ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
509

#ভ্যাম্পেয়ার_রাজ্য
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা
#পর্বঃ ১০( অন্তিম)

শুভ্র আর সোডাল্ট আজ মুখোমুখি। সোডাল্টকে দেখে প্রিশার ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু এখন, এখান থেকে বের হলেই বিপদ।
সোডাল্ট রাগি গলায় বলে উঠে
” আমার শিকার কোথায় ?” শুভ্র শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাগে তার চোখ থেকে নীল রক্ত ঝরছে। সোডাল্ট ঝড়ের বেগে ছুটে আসতেউ শুভ্র ধাক্কা খেয়ে কিছুটা অন্যদিকে সরে গেলো। সোডাল্ট প্রিশাকে খোঁজার জন্য এদিক সেদিক দেখতে থাকে। শুভ্র ছুটে পেছন থেকে এসে সোডাল্ট এর গলা চেপে ধরে সোডাল্ট এর ঘাড়ে আর ধারালো দাঁত গুলো বসিয়ে দেয়। কিন্তু এতে কোনো প্রভাব পরেনি। সোডাল্ট রেগে শুভ্রর নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দেয়। শুভ্র কিছুটা পিছিয়ে গেলেও থেমে যায় না। সোডাল্টকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে ঘুষি দিতেই সোডাল্ট নিচে পড়ে যায় আর সাথে সাথে নিচে ইটের তৈরি জায়গাটায় সোডাল্ট এত শরীরের সাথে অনেকটুকু ভেঙে যায়। প্রিশা মুখে হাত দিয়ে বসে থাকে। সোডাল্ট সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। শুভ্রর সামনে গিয়ে রেগে বললো
” তুই আমার শিকারের মধ্যে আসছিস কেনো ?”
শুভ্র শক্তপোক্ত, গম্ভীর গলায় বললো
” কে তোর শিকার ? আমাদের বাড়ির মেয়ে হলেই সেটা তোর শিকার হবে কেনো ?”
সোডাল্ট বিশ্রী হেসে বললো
” সেটা তো তোর বাড়ির লোকই ভালো করে জানে। এবার শিকারে বাধা দিলে কি কি হবে সেটা ভালো করেই জানিস।” সোডাল্ট কিছু না বলে আবারও প্রিশাকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুভ্র বাতাসের বেগে ছুটে কোথাও চলে গেলো। প্রিশা শুভ্রকে চলে যেতে দেখে ভয়ে কেঁদে দেয়। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ একটা শব্দ শুনে প্রিশা সামনে তাকাতেই সোডাল্টকে দেখতে পায়। সোডাল্ট তার সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রিশা চিৎকার করে উঠলো। সোডাল্ট মুখে বিশ্ব জয়ের বিশ্রী হাসি নিয়ে এগিয়ে আসে। প্রিশার হাত ধরে টেনে সামনে আনলো। সোডাল্ট প্রিশার হাত ধরেছে দেখেই প্রিশার ভেতর থেকে সব উল্টিয়ে এলো। সোডাল্টের এতোদিকে খেয়াল নেই। প্রিশাকে শক্ত হাতে ধরে রেখে যেই মুহূর্তে শুভ্র এসে হাজির হয়। প্রিশা শুভ্রকে দেখেই শরীরের ভর ছেড়ে নিচে বসে পড়ে কিন্তু সোডাল্ট এখনও তার হাত ধরে রেখেছে। শুভ্রর হাতের মুঠোয় থাকা সাদা পাথরটি সোডাল্টের চোখ এড়িয়ে যায়নি। শুভ্র শান্ত গলায় বললো
” কি হলো এখনও যাস নি যে ! তোর শিকার তো এখন তোরই হাতে।” সোডাল্ট রাগি গলায় বললো
” ঠাট্টা করছিস আমার সাথে? তোর কাছে পাথরটা কি করে এসেছে ? ফেরত দে আমার কাছে।” শুভ্র সেটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে ঠোঁট উল্টে বললো
” এমা এটা তোর বুঝি ? আমি তো জানতামই না।”
সোডাল্ট এগিয়ে এসে ছটফট গলায় বললো
” শুভ্র আমার জিনিস আমার কাছে ফিরিয়ে দে নাহলে ভালো হবে না। কি কি বিপদের সম্মুখীন হতে হবে সেটা তুইও জানিস না, আমিও জানি না।”

