#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_২৫
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-” আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে এসব কিছুর পেছনে তুমি রয়েছো বড় আব্বু।?আমি তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেস্ট বাবা মতে করতাম।আর তুমি কিনা ? ছিঃ এমনটা কেন করলে বড় আব্বু? তুমি তো আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসো তাই না? ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে বড় আব্বু? তুমি শুধু মাত্র একবার বলতে আমাকে তুমি চাও না, বিশ্বাস করো আমি হাসতে হাসতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতাম। তাছাড়া তুমি তো খুব ভালো করে জানো আমি উষ্ণতা ন … বাকিটা আর বলতে পারলো না শিক্ষা। শিক্ষা দেখলো সাদ্দাম শিকদার চোখের ইশারায় বারবার শিক্ষা কে তার শার্টের দিকে তাকাতে বলছে। শিক্ষা তার শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখলো, শার্টের বোতামের সাথে ছোট ক্যামেরা জাতীয় কিছু লাগানো রয়েছে। ছোট ক্যামেরা দেখে শিক্ষা মনে মনে বললো, ওহ্ তাহলে এই ব্যাপার। পর্দার আড়ালে কেউ একজন এই ক্যামেরার মাধ্যমে সব দেখছে। নিশ্চয় সে ইচ্ছা করে বড় আব্বু কে এসব করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু বড় আব্বু তো জানে আমি এসিপির মেয়ে উষ্ণতা নই। আমি শিক্ষা। তবু ও বড়ো আব্বু এমন টা কেন করছে? কি এমন পিছুটান রয়েছে বড়ো আব্বুর যার জন্য সে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তির জায়গায় নিজে আত্মসমর্পণ করতে চায়ছে? সাহিত্য হয়তো এতক্ষণে জেনে গিয়েছে আমি কোথায় আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো এইখানে চলে আসবে। সবাই তো ভাববে বড়ো আব্বু আসল অপরাধী। তো ও মাই গড! আমি এখন কিভাবে বাঁচাবো বড়ো আব্বু কে? শিক্ষার ভাবনার মাঝে সাদ্দাম শিকদার বললো,
-“আমাকে এইখানে দেখে খুব অবাক হয়েছিস তাই না? হ্যাঁ এটাই আমি।এটাই আমার আসল পরিচয়। আমি একজন অপরাধী, একজন খু’নী।এ পর্যন্ত যে কয়টা মেয়ে খু’ন হয়েছে সবগুলো খু’ন আমি করেছি।আর এখন তোকে ও মা’র’বো। এছাড়া আরো একটা পরিচিয় আছে আমার। বিজনেস এর নামে কালো টাকার ব্যবসা করি আমি।”
-” আমি বিশ্বাস করি না। তুমি আমার দেখা সবচেয়ে ভালো বাবা।আমাকে তুমি অনেক ভালোবাসো। যে মানুষ টা কখনো আমার গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেয় নি। সেই মানুষটা আমাকে মা’র:তে চায়, এটা আমি কখনো বিশ্বাস করবো না। আমি জানি কেউ তোমাকে ফাঁসাতে চায়ছে।আসল অপরাধী সামনে আসতে চায়ছে না। তুমি কেন নিজের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছো? কি এমন দূর্বলতা আছে তোমার?”
