ভুলিনি তোমায় পর্ব-১৬

0
3438

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :১৬

–“তো আজকে আমাদের বাসর রাত,তাই না?আই হোপ বাসর রাতের মিনিংটা তোমাকে বুঝাতে হবে না।কী,তাই তো??”

উনি তো নিজের সম্পর্কে বলবে বলেছিলো,কিন্তুু এখন এসব কী বলে?উনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলাম।

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,,আমার একদম কাছে এসে বললেন,,”কী জানো তো বাসর রাত মানে কী?”

উনি এতটা কাছে আসায় একটু ভড়কে গেলাম।আমি ধীরে ধীরে পিছনের দিকে যেতে লাগলাম।

এবার উনি দাত কেলিয়ে হাসলেন,,আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে বললেন,,”কুল,,এত ভয় পাচ্ছো কেনো?আমি তো জাস্ট মজা করলাম।”

আমি কিছু বললাম না,,এবার উনি পুরো রুমে পায়চারী করতে লাগলেন,, হঠাৎ বললেন,,

—“মনে করো তুমি একটা ছেলে,,,হঠাৎ তুমি দেখলে তোমার সামনে এক পরী দাড়িয়ে আছে তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে?”

উনার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।

উনি স্মিত হেসে বললেন,,”কী বুঝলে না, তো?”

আমি মাথা নাড়ালাম যার অর্থ,,,হুম,বুঝি নি!!

উনি আবারো হাসলেন,হাসিমুখেই বললেন,,” তোমাকে যখন দেখেছিলাম তখন আমার পরী ই মনে হয়েছিলো।ইভেন এখনও পরী মনে হচ্ছে।সাদা পোশাকে যে কাউকে এত সুন্দর লাগতে পারে তা তোমাকে না দেখলে বুঝাই যেতো না। ”

উনার কথা শুনে ভ্রু টা কুচকে এলো।মনে মনে ভাবলাম,,জানি তো অধিকার খাটানোর জন্য এসব কথা বলতেছে।কত ছলনা যে এরা করতে পারে,,না দেখলে তো বুঝতেই পারতাম না।আমি আরেকটু চেপে বসলাম।

উনি আমার অবস্থা দেখে চাপা হাসলেন, হয়তো বিষয়টা খেয়াল করেছেন।

উনি বিছানার উপর উঠে হাটু ভাজ করে আমার সামনে বসলেন।হাসিমুখেই বলতে লাগলেন,,,
—“তুমি হয়তো মনে করবে,,আমি তোমাকে ইম্প্রেস করার জন্য এমন বলছি,,,কিন্তুু বিষয়টা মোটেও এমন নয়।আমি যখন প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম তখন কিন্তুু তোমার প্রতি আমার এমন ফিলিং আসে নি।তোমাকে প্রথমবার দেখটা ছিলো কৌতুহল।মানে নিজের কৌতূহল মিটাতেই তোমাকে দেখেছিলাম। সেদিন শুনেছিলাম তুমি নাকী সুইসাইড করার চেষ্টা করেছো,,তাই তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম।আর দ্বিতীয় দেখা,,সেটা ছিলো আমার জীবনের বেস্ট মোমেন্ট গুলোর মধ্যে একটি। এমন নয় যে সেটা অনেক সময়ের দেখা ছিলো,সেটা ছিলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের দেখা ছিলো। তবে আমি কিন্তুু তোমাকে পিছন থেকে দেখেছিলাম,,সামনে থেকে নয়। ”

আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই উনি প্রশ্ন করলেন,,,
–“মনে আছে সেদিন ছাঁদে তুমি চুল ছেড়ে দিয়ে কানের পাশে জবা ফুল গুজে আকাশপানে মুখ করে দাড়িয়ে ছিলে?”

আমি একটু ভাবতেই মনে পড়লো,, হে প্রথম যেদিন ছাদে গিয়েছিলাম,তখন এমনভাবে দাড়িয়ে ছিলাম,কিন্তুু উনি তো নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।আমি চোখ ছোট করে উনার দিকে তাকালাম।

তখনই উনি বললেন,,”মনে পড়েছে?”

