#মনের_গহিনে (১১)
Sarika Islam(mim)
পর্দা ভেদ করে সুর্যের প্রখর আলো ইয়াদের চোখে মুখে এসে লাগছে।বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে এলো তার।কপালে কয়েক ভাজ সৃষ্টি হলো।আড়মোড়া দিয়ে চোখ ডলে মেলল।চোখ মেলতেই বরাবর ফারাহর ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে থমকে গেল।নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল।ফারাহ একদম ইয়াদের কাছাকাছি এসে ঘুমিয়েছে।ইয়াদের বা হাতের উপর নিজের ডান হাত রেখে।ইয়াদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারাহর দিকে।মায়ায় ভর্তি মুখ বাচ্চাদের মতো আরামে ঘুমাচ্ছে।সামনের কাটা চুলগুলো কপালের উপর পরে আছে।বিরক্তিতে কপাল কুচকে চুল সরায় অবাধ্য চুলগুলো আবার এসে পরে।
ইয়াদ বেশ মজা করেই ফারাহর চুলের কান্ড দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।
ঘড়ির এলার্মে ঘুম থেকে উঠলাম।আড়মোড়া ভেংগে উঠে বসলাম খোলা চুলগুলো হাত খোপা করে পাশ ফিরে তাকালাম।ইয়াদ নেই বিছানায় সবে তো আটটা বাজে এখন অফিসে যাবে নাকি?আমার ভাবনার মাঝে ইয়াদ ওয়াশ্রুম থেকে বের হলো খালি গায়ে শুধু প্যান্ট পরিহিত।শরিরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।কেমন লজ্জা কাজ করছে মনের ভিতরে দ্রুত মাথা নামিয়ে নিলাম।
ইয়াদ আয়নায় নিচের চুল মুছতে মুছতে ফারাহকে দেখছে।কেমন লজ্জায় নিজের মুখ নুয়ে নিয়েছে।মাথা তুলেও তাকাচ্ছে না ইয়াদ মেকি হাসলো।তাকে আরো একটু লজ্জা দেওয়ার মতো দুষ্ট বুদ্ধি খেলল ইয়াদের মাথায়।হুট করেই ফারাহর সামনে এসে দাড়ালো।
ইয়াদ হুট করেই নিজের খালি শরির নিয়ে আমার কাছে এসে দাড়ালো। এইভাবেই তো লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি তার উপর আবার এইভাবে এসে দাঁড়ানোর কি হলো?মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম কেমন লুচ্চু মার্কা হেসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমার দিকে টাওয়াল এগিয়ে দিল।আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।
-চুল গুলো মুছে দিবা?অনেক দুর্বল লাগছে।
একটু মলিন হয়ে বলল।ফারাহ হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে উঠে দাড়ালো।ইয়াদ শয়তানি হাসি দিয়ে বিছানায় বসলো।
টাওয়াল নিয়ে ইয়াদের চুল মুছে দিতে লাগলাম।ইয়াদ আমার অনেকটা কাছে এসে পরেছে।আমার বুকের উপর তার নিঃশ্বাস আচড়ে পরছে।আমার বুক ঢিপঢিপ করছে খুব দ্রুত হয়ে গেল হার্ট বিট।এক্ষুনি বুঝি হৃদপিণ্ড বেরিয়ে পরবে।আমার নিঃশ্বাস খুবিই দ্রুত উঠানামা করতে লাগলো।
হুট করেই ইয়াদ আমার বুকের উপর নিজের কপাল ঠেকালো।এইবার তো আমার হার্ট অ্যাটাক করার উপক্রম।তাকে নিজের এতটা কাছে উপলব্ধি করতে পেরে পুরো শরির কেপে উঠলো আমার।কাপাকাপা হাতে তার চুলে টাওয়াল বুলাচ্ছি।
-প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।আজ বাড়িতেই থাকবো।
ইয়াদের বাড়িতে থাকা শুনে কেন যেন বুক মোচর দিয়ে উঠলো।আরো লজ্জা করতে লাগলো ইয়াদ থাকবে বাড়িতে আজ?খানিকটা ভালো লাগাও কাজ করছে আবার কেমন লজ্জাও কাজ করছে।নিজেই নিজের অনুভুতির সাথে অপরিচিত।
ইয়াদ মাথা তুলে তাকালো ফারাহর দিকে।ফারাহর অবস্থা দেখে আগচড়ে হাসলো সেতো খেপাতেই চেয়েছিল আর সে সফল।ফারাহর দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলল,
-চলো যাই।
হুট করে এমন কিছু বলায় আমি ঘাবড়ে গেলাম কোথায় যাবো?এত্ত সাত সকালে?দ্রুত করে বললাম,
-কোথায় যাবো এত সকাল সকাল?নাহ নাহ আমি এখন কোথায় যাবো না।বাড়ির লোকেরা কি বলবে না বলবে?
এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে দম নিলাম।ইয়াদ হেসে উঠলো হঠাৎ ইয়াদের হাসির কারন বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকালাম।ইয়াদ হেসে বলল,
-নিচে যাবো নাস্তা করতে।নিচে গেলে মানুষ কিছু বলবে কেন?
আমার নাক মুখ কুচকে এলো লজ্জায়।কি ভাবি আমি আল্লাহই জানে ধুরররর।ইয়াদ হেসে উঠে গেল আমিও ইয়াদের পিছু পিছু গেলাম।
নিচে নামতেই আমার শ্বাশুড়ি আম্মার হুমকি শুরু।
-কত্ত বার করে বলেছি নতুন বউদের এত বেলা করে ঘুমানো শোভা পায় না।আমার কথার কি কোন দাম নেই এই বাড়তে নাকি?
লজ্জিত মুখটা আমার ভয়ে ভরে গেল।সুহানা আন্টি এইকয়দিন তো ঠিক ছিলেন আজ আবার শুরু হলো?আবার তার শাসন শুরু।মাথা নিচু করে রান্নাঘরে গেলাম।বাহির থেকে শুনতে পেলাম ইফতির আম্মা সুহানা আন্টিকে বলছে,
-এমন করিস কেন মেয়েটার সাথে?যথেষ্ট তো মানিয়ে চলেই।এমন করার ফায়দা কি?
সুহানা বেগম আর একটু উচু গলায় বললেন,
-আপা তুমি জানো না মেয়েটা একটা ছলনাময়ী।নিজের পরিবারকে ধোকা দিতে পারলে আমরাতো সামান্য।
-চুপ কর তুই।আমি সব জানি মেয়েটার মন খারাপ হয়ে যাবে এইসব শুনলে।
আমি রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনছিলাম।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো খুব বেশিই কষ্ট লাগলো তার কথা শুনে।যতবড় না অপরাধ বলে আমার পরিবার গন্য করেছে তার থেকে বেশিই সুহানা আন্টি করেছেন।সে আমাকে মোটেও পছন্দ করেননা তার ব্যবহারেই বুঝা যায়।
নাস্তা রেডি করে টেবিলে রাখলাম রুটি ডিম চা সব করেই দিলাম।সবাই বসে খাচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে আছি।ইয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-ফারাহ বসো নাস্তা করো?
আমি নিচু গলায় ধীর ভাবে বললাম,
-আপনারা খান আমি পরে খাই।
ইয়াদ আমাকে এক প্রকার জোর করেই তার পাশে বসালো।সুহানা বেগম চোখ মুখ কালো করে খাচ্ছে।ইয়াদ ফারাহর প্রতি এত্ত কেয়ার মোটেও সহ্য হয়না তার।
————-
দুপুরে কলেজ শেষ করে আমার বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে শ্বশুর বাড়িতো মোটেও যেতে ইচ্ছে করছে না।কিন্তু ইয়াদ বাড়িতে আমি তাকে রেখেই কলেজ চলে এসেছিলাম আন্টির ঠেস মারা কথার থেকে বাচার জন্য।ইয়াদ আমাকে আটকায়নি হয়তো বুঝতে পেরেছে।কিন্তু বাড়ি যাবো নাকি শ্বশুর বাড়িই বুঝতেই পারছি না পরে গেছি এক মহা ঝামেলায়।
কলেজ গেটের সামনে অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে চিন্তার সাগরে ডুব দিচ্ছিলাম।ইমার নাড়ায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম।আমাকে এত্ত চিন্তিত দেখে বলল,
-কিরে কি হয়েছে বাড়ি যাবিনা?সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছিস?
আমি মুখটা মলিন করে বললাম,
-নারে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না আম্মুর কাছে যেতে মন চাইছে।কিন্তু ইয়াদকে বলে আসিনি।
-তাহলে কল করে বল?
-ইয়াদ আজ বাসায় আমি ওকে রেখে বাবার বাড়ি ঘুরবো ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?
ইমা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
-চল একটু আড্ডা দেওয়া যাক কতদিন হলো আড্ডা দেই না।তারপর ন হয় বাড়ি চলে যাইস!!
