আমি আগেই জানতাম এখানে যে বাংলা সিনেমা হবে।
ফুফি কিছুটা উচ্চ স্বরে বললেন,,”পালিয়েছে মানে?ও কীভাবে পালিয়েছে?”
তখন কেয়া আপু নিচু স্বরে বললেন,,”আম্মু,এহসান ভাইয়া সাহায্য করেছেন।”
এবার ফুফি জোরে জোরে এহসান ভাইয়াকে তাকতে লাগলেন।দুইবার ডাকতেই রেদোয়ান ভাইয়ার রুম থেকে চোরের মতো এহসান বেরিয়ে আসলেন।উনি আসতেই ফুফি বলতে লাগলেন,, “উনি কেনো এমন করেছেন?এখন কী হবে?আমার ভার কে নিবে?”
এহসান ভাইয়া সবাইকে বললেন,,”আন্টি আপনি দেখেন,,যদি ওদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে কী ওরা একসাথে সারাজীবন থাকতো?হতে পারে রেদোয়ান ও নায়লার মায়ের মতো চলে যাবে তারপর আবার নায়লার জীবন ওর বাবার মতো হয়ে যাবে।এমন কিছুও তো হতে পারে,,তাই একটা সিদ্ধান্ত নিতে ভেবে চিন্তে নেওয়া উচিত।কারন আপনাদের একটা ভুল সিদ্ধান্ত অনেকগুলো জীবন নষ্ট করে দিতে পারে।আপনারাই ভেবে দেখুন,আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার পরিনতি কেমন হতো?”মুহূর্তেই সবাই চুপ হয়ে যায়।এবার বড় আপু তো সুযোগ পেয়েছে,একশো কথা বলতে লাগলেন।
সবার এতো প্রশ্নের মধ্যেই হুট করে এহসান ভাইয়া মাথা তুলে বললেন,,”আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি ও কে বিয়ে করতে চাই।” এহসানের আচমকা এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই হতভম্ভ হয়ে গেলেন।ফুফি কিছু বলবে তার আগেই এহসান বললেন,,”আমি জানি আপনারা আমার পরিবারের কথা ভাবছেন।সেটা নিয়ে আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।আমি সবকিছু ম্যানেজ করে নিবো।শুধু আপনারা রাজি থাকলেই হবে।” এহসানের কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেলো শুধুমাত্র কেয়া আপু ছাড়া।উনার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। দুই মিনিটের মধ্যে এহসান ভাইয়া গিয়ে বিয়ের জামাকাপড় পড়ে চলে আসলেন।উনি এসে আমার পাশে বসলেন,আমি একবারও উনার দিকে তাকাই নি।অতঃপর কাজী নিজের কাজ করতে লাগলেন।উনাকে কবুল বলার জন্য বলতেই উনি সুন্দরভাবে কবুল বলে দিলেন।এরপর আমাকে বলতে বললেন,,আমি চুপচাপ বসে রইলাম।অনেকবার বলতে বললেন আমি তাও চুপচাপ বসে রইলাম।এবার ফুফি এসে আমাকে বলতে বললেন।আমি তাও চুপ করে বসে রইলাম।একটুপর ফুফি নায়লা বলতেই আমি হুম বলে ফুফির দিকে তাকালাম।এরপর ফুফি হাসি মুখে কাজী কে বললেন যে আমি বলেছি।কাজী সাহেবও আলহামদুলিল্লাহ বললেন।আমি ফুফির দিকে বোকার মতো চেয়ে রইলাম,আমি কী বললাম?