শুভ্র হুংকার ছেড়ে বললো
” সোডাল্ট ! গত ২০ বছর ধরে যা যা করে এসেছিস আমাদের সাথে ! তোর কি মনে হয় এতো সহজে ছাড়া পাবি তুই আমার হাত থেকে ?”
সোডাল্ট অনুরোধ স্বরে বললো
” শুভ্র দিয়ে দে এটা। তোর কি চাই বল আমাকে।”
শুভ্র প্রিশার দিকে তাকায়। প্রিশা লুটিয়ে পড়েছে নিচে। শুভ্র শক্ত গলায় বললো
” প্রিশাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।”
শুভ্রর বলতে দেড়ি হলেও সোডাল্ট এক মুহূর্ত দেড়ি করলো না। প্রিশাকে শুভ্রর সামনে দিয়ে দু পা পিছিয়ে ব্যস্ত গলায় বললো
” এবার ফিরিয়ে দে আমাকে, আমার পাথর।”
শুভ্র কিছু না বলে প্রিশাকে আগলে নিলো। প্রিশার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। প্রিশাকে দেখেই বুঝতে পারলো প্রিশার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শুভ্র প্রিশাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এক হাতে প্রিশাকে আগলে নেয়। আর অন্যহাতে থাকা সাদা পাথরটার দিকে তাকিয়ে বললো
” এটা চাইলে এই মুহূর্তে তোর বাড়িতে মানে মা,বাবার কাছে বন্ধি থাকা অরুনিমা’র মা,বাবাকে নিয়ে আসতে হবে।”

সোডাল্ট বাতাসের বেগে ছুটে চলে গেলো। শুভ্র প্রিশাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রিশাকে বাহুডোরে আগলে অস্থির গলায় বললো
” প্রিশা ! এই প্রিশা কি হয়েছে তোমার ? বেশি খারাপ লাগছে ?” প্রিশা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আধ খোলা চোখে শুভ্রর পানে চেয়ে বললো
” আ..মার বুকে ব্যা…থা করছে।” শুভ্র ঢোক গিললো। গলা ছেড়ে শায়ানকে ডাকলো। প্রিশার গাল বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে প্রিশা। শায়ান আসতে আসতে প্রিশা সেন্সলেস হয়ে যায়। শায়ান আসতেই চারপাশ দেখে হতবাক হয়ে শুভ্রকে জিজ্ঞেস করলো
” এসব কি শুভ্র ?” শুভ্র অস্থির গলায় বললো
” প্রিশাকে নিয়ে এখনই হসপিটালে যেতে হবে। এসব নিয়ে আমি এসে কথা বললো। তুই দেড়ি করিস না। প্রিশাকে নিয়ে যা এখান থেকে।” শায়ান প্রিশার পালস চেক করে প্রিশাকে নিয়ে বাতাসের বেগে চলে গেলো সেখান থেকে।

এর মাঝে সোডাল্ট আসলো। সাথে অরুর মা, বাবাকে অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে আসে।
সোডাল্ট অস্থির গলায় বললো
” এবার পাথরটা দিয়ে ভালো ভ্যাম্পেয়ার এর পরিচয় দে। তোর সব কথা শুনেছি এবার আমার জিনিস আমাকে ফিরিয়ে দে।” শুভ্র শান্ত গলায় বললো
” আমি জানি এই পাথরটা যদি তোকে ফিরিয়ে দেওয়া হলেও তুই কখনো আমার পরিবারের পিছু ছাড়বি না। তোর জন্য এমনিতেই ২০ বছর ধরে আমরা অনেক কিছু সহ্য করছি আর পারবো না আমি। ভালো ভ্যাম্পেয়ার এর পরিচয় তোর কাছে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। আলভিদা সিড বা সোডাল্ট।” কথা শেষ করেই শুভ্র সর্ব শক্তি দিয়ে পাথরটা নিচে ছুড়ে ফেলে। সোডাল্ট পাথরটার কাছে যাওয়ার আগেই শুভ্রর চোখ থেকে নীল রশ্মিজাল পাথরের উপর পড়ে। কিছুক্ষণ থাকার পর সেটা হঠাৎ করেই ভেঙে চারপাশে ছড়িয়ে পরে।
সোডাল্ট হিংস্রভাবে হুংকার দিয়ে উঠে। ছটফট করতে করতে চলে যায় সেখান থেকে।
শুভ্র অরুর মা,বাবাকে নিয়ে বাড়িতে ছুটে যায়। বাড়িতে গিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে প্রিশাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছে। শুভ্র গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। অস্থির মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।

