ভুলিয়া না যাইও পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
342

#ভুলিয়া_না_যাইও
#মম_সাহা

অন্তিম পর্ব

(৫)
সময়টা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি, শীত তখন পুরো শহরকে নাস্তানাবুদ করতে ব্যস্ত। যার যার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। ঝাঁকে ঝাঁকে সবাই তৈরী হচ্ছে গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। সেই সবার মাঝে আছে স্মৃতিদের পরিবারও। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা শেষ। অতঃপর তারা বায়না জুড়ে বসলো গ্রামে যাওয়ার। জয়া এবং তার স্বামী হরিস বসু না পেরে ছেলেমেয়েদের ইচ্ছাকে সমর্থন জানালো। গোছগাছ শুরু করলো গ্রামে যাওয়ার। ভীষণ আহ্লাদে তোরজোর। আগামীকাল সকাল ন’টার ট্রেন। একটা চাপা উত্তেজনায় সারারাত ঘুম হলো না স্মৃতির। একদিকে গ্রামে যাওয়ার খুশি অন্যদিকে অণুভ’দাকে ছেড়ে এতদিন থাকতে হবে এটার দুঃখ মিলেমিশে একাকার। জীবনটা সেই রাতেও তার কাছে কল্পনার চেয়েও বেশি রঙিন মনে হয়েছিল।

প্রকৃতিতে তখন কাক ডাকা ভোর। অথচ শীতের অলসতার কোমল ভাব ছুঁয়ে আছে কাকেদের তাই তো তারা ডাকছে না, একদম নিশ্চুপ। আচমকাই ঘুম ভেঙে গেলো স্মৃতির। অণুভ’দা কে গ্রামে যাওয়ার কথা বলা হয় নি। মানুষটা দু’দিন যাবত কিছু নিয়ে ব্যস্ত, এলাকাতেও তাকে তেমন দেখা যায় না। আজও থাকবে কিনা সন্দেহ, তবুও স্মৃতি উঠে পড়লো বিছানা ছেড়ে। শীতের ভারী চাদরটা জড়িয়ে নিলো শরীরে। পা টিপে টিপে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। শীতের আকাশে তখনও অপ্রয়োজনীয় আঁধার। স্মৃতি একবার ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। সময় মাত্র পাঁচটা সাতচল্লিশ। স্মৃতি সব অনিশ্চিয়তাকে পিছে ফেলে বাড়ির সামনের রাস্তায় উঠে গেলো। হেলতে দুলতে কিশোরী মনের আবেগ দুলিয়ে সে পরিচিত রাস্তা পিছে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে আসতেই রহমান চাচার টং দোকানটা চোখে পড়লো তার। দোকান খোলা, দোকানের সামনে কাঠের বেঞ্চিটা তে বসে আছে একজন যুবক। ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপে তার শীতল ওষ্ঠের ছোঁয়া। মানুষটাকে দেখতে পেয়েই হেসে ফেললো স্মৃতি। ছুটে গেলো তার দিকে। কণ্ঠ তার উচ্ছ্বাসিত, উপচে পড়া আনন্দ নিয়ে বললো,
“অণুভ’দা, কেমন আছো?”

স্মৃতির আকষ্মিক আগমনে অবাক হলো অণুভ। চায়ের কাপে ছোটো চুমুক দিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
“ভালো আছি। তোর খবর কী? এত সকালে রাস্তায় কেন?”

“এইতো একটু হাঁটতে বের হয়ে ছিলাম।”

আমতা-আমতা করে একটু মিথ্যে উত্তরের আশ্রয় নিলো স্মৃতি। অণুভ রহমান চাচার পানে তাকিয়ে হাঁক ছেড়ে বললো,
“চাচা, আরেক কাপ চা দিও তো, কদমের জন্য।”
“দিতাছি চাচা। কদম মা, বও একটু।”

রহমান চাচার কথার পরপরই বসলো কদম। কিছুক্ষণ রাস্তার এধার ওধার তাকিয়ে বাক্য সাজালো নিজ মনে। অতঃপর ধীর কণ্ঠে বললো,
“এই কয়েকদিন অনেক ব্যস্ত ছিলে যে অণুভ’দা? কোনো দরকারী কাজ নাকি?”

“হ্যাঁ, কিছুটা দরকারী। অনেকদিন ধরে প্রসেসিং চলছিলো, অবশেষে কাজটা সম্পন্ন হলো। তোদের বাড়ি যেতামই দু একদিনের মাঝে এটা বলতে।”

“ওহ্, কী কাজ?”

