ভুলিনি তোমায় পর্ব-২২

0
3114

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :২২

“ভাবতে পারো,,আমার দুইদিনের গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে তোমার এমন লাগতেছে,,তাহলে তোমার দুইবছরের বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনে আমার কেমন লেগেছে??”

উনার কথা শুনে আমি মুখ তুলে উনার দিকে তাকালাম।উনার চোখের দিকে তাকাতেই আমি কেপে উঠলাম।কেমন যেনো উনার চাহনী!!আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম সত্যিই তো,,আমার এমন কেনো লাগছে?

উনি হুট করে চোখ সরিয়ে আমার গলায় মুখ গুজে বললেন,,”কী হলো বলছো না কেনো?”

আচমকা এমন হওয়াতে আমি থমকে গেলাম ।সঙ্গে সঙ্গে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জামা খামছে ধরলাম।শরীরে কেমন অদ্ভুদ শিহরন বইতে লাগলো। আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,মনে হচ্ছে কেউ মুখ চেপে ধরে রেখেছে। আমি কাপতে লাগলাম,,আমি সরে যেতে চেয়েও পারলাম না।কারন উনি আমাকে উনার বাহুবন্ধনে আটকে রেখেছেন।নড়তেও পারছি না আবার সরতেও পারছি না,,আমার অস্তিরতা বেড়ে যেতে লাগলো।আমি কাপা কাপা গলায় অস্ফুট সুরে বললাম,,”ন্ না।আপনাকে আমার ভালো লাগে তবে ভালোবাসি না।সব মেয়েরা এমনই স্বামীকে ভালোবাসুক আর না বাসুক তবে তাদেরকে অন্যকারো সাথে কল্পনা করতে পারে না।তা্ তাই আমিও আপনাকে,, ”

আমার কথার মাঝে উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,”আমি কী একবারও বলেছি তুমি আমাকে ভালোবাসো???”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,”না”

উনি স্বাভাবিকভাবেই বললেন,,””তাহলে তুমি এটা কেনো বলছো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। লিসেন,তুমি আমাকে ভালোবাসো আর না ই বাসো সেটা আমার জানার বিষয় নয়।তুমি আমাকে ভালোবাসবে এ শর্তে তো আর তোমাকে ভালোবাসি নি,তাই না?”

আমি মাথা নাড়াতেই উনি আবারো বলে উঠলেন,,”তাহলে কেনো বললে?”

এবার আমি চুপ করে গেলাম,কিছু বললাম না।হঠাৎ উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন।আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম।উনি ছেড়ে দিতেই আমি বুকে হাত দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগলাম।মনে হচ্ছিলো আর একটু সময় ওভাবে থাকলে আমি মরেই যেতাম। এ কেমন অনুভূতি ছিলো??
______________________

রুম থেকে এসে দেখি,,উনি উনার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে বসে বসে গল্পগুজব করতেছেন।উনার পাশে বসেছেন উনার এক্স গার্লফ্রেন্ড আর ওপর পাশে বসেছেন আরেকজন মেয়ে।আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে,,,দেখেছো কি লুচু মেয়েদের মাঝখানে বসে আছে।ওইপাশে বসলে কী হতো?আর কী জায়গা ছিলো না?সব ঠিক আছে কিন্তুু ওই মেয়েটার পাশে কেনো বসেছে?
মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো।আমি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই একজন বলে উঠলো,,”আরে ভাবী,কই যাচ্ছেন?আমাদের সাথে বসেন একটু আড্ডা দেই।তাছাড়া আপনি তো আমাদের চিনেনও না, আসেন পরিচিত হই।”

আমি কোনোরকম হেসে বললাম,,”না,না।আসলে এখানে জায়গা নেই তো আর ভাবলাম আমি আসলে হয়তো আপনাদের ডিস্টার্ব হবে,তাই চলে যাচ্ছিলাম।”
শেষের কথাগুলো দাত চেপে বলে উনার দিকে তাকালাম। এতে উনার কোনো হেলদোল দেখা গেলো না উনি আগের মতো বসে রইলেন।এতে যেনো আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো।

–“আরে ভাবী,কী বলেন,ডিস্টার্ব হবে কেনো?বরং আমরা খুশি হবো।আপনি বসেন।এই মিথিলা সর তো ভাবীকে বসতে দে।”

–“আমি উঠবো কেনো?টেবিলের ওখানে বসতে বল।”

নেহা আপু মিথিলা না তিথিলাকে চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন,,”এসব কী মিথি?”
মেয়েটি নড়ছে না দেখে নেহা আপু আমাকে টেনে নিয়ে এহসানের অপর পাশে বসিয়ে দিলেন। আমি এহসানের দিকে একবার ট্যারা চোখে তাকিয়ে অপর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।

নেহা আপু দাড়িয়ে হাসি মুখে হাত নাড়িয়ে বললেন,,”সো গাইজ,,সবাই ভাবীর সাথে পরিচিত হও।প্রথমে আমিই শুরু করি,হ্যালো ভাবী,আমি শাহনাজ শিকদার নেহা।তুমি আমাকে নেহা বলেই ডাকতে পারো,আর আমি হলাম তোমার বরের বেস্ট ফ্রেন্ড।”

সবাই এক এক করে বলতে লাগলেন।সবার শেষ মিথিলার পালা আসলো। উনি স্টাইল করে বললেন,,”আমার পরিচয় আর কী দিবো?সবাই আমাকে এক নামেই চিনে।আমার নাম মিথিলা রহমান।সবাই মিথিলা বললেও এহসান আমাকে মিথি বলে ডাকে।বাট তুমি মিথিলাই বলবে,ওকে?”

