#মনের_উঠোন_জুড়ে_২
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” শিক্ষার মনে অদম্য কৌতুহল বাড়তে থাকে অজ্ঞাত মহিলার সম্পর্কে জানার জন্য।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তার মম রায়হার কাছে ছুটে গেল। তিনি তখন কিচেনে এঁটো প্লেট পরিষ্কার করছিলেন। শিক্ষা গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি আমার একটা কথা ও শুনো না কেন বলো তো মম? কতোবার বললাম আমার সাথে এখানে আসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তোমরা আমার কথা শুনলে না। আবার বললাম একটা কাজের লোক রেখে দেই সেটাও রাখতে দিলে না। তোমার কতো কষ্ট হয় সব কাজ করতে।”
-” তোর কষ্টের কাছে আমার কষ্ট কিছুই না রে। এমনিতেই মেয়ের উপার্জনের টাকা খাচ্ছি। এটাই আমার কাছে অনেক।আর কতো সুখ করবো বল তো?”
-” মম তুমি আবার ও এই কথা বলছো। আজকে আমি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতাম ,তাহলে কি তোমরা আমার উপার্জনের টাকা খেতে না? তাছাড়া শুধু মাত্র আমার টাকায় যে এই সংসার চলে এমন টা তো নয় মম। আমার ইনকামের টাকা ছাড়াও পাপার পেনশনের টাকা , আমাদের বাড়ি ভাড়া থেকে টাকা , শো রুম থেকে ও কিন্তু টাকা আসে আমাদের। আর এতো দিন তো আমার ইনকামের টাকার কোনো প্রয়োজন পড়ে নি তোমাদের।পাপা অসুস্থ্য হওয়ার পর অনেক অনেক টাকা খরচা হয়ে যায়। এমনকি লোন ও নিতে হয় আমাদের।সেসব লোনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সংসারে টানাটানি শুরু হয়ে যায় আমাদের। এজন্যই সংসারের খরচ টা আমার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। আমার জায়গায় যে কোনো মেয়ে থাকলে এমনটাই করতো মম।”
-” আমাদের কথা আর কতো ভাববি বল তো? এবার নিজেকে নিয়ে ও একটু ভাব মা।বয়স তো আর কম হচ্ছে না। মেয়েদের বেশি বয়স হয়ে গেলে বিয়ে অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।তোর যদি কোনো পছন্দ থেকে থাকে আমাদের বলতে পারিস।আমি বা তোর পাপা কখনো দ্বিমত করবো না।তোর সুখেই যে আমাদের সুখ।”
-” বিয়ের কথা শুনে শিক্ষার সাহিত্যের বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়। শিক্ষা তার মমের কপালে চুমু দিয়ে বললো, তোমাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না মম। আমি চলে গেলে তোমাদের দেখাশোনা কে করবে বলো তো?”
-” আমাদের জন্য তোর ভাবতে হবে না।তোর পছন্দের কেউ থাকলে একদিন বাসায় নিয়ে আয়। আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দে।”
-” শিক্ষা কি বলবে বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করে বললো, মম আমি তোমার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম?”
-” ব্যাপার টা এড়িয়ে যেতে চায়ছিস?”
-” তুমি আমার মম নয় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার এমন কোনো কথা নেই যেটা আমি তোমার সাথে শেয়ার করি নি। আমার জীবনে যদি সেরকম কেউ থাকতো আমি অবশ্যই তোমাকে বলতাম মম।”
-” আচ্ছা বাদ দে সেসব কথা।কি জানতে এসেছিস তাই বল?”
-” পাপা কে দেখলাম কোনো এক মহিলার ছবি তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, চোখে মুখে চুমু তে ভরিয়ে দিচ্ছেন।আমার মনে হলো মহিলা টা হয়তো পাপার খুব চেনা জানা। তুমি কি এই ব্যাপারে কিছু জানো?”
-” হ্যাঁ মহিলা টা আর কেউ নয় তোর একমাত্র ফুপি অন্তরা।”
-” আমার ফুপি ও আছে?”