আমি মাথা নাড়ালাম,,যার অর্থ হ্যা।

উনি খুশি হয়ে বললেন,,”বিশ্বাস করো,,সেদিন যখন তোমাকে ওইভাবে দেখেছিলাম সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমার হার্টবিট মিসড হয়েছে।আই উইশ, আমি তোমাকে বুঝাতে পারতাম,, ‘কেমন ছিলো ওই অনুভূতি।’ আমি কিন্তুু একপলক তাকিয়ে আমি চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম,,কারন আমি সিউর ছিলাম বেশিক্ষন তাকালে আমার অবাধ্য মন নিষিদ্ধ কিছু করতে চাইতো। এরপর হুটহাট ই তোমার সেই রূপ চোখের সামনে চলে আসতো।বারবার না চাইতেও মনে পড়তো। রাতে যখন ঘুমাতে যেতাম তখন মনের ভাবনায় শুধু এটাই আসতো,,”ইশশ,,যদি ওই পরীটা আমার হতো।”

উনার কথা শুনে আমার মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠলো,,উনি কিছুক্ষন দম নিয়ে আবারো ঘরময় ঘুরে ঘুরে বলতে লাগলেন,,,
—-“তুমি হয়তো নিজেও জানো না তোমাকে হাসলে কতটা সুন্দর লাগে।জানো আমি শুধু তোমাকে একবারই হাসতে দেখেছি,,এন্ড বিলিভ মি, ফার্স্ট টাইম কাউকে হাসতে দেখে এতো ভালো লেগেছিলো।সেদিন কিন্তুু দ্বিতীয়বারের মতো আমার হার্টবিট মিসড হয়েছিলো। তোমাকে হাসতে দেখে এত ভালো লাগার কারনটা কী জানো?”

আমি বিরক্তি নিয়ে মাথা নাড়ালাম,,যার অর্থ না।

উনি জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালেন,,বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললেন,,” তুমি তো সবসময় মুখ কালো করে রাখতে,,কখনও হাসতে না।তাই হঠাৎ তোমাকে হাসতে দেখে ভালো লেগেছিলো।তুমি যদি সবসময় হাসতে তাহলে কিন্তু এতটা ভালো লাগতো না,হঠাৎ হাসাতেই এত ভালো লেগেছিলো। ”

উনি আমার দিকে ফিরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,”জানো,,’কাউকে কাঁদানো যতটা সহজ, ততটাই কঠিন কাউকে হাসানো।’

এই যে আমি যদি তোমাকে এখন এত এত হাসির কৌতুক বলি,তাও তুমি কিন্তুু হাসবে না।কিন্তুু আমি যদি তোমাকে খোঁচা মেরে একটা কথা বলি তখন ঠিকই তোমার কান্না আসবে।”

উনার কথা শুনে উনাকে পাগল পাগল লাগতেছে।বাসর রাতে কে এমন জ্ঞানী কথা বলে?উনি হয়তো আজ বেশিই খুশি,তাই মনে হয় আবল-তাবোল বকছে।কিন্তুু খুশি হওয়ার কারন কী?আমাকে বিয়ে করতে পেরেছে,তাই নাকী উনার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিয়ে দিতে পেরেছে তাই? আপনমনে এসব ভাবতেছি তখনই উনি কিছুটা জোরে বললেন,,”বুঝেছো তো?”

আচমকা এতো জোরে আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে গেলাম,,সাথে সাথে বুকে থু থু দিলাম।উনি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকালেন। জানি না উনার কী হলো উনি হুট করে আমার একদম সামনে এসে বললেন,,”তুমি কী আমার সাথে একটা কথাও বলবে না?সেই কখন থেকে এত কথা বলতেছি অথচ তুমি একটা কথা বলতেছো না।আমি জানি তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ, আর সেটার জন্য তুমি এমন উইয়ার্ড বিহেভ করবে বাট তাই বলে কথা বলবে না,এটা কেমন কথা?তুমি জানো ডাক্তার তোমাকে বলেছে সবসময় সবার সাথে মিশতে আর বেশি বেশি কথা বলতে।”

আবারো উনার এমন কাছে আসা দেখে ভয় লাগতে লাগলো,,মনে হলো উনি হয়তো আমাকে মেরে দিবে।আমি ধীরে ধীরে আরো পিছনে যেতে লাগলাম।উনিও আমার দিকে এগোতে লাগলেন,,,একটা সময় ওয়ালের সাথে লেগে গেলাম।আমাকে থেমে যেতে দেখে উনিও থেমে গেলেন তবে উনার মুখ একদম আমার কাছাকাছি চলে এসেছে। এবার আমার খুব ভয় লেগে গেলো,,চোখে মুখে কান্না কান্না ভাব চলে আসলো।মনে হলো এখনই কেঁদে দিবো।