হসপিটালের করিডোরেই সবাই বসে রয়েছে। শুভ্র আসার পর থেকে পাইচারি করছে। ডক্টর এখনও বের হয়নি। এদিকে দিদার হেল্ড এর আদেশে সাইরা শ্রেয়াকে জানিয়ে দিয়েছে প্রিশার অসুস্থতার কথা। তারা ঘন্টা খানেক এর মধ্যেই পৌঁছতে পারে।
প্রিশার কেবিন থেকে ডক্টর বের হতেই সবাই হুরমুর করে তার কাছে যায়। প্রিশার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই ডক্টর ইংরেজিতে শুভ্রকে জানালো
” হার্ট দুর্বল হওয়ায় পেশেন্টের বমি, শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এসব হয়েছে। হার্ট দুর্বল রোগীদের এসব হয়ে থাকে এটা স্বাভাবিক হলেও খারাপ কিছু হতে পারে যে কোনো সময়। আমরা মেডিকেল রিপোর্ট দেখে সব রোগীর ভালো, মন্দ অবজার্ভ করবো। তবে এখন পেশেন্ট ঠিকাছে।”
শুভ্রসহ প্রত্যেকে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে।
ডক্টরের সাথে কথা বলে দিদার হেল্ড, রিনা আর অরু গিয়ে প্রিশাকে দেখে আসলো। অরু আসতেই শুভ্র অরুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তার মা, বাবার সঙ্গে দেখা করতে। শায়ান অরুকে বাড়ি পৌঁছে দিতে চলে যায়। তাদের সাথে সিদ্ধার্থ হেল্ডও প্রিশাকে একবার দেখে বাড়িতে চলে গেলো।

শুভ্র প্রিশাকে দেখতে এসেছে। বাড়ির সবাই বিভিন্ন কথায় ব্যস্ত। বাইরের টিভিতে কিছুক্ষণ আগেই দেখানো হয়েছে SR Group কোম্পানির মালিকের একমাত্র ছেলে সিড মারা গিয়েছে। সেসব নিয়েই পুরো হসপিটালের লোকজন হতবাকের মধ্যে রয়েছে। বাড়ির লোকজনও হতবাক হয়ে আছে। শুভ্র এখনও কিছু বলেনি পড়ে বলবে। তাই এর মাঝে প্রিশাকে দেখার কথা ভাবলো। প্রিশার মুখে অক্সিজেন মাস্ক আর হাতে স্যালাইন। স্যালাইন দেখে শুভ্র ভ্রু কুঁচকায়। স্যালাইন দেওয়ার কি দরকার ছিলো ? ভাবতে ভাবতে শুভ্র প্রিশার পাশে গিয়ে বসে। প্রিশার মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে।