স্মৃতির প্রশ্নে অণুভ চায়ের কাপটা বেঞ্চিতে রাখলো। ধীর কণ্ঠে বললো,
“গন্তব্য বদলের কাজ।”

স্মৃতির মাথায় হয়তো বোধগম্য হলো না কথা খানা। সে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অণুভ’দার দিকে। তন্মধ্যেই তার চা চলে এলো। সাথে চাপা পড়ে গেলো কিছু কৌতুহলী প্রশ্ন। চা খেতে খেতে উচ্ছ্বাসিত মনে স্মৃতি জানালো তার বেড়াতে যাওয়ার কথা। অণুভ শুনলো সব মনযোগ সহকারে। যতই রাগ দেখাক, মারুক, বকুক কিন্তু স্মৃতির কথার মনযোগ শ্রোতা একমাত্র অণুভ। সব কথা এতটা মন দিয়ে শুনবে যেন এ কথা গুলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কথা। স্মৃতি কথা বলতে বলতে একসময় খেয়াল করলো অণুভ’দা তার দেওয়া সোয়েটার টা পড়ে নি এ অব্দি। সে এতদিন তা গুরুত্ব না দিলেও আজ সে গুরুত্ব দিলো। বেশ গম্ভীর হয়ে বললো,
“তুমি আমার দেওয়া জ্যাকেট টা পড়ো না কেন?”

স্মৃতির কথায় অণুভ নিজের শরীরের দিকে তাকায়। অতঃপর বোকা হেসে বলে,
“মনেই থাকে না। অনেক সুন্দর তো, মনে হয় সাজিয়ে রাখি। আচ্ছা, একটা বিশেষ দিনে পরবো নাহয়।”
“মনে করে পড়ো কিন্তু, খুব যত্নে কিনেছি।”
“এসব কেন করতে যাস, কদম? তোরা ছোটো মানুষ।”
“তুমি তো আমাদের আপন মানুষ। অতটুকু করলে কী সমস্যা?”

অণুভ জবাব দেয় না, কেবল মুচকি হাসে। মেয়েটার সাথে কথায় পারা যায় না। বেশ বুদ্ধিমতী। তারপর আরও কিছুটা ক্ষণ তারা গল্প করে অতঃপর যে যার মতন বাড়ি ফিরে যায়।

বাড়ি ফিরতেই জয়ার মুখোমুখি হয় স্মৃতি। মায়ের ভরাট কণ্ঠে সন্দিহানী সুর। আড়চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় ছিলিস শুনি?”

“মা, একটু হাঁটতে বেরিয়ে ছিলাম।”

“কাকে বলে গিয়েছিলি? এত সকালে কে হাঁটতে যায় শুনি? আর এই জীবনে তো ডাক ছাড়া সকালে উঠিস নি, আজ উঠেছিস কীভাবে?”

মায়ের একের পর এক প্রশ্নের দাপটে কথার স্রোত হারায় স্মৃতি। অসহায় চোখে এখানে ওখানে তাকাতেই সেখানে উপস্থিত হয় জীবু। বিজ্ঞের মতন গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“আমিই তো কদমকে ডাক দিয়ে ছিলাম মা, হাঁটতে যাবো বলে। কিন্তু তোমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠে যে বাথরুমে গেলো ওর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমি আবার ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কেউ বাথরুমে এত সময় লাগায় বলো তো?”

ভাইয়ের টিটকারি করা কথায় খেপে গেলো স্মৃতি। তেড়ে এসে টেনে দিলো কান। এক কথা, দু’কথায় লেগে গেলো তুমুল ঝগড়া। জয়া বিরক্ত হয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। দুই ভাই-বোন ইচ্ছে মতন ঝগড়া করে একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো। জীবু হাঁপিয়ে ওঠা কণ্ঠে বললো,
“যা, তুই জিতেছিস। তাও এত চিৎকার করিস না , আমার কানের পোঁকা নড়ে গেছে। তোরে বাঁচানোর জন্য সকাল সকাল মিথ্যা বললাম, আর তুই কিনা ঝগড়াই শুরু করে দিলি? তুই বাথরুমে গিয়ে একঘন্টা থাক, খা আমার কী!”