–“হেই রিলেক্স,মোটেও কান্না করবে না।আমিও সরে যাচ্ছি,,!!”
এ বলেই উনি সরে গেলেন।বিছানার এক পাশে বালিশ দিয়ে আমাকে বললেন,,,”এই নাও,,এখন এখানে ঘুমিয়ে পড়ো।তোমার হয়তো ঘুম পাচ্ছে,কারন তোমার ঔষধ গুলো হাই পাওয়ারের।তার উপর তোমাকে আবার সকালে উঠতে হবে।”

সকালে উঠতে হবে শুনেই আমি মুখ ঘুরিয়ে
উনার দিকে তাকালাম।যার অর্থ সকালে উঠতে হবে কেনো?

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,,”তোমার মতো ঘাউড়া মেয়ে আমি জীবনেও দেখি নি।এত কিছু বললাম,তাও একটা কথা মুখ দিয়ে বলাতে পারলাম না।না চাইতেও একটা ওয়ার্ড মুখ দিয়ে আসছে,,আর সেটা হলো ন্যাকামি। আচ্ছা বাদ দেও,,সকাল উঠতে হবে কারন সকালে উঠে আমার জন্য নাস্তা বানাবে তাই।তোমাকে নিশ্চয়ই বসিয়ে খাওয়ানোর জন্য বিয়ে করি নি।আর আজকে তোমাকে ছাড় দিলাম কারন তু,,।

পুরো কথাটা না বলে উনি কী যেনো ভাবলেন তারপর নিজে নিজে মাথা নেড়ে বললেন,,”বাদ দেও, তোমাকে এসব বলে লাভ নেই।শুনো এটা ভেবো না যে তোমাকে বিয়ে বিয়ে করেছি বলে আমি বসে বসে খাওয়াবো।বিষয়টা মোটেও এমন নয়,,লিগ্যালি তুমি এখন আমার বউ সো একজন বউ যেসব দায়িত্ব পালন করে তোমাকে তার সব করতে হবে। তোমাকে বিয়ে করে আমি কতটা টেনশনে আছি সেটা শুধু আমিই জানি।ভেবে দেখো,আমি যদি আমার ফ্যামিলিকে বলি যে আমি বিয়ে করেছি এন্ড তখন যদি তারা তোমার সম্পর্কে জানতে চায় তখন আমি কী বলবো?তুমি বিষয়টাকে অন্যভাবে নিও না, বিষয়টাকে লজিক্যালি ভেবে দেখো,তাহলে তুমি আমার কথাটার মানে বুঝবে। তোমার কাছে যথেষ্ট সময় আছে তুমি নিজেকে সময় দেও এন্ড দ্রুত আমার সাথে এডজাস্ট হওয়ার চেষ্টা করো।”

এ বলে উনি অপরপাশে শুয়ে পড়লেন।কয়েক সেকেন্ড পর আমিও শুয়ে পড়লাম।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছি কিন্তুু তবুও ঘুম আসছে না।উনিও বারবার এপাশ-ওপাশ করছেন মনে হয় উনার ও ঘুম আসছে না।একটুপর উনি হুট করে উঠে গেলেন,বিছানায় বসে আমার দিকে ফিরে বললেন,,,”আচ্ছা,ওরা এখন কী করছে বলো তো?”

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম,,যার অর্থ ওরা মানে কারা?

উনি একটু বিরক্ত হয়ে বললেন,,,”আরে রেদোয়ান আর রেশমি..!!আজকে ওদের বাসর রাত তাই না?”

এটুকু শুনতেই আমার চোখ বড় হয়ে গেলো।উনি অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বললো,,,”চলো,,আমরা দেখে আসি ওরা কী করছে?দরজার নিচে তো ফাঁক আছে তাই না?”

এটা বলেই উনি খুশিতে গদগদ হয়ে নামতে লাগলেন।আর এদিকে উনার কথা শুনে আমার চোখ আরো বড় হয়ে গেলো,,আমি বড় বড় চোখ করে বললাম,,,”ছিঃ,ছিঃ,,,নাউজুবিল্লাহ..!!”

আমার কথা শুনেই উনি থেমে গেলেন।পিছনে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বললেন,,”ওহ্,,তাহলে তুমি কথা বলতে পারো?”

চলবে???