আমি কোনোরকম দাত চেপে বললাম,,”জ্বি,,মিথিলা আপু বলবো। আপনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়।তাছাড়া আমার এতো শখ নেই আপনাকে মিথি -তিথি ডাকার।”
শেষের কথাটা আস্তে বলায় উনার কেউ বুঝলেন না।মিথিলা কপাল কুচকে বললো,,”সরি,শেষের কথা টা কী বললেন?”

আমি জোরপূর্বক হেসে বললাম,,”কই,কিছু না তো।”

মিথিলা বা হাত দিয়ে চুল নাচিয়ে বললো,,”ওহ্, বাই দ্যা ওয়ে আমি কিন্তু এহসানের গার্লফ্রেন্ড ছিলাম।”

মিথিলা কথা শেষ করতেই সবাই শান্ত হয়ে গেলো।একজন অপরজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলেন,তারপর সবাই মিথিলার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে ইশারায় চুপ করতে বললেন।
নেহা আপু মেকি হেসে বললেন,,”আরে ওর কথা শুনো না।ওহ সবসময় এমন মজা করে,,আসলে একবার খেলার সময় মাহিম ডেয়ার দিয়েছিলো যে মিথিলাকে দুইদিনের জন্য এহসানের গার্লফ্রেন্ড হতে হবে।তাই ও বলেছিলো।তুমি কিছু মনে করো না।”

আমি হেসে বললাম,,”না,না আপু কিছু মনে করবো কেনো।আমি উল্টো ভাবতেছি মিথিলা আপু কত ভয়ংকর হলে উনাকে ডেয়ার হিসেবে ইউস করা হয়েছে।নিশ্চয়ই উনি অনেক ইরিটেটিং অথবা বোরিং টাইপের তাই তো এহসানের জন্য ডেয়ার হিসেবে আপুকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে হয়েছে।না জানি বেচারা এহসানের কী অবস্থা হয়েছিলো???”

আমার কথা শুনতেই সবাই অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো শুধুমাত্র মিথিলা আর এহসান ছাড়া।মিথিলা তো আপু রেগে মেগে বোম।আমি আড়চোখে এহসানের দিকে তাকতেই দেখলাম উনি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,উনার সাথে চোখাচোখি হতেই আমি ভেংচি কাটলাম।উনি কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন তাপর উনিও হেসে দিলেন।উনাকে হাসতে দেখে আমি মুখ বাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে গেলাম।

নেহা আপু তো হেসে কুটিকুটি হয়ে বললো,,”একদম ঠিক বলেছেন ভাবী।আপনি আন্দাজে তীর মারলেও , ঠিক জায়গাতে নিশানা লেগেছে।মিথিলা তো ড্রাকুলাকুইন..!!” মিথিলা আপু রেগে উঠে গিয়ে নেহা আপুকে সোফার কুশন দিয়ে মিছিমিছি মারতে লাগলেন।

এরপর উনারা সবাই মিলে প্রায় দু/তিন ঘন্টা কথাবার্তা বলেছিলেন।সবাই অনেক আলাপ-আলোচনা করে বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন।উনাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিলো উনাদের সবার ফ্রেন্ডশিপ কীভাবে হলো।উনারা কে কেমন সব বললেন,,একটা কথা শুনে অবাক হলাম,এহসান নাকি উনাদের মধ্যে বেশি ব্রিলিয়েন্ট,উনি নাকী খুব গম্ভীর। আবার আরেকটা কথা শুনে তো খুব হাসি পেয়েছিলো,মিথিলা আপু আর সোহান ভাইয়া নাকী ফেলটু টাইপ স্টুডেন্ট। দু -দুবার নাকী উনারা ফেল করেছিলেন।একথা শুনে আমার এতো হাসি পেয়েছিলো বলার মতো না।কেনো জানি মিথিলা আপু ফেল করেছিলেন এটা শুনে খুব হাসি পেয়েছিলো।আমি তো ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে রেখেছিলাম।

উনারা চলে যেতেই রুমে এসে অনেকটা শব্দ করে হাসতে লাগলাম।মনে মনে একটা কথাই আওড়াতে লাগলাম,মিথিলা আপু ফেলটু টাইপ স্টুডেন্ট। এর ভেতর উনি সবাইকে বিদায় দিয়ে রুমে আসলেন।আমাকে এভাবে হাসতে দেখে উনি অবাক হয়ে গেলেন,, মনে মনে নিশ্চয়ই ভাবতেছেন আমি হয়তো পাগল হয়ে গেছি।

উনি আমার সামনে এসে ভ্রু কুচকে বললেন,,”কী হলো, তুমি হাসতেছো কেনো?”