-“অনেক সময় আমরা যা চোখের সামনে দেখি সেসব সত্যি হয় না। তেমনি ও তোর প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো লোক দেখানো। আসলে আমি কখনো তোকে ভালোবাসি নি।সবটা আমার নাটক ছিলো। আমি জানতাম তুই আমার চরম শত্রু এসিপির মেয়ে উষ্ণতা।তাই তো তোর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি। ঠিক যেমন গরু ছাগল কে কোরবানি করার আগে আদর যত্ন করে খাওয়ানো হয়।তেমনি আমি ও তোকে মা’রা’র আগে আদর ভালোবাসা দিয়েছি।আর আজ নিজে হাতে তোকে শেষ করবো।”
-” শিক্ষা কিছু একটা ভেবে সাহিত্য শিকদার কে বললো, ঠিক আছে বড়ো আব্বু। তুমি আমাকে নতুন একটা জীবন দিয়েছিলে।এখন তুমি আবার আমাকে মা’র’তে চাও,মা’রো। আমি হাসিমুখে মৃ’ত্যু কে বরণ করে নিবো। কিন্তু তার আগে প্লিজ একবার আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দাও। আমি শেষ বারের মতো তোমাকে একটা বার জড়িয়ে ধরতে চাই। তোমার বুকে মাথা রাখতে চাই। এরপর আমি ম’রেও শান্তি পাবো।”
___________________________________
-” অন্ধকার রুমের মধ্যে কেউ একজন সাদ্দাম শিকদারের সাথে থাকা ক্যামেরার মাধ্যমে সবটা দেখছিলো। শিক্ষার কথা শুনে তৎক্ষণাৎ সে সাদ্দাম শিকদার কে কল করে বলে, মেয়ে টার শেষ ইচ্ছা পূরণ করে দে।তবে হ্যাঁ একদম চালাকি করার চেষ্টা করবি না। তাহলে কিন্তু এইদিকে দুম করে বোম ব্লাস্ট হয়ে যাবে।হা হা হা।”
-” লোকটার কথা শুনে সাদ্দাম শিকদার শিক্ষার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। শিক্ষা দৌড়ে এসে সাদ্দাম শিকদারের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কৌশলে তার সাথে থাকা ক্যামেরা নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে, তুমি এখান থেকে চলো বড় আব্বু। আমি কিছুতেই তোমাকে অন্যের দোষ নিজের ঘাড়ে নিতে দিবো না।”
-” তুই কেন বুঝতে চায়ছিস না আমি যদি সিআইডির হাতে আত্মসমর্পণ না করি , তাহলে তুই তোর আপনজন হারিয়ে ফেলবি।”
-” আমি কিছু শুনতে চাই না বলে শিক্ষা সাদ্দাম শিকদারের হাত ধরে বন্ধ কারখানা থেকে বের হওয়ার আগেই কয়েকজন গুন্ডা এসে তাদের উপর অ্যাটাক করে।
___________________________________
-” সাহিত্য আর নির্জন গাড়ি করে স্মৃতির নগর আসার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে এমন সময় সাহিত্যের ফোনে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল আসে। সাহিত্য ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে বলে, আসল অপরাধী খুঁজে চলেছো তাই না অফিসার? কিন্তু আসল অপরাধী নিজের বাড়িতে থাকলে তাকে এতো সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না অফিসার।”
-” কে আপনি? আর ঠিক কি বলতে চায়ছেন?”
-” আমি এটাই বলতে চায়ছি যে এসব কিছুর পেছনে রয়েছে তোমার বাবা সাদ্দাম শিকদার। বর্তমানে সে শিক্ষা কে স্মৃতিনগরের একটা বন্ধ কারখানায় নিয়ে এসেছে তাকে মা’রা’র জন্য। ”
-” কি যা তা বকছেন আপনি? আপনার কাছে আদৌ কোনো প্রমাণ আছে যে আমার বাবা এসব কিছু করছে?”
-” আমি কথাতে নই কাজে বিশ্বাসী।তোমাকে কিছু ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি ,দেখে নিও।আরো একটা কথা। তোমার বাবা শুধু মাত্র একজন খু’নী নয়। তোমার বাবা কালো টাকার ব্যবসা করে।যার প্রমাণ তোমার বাবার লকারে পেয়ে যাবে। তারপর বুঝতে পারবে আমি আসলে সত্যি বলেছি নাকি মিথ্যা বলে ফোন কেটে দেয় অজানা লোকটা।আর তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের ফোনে কয়েক টা ছবি আসে।যা দেখে ধমকে যায় সাহিত্য।তখনি সাহিত্যের মনে পড়ে যায় কামরুলের বলা কথাটা, ধরুন আপনার বাবা একজন অপরাধী। এখন আপনি তার ছেলে হয়ে পারবেন তার হাতে হাতকড়া পরাতে?সাথে সাথে সাহিত্যের চোখ ভিজে যায়।যা দেখে নির্জন বলে,কি হয়েছে? কার ফোন ছিলো? হঠাৎ করে তোর মুখের ডিসপ্লে বদলে কেন কেন?”
-” সাহিত্য নির্জনের কথার উত্তর না দিয়ে গাড়ি থামিয়ে বললো, তুই এক কাজ কর। তুই তাড়াতাড়ি করে স্মৃতিনগর চলে যা।আমি বাড়িতে যাচ্ছি।”
-” কেন?”
-” রহস্যের উন্মোচন করতে।”
-” তুই কি বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
-” তোকে যেখানে যেতে বলছি যা।আশা করি ঐখানে গেলে তোর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি বলে সাহিত্য গাড়ি থেকে নেমে নিজের বাড়িতে এসে কলিং বেল দিতেই অন্তরা দরজা খুলে দেয়।অন্তরা দরজা খুলে এই সময় সাহিত্য কে বাড়িতে দেখে জিজ্ঞেস করে, তুমি এখন এই সময়ে বাড়িতে? শরীর ঠিক আছে তো ?”