শ্রেয়া, প্রান্ত আর নওরি হন্তদন্ত হয়ে আসতে থাকে। বাড়ির প্রত্যেকটা লোক দাঁড়িয়ে পড়ে তাদের দেখে। চোখে পানি টলমল তাদের। শ্রেয়াও তাদের সামনে এসে থেমে যায়। কতোগুলো বছর পর নিজের পরিবারটাকে চোখের সামনে দেখছে। শ্রেয়ার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। প্রান্ত পেছন থেকে এসে শ্রেয়ার কাধে হাত রাখে। শ্রেয়া নাক টেনে প্রান্তর দিকে তাকাতেই প্রান্ত ইশারায় তাদের কাছে যেতে বললো।
শুভ্র কেবিন থেকে বেরিয়েই শ্রেয়াদের দেখতে পেলো। শ্রেয়া কয়েক পা এগিয়ে এসে দিদার হেল্ডকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। করিডোরে কান্নার রোল পরে গেলো। শ্রেয়া, প্রান্তকে ধরে একে একে সবাই কাঁদলো। তাদের বাড়ির প্রাণ ভোমরা গুলো। শুভ্র আর সাইরা এসে বললো
” আমাদেরও একটু চোখ ভরে দেখতে দেও আমাদের ফুপ্পিকে।” শ্রেয়া ভেজা চোখ নিয়ে হেসে দেয়। শুভ্র আর সাইরার কপালে চুমু দেয়। নওরি সেটা দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” মাম্মি ! গিভ মি এ কিস।” এতোক্ষণে সবার নওরির দিকে নজর পড়লো। নওরিকে একদমই খেয়াল করেনি। প্রান্ত হেসে বললো
” একটা কিস কেনো এখন তো তোমাকে সবাই অনেকগুলো কিস দেবো।” সাইরা নওরিকে কোলে নেওয়ার আগেই শুভ্র ফট করে নওরিকে কোলে তুলে নিলো। নওরির গাল টেনে শুভ্র বললো
” আরে এতোদিন শুধু বউ খুঁজতাম এখন দেখি বউ এর সাথে একটা শালিকাও রয়েছে।”
সবাই হেসে উঠে শুভ্রর কথায়। শ্রেয়া আর প্রান্ত প্রিশার সাথে দেখা করতে কেবিনে যায়।

সকাল পেড়িয়ে দুপুরের আগের সময়ে প্রিশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো সবাই। শ্রেয়া, প্রান্ত আসতে না চাইলেও সবাই অনেক বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে তাদের।
বাড়িতে ঢোকার আগে প্রিশা উপরে বাড়ির নেম প্লেট এর দিকে তাকালো সেখানে স্পষ্ট লিখা
#ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য। প্রথমদিন ঢোকার সময় এতোদিকে তাকায়নি কিন্তু আজ যেনো নামটা দেখার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। বাড়ির সবাই খুশি আজ। বাড়িতে খুশির মেলা বসেছে।অরুরাও আগামীকাল চলে যাবে।

সন্ধ্যা হতেই দিদার হেল্ড প্রিশাকে নিয়ে রুমে এসে বসলো। প্রিশা মুখ ফুলিয়ে বললো
” এখানে কেনো এনেছো নানুমনি ? আমরা কতো মজা করছিলাম।” দিদার হেল্ড হেসে বললো
” মজা তো করবেই। একটু আমার সাথেও সময় কাটাও !” প্রিশা মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করলো
” ঠিকাছে কিন্তু কিভাবে?” দিদার হেল্ড হাসলো। পা উঠিয়ে বিছানায় বসলো। হেসে বললো
” তোমার তো খুব জানার ইচ্ছে যে কেনো এতো বছর তোমাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিলো না। সেই সব জানতে হবে তো নাকি ? সেটা যদি আজ জানো তাহলে কেমন হবে ?”
প্রিশা চোখ বড়বড় করে তাকালো। দিদার হেল্ড আলতো হেসে বলা শুরু করে
” শ্রেয়া তখন অনার্স শেষ করেছে। তোমার নানাভাই তার বিয়ের জন্য ছেলে খুঁজছিলো। তখন শ্রেয়া জানায় তার একজনকে পছন্দ এবং তাদের সম্পর্ক রয়েছে। তোমার নানাভাই কিছুটা রাগারাগি করেন কিন্তু পরে মেনে নেন। প্রান্তকে দেখে তার অসম্ভব পছন্দ হয়েছিলো তার উপর প্রান্ত ছিলো বাংলাদেশের ছেলে। তোমার নানাভাই আর আমিও বাংলাদেশেরই ছেলে, মেয়ে। তোমার নানার তাদের বাড়ির ব্যাবসার সুবাদে লন্ডন এসেছিলো তারপর আর সেখানে যাওয়া হয়নি। ছুটিতেই যা যেতাম আরকি। তো প্রান্তকে খুবই পছন্দ হয় বাড়ির সবার। বিয়েও ঠিক হয়। যেহেতু প্রান্তর পরিবার লন্ডনে থাকতো না তাই বাংলাদেশেই বিয়েটা হয়। বিয়ে শেষে আমরা সবাই আবার লন্ডনে ফিরে আসি।