স্মৃতি মুখ ফুলিয়ে চুপ করে থাকলো। জীবুর মিটমিটিয়ে হাসিটা চোখে পড়তেই আবার খেপে উঠলো সে। জীবু তাকে বাথরুমে খেতে বলেছে? কত অসহ্য ছেলেটা! দ্বিতীয় দফায় আরেকবার লাগলো ঝগড়া। কে কাকে বলে জিততে পারে, সে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত দু’জন।

(৬)

কথা অনুযায়ী তারা ন’টার ট্রেন ধরলো। উচ্ছ্বাসিত মনে পাড়ি জমালো গ্রামে। হাসি-আনন্দে কেটে গেলো গ্রামের দিন দুই। অন্যান্য কাকা-জেঠারাও পরিবার নিয়ে গ্রামে এসেছে। জীবু আর স্মৃতির আনন্দ তো ধরে না। হৈচৈ করে কাটিয়ে দিলো দিন। তিন দিনের দিন ঘটলো বিপত্তি, স্মৃতির ঠাম্মি হুট করে অসুস্থ হয়ে গেলেন। আনন্দে ভাঁটা পড়লো। সেই আনন্দকে দুঃখে রূপান্তরিত করে বিদায় নিলেন বৃদ্ধা। এমনেতেও দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। তীব্র মন খারাপে গুটিয়ে গেলো সবাই। বাড়ির সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটা আর নেই। কেঁদেকেটে ছেলেমেয়ে গুলো নাজেহাল অবস্থা করলো। ঠাম্মিকে যে বড়ো বেশি ভালোবাসতো। স্মৃতি আর জীবু প্রায় মায়ের কাছে আবদার করতো ঠাম্মিকে তাদের সাথে রাখার জন্য। কিন্তু জয়া বরাবরই নাকচ করতেন। তার ভাষ্যমতে শহরে তার শাশুড়ী খাপ খাওয়াতে পারবে না। আবার একসাথে থাকলে সম্পর্ক নষ্ট হবে। আরও নামী-দামী অজুহাত। শহুরে বৌদের এ আর নতুন কী! শহুরে জীবন যাপনে, শ্বশুর শাশুড়ী তাদের কাছে নিত্যান্তই সেকেলে আসবাবপত্র। তা যত ঢেকে বা আড়ালে রাখা যায়, ততই নিজেদের আধুনিকতার প্রমাণ দেওয়া যায়।

মৃত্যুর অশৌচ, নিয়ম-নীতি পালন করে শহরে ফিরতে স্মৃতিদের সময় লাগলো পঁচিশ দিন। পাঁচ দিন থাকার কথা ছিলো সেখানে সব ঝামেলা চুকিয়ে আসতে আসতে পঁচিশ দিনের ধাক্কা পরে গেলো। ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে ততদিনে নতুন সালের আগমন। স্মৃতি আর জীবুর আবার নতুন ক্লাসে ভর্তি হওয়ার তোরজোর শুরু হলো। শহরে ফিরে আবার নিজেদের জীবন ধারণের ব্যস্ততায় বন্দী হলো তারা। কিন্তু ঠাম্মি মারা যাওয়ার পর থেকে কিছুটা চুপচাপ হয়ে গেছে স্মৃতি। আকস্মিক বিদায় মানতে পারে নি বোধহয়।

গ্রাম থেকে ফিরে আসার পর চতুর্থ দিনের মাথায় স্মৃতির সকল হাসি কেড়ে নিলো আকস্মিক আরেকটা ঘটনা। সেদিন ছিলো সোমবার। বিকেল চারটে বাজে। স্মৃতি বারান্দায় বসে তার খরগোশের সাথে কথা বলছিলো। আচমকা কোথা থেকে যেন ছুটে এলো জীবু। অতি উত্তেজনায় তার শ্বাস প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ভাইকে এতটা বিচলিত দেখে ফট করে উঠে দাঁড়ালো স্মৃতি, ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
“কী হয়েছে জীবু? কী হয়েছে ভাই? কেউ কিছু বলেছে তোকে? এমন করছিস কেন? কী হয়েছে সোনা? বল আমায়।”

জীবু তখনও নিজেকে ধাতস্থ করতে পারছিলো না। তার হাত-পাও কাঁপছিল আশ্চর্যরকমে। স্মৃতি প্রায় ভয় পেয়ে গেলো। ভাইকে আদরে ভরিয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে, কখনো বা পিঠে হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,
“কী হয়েছে ভাই? মাকে ডাকবো?”

“দিদি, তুই আমার সাথে এক্ষুণি একবার চল। একটা ঘটনা ঘটে গেছে।”

স্মৃতির বুকে হঠাৎ করে মোচড় দিয়ে উঠলো। জীবু কখনো তাকে দিদি ডাকে নি। সবসময় কদম বলে ডেকেছে, তবে আজ ডাকের পরিবর্তন কেন? নিশ্চয় ভয়ঙ্কর কিছু হয়েছে। স্মৃতি আর প্রশ্ন করলো না। ভালো করে ওড়নাটা জড়িয়ে ভাইয়ের পিছু পিছু ছুটলো।

হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকটা দূর এসেছে, অথচ রাস্তাটা স্মৃতির পরিচিত। মস্তিষ্ক সচল হতেই সে খেয়াল করলো এটা অণুভ’দা এর বাড়ির রাস্তা। স্মৃতি অবাক হলো, অবাক কণ্ঠে বললো,
“কিরে জীবু? অণুভ’দা দের বাড়িতে যাচ্ছিস কেন?”
“তুই আয় আগে।”

স্মৃতি বাক্যব্যয় না করেই চলে গেলো অণুভ’দা যেখানে ব্যাচেলর থাকতো সেখানে। স্মৃতিকে দেখে সেখানে অবস্থানরত রাকিব নামের ছেলেটা বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। উজ্জ্বল হেসে বললো,
“এতদিন পরে যে! সেই কবে থেকে তোমার অপেক্ষা করছিলাম। তোমার একটা জিনিস আমার কাছে আছে।”

“কী জিনিস?”

কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে স্মৃতি প্রশ্ন করলো। ছেলেটা তৎক্ষনাৎ তার টেবিল ঘেটে ভাঁজ করা একটা কাগজ স্মৃতির দিকে এগিয়ে দিলো। বেশ নরম কণ্ঠে বললো,
“তোমার চিঠি। বসো, বসে পড়ো। আমি আসছি।”

কথাটা বলেই ছেলেটা চলে গেলো রুম থেকে। স্মৃতি একবার জীবুর দিকে তাকিয়ে চিঠিটা মেলে ধরলো দু’হাতে। অনাকাঙ্খিত ভয়ে কাঁপছে তার চিত্ত। মন বলছে কিছু খারাপ হবে। চিঠিটা খুলতেই চোখের সামনে দু-তিন লাইনের কিছু কথা ভেসে উঠলো,
“প্রিয় কদম এবং জীবু,
তোদের বলা হয় নি, আমি পাড়ি জমাচ্ছি ভিনদেশে। জানি তোরা মানতে পারবি না তাই আগে বলি নি। একদম রাগ করিস না। তোরা দু’জন আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছিস, তা কখনো ভুলবো না। হয়তো কখনো আর ফিরে আসা হবে না সে দেশে। তবে তোদের আমি রেখে দিবো খুব যত্নে স্মৃতির পাতায়। একদম ঝগড়া করবি না দু’জন। ভালো মতন পড়াশোনা করবি। ভালো থাকিস তোরা। অনেক বড়ো হ।

ইতি
অণুভ’দা”

স্মৃতি চিঠি পড়ে থ বনে তাকিয়ে রইলো জীবুর দিকে। জীবু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
“অণুভদা আরও এগারো দিন আগে এই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে রে, আমাদের বলেও নি৷”

স্মৃতি এতটাই অবাক হয়েছে যে সে ভেবেই পাচ্ছে না তার কী বলা উচিৎ। কেবল থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। জীবু কম্পনরত কণ্ঠে বললো,
“ক কদম?”

স্মৃতি তৎক্ষনাৎ হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। হাঁটুর মাঝে মুখ ডুবিয়ে চিৎকার করে উঠলো। হাউমাউ করে কেঁদে বললো,
“অণুভ’দা আমায় একটুও বুঝলো না জীবু? একটুও ভালোবাসলো না। একটুও ভাবলো না আমার কী হবে? কতটা স্বার্থপর হলো সে? জীবু, অণুভ’দা ভালো না। ভালো না সে।”

ছোটো জীবু জড়িয়ে ধরলো বোনকে। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কাঁদিস না, দিদি। আমি আছি তো।”

স্মৃতি ভাইকে ধরে আরও কেঁদে উঠলো। অণুভ’দা জানলোও না এই স্বার্থপর পৃথিবীতে এক কিশোরী তাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিল। সত্যিই কী জানতো না অণুভ? তবে যে তার বইয়ের টেবিল খানায় কালো কালিতে ছোটো একটি লিখা জ্বলজ্বল করছে, যেখানে সে লিখেছে,
“প্রেমের কদম, প্রত্যাহারে হারিয়ে যাবে। তবুও কদম ভুলিয়ো না মোরো। ভুলিয়া না যাইও।”

কিন্তু লুকানো সেই বাক্য কী কদম দেখলো? সে তো কেবল জাঁকজমকপূর্ণ বিদায় দেখলো। যা দেখে এক নিমিষেই ভেঙে গুড়িয়ে গেলো সে। যে গল্প পূর্ণতা পাবে না, তা বরং লুকিয়েই নাহয় থাক। দু দেশে দু’জন মানব মানবী কখনো জানবে না, তাদের অগোচরে তাদেরকে ভালোবেসে ছিল তাদের ভালোবাসা।

(সমাপ্ত)