-” সাহিত্য অন্তরার কথার পিঠে কথা না বলে দৌড়ে সাদ্দাম শিকদারের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সাদ্দাম শিকদারের লকার ভেঙ্গে দেখে সেইখানে সত্যি সত্যি কালো টাকা দিয়ে ভর্তি রয়েছে। মূহুর্তের মধ্যে সাহিত্যের চোখ ছলছল করে ওঠে। সাহিত্য চিৎকার করে বলতে লাগলো, তার মানে লোকটা সত্যি বলেছে। না এটা হতে পারে না। আমার বাবা অপরাধী হতে পারে না। কখনোই না বলে সাহিত্য লকারের সমস্ত জিনিস বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে আসতে যেয়েও হঠাৎ একটা ছবি মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সাহিত্য দাঁড়িয়ে যায়। সাহিত্য মেঝে থেকে ছবি টা তুলে নিয়ে ভালো করে দেখে বলে,ও মাই গড! তার মানে শিক্ষা আর কেউ নয় স্বয়ং …।আর বাবা এতো বড়ো একটা কথা আমাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছে । কিন্তু কেন? কি এমন কারণ আছে এর পিছনে?
__________________________________
-” প্রায় ঘন্টা খানেক পরে নির্জন স্মৃতিনগর এসে পৌঁছায়। এইখানে এসে শিক্ষার ফাইটিং করা দেখে যতটা না অবাক হয় তার থেকে বেশি অবাক হয় সাদ্দাম শিকদার কে দেখে। নির্জনের বুঝতে বাকি থাকে না সাহিত্য তখন কোন রহস্য উন্মোচন করার কথা বলছিলো। নির্জন ভাবে তার মানে সত্যিই সাদ্দাম আঙ্কেল এসব করেছে। নির্জন এগিয়ে এসে সবে তার বন্দুক বের করেছে এরই মধ্যে একটা গুন্ডা পেছন থেকে রড দিয়ে শিক্ষার মাথায় আঘাত করে। মূহুর্তের মধ্যে শিক্ষার চোখে অন্ধকার নেমে আসে। ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে শিক্ষা।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_২৬
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-” কে আপনি ? আর এসব কি ধরনের অ’স’ভ্য তা ?এটা হসপিটাল।আর চেনা না জানা না হুট করে আপনি হসপিটালে এসে সবার সামনে এইভাবে একজন রোগী কে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারেন না।”
-“শিক্ষার কথা শুনে সাহিত্য একটু নড়ে চড়ে বসলো। কিন্তু শিক্ষা কে ছাড়লো না। বরং আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো, আ’ম সরি শিক্ষা।আসলে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোকে হয়তো চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। তোর এই সামান্য অনুপস্থিতি আমাকে জানিয়ে দিয়েছে আমি ঠিক কতোটা তোকে ভালোবাসি? কতোটা নিজের করে পেতে চাই? যদিও আজ থেকে পাঁচ মাস আগে শুধু মাত্র দাদুর কথা রাখতে তোকে বিয়ে করেছিলাম।আর বাসর রাতে তোকে এটাও বলে দিয়েছিলাম যে এই বিয়ের কোনো ভ্যালু নেই আমার কাছে। আমি কোনো সংসারের মায়ায় জড়াতে চাই না। তবু ও এই বেহায়া মন কিভাবে জানি তোর মায়ার জড়িয়ে গিয়েছে। তুই যে কখন আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে বসবাস করতে শুরু করেছিস আমি নিজেও বুঝতে পারি নি।আমাকে ক্ষমা করে দে শিক্ষা।”
-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ নিজেকে সাহিত্যের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, কে শিক্ষা? ডোন্ট কল মি শিক্ষা।আ’ম উষ্ণতা। উষ্ণতা মীর।ডটার অফ এসিপি রায়হান মীর।”
-” হ্যাঁ আমি জানি তুই এসিপি স্যারের মেয়ে উষ্ণতা। গতকাল আমি বাবার লকারে তোর ছোট বেলার ছবি পেয়েছিলাম।তখনি আমি জানতে পেরেছি তুই ই আসল উষ্ণতা।আর এই কথাটা তোকে জানানোর জন্য ছুটে যাই স্মৃতিনগরে। কিন্তু সেই খানে গিয়ে দেখি তুই র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় পড়ে আছিস। তখন যে আমার কেমন লেগেছিলো তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।”