-” হ্যাঁ।”
-” কিন্তু আমি তো কখনো দেখিনি বা তিনি কখনো আমাদের বাসায় ও আসেন নি।”
-” আমি নিজেই তো দেখি নি অন্তরা কে।তোকে আর কি বলবো? অন্তরা নিরুদ্দেশ হওয়ার মাস খানেক পরে আমাদের বিয়ে হয়।তোর দাদু রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলো। তোর পাপার থেকে শুনেছি অন্তরা নাকি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে তাকে গোপনে বিয়ে করে। কয়েক মাসের মধ্যে অন্তরার মধ্যে শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারে অন্তরা অন্তঃসত্ত্বা।সব জানাজানির পর তোর দাদু অন্তরা কে ত্যাজ্য করে দেয়। তারপর থেকে আর অন্তরার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।তোর দাদু দাদী মারা গেছে তবুও অন্তরা একটা বারের জন্য ও তাদের কে দেখতে আসে নি। অন্তরা হয়তো তার ভাইয়ের কথা ভুলে গিয়েছে কিন্তু তোর পাপা তাকে ভুলতে পারেনি।রোজ রাতে সে অন্তরা ছবি বুকে নিয়ে চোখের পানি ফেলে। হাজার হোক একই র’ক্ত তো।”
-” পাপা এমনিতেই অসুস্থ্য। ডক্টর বলেছেন কোনো কারনে পাপার উত্তেজিত হওয়া তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তুমি ফুপির ব্যাপারে সব বলো আমাকে।আমি ফুপির খোঁজ করবো মম।ফুপির জন্য পাপা কে আমি কষ্ট পেতে দিবো না।”
-” এখন অনেক রাত হয়েছে। তুই ঘুমোতে যা।আমি সকালে তোর ফুপির ফটো দেখাবো তোকে।”
-” ঠিক আছে মম।লাভ ইউ ।গুড নাইট বলে শিক্ষা তার মমের দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে তার রুমে চলে এলো। শিক্ষা রুমে এসে দেখে বিছানা ঠিক করছে এমন সময় তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। আননোন নাম্বার দেখে শিক্ষা তেমন পাত্তা দেয় না।এটা তার পার্সোনাল নাম্বার । একান্তই কাছের কেউ ছাড়া এই নাম্বার জানা নেই কারো। শিক্ষার ভাবনার মাঝে আবারো কর্কশ শব্দে ফোন বেজে ওঠে। শিক্ষা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে আসে নিচে আসো। আমি তোমার বাড়ির বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করছি।”
-” পরিচিত একটা কণ্ঠ শুনে থমকে যায় শিক্ষা। কিছু সময়ের জন্য সাহিত্যের কথা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। সাহিত্যের কথার প্রতিত্তরে কি বলা উচিত বুঝতে পারে না শিক্ষা।তার থেকে রেসপন্স না পেয়ে সাহিত্য আবারো বললো, তুমি কি নিজে থেকে আসবে নাকি আমার ভেতরে আসতে হবে। অনেকক্ষণ যাবৎ রাস্তায় অপেক্ষা করে আছি। তাড়াতাড়ি এসো পাখি।”
-” আপনার কোনো কমন সেন্স নেই?আপনি এতো রাতে এসেছেন আমার সাথে দেখা করতে?”
-” কি আর করবো বলো? তোমাকে তো ফোনে পাচ্ছি না।একশত বিশ বার কল করেছি তবু ও তোমার কোনো রেসপন্স পায় নি।তাই সোজা তোমার বাড়ির সামনে চলে আসলাম।”
-“আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য না।সো যে রাস্তা দিয়ে এসেছেন সেই রাস্তা দিয়ে আবার কে’টে পড়ুন।”
-” ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি নিজেই আসছি তোমার কাছে।”
-” একদম ই না। আমি আসছি।তবে পাঁচ মিনিটের বেশি এক মিনিট ও থাকতে পারবো না।”
-” আসবে আমার ইচ্ছাতে যাবে ও আমার ইচ্ছাতে ।”
-” শিক্ষা কিছু না বলে ফোন রেখে দিয়ে চুপিচুপি তার পাপা মমের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে তারা ঘুমিয়ে পড়েছে।যা দেখে শিক্ষা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পা টিপে টিপে রাস্তায় এসে দেখে সাহিত্য বাইকের উপরে বসে রয়েছেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে সাহিত্যের গায়ে পড়েছে।তার গায়ে কালো কালারের একটা পাঞ্জাবি রয়েছে। ফর্সা গায়ের সাথে কালো রং টা বড্ড মানিয়েছে তার। সাহিত্য কে দেখে শিক্ষা মনে মনে বললো, নিমু রে তুই যদি এই মুহূর্তে সাহিত্য কে দেখতি নিশ্চিত ফিট হয়ে পড়ে যেতি। অতঃপর শিক্ষা সাহিত্যের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, এসব পাগলামির মানে কি সাহিত্য? কেন ডেকেছেন আমাকে?”
-“ব্যাড লাক তোমার ? এখানে আসতে বড্ড দেরি করে ফেলেছো। অবশ্য এতে আমার কোনো লস নেই।লস টা তোমারি হলো।”
-” মানে?”
-“ঠোঁটে একমাত্র আমার বউয়ের হকের কথা চিন্তা করে এ পর্যন্ত ঠোঁটে সিগারেট তুলে দেখি নি । কিন্তু আজ তুমি আসতে দেরি করায় মশারা এসে আমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট করে দিয়েছে।”
-“আপনার ফালতু কথা শুনতে আমি এখানে আসি নি।”
-” তো রোমান্স করতে এসেছো বুঝি? তুমি ও দেখছি আমার থেকেও এক কাঠি উপরে।তলে তলে এতো পর্যন্ত পৌঁছে গেছো বেবি?”
-” সাহিত্য!”
-” আচ্ছা বাদ দাও। আমার কিন্তু বিয়ের সব প্ল্যানিং শেষ।মম , ড্যাড কে আগামীকাল তোমাদের বাড়ি পাঠাবো। আমি তাদের কে বলেছি আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করছি।সো তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো তোমার করনীয় কি?”
-“শিক্ষা কিছু একটা ভেবে বললো, আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি।তবে আপনার মতো আমার ও কিছু শর্ত আছে।।”
-” শর্ত?”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।