আমিও ইমার কথায় সায় জানালাম।আসলেই একসাথে গল্প জুরে বসা হয়না।একটা লেকে গেলাম লেকের ধারে সব কাপলরা বসে আছে।আমরা দুইজন এক সাইডে বসলাম।জমিয়ে আড্ডা দিলাম।ছোট বেলার কথা স্মরন হয়ে গেল।
তিনটার সময় বাড়ি পৌছালাম।সবাই সোফায় জড়ো হয়ে বসে আছে।আমাকে এই টাইমে বাহির থেকে আসতে দেখে সুহানা আন্টি বিরক্তি মুখে বললেন,
-দেখছিস কত্ত বেলা করে ফিরেছে শাহাজাদী?ছুটি হয় একটায় কিন্তু ফিরেছে তিনটায়।বাহিরে কি করছিল কে জানে।তাই বলি দরকার ছিল না কোন কলেজ পাঠানো।বাসায় থাকবে কাজ কাম করবে সংসার করবে ব্যস।
ফারাহ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।ইফতি মাঝ দিয়ে বলল,
-আরে খালা রাখো তো হয়েছে এইবার ফারাহকে একটু ফ্রেশ তো হতে দাও!যাও ফারাহ।
আমি গড়গড় করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসলাম।থাকলে আরো ধোলাই হবে আমার জানার কথা।আমি উপর থেকেও শুনতে পাচ্ছি এখনো চিৎকার করেই যাচ্ছে সুহানা আন্টি।
রুমে এসে ব্যগ রেখে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।নিচেও ইয়াদকে দেখলাম না আবার রুমেও নেই কোথায় গেল?আজ না অফ ছিল?ভাবনা মাঝেই সোনিয়া এসে হাজির।
-ভাবী কাল আমার সাথে কোথাও যেতে হবে!
আমি চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বললাম,
-কোথায়?
-গেলেই দেখতে পাবে।
খুবিই খুশি হয়ে ফোন ঘাটছে আর বলছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-ইয়াদ কই?তাকে দেখছি না যে?
সোনিয়া ফোন থেকে মাথা তুলে সব গুলো দাত বের করে একটা ভেটকি দিল।আমি মোটেও ওর রহস্য জনক জিনিসপত্র কিছুই বুঝি না।ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি তার দিকে।সোনিয়া পিঞ্চ মেরে বলল,
-ওহহো ভাইয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
-আমি চিন্তা না করলে কি প্রতিবেশি এসে করবে?
ভ্রু কুচকে বললাম।সোনিয়া হেসে উঠলো।
-ভাইয়ার নাকি জরুরি মিটিং ছিল তাই গিয়েছে।
আমি ছোট্ট করে ওহহ বললাম।আজ ছুটি নিয়েছে তার মধ্যেও মিটিং?এত্ত বিজি মানুষ বউর সারাদিনে একটা খবর নেওয়া জরুরি মনে করেন না।ভেবেই রাগ করলাম হুহহ।
————-
রেস্টুরেন্টে সাইডের একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে আছেন ইয়াদ আর নীলা।ইয়াদ বরাবরই নীলার সাথে দেখা করাতে বিরক্তি কিন্তু দেখা করতে আসতে হয়েছে।নীলা সার্থক রুপে হাসলো।মুহুর্তেই কাদোকাদো ফেস করে বলল,
-ইয়াদ আম সো সরি আমি জানি তোমার সাথে অনেক খারাপ করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এমনটা করতে চাইনি।
ইয়াদ ভ্রু কুচকে তাচ্ছিল্য রুপে বলল,
-তুমি করতে চাওনি কিন্তু করে ফেলেছ?ওয়াও নীলা জাস্ট অসাধারণ।
নীলা এখন কি বলবে ভেবেই পাচ্ছে না ইয়াদকে নিজের উপর কিভাবে বিশ্বাস করাবে।কিন্তু কিছুতো একটা করতেই হবে।
নীলা কান্না করেই দিল চোখ গড়িয়ে অনেক কষ্টে এক ফোটা জল পরলো।ইয়াদের হাত ধরতে নিলে ইয়াদ হাত সরিয়ে নেয়।নীলা ভাংগা কন্ঠে বলল,
-ফারাহ আমাকে বাধ্য করেছে পালাতে।নাহয় আমি তোমাকে ছেড়ে কখনোই যেতাম না।
ইয়াদ এতক্ষন ধরে বিরক্তি মুখশ্রী করে শুনছিল হঠাৎ নীলার এইরুপ কথা শুনে অবাক নয়নে নীলার দিকে তাকালো।নীলা এইসব কি আবোলতাবোল বলে যাচ্ছে??ইয়াদ এক ঝাটকায় দাঁড়িয়ে গেল।
-ফারাহ কিভাবে বাধ্য করলো?নাটক পেয়েছো নীলা কিন্তু সরি এইটা রিয়েল লাইফ।কোন মুভির সুটিং চলছে না যে তুমি যা ইচ্ছে তাই বলে যাবে।
কিছুতা থেমে ইয়াদ আবার বলল,
-তোমাকে পালাতে বাধ্য করলো আর পালিয়েও গেলে?এত্ত ইজিলি?
কিছুটা উচু গলায় বলল রেস্টুরেন্টে সবার নজর প্রায় এই দিকটাতেই।নীলা আশেপাশে তাকিয়ে ইয়াদকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,
-কাম ডাউন ইয়াদ।আমি তোমাকে সত্যিটা বলার জন্য কখন থেকে বসে আছি তুমি সবটা শুনো?
ইয়াদ বসলো নীলার সব কথা শুনতে।
চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)