-” আমি বলছি তো আমি আপনাকে চিনি না। তবু ও কেন বিরক্ত করছেন আমাকে?প্লিজ গো অ্যাওয়ে।”
-” তুই এইসব ইচ্ছা করে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য করছিস তাই না? ইচ্ছা করে আমাকে না চেনার নাটক করছিস তুই?কেন করছিস তুই? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য? আর কতো কষ্ট দিবি আমাকে?বল আর কতো? ওকে ফাইন ।যতো পারিস কষ্ট দে। যখন আমি থাকবো না , তখন বুঝতে পারবি। সাহিত্যের চিৎকার শুনে ডক্টর এসে বললো,এসব কি হচ্ছে সাহিত্য? বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার করছো কেন?ও এখনো অসুস্থ।দেখছো তো মাথায় ব্যান্ডেজ রয়েছে, স্যালাইন চলছে। গতকাল কি অবস্থা হয়েছিলো নিশ্চয় ভুলে যাও নি।এখন প্লিজ এইখানে চিৎকার চেঁচামেচি করো না।”
-” ডক্টর ও ভুলে থাকার নাটক করছে।ও যদি আমাদের সাথে থাকা মূহুর্তগুলো ভুলে যায় ,তাহলে সবাই কে ভুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ও সবাইকে চিনতে পারছে। শুধু মাত্র আমাকে ছাড়া।”
-” দেখো সাহিত্য ! ও অসুস্থ । তুমি প্লিজ এইখান থেকে যাও।ডক্টরের কথা শুনে সাহিত্য গরম চোখে শিক্ষার দিকে তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সাহিত্যের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শিক্ষা নিজে নিজে উঠে বসার চেষ্টা করলো।যা দেখে অন্তরা এগিয়ে এসে শিক্ষা কে ধমক দিয়ে বললো, উঠছিস কেন?”
-” পিঠ ব্যথা করছে বড় আম্মু।আর কতো শুয়ে থাকবো?দেখ আমি একদম ঠিক আছি।”
-” সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। আচ্ছা তুই এটা বল তুই কি সত্যি সত্যি সাহিত্য কে চিনতে পারছিস না?”
-” শিক্ষা ফিক করে হেসে দিয়ে অন্তরা কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার শ্বাশুড়ি মায়ের বুঝি তার ছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে? তোমার ছেলে আমাকে কম কষ্ট দেয় নি। এজন্যই এই অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করেছি আমি।তার ও বোঝা উচিত ভালোবাসা ঠিক কতোটা যন্ত্রণার?”
-” আমার ছেলেটা কিন্তু সত্যি সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে।তোর এই অবস্থা দেখে ওর মাথা ঠিক ছিলো না। তোকে হসপিটালে নিয়ে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত একটা দানা ও মুখে তুলে নি। সারারাত তোর হাত ধরে তোর পাশে বসে ছিলো। আমারা সবাই হাজার বার বলে ও সাহিত্য কে এইখান থেকে এক চুল পরিমান সরাতে পারি নি।কি যাদু করছিস আমার ছেলেটাকে বল তো?”
-“শিক্ষা অন্তরার কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো, আচ্ছা বড় আম্মু সবাইকে দেখছি কিন্তু বড় আব্বু কোথায়? বড় আব্বু কে যে দেখতে পারছি না। আমার যতটুকু মনে আছে আমি বড় আব্বু কে বাঁচাতে পারি নি ।তার আগেই কেউ একজন আমার মাথায় আঘাত করে।”
-” কাকে বড় আব্বু বলছিস তুই? ঐ সাদ্দাম শিকদার কে? যে নিজে তোর মাথায় রড দিয়ে আঘাত করেছিলো? সেই সাদ্দাম শিকদার যে ভালো মানুষের আড়ালে একজন ক্রিমিনাল,খু’নী ,কালো টাকার ব্যবসায়ী।সে যে অপরাধ করেছে এতে তার ফাঁ’সি হবে ফাঁ’সি।আর যতোদিন ফাঁ’সি’র রায় কার্যকর না হয় ততোদিন জেলে পঁচে ম’র’বে। আমার তো ইচ্ছে করছে ঐ খু’নী’র মুখে গিয়ে থুথু ছুড়ে দিতে।ঐ খু’নীর জন্য আমার ছেলেটাকে সবাই ছিঃ ছিঃ করছে। ছেলেটার দিকে আঙ্গুল তুলছে। তার কুকর্মের খবর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।