কিন্তু ফিরে আসার পর আরেক অশুভ ছায়া পরে। যদিও সেটা অনেক বছর আগের থেকেই। সেই বিপদটাই সোডাল্ট ছিলো। সোডাল্ট ছিলো অর্ধেক ভ্যাম্পেয়ার আর অর্ধেক ছিলো অন্য প্রাণী। তার মা কোন প্রাণী সেটা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কেউ জানি না আমরা। তো সোডাল্ট এর অর্ধেক ভ্যাম্পেয়ার থেকে পূর্ণ ভ্যাম্পেয়ার হওয়ার একটাই পথ ছিলো সেটা হলো ভ্যাম্পেয়ার রাজ্যের একমাত্র মেয়েকে দিয়ে তার রক্ত পিপাসা মিটালেই সে পূর্ণ ভ্যাম্পেয়ার হতো। আর পূর্ণ ভ্যাম্পেয়ার হলেও সোডাল্ট এর এতো শক্তি আমাদের থেকেও হাজার গুণ বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠতো সাথে ভ্যাম্পেয়ার রাজ্যও শেষ হয়ে যেতো সেই মুহূর্তে। আমরা সবসময় শ্রেয়াকে আগলে রাখতাম। শ্রেয়া নিজেও জানতো না এই সম্পর্কে। কিন্তু একদিন কোনোভাবে জানতে পারে শ্রেয়া এসব কথা। জানলেও পুরো কথা জানতো না শ্রেয়া শুধু অর্ধেক কথাই জানতো। ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য ধ্বংস পরিণতির কথা শ্রেয়া জানতো না তাই সোডাল্টের উপর দয়া হয় তার। কেউ। একজন পূর্ণ ভ্যাম্পেয়ার হবে তার জন্যে এটা ভেবে সে সোডাল্টের কাছে চলে যায়। শ্রেয়া প্রান্তর সাথে কথা বলেই সব করে। প্রান্ত কিছুই করতে পারবে না তাই সে শ্রেয়ার বাবাকে বলে সব। আর শ্রেয়ার বাবা গিয়ে শ্রেয়াকে সেখান থেকে নিয়ে আসে। বাড়িতে একপ্রকার ঝড় বয়ে যায়। শ্রেয়া রেগে ছিলো কেনো তাকে আটকানো হয়েছে এই ভেবে। শ্রেয়ার বাবা যখন সব জানায় তখন সে বুঝতে পারে। আর শ্রেয়া সব শুনে বাবার কাছে অনুরোধ করে তাকে এমন শাস্তি দিতে যার জন্যে ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়। সিদ্ধার্থ তখন অনেক ভেবে শ্রেয়াকে শাস্তি স্বরূপ তার ভ্যাম্পেয়ারের সব শক্তি কেড়ে নেয় ২০ বছরের জন্য আর তাদের বলে যোগাযোগ ছিন্ন করে দূড়ে চলে যেতে। তবে এই শাস্তির মধ্যেও এক বাধা ছিলো সেটা হলো শ্রেয়ার কোনো সন্তান হলে ১৮ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত সে সোডাল্ট এর শিকার হবে শ্রেয়ার মতো। কারণ তোমাড় ১৮ বছর হবে তখন তুমি সোডাল্ট এর থেকে শক্তিশালী আর ভ্যাম্পেয়ার হবে। তাই তোমার মা,বাবা তোমাকে এতোবছর দূড়ে রেখেছে আমাদের থেকে। আজ আর কোনো বস্ফহা নেই কারণ সোডাল্ট মারা গিয়েছে। এখন আর কেউ কোনো শাস্তি ভোগ করবে না দূড়েও থাকবে না।”

