ভুলিনি তোমায় পর্ব :২৫(প্রথম অংশ)

0
3325

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :২৫(প্রথম অংশ)

“জানেন আমার কোচিং এর টিচার টা না দেখতে সেই।কি বলবো,একদম ফাটাফাটি।উনাকে দেখলেই আমার প্রেম প্রেম পায়।মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে উনার গালে টুস করে একটা চুম্মা দিয়ে দেই।
আমি তো ভেবেছি আপনাকে ওই ডাইনীর গলায় ঝুলিয়ে উনাকে বিয়ে করে ফেলবো।”

কথাটা বলেই অতিরিক্ত লজ্জাভাব নিয়ে উনার দিকে তাকতেই চমকে গেলাম।
উনি হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছেন।

—“কী হলো থামলে কেনো?বলো আর কী করতে মন চায়?”

উনার ধমকে আমি কেঁপে উঠলাম।আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।উনার এগিয়ে আসা দেখে আমি পিঁছাতে লাগলাম। উনি একদম আমার কাছে চলে এসেছেন অথচ আমি আর পিছনে যেতে পারছি না কারন আমার পিঠ পিঁছনের দেওয়ালেরর সাথে ঠেকে আছে।

আমি একটু ভয় পেয়ে উনার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই উনি আমার মুখের সামনে আসা চুলগুলো পিছনে গুজে দিলেন।

—“বলো না,তোমার আর কী কী করতে মন চায়?”

উনার শান্তশিষ্ট কন্ঠ শুনে আমার এতসময়ের ভয়গুলো চলে গেলো,আমি ফুরফুরে কন্ঠে বললাম,,”আমার তো উনাকে আরো কত কিছু করতে মন চায়,এখন কোনটা রেখে কোনটা বলবো?জানেন আজকে তো আমি ঠিক করেছি আমার প্রিয় সাদা কালারের জামা টা পরে যাবো এই আশায় যে উনি একটু ইম্প্রেস হবে।”

আমার কথা শেষ হতেই উনি আমার গলায় জোরে কামড় বসিয়ে দিলেন।আমি আহ করে চিৎকার করতেই উনি একহাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলেন। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো,গলাটা খুব জ্বলা করছে।উনি একটুপর আমাকে ছেড়ে দিলেন। গটগট করে গিয়ে আলমারি খুলে আমার সাদা জামা টা বের করলেন।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে টেবিলের পাশে যেতে লাগলেন।আমি গলায় হাত দিয়ে দৌড়ে গেলাম উনাকে আটকাতে তার আগেই উনি উনার কাজ শেষ করে বিশ্ব জয়ের হাসি দিলেন।

—“আপনি এটা কী করলেন?এটা আমার প্রিয় জামা ছিলো..!!” কথাটা বলে আমি জামা টা উনার হাত থেকে নিয়ে মুছতে লাগলাম আর কান্না করতে লাগলাম।

–“আমিও দেখি এবার কীভাবে তুমি এ জামা পরে যাও?”

—“তাই বলে আপনি আমার এত সুন্দর জামা তে চা ঢেলে দিবেন?আপনি জানেন এটা আমার কত প্রিয়।”

উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বিছানায় বসে পড়লেন আর এদিকে আমি জামার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করতে লাগলাম।একে তো গলায় ব্যাথা করছে তার উপর জামা সব মিলে আমি রাগে,দুঃখে জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম।

—“এরপর যদি দেখেছি বা শুনেছি যে এসব জামা-কাপড় পড়ে অন্য ছেলেদের সামনে গিয়েছো তাহলে মেরে তোমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবো।এখন থেকে সবসময় বোরকা পড়ে বের হবে।”

আমি নাক ফুলিয়ে, চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালাম।ইচ্ছে করছে গলা টিপে মেরে ফেলি।

—“এসব কী?আপনি এমন সাইকোদের মতো ব্যবহার করে কী বুঝাতে চান?হ্যা, কী বুঝাতে চান?আপনি কি মনে করেন এসব করলে আমি মনে করব আপনি আমাকে কত ভালেবাসেন তাই এমন করেছেন?লাইক সিরিয়াসলি?এসব ফালতু চিন্তা ভেবে থাকেন তাহলে মাথা থেকে বাদ দিয়ে দেন।”

—“তোমার যদি মনে হয় আমি সাইকোগিরি করেছি আর এসব তোমাকে ইম্প্রেস করার জন্য করেছি,তাহলে হ্যা আমি এজন্যই করেছি,হ্যাপি?”

–“আপনি,আপনি, আপনি,,ধ্যাত।”

বলেই রাগে কান্না করতে করতে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলাম।

১০ মিনিট থেকে জামা ঘষতেছি অথচ দাগ উঠার নাম নেই,এদিকে আমার চোখের পানি, নাকের পানি সব এক হয়ে যাচ্ছে। নাক টানতেছি আর জামা ঘষতেছি,কত শখের জামা।

কোনোরকম ধুয়ে বারান্দায় নিয়ে মেলে দিলাম।জামাটার দিকে তাকাতেই আমার বুক ফেটে কান্না আসতেছে।উনি আমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বললেন,,”এই, তুমি এই সামান্য জামার জন্য এভাবে কান্না করছো কেনো?”

–“হ্যা,এটা এতই সামান্য যে এটার মূল্য কেউ দিতে পারবে না।”

–“আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি তুমি সবসময় এ জামা টা নিয়ে ওভার পসেসিভ।কারন টা কী,,তোমার এত কষ্ট কেনো হচ্ছে?”