এই ভিডিও টা চালু করে দেখ, অন্তরা শিক্ষার হাতে একটা ফোন দিয়ে বললো। শিক্ষা ফোন নিয়ে ভিডিও টা অন করার সাথে সাথে শোনা গেল, ব্রেকিং নিউজ। আজকে সকালের টাটকা খবর। আজকে আপনাদের এমন একজন সন্তানের কথা বললো,যে নিজে তার বাবার হাতে হাতকড়া পরিয়েছে। হ্যাঁ তিনি শহরের নামকরা একজন ব্যবসায়ী সাদ্দাম শিকদার। আমাদের সকলের পরিচিত মুখ।তার আরো একটা পরিচয় আছে।তিনি সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বাবা।যে কিনা মুখোশের আড়ালে একজন ক্রি’মি’না’ল খু’নী কালো টাকার ব্যবসায়ী। এইটুকু দেখে ভিডিও টা অফ করে দেয় শিক্ষা।যা দেখে অন্তরা বলে, কি হলো দেখলি না পুরো টা?দেখ তোর বড় আব্বুর কুকর্ম।এই বয়সে এসে এসব কুকর্ম দেখতে হবে জানলে আমি আগেই এই সংসার ছেড়ে চলে যেতাম।”
-” তুমি বড় আব্বু কে ভুল বুঝছো বড় আম্মু।বড় আব্বু কিছু করে নি।বড় আব্বু নির্দোষ।তাকে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ফাঁসিয়েছে। আমার পাপা একজন সৎ , ন্যায়পরায়ণ অফিসার ছিলেন। পাপা সবসময় বলতো সত্যের মৃ’ত্যু নেই।আর একজন এসিপির র’ক্ত আমার শরীরে বয়ছে। আমি বেঁচে থাকতে বড় আব্বুর কিছু হতে দিবো না।সত্যের মৃ’ত্যু কখনো হয় নি।আর না এখনো… শিক্ষা বাকিটা বলার আগে সাইফুজ্জামান এসে বললো,সত্যের মৃ’ত্যু না আগে কখনো হয়েছে,আর না এখন হবে। এজন্যই বলা হয় ,বাঘের বাচ্চা বাঘ ই হয়। তুমি একজন এসিপির মেয়ে হয়ে ঠিক এসিপির মতোই কথা বলছো উষ্ণতা। আচ্ছা উষ্ণতা তুমি এটা বলো যে আজ থেকে দশ বছর আগে তোমাদের উপর যেদিন অ্যাটাক হয়েছিলো, সেদিনের ঘটনা কি কিছু মনে আছে?”
-” হ্যাঁ স্যার,অল্প কিছু মনে আছে। কেন জানি না পাপা আমাকে নিয়ে সবসময় ভয়ে থাকতো।সবার থেকে আমাকে সবসময় আড়ালে রাখতো। আমাকে মার্শাল আর্ট শেখায় যাতে আমি সবসময় নিজের আত্মরক্ষা করতে পারি। যেদিন আমাদের উপর অ্যাটাক হয় , সেদিন আমরা কক্সবাজার আসছিলাম ফ্যামিলি ট্যুরে। পাপা ড্রাইভ করছিলো , হঠাৎ কোথা থেকে একটা লোক র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় আমাদের গাড়ির সামনে এসে পড়ে যায়।পাপা তাকে সাহায্য করার জন্য বের হয়। কিন্তু যখনি পাপা লোকটার কাছে যায় ,তখনি কোথা থেকে অনেক গুলো গুন্ডা এসে পাপার উপর অ্যাটাক করে। আমি যেহেতু মার্শাল আর্টিস্ট ছিলাম আমি ছোট হয়ে ও তাদের সাথে লড়াই করি। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ একজন আমার আর পাপার উপর গু’লি চালিয়ে দেয়। তিনি র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে যান। আমি দৌড়ে তাদের কাছে যেতে চাই। কিন্তু তার আগেই একটা গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই আমার। যখন চোখ খুলি নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি।আর চোখের সামনে বড় আব্বু আর বড় আম্মু কে দেখতে পাই।”
-” সাইফুজ্জামান উষ্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ঠিক আছে মা। তুমি এখন বিশ্রাম করো বলে সাইফুজ্জামান কেবিন থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে শিক্ষা তার হাতে থাকা স্যালাইন খুলে সাদ্দাম শিকদারের সাথে দেখা করতে চলে আসে। সাদ্দাম শিকদার কে জেলের মধ্যে দেখে শিক্ষার কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠে। শিক্ষা সাদ্দাম শিকদারের হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে কান্না করতে করতে বলে , কেন এমন করলে বড় আব্বু? কেন নিজে অন্যের দোষ স্বীকার করলে?কি এমন পিছুটান রয়েছে তোমার?”
-” তোমার মম আর পাপা কে বাঁচানোর জন্য।”
-“কি বললে বড় আব্বু ? আমার মম পাপা এখনো বেঁচে আছে?”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।