প্রিশা স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে সব শুনে। এতো কিছু ছিলো এই জানার মধ্যে। ভাবতেই প্রিশার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। প্রিশা অবাক হয়ে বললো
” তাহলে আমিও ভ্যাম্পেয়ার হয়ে যাবো নানুমনি ? আর সোডাল্ট এর মতো হবো ?”
দিদার হেল্ড আঁতকে বললো
” কি বলছো এসব ? তুমি সোডাল্টের থেকেও শক্তিশালী হলেও ওর মতো হবে না। আমাদের মতো হবে তুমি যেমন শুভ্র, শায়ান, সাইরা রয়েছে তাদের মতো। প্রিশা প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে।

৫মাস পর…….
সময়গুলো এমনি কেটে গেলো। সবাই সবার কর্মজীবন নিয়েই ব্যস্ত। প্রিশা কলেজে শেষ করে ঢুলতে ঢুলতেই কলেজের গেট দিয়ে বের হলো। বের হতেই শুভ্রকে তার চোখে পরলো। শুভ্রকে দেখে প্রচণ্ড অবাক হলো প্রিশা। শরীর সব ক্লান্ত ছুটে পালালো। ২দিন আগেই শুভ্রর সাথে ঝগড়া করে কথা বলা বন্ধ করেছে সে। কারণটা ছিলো শুভ্র তার পুরো পরিবারকে বলেছে প্রিশাকে বিয়ে করবে আর প্রিশার মা,বাবাকেও জানিয়েছে।
হুট করে শুভ্র এসে প্রিশার হাত টেনে নিয়ে যেতে থাকে। প্রিশা কিছু বললো না। ছেলেটার স্বভাবে পরিণত হয়েছে, প্রিশাকে দেখলেই কিছু না বলে হাত টানাটানি করে। শুভ্র কলেজের পাশের এক কফিশপে ঢুকে প্রিশাক্র বসিয়ে কফি অর্ডার করলো। প্রিশা রাগি গলায় বললো
” দেখলেই শুধু টেনে নিয়ে আসেন। কথা বলা যায় না মুখ দিয়ে ?”
শুভ্র গম্ভীর চাহনি দিয়ে তাকালো। প্রিশা পাত্তা না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শুভ্র কিড়মিড় করে বললো
” তোমার মতো একটা মেয়ে ! শুধুমাত্র তোমার মতো একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে আমার মান-সম্মান কিছু রইলো না। আমার থেকে ১মাসের ছোট আমার ভাই শায়ানের সাথে অরুর গতকাল বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো অথচ আমার বিয়ে ঠিক হওয়া তো দূড় নিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি তাতেই তোমার রাগ আকাশ ছুঁইছুঁই। কি করবো আমি ? বলো আমাকে ! ” প্রিশা চোখ বড়বড় করে তাকায়। শুভ্র রাগের মাথায় কাচের টেবিলটাই ভেঙে ফেলবে মনে হচ্ছে।
শুভ্র রাগে ফুসতে করতে থাকে। প্রিশা মুখ লটকিয়ে বললো
” আমি ভেবেছিলাম আমি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করবো। আমি তো ছোট।” শুভ্র চোখ রাঙ্গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” এই একদম এসব বলবে না। ২মাস আগে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি করছি আমি। বাবা,দাদার ব্যবসা আছে। তোমাকে তোমার বড় খাওয়াবে, পড়াবে। পড়াশোনা শেষ করেই যে বিয়ে করতে হবে এটা কি কোথাও লিখা আছে? আর ছোট কোথায় ? কয়েকমাস আগেই তো ১৮ বছর হয়েছে।”

প্রিশা আর কিছু বললো না। কফি আসতেই চুপচাপ কফি খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুভ্র কফি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করলো। শান্ত গলায় বললো
” দুদিন পর সবাইকে বলবো বিয়ে ঠিক করতে।”
প্রিশা ভয়ে ভয়ে সায় দেয়। শুভ্র মুচকি হেসে ফিসফিস গলায় বললো
” #ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য এর পার্মানেন্ট লোক হয়ে যাবে আর একেবারের জন্য আমার হয়ে যাবে।”
প্রিশা মাথা নিচু করে লজ্জামাখা হাসি দিলো।

সমাপ্ত