আমি দাত কেলিয়ে বললাম,,”আপনার জিএফ নাকী দু-দুবার ফেল করেছে?”

উনি কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না,, আমার দিকে ট্যারা চোখে তাকিয়ে বললেন,,”এত হাসার কিছু নেই।দুইদিন পর লোকে এটা বলবে যে আমার বউও ফেল করেছে..!!”

উনার কথা শুনে আমার মুখটা চুপসে গেলো।আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,”কী, আপনার মনে হয় আমি ফেল করবো?”

উনি এবার হাসতে হাসতে বললেন,,”এতে মনে হওয়ার কী আছে,আমি তো শিউর তুমি ফেল করবে।কারন তোমাকে তো আমি পড়িয়েছি তাই না?তো আমি জানি না তুমি কেমন টাইপের স্টুডেন্ট।”

উনার কথা শুনে আমার রাগ টা দ্বিগুন হয়ে গেলো।আমি উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। আমি কাঁদোকাঁদো হয়ে বললাম,,”আপনি আপনার এক্সের জন্য আমাকে এ কথা বললেন??”

উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,,”আমি কারো জন্য বলি নি,,যা সত্য তা বলেছি।ওয়েট তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো?আচ্ছা তাহলে বলো তো,ইংরেজী ২য় পত্রে আট নম্বরে কী আসে?”

উনার কথা শুনে আমি চোখ এদিক-ওদিক করে ভাবতে লাগলাম,,”আট নম্বরে কী আসে?”কবে বই ধরেছিলাম সেটা তো মনেই নেই।আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম,উনি এটা দেখে দাত বের হেসে আমাকে ভ্রু নাচিয়ে বললেন,,”কী?মনে পড়ছে না?”

আমি এবার কান্নামাখা কন্ঠে বললাম,,”আমি জানি তো আপনি ইচ্ছে করে এমন কঠিন প্রশ্ন করেছেন।আপনি সবসময় এমন করেন,,আপনার কাছে পড়তে যাওয়ার সময়ও আপনি এমন করতেন আমাকে কঠিন কঠিন পড়া দিতেন আর কেয়া আপুকে সহজ সহজ পড়া দিতেন।”

উনি অবাক হয়ে বললেন,,”এটা কঠিন প্রশ্ন?”

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,,”তা,নয় তো কী?আপনি আমাকে এতো সাবজেক্ট থাকতে ইংরেজী থেকেই কেনো প্রশ্ন করেছেন?”

উনি বোকার মতো আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলেন। একটা দীর্ঘবাস ফেলে বললেন,,”যারা পারে তাদের যে কোনো বিষয় থেকে প্রশ্ন করলে পারে।আসল কথা হচ্ছে তুমি পারো না, তাই এখন এ বাহানা দিতেছো।আচ্ছা যাও তোমাকে একদম সহজ প্রশ্ন করবো,তাও বাংলা থেকে।এটা বলো গীতাঞ্জলী কে লিখেছেন?”

আমি বললাম,,”এটা তো খুব সহজ,আমি তো এক চুটকিতেই বলতে পারবো।আপনি দাড়ান আমি একটু ভেবে নেই।”

উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন,,”আমি দাড়িয়েই আছি, তুমি ভাবো।”

আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে লাগলাম,একটুপর নখ কামড়াতে লাগলাম।কয়েক মিনিট ভাবার পরেও মনে পড়লো না।আমি উনার দিকে তাকতেই দেখলাম উনি ঠোঁট কামড়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতেছেন।উনার হাসি দেখে আমি রেগে গেলাম,,রেগে উনাকে বললাম,,,””আপনি তো জানেন ই আমি বাংলাতে কাঁচা,তাও বাংলা থেকে প্রশ্ন করলেন।আমি জানি তো আপনি ইচ্ছে করেই এমন করেছেন,যাতে আমি না পারি তাই না?”

উনি এবার জোরেই হেসে দিলেন।উনাকে হাসতে দেখে আমার গা জ্বলে উঠলো।আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি কেনোরকম হাসি থামালেন। উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে হেসে বললেন,,”আচ্ছা তুমিই বলো,তোমাকে কোন সাবজেক্ট থেকে প্রশ্ন করবো?”

আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বললাম,,”হয়েছে,হয়েছে আপনার মিথিবেবী সব পারে, আমি কিছু পারি না।যান,আপনার মিথিলার কাছে যান।”

উনি আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড আবুলের মতো তাকালেন,,তারপর হু হা করে জোরে জোরে হাসতে লাগলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি পেট চেপে হাসতে লাগলেন। আমি নাক ফুলিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
.
.
চলবে???