–“এটা আমাকে আমার বাবা দিয়েছিলোতাই তো এত কষ্ট হচ্ছে।আমার বাবার হাতের স্মৃতি ছিলো। কত শখ করে বাবা আমাকে ঈদের দিন কিনে দিয়েছিলো।আমি ভেবেছি প্রথম দিন এ জামা টা পরে যাবো আর আপনি কী করলেন?”

আমার কথা শুনার সাথেই উনার চেহারার রং বদলে গেলো।হাজারো অনুতপ্ততার রেশ ফুটে উঠলো। উনি চোখ বড়বড় করে জামার দিকে তাকালেন।

উনি করুন কন্ঠে নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন,,”আই এম সরি।আমি সত্যি জানতাম না।আসলে তুমি তখন ওসব বলায় আমার রাগ উঠে গিয়েছিলো।আমি জানি না আমার কি হয়েছিলো,আমি কেনো যে এমন করলাম আমি নিজেও বুঝতে পারতেছি না। সরি,প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও আমি বুঝি নি।”

আমি উনার কথার জবাব না দিয়ে রুমে চলে আসলাম। গলাটা ভীষণ জ্বালা করছে,আয়নার সামনে গিয়ে গলারা দেখতেই আমি চমকে উঠলাম।কেমন কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে।আমও নাক,মুখ ফুলিয়ে চোখ ছোট করে উনার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।

♣♣

সকাল ৮:২০।আমি রেডী হয়ে বের হয়ে আসলাম।ফাইল-পত্র নিয়ে দরজা দিয়ে বাহির হচ্ছিলাম তখনই উনি বলে উঠলেন,,,

–“আরে কই যাচ্ছো, নাস্তা করবে না?”

আমি কিছু বললাম না,আসলে উনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।উনার উপর আজ আমার প্রচুর অভিমান হয়েছে,আমি জেদ দেখিয়ে দরজায় দাড়িয়ে রইলাম।

–“দেখো যা হয়েছে তার জন্য তো আমি ক্ষমা চেয়েছি।আমার ভুল টা তো স্বীকার করেছি। আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো, কিন্তুু খাবারের সাথে কী হয়েছে?খাবার কেনো খাবে না?”

আমি কিছু না বলে উনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালম।উনি ভ্রু কুচকে বললেন,,”এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। তুমি মনে করো না আমি ভয় পাবো।তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার খাওয়ার সাথে আমি কখনও কম্প্রোমাইজ করি না,সো চুপচাপ এসে খেয়ে নেও নাহলে ভালো হবে না।”

আমি রাগে ফোসফোস করতে করতে খেতে বসলাম।কারন আমি জানি দুনিয়া উল্টে গেলেও উনি আজ আমাকে খাইয়ে ছাড়বেন।উনার এ আরেকটা বদ অভ্যাস, যা ই হয়ে যাক না কেনো আমাকে টাইম মতো খাওয়ানো টা উনার ঠিক থাকে।আর আজ তো পরীক্ষা, উনি যে আমাকে খাওয়ানো ছাড়া নিয়ে যাবেন না খুব ভালো করেই জানি।চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম।উনিও সবকিছু ঠিকঠাক করে বের হলেন।আসার সময় ফুফিদের সবাইকে বলে আসলাম,ফুফি আমাকে ১০০০ টাকা দিয়েছেন যদিও আমি অনেকবার না করেছি তবুও উনি শোনেন নি,জোর করে দিয়ে দিয়েছেন।

কলেজের সামনে আসতেই উনি হুন্ডা থামিয়ে দিলেন।আমি নামতেই উনি বলে উঠলেন একপাশে দাড়াতে।আমিও চুপচাপ একপাশে দাড়িয়ে গেলাম,কারন আমি এখন অযথা সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না। উনি হুন্ডা সাইড করে রেখে আমার কাছে আসলেন।

–“আমি জানি, তুমি আমার উপর রেগে আছো,আর রাগ করাটাও স্বাভাবিক। প্লিজ মাথা ঠান্ডা করে সব প্রশ্ন বুঝে পরীক্ষা দিও,তুমি তো আবার বাংলাতে একটু দূর্বল।আশা করি আমি যা পড়িয়েছি ওগুলোই আসবে,তাও একটু চেষ্টা করে সব প্রশ্নের উত্তর দিও।তুমি খুব ভালো করেই জানে তোমার রেজাল্টের উপরেই আমাদের ভবিষ্যৎ। প্লিজ সব প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিও।আর হ্যা আমি ওই জায়গাতে অপেক্ষা করবো,পরীক্ষা শেষ করেই ওখানে চলে এসো। যাও..!!”

আমি উনার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই উনি আবারো বলে উঠলেন,”শুনো..!!”

আমি ঘুরে উনার কাছে আসতেই,উনি চারপাশ এক পলক চোখ বুলিয়ে আমার কপালে একটা কিসি দিয়ে দিলেন।

উনার এহেন কান্ডে আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।এদিকে উনি উনার কাজ শেষ করে হাওয়ার মতো চলে গেলেন।আর আমি আহাম্মক এর মতো দাড়িয়ে রইলাম।আমার মাথায় শুধু একটা কথা ঘুরতেছে,”এটা কী ছিলো?”
.
.
.
চলবে???