বিয়ে এ শব্দটা প্রতিটা বাঙালী মেয়ের কাছে একটা স্বপ্নের মতো।এ একটা দিন নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের অনেক স্বপ্ন থাকে,,ছোট থেকেই শুনে আসে একটা রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে আসবে তার তাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।আমিও এমন টা শুনেছি তবে অনেক ছোট থাকতে আর সেদিন বাবার কাছে। প্রত্যেকের মতো আমারও কত স্বপ্ন ছিলো বিয়ে তে এটা করবো,ওটা করবো,,অনেক আয়োজন হবে আরো কত কী?কিন্তুু আফসোস আমার বিয়েতে তেমন কিছুই হলো না। আমি বুঝতেই পারলাম না কীভাবে বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ে পর্ব শেষ হতেই ফুফি আমাকে অনেক আদেশ উপদেশ দিয়ে এহসান ভাইয়ার ফ্ল্যাটে রেখে আসলেন।শুধু মাত্র ফুফি এসেছিলেন,আর কেউ আসে নি।কেয়া আপু তো তখনই রুমে চলে গিয়েছিলো।আমি জানি আপু হয়তো এখন অনেক কাঁদবে। ফুফি আমাকে ভাত খাইয়ে,ঔষদ খাইয়ে দিলেন।বিকালের দিকে ফুফিরা সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে এগুলো সব বদলে নিয়ে সিম্পল সাদা একটা জামা পড়ে নিলাম।প্রায় আধঘন্টার মতো টেপ ছেড়ে দিয়ে কান্না করেছিলাম। কত শখ ছিলো এমন বধূ সেজে সৌরভের সাথে সংসার করবো।আজ আবার ওর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।প্রত্যেক টা মানুষেরই মনে হয় বিয়ের দিন তার প্রাক্তনের কথা মনে পড়ে।দেখো সৌরভ তুমি আমাকে ছেড়ে দেওয়াই আমার জীবনে কী থেকে কী হয়ে গেলো।না জানি আরো কী কী হবে আমার জীবনে।চোখমুখ মুছে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।পুরো বাসা খালি,,এহসান সারাদিনে একবারও আসেন নি।হয়তো উনিও আমাকে মেনে নিবেন না,,নিজের বন্ধুর জন্যই হয়তো বিয়ে করেছেন।কে ই বা মানবে এমন একটা মেয়েকে।এসব ভেবে ধীরে ধীরে হেঁটে ব্যালকনিতে গেলাম।উনার রুমের ব্যালকনিতে আগে কখনও আসা হয় নি। ব্যালকনিতে যেতেই পড়ন্ত বিকেলের সূর্যেরর আলো এসে মুখে পড়লো।আমি একটু সরে অন্যপাশে গেলাম,,চোখ বন্ধ করে তাজা হাওয়া অনুভব করতে লাগলাম।চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বললাম,,”আই মিস ইউ বাবা।চলে এসো না আমার কাছে,,কেনো এত তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছো?তোমরা সবাই কেনো আমাকে ছেড়ে চলে যাও?” তখন চোখ দিয়ে একবিন্দু অশ্রুকনা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।অনেকটা সময় বারান্দায় বসে নিজেকে সময় দিলাম।অতীতের সব স্মৃতি গুলোকে উপভোগ করলাম,,মনে আলাদা একটা প্রশান্তি অনুভব করেছিলাম।
মাত্রই ঘড়িতে রাত আটটা বাজলো।এহসান এখনও আসেন নি,,পুরো বাসা নিস্তব্ধ,, কেমন একটা ভয় ভয় ফিলিং কাজ করতেছে। বিছানার এক কোনায় বসে ছিলাম,তখনই বাসার দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতেই দেখলাম,,এহসান ,,, রেদোয়ান ভাইয়া আর পাশের বাসার নিচতলার আপু বাসায় ডুকতেছেন।উনাদের দিকে তাকাতেই বুঝলাম উনারা মাত্র বিয়ে করে এসেছেন।আমি রুমের দরজার একপাশে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে রইলাম।উনারা ফিসফিস করে কী যেনো বলতেছেন। একটুপর উনারা দুজন রুমে চলে গেলেন আর এহসান ভাইয়া কিচেনে। খানিকবাদে উনি এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমের দিকে আসতে লাগলেন।উনাকে আসতে দেখে আমি রুমের ভেতরে চলে গেলাম,,,কেনো যেনো প্রচন্ড ভয় কাজ করতেছে।মনে হচ্ছে উনি আমাকে মেরে ফেলবেন।
রুমে ডুকেই উনি টেবিলের উপর থেকে আমার ঔষদ আর খাবার নিয়ে এসে আমার সামনে বসলেন।উনাকে দেখে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।উনি কিছু বললেন না,,আমার মুখের সামনে খাবার আনতেই আমি মুখ সরিয়ে নিলাম।উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন,,হাতের প্লেট নিচে রেখে আমার মুখ চেপে ধরে এক এক করে সবগুলো ভাত খাওয়াতে লাগলেন।আমি জোরাজোরি করেও পারলাম না,,উনি আরো জোরে খাওয়াতে লাগলেন।খাবার খাইয়ে জোর করে ঔষদ খাইয়ে দিলেন। এবার উনি সোজা হয়ে বসে একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লেন। উনি সবকিছু গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললেন,,”আমার সাথে যে কথা বলবে না, তা ভালো করেই জানতাম।তাই শুধু শুধু তোমার সাথে বকবক করে আমার শক্তি নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।তুমি কেমন মেয়ে এ কদিনে ভালোই বুঝেছি। তোমার মনে যে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে সেটাও ভালো করে জানি,,আবার প্রশ্ন গুলো যে তুমি বলবেও না তাও ভালো জানি।তুমি প্রশ্ন করা না পর্যন্ত কিন্তুু আমি কিছু বলবে না।তুমি কী আমার সম্পর্কে শুনতে চাও?”
চলবে???